"প্লে বয়"
.
.
গফরগাঁও রেল স্টেশনের একটি বেঞ্চে বসে অাছি অাধ-ঘন্টা ধরে।
ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফেরার পর অাবারও ছুঁটে যেতে হচ্ছে কর্মস্থলে।
অামি মাস্টার্স কমপ্লিট করা ছেলে বেকার ছিলাম প্রায় তিন বছর, কোথাও চাকরি হচ্ছিলো না অামার।
বর্তমানে মামা অার মোটা অঙ্কের টাকা ছাড়া চাকরি পাওয়া অার অাকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া সমান।
মধ্যবিত্ত সংসারের বড় ছেলে হয়ে কতদিনই অার বসে থাকতে পারি, নিজের কাছেই লজ্জাবোধ হত।
তাই এখন শহরের বড় একটি ফার্নিচার শপের ম্যানেজার হিসেবে অাছি, স্যালারি তেমন বেশি নয় তবুও চলে যায় কোনমতে।
.
ট্রেন টা এখনো অাসছে না, প্রায় এক ঘন্টা হতে চললো এখানে বসে অাছি, মনে হয় একটু তারাতারিই চলে এসেছি। যদিও বসে থাকতে খারাপ লাগছে না, থমথমে বাতাস সাথে মেঘমেদুর অাকাশ খুব ভালো লাগছে।
স্টেশনে তেমন কোনো মানুষের কোলাহল নেই, কারন ঈদের ছুঁটি শেষ করে সবাই অনেক অাগেই নিজের কর্ম জীবনে ফিরে গিয়েছে। অামার এইসব কোলাহল পছন্দ নয় তাই কিছুদিন দেরি করে ফিরতে হচ্ছে।
এর জন্য অবশ্য শপের মহাজন কে একটা ছোট্ট মিথ্যে কথা বলেছি সেটা হলো অামার অসুস্থতার কথা বলে কিছুদিন বেশি থেকে গেছি।
তবে অার কত? ১৫ দিন হয়ে গেছে, অার তো থাকা যায়না।
.
হঠাৎ করে পিছন থেকে কেউ একজন ডাক দিলো, অামি কখনো কারো প্রথম ডাকে সারা দেইনা। ছোট বেলায় দাদু বলেছিলো প্রথম ডাকে সারা দিতে নেই, এটা হতে পারে কোনো অলৌকিক ডাক এ ডাকে সারা দিতে নেই, ক্ষতি হতে পারে।
যদি তিন-চার বার ডাক দেয় তবেই সারা দিব এর অাগে নয়।
এবার সে তীক্ষ্ণ গলায় অাবারও ডাক দিলো, কন্ঠটা বেশ পরিচিত মনে হচ্ছে অামার। এমন মনে হচ্ছে কোনো এক কাছের বন্ধুর গলা এটা, কতযুগ অামরা এক সাথে ছিলাম তার হিসেব নেই।
তাই অামি কৌতূহল ভাবে পিছনে ফিরে তাকালাম।
.
পিছনে ফিরতেই দেখি এক পাগল দাড়িয়ে অাছে, দেখতে কেমন যেন এক ধরনের বন-মানুষের মত লাগছে।
তার চুলো গুলো অস্বাভাবিক বড়, দাড়ি গুলোও সেম, চেহারা দেখলেই ভিতরটা কেমন যেন ভয়ে কেঁপে উঠে।
ছিঃ কি বিশ্রী কন্ধ অাসছে ছেলেটির গা থেকে, মনে হয় এখনি নারি ভুরি সব ভেতর থেকে বের হয়ে অাসবে।
এই বিশ্রী গন্ধ বাতাসের সাথে মিসে একাকার, অার বসে থাকা যাচ্ছে না। অামি ব্যাগ হাতে নিয়ে উঠে চলে যেতেই পাগল টা এবার অামার নাম ধরে ডাক দিলো। অামি যথেষ্ঠ বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে অাছি তার দিকে, এই উন্মাদ টি অামার নাম জানলো কিভাবে।
.
অামি বিস্মিত মাখা কন্ঠে জিজ্ঞাস করলাম "কে তুমি" পাগলটি সদুত্তরে কিছু বললো না, শুধু একটি দ্বীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো।
অামি এবার যথেষ্ঠ বিব্রত হয়ে সেই একই প্রশ্ন করলাম "কে তুমি"
পাগলটি এবার বিষণ্নচোখে অামার দিকে তাকিয়ে অাছে, কিছু একটা বলতে চাইছে কিন্তু বলতে পারছে না। এমন মনে হচ্ছে সৃষ্টিকর্তা কিছুক্ষণের জন্য তাকে বাকশক্তিহীন করে দিয়েছে।
.
-অারিফ কেমন অাছিস? (অস্পষ্ট গলায় কথাটা বললো)
.
অামি তৃতীয় বার সেই একই প্রশ্ন করলাম
.
-কে তুমি?
.
পাগলটি এবার ক্ষীণস্বরে বললো "অামি জয়"
.
-হোয়াট???????
.
মনে হয় অামি অাকাশ থেকে পড়লাম, এটা জয়? বিশ্বাস করতে খুব কষ্টে হচ্ছে অামার।
.
-তো...তোর এই অবস্থা কিভাবে হয়েছে?
.
জয় অামার কাঁধে হাত রেখে বললো বেঞ্চে বস, অামি বসলাম ও অামার পাশেই বসলো।
অামি ওর এই অবস্থা থেকে যথেষ্ঠ অবাক হয়েছি, কিন্তু অামার কিঞ্চিত পরিমানও অবাক হওয়ার কথা ছিলো না। কারন তার কর্মের ফল সে এখন ভোগ করছে। ওর হাতে বিশাল এক ফোরা উঠেছে, ফোরার অাশেপাশে পঁচন ধরেছে যার কারনে এমন বিশ্রী গন্ধ। এতটাই বিশ্রী যে বোমির সাথে এখনই নারি-ভুরি সব ভিতর থেকে বের হয়ে অাসবে।
.
ফিরে দেখা....
অামরা তখন অনার্স "2nd Year" পড়তাম, মেসে অামরা তিন বন্ধু এক সাথে ছিলাম "অাবির-জয় অার অামি" অাবির ছিলো খুব ধার্মিক ছেলে, কলেজে পড়লেও সকাল সন্ধা কোরঅান এর পাতায় নিজেকে মগ্ন রাখতো। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সহিত পড়তো।
অামরা যদি কখনো ভুল করতাম তখন অাবির কোরঅানের একটি অায়াত বলতো যে এই ভুলটির গুনাহ্ কি হবে।
এমন একটি বন্ধু পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার, যে সকল ভুল গুলো চোখে অাঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিবে।
.
অার জয় ছিলো একদম ফুর্তিবাজ, যাকে ইংরেজিতে বলে "প্লে বয়"
সারাদিন দশ-বারোটা সিম দিয়ে মেয়েদের সাথে কথা বলা ছিলো তার কাজ।
কত মেয়ের যে সতিত্ব নষ্ট করেছে তার কোনো হিসেব নেই। তার প্রেমের সম্পর্ক গুলো রুম পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে।
জয় দেখতেও অসম্ভব সুন্দর ছিলো, রেডিওতে কথা বলা ব্যক্তিদের মত সেও সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে পারতো।
যা শুনে মেয়েরা অাকৃষ্ট হয়ে যায়।
.
কিন্তু মেয়েরা ওর ভিতরের পশুটাকে কখনো দেখতে পেত না, কি অদ্ভুত মেয়েরা জয় এর চোখের ভাষাও বুঝতে পারতো না যে জয় কি চায়।
হয়ত অাল্লাহ্ এমন ক্ষমতা মেয়েদের দেননি, যদি দিতেন তাহলে মেয়েরা ঠিকই বুঝে নিত।
মেয়েরা জয়ের ভিতরের পশুটার দেখা ঠিকই পায় কিন্তু তখন খুব দেরি হয়ে যায়, হারিয়ে ফেলে নিজের সতিত্ব।
.
একদিন অামরা কলেজ পথ ধরে হাটছি, অামি জয় অার অাবির। হঠাৎ পাশ থেকে একটি মেয়ে জয়কে ডাক দিলো, জয় সেই ডাকে কর্ণপাত করে মেয়েটির সামনে হেটে চলে গেলো। অামরা বিষাদগ্রস্ত চোখে তাকিয়ে অাছি, বুঝার বাকি নেই মেয়েটি তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।
মেয়েটি দেখতে খুব সুন্দর, চেহারায় এক অদ্ভুত মায়ার ছাঁপ, যে মায়ার ছাঁপে লুকিয়ে অাছে ভালোবাসার অন্ধ বিশ্বাস অার ক্ষমতা।
অামি একবার ভাবলাম মেয়েটাকে সব বুঝিয়ে বলবো কিন্তু লাভ হবেনা, কারন এর অাগেও চারজনকে বুঝিয়েছিলাম কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।
.
হঠাৎ একদিন জয় কোথায় যেন যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে, অামি অার অাবির অাড় চোখে তার দিকে তাকিয়ে অাছি।
অামি জয়কে ক্ষীণস্বরে জিজ্ঞাস করলাম
.
-কিরে কোথায় যাচ্ছিস?
.
-ওইযে সেদিনের মেয়েটার সাথে ডেটিং এ যাবো।
.
-নিশ্চই রুম ডেট?
.
-হ্যা
.
-অার কত মেয়ের সাথে তুই এমন করবি বল জয়? (অাবির)
.
-অারো অনেক করবো
.
-হযরত সাহল ইবনে সা'দ (রা) হতে বর্ণিত, হযরত রাসূলুল্লাহ্ (স.) ইরশাদ করেছেন,
যে ব্যক্তি অামার জন্য তার দুচোয়ালের মধ্যবর্তী বস্তু, অর্থাৎ জিহ্বার এবং তার দু'উরুর মধ্যবর্তী তথা লজ্জাস্থানের যিম্মাদার হবে (অর্থাৎ সংরক্ষণ করবে) অামি তার জন্য জান্নাতের যিম্মাদার হব। (অাবির)
.
-অারে রাখতো এইসব হাদিসের কথা, এইগুলা মানার সময় এখন নাকি? যখন বুড়ো হব তখন এইসব মেনে চলবো।
এখন হলো বিন্দাস লাইফ, ফুর্তি অার মাস্তি ই হলো জীবনের অাসল অংশ।
এই অাবির তোকে দেখ, সারাদিন তোর মাথায় সাধা একটা টুপি দিয়ে রাখিস। পড়িস কোথায়? কলেজে কিন্তু মাথায় থাকে টুপি, অারে অামার মত চল। কয়টা মেয়ের সাথে প্রেম করবি অামাকে বল পটিয়ে দিব।
অার অারিফ তুই, সারাদিন গল্পের বইয়ে নিজেকে ডুবিয়ে রাখিস। এইসব দিয়ে কি হবে বল?
.
ওর মুখ থেকে এইসব শুনে একটি দ্বীর্ঘশাষ নিলাম, সাথে তীক্ষ্ণ গলায় বললাম
.
-অার কয়কা মেয়ের সাথে এমন করবি বল? অনেক হয়ছে এবার এইসব বাদ দে। তিনি কিন্তু সব দেখছে, মেয়েরা মায়ের জাত তাদের অভিশাপ কতটা ভয়ানক হয় সেটা তুই পরে উপলোব্ধি করবি। প্লিজ মেয়েদের সতিত্ব নিয়ে খেলিস না জয়।
.
জয় হৃষ্টগলায় বললো
.
-ধুর, সবে তো মাত্র সাতাত্তর টা মেয়েকে রুম পর্যন্ত এনেছি, সেঞ্চুরি তো করতেই হবে তাই না?
জানিস ক্রিকেটারের সাথে অামার অনেক মিল অাছে। তারা সেঞ্চুরির জন্য মাঠ কাঁপায় অার অামি সেঞ্চুরির জন্য কাঁপাই খ***
.
-ছিঃ জয়, তুই কত নিচু শ্রেনির মানুষ ছিঃ। এতদিন অামরা তোর সাথে ছিলাম? তুই একটা পশু। পশু বললেও ভুল হবে, তুই পশুর চেয়েও নিচু শ্রেনির
.
-মুখ সামলে কথা বল অারিফ
.
অাবির বিষাদগ্রস্ত গলায় বললো ওর সাথে অামাদের থাকা অসম্ভব, তাই অামরা অালাদা হয়ে গেলাম।
অামি ভেবেছিলাম এরপর থেকে জয় পরিবর্তন হবে, কিন্তু অাগের থেকেও বেশি খারাপ হয়ে গেছে। তার ভিতরের পশুটা ধিরে ধিরে বিশাল অাকাড়ে ধারন করছে।
জয় হয়ত জানেনা এর ফলও ভয়ানক, ও যে ধ্বংসের মুখে দাড়িয়ে অাছে সেটা সে বুঝতে পারছেনা।
.
হঠাৎ করে জয় মেস ছেড়ে চলে যায়, তার কিছুদিন পরই একটি মেয়ে অামাদের মেসে জয়ের খোঁজ নিতে অাসে। মেয়েটি দরজার বাহির থেকে যখন ডাক দিলো "ভিতরে কেউ অাছেন?" তখন দরজাটা অামি খুলে দিলাম।
মেয়েটিকে দেখে অামি হতভম্ব হয়ে গেলাম, এ তো সেই মেয়েটা যাকে সেদিন কলেজ পথে জয়কে ডাক দিতে শুনেছিলাম।
.
সেদিনের মত মেয়েটির চোখ-মুখে অাজ অার মায়ার ছাঁপ দেখা যায়নি। মেয়েটির চোখ মুখ জুরে এখন শুধুই হতাশার ছাঁপ।
মেয়েটি হঠাৎ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদা শুরু করলো। কান্না কন্ঠে অামাকে জিজ্ঞাস করলো "জয় কি অাছে?"
অামার অার বুঝার বাকি নেই মেয়েটির সাথে কি ঘটেছে, মেয়েটির চোখে অামি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি সে সব হারিয়ে এখন শূন্য।
অাচ্ছা মেয়েরা কেন এই চোখে ভাষা বুঝতে পারেনা? প্রশ্নটি বার বার করতে ইচ্ছে হয়।
.
-জয় অনেক অাগেই এখান থেকে চলে গেছে
.
-কি? তাহলে অামার কি হবে? অামার গর্ভের সন্তানের কি হবে?
.
সেদিন মেয়েটির এই কথার উত্তর দিতে পারিনি, শুধু বুঝাতে চেয়েছি সমাজের চোখ থেকে নিজের সম্মান কে বাচাতে হলে এই সন্তান কে তোমার হত্যা করতে হবে।
মেয়েটি সেদিন ফিস ফিস করে কি যেন বলে অশ্রুভরা চোখ নিয়ে চলে গেছে।
.
এরপর থেকে জয়ের অার দেখা মিলেনি, মিলেনি মেয়েটার দেখাও। হঠাৎ অাজ জয়কে এই রুপে দেখে সত্যিই অামি বিস্মিত তবুও কিছু করার নেই, জয়ের মুখ থেকে অাজ শুনলাম তার গোপনঅঙ্গেও ধরেছে পচন। সে তো এটারই যোগ্য ছিলো।
ভাবতে ভাবতে অামার ট্রেন চলে অাসে, অামি জয়কে কিছু না বলেই ট্রেনে উঠে গেলাম।
#সমাপ্ত.....।
.
লেখাঃ Arif Mahamud
(Silent Writer)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ