সেই তুমি (৪র্থ পর্ব)
লিখা: #রবিউল ইসলাম
.
ইরা আর ফাহাদ হাইওয়ে ধরে হাঁটছিল ।ইরা ব্যাগ থেকে বাদাম বের করে মনের সুখে বাদাম খেতে খেতে হাঁটছে।
-বাদাম খাবেন?
ইরা ফাহাদের দিকে বাদাম এগিয়ে দিল।ফাহাদের রাগ চরমে ছিল,কিন্তু কথা বলছিল না।ইরার এই কথা শুনে রাগ আর ধরে রাখতে পারল না
-খবরদার কথা বলবেন না আমার সাথে।মন চাচ্ছে কষিয়ে একটা চড় লাগাই আপনাকে।আজ আমি মরতে মরতে মরতে বেচে ফিরে এলাম।আর আমার এই অবস্থার জন্য দায়ী আপনি।াআপনার সাহস কত বড় আবার কথা বলছেন আমার সাথে?
-আজব মানুষ তো আপনি।তা আপনাকে বাঁচাল কে?আমিই তো নাকি?শুধু শুধু রাগ দেখাচ্ছেন।
-হুম তা আপনার ওই নাটকটা আরেকটু আগে করতে পারলেন না?তাহলে তো আমাকে এতটা ঝামেলা পোহাতে হত না।আমাকে খারাপ সিচুয়েশনে ফেলে ভালই তো মজা নিচ্ছিলেন।
ইরা খিলখিল করে হেসে ফেলল,
-কি করব বলুন আপনি যেভাবে কাঁপছিলেন আর তোতলাচ্ছিলেন তা দেখে বেশ মজা পাচ্ছিলাম।ভাবলাম আপনাকে এভাবে আরেকটু দেখি তারপরই ড্রামা স্টার্ট করি।
আবার হাসতে শুরু করল ইরা।ফাহাদের সহ্য হচ্ছিল না আর এগুলো।তারপর বলল,
-বিয়ে আটকানোর কি আসলেই ইচ্ছা আছে আপনার?নাকি আমার গলায় ঝুলার প্ল্যান অল রেডি করে ফেলেছেন?
-চিন্তা করবেন না।বিয়ে করতে হবে না আমাকে আপনার,কোন প্ল্যান করারও দরকার নেই।
-মানে?
-দেখুন বিয়ের প্রিপারেশন নিতে নিতে এটলিস্ট ২/৩ মাস লেগে যাবে।তার আগেই আমি গায়েব হয়ে যাব।
-গায়েব হয়ে যাবেন মানে?কোথায় যাবেন?
আকাশের দিকে আঙ্গুল তুলে দেখাল ইরা।ফাহাদের এবার আবার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।আবার ফাজলামি করছে এই মেয়ে।রাগে কিছু একটা বলতে যাবে তখন ই ধপ করে ইরা পড়ে গেল রাস্তায়।ফাজলামির একটা সীমা আছে।এখন আবার নতুন নাটক শুরু করেছে এই ড্রামা কুইন।
- দেখুন সুবকিছুর একটা লিমিট আছে।উঠুন বলছি ।
আবার ডাকল ফাহাদ কিন্তু ইরা উঠছে না।
-উঠবেন নাতো?থাকুন তাহলে আমি গেলাম।আমার কোন ঠেকা নাই আপনার এইসব নাটক সহ্য করার।বাই।
ফাহাদ হাঁটা শুরু করল।কিছুদুর গিয়ে আবার পিছনে তাকালো।এখনও পড়েই আছে রাস্তায়।করতে থাকুক ড্রামা।তার কি?আবার হাঁটা শুরু করল।কিছুদূর যাওয়ার পর আবার পিছন ফিরে তাকাল।নাহ মেয়েটা উঠছে না।এখন একটু ভয় হল ফাহাদের।দৌড়ে গেল।বসে ইরার মুখটা উপরে তুলে দেখল রক্ত বেরুচ্ছে নাক দিয়ে।অজ্ঞান হয়ে আছে।তারাতারি রাস্তা থেকে কোলে করে উঠিয়ে রাস্তার পাশে একটা গাছের নিচে হেলান দিয়ে বসাল ইরাকে।ডাকল অনেক্ষন।কোন সাড়া নেই।হঠাত মনে পড়ল ইরা বলছিল যে বিয়ের আগেই গায়েব হয়ে যাবে।আকাশের দিকে দেখিয়েছিল।তাহলে কি মেয়েটা মারা যাচ্ছে? ইরার ব্যাগের ভিতর থেকে পানির বোতল টা বের করে মুখে পানির ছিটা দিল।একটু পরেই জ্ঞান ফিরল ইরার।
-কি হয়েছিল আপনার?সত্যি করে বলুন তো
-কিছু না।মেডিসিন নেওয়া হয়নি আজ তাই।চলুন এখন।বাস পেতে হলে আরও অনেকটা রাস্তা হাটতে হবে।
ফাহাদ মেয়েটাকে অবাক হয়ে দেখছে।এক্টু আগে পর্যন্ত অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিল।এখন কি সুন্দর আবার শরীরের সব শক্তি নিয়ে উঠে দৌড়াতে চাচ্ছে।ও থামাল ইরাকে,
-বসুন।কথা আছে আপনার সাথে।
-বসাবসির সময় নেই।চলুন তো।
-কিছু কথা বলব তারপর যাব
-উফ আচ্ছা বলুন
-আপনি কি অসুস্থ?বড় কিছু কি হয়েছে আপনার?
ইরা চুপ হয়ে গেল।ফাহাদ আবার বলতে শুরু করল,
-প্রথমে যখন আপনাকে দেখেছি মনে হয়েছিল আপনি পাগল।এজন্যই এত চঞ্চলতা।সব কিছুতে হাসেন।কোন কিছুতে মন খারাপ করেন না।তারপর এখানে এলাম আপনার সাথে।এত ডেঞ্জারাস একটা জায়গায় যেকোন ছেলে থাকতে ভয় পাবে কিন্তু আপনার এসব নিয়ে কোন চিন্তা নেই।কারন টা এখন বুঝতে পারছি।আপনি অনেক কস্টে আছেন,তাই সব সিচুয়েশনে হাসি দিয়ে কস্ট টা ঢেকে রাখার ট্রাই করেন।এইসব এডভেঞ্চার আপনার মন ভাল রাখার জন্য আপনি করতে চেয়েছিলেন।তাই না?
ইরা কিছুক্ষন স্থির দৃষ্টিতে ফাহাদের দিকে তাকিয়ে রইল।তারপর বলল,
-আমার নাক দিয়ে প্রায়ই রক্ত যেত।মাথা ভারি লাগত।একাই ডাক্তার দেখালাম।মা এম্নিতেই অল্পতেই টেনশন করে।তাই কাওকে বলিনি।রিপোর্টে ধরা পড়ল ব্রেইন টিউমার অনেকটা জায়গা জুড়ে।অপারেশন করলেও বাচার পসিবিলিটি .১ পার্সেন্ট।তাই ভাবলাম বাবা মাকে আর জানাব না ।যে কয়দিন বাঁচব সে কয়দিনও শুধু শুধু অনেক কস্টে থাকবে বাবা মা।প্লিজ কথা দিন আপনি কাওকে বলবেন না্,প্লিজ
বলেই দুহাতে মুখ ঢেকে অঝোরে কাঁদতে শুরু করলন ইরা।
ফাহাদ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ইরার দিকে।এত কস্ট নিয়ে ঘুরছিল মেয়েটা কখনও বুঝতেই পারেনি।কত খারাপ ব্যবহারই না করেছে মেয়েটার সাথে...হঠাত ইরার জন্য মায়া লাগতে শুরু করল খুব।মনে মনে ভাবছে ইশ এটাও যদি মেয়েটার একটা নাটক হত!সত্যি বলছে ও একদম রাগ করত না।
(চলবে).
সেই তুমি (৫ম পর্ব)
লিখা: #রবিউল ইসলাম
.
ফাহাদ বাসর ঘরে ঢুকেই দেখে ইরা মনের সুখে সিগারেট টানছে।দেখেই ফাহাদের মাথায় রক্ত উঠে গেল,
-আপনার সাহস কত বড় আমার বেডরুমে বসে সিগারেট খাচ্ছেন?আর নতুন বউ হয়ে এগুলো করছেন লজ্জা করে না?
ইরা খুবই উদাস ভাবে বলল,
-না করে না
-কোন ভদ্র ফ্যামিলির মেয়ে সিগারেট খায়না ।আপনি আসলেই একটা অসভ্য টাইপের মেয়ে।
ইরা ফাহাদের কথায় খুব উৎসাহিত হয়ে বলল,
-তাহলে আমাকে ছেড়ে দিন।ডিভোর্স দিয়ে দিন তাহলেই তো হয়ে যায়।
এই কথা শুনে ফাহাদ চুপ হয়ে গেল।আর কথা বাড়াল না ইরার সাথে।এভাবে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য বিয়ে করেনি সে,করেছে অন্য কারনে।চুপচাপ ফ্রেশ হতে চলে গেল।ইরা ভাবছে ফাহাদ এতটা লোভী কখনও ভাবেনি সে।দেখে সহজ সরল মনে হয়েছিল তাই বিশ্বাস করে তার অসুস্থতার কথা বলেছিল।কিন্তু কি করল ফাহাদ ?সেটা দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে করল ওকে।তবুও তিনদিনের মধ্যে।বুঝতে অসুবিধে হয়নি ইরার যে ফাহাদ এটা কেন করেছে।করেছে সম্পত্তির লোভে।বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে ইরা।ও মরে গেলে ফাহাদ সব কিছু খুব সহজেই হাত করতে পারবে।বিশ্বাস করে এত বড় ধোঁকা খেল ভেবে কস্ট লাগছে।বাবা মাকে জানাতে পারত সব,কিন্তু লাভ হত না,উল্টো বাবা মায়ের কস্ট বাড়ত।নাহ এই ছেলেকে নিজেই হ্যান্ডেল করবে সে।এমন কিছু করতে হবে যাতে করে এই ছেলে নিজেই ওকে ছাড়তে বাধ্য হয়।্ফাহাদ ফ্রেশ হয়ে আসার পর বলল,
-আমার খুব ঘুম পেয়েছে।সরুন শোব।
-মানে কি?আপনি ভাবলেন কি করে যে আপনাকে আমার সাথে শুতে দিব?
একটা বালিস মেঝেতে ঢিল মেরে ফেলে দিয়ে ইরা বলল,
-যান ওখানেই শোন আপনি।আমার ধারে কাছেও আসার চেষ্টা করবেন না বলে দিচ্ছি।সম্পত্তির জন্য বিয়ে করেছেন ভাল কথা,আমাকে জ্বালাবেন না একদম,সাবধান।
ইরার কনফিডেন্স ছিল যে এই ছেলের সম্পত্তির লোভ থাকলে ইরা মরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ওকে তেমন ঘাটাবে না।কোন কিছুতে জোর জবর্দস্তিও করবে না।হলও তাই।ফাহাদ চুপচাপ আলমিরা থেকে একটা চাদর বের করে মেঝেতে বিছিয়ে শুয়ে পড়ল।ফাহাদ ভাবছে ইরার কথা।মেয়েটা অসুস্থ,ওর কাজ কর্ম যতই অপছন্দনীয় হোক না কেন সে রাগ কন্ট্রোল করার ট্রাই করবে।ইরাকে আর স্ট্রেস দিবেনা।ইরা বিছানায় শুয়ে বালিসে মুখ বুজে কাঁদছিল জীবনের শেষ কটা দিন এভাবে কাটাতে হবে ভাবেনি সে।ভেবেছিল বাবা মাকে যতটা সম্ভব বেশি সময় দিবে।কিন্তু তা আর হলোনা।এই ধোঁকাবাজ ছেলেটার সাথে বাকি দিনগুলো কাটাতে হবে ভেবে কস্ট লাগছিল।
সকালে দরজায় মায়ের ডাকে ঘুম ভাংল ফাহাদের।সে তারাতারি মেঝে থেকে বিছানা সরিয়ে হাই তুলতে তুলতে দরজা খুলল।
-কিরে নটা বাজে।বৌমা কি ঘুমাচ্ছে এখনও?
-হুম কাল অনেক ধকল গেছে তো।
মা হেসে ফেললেন।ডেকে তুল বৌমাকে।তোর বাবা নাস্তার টেবিলে অপেক্ষা করছে।বলে চলে গেলেন ফাহাদের মা।ফাহাদ ইরা কে ডাকল,
-এই যে উঠুন।মা নাস্তার জন্য ডাকছে।
ইরা ঘুম জড়ানো গলায় বলল,
-এখন নাস্তা খাবনা।আমাকে বেড টী দিতে বলুন।
-দেখুন আপনি বাড়ির নতুন বউ।প্রথম দিনই এরকম করলে মা অনেক কস্ট পাবে
ইরা ঝাড়ি মেরে বলল,
-যান তো ।ঘুমাতে দিন আমাকে।
ফাহাদ খেয়াল করেনি মা আবার রুমে এসেছেন ফাহাদ চা খাবে কিনা জানতে।এসে সবই শুনলেন।হঠাত মায়ের আওয়াজে চমকে তাকাল ফাহাদ।
-বউমা না এলে তুই একাই আয় খেতে।ও পরে খেয়ে নিবে।বলে চলে গেলেন।
শ্বাশূড়ির গলা শুনে ইরা উঠে বসল।ফাহাদ রেগে গেল,
-হলো তো ?এখন আপনি খুশি?
বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেল।ইরা ভাবল ফাহাদের বাবা মায়ের সাথে বেয়াদবি করা উচিত হবেনা ।উনাদের তো কোন দোষ নেই।তাছারা ইরার বাবা মা এগুলো শুনলে কস্ট পাবেন।সে চুপচাপ ফ্রেশ হয়ে খেতে এল।নাস্তার টেবিলে কেউ কথা বলছে না।বুঝতে পারল তার আচরণে সবাই অষন্তুষ্ট।সেও এসব পাত্তা না দিয়ে খাওয়া শুরু করল।ফাহাদের মা হঠাত বলে উঠলেন,
-বউমা বাসার কিছু নিয়ম কানুন আছে।আমরা সবাই ঠিক নটায় একসাথে বসে নাস্তা করি।টাইম মত উঠে ফ্রেশ হয়ে চলে আসবে।
এর মধ্যেই ইরার মাথায় খুব যন্ত্রণা হতে লাগল।ও দুহাতে মাথা চেপে ধরল।ফাহাদ তারাতারি উঠে গিয়ে পানি খাইয়ে দিল ইরাকে।আপনার শরীর খারাপ।চলুন রুমে গিয়ে রেস্ট নিবেন।হাত ধরে ইরাকে রুমে নিয়ে গেল।এদিকে ফাহাদের মা ভাবছেন উনার কথা শুনে ইরা বিরক্ত হয়ে এই নাটক টা করেছে।ফাহাদের বাবা মা দুজনেই অবাক হয়ে ফাহাদের চলে যাওয়া দেখছে।যে ছেলে বিয়ের নাম শুনে দৌড়াত সে একদিনে এরকম বউ ভক্ত হয়ে গেল?মেয়েটা কি যাদু করেছে কে জানে।ফাহাদের মা ভাবতে লাগল এই মেয়ের সাথে ছেলের বিয়ে দিয়ে উনারা কোন ভুল করেননি তো?
এদিকে রুমের কাছে এসেই ইরা ঝাপ্টা মেরে সরিয়ে দিল ফাহাদকে।
-দূরে থাকুন আমার থেকে।বাহানা পেলেই কাছে ঘেঁষার ধান্ধা।
-আপনার হেল্প করছিলাম শুধু।আপনার সাথে ওভাবে ঘেষার ইচ্ছা আমার কখনই ছিল না।
-ও তাই?তাহলে বিয়ে করলেন কেন?থাক থাক বলতে হবে না।আমি খুব ভাল করেই জানি কিসের লোভে বিয়ে করেছেন আপনি।আরেকটা কথা আমি মরে গেলেও আমার হেল্প করার দরকার নেই আপনার।ধন্যবাদ।
এটা বলেই ইরা নিজেই আসতে আসতে হেঁটে রুমে চলে গেল।ফাহাদ তাকিয়ে আছে।মেয়েটাকে ভালবাসে না সে অথবা বউ হিসেবেও দেখে না।তাহলে ওকে বিয়ে করল কেন সে?হুম মেয়েটার জন্য কেমন যেন মায়া কাজ করেছিল।ইরাকে ওয়াদা করেছিল যে সে আর কাওকে তার অসুস্থতার কথা বলবে না।কিন্তু মেয়েটাকে জেনেশুনে চোখের সামনে এভাবে মরতে দেখতে পারবে না।কিছু একটা করতেই হত।বিয়ে না করলে হেল্প করার সুযোগটা কোন ভাবেই পেত না।মেয়েটাকে মরতে দিবে না সে,এটা শুধু জানে।
(চলবে).
সেই তুমি (পর্ব -৬)
লিখা: #রবিউল ইসলাম
.
ফাহাদ ওয়াশরুমে শেভ করছিল।হঠাত করেই ইরা ঢুকে গেল ওয়াশরুমে।চমকে ফিরে তাকাতে গিয়ে ফাহাদের গাল অনেকখানি কেটে গেল।মেয়েটার মাথায় তিল পরিমাণ ঘিলুও নেই।ফাহাদ চেঁচিয়ে উঠল,
-আমি ওয়াশরুমে আছি জেনেও এভাবে নক না করে ঢুকে গেলেন কেন?মেনার্স বলতে কি কিছু নেই আপনার?
-না নেই।ওয়াশরুমের দরজা খোলা ছিল।বুঝলাম সেরকম কিছু করছেন না।তাই ঢুকে গেলাম।এখন বেরুন আমি গোসল করব।
রাগ আর ধরে রাখতে পারল না ফাহাদ।একে তো নক না করে ঢুকেছে।ওর এই স্টূপিডিটির জন্য তার গাল কেটে গেছে কিন্তু এই নিয়ে মেয়েটার কোন মাথাব্যথাই নেই।সব কিছুর একটা লিমিট আছে।
-আমি শেভ করছি দেখছেন না?আমার কাজ শেষ হলে গোসল করবেন আপনি।যান এখন।
-মোটেও না।আমি এখনই গোসল করব।শুধু শুধু রাগাবেন না আমাকে বলে দিচ্ছি।আপনি রুমের আয়নায় দেখে শেভ করুন গিয়ে।
চেঁচামেচি শুনে মা এলেন।
-কিরে কি হয়েছে? চেঁচামেচি শুনে দৌড়ে এলাম।ঝগড়া করছিস নাকি?
ফাহাদ বিপাকে পড়ে গেল।মায়ের সামনে ঝামেলা বাড়াতে চাচ্ছে না।বাড়ালে এই পাগল মেয়ে কি বলে বসে ঠিক নেই।শুধু শুধু মা কস্ট পাবে।
-আরে না মা।তোমার বৌমাকে কখন থেকে বলছি গোসল করতে।ও রাজি হচ্ছিল না।তাই ওয়াশরুমে টেনে নিয়ে এলাম।এমনিতেই শরীর টা ভাল না ওর তার উপর গোসল করতে চাইছিল না আলসেমি করে।ইরা লক্ষিটী তুমি প্লিজ গোসল করে নাও।আমি রুমে শেভ করব।
বলেই মাকে ধরে বাইরে নিয়ে গেল ফাহাদ।ইরা মজা পাচ্ছিল।এই ফাজিল ছেলেকে জ্বালাতে ভালই লাগছে।রুম থেকে কাপড় এনে ধুম করে ওয়াশরুমের দরজাটা লাগিয়ে দিল।ফাহাদের খুব মেজাজ খারাপ হচ্ছিল।এই ঝগড়াটে মেয়ের সাথে ঝগড়া করেও পারবে না সে।থাক কিছুদিনের ব্যাপার তারপর ঘরের মেয়েকে ঘরে ফিরিয়ে দেবে।
ডাইনিং এ বসে লাঞ্চ করছিল সবাই।ফাহাদ হঠাত ওর বাবাকে বলল,
-বাবা একটা কথা ছিল।
-হুম বল।
-আমার কিছু টাকার প্রয়োজন।
ফাহাদের বাবা মা দুজনেই একটু অবাক হলেন।এই ছেলে কখনই মুখ ফুটে টাকা চায়নি।উনারা নিজেই বরং যা লাগে তার থেকে বেশি টাকা ছেলেকে দেন।পড়াশুনা শেষে চাকরি নিতে চেয়েছিল ফাহাদ।বাবা মাই দেন নি।ভবিষ্যতে গিয়ে তো বাবার বিজনেসই দেখতে হবে।চাকরি নিয়ে কি করবে?আজ ফাহাদ টাকা চাইছে।এক্সট্রা টাকা কিসের জন্য চাইছে বুঝতে অসুবিধে হল না উনাদের।তবুও বললেন,
-কত লাগবে বল।
-বিশ লক্ষ টাকা।
ওর বাবা মা যেন আকাশ থেকে পড়লেন। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেন না উনারা।তবুও বাবা নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন,
-এত টাকা তো এর আগে কখনই প্রয়োজন হয়নি তোর ।হঠাত কেন দরকার?
-দরকার আছে।দিতে পারবে কিনা বল।পরে বুঝিয়ে বলব।
ছেলে কখনই মুখ ফুটে বড় কিছু চায়নি।প্রথমবার চাইছে।না করতে পারলেন না বাবা।
-ঠিক আছে।বিকেলের মাঝে এরেঞ্জ হয়ে যাবে।
খাওয়া শেষে ফাহাদ আর ইরা চলে গেলে মা বলতে লাগলেন,
-নিশ্চয়ই এই মেয়ের কারসাজি এটা।আমার সহজ সরল ছেলেটার মাথা গিলে খাচ্ছে।তোমার এভাবে রাজি হয়ে যাওয়া উচিত হয়নি। কাল এসে বলবে পুরো সম্পত্তি আমার বউয়ের নামে লিখে দাও।তাই দিবে?প্রশ্রয় দিয়ে একদম ঠিক করনি।
-দেখ আমার যা আছে সব আমার ছেলেরেই।তাছাড়া ছেলেটা কখনই কিছু চায় নি।প্রথমবার চাইল না করতে পারলাম না ।টেনশন নিয়ো না।পরের বার থেকে এরকম হবে না।
রুমে এসে ইরা ভাবছে ছেলেটা আসলেই লোভি।কত সহজে বাবা মায়ের থেকে এতগুলো টাকা আদায় করে নিচ্ছে।এই ছেলেকে বড় রকমের শিক্ষা দিতে হবে।অনেক বার বেড়ে গেছে।
রুমে এসেই ফাহাদের মাথা ঘুরে গেল।ওর সব কাপড় ইরা ছুড়ে ছুড়ে ফ্লোরে ফেলছে।
-এসব কি করছেন আপনি?
-আমার কাপড় চোপড় কি স্যুটকেসেই থাকবে নাকি?এত ছোট আলমিরাতে হবে না আমার।আরেকটা আলমিরা লাগবে।আজকেই এনে দিন।
মেজাজ খারাপ হয়ে গেল ফাহাদের।
-আমার কাপড়গুলো এখনই মেঝে থেকে তুলুন বলছি।আপনার সাহস কিভাবে হল আমার আলমিরা তে হাত দেওয়ার?আপনার আলমিরা লাগবে বললেই হত।এনে দেওয়া যেত।
-তুলে নিন নিজেই।আর তারতারি আলমিরার ব্যবস্থা করুন।
বলেই ইরা নিজের কাপড় গুছানোয় মনযোগ দিল।
মন চাচ্ছিল মেয়েটাকে একটা চড় লাগাতে।কিন্তু নিজেকে সামলে নিল।এখন কাজের মেয়েকে কাপড় গুছাতে ডাকলে মায়ের আর কিছু বুঝার বাকি থাকবে না। রাগে ফুলতে ফুলতে নিজেই কাপড়গুলো তুলতে লাগল।এক গ্লাস পানি হাতে তুলে খায়নি আজ পর্যন্ত আর এই মেয়ে দুইদিনে ওর জীবনটা তামা তামা করে দিচ্ছে।আজ মেঝে থেকে কাপড় তুলাচ্ছে কাল কাপড় ধোয়াবে।আর কিছু চিন্তা করতে পারল না ফাহাদ।মাথা ব্ল্যাঙ্ক হয়ে যাচ্ছে।
সন্ধ্যায় হাসপাতালে গেল ফাহাদ।ডাক্তারের সাথে কথা বলে বুঝতে পারল দেশে চিকিৎসা করালে বাঁচার পসিবিলিটি খুব কম ইরার।দেশের বাইরে করালে তবুও চান্স আছে।কিন্তু তার জন্য আরও টাকার প্রয়োজন।বাবাকে আর চাপ দেওয়া যাবেনা।,এমনিতেই বিজনেসে লস যাচ্ছে,যা দিয়েছে এই ঢের।বূঝতে পারছিল না কি করবে।এতকিছু করার পর হাল ছাড়তে ইচ্ছা করছে না। অন্য কোন রাস্তা বের করতে হবে ।সব ব্যবস্থা না করে ইরাকে কিছুই জানাবে না ভাবছে।আগেই এই পাগল মেয়েকে মিথ্যা আশা দেওয়া উচিত হবে না।
(চলবে)..
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ