------------------------অবুঝ ভালবাসা-------------------------
-------------------৭ম পর্ব-----------------
অভির ডায়রি।।
রাঙ্গামাটি- ৪র্থ দিন
আজ আমার জীবনে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে যা জীবনেও ভুলা সম্ভব না। আজকের দিনটি আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন হতে পারতো। কিন্তু তা না হয়ে আমি এমন এক সমস্যায় পড়েছি যার সমাধান আমার জানা নেই।
আজো অনামিকা ও তার মা আমাদের সাথে করে নিয়ে যান। আজকে আমরা পাহাড় দেখতে যাই। আমার ইচ্ছে ছিল কোনো এক পাহাড়ের চূড়ায় উঠে কিছুটা সময় একা একা কাটাবো। কিন্তু আমার এই ইচ্ছেটা অনামিকা পূরণ হতে দেয়নি। সে জেদ করে সেও পাহাড়ের চূড়ায় যাবে। তার মা বয়স্ক মহিলা এত উঁচু উঠা তাঁর দ্বারা সম্ভব নয়। আর রাহুলের পাহাড়ের প্রতি একটু দুর্বলতা আছে। অনামিকার জেদের কাছে সবাইকে হার মানতে হয়। তাই শেষমেশ আমরা দুজন পাহাড়ে উঠলাম।
হঠাৎ অনামিকা আমার থেকে গিটারটা চেয়ে নিয়ে একটা গান ধরলো। গানের কথাগুলো শুনে মনে হল অনামিকা তার মনের চাওয়া প্রকাশ করছে। তখনি আমি বুঝতে পারলাম অনামিকা হয়তো আমাকে ভালবেসে ফেলেছে। তখন আমিও গানের সুরে বুঝাতে চেয়েছি আমাদের মধ্যে সম্পর্ক সম্ভব নয়। তবে কেন সম্ভব নয় সেটা স্পষ্ট করিনি। গান শেষে কথার প্যাঁচে ফেলে ওর কাছ থেকে জেনে নিশ্চিত হলাম আসলেই সে আমাকে ভালবাসে।
এখন আমি কি করবো? কি করা উচিৎ আমার? কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। একদিনে আমার জানে জিগার দোস্ত। আরেক দিকে অনামিকার অবুঝ ভালবাসা। কোন দিকে যাবো আমি? হঠাৎ হয়তো আমার মনের মধ্যে ভাবনা আসে-- মানুষ নিজের স্বার্থের জন্য কতকিছুই করে। স্বার্থপরের মতো একবার শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবলে কেমন হয়? আমি ও অনামিকা দুজন দুজনকে ভালবাসি। তাহলে একবার স্বার্থপর হয়েই দেখি না কি হয়!
এই ভাবনা মনে আসার পর মুহূর্তে আমার চোখের পাতায় রাহুলের নিষ্পাপ মুখখানা ভেসে ওঠে। রাহুল পাগলের মতো অনামিকাকে ভালবাসে। রাহুল তো আমার জন্য তার জীবন দিতেও দ্বিধা করে না! তবে আমি কেন ওর সুখের জন্য আমার ভালবাসা ত্যাগ করতে পারবো না? আমি নাহয় আমাদের বন্ধুত্বের জন্য আমার অবুঝ ভালবাসা বিসর্জন দিলাম।
ডায়রি লেখা শেষ হলে ব্যাগের মধ্যে রেখে দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ঘুম আসে না। ওর সারা শরীরে ব্যথা অনুভব করে। ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা লাগছে,বুঝতে পারে তার জ্বর এসেছে। জ্বর নিয়ে কোনোভাবে জড়সড় হয়ে পড়ে থাকে।
রাহুল সকালবেলা ঘুম থেকে উঠার পর চোখ মুখ ধুয়ে এসে দেখে অভি কাঁপছে। সে অবাক হয়ে যায়। অভি এভাবে কাঁপছে কেন? সে অভির কাছে গিয়ে তার কপালে হাত দিয়ে চমকে উঠলো।
-একি! জ্বরে তো গা পুড়ে যাচ্ছে।
রাহুলের হাতের স্পর্শ পেয়ে অভি জেগে গেলো। সে উদাস চোখে রাহুলের দিকে তাকিয়ে থাকলো।
-জ্বর কখন এলো?
-রাতে।-জ্বর এসেছে অথচ আমায় ডাকিসনি। এত বোকা কেন তুই?
-তুই কি করতি? জ্বর কমাতে পারতি? শুধু শুধু আমার সাথে সারারাত জেগে থাকতিস।
-উঠ, চোখমুখ ধুয়ে নে। ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
-এই সামান্য জ্বরের জন্য আবার ডাক্তারের কাছে কেন?
-একে তুই সামান্য বলছিস! জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। কম হলেও একশ তিন ডিগ্রী হবেই।
-তুই এত চিন্তা করিস না তো, তেমন কিছুই হয়নি। তুই বরং একটা কাজ কর, ফার্মেসী থেকে প্যারাসিটামল নিয়ে আয়।
-ডাক্তারের কাছে যেতে কি কোনো সমস্যা আছে?
-হাঁ আছে। ডাক্তারের কাছে যেতে হলে আমাকে উঠতে হবে। কিন্তু আমার মনে হয়ে সেই শক্তিটাও নেই।
-সমস্যা নেই,আমি তোকে কোলে করে নিয়ে যাবো।
-কিসব বলছিস! আমি কি ছোট শিশু যে আমাকে কোলে করে নিয়ে যাবি।
-অসুস্থ সব মানুষ শিশুর মতোই।
-আমি শিশু হয়ে যাওয়ার মতো অসুস্থ না।
-বুঝেছি তুই তাহলে ডাক্তারের কাছে যাবি না। ঠিক আছে আমি ঔষধ নিয়ে আসবো। তার আগে মাথায় কিছুক্ষণ পানি ঢালতে হবে।
রাহুল হোটেলের লোকদের সাথে কথা বলে একটা বালতি ম্যানেজ করে ফেলে। তারপর বাথরুম থেকে বালতিতে করে পানি নিয়ে এসে অভির মাথায় ঢালতে থাকে। অভি রাহুলের দিকে তাকিয়ে কেঁদে ফেলে। সে ভাবে, এইরকম বন্ধুকে কি করে জেনে শুনে কষ্ট দেয়া যায়?
-অভি কাঁদছিস কেন? তোর কি খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে?
অভি না সূচক মাথা নাড়ল।
-তাহলে এইভাবে কাঁদছিস কেন?
-রাহুল আমি যদি তোর সাথে কোনো অন্যায় করি তাহলে আমায় ক্ষমা করতে পারবি?
-ধুর পাগল! তুই আমার সাথে কোনো সময় কোনো অন্যায় করবি না, তবে ক্ষমার প্রশ্ন আসছে কেন!
-যদি আমি মনের অজান্তে কোনো অন্যায় করে ফেলি তবে কি তুই সেটা জানার পর আমাকে ক্ষমা করতে পারবি?
-মানুষ মাত্রই ভুল, প্রতিটি মানুষ ভুল করে। তাই তুই যদি কখনো ভুল করে ফেলিস তবে আমার উচিৎ হবে তোকে ক্ষমা করে দেয়া। তা না হলে বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়।
-তোর কথা শুনে খুশি হলাম। আমি আসলেই অনেক সৌভাগ্যবান! তাই তোর মতো একটা বন্ধু পেয়েছি। আমি তোর জন্য সব করতে রাজি। এমনি কি হাসিমুখে মৃত্যুকেও কাছে ডেকে নিতে পারবো।
-তোর জ্বর কি বাড়ছে? উল্টাপাল্টা কথা শুরু করেছিস।
-যা বলছি সত্যি বলছি। কোনো মিথ্যে নেই এতে।
-কেমন বন্ধু তুই? বন্ধুকে একা রেখে স্বার্থপরের মতো একা মরে যেতে চাস। খবরদার আর যদি এইসব উল্টাপাল্টা কথা বলবি, তাহলে খুব খারাপ হবে।
কথাগুলো বলতে গিয়ে রাহুলের চোখেও পানি চলে আসে। আসলে যখন কোনো মানুষ অসুস্থ অবস্থায় এইভাবে মৃত্যুর কথা বলে তখন অন্যরা স্বাভাবিক ভাবেই অনেক ভয় পেয়ে যায়। কিন্তু রাহুল নিজেকে কঠোর ভাবে সামলে নিয়ে অভির চোখ মুছে দিয়ে বলে,
-আমি যাই, ঔষধ নিয়ে আসি। তুই চুপচাপ শুয়ে থাক।
রাহুল ঔষধ আনার জন্য বাইরে চলে যায়। অভি একা একা শুয়ে থাকলো আর চোখের জল ফেলতে থাকলো। এছাড়া আর কি করার আছে তার!অনামিকা আজ খুব সুন্দর করে সেজেছে। এত যত্ন করে কেন সেজেছে সেও নিজেও বুঝতে পারছে না। আজ তাদের কেনাকাটা করার জন্য মার্কেটে যাওয়ার কথা। তার পছন্দের একটি নীল ড্রেস পড়েছে। ড্রেসের সাথে মানানসই সব উপকরণ। নীল কানের দোল, নীল গলার মালা, নীল চুড়ি। কপালে টিপ দিবে নাকি দিবে না ভেবে ভেব একটা ছোট নীল টিপ দিয়ে দিলো। সব মিলিয়ে তাকে দেখতে দারুণ লাগছিল। যে কেউ তাকে দেখলেই নীল জোছনায় হারিয়ে যাবে।
-কিরে অনামিকা তোর সাজুগুজু শেষ হল?
-এইতো আম্মু শেষ। চলো বেরিয়ে পড়ি।
ওরা রুমের বাইরে আসতেই আফরোজা চৌধুরী বলেন,
-ওদেরকে জিজ্ঞেস করবো নাকি, ওরা কোথায় যাবে।
-ওদেরকে ছাড়া বের হইছো একদিনও? তবে আমায় কেন প্রতিদিন জিজ্ঞেস করো!
আফরোজা চৌধুরী মেয়ের দিকে তাকিয়ে বোকার মতো হাসলেন। তারপর অভিদের রুমের কলিং বেল বাজালেন। শব্দ শুনে অভি চমকে উঠলো, "কে এলো! রাহুল হলে বেল বাজাত না,চলে আসতো। কারণ যাওয়ার সময় দরজা লক করে যায়নি।"
অভি কান্না থামিয়ে চোখ মুছে নিজেকে সামলে নিয়ে স্বাভাবিক স্বরে বলে,
-কে?
-আমি অনামিকার মা।
-ওহ আন্টি ভিতরে চলে আসুন। দরজা খুলাই আছে।
আফরোজা চৌধুরী মেয়েকে নিয়ে ভিতরে ঢুকলেন। অভি যখন অনামিকার দিকে তাকালো সে সহজে চোখ ফিরাতে পারেনা। অভি ভাবছিল আজ অনামিকা এত সুন্দর করে সেজে আসছে কেন? সাজলে কি সব মেয়েদের এইরকম সুন্দর দেখায়? অসম্ভব সুন্দর লাগছে অনামিকাকে। এই মুহূর্তে অভির ইচ্ছে করছে অনামিকাকে প্রপোজ করে বসে। কিন্তু পরক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
-বসুন আন্টি।
-তুমি এখনো শুয়ে আছো কেন? আর রাহুল কোথায়?
-একটু বাইরে গেছে।
-তুমি গেলে না কেন? তোমার কি অসুখ করেছে নাকি?
কথাটি বলে তিনি অভির কপালে হাত দিলেন।
-একি! তোমার গায়ে তো অনেক জ্বর।
জ্বরের কথা শুনে অনামিকাও অভির কাপালে হাত দিলো। সেই মুহূর্তটায় অভি জ্বরের যন্ত্রণা একদম অনুভব করলো না। মনে হচ্ছি তার কিছুই হয়নি। সে স্বাভাবিক ভাবে শুয়ে আছে আর অনামিকা তার চুকে বেলি কাটছিল।
-এইতো দেখছি অনেক জ্বর! তোমাকে এই অবস্থায় রেখে রাহুলের বাইরে যাওয়া একদম উচিৎ হয়নি।
-তুমি রাহুলকে ভুল বুঝতেছ। রাহুল বাইরে ঘুরতে যায়নি। আমার জন্য ঔষধ নিয়ে আসতে গেছে।
-ডাক্তার না দেখিয়েই ঔষধ?
-রাহুল অনেক জোর করেছে ডাক্তার দেখাতে। আমিই রাজি হয়নি। সামান্য জ্বরের জন্য কি দরকার এতকিছু করার।
-তোমার আম্মুকে জানিয়েছ?
-না। আম্মুকে জানাবো না। জানালে শুধু শুধু চিন্তা করে উনিই অসুস্থ হয়ে পড়বেন।
এমন সময় রাহুল চলে আসে। তার হাতে ঔষধের সাথে বাকী যা আছে সেগুলো হল- কেক, জুস ও কিছু আপেল। রাহুল যখন অনামিকার দিকে তাকালো সেও একটা ধাক্কা খেলো। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে আফরোজা চৌধুরীর দিকে ফিরে বলে,
-আন্টি আপনি কখন এলেন।
-মাত্রই এসেছি।
-অভি এই কেক আর জুস খেয়ে ঔষধ খেয়ে নে।
-তুই খাবি না?
-আমি বাইরে থেকে নাস্তা করে এসেছি।
-কেন মিথ্যে বলছিস? তোর মুখে মিথ্যে কথা শুভা পায় না।
কি আর করার, রাহুলকেও খেতে হয়। রাহুল আপেল কেটে অনামিকা ও তার মায়ের দিকে বাড়িয়ে দেয়। ওরা জানায় মাত্র খেয়ে এসেছে। অভির খাওয়া শেষ হলে ঔষধ খাইয়ে আবার শুয়ে পড়ে। তারপর আফরোজা চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে,
-আপনারা কোথায় যাবেন?
-শপিং করতে চেয়েছিলাম।
-তাহলে রাহুলকে নিয়ে চলে যান।
রাহুল আপত্তি তোলে বলে,-কি বলিস পাগলের মতো? তোকে এই অবস্থায় রেখে আমি যাবো শপিং করতে! আমায় ভাবিসটা কি তুই?
-আমায় নিয়ে এত চিন্তা করার কি আছে? এখন অনেকটাই ভালো লাগছে। ঔষধ খেয়েছি ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবো। তাছাড়া কোনো সমস্যা হলে তোকে ফোন করেই জানাবো।
-দিমু এক থাপ্পড়! চুপ করে শুয়ে থাক।
রাহুলের সাথে একমত হয়ে আফরোজা চৌধুরী বলেন,
-তুমি যাই বলো না কেন অভি, রাহুল ঠিকই বলেছে। তোমাকে এই অবস্থায় রেখে তার কোথায় যাওয়া উচিৎ হবে না। বলা যায় না কখন জ্বর বেড়ে যায়।
আচ্ছা আমরা তাহলে এইবার উঠি। বিকেলে এসে তোমাকে একবার দেখে যাবো।
রুম থেকে বের হওয়ার সময় অনামিকা এক পলক অভিকে দেখে নিলো। অভিও তখন অনামিকার দিকে তাকিয়ে ছিল। অভি লক্ষ্য করলো এই দুই দিনে অনামিকার মাঝে অনেক পরিবর্তন এসেছে। প্রথম যেদিন দেখেছিল অনেক হাসিখুশি প্রাণবন্ত একটি মেয়ে ছিল। কিন্তু এখন সবসময় গম্ভীর হয়ে থাকে। দেখে মনে হয় কি যেন ভাবতে থাকে সারাক্ষণ। অভি ভাবে এই কয়দিনে তার মাঝেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। তবে কি প্রেমে পড়লে মানুষের মধ্যে পরিবর্তন চলে আসে? কি জানি। হোয়টো বা আসে।
এইসব কথা ভাবছিল তখন রাহুল এসে তার পাশে বসে। অভিই প্রথম কথা বলে,
-এই গাধা! তুই গেলি না কেন? শপিংমলেই হয়তো অনামিকাকে মনের কথা বলার সুযোগ পেয়ে যেতিস।
-ছাড় তো, বারবার এই একি কথা বলছিস। আরে বাবা ওরা তো আজি চলে যাচ্ছে না। বেশ কিছু দিন থাকবে বলে এসেছে। এরমধ্যে একবার না একবার সুযোগ পেয়ে যাবো।
-পরে যদি বলতে না পারিস? যদি ওরা হঠাৎ করে আমাদের কিছু না জানিয়েই চলে যায়। তখন কি করবি?
-আমার মনে হয় আমাদের না জানিয়ে চলে যাবে না। আর যদি কোনো কারণে চলেই যায় তবে ঢাকা চলে যাবো ওদের বাসায়।
-ওহ।
-আচ্ছা তুই কি খেয়াল করেছিস! আজ অনামিকার সবকিছুতেই নীলের ছোঁয়া ছিল।
-হু দেখলাম। আর তাকে দেখে আমার মনে পড়লো নীল হচ্ছে বেদনার রং।
-ধ্যাত, আমি আছি রোমান্টিক মুডে আর সাহেব কিনা বেদনার রং খোঁজেন।
-জ্বর নিয়ে আর কিইবা ভাবতে পারি!
কথাটি বলে শুকনো একটি হাসি দিলো অভি।
অভিদের রুম থেকে বের হয়ে অনামিকা তার মাকে বলে,
-আম্মুকে আজকে শপিং করবো না। আগামীকাল করি?
-কেন রে! তোর আবার কি হল?
-এমনিতেই ভালো লাগছে না।
-তোর কি কোনো কারণে মন খারাপ?
-একটু মন খারাপ।
-কেন?
-গত দুইদিন ওদের সাথে ঘুরেছি। আজ তাদের একজন অসুস্থ দেখে একটু খারাপ লাগছে।
-তাহলে আজকে কি করবি?
-চলো হোটেলের আশেপাশে একটু ঘুরে দেখি। তারপর রুমে চলে যাবো।
-আচ্ছা চল।
আফরোজা চৌধুরীর মনে ভাবনা উঁকি দেয়। অনামিকা কি অভি-রাহুলের মধ্যে কাউকে পছন্দ করে ফেললো? এখানে আসার পর অনামিকার মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করছেন। এই কয়দিনে সে যেন হঠাৎ করে কিশোরী থেকে পরিপূর্ণ মেয়ে হয়ে উঠেছে। আগের মতো ছেলে মানুষী নেই। কথা বলছে খুব কম,যা বলছে গুরুত্বের সাথে বলছে।
(চলবে)..................
------------------------অবুঝ ভালবাসা-------------------------
-------------------৮ম পর্ব-----------------
আজ সারাদিন রুমে বসেই কেটে গেলো অনামিকার। বিকেল হয়ে এসেছে প্রায়। অনামিকা বিকেলের অপেক্ষাতেই ছিল। অভিকে দেখার জন্য ওর মন ছটফট করছে। বারবার অভির জ্বর গায়ে সেই শুকনো মুখটা ভেসে উঠছিল। তাই সে তার মা'কে মনে করিয়ে দেয় বিকেলে অভিকে দেখে আসবেন বলে কথা দিয়ে এসেছেন। আফরোজা চৌধুরী বলেন,
-আচ্ছা চল, এখন যাওয়া যাক।
রাহুল অভি গল্প করছিল তখন কলিংবেল বেজে উঠলো। অভি বলল,
-এই সময় আবার কে এলো!
-আন্টি বলে গেছিলেন তোকে দেখতে আসবেন। ওরাই হয়তো এসেছে।
রাহুল দরজা খুলে দেয়ার জন্য উঠে গেলো। অভি লক্ষ্য করলো অনামিকা আসায় রাহুলকে খুব খুশি দেখাচ্ছে। রুমে এসে অভির দিকে তাকিয়ে আফরোজা চৌধুরী বলেন,
-এখন কেমন বোধ করছ অভি?
-এখন অনেকটাই ভালো লাগছে। মার্কেট থেকে কখন এলেন?
-আজকে মার্কেটে যাইনি। তুমি সুস্থ হয়ে উঠলে আগামীকাল আমরা একসাথে মার্কেটে যাবো।
তাঁর কথায় আনন্দিত হয়ে উঠলো রাহুল।
বলল,
-ঠিক বলেছেন আন্টি। আমাদেরও অনেক কিছু কেনাকাটা করার আছে। বিশেষ করে আম্মুর জন্য শাড়ী কেনার সময় আপনার সাহায্য লাগবে।
তিনি হেসে বলেন,
-আচ্ছা ঠিক আছে আমি সাহায্য করবো।
অনামিকাকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে অভি বলল,
-তোমাকে একটা অনুরোধ করলে রাখবে?
-চেষ্টা করবো রাখার।
-একটা গান শুনাবে?
-আ...আমি!
-কেন করবে না?
অভিকে হতাশ দেখালো। দেখে আফরোজা চৌধুরীও অনামিকাকে গান গাইতে বললেন।
-ও শুনতে চাচ্ছে যখন মানা করছিস কেন! তুই তো ভালোই গান করিস।
-তুমি যখন গান করতে পারো তবে শুনাও না একটা প্লিজ...
অনুরোধ করে রাহুল তার গিটারটি অনামিকার দিকে বাড়িয়ে দেয়। অনামিকা গিটার হাতে নিয়ে গিটারের তারে সুর তুলে। স্লো টিউনে বাজানো শুরু করে,তারপর গান শুরু করে দিলো......
মন শুধু তোমাকে চায়, তুমি কাছে আসো না
চোখ দুটি তোমায় খোঁজে যায়, তুমি দূরে থেকো না।
বুঝো না তুমি বুঝো না, আমায় কেন বুঝো না
কভু হারিয়ে যেও না, তোমায় ছাড়া বাঁচবো না।
চেয়ে দেখো এই চোখে, তুমি আমার অনুভবে
তুমি আমার নিঃশ্বাসে, ভালবাসবে বলো কভে।
ভালবাসার মানে বুঝেছি আমি তোমার পানে
তবুও থাকো দূরে সরে কোন অভিমানে।
বারবার ফিরে আসি আমি অজানা আবেগে.......
যতদিন থাকবে আমার নিঃশ্বাস, দেখবো তোমায়
করবে তুমি আমাতেই বসবাস, জীবনের অন্তিম ক্ষণটায়।
আকাশটা আমার যায় ঢেকে যায়, কালো মেঘে.......
অভি নিজেকে গানের মধ্যে হারিয়ে ফেলেছিল। আফরোজা চৌধুরী বেশ অবাক হয়েছেন। তিনি আরো অনেকবার অনামিকার গান শুনেছেন। কিন্তু আজকে যেন নতুন করে অনামিকার গানের প্রতিভাটা উপলব্ধি করলেন। তাঁর কাছে খুবই ভালো লেগেছে শুনতে। তবে সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছে রাহুল। বেচারা! সে কি আর জানতো অনামিকা ছোটবেলা থেকে গিটার বাজানো ও গান শিখে আসছে। গান শেষ হতেই রাহুল মৃদু শব্দে হাততালি দিয়ে প্রশংসার ফুলঝুরি ছুটালো।
-ওয়াও আমেজিং। অসাধারণ একটি গান গাইলেন। হ্নদয়টা একদম ক্ষতবিক্ষত করে দিলে।
-থ্যাংকস।আমার অনুরোধ রাখার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আসলেই খুব ভালো লেগেছে।
বলল অভি।
-অনামিকা তুই তো আমাকে অবাক করে দিলি। এত সুন্দর করে গানটা করলি। দাঁড়া এইবার ঢাকা ফিরে তোর বাবাকে বলে তোর একটা গানের এ্যালবাম বের করতে হবে।
-আম্মু কি যে বলো না! আমি বের করবো এ্যালবাম! তবেই সেরেছে।
-নিজেকে অবহেলা করো না। তোমার প্রতিভা আছে। আমি বলছি তোমার এ্যালবাম হিট হবেই।
রাহুলের কথাটি শুনে অনামিকা হেসে বলে,
-তাই নাকি!
তারপর আরো কিছুক্ষণ গল্প করে কালকে শপিংয়ের কথা মনে করিয়ে দিয়ে ওরা চলে গেলো। ওরা যাওয়ার পর রাহুল বলে,
-অনামিকার গানের গলা তো অসাধারণ দেখছি। ওর গান শুনে মনটা ভরে গেলো।
-দেখতে হবে না প্রেমিকাটা কার!
-এমনভাবে বলছিস যেন তোর প্রেমিকা।
-আমি কি একবারও আমার কথা বলেছি নাকি! তোর কথাই বললাম। তুই যেমন ভালো গান করিস সেও তেমনি ভালো গান করে। ইশ কভে যে তোদের দুজনের ডুয়েট গান শুনবো...!
-আমি আবার কোথায় ভালো গান করি!
-না তুই করবি কেন! আমিই করি, হয়েছে?
রাহুল হেসে ফেলে। রাহুলের মুখে এই হাসিটা অভি সারাজীবন দেখতে চায়।
-আচ্ছা অনামিকাকে কিভাবে মনের কথাগুলো বলবো? তুই একটা বুদ্ধি বের কর না। ওকে ভালবাসার পর আমি একদম বোকা হয়ে গেছি। কিছুই আসছে না মাথায়।
-ঠিক আছে আমায় একটু ভাবতে দে।
-একটু কেন অনেকক্ষণ নিয়ে ভাবতে থাক। ভেবে একটা ফ্যান্টাস্টিক আইডিয়া বের কর।
কিছুক্ষণ ভাবার পর অভি বলল,
-ফ্যান্টাস্টিক কিনা জানিনা। তবে একটা আইডিয়া পেয়েছি।
-তাড়াতাড়ি বল কি আইডিয়া। শুনার পর দেখবো ফ্যান্টাস্টিক কিনা।
-কালকে শপিংয়ে অনামিকার জন্য একটা গিফট কিনবি।
অভিকে কথা শেষ করতে না দিয়ে রাহুল বলল,
-কি কিনবো?
-তোর যা পছন্দ হবে তাই কিনবি।
-আচ্ছা তারপর কি করতে হবে বল।
-তারপর আমি যেভাবে হউক ওর সাথে তোর কথা বলার ব্যবস্থা করে দিবো। তুই তাকে তোর মনের সব কথা খুলে বলবি। তারপর গিফটটি তার হাত দিয়ে দিবি।
-তুই পারবি! পারবি ওর সাথে আমার কথা বলার ব্যবস্থা করে দিতে?
-পারবো বলেই তো বললাম।
-Thank you my lovely friend.
-এখন ধন্যবাদ দিয়ে লাভ নেই। আমি যখন আমার কথা রাখতে পারবো তখন দিস।
সন্ধ্যার পরেই অভির ঘাম দিয়ে জ্বর সেরে যায়। রাতে সে রাহুলের সাথে বসে ডিনার করতে পেরেছে। ঘুমানোর আগে রাহুল বলে রাখলো,
-রাতে যদি আবার জ্বর আসে তবে আমায় ডাক দিস কিন্তু।
-জ্বর আর আসবে না। তোর সেবা পেয়ে পালিয়েছে।
-আমি আবার কি এমন করলাম।
-দুনিয়ায় তোর মতো কয়টা বন্ধু আছে যে মায়ের মতো সেবা করতে পারবে। ছেলে অসুস্থ হলে মা যেমন করে তুই এইরকমই করেছিস।
-ছাড়তো, বন্ধু হয়ে যদি বন্ধুর জন্য এইটুকুই না করতে পারি তবে আর বন্ধু কিসের। আজকে তোর জায়গায় যদি আমি অসুস্থ হতাম তবে কি তুই আমার মত করতি না?
-তোর মতো হয়তো পারতাম না।
-হয়েছে আর কথা বলতে হবে না। কাল সারারাত ঘুমাসনি এখন ঘুমা।
অভিকে ঘুমানোর তাড়া দিয়ে সে নিজেই ঘুমিয়ে যায়। তার কিছুক্ষণ পর অভিও ঘুমিয়ে পড়ে।
অনামিকা ডিনার করার পর শুয়ে শুয়ে ফেইসবুকে চ্যাট করছিল। তার মা এরমধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছেন। সে তার ক্লোজ এক বান্ধবীর সাথে চ্যাট করছে।
-কেমন আছিস?-খুব একটা ভালো নেই রে।
-বেড়াতে গিয়ে ভালো নেই মানে কি! কোনো সমস্যা?
-হাঁ সমস্যাই। তোকে ব্যাপারটা খুলে বলা দরকার।
-অবশ্যই সবকিছু খুলে বলবি। বল কি হয়েছে।
-এখানে আসার পর আমি একজনকে ভালবেসে ফেলেছি।
-ওয়াও! এটা তো খুশির খবর। আগে জানাসনি কেন?
-মোটেও খুশির খবর না।
-কেন ছেকেটা তোকে ভালবাসে না?
-ওয়েট, আমি তোকে সব খুলে বলছি। তারপর সব বুঝে তুই জানাবি কেন এমন হচ্ছে।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
-আমি যাকে ভালবাসি তার নাম অভি। যদিও আমি তাকে সরাসরি কিছু বলিনি। তবে আমি শিওর সে খুব ভালো করেই জানে আমি তাকে ভালবাসি। আর আমার মাঝেমাঝে মনে হয় সেও আমার প্রতি দুর্বল আছে। কিন্তু তারপরও কেন সে আমার থেকে দূরে সরে থাকতে চাচ্ছে? কি মনে হয় তোর?
-আমার মনে হয় ছেলেটার খুব জটিল কোনো অসুখ হয়েছে। এই যেমন টিউমার, ক্যান্সার এই টাইপের কিছু একটা। ডাক্তার বলেছে সে আর মাত্র তিন মাস বাঁচবে। তাই সে রাঙ্গামাটি এসেছে মরার আগে পৃথিবীর সৌন্দর্য দেখে নেয়ার জন্য। আর এখানে এসে তোকে দেখে তোর প্রেমে পড়ে গেছে। কিন্তু বেচারা! যখন মনে পড়লো সে আর কয়েকটা দিনের অতিথি মাত্র তখন ভাবলো তার ছোট জীবনে তোকে জড়িয়ে নিয়ে তোকে কষ্ট দিয়ে কি লাভ!
এইরকম হয় কিন্তু। আমি অনেক ছিনেমায় দেখেছি।
-তোর কাছে আমি আমার মনের কথাগুলো শেয়ার করলাম আর তুই কিনা আমার অনুভূতি নিয়ে মজা করছিস?
-দেখ তুই বলছিস, তুই ছেলেটাকে ভালবাসিস সেটা সে জানে। আর ছেলেটিও তোকে ভালবাসে। তবে এখানে আর কোনো সমস্যাই দেখি না। তবে কেন ছেলেটি এমন করবে?
-বুঝেছি তুই পারবি না। আচ্ছা শুন, কথাটি এখনি কাউকে বলিস না। যদি কিছু হয় তবে আমিই সবাইকে জানাবো।
-আচ্ছা বলবো না।
ঘুম থেকে উঠার পর রাহুল চিন্তার সাগরে ডুব দেয়। অভি কিভাবে তাকে কথা বলার সুযোগ করে দিবে? অবশ্য এটা নিয়ে তার তেমন ভাবনা নেই। অভি যখন বলেছে তবে যেভাবেই হউক সে ব্যবস্থা করে ফেলবে। এই বিশ্বাস তার অভির প্রতি আছে। তবে চিন্তার প্রধান কারণ হচ্ছে সে কিভাবে তার মনের কথা বলবে। কোথা থেকে শুরু করবে। তাছাড়া শুনার পর অনামিকা ব্যাপারটা কিভাবে নিবে। সে যদি তাকে ফিরিয়ে দেয়? তাহলে কি হবে! এইসব নানান কথাই চিন্তা করছে। অভি যখন ঘুম থেকে উঠলো তখন তাকে বলিল,
-আচ্ছা অভি, এই কয়দিনে অনামিকার ব্যবহার দেখে কি তোর মনে হয় অনামিকা আমায় পছন্দ করতে পারে?
-কি জানি। আমি সেভাবে খেয়াল করিনি কখনো।
-সে যদি আমায় পছন্দ না করে?
-যদি না করে দেয় তবে তোর ভালবাসা দিয়ে তার মনে ধীরে ধীরে জায়গা করে নিবি। পারবি না তাকে জয় করতে?
-আমাকে যে পারতেই হবে।
-এখন এত বেশি চিন্তা না করে তৈরি হয়ে নে।
অভি-রাহুল এবং অনামিকা ও আফরোজা চৌধুরী একত্র হতেই আফরোজা চৌধুরী বলেন,
-কি খবর অভি, জ্বর কি পুরোপুরিভাবে সেরেছে?
-রাহুলের এত সেবার পর জ্বর আর থাকে? রাতেই ভেগেছে।
-সত্যিই তোমাদের বন্ধুত্ব আমাকে খুব অবাক করে দিচ্ছে।
-দোয়া করবেন আমাদের এই বন্ধুত্ব যেন শেষ জীবন পর্যন্ত অক্ষুণ্ণ থাকে।
ওরা সবাই মিলে মার্কেটে চলে গেলো। এই দোকান ঐ দোকান করে নিজেদের পছন্দমত জিনিস পত্র কিনতে লাগলো। সমস্যা দেখা দিয়েছে অনামিকার ড্রেস কিনতে গিয়ে। বেশ কয় দোকান ঘুরে অনেক ড্রেস দেখা হয়ে গেলো, তার কোনো ড্রেস পছন্দ হয় না। অবশেষে একটা বড় দোকানে ঢুকে তার মা বলেন,
-দেখ এই দোকানের ড্রেসগুলো কিন্তু বেশ সুন্দর সুন্দর। আর এত চক্কর না দিয়ে এখান থেকে কিনে নে।
কর্মচারী ছেলেটিকে ড্রেস দেখাতে বললে যে এক এক করে অনেকগুলো ড্রেস দেখালো। এর মধ্যে একটি ড্রেস তার মা'য়ের খুব পছন্দ হয়ে গেলো। ড্রেসটি হাতে নিয়ে বলেন,
-ড্রেসটা কিন্তু দেখতে বেশ। তোকে খুব মানাবে। কি বলো রাহুল ঠিক বলেছি কিনা?
-অবশ্যই ঠিক বলেছেন আন্টি। ড্রেসটা অত্যন্ত সুন্দর। তাছাড়া ড্রেসে কি আসে যায়! সুন্দর মানুষকে সবকিছুতেই সুন্দর দেখায়।
কথাটি বলায় অনামিকা সরাসরি তাকায় রাহুলের দিকে। রাহুল লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নেয়। আর মনে মনে নিজেকে বকা দেয়, এভাবে বলা উচিৎ হয়নি।এই প্রথমথম অনামিকা কথা বলে,
-অভি এইবার তোমার পছন্দটা বলো।
--ড্রেস যেহেতু তুমিই পড়বে তাই তুমি নিজেই পছন্দ করে কিনা উচিৎ বলে আমি মনে করি।
-তারপরও বলো না তোমার পছন্দের একটি। আম্মু কালো কালারের ড্রেসটা পছন্দ করেছে। আর রাহুলের কাছে তো সবগুলোই অসাধারণ লাগছে। এইবার তোমারটাও জেনে নেয়া উচিৎ।
-জানোই তো সবার পছন্দ কখনো সমান হয় না। হাঁ রাহুলের সাথে আমিও একমত, এই তিনটি ড্রেসই দারুণ। তবে প্রতিটি মানুষের একটি স্বভাব কি জানো! সেটা হচ্ছে কোনো কিছু যদি কারো প্রথম দেখায় পছন্দ হয়ে যায় তবে এরপর আর যাই দেখুক না কেন, তার কাছে সেই প্রথম পছন্দটাই সেরা মনে হবে।
যেমন এই দোকানে এসেই প্রথমেই আমার ঐ গোলাপি রংয়ের ড্রেসটার উপর চোখ আটকে যায়।
কথাটি বলে কর্মচারী ছেলেটিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলল,
-ভাই ঐ গোলাপি রংয়ের ড্রেসটি দেন।
ছেলেটি ড্রেসটি এনে দিলো। ড্রেসটি দেখে অনামিকা খুব খুশি হল। শুধু সে না তার মাও বলেন,
-ওয়াও! ড্রেসটি দেখছি আমার পছন্দ করা ড্রেসের থেকেও সুন্দর। তোমার পছন্দ দেখছি খুব ভালো অভি।
-ধন্যবাদ অভি। এত সুন্দর একটি ড্রেস আমায় পছন্দ করে দেয়ার জন্য।
তারপর কর্মচারী ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বলল,
-এই দুটি ড্রেস প্যাকিং করে দাও।
সবার কাপড় কেনা শেষ হলে চায় যায় কসমেটিক্সসের দোকানে। অনামিকা তার মাকে নিয়ে দোকানের একপাশে জিনিস পত্র দেখছিল। তার ড্রেসের সাথে মিলিয়ে যাবতীয় প্রয়োজনীয় সবকিছু কিনছিল। আর রাহুল-অভি অন্যপাশে দেখছিল। হটাৎ রাহুল একটি হাত ঘড়ি দেখিয়ে অভিকে বলে,
-এটা যদি অনামিকাকে গিফট দেয়ার জন্য কিনি কেমন হবে?
অভি ঘড়িটি ভালভাবে দেখলো। ঘড়ির ঘণ্টা, মিনিট ও সেকেন্ডের কাটাগুলো লাভ সিম্বলের ভিতরে অবস্থান করছে। সবদিক দিয়েই ঘড়িটি দেখতে খুব সুন্দর লাগছে। অভি বলে,
-খুব ভালো হবে। ঘড়িটি দেখতে দারুণ।
রাহুল ঘড়িটি প্যাকেজ করে দিতে বলে।
সবকিছু কেনাকাটা করতে বেলা তিনটে হল। সবাই নিজেদের শপিং ব্যাগগুলো নিয়ে গাড়ির পাশে গেলো। আফরোজা চৌধুরী বলেন,
-এইগুলা গাড়িতে রেখে আমরা লাঞ্চ করে আসি।
তারপর সবাই মিলে এক টেবিলে বসে দুপুরের খাবার খেলো। বিল দিলেন আফরোজা চৌধুরী। রাহুল অভি অনেক জোরাজুরি করছিল তারা দেয়ার জন্য। কিন্তু তিনি বললেন,
-তোমরা আমাকে আন্টি ডেকেছো না? তবে তোমাদের এই আন্টি কি একদিন তোমাদের খাওয়াতে পারেনা?
তখন আর ওদের কিছুই বলার থাকে না।
খাওয়া শেষ হলে তারা হোটেলের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। রাহুল বারবার ইশারায় অভিকে মনে করিয়ে দেয় অনামিকার সাথে তার কথা বলার সুযোগ করে দেয়ার জন্য। অভিও সুযোগ খুঁজতে থাকে কিন্তু পাচ্ছিল না। সুযোগ এলো হোটেলে পৌঁছে গাড়ি থেকে নামার পর। গাড়ি থেমে যেতেই অনামিকা নেমে পড়ে রুমের দিকে হাঁটা দেয়। তখন আফরোজা চৌধুরী ড্রাইভারের সাথে কথা বলছিলেন।
তখন অভি রাহুলকে বলে,
-তুই ব্যাগগুলো নিয়ে আয়। আমি তোর কথা বলার ব্যবস্থা পাকা করে আসি।
কথাটি বলেই অভি দ্রুত পায়ে অনামিকার কাছে পৌঁছায়।
-অনামিকা তোমার সাথে কিছু জরুরী কথা ছিল।
-বলো।
-এখন না। সন্ধ্যায় যদি একবার হোটেলের বাগানে আসতে...
-কিন্তু কি কথা?
-তখন আসলেই না হয় জানবে।
-আচ্ছা আসবো।
-ধন্যবাদ।
তারপর তারা নিজেদের রুমে চলে যায়। রাহুল রুমে গিয়েই জানতে চায় কি বলেছে অনামিকা। অভি জানালো অনামিকা আসবে বলেছে। শুনে রাহুলের মুখে হাসি ফোঁটে ওঠে। তবে কিভাবে কি বলবে, কিভাবে শুরু করবে কথা বলা এইসব ভেবে চিন্তায় পড়ে যায়। রাহুলকে চিন্তিত দেখে অভি বলে,
-কি রে, এরপরও তুই খুশি হসনি মনে হচ্ছে?
-তা নয়। অনামিকা আসতে রাজি হয়েছে বুঝলাম। কিন্তু সে আসলেও সবকিছু শেষ হয়ে গেলো না।তাকে কিভাবে কথাগুলো বলবো বুঝতে পারছি না।
-এই বিষয়ে আর আমি কোনো হেল্প করতে পারবো না। কারণ আমার নিজেরও এই বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞতা নেই।
(চলবে).............
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ