চিরকুট
________
.
"নিত্য নতুন পরিবেশ,নতুন জায়গা,একটুতো খারাপ লাগবেই । কিছুদিন থাকার পর দেখবি পরিবেশের সাথে পরিচিত হয়ে যাবি ; সবকিছু খাপ খেয়ে যাবে তোর সাথে। তখন ভালোলাগা কাজ করবে।"- বিছানা গুছাতে গুছাতে আম্মু কথাগুলো বলছিলো। সান্ত্বনামূলক কথাগুলো আরো বিরক্ত লাগছিলো। রাগের মাত্রা বেড়েই যাচ্ছিলো। তাতে কি ; কন্ট্রোলও করতে পারি। আম্মুর মুখের উপর কড়া গলায় কথা বলবো এতোটা বেয়াদবি শিখিনি।
.
.
"আচ্ছা আব্বু এখন জায়গাটা না পাল্টালে কি ক্ষতি হতো?"- একটু বিরক্তিকরভাবে বললাম।
"বুঝের ছেলে হয়ে অবুঝের মতো কথা বলিস কেন? তোর আব্বু সরকারী চাকুরী করে, সেখান থেকেই ট্রান্সফারের নোটিশ এসেছে,জায়গাতো পাল্টাতে হবেই!"
আম্মুর কথা শুনে উঠে পরলাম বসা থেকে। রাগে মেজাজ খিটখিট করছে। একজায়গায় ৫ বছর থাকার পর সেই জায়গাকে ছেড়ে আসতে কার ভালো লাগবে? কত মানুষের সাথে পরিচিত হয়েছিলো,এক ঝাক বন্ধু-বান্ধব হয়ে গিয়েছিলো আমার,প্রতিদিন বিকেলে ক্রিকেট খেলতাম,আড্ডা দিতাম, আর বৃষ্টি আসলে ফুটবল খেলা মিস করে কে! আমি খুবই মিশুক প্রকৃতির ছেলে না,সবার সাথে মিশতে পছন্দ করিনা। তাই বন্ধু-বান্ধব তৈরী হতে সময় লাগে।
.
.
আগে যেখানে থাকতাম সেখানের পরিবেশটাই আমার জন্য উপযুক্ত ছিলো। ৭ তলা বাসার ৩ তলায় থাকতাম আমরা। বাসা থেকে বের হতেই ইয়া বড় এক খেলার মাঠ। আহা কত সুন্দর প্রকৃতি। বিকেলে ছাদে দাড়ালে নিজেকে হারিয়ে ফেলতাম অন্য জগতে।
আর এখনের জায়গাটা? পুরাই বোরিং একটা জায়গা। বাসার চারিদিকে আরো অনেকগুলা বাসা। তারপর রাস্তাঘাট। খেলার মাঠের সন্ধান এখনো মেলেনি। যাক এগুলা ব্যাপারনা,কিন্তু এখানেতো আশেপাশে আমার বয়সের কোনো ছেলে-পেলে দেখিনা। মিশবো কার সাথে? সারাদিন বাসায় বসে থাকা আমার পক্ষে অসম্ভব কাজগুলার মধ্যে একটা।
এগুলা ভাবতে ভাবতে না খেয়েই দুপুরে ঘুমিয়ে পরেছিলাম।
.
.
বিকেল ৫ টা,
ঘুম থেকে উঠে চোখমেলেই আবারো আগের জায়গার কথা মনে পরে গেলো। যেই ছেলে এখন ব্যাট বল নিয়ে মাঠে অবস্থান করার কথা,সেই ছেলে ঘুম থেকে উঠলো মাত্র!! ভাবতেই বিব্রতভাব হচ্ছে।
ঘুম থেকে উঠে দুপুরের খাবার খেলাম। খাওয়ার পর কি করবো সেটা ভাবতে ভাবতে খাবারও পেটে যাচ্ছেনা। অনেক কষ্টে প্ল্যাটের খাবারগুলো সেরে আর কিছু না ভেবেই ছাদে উঠে পরলাম। ছাদে উঠে দেখি যেদিকে তাকাই শুধু বড় বড় বিল্ডিং, আর উপরের দিকে তাকালে নীল আকাশ। অবশ্য পরিবেশটা ততোটাও খারাপ লাগছিলোনা।
.
.
ছাদের একপাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে হাত উপরে তুলে বড় করে একটা হামি দিলাম। হাতগুলা টানটান রেখে। পুরো শরীরটা স্বস্থি পাচ্ছিলো। কিন্তু তারপর যা দেখলাম তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলামনা আমি। আমাদের বাসার পাশের বাসাটির ছাদে একটা মেয়ে ঠিক আমার মতোই হামি দিচ্ছে। কিভাবে সম্ভব! মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে নেই,অন্যদিকে তাকানো। আমি হাত নামানোর সাথে সাথে সেও হাত নামিয়ে নিলো, যেনো আমার কার্বন কপি। ভুত-টুত নয়তো!
.
.
"এই যে"-মেয়েটাকে জোড়ে ডাক দিলাম।
আমার দিকে ফিরে তাকালো। "আপনি মানুষ নাকি ভুত-পেত্নী?"-প্রশ্নবাচক কন্ঠে বললাম। মেয়েটি শুধু হাতের ভঙ্গীতে বললো "মানে"। মুখে কিছু বলেনি, হাতের ইঙ্গিতেই বুঝেছি আরকি। আবারো বললাম "আপনি মানুষ নাকি ভুত-পেত?" মেয়েটির আলাদা কোনো ইংগিত দেখালাম না। ভাবলাম হয়তো আমার কথা শুনতে পাচ্ছেনা। দুটো বাসার মধ্যে বেশ একটু দূরত্ব আছে। এখনতো কোনো কাজ নেই আমার,ওর সাথে সময়টা কাটালে মন্দ কি! ভুত পেত্নি যা'ই হোক।
.
.
দৌড়ে রুমে এসে একটা খাতা আর কলম নিলাম। রুমে আসার আগে ওকে ইঙ্গিত করে এসেছিলাম যে "আপনি ১ মিনিট দাড়ান,আমি আসতেছি"। এসে দেখি মেয়েটি আছে। "আপনি মানুষ নাকি ভুত?"- এক টুকরো কাগজে লিখে কাগজটা মূড়িয়ে ওদের ছাদে ঢিল মারলাম। মেয়েটি নিচু হয়ে কাগজটা তুলে লেখাটা পরে আমার দিকে বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তাকালো। তারপর ছাদ থেকে চলে গেলো। ভাবলাম হয়তো আমার কান্ড দেখে বিরক্তবোধ করেছে। দাঁড়িয়ে রইলাম এখানেই। মনটা কালো রূপ নিলো।
.
.
না আমার ধারণা ভুল ছিলো। মেয়েটি আবার এসেছে ছাদে। হাতে খাতা আর কলম। আমার মনটা নেচে উঠলো। যাক এই অচেনা পরিবেশে কাওকেতো পেলাম। মেয়েটি একটা কাগজে কি যেনো লিখে আমার মতোই মুড়িয়ে ঢিল মারলো। খুলে দেখলাম "আমি পেত্নী,এখন আপনার ঘাড় মটকাবো, হাহাহা"। লেখাটা পরে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে দেখি হাসতেছে। পূনরায় লিখে দিলাম "আমিতো আপনার থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছি ; কিভাবে ঘাড় মটকাবেন। মু হা হা হা হা"। মেয়েটি লিখলো "পেত্নীরা চাইলেই যেখানে খুশি যেতে পারে। আমিও উড়ে গিয়ে আপনার ঘাট মটকাবো, মু হা হা হা হা"।
এভাবেই লেখালেখির মাধ্যমে কথা হচ্ছিলো আমাদের। নাম জানা হয়ে গেছে। বললো কালকে বিকেলে আবার ছাদে আসলে কথা হবে। আজকের মতো বিধায় নিলো।
.
.
পরদিন দুপুরের পরপরই ছাদে এসে অপেক্ষা করতে লাগলাম। প্রায় দেড়ঘন্টা পর সে আসলো। মেয়েটির নাম "টুম্পা"। দেখতে নামটার মতোই সুন্দর। চোখগুলো ভাসা ভাসা,একদম ফর্সা,চোখগুলো অনেক বড়, মাথায় সবসময় ঘোমটা থাকে ।
আবারো কথা শুরু হলো চিরকুটের মাধ্যমে। অনেক্ষন কথা হওয়ার পর বিদায় নিলো।এভাবে প্রায় ৪-৫ দিন চলে যায়। আমাদের মধ্যে একটা ভালো বন্ধুত্বের সৃষ্টি হয়। এখন ভালোই লাগে জায়গাটাকে।
.
.
হঠাৎ একদিন বললাম চলো আমরা বিকেলে কোথাও হাটতে যাই। সে রাজী হচ্ছিলোনা। ফোন নাম্বার চাইলে বলে সে মোবাইল ব্যবহার করেনা। রাগ হতো মাঝেমাঝে, কিন্তু ওর চেহারায় একটা মায়া আছে, তাকালেই রাগ কমে যায়।
অনেক অনুরুধের পর রাজী হলো একদিন বিকেলে আমার সাথে ঘুড়তে যাওয়ার। তবে শর্ত হলো মাত্র ১০ মিনিট থাকবে, আর এই ১০ মিনিট হাটার সময় আমার সাথে কোনো কথা বলবেনা। এমন অদ্ভুত শর্ত দেখে অনেকটা অবাক হলাম। পরক্ষনে ভাবলাম মেয়েটাইতো অদ্ভুত ; রাজী হয়ে গেলাম।
.
.
আজকে বিকেলে ঘুরতে যাবো ওকে নিয়ে। বেশি দূর নয়,পাশের একটা পার্কেই। দুপুর থেকে সাজুগুজু শুরু করলাম। যতোই যা বলেন,বাহিরে বের হওয়ার সময় ছেলেদেরও কিন্তু হাল্কা সাজুগুজো থাকে। কোন টি-শার্টটা পরলে ভালো লাগবে,কোন প্যান্টটা পরবো,চুলগুলা কিভাবে রাখবো ইত্যাদি। আর বার বার আয়নার দিকে যাওয়াতো পুরাতন অভ্যাসই।
.
.
বিকেল ৪ টার দিকে বের হলাম। দুজন একসাথে হাটলাম ১০ মিনিট । তারপর ও বাসায় চলে গেলো, আমিও বাসায় চলে আসলাম। কেনো জানি খুব রাগ উঠতেছিলো আমার। ধ্যাৎ এটা কিছু হলো? একটু কথা বললে কি হতো ওর। যাহ ওর সাথে আর কথাই বলবোনা।
.
.
পরদিন বিকেলে কাগজে লিখে দিলাম "তুমি যদি আমার সাথে মুখে কথা না বলো তাহলে আমাকে আর খুজে পাবেনা"।
লেখাটা দেখে টুম্পা অনেক্ষন ধরে কিছু ভাবলো। তারপর মন খারাপ করে কাগজে লিখে আমার কাছে ছুড়ে মারলো। কাগজে যা লিখা ছিলো সেটা দেখার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলামনা। "গত ৩ মাস আগে এক রোড এক্সিডেন্টে আমি বড় ধরনের আঘাতপ্রাপ্ত হই। অনেক চিকিৎসা করার পর সুস্থ হলেও আমি এখন কথা বলতে পারিনা। এই কথাটা হয়তো তোমাকে আরো আগে বলার উচিৎ ছিলো। আমি দুঃখিত। হয়তো এটা জানার পর তুমি আর আমার সাথে মিশতে চাইবেনা। তাতে সমস্যা নেই। এই পৃথিবীর কাছে এখন আমি মূল্যহীন একটা প্রান, একাই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারবো।"
.
.
লেখাটা পড়ে চুপষে রইলাম কতক্ষণ। তারপর লিখে দিলাম "তুমি কথা বলতে পারো না তাতে কি পাগলি? আমরা চিরকুটের মাধ্যমেই কথা বলবো। তোমার ভাষা আমি ঠিকই বুঝে নিতে পারি"।
টুম্পার মুখে কিছুটা হাসির আভাস লক্ষ করলাম। তবে চোখে পানিগুলা এখনো টলমল করছে। আরেকটা কাগজে লিখে দিলাম "চোখ মুছো"।
.
.
এভাবে প্রতিদিনই আমাদের কথা হতো। একদিন ও বললো ওর অপারেশন করানো হবে। অপারেশন করালে আবারো মুখের শব্দ ফিরে আসতে পারে । শুনে অনেক খুশি হলাম।
.
কথামতো যথারীতি কিছুদিন পরই তার অপারেশন হলো। এখন পরিপূর্ণ সুস্থ টুম্পা। শুধু তাই নয়,টুম্পা এখন আমার হবু বউ। বন্ধুত্ব থেকে আরেক ধাপ এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের সম্পর্কটা। পারিবারিকভাবে আংটি পরিয়ে রেখেছি। আমাদের পড়াশুনা শেষে বিয়ে হবে ।
.
লিখাঃ Mehal Shuvo (আম্মুর খোকা)
āĻāϞ্āĻĒ āϏংāĻ্āϰāĻš āĻāϰা āĻāĻŽাāϰ āύেāĻļা। āϰোāĻŽাāύ্āĻিāĻ, āĻৌāϤিāĻ, āϰāĻŽ্āϝ, āĻৌāϤুāĻ āϏāĻš āĻšাāĻাāϰো āĻāϞ্āĻĒ āĻāĻে āĻāĻŽাāϰ āϏংāĻ্āϰāĻšে।
āϏোāĻŽāĻŦাāϰ, ⧍ā§Ģ āϏেāĻĒ্āĻেāĻŽ্āĻŦāϰ, ⧍ā§Ļā§§ā§
2332
āĻāϰ āĻĻ্āĻŦাāϰা āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰা
Rahathossain1010100@gmail.com
āĻāĻ āϏāĻŽā§ে
ā§§:ā§Ēā§Ž AM

āĻāϤে āϏāĻĻāϏ্āϝāϤা:
āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝāĻুāϞি āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ (Atom)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ