আমার বুবু
.
আমার ভালোবাসার মিষ্টি বড় আপু। তাকে ডাকি বুবু বলে। এই বুবু শব্দটা আমার কাছে শুধু শব্দ নয়, যেন দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসা মাখা বড় বোনের জন্য একটি বিশাল ডাক। যা ডাকার সাথে সাথেই মনের মধ্যে একটা ভালো লাগা কাজ করে। মনে হয় যেন মায়েরই কোনো এক স্পর্শ ছুঁয়ে যায় পুরো হৃদয় জুড়ে। এই ডাকে আছে মায়া-মমতা। আবার একই সাথে রয়েছে ঝগড়া-অভিমান। আসলে সব মিলেই আমাদের ভাই-বোন সম্পর্ক।
.
--এই ছোটু, ফজরের আযান দেয় যে উঠে পড়। নামাযের সময় হয়ে এসেছে.??
--উফ.!!! একটু ঘুমুতে দে রে। লক্ষি বোন আমার। আর একটু ঘুমাই.?
-- সম্ভব না, তাড়াতাড়ি উঠে পর বলছি (একটু রাগের সুরে)
-- উঠবো না কি করবি তুই.?
আউউউউউউউ..!!!!!!!!!!!!!
চুল টেনে ধরে উঠিয়ে দিলো। এখন নামায টা পড়তে হবে।
.
বুবু সব সময় নামাযের জন্য তাগাদা দেয়। সে নিজেও পর্দা করে,পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে। সে যতটুকু পারে দ্বীনের পথে থাকার চেষ্টা করে। আমি একটা পাজির হাড্ডি তাই সবসময় তার দৃষ্টি আমার উপর। একদম মায়ের মত। মা কে যেন ভাবতেই হয় না আমাকে নিয়ে। মার সকল কাজে সাহায্য করে। মার রান্নাটাও যেন হুবুহু নকল করেছে। বুঝতেই পারি না বুবুর রান্না নাকি মায়ের। পড়ার সময় হলেই সাথে নিয়ে পড়তে বসবে, খাওয়ার সময় সাথে নিয়ে খেতে বসবে। একটাই ছোট ভাই বলে কথা।
.
-- ছোটু খেতে আয়।
-- কি দিয়ে রান্না করেছিস রে.?
-- আমি আলু ভাজি আর মা ভাত আর মাছ রান্না করেছে।
--কিহ..!!! তুই তো হাফসা,, আলু ভাজ কবে থেকে রে.?? (মজা করে)
-- আরে আমি আলু ভাজি করেছি তাই বলেছি বুঝলি.? (হালকা রাগের সুর)
-- বুঝে ফেলেছি তোমার নতুন নাম আলু ভাজি, হি.হি.হি।
-- কুত্তা হুট.!!! (রাগে)
-- কুত্তি ভাগ।
আলু ভাজি
ভীষণ পাজি
বিয়ে দিবো
আনো কাজী।
-- ইইইইইই..!!!! রাগে তোরে চাবায় খেতে ইচ্ছে করছে।।
-- হয়েছিস তো আলু ভাজি
সাথে খাবি ফিস
লক্ষি বুবু কামড় দিস না
ব্যথা লাগে ইসসস..!!!!!
.
কান ধরে খেতে নিয়ে যাচ্ছে। বাবা মা ঝগড়া দেখে আগেই খেয়ে উঠে গেছে। নিয়ে যাওয়ার সময় আমি আড় চোখে দেখছি বুবু হাসছে। আমার মনে মনে রাগ। মার তো দিলোই সাথে জোকস মনে করে ফাও মজাও নিচ্ছে.? কুত্তি একটা। আমিও মনে মনে ঠিক করলাম, এখন আর নিজের হাতে খাবো না।
.
-- বুবু খাইয়ে দে নইলে খাবো না।
-- কেন নিজের হাত নেই.? আমি পারবো না।
-- তাহলে আমিও খাবো না।
-- না খেলে নাই। যার পেট তার চিন্তা।
-- থাক, তুই ই খা। বেশি করে খা।
.
রাগ করে উঠে আসলাম সেখান থেকে। সোজা আমার রুমে। কি হারামি রে বাবা একটু ডাকও দিলো না.? রাগ করে উঠে এসেছি এখন যদি আবার খেতে যাই তাহলে মান ইজ্জতের হাওয়া ফুস। যত যাই হোক এখনকার মত আর খেতে যাবো না। কিন্তু পেটে যে মানে না। পেটে মনে হচ্ছে টি-টুয়েন্টি খেলা শুরু হয়ে গেছে। উফফ..!!! আর পারছি না রে। এই জন্যেই হয়ত বলে বিড়ালের উপর রাগ করে মাছ ফেলে দিতে নেই।
.
একটু পরেই দেখি বুবু হাতে প্লেট আর গ্লাস নিয়ে আমার দিকে আসছে।
--ছোটু জগটা নিয়ে আয় তো। একা একা পারছি না।
--তুই নিয়ে আয় আমার এক দরকার পড়ে নাই। (একটু অভিমানের সুরে)
-- আচ্ছা ভালো কথা। তাইলে আর কি করার আমিও যাই।
--আরে না..!!! আমিই যাচ্ছি।
শালার এমনিতেই প্যাঁচে আছি তার উপরে আবার কাহিনী করে। মনে মনে সাত পাঁচ বলতে বলতে পানি নিয়ে চলে আসলাম।
.
-- ছোটু হা কর তো.?
-- হা
বুবু খাইয়ে দিচ্ছে আর আমি খাচ্ছি। মনে মনে পরম শান্তি অনুভব করছি। সত্যি এমন বুবু পাওয়া হয়ত খুবই কঠিন। এত ঝগড়া করার পরেও এতটুকু রাগ করে থাকেনা। সত্যি কি সব বড় বোন এমনই হয় নাকি গুটি কয়েক।
.
-- এই ছোটু পানি খাবি না.? সব গুলো ভাত খেয়ে নিলি একটু খেতেও বললি না হুহ।
এত কিছু চিন্তা করতে করতে কখন যে সব খেয়ে ফেলেছি বুঝতেই পারি নি। তবে বুবুর মুখে স্পষ্ট অভিমানের ছাপ দেখতে পাচ্ছি। মনে মনে লজ্জা পেলাম আমি। সত্যি তো একদমই খেয়াল নেই। একটু তো খাওয়ার কথা বলতেও পারতাম।
.
-- সরি বুব
-- হয়েছআমায় উদ্ব প্লেট নিয়ে চলে যাচ্ছে। আমি চেয়ে দেখছি বুবুর যাওয়া। বুগ্লাস নিয়ে গেছে। জগটা ভূল বসত রেখে গেছে। একটু পরে হেচকিরআওয়াজ শুনতে পেলাম। গিয়ে দেখি বুবুর গলায় ভাত আটকে গেছে আমিদৌড়ে গিয়ে গ্লাসে পানি এনে দিলাম। ততক্ষনে বুবুর মুখ লাল হয়ে গেছে। একটু পর বুবু স্বাভাবিক হলো।
.--কিরে তুই এখন খাচ্ছিস কেনো.? তখন খাস নি.? আর পানি না নিয়ে খেতে বসেছিস কেনো.? (একটু ধমকের সুরে)
-- না রে তখন খাইনি। তুই আমার উপর রাগ করে উঠে যাবি বুঝতে পারিনি। আমার ছোটু না খেয়ে থাকবে আর আমার কি গলা দিয়ে ভাত নামে.? পানি আনতে ভূলে গিয়েছিলাম রে।
আমি কি বলব বা বলা দরকার কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। এত ভালোবাসে আমায় আর আমি সব সময় ওর পিছোনে লাগি.? চোখ যেন নিরবে আর বারি ধারা বর্ষণ করছে। যতই আটকানোর চেষ্টা করি ততই যেন বাঁধ ভেঙ্গে আসছে। মনে পড়ছে আমাকে খাইয়ে দেওয়ার কথাটুকু। ইচ্ছে করলেই সে এক লোকমা খানা খেতে পারত আমার কম হবে ভেবেই হয়ত খায়নি। আর আমি একটু খেতেও বললাম না।
.
-- এই ছোটু কান্না করছিস কেনো.?
-- কুত্তি চুপ কর প্লেট দে এই দিকে।
হাত ধুইয়ে প্লেটের ভাত বুবুর মুখে তুলে দিচ্ছি। মনে মনে একটা প্রশান্তির হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। মনে মনে বলে যাচ্ছি আমিও খাইয়ে দিতে পারিরে বুবু আমিও পারি।
.
বুবুর চোখে স্পষ্ট নোনাজল দেখতে পাচ্ছি। সেও হয়ত বুঝেছে আমার মনের ভাষা গুলো। হয়ত ভাবতে পারেনি তার ছোটু তাকে এভাবে বকা দিয়ে নিজের হাতে ভাত খাইয়ে দিবে। বুবু ভাবছে হয়ত, এটা কি বকা নাকি তার ছোটুর ভিতরে লুকিয়ে থাকা তার জন্য বিশাল ভালোবাসার সমুদ্র.?
.
হঠাৎ একদিন সকালে বুবুর বুকে ব্যথা শুরু হলো। শুধু ছোটু বলে একটা ডাক দিয়েছিলো আমায়। আমি দৌড়ে মাথার কাছে গিয়ে বসে পড়লাম। দেখি কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। শুধু বোঝাতে চাচ্ছে তার দম যেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বুবুর প্রচন্ড শ্বাস কষ্ট হচ্ছিলো। দম ফেলতে পারছিলো না। এতক্ষনে বাবা-মা ও এসে পড়েছে। বুবুকে খুব তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। আমি যেতে চাইলাম কিন্তু বাড়িতে কেউ নেই তাই আমাকে রেখে চলে গেলো বুবু কে নিয়ে। আমি বুবু কে নিয়ে যাওয়া দেখছি আর বুঝতে পারছি বুকের পাঁজর ভেঙে গুঁড়ো হয়ে যাচ্ছে। মনে এক অজানা আশংকায় হুহু করে কেঁদে উঠছে।
.
পুরো বাড়িতে আমি একা, যেন মনে হচ্ছে একটা শীতল পরিবেশ বিরাজ করছে। মনে পড়ছে সেই দুষ্টু-মিষ্টি ঝগড়া। যা মাতিয়ে রাখতো পুরো বাড়ি। বড্ড মনে পড়ছে বুবু কে। যখন রাতে ঘুমাতাম কাঁথাটা নিতাম না। হঠাৎ রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে বুঝতাম কেউ একজন কাঁথাটি গায়ের উপরে দিয়ে দিয়েছে। সে আর কেউ নয় আমার বুবু। হঠাৎ পড়তে বসে মাথা ব্যথা করলে খাটে চোখ বুজে শুয়ে থাকতাম। হঠাৎ কারো স্পর্শ আমার কপালে পেতাম। তাকিয়ে দেখতাম বুবু মাথার কাছে বসে তার ছোটুর মাথা টিপে দিচ্ছে। কখনো যদি জ্বর হত দেখতাম বুবু মাথায় জল পটি দিয়ে দিচ্ছে। আমাকে নিয়ে মার চেয়ে যেন বুবুর চিন্তাটাই বেশি। জ্বরের সময় কিছু ভালো লাগে না। তখন আজগুবি বুবুরে বকা দিতাম। আবার একটু পরেই দেখতাম ঔষধ নিয়ে ডাক দিচ্ছে,
--এই ছোটু ঔষধ খেয়ে নে নইলে যে শরীরটা আরো বেশি খারাপ হয়ে যাবে।
তখন কিছু না ভেবেই বুবুর গলাটা জড়িয়ে ধরে অঝোরে কান্না করতাম। এই জন্যেই হয়ত বলে যার বড় বোন আছে সে যেন আরেকটি মা পেয়েছে। আজ বুবু হাসপাতালে একটুও খবর নিতে পারছি না। বড় বেশি মনে পড়ছে বুবুকে। চিৎকার দিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে বুবু তুই কই গেলি.? দেখ আমি তোর ছোটু একটু আদর করবি বুবু.?
.
আমার গলা শুকিয়ে আসছে। কোনো কিছুতেই মন বসছে না। খেতে গেলে বারবার বুবুর মুখ ভেসে উঠছে তখন আর খেতে পারছি না। বিকালে বাবা এসেছে বাড়িতে।
-- বাবা বুবু কেমন আছে.? কি করছে.?
-- আলহামদুলিল্লাহ্, হাফসা ভালো আছে। তোর মা একটু আগে তাকে খাইয়ে দিয়েছে। তোর মা ও খেয়েছে। আমি এসেছি খেতে।
--কেন তুমি খাওনি কেনো.? ওদের সাথে খেলেই তো পারতে।
-- তুই কি করবি না করবি তাই চলে এসেছি। খেয়েছিস.?
--না। বুবুর কথা বড় বেশি মনে পড়ছে তাই আর খেতে ইচ্ছে হচ্ছিলো না।
--তাহলে চল একসাথে খাই।
.
বাবার সাথে খেতে খেতে বুবুর কথা জিজ্ঞেস করলাম। কি হয়েছে না হয়েছে আরো অনেক কিছু। বাবা সব কিছুরই উত্তর দিলো কিন্তু একটা কথা হয়ত লুকিয়েছে সেটা স্পষ্ট বুঝতে পারলাম। বাবা বললো গ্যাস্ট্রিকের জন্য এমন হয়েছে। কিন্তু আমি পরিষ্কার বুঝতে পারলাম যে সত্য কথাটা হয়ত আমার কাছে লুকোচ্ছে। খাওয়া শেষে,
--বাবা বুবুকে দেখতে যাবো নিয়ে চলোনা আমায়।
-- বাবা বললো এখন না পরে যাস। কোনো চিন্তা নেই আর তোর বুবুকে অনেক রেস্ট নিতে বলেছে। আর উত্তেজিত হতে নিষেধ করেছে। তুই সামনে গেলে কেঁদে দিবি। তাই এখন না পরে নিয়ে যাবো।
-- বাবা আমি একদমই কান্না করবনা। তুমি আমাকে নিয়ে চলো।
আমি কথাটা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেছি। বাবা কিছু না বলে নিজের রুমে চলে গেলো।
বাবা হয়ত বুঝতে পেরেছে আমার অবক্ত কথা গুলো কিন্তু বুঝেও না বোঝার ভান করছে। আমি রুমে গিয়ে শুয়ে পড়েছি। কিন্তু চোখ দুটোর যেন ক্লান্তি নেই, তারা বয়ে চলেছে অবিরাম। যেন থামার কোনো ইচ্ছেই নেই।
.
রাতে বাবা চলে গেলো মা এলো। মা রান্না মকরে আবার বুবুর কাছে চলে যায়। আমি। যেতে চাইলেই কোনো না কোনো বাহানায় বাড়িতে রেখে যায়। সবাই যেন পর করে দিয়েছে। আমি যেন কেউ না। নিজের বুবু কে দেখতে যাবো তাও এরা যেতে দিচ্ছে না। এদিকে আমাকে হাসপাতালের নামও বলছে না। একা যে চলে যাবো তারও উপায় নেই। তার উপরে বাবার ঝাড়ি যেন না যাই। ক্রমশ আমার মন ভারী হয়ে আসছে এক অজানা কারণে। এভাবেই কেটে গেলো ৪ টি দিন।
.
আজ শুক্রবার। ফজরের নামাজ পড়েছি। রাতে ঘুম হয় নি তাই তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে বুবুর জন্য দোয়া করেছি। এই কয়দিনে আমি অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছি। আর ভোরে ডাকতে হয় না। ঠিক সময়ে জেগে যাই। যদি বুবুর কথা খুব মনে পড়ে তবে দু-রাকাত নফল নামায পড়ে বুবুর জন্য দোয়া করি। আজ খুব বেশি মনে পড়ছে। বাবা সকাল সকাল বেরিয়ে গেছে। আমার প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছিলো তাই বাবাকে বাহিরে তালা লাগিয়ে যেতে বলি। বাবা জুমার নামাযের আগেই আসবে বলে গেলো। আর মা তো বুবুর কাছে সব সময়। আমি বিছানায় শুয়ে শুয়ে বুবুর কথা ভাবছি এর মধ্যেই যে, কখন গভীর ঘুমের দেশে প্রবেশ করেছি বোঝার উপায় নেই। হঠাত এক শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায়। কে যেন বলছে,
--এই ছোটু, ছোটু, কই রে কুত্তা। একবারো দেখতে গেলি না.?
আমি হুরমুড়িয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়েছি। ঘুমের ঘোরে বুবুর চেহারা কে দেখতে পাচ্ছি। বাবা-মা ও দুই পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। আর এমন ভাবিনি যে বুবু আজই আসবে। কেউ আমাকে কিছুই বলেনি। আমি বুবু বলে ডাক দিতে পারছিনা। শুধু ঢুলু ঢুলু চোখে এগিয়ে যাচ্ছি আমার প্রাণের বুবুর দিকে।।
.
মেহেদি হাসান
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ