অসমাপ্ত
;
;
;
পৃথিবীর যত প্রকার অস্থির প্রানী আছে তাদের ভেতর আমি এক প্রকার।অন্তত আমার স্বামী সেটাই বলে।আবার এটাও বলে আমি নাকি ব্যাটারি চালিত পুতুল।মাঝে মাঝে বেশি কথা বলার জন্য রেডিও ক্যাসেট বলে।এটা নিয়ে সব সময় ওকে ঝগড়া করি।বিয়ের গত চার মাসে কম পক্ষে এক হাজার বার ঝগড়া করছি।করলে হবে কি? পুরুষ মানুষের ঘাড় একটু তেড়া তো হবেই।প্রেম করার সময় ভাল ভাল কথা।আমিও ছেড়ে দেয়ার মানুষ না।অবশ্য খুব যখন রেগে যায় তখন ও নিরবতা পালন করে আমার রাগ কন্ট্রোল করার অবিরাম চেষ্টা করে।বুঝি খুব ভালবাসে আমাকে।কিন্তু না বোঝার ভান করে থাকতে হয়,কেননা তখন মাথায় চড়ে বসবে।এই যে এখন নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে আর আমি বিছানার এপাশ ওপাশ করছি। হয়ত ওর কথাই ঠিক,আমি আসলেই অস্থির প্রকৃতির।ওহ আমার নাম টাই বলা হল না....
মানতাশা আমি।নামটা একটু কেমন কেমন তাই না???
আসলে বাবা মায়ের দেয়া।আনকমন রাখতে চেয়েছিলেন তারা।তাই এই নাম....
এই যে পাশে নাক ডাকছে আমার ঘুম কাতুরে বর। ও প্রহর। ইচ্ছা করছে কি জানেন? ওর গলার উপর উঠে বসে থাকি।শালা আমি জেগে আছি আর উনি ঘুমাচ্ছে।দাড়াও তোমার ঘুম বের করছি....
শাড়ির আচল টা নিয়ে চিকন করে পেঁচিয়ে ওর কানের ভেতর সুরসুড়ি দিলাম....
- কি হল?(প্রহর)
- সে কি তুমি ঘুম না?(আমি)
- যে ভাবে গড়াগড়ি শুরু করেছ ঘুমাব কি করে?
- ঘুম আসে না কি করব?
- এদিকে আস.....
এবার একদম ওর কাছে গিয়ে ওর বাড়ানো ডান হাতের উপর মাথা রেখে জড়িয়ে ধরলাম।
- এই চল না ছাদে যাই!
- সিলিং এর দিকে তাকিয়ে বল।
- ওহ... টিন দিয়ে ঘর বানাইতে গেছ কেন হ্যা?
- আমার তো ছাদ বানানোর মত টাকা নেই মানতাশা।
- এই তুমি এভাবে বলছ কেন? আমি তো ফাজলামি করে বলেছি।
- ফাজলামি করলেও এটাই তো সত্য তাই না?
- প্রহর খুব খারাপ হবে বলে দিচ্ছি।আমি সব কিছু দেখেই তোমাকে বিয়ে করেছি।
- আমারও না ইচ্ছা করে তোমার সাথে চাঁদের আলোয় বসে গল্প করব।মাঝ রাতে তোমায় নিয়ে চাঁদের সাথে একসাথে চা খাব।কিছুই হল না।
- ধুর প্রহর মন খারাপ করো না তো,ঘুমাও।দেখবে এক সময় আমাদের সব হবে।
- যে চাকরী করছি তা দিয়ে সংসারটাই চলে গরুর গাড়ির মত।
- এই তুই ঘুমাবি না তোর গলা টিপে মারব?
- ওকে ঘুমাচ্ছি।একদম চুপ......
অনেক্ষন চুপ দুজনেই।ঘুম নেই মানতাশার।কেন যে আজ তার চোখে একদম ঘুম আসছে না!
- এই তুমি কি ঘুমিয়ে গেছ?
- চেষ্টা করছি...
- আজ না ঘুমালে হয় না? কাল তো শুক্র বার।
প্রহর যেন এই কথাটা শোনার অপেক্ষায় ছিল।মানতাশা বলার সাথে সাথে উঠে গেল।বালিস টা খাটের সাথে খাড়া করে রেখে পিঠ লাগিয়ে বসল। তারপর বউকে বুকে নিয়ে বলল....
- এবার ঠিক আছে?
- উমমমম....
- প্রহর...?
- বল...
- তোমাকে এত ভালবাসি কেন?
- এর সঠিক উত্তর তো আমার জানা নেই মানতাশা। তবে এটা বলব যে ভালবাসায় কোন কারন থাকে না।
কথা বলতে বলতে অস্থির মেয়েটা এক সময় হঠাৎ চুপ হয়ে গেল।এক পাশের চুল মুখের উপর পড়ে আছে।হাত দিয়ে সরিয়ে দিল সেগুলো প্রহর।ওভাবেই ঘুমিয়ে গেল দুজন।
;
- এই বউ কি কর?
- কুতকুত খেলি,খেলবা?
- এভাবে বলছ কেন?
- কিভাবে বলব, দেখতে পাচ্ছ না রান্না করছি?
- তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছে,তাই ওটা বললাম।
- হইছে,যাও ফ্রিজ থেকে মুরগীর মাংস টা বের করে পানিতে রেখে দাও।
-
- কই হল??
- হ্যা হইছে...
- পেয়াজ গুলা কাটতে পারবা?
- পেয়াজ কাটতে পারব না বলেই তো বিয়ে করলাম।
- কিইইইই? আজ এই সব পেয়াজ কাটবি তুই....
- ব্যাচেলর লাইফে এইটা কাটার সময় খুব কান্না করছি।এখনো আবার??
- ব্যাস্ত আমার তরকারি পুড়ে যাবে....
বেচারা প্রহর পাঁচ ছয় টা পেয়াজ কাটতে গিয়ে নাকের পানি চোখের পানি এক করে ফেলেছে।মানতাশা একবার প্রহর আর একবার চুলার দিকে তাকাচ্ছে।আর মিটমিট করে হাসছে।
- এই নাও তোমার পেয়াজ...
- এখন যাও মুখ ধুয়ে টিভি দেখতে লাগ আমার আর একটু সময় লাগবে।
- দুপুর আড়াইটা বাজে এখনো রান্না হয় না।খাব কবে ক্ষুদা লাগছে তো?
- আর একটু জান।যাও আসছি আমি....
- একটু থাকি এখানে?
- আচ্ছা থাক।আমাকে কাজ করতে দিও। এই দেখ তো মাংস টা সিদ্ধ হইছে নাকি?
- উমমম.... আর একটা দাও এইটা সিদ্ধ হয়নি ভাল....
- আর হবে না।আমি চিনি না তোকে? সিদ্ধ না হলে ওয়াক করে ফেলে দিতি......
;
খাওয়া দাওয়ার পর দুজনেই শুয়ে আছি।
- প্রহর...
- বিয়ের পর জামাইয়ের নাম ধরতে নেই জানেন না?
- মনে থাকে না।দুই বছর প্রেম করছি। তখন তো নাম ধরেই ডাকতাম।আর চার মাসে চেঞ্জ একটু কষ্টককর না? হয়ে যাবে চিন্তা করো না।
- কিছু বলবা?
- হ্যা... বলছি বিকেলে চল না একটু ঘুরে আসি কোথাও?
হঠাৎ দেখলাম প্রহরের মুখটা মলিন হয়ে গেল।
- এই জান কি হল তোমার?
- না কিছু না তো...
- ঘুরতে যাবে না?
- হ্যা যাব...যাও রেডি হও.....
আমি জানি আমার বর ঘুরতে যাওয়ার কথা শুনলে মলিন হয়ে যায় কেন! ওর হাতের অবস্থা খুব ভাল না।টানাটানি সংসার হলে যা হয়। বিয়ের আগে রেস্টুরেন্টের বিল আমিই দিতাম।বাবার খুব আদরের ছিলাম তো,যেমন ইচ্ছা খরচ করেছি। নিজেও অবাক হয়ে যায় মাঝে মাঝে,বিয়ের পর কেমন পাল্টে গেছি।রেস্টুরেন্টের খাওয়া এখন ভাল লাগে না।রাস্তার পাশের ফুসকা, চটপটি হলেই খুশি।হয়ত ওকে খুব ভালবাসি তাই।
- কই তোমার সাজু গুজু হল?
- এই আমি মোটেও সাজছি না।
- বা...প রে.....সাজো নাই তাই এই অবস্থা? ( পরি বললেও কম হবে বউটাকে )
- খুব বাজে লাগছে?
- নিজেও জান কেমন লাগছে।তবুও আমাকে বলতে হবে না?
- বল না....
- মনে হচ্ছে আজ আবার বাসর রাত আমাদের....
- যা শয়তান। চল বের হও...
-
প্রহরের হাত ধরে হাটছিলাম।রিক্সা পাওয়ার পর দুজনে রিক্সায় উঠলাম।মনে হচ্ছে ভার্সিটির সেই কাপল জোড়া আমরা।
- এই কি ভাবছ?
- ভার্সিটি তে পড়ার সময় এভাবেই ঘুরতাম তাই না?
- হ্যা... এক বছর পর তিন জন এক সাথে আসব।
- তিন জন মানে?
- আমরা দুই জন।আর বাকিজন এখানে। ( আমার পেটে হাত রেখে )
- অনেক শখ বাবা হওয়ার?
- হুমম তা তো একটু আছেই.......
;
;
- এই মা যা রেডি হ।ওরা এসে পড়েছে?
ছাদের কিনারা থেকে মায়ের দিকে মুখ ফেরাল মানতাশা।
- ওরা কারা?
- তোকে দেখতে আসছে।
- মা তোমাকে কতবার বলব আমি বিয়ে করব না।
- দেখ প্রহর চলে গেছে দু বছর হয়ে গেছে।এখন আর পাগলামি করিস না।
- মা আমি তোমাদের সাথে থাকলে যদি প্রবলেম হয় তাহলে আমি চলে যাব।আমাকে জোর করো না।
- তোর যা ভাল লাগে কর।আর কিছু বলব না।
দোলনায় রাখা বাচ্চাটা কেঁদে উঠল।কোলে নিতেই থেমে গেল পুষ্প। এখনো আম্মু ডাক ফুটে ওঠেনি।
অনেক দিন বের হওয়া হয়না কোথাও।আজ মেয়েটাকে নিয়ে বের হলাম। সেখানেই আসছি যেখানে তিনজন আসার কথা ছিল।কিন্তু আজও দুজন আসছি।প্রহর তো কথা রাখেনি।ওরই বা দোষ কোথায়?
সেদিন এক্সিডেন্ট টা না হলে হয়ত আজ তিনজন মিলেই আসতাম।
প্রহর শুনছ? তোমার কিন্তু মেয়েই হয়েছে।আর তোমার রাখা নামটাই রেখেছি কিন্তু।
মেয়েটা শাড়ির আচল ধরে টানছে এখনো।কোলে নেওয়ার সময় দেখি ডান হাতে বাবার ছবিটা খুব শক্ত করেই ধরে রেখেছে........
;
;
;
লেখা : Parvej Imran Prohor
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ