------------------------অবুঝ ভালবাসা-------------------------
-------------------১১তম পর্ব-----------------
পরেরদিন সকালবেলা নাস্তা করার পর অভির রুমে অভি অর্পিতা ও রিপা বসে গল্প করছিল। রিপার জোরাজুরিতে তাকে রাঙ্গামাটির গল্পই করছিল। সেখানে কি কি দেখেছে, কি কি করেছে এইসব। রিপা থাকায় সে অনামিকা আর মায়ের কথা এড়িয়ে যাচ্ছিল। কথা বলতে বলতে এক সময় পাহাড়ে উঠার কথা চলে আসে। তখন তার অনামিকার গাওয়া গান মনে পড়ে....
মনের আকাশে শুধু তুমি
ভেসে চলো দিবানিশি
স্বপ্ন দেখি তোমায় নিয়ে
তোমায় শুধু ভালবাসি....
গানটিতে অনামিকা তার মনের কথাগুলো বলে দিয়েছিল। অভিকে চুপ করে থাকতে দেখে রিপা তাড়া দিলো,
-কি হল অভি ভাই,হঠাৎ থেমে গেলে যে! একা একা পাহাড়ে ওঠার পর কি হল বলো।
অভি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,
-আর কত বলবো! কথা বলতে বলতে মাথা ধরেছে। তুমি কি বুয়াকে গিয়ে চা দিতে বলতে পারবে?
-একটু আগেই না চা খেলে।এখন আবার!
-ঠিক আছে চা লাগবে না। কফি দিতে বলো। একটু আগে তো আর কফি খাইনি।
-উফ দুইটাই তো এক। আচ্ছা যাচ্ছি।
রিপা চলে যাওয়ার পর অর্পিতা বলে,
-সত্যিই কি মাথা ধরেছে নাকি ওকে সরাতে মিথ্যে বলেছিস?
-দুটাই। মাথা ধরেছে হালকা। জানিস আপু ঐ পাহাড়ে আমার সাথে অনামিকাও ওঠেছিল। আর সেখানেই আমি জানতে পারি অনামিকা আমাকে ভালবাসে। আজ বারবার ওর কথাই আমার মনে পড়ছে। সারাক্ষণ ওর মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে। কেন জানি আমার মনে হচ্ছে অনামিকা খুব কষ্টে আছে।
-অনামিকার কষ্ট পাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছুনা। এইরকম পরিস্থিতিতে যে কেউ কষ্ট পাবে।
-আপু তুই এখন যা, আমার কিছুই ভালো লাগছে না।একটু একা থাকবো।
রাহুল অভির রুমে এসে তাকে দেখতে না পেয়ে ডাক দিলো। অভি তখন বাথরুমে গোসল করছিল। সে রাহুলকে বসতে বললো। রাহুল অভির বিছানায় গিয়ে বসলো। বালিশটা সরাতে গিয়ে দেখলো বালিশের নিচে একটা ডাইরি। ডাইরির উপর লেখা আছে "রাঙ্গামাটির জন্য"। রাঙ্গামাটির জন্য দেখে তার পড়ার আগ্রহ হল। তাছাড়া অভি যতক্ষণে বের না হবে কিছু একটা করতেই হবে। রাহুল ডাইরি পড়া শুরু করে। যত পড়ে ততই চমকে চমকে উঠে। তার অজান্তে এতকিছু হয়েছে রাঙ্গামাটিতে আর সে বুঝতেই পারেনি। পড়াশেষ হয় রাহুলের, তখন অভির বাথরুমের দরজা খুলার শব্দ হয়। অভি বের হয়েই বলে,
-তোকে অনেকক্ষণ বসিয়ে রাখলাম। আসলে তুই যখন আসলি তখন মাত্র ঢুকেছি।
অভি রাহুলের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো রাহুল রাগি দৃষ্টি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
-কিরে! খুব বিরক্ত হয়েছিস? আমার দিকে এইভাবে তাকিয়ে আছস কেন?
-নিজেকে খুব ভালো অভিনেতা ভাবিস, তাই না?
-আমি কেন নিজেকে অভিনেতা ভাবতে যাবো। কিসব বলিস।
-থাক,আর অভিনয় করতে হবে না। এমনিতেই অনেক অভিনয় করে ফেলেছিস আমার সাথে। আর কত করবি? সব জেনে গেছি আমি।
কথাটি বলে রাহুল ডাইরিটা উপরে তোলে দেখালো। তারপর আবার বললো,
-তুই কখনো আমার সাথে এইরকম কাজ করবি আমি ভাবতেই পারিনি অভি।
রাহুলের হাতে ডাইরিটা দেখে অভির ভিতরটা শুকিয়ে যায়। বুঝতে পারে রাহুলের আর কিছু জানতে বাকী নেই। অভি নিজেকে বকা দেয়, "কেন যে এইসব ডাইরি লেখতে গেলাম! আর লিখেই যখন ফেলেছি তবে এইসব জায়গায় না রেখে লুকিয়ে রাখলেই পারতাম। এখন যেকোনভাবে রাহুলকে বুঝাতেই হবে।
-রাহুল তুই বিশ্বাস কর... আমি.....
অভিকে বলতে না দিয়ে রাহুল বলে,
-বিশ্বাস! আমাদের বন্ধুত্বের প্রথম শর্তই ছিল বড় বা ছোট কোনো কথাই আমরা গোপন করবোনা। অথচ জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় তুই এইভাবে আমার থেকে লুকাইলি? তোকে বিশ্বাস করতাম বলেই এটা করতে পারলি। এখন আবার কি বিশ্বাস করতে বলিস?-সত্যিই বলছি রাহুল। তোকে কষ্ট দেয়ার জন্য আমি অনামিকাকে ভালবাসিনি। আমার অজান্তেই ভালবেসে ফেলেছিলাম।
-রাঙ্গামাটিতে গিয়ে তুই প্রথম দিনেই অনামিকাকে দেখে ভালবেসেছিলি। তবে পরে যখন আমাদের সাথে ওর দেখা হল তখন বলিসনি কেন এই মেয়েই তোর সেই ভালবাসার মেয়েটি। কেন সব গোপন রেখে আমাকে এত বড় অপরাধী করলি!
-বলতে চেয়েছিলাম রাহুল। কিন্তু আমি বলার সুযোগ পাইনি, তার আগেই অনামিকা জানালো তোর সাথে তার তিন বছরের প্রেম।
-প্রকৃতি আমাদের নিয়ে দারুণ একটা খেলা খেললো।আমি বুঝতেই পারলাম না কিভাবে তোদের দুজনের ভালবাসার মাঝখানে দেয়াল হয়ে ছিলাম। তবে আর না, তোদের দুজনকে আমি এক করেই ছাড়বো। তবেই আমি শান্তি পাবো।
-কি বলছিস এইসব! তুই নিজেও অনামিকাকে পাগলের মতো ভালবাসছিস। আমি জানি তুই অনামিকাকে ছাড়া বাঁচবি না।
-ভুল জানিস তুই। দেখ অভি মানুষের অনেক চাওয়া থাকে, সবকিছু কি আর পাওয়া হয়? তবু মানুষ বেঁচে থাকে। তবে আমি কেন পারবোনা,অবশ্যই পারবো।
-তুই বেঁচে থাকলেও মনের মধ্যে কষ্ট পুষে বেঁচে থাকবি।
আর আমি তোকে কষ্টে থাকতে দেখতে পারবো না।
-তুই একটু বুঝার চেষ্টা কর, আমি অনামিকাকে ভালবাসি ঠিকই তবে সে আমাকে ভালবাসে না। কিন্তু তোরা দুজন দুজনকে ভালবাসছিস। তাই তোদের মিলিয়ে দিতে না পারলে আমার আরো বেশি কষ্ট হবে।
-না রাহুল, আমি তোর কোনো কথাই শুনবো না। তুই আমাকে রক্ত দিয়ে নতুন জীবন দিয়েছিলি আর আমি কি করে তোর কাছ থেকে তোর জীবনকে কেড়ে নিবো?
-কে বলেছে অনামিকা আমার জীবন? আমার জীবন হচ্ছিস তুই। অনামিকা আমার ভালবাসা, ও আমার হ্নদয় জুড়ে আর তুই আমার প্রতিটি নিঃশ্বাস জুড়ে।
-তাই বলে একজন শুধু দিয়ে যাবে আর আরেকজন স্বার্থপরের মতো নিতে থাকবে, এটা কি করে হয়!
-তুই কি আমার সাথে বন্ধুত্ব করেছিস নাকি ব্যবসা করছিস! দেনা-পাওনার কথা ব্যবসায় হয়,বন্ধুত্বে নয়। আমি তোকে কিছু দিয়েছি বলে তুইও আমাকে কিছু দেয়া লাগবে কেন! এইসব করে আর যাই হউক, বন্ধুত্ব হয়না।
-আমি ঐভাবে বলিনি রাহুল।
-তোকে আর কিছুই বলতে হবে না। তুই যদি আমাকে বন্ধু হিসেবে সারাজীবন পাশে পেতে চাস তাহলে আমি যা বলছি তাই তোকে মানতে হবে।
অসহায়ের মতো অভি বলে,
-তোকে হারাতে চাই না। তুই যা বলবি আমি তাই শুনবো।
-তাহলে কাল সকালেই আমরা রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে রওনা হবো।
-কাল সকালেই!
-হাঁ কাল সকালেই। রাতেই ব্যাগ গুছিয়ে রাখিস।
-ঠিক আছে। এখন চল দুপুরে এখনো খাওয়া হয়নি।
-তুই না খেলেও আমি এইমাত্র খেয়ে বের হলাম।
-আচ্ছা তোকে খেতে হবে না। শুধু বসে থাকবি।
রাতে অভি অর্পিতাকে তার রুমে নিয়ে সবকিছু খুলে বলল। সবকিছু শুনার পর অর্পিতা বললো,
-আম্মুকে কি বলে যাবি?
-আম্মুকে এখন কিছুই বলবো না। আমি যাওয়ার পর তুই সবকিছু খুলে বলিস।
-আচ্ছা তা না হয় বললাম। কিন্তু তোরা গিয়ে যদি দেখিস ওরাও চলে গেছে তখন কি করবি!
-রাহুলের কাছে ওদের বাসার ঠিকানা আছে। তাই না পেলে ঢাকায় চলে যাবো।
-আচ্ছা এখন ঘুমিয়ে পড়, কালকে আবার ভোরে উঠবি।
-হুম,অকে।
অর্পিতা রুম থেকে চলে গেলে অভি তার প্রয়োজনীয় সবকিছু গুছিয়ে রাখলো। যাতে সকালে আর তাড়াহুড়ো করা না লাগে।সব গুছানো শেষ হলে সে অনামিকার কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে।
ভোর ৬টায় অভি ঘুম থেকে উঠে। গোসল করে তৈরি হতে থাকে। সকাল ৯টায় তাদের বাস ছাড়বে। কিন্তু তার আর ঘরে মন এক মুহূর্ত বসছে না। কখন যাবে রাঙ্গামাটি আর কখন দেখা হবে অনামিকার সাথে। তাকে না জানিয়ে চলে আসায় অনামিকা রেগে আছে কিনা কে জানে। তাছাড়া এখন অনামিকা থাকে কিভাবে গ্রহণ করবে এইসব ভাবতে ভাবতে অভির মন অস্থির হয়ে উঠেছে।
আবার রাহুলের কথা মনে পড়লেই তার মুখ মলিন হয়ে যায়। রাহুল নিশ্চয় অনেক কষ্ট পাচ্ছে। অভি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তারপর আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানায় এইরকম একটা বন্ধুকে তার জীবনে দেয়ায়। ঠিক সময় মতো রাহুলের ফোন আসে।
-কিরে তুই তৈরি হয়েছিস?
-সেই কখন, শুধু তোর ফোনের অপেক্ষায় ছিলাম।
-চলে আয় তাইলে।
-আসছি
মোবাইল পকেটে রেখে দিয়ে ব্যাগ কাঁদে ফেলে বেরিয়ে পড়লো। তাকে ব্যাগ কাঁদে বেরুতে দেখে তার মা বলেন,
-কিরে তুই আবার কই যাচ্ছিস?
-আপুকে জিজ্ঞেস করলে সব জানতে পারবে। এখন আমি যাই। আমার জন্য দোয়া করো আম্মু।
উনাকে অবাক করে অভি বেরিয়ে গেলো। আমেনা বেগম কিছু বুঝতে না পেরে চোখ যেন কপালে উঠে গেছে।
রাহুল অভি এক হতেই অভি বলে
-বাসায় কি বলে এলি?
-আম্মুকে সব খুলে বলেছি।
-বলিস কি! তুই অনামিকাকে ভালবাসিস এটাও বলেছিস?
-আরে না, পাগল নাকি আমি,যে এটা বলতে যাবো। তাছাড়া আমি চাই না এটা আর কেউ জানুক। এখন পর্যন্ত তুই, আমি, অনামিকা ও অর্পিতা আপু জানে।
-আচ্ছা অনামিকাদের বাসার ঠিকানা সাথে এনেছিস?
-নারে, ওটা হারিয়ে ফেলেছি।
-তাহলে! ওরা যদি রাঙ্গামাটি থেকে চলে যায় তবে কি হবে?
-এত তাড়াতাড়ি চলে যাবে বলে মনে হয় না। আর যদি চলেও যায় তবে তখন দেখা যাবে কি করা যায়।
-আচ্ছা চল, আমাদের ভাগ্যটা বরাবর খেলা করছে আমাদের নিয়ে। হয়তো এবারও কোনো বড় ধরণের খেলা অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।
-কিছুই হবে না। এত চিন্তা করিস না তো।
(চলবে).................
------------------------অবুঝ ভালবাসা-------------------------
-------------------১২তম পর্ব-----------------
বাসে বেশিক্ষণ বসে থাকতে হয়নি। বাসে উঠার কিছুক্ষণের মধ্যেই বাস ছেড়ে দিলো। অভিকে খুব অস্থির দেখাচ্ছিল। তার কাছে মনে হচ্ছে বাসটা খুব স্লো গতিতে যাচ্ছে। কখন যে গিয়ে রাঙ্গামাটি পৌছবে। আর যাওয়ার পর সেখানে অনামিকাকে পাবে কিনা। ওরা যদি ঢাকা চলে যায়। যদি কখনোই আর অনামিকাকে খোঁজে না পায়। অনামিকা যদি তার জীবন থেকে হারিয়ে যায়।
অভির এই অস্থিরতা রাহুল লক্ষ্য করে বারবার সাহস দিয়ে যাচ্ছে। বলছে রাঙ্গামাটিতে না পেলে ঢাকা গিয়ে খোঁজে বের করতে এত চিন্তা না করতে।
অভির বাসা থেকে চলে যাওয়ার পর তার আম্মু অর্পিতাকে তার রুমে ডাকেন। অর্পিতার সাথে রিপাও গেল।
-অভি এই সকাল বেলা ব্যাগ নিয়ে আবার কোথায় গেলো?জিজ্ঞেস করতেই বললো তোর থেকে সবকিছু জেনে নিতে।
-অভি আবারো রাঙ্গামাটি গিয়েছে।
-আবার! কিন্তু কেন?
-আম্মু অভি রাঙ্গামাটিতে গিয়ে অনামিকা নামের এক মেয়েকে ভালবেসেছে। কিন্তু তাকে কিছুই বলতে পারেনি। সেদিন হঠাৎ করে রাজিয়া আন্টি অসুস্থ হওয়ায় ওদের চলে আসতে হয়। কিন্তু আসার পর থেকে ওর মন খারাপ দেখে ওর থেকে কথা বের করে জানতে পারলাম এই কথা। এরপর আমি আর রাহুল মিলিয়ে তাকে আবার রাঙ্গামাটি যেতে রাজি করাই।
সবকিছু শুনার পর তিনি অবশ্য আর কিছু বলেননি। তবে রিপা একবার অর্পিতা বলল,
-আচ্ছা ভাবী, অনামিকা কী খুব সুন্দরী?
-আমি কিভাবে বলি, দেখিনি তো কখনো।
-নিশ্চয় অনেক সুন্দরী হবে। না হলে কি আর অভি ভাইয়ের পছন্দ হয়।
-সুন্দরী হওয়ারই কথা, আমার ভাইয়ের পছন্দ ভালো না হয়ে উপায় আছে।
রিপা গোপনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
রাঙ্গামাটি পৌঁছাতে তাদের বিকেল হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পরেই সন্ধ্যা নেমে আসবে। হোটেলের কাছে গিয়ে রাহুল বলল,
-চল খলিল ভাইয়ের কাছে সব জেনে নেই।
রিসিভসনের দিকে গিয়ে খলিল হোসেনকে দেখে তারা দুজনেই সালাম দিলো। খলিল হোসেন তাদেরকে দেখে বেশ অবাক হল। এত অবাক হল যে সালামের উত্তর পর্যন্ত দিতে ভুলে গেলো।
-আরে আপনারা! কেমন আছেন?
রাহুল বলল,
-আমরা ভালোই আছি। আপনি কেমন আছেন খলিল ভাই?
-ভালো আছি। তারপর আপনার মায়ের অসুখ কমেছে?
-জ্বী উনি এখন সুস্থ আছেন। আচ্ছা খলিল ভাই ৬০নাম্বার রুমের ওরা কি....
কথা শেষ করতে পারেনা রাহুল। তার আগেই খলিল হোসেন মাথা নিচু করে বলে,
-আপনারা আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। আমি আপনাদের কাজটি করতে পারিনি। আপনারা যখন দিয়ে গেলেন তখন ছিল রাত, তাই ভাবলাম কাল সকালে যখন ওরা ঘুরতে বেরুবে তখন দিয়ে দিবো। কিন্তু পরেরদিন সকালে আমার আরেক জায়গায় যেতে হল বলে এখানে আসতে পারিনি। বিকেলে যখন আসলাম তখন আপনাদের দেয়া কাগজটির কথা মনে পড়লো। কিন্তু তখন আমার সহকর্মী বলল উরানা সকালেই চলে গেছেন। আপনাদের কাজটি করতে পারিনি বলে আমার খুব খারাপ লাগছিল। নিশ্চয় ঐ কাগজটা খুব দরকারি ছিল তাই আপনারা আবার চলে এসেছেন। ক্ষমা করে দিবেন আমাকে।
-এখানে আর আপনার কি দোষ! আমাদের ভাগ্যটাই আমাদের নিয়ে খেলা করছে। আচ্ছা আমরা এখন যাই।
তারা দুজন খলিল হোসেনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হোটেলের বাইরে চলে আসে। অভিকে মনমরা দেখে রাহুল সাহস দিয়ে বলে,
-চিন্তা করিস না তুই। দেখিস ঠিকই খোঁজে বের করে ফেলবো।
-তুই কি এখন ঢাকা যাওয়ার কথা ভাবছিস? -হাঁ অবশ্যই।
-পাগলামি করছিস তুই। আমাদের কাছে ওদের বাসার ঠিকানা নেই। ঠিকানা ছাড়া এত বড় ঢাকা শহরে কোথায় খুঁজবি? তাছাড়া আমরা কখনো ঢাকাতে যাইনি পর্যন্ত।
-যাইনি তো কি হয়েছে, আমরা কি বাচ্চা ছেলে। যে পথ হারিয়ে ফেলবো। আর ঠিকানা মনে নেই তবে এইটুকু মনে আছে ওদের বাসা গুলশানের কোথাও।
-গুলশান কত নাম্বার?
-সেটা তো মনে নেই। আচ্ছা চল তো। সেখানে কোনো হোটেলে উঠে দিনের বেলা ওদের বাসা খুঁজবো।
রাহুলের যুক্তিতে অভির মন ভরলো না। বাসা আবার কেমনে খুঁজে? অনামিকা কি বাসার গেইটের কাছে দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি তাদের জন্য! রাহুলের কথায় আশ্বস্ত হতে না পারলেও কোনো কথা বলল না। নিরবে রাজি হল ঢাকা যেতে।
তারা সন্ধ্যা ৭টার বাসে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিল। অভি ফোন করে অর্পিতাকে জানিয়ে দিলো তারা ঢাকা যাচ্ছে। ঢাকা পৌঁছে তারা গুলশানে একটা হোটেলে উঠে। রাতটা ঘুমিয়ে নিয়ে সকাল বেলা নাস্তা করেই বাসা খোঁজার কাজে লেগে পড়ে। ঘুরেঘুরে এই বাসা ঐ বাসার দিকে তালায়। কোনো কোনো বাসার দারোয়ান ডেকে রাহুল জিজ্ঞেস করে এই বাসায় অনামিকা আর আফরোজা নামের কেউ থাকে কিনা। এইসব দেখে অভি বলে,
-আমার তো ভয় হচ্ছে সন্দেহভাজন মনে করে কেউ না আবার পিটানো শুরু করে দেয়।
-সবসময় তোর নেগেটিভ চিন্তাভাবনা।
-এই অবস্থায় থেকে কিভাবে পজিটিভ চিন্তা করবো!আচ্ছা তুই একটু পজিটিভটা বল তো দেখি।
-এইযে আমরা ঠিকানা ছাড়া শুধু নাম দিয়ে বাসা খুঁজছি এটা ভেবে হয়তো ওরা আমাদের পাগল ভাববে।
-এটা তোর পজিটিভ ভাবনা?
রাগ দেখালো অভি। রাহুল রাগে পাত্তা না দিয়ে হেসে বলে,
-মাইর খাওয়ার চেয়ে পাগল হওয়া ভালো না?
তখন অভিও নিরবে মাথা নেড়ে বলে,
-হু ভালো।
ঐদিন সারাদিন অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কাজ হল না। সন্ধ্যাবেলা ক্লান্ত হয়ে হোটেলে ফিরে আসে। রুমে গিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে রাহুল বলল,
-যতটা সহজ ভেবেছিলাম আসলে মুটেও তা নয়। ঢাকা শহরে ঠিকানা ছাড়া কাউকে খুঁজে বের করা একটু কঠিনই হবে।
-তোর কাছে এখনো একটু কঠিন মনে হচ্ছে? আমার কাছে তো মনে হচ্ছে এটা অসম্ভব কাজ।
-অসম্ভব বলতে কিছু নেই। আমাদের এত সহজে হাল ছেড়ে দিলে হবে না।আগামীকাল আবার খুঁজতে হবে।
পরেরদিন তারা আবার খুঁজতে বেরুয়। খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হয়ে রাহুল বলে,
-খুব ক্লান্ত লাগছেরে, একটা গান গেয়ে শুনা না।
-গান করবো আমি! যার মাঝে নেই তার প্রাণ, সে কি আর গাইতে পারে গান!
-কর না প্লিজ, দেখ হয়ত তোর গান অনামিকার কান পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।
কথাটা শুনে হাসলো অভি।
-এটা কি ছিনেমা নাকি! আর আমি কি নায়ক ওমরসানী! যে গান করতে করতে প্রিয়তমা মৌসুমিকে খুঁজবো। ওরা গানের শেষেই তাদের প্রিয়তমাকে পেয়ে যায়। কিন্তু বাস্তবে এইসব কিছু হয় না।
-উফ একটা গান শুনাতে বলছি তার জন্য এখন তুই লেকচার দিতে শুরু করলি!
অভি আর কিছু না বলে কিছুক্ষণ নীরব থেকে গান গাইতে শুরু করলো।
এত বড় ঢাকা শহরে
কোথায় খুঁজি তোমারে
খোদা তুমি সহায় হও
বন্ধু কোথায় আমায় কও
মনটা আমার জ্বলেপুড়ে যাচ্ছেরে...
কতটা ভালবাস আমায়
ভালো করেই জানি...
তোমার কথা ভাবলে তাই
চোখে আসে পানি...
মনের মাঝে ঝড়ো হাওয়া বইছেরে...
ভালবাসি তোমায় আমি
আজো বলতে পারিনি...
অভিমাণে দূরে তুমি
বলো এ কেমন কাহিনী...সেদিনের স্মৃতিগুলো ভুলি বল কি করে...
আজকেও সারাদিন খোঁজাখুঁজি করে কোনো লাভ হল না। সারাদিন হাঁটাহাঁটি করে উল্টো দুজনের পায়ে ব্যথা করছে। তাই হোটেলে এসেই দুজনে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে একটু বিশ্রাম দেয় পা জোড়াকে। কিছুক্ষণ পর অভি বলে,
-চল রাহুল ফিরে যাই।
-কি বলিস! অনামিকাকে খুঁজে বের না করেই চলে যাবো?
-এছাড়া আর কি করার আছে? ঢাকা শহরে ঠিকানা ছাড়া কাউকে খুঁজে বের করা পাগলামি ছাড়া আর কিছুই না। এই দুদিনে এটা খুব ভালো ভাবেই বুঝেছিস। তাছাড়া ও আসলে আমার কপালেই নেই। সৃষ্টি কর্তা হয়তো তাকে আমার জন্য সৃষ্টি করেননি।
শেষের কথাগুলা বলতে অভির গলা ধরে এলো।
-আচ্ছা ঠিক আছে,যেতে হয় কাল সকালে যাবো। এখন খুব ক্লান্ত। গাড়িতে আবার এতক্ষণ জার্নি করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
এশার নামাজ পড়ার পর অভি ও রাহুল দুজনেই কেঁদে কেঁদে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলো। অভি বলল, "হে আল্লাহ, ভালবাসা কাকে বলে সেটা আমার অজানা ছিল। কিন্তু অনামিকাকে দেখার পর ভালবাসা কি জেনেছি। আর এটাও বুঝতে পেরেছি যে ভালবাসলে ভালবাসার মানুষকে রেখে দূরে থাকা যায় না। তবে তুমি যখন অনামিকাকে আমার জীবনে দিয়ে আমাকে ভালবাসতে শিখালে তবে কেন আবার তাকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে নিলে? তবে কি ভেবে নিবো তুমি ভালবাসা বিরোধী? ভালবাসার কোনো মূল্যই কি তোমার কাছে নেই? যদি তাই হবে তবে অনামিকাকে কেন আমার জীবনে এনেছিলে? কেন আমি তাকে ভালবাসলাম? কেন সে আমাকে ভালবাসলো? কেন? কেন? কেন মানুষের মন নিয়ে খেলা করো? তোমার দরবারে সুখের তো কোনো অভাব নেই। তবে কেন মানুষকে এত কষ্ট দাও? অনামিকাকে ভালবেসে কি আমি খুব বড় অন্যায় করে ফেলেছি? যার জন্য আমায় শাস্তি দিচ্ছো। শাস্তি যদি দিতেই হয় তবে আগে শাস্তি ভোগ করার শক্তি কেন দাওনি? সহ্য করার শক্তি না দিলে আমি কিভাবে এই শাস্তি সহ্য করবো? তুমি বলে দাও আমায়। বলো?"
অন্যদিকে রাহুল তার প্রার্থনায় বলল, "পরম দয়াময়, তুমি যদি অনামিকাকে পাইয়ে না দাও তাহলে আমি জীবনেও নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না। আমার জন্য আজ অভি এতটা কষ্ট পাচ্ছে। না জানি অনামিকা কতটা কষ্ট পাচ্ছে। আর এই কারণে আমিও কি কম কষ্ট পাচ্ছি! আমি কেন অনামিকাকে ভালবাসতে গেলাম? আমি তাকে ভালো না বাসলে আজকে এইরকম পরিস্থিতি আসতো না। অভি বলছে কালকেই চলে যাবে। আর আমি চাচ্ছি অনামিকাকে ওর কাছে ফিরিয়ে দিতে। একমাত্র তুমিই পারো আমার ইচ্ছেটা পূরণ করতে। তোমার ইচ্ছেতেই সবকিছু হচ্ছে, সূর্য দিনে উঠে আর রাতে উঠে চাঁদ। পাখি আকাশে উঁড়ে আর মাছ পানির নিচে। সবকিছুই তোমার ইচ্ছেমত হচ্ছে। মানুষের জন্ম মৃত্যুও তোমার ইচ্ছেয় হয়। তবে আমার ছোট এই ইচ্ছেটা কেন অপূর্ণ রাখবে তুমি? তুমি চাইলেই কাল সকালের মধ্যেই অনামিকাকে পেয়ে যেতে পারি। আমার এই ইচ্ছেটা তুমি পূরণ করে দাও আল্লাহ। পূরণ করে দাও।আমিন।"
(চলবে).............
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ