দজ্জাল বউ(প্রথম পর্ব)
-Niyamul Islam
.
.
আজ আমার বাসর রাত...বন্ধুরা এক প্রকার জোর করে আমাকে বাসর ঘড়ে ঢুকিয়ে দিলো...যাওয়ার সময় বলে গেল-যা বন্ধু এবার বিড়ালটা মার!!!
আমি ভেতরে ঢুকেই ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম...আমার বেডের উপর আজ থেকে একটা মেয়ে ঘুমোবে...সবকিছু তার সঙ্গে শেয়ার করতে হবে...ভাবতেই গা'টা কেমন জানি ঘ্যান ঘ্যান করতে লাগল।
সময় রাত্রি ১১টা ৩০।আমি বেডের একপাশে গিয়ে বসলাম...আর আমার বউ ঘুমটা খুলে সামনে দাড়াল...বাংলা সিনেমাতে দেখেছি বিয়ের রাতে বউরা স্বামীর পা ছুয়ে দোয়া নেই,হয়তো এখন এটাই করবে আমার বউ।ভাবতেই কেমন জানি গর্বে পা চওড়া হতে লাগল।
কিন্তু ওমা,,,এ...কি! বউ তো শাড়ির আচল কোমরে বাঁধছে!
বাংলা ৫এর মত মুখটা করে ফোঁস ফোঁস করল কিছুক্ষন,তারপর...
-এই এখন তোমার আসার সময় হলো?সাড়ে ১১টা পর্যন্ত একটা মেয়ে অচেনা জায়গায়,অচেনা পরিবেশে একা একা বসে আছে,আর তোমার সেদিকে হুশ জ্ঞান নেই?
-সরি...আসলে হয়েছে কি! বিয়ে বাড়ি,অনেক বন্ধু...তাদেরকেও তো সময় দিতে হবে!
-তো বন্ধুদের বিয়ে করলেই ল্যাটা চুকে যেত,আমাকে কেন ফাঁসাতে গেলে!
-আমি মাথা নিচু করে ভাবছি,বিড়াল টা কে মারছে,আমি না আমার বউ!
-এই চুপ করে থাকবা না খবরদার,এই রকম চুপ করে থাকা মানুষগুলো মিচকে শয়তান হয়...দেখতে তো উল্লুকের মত,কানদুটো তো বানরের মত!
-তো বিয়ে করতে কেন গেলে?কোন এক রাজপুত্রকে বিয়ে করলেই হতো!
-হ্যা,সেই ভালো হতো।যে ছেলে নিজের রেসপন্সিবিলিটি নিতে পারে না,সে আবার বউয়ের নিবে...
- জীবনে প্রথম বিয়ে তো!
-মানে কি,আরও কি করার ইচ্ছে আছে?মাথা কেটে মেসিকে দিবো ফুটবল খেলতে,হাত কেটে সাকিবকে দিবো ব্যাট করতে,পা কেটে থাম্বা বানাবো!হার্ট কেটে মেসেন্জারে ম্ট্রিকার বানাবো...!
-আমার হার্টএটাক হওয়ার যোগাড়!কোনরকমে নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম,জীবনে এতবড় ভুল মানুষ দুবার করে?!
-গলাটা উঁচু করে,মুখটা বাঁকা করে বলে...এই ছেলে তোমাকে বিয়ে করতে বলছে কে,হ্যা?
-আমি চুপ,লজ্বায় মাথাটা হেট হয়ে যাচ্ছে...খুব রাগ হচ্ছে বাবা-মায়ের উপর...এ কোন দজ্বাল বউয়ের হাতে আমাকে তুলে দিলো...মনে হচ্ছিল আমি খুন করা আসামী আর আমার সামনে সিআইডি অফিসার।
কিছুক্ষণ দুজন চুপচাপ...অত:পর;;;
-এই বিয়ের আগে প্রেম করেছো কয়টা?
-একটাও না!
-নেশার ভেতর কি করো?
-কিছুই না!
-এই তুমি আসলেই ছেলে তো,এ যুগের ছেলে প্রেম করো নাই,সিগারেট ফুঁকো নাই।জাস্ট আনবিলিভএবল!
-সত্যি বলতে পড়াশুনাটা ছাড়া অন্য কোন দিকে মনযোগ দেওয়ার সময় পাই নি।
-হয়ছে হয়ছে,,,অতটা ভদ্র হতে হবে না!এবার বলো গিটার বাজাতে পারো?
-একটু একটু!
-এবার আমার বউয়ের মুখে ছোট্ট হাসির রেখা;;যাক কিছু একটা তো পারো!
-এবার বুকে জ্বল আসল,যাক কিছু একটা তার ভালো লেগেছে!শান্তভাবে বললাম-ধন্যবাদ!
-এই তুমি এত ঘামছো কেন?পান্জাবীটা তো ভিজে চুপসে গেছে!দেখি পান্জাবীটা খুলে দাও এক্ষুনি!
-আমি কাচুমাচু করতে লাগলাম,এ কোন মেয়েরে বাবা!প্রথম রাতেই স্বামীর বন্ত্রহরন!
-কি কানে কথা যায় না?জলদি খুলো বলছি!
-লজ্বার মাথা খেয়ে,পান্জাবীটা খুলে ফেললাম...
বউ তার শাড়ীর আঁচল দিয়ে আমার ঘাম মুছতেছে,ঠিক সে মুহুর্তে আমার ভেতর দিয়ে ৮রিকটার স্কেলে কম্পন হয়ে যাচ্ছে।ঘাম ছুটা তো দূর আরও বেশি ঘামতে লাগলাম...
-এই ছেলে,তোমার বুকে একটাও লোম দেখছি না...তুমি তো খুব নির্দয়!
-আমি চুপ!
-এই চুপ কেন?
-মাথা ধরেছে প্রচন্ড!
-ওমা,সে কি!এক্ষুনি শুয়ে পরো দেখি...বলেই অতি দ্রুত আমাকে বিছানায় শুইয়ে দিলো...মাথার পাশে আমার বউ...কোমল হাত দুটো আমার কপালে...মাঝে মাঝে আমার চুলগুলো নেড়ে দিচ্ছে...শাড়ীর আঁচল কাধ থেকে কিছুটা সড়ে গেছে,তাতে খানিকটা উদম্য পিঠ দেখা যাচ্ছে...উবু হয়ে বসে থাকায় চুলের সামনের কিছু অংশ চোখের আশপাশে ছড়িয়ে পরেছে...ঠোটের চারপাশে কিছুটা ঘামবিন্দু!সেই ঘামবিন্দুর ভেতর আমি আমার নতুন পৃথিবী দেখতে পাচ্ছি...এতটাও মায়া এতটা যাদু কোন মেয়ের হাতের ছোঁয়ায় থাকতে পারে...নিমিষেই সব রাগ যেন কর্পূরের মত দূরীভূত হয়ে গেল...আমি মাতাল হয়ে যাচ্ছি তার চোখের মায়ায়,টোলপরা গালের ভেতর হারিয়ে ফেলছি নিজেকে!
..
..
রাত্রি গভীড়...চারদিক শুনশান...মাঝে মাঝে রাস্তা দিয়ে ছুটে চলা দুএকটা ট্রাকের শব্দ...ঘড়ির কাটা অনবরত টিক টিক শব্দে চলছে...আমার মাথার চুলে বিশ্রামহীনভাবে বেনিকেটে যাচ্ছে এক স্বর্গীয় অপ্সরী...ভোড় থেকে রাতের দূরত্ব ক্রমান্বয়ে কমছে আর আমার ভেতরের কাঁপানুটি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে!
এই মুহুর্তে মনে শুধু একটাই প্রশ্ন ঘুড়ছে-
বিড়ালটা মারবো কখন???!!!
.
#চলবে?
দজ্জাল বউ(২য় পর্ব)
-Niyamul Islam
.
.
আজ আমার আর রুপার বিয়ের ২য় দিন চলছে...বাসর ঘড়ে বিড়াল মারার আফসোসটা ভেতরটাকে এখনও শান্ত হতে দিচ্ছে না...এখনও বাড়ি থেকে সব মেহমান বিদায় হয় নি...দুএকটা মেহমান যাচ্ছে তো পড়শীরা ভিড় করছে নতুন বউ দেখার জন্য...বয়স্কদের গালটিপাটিপি,বাচ্চাদের চিল্লাপাল্লা যেন বাড়িটাকে পুরো সিনেমাহলের টিকেট কাউন্টার বানিয়ে ফেলেছে...কালকের পর রুপার সঙ্গে মাত্র দুবার সাক্ষাৎ হয়েছে...সকালে খাবারের টেবিলে নাস্তা করার সময় একটু চোখাচোখি আর দুপুরের দিকে রান্নাঘড়ে...রান্নাঘড়ে কি একটা আনতে গিয়ে দেখি আমার নতুন বউ,কিচেনে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ইলিশ মাছ ভাঁজছে...পেছন থেকে কোমরের কিছু ধবধবে সাদা অংশ দেখতে পাচ্ছিলাম...চুলগুলো খোপা করে বাঁধা,যেন খোপায় চুল আটতে চাচ্ছে না...রুপার চুল যে ভীষন লম্বা তা গত রাতেই আঁচ করেছি...রান্নাঘড়ের বাহির থেকে নিজের বউকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছি...এ যেন বিয়ের পরে পরকীয়া প্রেম!!!
রুপা তার ব্যাস্ত হাতে মাছের এপিঠ ওপিঠ খুব ভালোভাবে ভেজে নিচ্ছে...ভেতর থেকে নাকে একটা তীব্র ঘ্রান আসছে...চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে এমন দৃশ্য দেখে...হাজারটা প্রশ্নকে দূরে ঠেলে দিয়ে সাহস করে চুপি চুপি বউকে গিয়ে পেছন থেকে জ্বরিয়ে ধরলাম...রুপা চিৎকার দিতে নিবে ওমনি মুখটা ধরে ফেললাম...কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললাম-আমি নিশো!!!
অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম বউয়ের ঘর্ম্যক্ত শরীর থেকে কেমন একটা মাতাল করা গন্ধ,যে গন্ধ দুনিয়ার কোন পারফিউমে এ যাবৎ খুজে পায় নি...খুব জোড় করছিল রুপা আমাকে ছাড়ানোর জন্য...কিন্তু আমি ছাড়ছি না।মনে মনে পণ করেই নিয়েছি আজ আর ছাড়ছি না।
হঠাৎ শুনতে পেলাম বাহির থেকে আওয়াজ আসছে-কই গো বৌমা মাছ ভাজি হলো তোমার??
আমরা দুজনে হকচকিয়ে উঠলাম...মুহুর্তের ভেতর দুজন রান্না ঘড়ের দুপ্রান্তে অবস্থান নিলাম...আমার মা রান্না ঘড়ের বাহির থেকেই একটা স্টারজলসা মার্কা হাসি দিল...আমরা দুজনেই খুব লজ্বা পেলাম...রাগে গজ গজ করতে করতে দ্রুত রান্নাঘড় ছাড়লাম!
মেজাজ খুব বিগড়ে যাচ্ছিল...বিয়ের আগে কোন মেয়ের দিকে তাঁকালাম না এই ভেবে যে বিয়ের পর সব ভালোবাসা সুদে আসলে উশুল করবো,কিন্তু বিয়ের ২দিন চলছে ভালোবাসা তো দূর বউয়ের কাছেই ঘেষতে পারছি না...মনে হচ্ছিল বিয়ে করার চেয়ে ৫০টাকায় টিকেট কেটে বাংলা সিনেমা দেখা ঢেড় ভালো ছিল...এতে অন্তত এর চেয়ে দ্বিগুন ফিলিংস পাওয়া যেত।মনে মনে ঘটক চাঁচার চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করতে লাগলাম।
.
.
রাত পৌনে দশটা...রুমে এঁকা এঁকা পাইচারি করছি...গতরাতে সে আমার জন্য অপেক্ষা করছিল আর আজ তার জন্য আমি...অপেক্ষার সময়গুলো অসীম হয়...কারও জন্য অপেক্ষা করাটা যে কতবড় কঠিন কাজ,তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছিলাম...কিছুক্ষন পর পর ঘড়ির কাটার দিকে তাকাচ্ছি...যেন সময় নড়তেই চাচ্ছে না।
অবশেষে মেমসাহেবা আসলেন...এসেই ঘটাং করে ঘড়ের দরোজা আটকিয়ে দিলেন...এতক্ষণ মনে মনে যে সাহস সঞ্চার করেছিলাম তা শিরাউপশিরার খাজে খাজে মিলিয়ে গেল...রুপাকে দূর থেকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে প্রচন্ড রেঁগে আছে...রাগটা ঠিক কিসের জন্য তা বুঝে ওঠার আগেই দৌড়ে এসে আমার কলার চেপে ধরল...জীবনের প্রথম কোন মেয়ে আমাকে এভাবে আক্রমন করায় খুব আঁতকে উঠলাম।
নিজেকে সামলে নিয়ে কিছুটা কাতর সুরে বললাম;;
--এই রুপা কি হচ্ছে এসব!!
--দুপুড় বেলায় রান্না ঘড়ে অসভ্যতা করতে কে বলেছিল?
--আমি তোমার বিয়ে করা স্বামী,এটাকে অসভ্যতা না, ভালোবাসা বলে!!
--বাসর রাতে যে পুরুষ ভালোবাসতে পারো না সে আবার আসছে রান্না ঘড়ে!!
নিজের কপালে বাড়ি দিতে ইচ্ছে করছে...শুধু শুধু কালকের রাতটা মাটি করলাম...আফসোসের সাথে সাথে লজ্বাও পাচ্ছে প্রচন্ড রকমের!!বউ আমাকে মনে মনে কি না কি ভেবে নিয়েছে...!
বউয়ের দিকে দৃষ্টি দিয়ে দেখি,রাগ কিছুটা কমেছে...অভিমানটা বেড়েছে...এবার হাতটা গপ করে ধরে ফেললাম...বউ বাধা দিল না উল্টো একটা ছোট্ট হাসি দিয়ে গ্রিন সিগন্যাল জ্বালিয়ে দিলো...আমি কাছে আসলাম,খুব কাছে...এখন দুজন দুজনার নিঃশ্বাস ফিল করতে পারছি...রুপার চোখ দুটো খুব ছোট হয়ে আসছে...নিঃশ্বাস আরও ঘন হয়ে আসছে...ইতিমধ্য রুপা লজ্বায় মাথাটা নিচু করে ফেলেছে...আমি দুহাতে মাথাটা ধরে কপালের ঠিকমাঝখানে চুম্বন এঁকে দিলাম।রুপা কিছুটা কেঁপে ওঠে আমাকে জ্বরিয়ে ধরল...রুপার কমলার মত ঠোঁট দুটো আমাকে এ মুহুর্তে আহব্বান করছে...লুটিয়ে নিতে ইচ্ছে করছে দেহের প্রতিটা ভাঁজে লুকানো প্রেম...যে প্রেম জমিয়ে রেখেছে দীর্ঘ ২১বছড়ের মোড়ানো যৌবনে,যে প্রেম জমিয়ে রেখেছে ২১বসন্তের অন্তরালে,যে প্রেম জমিয়ে রেখেছে শিরা-উপশিরা ধমনী আর রক্তকনিকার গরম প্রবাহে...!!
.
#চলবে?
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ