__________অশরীরী প্রেম-৩__________
________পর্ব-৭________
ওরা যত কাছে যেতে লাগল শিহাবের দেহ আর অনিকের দেহের মধ্যে একটা টান অনুভব করল উভয়েই, হঠাৎ দু'জনের দেহ চুম্বকের মতো ছুটে এল পরস্পরের দিকে। এবং চুম্বকের মতো লেগে থাকল কিছুক্ষণ। তা দেখে ইভার ঠোটে হাসি ফুটে উঠল, সে বুঝল তান্ত্রিকের তন্ত্র বিদ্যা কাটতে শুরু করেছে, একটু পর যার শরীরে তার আত্মা চলে যাবে.....
শিহাব এবং আলিঙ্গন মুক্ত হলো। এখন যার শরীরে তারই আত্মা রয়েছে। ইভাকে হঠাৎ দেখতে পেয়ে শিহাব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল: ইভা...তু......
শিহাব কথা শেষ করতে পারলনা, ইভা তাকে বুকে টেনে নিয়ে তার ঠোঁটে ঠোট রেখে বলল: চুপ, সব পরে বলব....."
তারপর দু'জন দু'জনকে জড়িয়ে ধরে অনেক্ষণ কাঁদল।
ঐ দুষ্ট আত্মা তখন অনিককে ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে লাগল। অনিক চিৎকার করে বলল: নীলা, ছেড়ে দাও আমাকে......."
অনিক পেছনে ফিরে ইভার দিকে তাকাল। চোখের ইশারায় মিনতি করল, যেন বলতে চাইছে, ইভা আমাকে বাঁচাও......."
শিহাব ইভাকে বলল: ইভা, কে ঐ লোক? যে হোকনা কেন, তুমি তাকে ঐ দুষ্ট আত্মার হাত থেকে বাঁচাও....... আমার উপর অনেক অত্যাচার করেছে সে। একটু ঘুমাতে চাইলে ঘুমাতে দিতনা, বলত আত্মাদের জগতে কোন ঘুম নেই। আর আমাকে অনিক বলে ডেকে অনেক মারত, আমি বারবার বলেছি আমি অনিক না, বিশ্বাস করেনি সে।"
চিহাবের কথা শুনে ইভা রেগে জ্বলে উঠল। এত বড় সাহস ওর?
--শিহাব, ও তোমার উপর যতটা আঘাত করেছে, তার চেয়ে বেশি আঘাত ঐ দুষ্ট আত্মাকে দেব। আমার ভালোবাসার গায়ে যে আঘাত করেছে, আমি কাউকে ছাড়িনি। ওকেও ছাড়বনা।" বলতে বলতে আবারও বুকে টেনে নিল সে শিহাবকে। তারপর জিজ্ঞেস করল: তোমার খুব কষ্ট হয়েছে শিহাব?"
--হ্যা হয়েছে। তবে ঐ দুষ্ট আত্মার কারণে না। তোমার কারণে। তুমি আমাকে এভাবে ফেলে চলে এসেছিলে তখন। আমার কি কষ্ট হয়নি? জান, কত বছর ধরে আমি কষ্ট পাচ্ছি?"
--তুমিই তো তখন (অশরীরী প্রেম-২ দ্রষ্টব্য) আমাকে ভুল বুঝেছিলে। কত করে বুঝালাম আমি মারিয়াকে মারিনি, সে আমার বোন, তাকে কি আমি মারতে পারি? কিন্তু তুমি? একটুও বিশ্বাস করনি আমাকে। কেন? আমি অশরীরী বলে কি আমার কথার কোন মূল্য নেই? অশরীরীদের কষ্ট হয়না বুঝি? সেদিন এক পৃথিবী কষ্ট নিয়ে আমি চলে এসেছিলাম।
--আমি দুঃখিত ইভা, তখন বুঝতে পারিনি। কিন্তু যখন বুঝতে পারলাম তোমাকে হারিয়ে ফেললাম তখন। কেন আরেকটু সময় থাকনি তুমি? যদি আর কিছুক্ষণ থাকে তাহলে তুমিও জানতে পারতে আমার ভুল ভেঙে গেছে।" শিহাবের চোখে জল এসে গেল।
ইভা বলল: আর কখনো আমরা আলাদা হবনা। এবার থেকে সবসময় আমরা একসাথে থাকব।
--কীভাবে?
--তুমিও মৃত শিহাব, এখান থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে তোমার এই দেহে আর আত্মা থাকবেনা। তুমি ৩ দিন আগে মারা গেছ।
--আমার ছেলে মিরাজ, সাদিয়া ওদের ছেড়ে চলে এসেছি আমি?"
--মৃত্যুর পর তো আর ওদের সাথে থাকতে পারবেনা। তোমার আত্মাকে আমি আমার সাথে রাখব। তারপর আমাদের মহামিলন হবে।"
শিহাব ইভাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল: হুমমম, এখন আর ঐ লোকটাকে বাঁচাও, কে ঐ লোক?
--ওর নাম অনিক। তোমার আত্মা ওর দেহে আর ওর আত্মা তোমার দেহে ছিল।" তারপর ইভা হাটতে হাটতে কিভাবে কি হলো সব খুলে বলল।
শিহাব জিজ্ঞেস করল: কিন্তু মেয়েটা যদি বেঁচে থাকতে অনিককে ভালোবাসতো, তাহলে আত্মা হওয়ার পর অনিককে কষ্ট দিচ্ছে কেন? তুমিও তো আমার ভালোবাসা না পেয়ে আত্মহত্যা করেছ, কই, তুমি তো কখনো আমার খারাপ চাওনি, বরং কেউ আমাকে আঘাত করলে তুমি তাকে ছেড়ে দাওনি।"
ইভা বলল: অনিকের কাছে জেনেছি, মেয়েটা আসলে অনিককে ব্ল্যাকমেল করত। মেয়েটা ছিল বিবাহিতা। কিন্তু তার স্বামী মারা যাবার পর মেয়েটা অনিকের প্রেমে পড়ে। অনিক তখন ভালোবেসে বিয়ে করেছে রিতুকে। রিতুর তখন খুব বড় একটা অসুখ হয়। অনেক টাকা প্রয়োজন। ঐ মেয়েটা মানে নীলা তাকে টাকা দেয়। শর্ত হলো তাকে বিয়ে করতে হবে। অনিক কিছু না ভেবে রাজি হয়ে যায়। কারণ তার মাথায় শুধু রিতুকে বাঁচানোর চিন্তা।
রিতু সুস্থ হয়ে উঠলে নীলা অনিককে বলে রিতুকে ডিভোর্স দিয়ে তাকে বিয়ে করার জন্য। অনিক রাজি হয়নি, তাই নীলা তাকে ব্ল্যাকমেল করতে শুরু করে নানাভাবে। একদিন ব্ল্যাকমেল করার জন্য আত্মহত্যার অভিনয় করতে গিয়ে সত্যি সত্যি গলায় ফাঁস লেগে মরে যায়। বাস্তবে সে আত্মহত্যা করতে চাইনি। ভুলে হয়ে গেছে। এরপর থেকে সে দুষ্ট আত্মা হয়ে অনিকের পিছু ছাড়েনি।" ইভার কথা শেষ হতেই শিহাব দাঁড়িয়ে পড়ল।
--কি হলো? থামলে কেন?" জিজ্ঞেস করল ইভা।
শিহাব ইভাকে বুকে টেনে নিয়ে বলল: পৃথিবীতে অনেক ভালোবাসা দেখেছি, কিন্তু তোমার মতো কেউ কাউকে ভালোবাসেনি.....
(চলবে......??
লেখা:ShoheL Rana
__________অশরীরী প্রেম-৩__________
_________পর্ব-০৮_________
আবার এগিয়ে যেতে লাগল শিহাব আর ইভা। তারা দেখতে পেল নীলা অনিককে টানতে টানতে নিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ইভা তখন ভয়ংকর রুপে ছুটে গেলো নীলার দিকে। হঠাৎ আক্রমণে নীলা প্রথমে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। কিন্তু আত্মার জগতে তার শক্তিও কম না। সেও ভয়ংকর রূপ নিয়ে ইভার দিকে এগিয়ে এল। অনেক্ষণ দু'জনের সমান যুদ্ধ চলল। কেউ কাউকে পরাজিত করতে পারলনা। তখন ইভা শিহাবের উদ্দেশ্য চিৎকার করে বলল: শিহাব, তুমি অনিককে নিয়ে চলে যাও।"
ইভার আদেশ পেয়ে শিহাব অনিককে নিয়ে ছুটে চলল। নীলা ইভাকে ছেড়ে দিয়ে শিহাবদের পিছু নিল। কিন্তু ইভা আবারও আক্রমণ করল তাকে। অনেক্ষণ যুদ্ধ চলল আবার। একজন আরেকজনকে পরাজিত করার চেষ্টা করতে লাগল। যুদ্ধ চলতে চলতে হঠাৎ নীলা অদৃশ্য হয়ে গেলো। ইভা চারপাশে তাকাল। দেখল শিহাব এবং অনিককে কোথাও দেখা যাচ্ছেনা। ভাবল তারা পৃথিবীতে চলে গেছে। কিন্তু পৃথিবীতে পৌছার সাথে সাথে তো শিহাবের দেহ ছেড়ে তার আত্মা বেরিয়ে আসবে। তারমানে ইভার সাথে তার মহামিলন হতে আর বেশি দেরি নেই। ইভার এখন প্রথম কাজ পৃথিবীতে গিয়ে তার সঙ্গীকে নিয়ে আসা।
ইভা খুশিমনে পৃথিবীতে এল। কিন্তু এখানে এসেই সে অবাক হল। কিছুটা ভয়ও পেল। কারণ পৃথিবীতে শিহাবের আত্মার সাথে তার যে টান থাকার কথা সেই টানটা সে পাচ্ছেনা। তারমানে শিহাব কি পৃথিবীতে আসেনি? আত্মার জগতে সে আটকে পড়েছে?
সাদিয়ার কাছে এসে ইভা জানতে পারল ওরা আসেনি। সাদিয়া আর মিরাজের মুহূর্তগুলো কান্না করতে করতে কেটে যাচ্ছে। কাঁদবেই তো, কারণ আত্মার জগত থেকে সে ফিরে এলেও তো জীবন্ত আসবেনা। তাকে তো চিরতরে হারাতে হবে আবার.....
ইভা সাদিয়াকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল: সাদিয়া, মনে কর আমার জিনিস তোমার কাছে এতদিন আমানত ছিল। সেই আমানত ফিরিয়ে দেবার সময় এসেছে তোমার। আর আমাকে যেতে হবে এখন, কারণ আমার শিহাবের হয়তো খুব বিপদ।"
তারপর ইভা মিরাজের চোখের জল মুছে তার কপালে একটা চুমু খেয়ে বলল: আব্বু, পৃথিবীতে মানুষ চিরদিন বেঁচে থাকেনা। সবাইকে মরতে হবে, তোমাকেও মরতে হবে। এটা চিরচারিত নিয়ম। তাই আব্বুকে হারাচ্ছ বলে কষ্ট পেয়োনা। এই আমাকে দেখনা, অনেক আগেই তো মরে গেছি। এতদিন খুব কষ্ট হয়েছে আমার তোমার আব্বুকে ছেড়ে থাকতে। এতদিন তো তোমাদের কাছে ছিল সে। এবার না হয় আমার কাছে থাকবে। আসি আব্বু কেমন?"
মিরাজের কান্নার বেগ বেড়ে গেলো। ইভা আবারও সেই জল মুছে দিয়ে, মিরজের গালে আলতো করে চুমু খেয়ে অস্ফুটে শব্দ করল: আসি......" তারপর সে অদৃশ্য হয়ে গেলো।
আবারও চলে এল আত্মার জগতে। তারপর শিহাবদের খুঁতে লাগল। খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে গেলো সে শিহাবকে। কিন্তু অনিককে পাওয়া গেলোনা।
ইভা দেখল কয়েকটা নিচু স্তরের আত্মা শিহাবকে আক্রমণ করেছে। ইভা এগিয়ে গেলো তাদের দিকে। আজ এদের কাউকে ছাড়বেনা সে। আত্মার জগত ছাড়া করবে। মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর পর যেরকম হয়, এদের অবস্থাও ওরকম হবে। থাকবেনা আর এদের অশরীরী শক্তি।
ইভাকে ভয়ংকররূপে এগিয়ে আসতে দেখে নিচুস্তরের আত্মাগুলো ভয় পেয়ে গেলো। ইভা এদের কাউকে ছাড়লনা। সবাইকে আঘাত করতে লাগল। একটা আত্মা পালাতে চাইলে তাকেও ধরে আনল। তারপর মনের সবটুকু রাগ নিয়ে আক্রমণ করল এদের। কিছুক্ষণের মধ্যেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলো আত্মাগুলো।
তারপর ইভা শিহাবকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। শিহাব বলল: ইভা, আগে অনিককে বাঁচাও। ঐ দুষ্ট আত্মা আমাকে মেরে অনিককে ধরে নিয়ে গেছে।"
শিহাবের কথা শুনে ইভা রাগে ফুঁসতে লাগল। এবার আর ঐ দুষ্ট আত্মাকে কোনমতে ছাড়া যাবেনা। ইভা শিহাবকে বলল: শিহাব, নীলাকে আত্মার জগৎ ছাড়া করতে হলে তোমার শক্তি আর আমার শক্তি এক হতে হবে।"
--তা কীভাবে?" অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল শিহাব।
--তোমার দেহ থেকে আত্মা বেরিয়ে আসতে হবে। এজন্য আমাদেরকে আবার পৃথিবীতে যেতে হবে। মনে রাখবে পৃথিবীতে পা রাখার সাথে সাথে তোমার দেহে আর তোমার হ থাকবেনা। আর তুমি মোটেও ভয় পাবেনা। তোমার সাথে আমি থাকব। তোমার দেহের দাফন হয়ে গেলে আমাদের মহামিলন হবে। তারপর আমাদের দু'জনের শক্তি এক হলে আত্মার জগতে আমরা সর্বোচ্চ শক্তির অধিকারী হব।"
ইভার সাথে মহামিলনের কথা শুনে শিহাবের মুখে হাসি ফুটল। খুশি হয়ে সে বলল: চল, আমি মোটেও ভয় পাবনা.....
(চলবে.......??
লেখা:ShoheL Rana
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ