------------------------অবুঝ ভালবাসা-------------------------
-------------------৯ম পর্ব-----------------
অনামিকা ভেবে কূল পাচ্ছে না। কি বলতে চায় অভি? অভি কি তার ভালবাসার কথা জানাবে বলে ডাকছে? নাকি অন্যকিছু বলবে? অন্যকিছু হলে কি হতে পারে। এইসব অনেক কিছুই চিন্তা করছে অনামিকা। সন্ধ্যা বেলা সে অভির পছন্দ করা ড্রেসটি পড়ে নিলো। অসময়ে নতুন ড্রেস পড়ায় আফরোজা চৌধুরী বলেন,
-একি! এখন এই ড্রেস পড়লি কেন?
-কেন খুব খারাপ লাগছে দেখতে?
-আরে না, ড্রেসটিতে তোকে খুব ভালোই মানিয়েছে। আমি বলতে চাচ্ছি এই সময় পড়ার কারণ কি?
-কারণ কিছুই না,পড়তেই হবে যখন তবে এখন পড়লে প্রব্লেম কি! আর ঢাকায় ফিরার দিন তোমার পছন্দের ড্রেস পড়েই যাবো।
-কালকেই তো আমরা ঢাকা যাচ্ছি? নাকি মত পাল্টেছে। আরো কিছুদিন থাকার ইচ্ছে আছে?
-সেই সিদ্ধান্ত রাতেই নিবো। এখন আমি হোটেলের বাগান থেকে একটু ঘুরে আসি। তুমি বরং শুয়ে বিশ্রাম নাও।
-আচ্ছা যা।
অভি-রাহুল অনেকক্ষণ থেকেই হোটেলের বাগানে বসে আছে অনামিকার অপেক্ষায়। অনামিকাকে আসতে দেখে অভি তাকালো তার দিকে। তার পছন্দ করা ড্রেস পড়ে এসেছে দেখে অভি চমকে ওঠে। তার চোখের কোণে অশ্রু জমে ওঠে। সে ভাবলো, "তবে কি অনামিকা মনে করেছে আমি ভালবাসার কথা বলবো বলে ডেকেছি? এইজন্য আমার পছন্দ করে দেয়া ড্রেস পড়ে এসেছে।" অভি কঠোর ভাবে নিজেকে সামলে নিলো। অনামিকা কাছে আসতেই তাকে বললো,
-রাহুল তোমাকে কিছু বলতে চায়। তার আগে আমি তোমাকে কিছু কথা বলে নেই। রাহুল আমার বন্ধু তাই তুমি বলতে পারো বন্ধুর হয়ে ঢোল বাজাচ্ছি। আসলে বন্ধু হওয়ার জন্য বলছি না,সত্যিই রাহুলের মতো ভালো ছেলে খোঁজে পাওয়া দুরূহ। প্রতিটি মানুষকে খুব সহজে আপন করে নেয়। আর সে তার আপনজনদের কতটা ভালবাসতে পারে সেটা তোমাকে বলেও বুঝাতে পারবো না। তাছাড়া আমার মনে হয় এই কয়দিনে তুমি কিছুটা হলেও রাহুলকে বুঝতে পেরেছ।
কথাগুলো টানা বলে সে রাহুলকে ডাকলো। অনামিকা কিছু বলার সুযোগটাই পেলো না। রাহুল কাছে আসলে অভি সুযোগ দিতে কিছুটা দূরে চলে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। সেখান থেকে ওদের দেখা গেলেও ওদের কোনো কথা শুনা যাবে না। অনামিকা যদিও অভির কথা শুনেই বুঝে গেছে রাহুল কি বলতে এসেছে তবু বলল,
-রাহুল তুমি নাকি আমাকে কিছু বলতে চাও?
-কিভাবে কথাটা বলবো বুঝতে পারছি না। আচ্ছা তোমার কি আমাদের প্রথম দেখা হওয়ার ঘটনাটা মনে আছে?
-মনে থাকবে না কেন, মাত্র চারদিন আগের কথা।
-সেদিন তোমাকে দেখেই ভালো লেগে যায়। তাই তাকিয়ে ছিলাম অপলক দৃষ্টিতে। তবে তখন তোমার ঐ মজাটায় আমি বেশ বিরক্ত বোধ করেছিলাম। কিন্তু যখন মজা করেছ বলে সরি বললে তখন থেকেই আমি তোমাকে নিয়ে ভাবতে শুরু করি। তোমাকে নিয়ে আমার রঙ্গিন স্বপ্ন দেখা শুরু হয়। বুঝতে পারি আমি তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি। আর তাই আজ আমি তোমার সামনে আমার ভালবাসার দাবী নিয়ে দাঁড়িয়েছি। তুমি কি আমাকে.....
-না রাহুল। আমি তোমাকে নিয়ে ঐরকম ভাবিনি কখনো। আমি তোমাকে ভালবাসতে পারবো না।
রাহুলের কথা শেষ করতে না দিয়েই অনামিকা কথাটি বলে উঠে। রাহুলের সারা শরীর কাঁপতে শুরু করে। কাঁপা স্বরে বলে,
-কেন জানতে পারি?
-কারণ আমি একজনকে ভালবাসি। তাই চাইলেও পারবো না তোমার প্রস্তাবে রাজি হতে।
রাহুলের হাত থেকে ঘড়ির বক্সটি পড়ে গেলো। সে দুহাত জড়ো করে ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে বলে,
-আমাকে ক্ষমা করে দিও। আসলে তোমার প্রেমে এতটাই বিভোর ছিলাম যে একবারের জন্যও ভাবার চেষ্টা করিনি তুমিও অন্য কাউকে ভালবাসতে পারো। যদি জানতে পারতাম তাহলে আমি আমার এই অবুঝ ভালবাসার দাবী নিয়ে কখনোই তোমার কাছে আসতাম না। যত কষ্টই হউক নিজের কাছে লুকিয়ে রাখতাম।
অনামিকা বক্সটি তোলে নেয়। তারপর খুলে দেখে হাত ঘড়ি।
-আমার জন্য এনেছিলে বুঝি?রাহুল কিছু বলতে পারে না শুধু নীরবে মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। অনামিকা আবার বলে,
-আচ্ছা ঠিক আছে। আমি এটা নিলাম। ভালবাসা হয়তো একাধিক মানুষের সাথে হয় না। কিন্তু বন্ধু তো হতে পারে! আজ থেকে না হয় আমরা দুজন বন্ধু হয়ে থাকবো।
রাহুলের চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে-- "হে আল্লাহ্ এটা তোমার কেমন চাওয়া! যাকে ভালবেসে তার দিকে ভালবাসার হাত বাড়িয়ে দিলাম সে কিনা আমার দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমার সাথে কেন এমন হল! এই কষ্ট আমি কি করে সহ্য করবো। তুমি আমাকে সহ্য করার শক্তি দাও।"
অনেক কষ্টে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে রাহুল বলে,
-বন্ধুত্বের এই অধিকারটি কি সান্তনা হিসেবে দিলে?
-তোমাকে কিভাবে সান্তনা দেয়া উচিৎ সেটা আমার জানা নেই। বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছি সান্তনার জন্য না। তোমার সাথে যেকেউ বন্ধুত্ব করতে চাইবে। অভি যে তোমার এত প্রশংসা করে সেগুলো নিছক শুধুই যে প্রশংসা নয় সেটার প্রমাণ এই কয়দিনেই পেয়েছি। বন্ধু হিসেবে তুমি দারুণ একজন হবে।
কিছুক্ষণ দুজনেই নীরব। অনামিকা আবার শুরু করে,
-আমি বুঝতে পারছি তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আর তোমার এই কষ্টের কারণ আমি এটা ভেবে আমারো খুব খারাপ লাগছে। কি করবো বলো, মানুষের মন মাত্র একটা। আর সেটা শুধুমাত্র একজনকেই দেয়া যায়। সেই মনটা আমি একজনকে দিয়ে ফেলেছি। এখন আর আমার কাছে দেয়ার মতো কিছুই নেই।
কথাগুলো বলতে গিয়ে অনামিকার চোখে জল চলে আসে। তখন রাহুল ভাবলো, "অনামিকা যদি অন্য কাউকে ভালবেসে সুখী হয় তবে তার সুখের জন্য না হয় আমার অবুঝ ভালবাসার হত্যা করে তার বন্ধু হয়েই থাকলাম।
-না বুঝেই তোমাকে কষ্ট দিলাম। আমায় ক্ষমা করে দিও।
-তুমি কেন বারবার ক্ষমা চাচ্ছো। ক্ষমা চাওয়া উচিৎ আমার। আমিই তোমাকে কষ্ট দিয়েছি।
-তুমি অযথা নিজেকে অপরাধী ভেবো না। আসলে ভাগ্যটাই আমাদের সাথে খেলা করছে। তাছাড়া তুমি আমাকে খালি হাতে ফিরাওনি। তোমার বন্ধুত্বের অধিকার দিয়েছ এটাইবা কম কিসের! কিন্তু তোমার ভালবাসার মানুষটি কে আমায় বলবে না?
-অবশ্যই বলবো। তবে এই মুহূর্তে বলতে ইচ্ছে করছে না।
-আচ্ছা তোমার যখন মনে হবে আমাকে বলা যাবে,তখন বইলো।
-রাহুল আমি এখন যাই। কালকে সকালে দেখা হবে।
-আচ্ছা।
অনামিকাকে যেতে দেখেই অভি রাহুলের কাছে আসে।
-কি খবর বল।
-লাল গোলাপের বিনিময়ে হলুদ গোলাপ পেয়েছি।
-মানে!
-মানে বুঝলি না? আমি দিয়েছি আমার মনের অবুঝ ভালবাসা আর অনামিকা দিয়েছে তার বন্ধুত্বের অধিকার।
অভি খেয়াল হল, আসলেই তো! লাল গোলাপ ভালবাসার প্রতীক আর হলুদ হল বন্ধুত্বের প্রতীক। টেনশনে থাকলে সহজ ব্যাপার গুলাই বুঝা যায় না।
-অনামিকা তোকে ফিরিয়ে দিলো কেন?
-কারণ সে অন্য কাউকে ভালবাসে। আগেই বুঝা উচিৎ ছিল। শহরের মেয়ে এই বয়স পর্যন্ত সিঙ্গেল থাকবে না। রিলেশন করবেই।
-কাকে ভালবাসে বলেনি?
-না, পরে বলবে বলেছে।
-মন খারাপ করিস না রাহুল। আমি আবার অনামিকার সাথে কথা বলবো। ভালো ভাবে বুঝিয়ে বলবো সবকিছু।
-না অভি। এটা করতে যাসনে। ভালবাসা জোর করে হয়না। তার মনের ঘরে যে বসে আছে তাকে সরিয়ে আমি কি করে সেখানে বসতে পারি! -আচ্ছা রুমে চল এখন।
রাহুল লাম্বা একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
-চল।
রুমে যেতেই অনামিকাকে দেখে তার মা বলেন,
-অনামিকা তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন?
-আমার কিছুই ভালো লাগছে না আম্মু।
-কালকে চলে যাবি ঢাকা?
-তাই ভাবতেছি। আম্মু রুমেই লাইট অফ করে দেই?
-অন্ধকারে বসে থাকবি?
-হুম, অন্ধকারে থাকতে ইচ্ছে করছে।
অনামিকা খুব চিন্তায় পড়ে গেলো। এখন কি করবে সে? না পারবে তার ভালবাসার দাবী নিয়ে অভির সামনে দাঁড়াতে, আর না পারবে অভিকে ভুলে রাহুলকে ভালবাসতে। তবে একটা ব্যাপারে সে এখন নিশ্চিত হল। অভি অন্য কোনো মেয়েকে না তাকেই ভালবাসে কিন্তু তার বন্ধুর জন্য এই ভালবাসা প্রকাশ করেনি।
রাহুল ও অভি দুজনে মনমরা হয়ে রুমে বসে ছিল। তখন রাহুলের মোবাইল বেজে ওঠে। রিসিভ করে কথা বলা শুরু করে।
-হ্যালো.... কী!..... আমি এখনি আসছি..... হ্যাঁ রাতের বাসেই চলে আসবে।
ফোন রেখে দিয়েই কান্না শুরু করে দিলো। অভি বুঝতে পারলো রাহুলের বাসায় কোনো সমস্যা হয়েছে।
-কী হয়েছে রাহুল? কোনো সমস্যা?
-আম্মু হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া হচ্ছে।
কথাগুলো বলতে গিয়ে রাহুলের গলা ধরে এলো।
-তুই কান্না থামা, দেখিস আন্টির কিছুই হবেনা
একেই তো অনামিকার কাছ থেকে কষ্ট পেয়ে বিষণ্ণ হয়ে পড়েছে। এমন অবস্থায় আবার মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়েছে। কি করে যে তার কান্না থামাবে ভেবে পায় না অভি।
অভি দ্রুত হাতে সবকিছু গুছাতে শুরু করে দিয়েছে। আর রাহুলের কান্না থামানোর জন্য নানান রকম সান্তনা দিতে লাগলো। রাহুল কাঁদছে আর ব্যাগ গুছাচ্ছে। সবকিছু গুছানো শেষ হলে অভি বলে,
-অনামিকার সাথে একবার দেখা করবি না?
-আম্মুর খবর পেয়ে আমার হাত পা কাঁপা শুরু হইছে। এই অবস্থায় ওর সাথে দেখা করে আমি কোনো কথাই বলতে পারবো না। শুধু শুধু তার সামনে কান্না করে দিবো।
-তাহলে তাদের না জানিয়েই চলে যাবো?
-কাগজে লিখে রিসিভসনে রেখে যাবো।
রাহুল কাগজ কলম নিয়ে লেখা শুরু করলো।
আমরা চলে যাচ্ছি,যাওয়ার আগে দেখা করিনি বলে ক্ষমা করে দিও। আব্বু ফোন করে জানালেন আম্মু হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাই আমাদের এই হঠাৎ চলে যাওয়া। তুমি আমার বর্তমান অবস্থা বুঝতেই পারছ হয়তো। তোমার সাথে দেখা করা সম্ভব ছিল না আমার দ্বারা।
রাঙ্গামাটিতে এসে আমি আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস পেয়েও পেলাম না। তারপরও বলবো আমি খুব ভাগ্যবান। কারণ আমার অবুঝ ভালবাসার প্রতিদানে তোমার বন্ধুত্ব পেয়েছি। আর তুমি আজ বলেছ আমি বন্ধু হিসেবে দারুণ হবো। তোমার কথাগুলো যদি সত্যিই হয় তাহলে আশা করি তুমি আমার সাথে যোগাযোগ রাখবে। তাই আমার মোবাইল নাম্বার দিয়ে গেলাম। ০১*********
আন্টিকে আমার সালাম দিও। ভালো থেকো তোমরা।
--তোমার বন্ধু💜রাহুল
রাহুল লিখার সময়ও কাঁদছিল। তাই তার চোখের জল পড়ে কাগজটি ভিজে দুর্বল হয়ে যায়। রাহুল ভাবলো কাগজটি ছিঁড়ে যেতে পারে তাই সে অভিকে অন্য একটি কাগজে লেখাটা কপি করতে বলে সে বাথরুমে চলে যায় চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিতে। বাথরুম থেকে ফিরে এসে অভির পাশে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলো। লেখা প্রায় শেষ হয়ে গেছে।এটা কার কাছে দিবি?
-রিসিভসনের খলিল ভাইয়ের কাছে দিয়ে গেলে উনি নিশ্চয় দিয়ে দিবে। উনাকে বেশ ভালো মানুষ বলে মনে হয়েছে।
-আমারো মনে হয় লোকটি খুব ভালো। উনার কাছে দেয়া যায়।
-চল এইবার।
তারপর তারা রুম থেকে বেরিয়ে হাঁটা দিলো। রিসিভসনে এসে খলিল হোসেনকে দেখতে পায়। লোকটির বয়স ৩০-৩২ হবে। কাছে পৌছাতেই লোকটি বলে,
-কি ব্যাপার আমাদের আপসেট দেখাচ্ছে কেন? এই পর্যন্ত যতবার দেখেছি সবসময় হাসিখুশি দেখলাম। কত মজা করে কথা বলেন। সেজন্য আপনাদের আমার খুব ভালো লাগতো। আজ দুজনের এমন মন খারাপের কারণ কি জানতে পারি?
তাদের হাতে ব্যাগ দেখে আবার বলে, হাতে ব্যাগ দেখছি! চলে যাবেন বুঝি?
অভি বলল,
-হ্যাঁ খলিল ভাই,আমরা চলে যাবো।
তারা যখন প্রথম দিন এসেছিল তখন খলিল হোসেনের নাম জেনে নিয়েছিল। এরপর থেকে দুজনেই খলিল ভাই বলে ডাকতো। এখন অভির মুখে খলিল ভাই ডাকটি তার হ্নদয় স্পর্শ করে।
-সেকি! চলে যাচ্ছেন কেন? আপনারা না বলেছিলেন পনেরোদিন থাকবেন। এখন হঠাৎ করে চলে যাচ্ছেন, আপনাদের কি কিছু হয়েছে?
-রাহুলের মা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তাই আমাদের এখনি রওনা দিতে হবে।
কথাটি শুনে রাহুলের চোখে আবারো অশ্রু জমে উঠে। সেটা লক্ষ্য করে খলিল হোসেন বলেন,
-কাঁদবেন না,দেখবেন আপনার মায়ের কিছুই হবে না। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, আপনি গিয়ে যেন উনাকে সুস্থ দেখেন।
তখন অভি বলে,
-খলিল ভাই আপনাকে আমাদের একটি কাজ করে দিতে হবে।
-কি কাজ বলেন,অবশ্যই করবো।
-আপনি হয়তো খেয়াল করেছেন, ৬০ নাম্বার রুমে যে ভদ্র মহিলা ও তার মেয়ে থাকেন তাদের সাথে এই কয়দিন আমরা একসাথে ঘুরেছি। তাই এই কয়দিনে তাদের সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক হয়ে গেছে। যাওয়ার সময় দেখা করতে পারছি না তাদের সাথে তাই কাগজে ওদের যা বলার লেখে দিয়েছি। আপনি দয়া করে এটা ঐ মেয়েটির হাতে দিয়ে দিবেন।
-অবশ্যই দিয়ে দিবো। আপনাদের জন্য কিছু করতে পারলে আমারো খুব ভালো লাগবে।
-ধন্যবাদ খলিল ভাই। এবার তাহলে আমরা যাই। ভালো থাকবেন।
-আপনারাও ভালো থাকবেন।
দুই বন্ধু চলে গেলো। খলিল হোসেন দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলেন, "ছেলে দুটি এসেছিল হাসি মুখে আর চলে যাচ্ছে অশ্রু চোখে।"
তারপর কাগজটি সযত্নে রেখে দিলেন। একবার ভাজ খুলেও দেখেননি। তার মতে অন্যের জিনিস সে দেখে কি করবে!
বাস ছেড়ে দিয়েছে। রাহুলের চোখ ভেজা। অভিরও মন খারাপ। গাড়িতে তখন একটা গান বাজছিল। গানের মাঝে অভি রাহুল নিজেদের হারিয়ে ফেলে। চোখ বন্ধ করে রাঙ্গামাটি আসার পর যা যা ঘটেছে সব কল্পনা করতে থাকে। বাস চলছে, কখনো পাহাড়ের পাশ দিয়ে, কখনো সমতল জায়গা দিয়ে। অভি রাহুলের সেদিকে খেয়াল নেই। তারা গভীর ভাবে গানের কথাগুলো শুনছে। গান বেজে যাচ্ছে........
এসেছ তুমি হঠাৎ করে, দেখেছি তোমায় নয়ন ভরে
নির্জন সেই রোদেলা দুপুরে, হেঁটেছি দুজন ঝরণার ধারে
কি করে এই হ্নদয় ছুঁলে, মনের মানুষ আমার হলে
তুমি দূরে থাকলে চোখে দেখি কুয়াশা....
সারাক্ষণ দেখেও তোমায়,মিটবে না এই চোখের পিপাসা
এটাকে বলবে কি তুমি, আমার অবুঝ ভালবাসা?
জেনে রাখো ও প্রিয়সী, তোমার খুশিই আমার খুশি
স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি, ভালো লাগে তাই তোমার হাসি...
মন চায় দেখতে তোমায়, রাতের ঐ নীল জোছনায়
বেঁধেছ আমায় কেমন মায়ায়, তুমিহীনা লাগে অসহায়...
(চলবে)...............
------------------------অবুঝ ভালবাসা-------------------------
-------------------১০ম পর্ব-----------------
সিলেট পৌঁছাতে সকাল হয়ে যায়। বাস থেকে নেমেই ওরা একটা সি.এন.জি নিয়ে রাগিভ আলী হাসপাতালের দিকে রওনা দেয়। পৌঁছেই তাড়াতাড়ি হাঁটা ধরে রাহুলের মাকে যে রুমে রাখা হয়েছে সেই রুমের উদ্দেশ্যে। রুমে ঢুকেই রাহুল ছুটে গিয়ে তার মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলে,
-তোমার কি হয়েছে আম্মু?
-পাগল ছেলে! এইভাবে বাচ্ছাদের মতো কাঁদছিস কেন! আমার তেমন কিছুই হয়নি। ডাক্তার বললো প্রেশার বেড়েছে। তুই চলে এসেছিস এখন দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।
রাহুল এবার তার মাকে ছেড়ে শান্ত হয়ে বসলো। ডান হাতের পিঠ দিয়ে চোখ মুছে নিলো। তখন সুযোগ পেয়ে অভি বললো,
-এখন কেমন বোধ করছেন আন্টি?
-এখন বেশ ভালোই আছি। কিন্তু তোমরা ব্যাগ নিয়েই এখানে চলে আসছ কেন! বাসায় গিয়ে এইগুলা রেখে আসতে।
-এটা কোনো কথা বললে আম্মু! তুমি হাসপাতালে আর আমি প্রথমে বাসায় গিয়ে করবো কি? আচ্ছা এইসব কথা ছাড়ো। আব্বু কোথায়?
ঠিক তখনি রাহুলের বাবা রাজীব আহমেদ নাস্তা হাতে রুমে ঢুকলেন। রাহুলদের দেখে বলেন,
-তোরা এসে পড়েছিস।
-আব্বু তুমিই বলতো আম্মুর কি হয়েছিল?
-গতকাল সকাল থেকেই বেশ দুর্বল হয়ে পড়ে। আমি ডাক্তারের কাছে যেতে বললে তোর মা বলল তেমন কিছু হয়নি। কিন্তু সন্ধ্যার পর হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যায়।
-ডাক্তার কি বলেছে?
-প্রেশার বেড়েছে। মাথায় প্রচণ্ড চাপ পড়ায় অজ্ঞান হয়ে যায়। ঔষধ দিয়েছে, সকাল দশটায় আরেকবার ডাক্তার এসে দেখে যাবে। তারপর মনে হয় ছেড়ে দিবে।
রাহুলের মা বলেন,
-আমার কথায় বিশ্বাস নেই, বাবাকে জিজ্ঞেস করে বুঝলি তো যে আমি মিথ্যে বলি নাই।
-অবিশ্বাস করিনি আম্মু। আসলে পাগল যেমন বলে সে পাগল না তেমনি অসুস্থ ব্যক্তিরা সবসময় বলে তার কিছুই হয়নি। তাই নিশ্চিত... হতে... আর কি....
-হুম হয়েছে হয়েছে। এইবার বাসায় যা।
-না আম্মু। তোমাকে নিয়ে একসাথেই ফিরবো।
-যেতে বলেছি না? এখনি যাবি। আমি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ আছি। তাছাড়া আর কিছুক্ষণ পরেই আমরাও আসছি। তোদের দেখেই বুঝা যাচ্ছে অনেক টায়ার্ড। রাতের জার্নি করেছো,ঘুম হয়নি।
এই কথার পর আর রাহুলের কিছু বলার থাকে না। তারা বাসায় চলে যায়। ওদের দুইজনের বাসার দূরত্ব দুই মিনিটের। বাসায় পৌঁছে অভি দেখলো তার আপু এসেছে। অভিকে দেখে সবাই অবাক! কারণ সে যে চলে আসছে এটা কাউকে জানানো হয়নি। তার বোন অর্পিতা বলে,
-কি রে! হঠাৎ করেই চলে এলি যে? পনেরো দিন থাকবি বলে গেলি আর মাত্র ছয়দিন থেকেই চলে এলি!
-কাল রাতে রাহুলের আম্মু হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন।
-রাজিয়া আন্টি অসুস্থ! কি হয়েছে উনার?
-প্রেশার বেড়েছে নাকি।
তখন অভির মা আমেনা বেগম এবং অর্পিতার ঢংগি ননদ রিপা রুমে আসে। আমেনা বেগম ছেলেকে দেখে বলেন,
-খবর না দিয়েই চলে আসলি যে! ইশ এই ছয়দিনেই মুখটা একেবারে শুকিয়ে গেছে। খাওয়াদাওয়া একদম করিসনি মনে হয়।
-আপনার মায়ের মন বলে এমন মনে হচ্ছে আন্টি। আমার তো মনে হচ্ছে রাঙ্গামাটির মতো সুন্দর জায়গায় গিয়ে অভি ভাই আরো সুন্দর হয়ে গেছে। আর বেশ মোটাও হয়েছে।
কথাটি অর্পিতার ননদ রিপা বললো। রিপা এইবার দশম শ্রেণীতে পড়ছে। বয়স কম হলেও বুদ্ধি অনেক বেশি। পড়াশুনায়ও ভালো। ক্লাসের সেকেন্ড স্টুডেন্ট। নাম্বার ওয়ান জায়গাটা একটা ছেলের দখলে আছে। তাই স্বাভাবিক ভাবেই ছেলেটি রিপার দুচোখের বিষ। ব্যাপারটা অভি বুঝতে পারে, এইজন্য অনেক সময় রিপাকে ক্ষেপানোর জন্য ঐ ছেলের প্রসঙ্গ তোলে। এখন রিপার কথাটি শুনে অভি মনে মনে বলে, "এই শুরু হল ঢং দেখানো। ঢংগি একটা।" তবে অভিও ছেড়ে দেয়ার পাত্র না। বেশ কায়দা করে উত্তর দিলো।তাই নাকি রিপা? তাহলে তোমাকে রাঙ্গামাটির কোনো ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে তোমাকে সেখানে থাকার ব্যবস্থা করে দিতে হয়। আমার কাছে অনেক ছেলের ছবি আছে। এরমধ্যে কোনো একজনকে তোমার পছন্দ হয়ে যাবে।
-ইশ এত সহজ। দূরের কাউকে বিয়ে করবোই না। আশেপাশের কাউকে বিয়ে করে সবার কাছেই থেকে যাবো।
-এই তোরা থামবি? তোদের এইসব খুনসুটি পরে করিস।
অর্পিতা বিয়ের পর রিপাকে তুমি বলেই ডাকতো। কখনো তুই বলতো না। কিন্তু কিছুদিন পর রিপা মুখ গোমড়া করে বলে,
-ভাবী তুমি এখনো আমাকে আপন ভাবতে পারোনি।
-কেন রিপা! আমি আবার তোমার সাথে কি করলাম?
-এইযে তুমি করে বলো। অথচ অভি ভাইকে সবসময় তুই করে ডাকো। আসলে আমি তো তোমার ননদ।
-দেখো রিপা, আমি আর অভি শুধু ভাইবোন না। বন্ধুও বটে। আর বন্ধু ছাড়া কাউকে তুই করে ডাকা যায় না।
-কিন্তু তোমার মুখে তুই ডাকটা শুনতে আমার ভালো লাগবে।
-ঠিক আছে, তোর ইচ্ছে যখন তবে ডাকবো।
এরপর থেকে সে রিপাকে তুই বলে ডাকা শুরু করে। এখন অর্পিতার কথায় ওরা দুজন আর ঝগড়া বাড়ালো না। তখন অর্পিতা তার মাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-আম্মু রাজিয়া আন্টি নাকি অসুস্থ। কাল রাতে অজ্ঞান হয়ে গেছিলেন।
-বলিস কি! অজ্ঞান হয়ে গেছিলেন? তাহলে তো আজ বিকেলে একবার যেতে হয়।
আর অভি তুই গোসল সেরে নে, খাবার দিচ্ছি।
অভি তার রুমে চলে যায়। গোসল শেষ করে নাস্তা করে অভি তার রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে লাম্বা ঘুম দিলো।
(চলবে)...............
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ