== The Dark Express ==
:
সারাটা রাত আজাদ সাহেবের ঘুম হয়নি। কখন যে সকাল হবে শুধু এটাই ভাবছে। নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়েও চোখগুলো বন্ধ করে রাখে। আজাদ সাহেবের মনে হচ্ছে এই রাত যেন শেষ হবার নয়, একটু পরপর ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। নাহ আর না, সময়টা যেন চলছেইনা।
:
আজাদ সাহেব। ঢাকায় থাকে। বয়স ৩২। একাই একটা ফ্লাটে থাকে। বিরহের কারনে আর জীবনে বিয়ে করা হয়নি। সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আর কোনদিন বিয়ে করবেনও না। ছোটখাট একটা ব্যবসা করে। এই ব্যবসার কাজেই উনাকে আগামীকাল সকালে রাঙামাটি যেতে হবে। তাই সকাল হওয়ার জন্য এত ছটফট করছেন, অবশ্য এর একটা কারনও আছে। জায়গাটা উনার অনেক পছন্দের, প্রায় ১২ বছর আগে উনার প্রেমিকাকে নিয়ে একবার রাঙামাটি গিয়েছিল। অনেক আনন্দ করেছিল দুজন। দুরের একটা পাহাড়ের চূড়ায় উঠেছিল দুজন, জায়গাটা ছিল অনেকটাই জনশূন্য, শুধু নিচ দিয়ে ঘন্টাখানেক পরপর একটা গাড়ি যেত। সেদিন পাহাড়ের চূড়ায় দুজন উঠে আজাদ সাহেব তার প্রেমিকাকে চিৎকার করে বলেছিল "তোমাকে অনেক ভালোবাসি প্রিয়"। এরপর আসার সময় স্মৃতি হিসেবে আজাদ সাহেব উনার গায়ের শার্ট আর উনার প্রেমিকা পায়ের একটা নুপুর রেখে এসেছিল। বোধহয় এজন্যই আজাদ সাহেব এত বেশি ছটফট করছেন।
:
সকাল হতেই আজাদ সাহেব বেরিয়ে যান। যথাসময়ে তিনি রাঙামাটি পৌছান। এরপরেই শুরু হয়ে যায় তার ব্যস্ততা। কাজ শেষ করতে করতে প্রায় রাত ১০টা বেজে যায়। কাজ শেষ করেই তিনি হোটেলে চলে আসেন। কিন্তু কোনভাবেই তার চোখে ঘুম আসছেনা। পিছনের স্মৃতি গুলো তার মনটাকে অনেক নাড়া দিচ্ছে। সময় যতো এগুোচ্ছে আজাদ সাহেবের কষ্টটাও যেন ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। শেষমেষ আজাদ সাহেব উঠে পড়লেন। তাকে এখনই পাহাড়ের চূড়ায় যেতে হবে। বের হওয়ার সময় তিনি হোটেলের গার্ডের সাইকেলটা নিয়ে বের হলেন কারন এখান থেকে পাহাড়টা প্রায় খানিকটা দুরেই।
:
ঘড়িতে তখন ১১.০৫ মিনিট। আজাদ সাহেব মাত্রই যে রাস্তাটা দিয়ে পাহাড়টার দিকে যায় সেই রাস্তায় প্রবেশ করলেন। প্রবেশ করতেই একটা বিশাল ট্রাক তার পাশকাটিয়ে চলে গেল। আজাদ সাহেব যত দ্রুত সম্ভব সাইকেল চালাচ্ছেন। একটুপর পিছন থেকে একটা বাস হর্ন বাজাতে বাজাতে আজাদ সাহেবের একদম পাশ কাটিয়ে চলে গেল, একটুর জন্যই বেচে গেলেন তিনি। আরেকটু হলেই বাসটার সাথে সংঘর্ষ হতো। বাসটায় লিখা ছিল Dark Express, আজাদ সাহেব নামটা দেখে মুচকি হাসলেন। আজকাল কত নামের যে পরিবহন আছে তো বুঝা বড়ই মুশকিল।
তিনি সামনের দিকে যেতে থাকলেন। সাইকেল নিয়ে তিনি যত গভীরে প্রবেশ করছেন গাড়ির চাপ যেন ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন একটু পরপরই ট্রাক- বাস- প্রাইভেট কার সহ নানা রকম গাড়ি যাচ্ছে। আজাদ সাহেব একটা জিনিস বুঝতেছন না, এখানেত গাড়ি থাকার কথা না, রাস্তাটা একদম ই চিকন ছিল, ছোটখাট গাড়ি যেতেই কষ্ট হতো, আর এখন এত বড় বড় গাড়ি দিব্যি চলে যাচ্ছে।
আজাদ সাহেব আরেকটু সামনে এগুনোর পর দেখতে পেলেন ছোটখাট একটি বাজার। বাজারটা দেখে তিনি যতটা না খুশি হয়েছেন তার চেয়ে বেশি অবাক হয়েছেন। এখানে বাজার আসবে কিভাবে!!! তবে কি তিনি ভুল পথে আসলেন!!! আজাদ সাহেব সামনের দিকে তাকালেন, গাড়ির লাইটের আলোতে একটু দূরে পাহারটা দেখা যাচ্ছে, নাহ তিনিতো ঠিক পথেই এসেছেন।
:
আজাদ সাহেব যখন বাজারটার কাছে আসলেন তখন দেখতে পেলেন ছোটখাট একটি বাজার। তেমন মানুষ নাই এখন। ৭-৮ জন মানুষ গোলোকার ভাবে বসে কি যেন করছে। আর পাশে একটি দোকানে আগরবাতি লাগানো।
আগরবাতির ঘ্রানে চারদিক একদম সুবাসিত হয়ে গেছে, তার পাশের দোকানেই দেখা গেল কয়েকজন মহিলা সাথে একটা বাচ্চা বসে বসে খাবার খাচ্ছে। আজাদ সাহেব পরিবেশটার কোন মানেই বুঝতে পারলেন না। এখানেই বাজার, এখানেই ঘর!!!
আজকাল যে পাহাড়ী এলাকাগুলোও এতটা পরিবর্তন হয়ে গেছে আজাদ সাহেবের জানা ছিলনা। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে আজাদ সাহেব রাস্তার মাঝখানে চলে এসেছে বুঝতে পারেন নি। হঠাৎই একটা বিশাল ট্রাক আজাদ সাহেবকে পিছন থেকে ধাক্কা দেয়, আজাদ সাহেব সাইকেলটা সহ ধুমরে মুচরে গিয়ে ৭-৮ জন লোকের গোলাকার মিটিংটার পাশে গিয়ে পড়লেন। সাথে সাথেই আগরবাতির দোকানটা থেকে ২জন লোক দৌড়ে আসলো। আহারে সাবধানে চলতে পারেন না?? জানেনইতো এখানে অনেক গাড়ি চলে।
আজাদ সাহেব খেয়াল করলেন এতবড় একটা এক্সিডেন্ট হওয়ার পরেও তার কিছুই হয়নি, সামান্য হাতটা একটু কেটে গেছ। তিনি কিছুই বুঝতে পারছেন না, তিনি দেখলেন যে মহিলাগুলো আর বাচ্চাটা একটু পরপর তার দিকে তাকাচ্ছে আর খাবার খেয়ে যাচ্ছে। ৭-৮ জন লোকতো এখনও গোল ধরেই বসে আছে, যেন তারা বুঝতেই পারেনি এখানে একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে।
তাই আজাদ সাহেব বাধ্য হয়েই আগরবাতি দোকানের দুজনকে জিজ্ঞেস করলেন...
"আচ্ছা ভাই তারা এভাবে বসে আছে কেন??
"তার আগে বলুন আপনি কোথায় যাবেন, আপনাকে জলদি হাসপাতালে যেতে হবে।
"জ্বি আমি ঐ সামনের পাহাড়টার দিকেই যাবো।
কথাটা শুনেই একজন বলে উঠলো এই যা একটা বাস থামা, আমি উনাকে নিয়ে আসছি।
"ভাই বললেন নাতো উনারা কেন এভাবে গোল ধরে বসে আছে??
"আসলে একটু আগে একটা রোড এক্সিডেন্টে একজন লোক মারা গেছে তাই। আপনার ভাগ্য ভালো আপনি বেচে গেছেন।
কেন যেন আজাদ সাহেবের অনেক মায়া হলো লোকটার জন্য। তিনি ভাবলেন লোকটাকে একটু দেখে যাই, তাই তিনি লোকটাকে দেখার জন্য উঠে ওদের কাছে গেলেন।
"ভাই একটু লাশটার মুখ থেকে কাপড়টা সরাবেন?
৭-৮ জনের মাঝে কে যেন কান্না করতে করতে বলে উঠলো...
"কেন?
"আমি একটু উনাকে দেখতে চাই।
"একজন লাশটার মুখটা থেকে কাপড়টা সরিয়ে দিল।
আজাদ সাহেব যখনি লাশটার মুখের দিকে তাকালেন তখনি তার ধম বন্ধ হয়ে আসছিল। চোখগুলো বের হয়ে যেতে চাইছিল, তার রক্ত শরিরের ভেতরই লাফাতে শুরু করে। কারন এটা যে তারই লাশ। একদম তার মতো দেখতে। হঠাৎই লাশটা চোখ খুলে ফেলে, চোখদুটো তার ভীষন লাল, যেন আগুনের কুন্ডুলি। তার মুখ থেকে ধোয়া বের হচ্ছে, আজদ সাহেবেকে দেখেই লাশটা মুচকি হেসে দেয় আর বলে...
"কি ব্যাপার? তোর এতক্ষণ লাগে আসতে?? আমি সেই কখন থেকে তোর জন্য অপেক্ষা করছি। আয় আমার কাছে আয় এই বলেই লাশটা আজাদ সাহেবের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে।
অন্যদিকে লাশটার কথা শুনে ৭-৮ জন লোক কান্না থেকে হাসতে শুরু করে।
-
আজাদ সাহেব কি করবে ভেবে না পেয়ে হঠাৎই মনে হলো আগরবাতি দোকানের মানুষগুলোর কথা, তিনি পিছনে ফিরে দেখলেন যে ঐ দুজন মানুষ চিৎকার করে তাকে ডাকছে, সাথে একটা বাসও দাড়িয়ে আছে। আজাদ সাহেব আর কিছু না ভেবেই দৌড় দিলেন, পিছনে ফিরে দেখলেন যে আজাদ সাহেবের মতো দেখতে লাশটা উড়ে উড়ে আসছে। আর ৭-৮ জন লোক দৌড়ে আসছে। আজাদ সাহেব প্রানপনে দৌড়ে বাসটায় উঠে পড়েন, পিছনে ফিরে দেখেন যে লাশটা বলতেছে, হায় হায়, কোথায় পা দিলি তুই। আমিতো তোকে নিতে আসছিলাম।
:
বাসটায় উঠেই আজাদ সাহেবে হাফ ছেড়ে বাচলেন। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তিনি। একটুপর খেয়াল করলেন বাসটার প্রথম দিকে কোন যাত্রি নেই, সবাই পিছনের সিটগুলোতে বসে আছে। আর বাসটার নাম- Dark Express Two, নিচে আবার ছোট্ট করে লিখা, Only For you.
আজাদ সাহেব এর কিছুই বুঝলেন না।
"কিছু মনে করবেন না আপনারা, আমার একটা সমস্যা হয়ে গিয়েছিল তাই বাসে উঠলাম।
হঠাৎই পিছন থেকে দুজন লোক হেসে হেসে বলে উঠলো...
"আরে সমস্যা নাই। আমরাইতো আপনাকে বাসে উঠালাম।
একি!!!!! এতো আগরবাতি দোকানের দুজন মানুষ। তারা এখানে আসলো কিভাবে!!!!
তখনই পিছন থেকে দুজন মহিলা বলে উঠলো...
"ইশশ। আপনার হাতটাতো অনেকখানি কেটে গেছে।
আজাদ সাহেব যখন উনাদের দিকে তাকালেন তখন তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে যান, এতো সেই বাজারের মহিলাগুলো, তারা এখানে কেন!!! আজাদ সাহেব নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না যেন!! তার হাত পা প্রচন্ড ভাবে কাপতেছে। তিনি এবার বাসের সামনের দিকে তাকালেন।
তাকাতেই তার অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়। তিন এসব কি দেখছেন, তিনি কোথায় চলে আসছেন!!! এটা কোন জায়গা!!!
তিনি দেখলেন যে গাড়িতে কোন ড্রাইভার নেই, ড্রাইভার ছাড়াই গাড়িটা চলছে। তবে সেটা কোন রাস্তায় না, একটা চিকন সুতার উপর দিয়ে, আর বাসটার দুইদিকে শুধু পানি আর পানি।
হঠাৎ পিছন থেকে একটা বাচ্চা দৌড়ে এসে আজাদ সাহেবের হাতটা ধরলেন...
আজাদ সাহেবে পিছনে ফিরে তাকাতেই আরেকবার হতভম্ব হয়ে যান। এটাতো সেই বাচ্চাটা...
"আংকেল যাবেন আমাদের সাথে??
"------
"যাবেন আংকেল??
"কোথায়?
"দুরে, অনেক দুরে...
"না না আমি যাবোনা। তোমরা যাও..
"চলেন না আংকেল সবাই একসাথে যাই??
"নাহ মামুনি আমি যাবোনা।
এবার বাচ্চাটা কেদে দিল, কান্না করতে করতে মহিলাগুোলকে বলতে থাকলো...
"আম্মু বলোনা উনাকে আমাদের সাথে যেতে?
তখন ঐ মহিলাগুলো আজাদ সাহেবকে হুংকার দিয়ে বলে যে..
"না গেলে আমাদের গাড়িতে উঠছস ক্যান?? জানোসনা এটা আমাদের গাড়ি??
আজাদ সাহেব তখনি আর নিজের থাকেন না, হারিয়ে ফেলেন নিজকে, তার পুরো শরীর কাপছে।
হঠাৎ তিনি তার হাতের আংগুলে মৃদু ব্যাথা পেলেন। হাতের দিকে তাকাতেই তার শ্বাস এবার একদম ই বন্ধ হয়ে যায়। তিনি আর নিতে পারছেন না, তার বুকের মাঝে একটা পাথর দেওয়া হয়ে গেছে অলরেডি।
তিনি দেখতে পেলেন যে বাচ্চা মেয়েটা তার হাতের আংগুল গুলো চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে। অলরেডি তিনটা খেয়ে ফেলেছে। আজাদ সাহেব আর পারলেন না, ইয়া আল্লাহ বলে তিনি একটা চিৎকার দেন। তারপরেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
:
পরে যখন আজাদ সাহেবের জ্ঞান ফিরে তখন তিনি নিজেকে আবিস্কার করেন হাসপাতালে। চারপাশে অনেক লোক ভীর জমিয়েছে। সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
তিনি এখানে কিভাবে আসলেন জানতে চাওয়াতে ডাক্তার বললো- আজকে সকালের পাহাড়ের পাশের ছোট্ট ব্রীজটার নিচে আপনাকে পাওয়া যায়।
পরে ডাক্তার সাহেব তাকে জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছিল তার সাথে, আজাদ সাহেব পরে ডাক্তারকে সবকিছু খুলে বলেন।
:
তখন ডাক্তার সাহেব বলেন, আসলে এমন অনেক আগেও কয়েকবার হয়েছে। অনেকেই এখানে গভীর রাতে বাস চলতে দেখেন। মাঝেমাঝে অনেক ট্রাক, প্রাইভেট কারও দেখা যায়।
আজ থেকে ৬ বছর আগে একটা মিনিবাস এখান দিয়ে যাচ্ছিল, তারা সবাই পিকনিক করে ফিরছিল। কিন্তু ব্রীজটার কাছে মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় বাসের সব যাত্রিরা মারা যায়।
এরপর প্রতিনিয়ত এখানে এক্সিডেন্ট হওয়া শুরু হয়। কয়েকঘন্টা পরপর এখানে এক্সিডেন্ট হতো, একটাসময় এর কারন সবাই বুঝতে পারে। তাই আজ থেকে ৫ বছর আগেই এই রোড বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখন কোন মানুষও সেদিকে যায়না।
আজাদ সাহেব শুধু হা করে ডাক্তারের কথাগুলো শুনছিলেন....
:
--- লেখা: Ariyan Hasan (পৌটুসির জামাই) --
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ