কালী কা মায়াজাল
যে বাড়িতে দীপাকে থাকতে দেয়া হলো তা বহু বছরের পুরনো জমিদার বাড়ি।কাজের মেয়ে নাহার আর সে মিলে সাতমাস ধরে ভালোই ছিল, শুধু বাড়ির পেছন দিকটা সব সময় এড়িয়ে চলতো দীপারা,ঝোপঝাড় আর সাপখোপের আড্ডা ওদিকটায়।যদিও বিশাল একটা দেয়াল ধ্বসে পড়ে ওদিকে যাওয়ার রাস্তাটা আটকে দিয়েছে।তারও ওদিকে শেষ মাথায় বিশাল প্রাচীর,উপরে কাচ গাঁথা,টপকাতে গেলে হাত পা কাটবে অবধারিত।মেয়ে হিসেবে থাকতে গেলে অনেকটা নিরাপদ এই বাড়িটা।
পেছনের ওখানে একসময় সামন্তদের মন্দির ছিলো,কালী মন্দির,সেই সময়ে সিমেন্ট পাথরের নির্মান একটি কালী প্রতিমা সেখানে এখনো আছে।কালী মূর্তিগুলোতে একধরনের ভয়ানক সৌন্দর্য লুকিয়ে থাকে।উপরে জলসাঘর থেকে উঁকি দিলে ষ্পষ্ট দেখা যায়। শ্যাওলা জমে শুকিয়ে সেটার রং এখন সবুজাভ,কিন্ত জিভ এখনো জীবন্ত লাল,যেনো কিচ্ছুক্ষণ আগে কেউ রক্ত ঢেলে রেখে গেছে জিভে।দুশো বছরে একটুও ক্ষতি হয়নি মূর্তিটির।
দীপা একবারই দেখেছে মূর্তিটাকে,মূর্তিটা ঘিরে চারপাঁচটা সাপ কুন্ডুলী পাকিয়ে শুয়ে আছে,তার গা শিরশির করে উঠেছিলো দেখে।দীপার দাদি বলতেন,'মুসলমান হয়ে হিন্দুদের মূর্তির দিকে একবারের বেশী দুইবার তাকাইতে হয়না,তাকাইলে ইমান নষ্ট হয়।অমঙ্গল হয়।'
এসব কুসংস্কারে বিশ্বাস না করলেও সেদিন মূর্তিটা একবারের বেশি দেখেনি দীপা,মিস্ত্রী ডেকে লোহা মেরে ভালোভাবে বন্ধ করে দিয়েছিলো জলসাঘরের তিনতিনটি জানালা।
আগে খানিকটা ঠিক গ্রাহ্য করার মতো নয় এমন অস্বাভাবিক ব্যাপার ঘটলেও সে রাতের পর থেকে তার উৎপাত বেড়ে যায়,রাতের বেলা উপরের ঘরে দরজা জানালার খট খট আওয়াজ,লাঠি ভর দিয়ে কারো হাঁটার শব্দ,খুব মন দিয়ে শুনলে কাদের যেনো ফিসফিস করে কথা বলার শব্দ শোনা যেতে লাগলো।
রাতের পর রাত নাহারকে নিয়ে জেগে থাকে দীপা।ফজরের আজান পরলে দুজন ঘুমাতে যায়।
একপর্যায়ে নাহার মেয়েটা অসুস্থ হতে শুরু করলো,দীপা একবার বলেছিল,'এই জায়গাটা ভালোনা,তুই চলে যা নাহার...আমি সামলে নেবো,তুই অসুস্থ হয়ে যাচ্ছিস'
নাহার যেতে চায়নি কেঁদে কেটে আজব অবস্থা করেছে,
'আমি কই যাবো আফা,বড় মামু আপনার কাছে দিয়া গেছে, শান্তি আছি এইখানে,আমার বাপে মাইনষের জাত না!কতো দিন গেছে খাইতে পাইনাই আফা! মাইর ধর করে,এখানে যাই হোক আমারে দুইবেলা খাইতে দিয়েন,আমি সব সহ্য করুম!'
মেয়েটার অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে আর কথা বাড়ায়নি দীপা।
কিন্ত দিনে দিনে ওসব ব্যাপার বাড়তে শুরু করলো।পেছনের মন্দির থেকে হাসির শব্দ,চাপা গোঙ্গানির আওয়াজ,অস্পষ্ট চিৎকার এমনকি মাঝে মাঝে শোবার ঘরে খাটের পাশে জানালা থেকে বিশ্রী হাসির শব্দ আসা শুরু হল!খানিকটা নরকের পরিস্থিতির মতো পরিবেশ সৃষ্টি হতে লাগলো প্রতি রাতে।
***
সেদিন শুক্রবার,ক্লাস নেই তাই ঘরে বসে ওসব নিয়ে ভাবছিলো দীপা,রান্নাঘরে কাজ করছিলো নাহার,সব যেনো সয়ে গেছে ওদের।অস্বাভাবিক শব্দগুলো এড়িয়ে যাবার অদ্ভুত ক্ষমতা যেনো চলে এসেছে ওদের মধ্যে।দুটো মেয়ে মানুষ এতো বড় বাড়িতে একা,ভাবতেই গা শিরশির করে উঠলো দীপার।ঠিক ভয় নয় তবে অশুভ একটা অনুভুতি যেনো নাড়া দিয়ে গেলো তাকে।কিন্ত সবকিছু ছাপিয়ে একটা সাহস অলৌকিকভাবেই কাঁধে এসে ভর করলো।চিরকাল মানুষ শুভশক্তির প্রতিনিধি হিসেবে লড়াই করেছে,এ লড়াইয়ে মানুষ কখনো হারেনি।হারবেওনা।
দুপুরে খাবার পর নাহারকে বাড়ির সামনে ফুলগাছগুলোতে পানি দিতে বলে দীপা পাশের বাসায় বেড়াতে গেলো,উদ্দেশ্য কিছু যদি জানা যায়!এর আগে ও কখনো কলেজ আর বাড়ি মাঝে মাঝে পার্শবর্তী বাজারের বাইরে কোথাও যায়নি।
স্বাভাবিকভাবেই পাশের বাড়ির ভদ্রমহিলা অবাক হলেন,এ বাড়ির ভেতরটা সুন্দর,তুলসীতলার বেদীতে অপরূপ কারুকাজ দীপার মন ছুঁয়ে গেলো। তাছাড়া সবকিছু ভীষন পরিপাটি, সিনেমার সেটের মতো লাগছিলো।
মহিলার নাম বললেন বিমলা,বিমলা মিত্র।উনার স্বামীর নাম মহাদেব মিত্র, বিদেশে থাকেন।৩ ছেলে মেয়ে নিয়ে বিমলা থাকেন এখানেই,চারদিকে আড়ম্বরের ছোঁয়া থাকলেও বিমলা তেমনটা নন,বয়েস পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই,কিন্ত অনেক সাধারন আর মিশুক।এই এতোদিনে এই মানুষটার সাথে পরিচয় কেনো হয়নি তা ভেবে খারাপ লাগলো দীপার।
কথায় কথায় দীপার কাছে জানতে চাইলেন,' ও বাড়িতে একা থাকেন বুঝি?'
-না ঠিক একা নয়!কাজের মেয়ে আছে একটা। কেনো বলুন তো?
'বাঃরে এমনি জানতে চাইলাম...আপনি ওখানে কেমন আছেন কৌতুহল আরকি...তাছাড়া এতোদিন হয়ে গেলো আছেন...এর আগে যারা ...'
কিছু একটা বলতে গিয়ে নিজেকে সামলে নিলেন মিসেস মিত্র।থাক ওসব কথা, শুধু মুখে বসে আছেন।অতিথি নারায়ন, এতক্ষন কি যে করছে ওরা,"এই কি হোল!এতক্ষন লাগে এই এতোটুকুন জলখাবার বানাতে?"রান্নাঘরের দিকে হাক ছাড়লেন মিসেস মিত্র।
দীপা খানিকটা অস্বস্তি নিয়ে বললো, 'না না আপনি ব্যাস্ত হবেন না দিদি!কি যেনো বলছিলেন ওই বাড়ির ব্যাপারে,আগে যারা থাকতো...'
-কিছু বলছিলাম নাকি?ও হ্যা!
দীপাকে কথাটার খেই টেনে ধরতে দেখে অবাক হয়ে আনমনে বললেন মিসেস মিত্র,তারপর খানিক্ষন চুপ থেকে জিজ্ঞেস করলেন,'ওখানটায় থাকতে আপনার কি কোনো সমস্যা হচ্ছে মিস দীপা?'
দীপা ইংগিতটা বুঝতে পারলো,বুঝতে পারলো ওদের সাথে যা ঘটছে, তা ঘটার কথা ছিলো সেটা যেনো এই মহিলা জানেন।
হয়তো এ এলাকার সবাই জানে! কারো সাথে মেশেনা বলেই জানা হয়নি।
ততোক্ষনে রান্নাঘর থেকে নাড়িকেল নাড়ু সেমাই আর চা চলে এসেছে।দীপা চায়ের কাপটা হাতে নিতে নিতে বললো, 'পেছনের মন্দির থেকে..."
কথাটা লুফে নিয়ে শুরু করলেন মিসেস মিত্র,
'কালী মন্দির, কালী মায়ের আবির্ভাব হয় যখন পৃথিবীতে খারাপ মানুষের সংখ্যা মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিলো,পৃথিবীটা এগিয়ে যাচ্ছিলো ক্রমশ ধ্বংসের পথে।সেই ধ্বংসের পথ থেকে মানব সমাজকে উদ্ধার করতে কালী মায়ের অবির্ভাব হয়...কিন্ত তার গণহত্যা এতোই নির্বিচার ছিলো যে ভালো মানুষও এ থেকে রেহাই পায়নি।মা কালীকে শান্ত করতে মহাদেব শিবকে আদেশ করলেন বিষ্ণু....।
যাক সে কথা,কালী স্বত্তা চার ধরনের হয়
১.শ্যামা কালী
২. রক্ষা কালী
৩. ভদ্র কালী
৪. শ্মশান কালী।
এর মধ্যে ধ্বংস শক্তি ও ভয়াবহতার রূপ হলো শ্মশান কালী।শ্যামা কালীকে ঘটা করে পুজো দিয়ে বট বা অশত্থের নীচে বিসর্জন দিলেও এ কালী স্বত্তার পূজো হয় শ্মশানে। বিসর্জনও সেখানেই হয়।
আপনার বাড়ির পেছনে যেটা দেখছেন সেটা শ্মশান কালীর স্থায়ী মূর্তি,সাধারনত তান্ত্রিকেরা এমনটা গড়ে অশুভশক্তি বসে আনার জন্য।প্রতি অমাবস্যা পুর্ণিমায় এর পায়ে নরবলি দেয়া হয়।
ওবাড়ির জমিদার ছিলেন তেমনই একজন,সেই তখনকার দিনে শোড়ষী মেয়েদের ধরে এনে এনে বলি দেয়া হতো এখানে।তাদের রক্তে স্নান করানো হতো কালীকে।
তারপর একদিন প্রজাদের রোষানলে পড়ে সেই জমিদারকে প্রাণ হারাতে হয়।এমনকি প্রজারা তার পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলে, ওই মন্দিরের সামনে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে দেয়।তারপর থেকে নাকি ওই জায়গায় অদ্ভুত জিনিস দেখা যেতো।এই বাড়িতে বেশীদিন কেউ টিকতোনা।
কিছুদিন আগে সংস্কার করে হোস্টেল বানানোর জন্য সরকার থেকে বাড়িটা দিয়ে দেয়া হয় রায়কেলি ডিগ্রী কলেজের হাতে।তারপর সম্ভবত আপনি সেই মানুষ যে এতোদিন এই বাড়িতে আছেন কোন ঝামেলা ছাড়া...আসলেই কি তাই?কোন ঝামেলা হচ্ছেনা তো?'
এতক্ষন মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছিলো দীপা,মিসেস মিত্রের প্রশ্ন শোনে বাস্তবে ফিরে এলো।
ধরে রাখা কাপটা টেবিলে রাখতে রাখতে বললো,'না ঝামেলা হবে কেনো...!'
বাকি কথাগুলো চেপে গেলো দীপা,দক্ষিনের দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকাতেই কান গরম হয়ে গেলো দীপার।সাতটা বিশ মিনিট।
নাহার!
একা একা নিশ্চই ভয় পাচ্ছে মেয়েটা!
মনের কথা যেনো বুঝতে পারলেন মিসেসে মিত্র,বললেন'ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক...আবার আসবেন।অপেক্ষায় থাকবো '
দীপা অবাক হয়ে মহিলার মুখের দিকে তাকালো,এর আগে কোথায় যেনো দেখেছে মুখটা।এই মহিলা কি অন্তর্যামী??
কোনোমতে বিদায় নিয়ে ওবাড়ি থেকে প্রায় ছুটে বেড়িয়ে এলো দীপা।
আধার এখনো জাঁকিয়ে বসেনি,মিসেস মিত্র যেনো মন্ত্র শক্তি দিয়ে তাকে বস করে রেখেছিলেন।
তরিঘরি করে গেট খুলে ঘরে ঢুকলো দীপা,না নেই।
কোথাও পাওয়া গেলোনা নাহারকে।চিৎকার করে ডাকলো দীপা,উপর থেকে নীচতলা অবধি।
'মেয়েটার বয়েস যেনো কতো?ষোল?
আজ পূর্নিমা!'
ভাবনাটা মাথায় আসতেই রক্ত হীম হয়ে গেলো তার।
আচ্ছন্ন ভাবে ছুটে গেলো পেছনের প্রাচীরের দিকে,দুর্ভেদ্য এই প্রাচীরের ডান দিকে বেশ বড় একটা ছিদ্র অমসৃন দরজার মতো হা করে আছে।
দীপা দ্রুত ছুটে গেলো প্রাচীরের ওপাশে,জোৎস্নায় ভেসে যাচ্ছে চারদিক।আকাশে হলুদাভ রুপোর থালার মতো চাঁদ। ঝোপ ঝাড় ডিঙিয়ে মন্দিরের সামনে আসতেই শত শত মোম দেখতে পেলো দীপা,কালী মূর্তিটার চারদিকে জ্বলছে।অনেকগুলো সাপ ফনা মেলে দুলছে যেনো কোনো এক অপার্থিব সংগীতের তালে তালে নাচছে।
মোমের কাঁপা কাঁপা আলোর বন্যা ছাপিয়ে দীপার চোখ গেলো মূর্তিটার দিকে,ত্রিশুলের আগায় গেঁথে আছে একটা মাথা ফোটা ফোটা রক্ত এসে জমা হচ্ছে নীচে রাখা মড়া মানুষের খুলিতে।অদুরে পরে আছে নাহারের মুন্ডুহীন লাশ।
চিৎকার দিতে গিয়ে থেমে গেলো দীপা।মূর্তির পেছন থেকে বেড়িয়ে আসছে এক নারী,মূর্তিটির চেহারার সাথে সে চেহারার অদ্ভুত মিল।আতংকে অবিশ্বাসে নীল হয়ে গেলো দীপা।
জ্ঞান হারাবার আগে শুধু একটা কথাই বলতে পারলো সে
āĻāϞ্āĻĒ āϏংāĻ্āϰāĻš āĻāϰা āĻāĻŽাāϰ āύেāĻļা। āϰোāĻŽাāύ্āĻিāĻ, āĻৌāϤিāĻ, āϰāĻŽ্āϝ, āĻৌāϤুāĻ āϏāĻš āĻšাāĻাāϰো āĻāϞ্āĻĒ āĻāĻে āĻāĻŽাāϰ āϏংāĻ্āϰāĻšে।
āĻļāύিāĻŦাāϰ, ā§Šā§Ļ āϏেāĻĒ্āĻেāĻŽ্āĻŦāϰ, ⧍ā§Ļā§§ā§
2853
āĻāϰ āĻĻ্āĻŦাāϰা āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰা
Rahathossain1010100@gmail.com
āĻāĻ āϏāĻŽā§ে
⧧:⧍⧠AM

āĻāϤে āϏāĻĻāϏ্āϝāϤা:
āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝāĻুāϞি āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ (Atom)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ