__________অশরীরী প্রেম-৩___________
________পর্ব-০৯________
________মহামিলন __________
শিহাবকে সাথে নিয়ে পৃথিবীতে পা রাখার আগে ইভা শিহাবকে আবার বলল: শিহাব, মনটা শক্ত কর.....
শিহাব বলল: ইভা, আমার জন্য চিন্তা
করোনা। বিশ্বাস কর আমি মোটেও ভয় পাচ্ছিনা, আমার শুধু একটাই আফসোস মৃত্যুর আগে আমি আমার সন্তানের জন্য কিছুই করতে পারলামনা। ইভা বলল: মিরাজ একদিন অনেক বড় হবে তুমি দেখ......আমাদের সবার দোয়া তার সাথে থাকবে, আর সাদিয়া তাকে নিজের সন্তানের মতো বড় করেছে তাকে, সারাজীবন আগলে রাখবে সে মিরাজকে।"
--হয়তো পাপের প্রায়িশ্চিত্ব করছে সে.....
--না শিহাব, সেও তোমাকে সত্যি ভালোবাসে। তবে প্রথম প্রথম তার ভালোবাসা সুপ্ত ছিল। তোমাকে হারিয়ে সে বুঝেছে ভালোবাসা কি, যেমন আমাকে হারিয়ে তুমি বুঝেছ ভালোবাসা কি..... আসলে ভালোবাসা এমনই, কাছে থাকলে কেউ এর মর্ম বুঝেনা, হারানোর পর বুঝে।
--হুমমম....
--চল এবার পৃথিবীতে পা রাখি।
--ওকে....."
ইভা শিহাবকে জড়িয়ে ধরে তাকে নিয়ে পৃথিবীতে পা রাখল। সাথে সাথে শিহাবের দু'চোখ বন্ধ হয়ে গেলো। তার মাথাটা ইভার কাঁধে কাত হয়ে পড়ল। ইভা শিহাবের দেহ পাঁজাকোলা করে নিয়ে হাটতে লাগল। সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেলো তার। আগেও সে শিহাবকে এভাবে পাঁজাকোলা করে নিয়ে হেটেছে। পার্থক্য শধু এটাই, তখন শিহাব ছিল অজ্ঞান,, আর এখন মৃত।
শিহাবের মৃতদেহ সাদিয়া আর মিরাজের কাছে পৌঁছে দিল ইভা। তারপর দূর থেকেই দেখতে লাগল, সাদিয়া আর মিরাজ শিহাবের ডেডবডি জড়িয়ে ধরে সজোরে কান্না করতেছে। ইভার চোখেও জল এসে গেলো। বেচারা মিরাজ এতিম হয়ে গেলো। অল্প বয়সে মাকে হারিয়েছে, আর এখন বাবাকেও।
শিহাবকে শেষবারের মতো দেখতে অনেকেই এলো। তারপর তার লাশকে গোসল করিয়ে কাফন পরানো হলো। রাতেই দাফন করা হবে তাকে।
জানাজা শেষে শিহাবকে কবর দেয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হলো।
দূর থেকেই ইভা সবকিছু দেখতে লাগল। শিহাবকে কবর দিয়ে সবাই একজন একজন করে চলে যেতে লাগল। সবাই চলে যাওয়ার পর ইভা শিহাবের কবরের পাশে দাঁড়াল। তারপর নিরবে কান্না করতে লাগল। হঠাৎ অনুভব করল সে পেছন থেকে কেউ তার কাঁধে হাত রাখছে। চমকে পেছনে তাকাল সে। দেখল হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে শিহাবের আত্মা। ইভা সজোরে কান্না ঝাপিয়ে পড়ল শিহাবের বুকে। শিহাব জিজ্ঞেস করল: কি ভাবছিলে আমার কবরের দিকে তাকিয়ে?"
ইভা বলল: শিহাব, শেষ পর্যন্ত তোমাকেও আমার মতো কবর দিয়ে দিল।
--আরে পাগলি, কান্না করতেছ কেন? আজ তো আমাদের খুশির দিন। আজ আমাদের মহামিলন হয়েছে।
--এই দিনটার জন্যই তো এতদিন অপেক্ষা করেছি আমি। আজ আমার মহা খুশির দিন। বহু প্রতিক্ষার পর আজ তোমাকে পেয়েছি আমি। আর হারাতে দেবনা।
শিহাব ইভাকে জড়িয়ে নিয়ে ইভার কপালে আলতো করে চুমু খেলো। তারপর বলল: ইভা, আমাদের উপর একটা দায়িত্ব আছে এখন। অনিককে ঐ দুষ্ট আত্মার হাত থেকে বাঁচাতে হবে। সময় নেই আর।
ইভা নিজেকে আলিঙ্গনমুক্ত করে বলল: দাড়াও, তোমার কবরে একমুঠো মাটি দিই।" বলেই ইভা একমুঠো মাটি নিয়ে শিহাবের কবরে ছিটিয়ে দিল।
শিহাব ইভার হাত ধরে টান দিয়ে বলল: এবার চল।
--হুমম চল....
কিছুদূর গিয়ে ইভা থমকে দাঁড়াল।
শিহাব জিজ্ঞেস করল: কি হলো? থামলে কেন?"
ইভা বলল: আত্মার জগৎ থেকে তোমার দেহটা আমি পাঁজাকোলা করে নিয়ে এসেছি। এবার তুমি আমাকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে আত্মার জগতে প্রবেশ করবে।"
--ও এই কথা...." বলেই আর দেরি করলনা শিহাব। ইভাকে পাঁজাকোলা করে নিল। ইভা শিহাবের গলায় হাত দিয়ে পেঁচিয়ে ধরে তাকিয়ে থাকল শিহাবের মুখের দিকে।
শিহাব জিজ্ঞেস করল: কি দেখছ?"
--আমার ভালোবাসাকে।" অস্ফুটে জবাব দিল ইভা।
তারপর একটু থেমে আবার বলল সে: বেঁচে থাকতে তোমাকে না পেলেও, মরার পর তো পেয়েছি, অনেক ভালোবাসি তোমায়।
--মুখটা কাছে আন....
--কেন?
--তোমার অধরে ছুয়ে দেব আমার ঠোট।"
ইভা চোখ বন্ধ করে মুখটা শিহাবের মুখের কাছে নিয়ে গেলো।
শিহাব দুষ্টামি করে বলল: চোখ খুল.....
ইভা হাসি দিয়ে বলল: নাহ, এভাবে আদর করে দাও....
শিহাব আলতো করে আদর করে দিল ইভার ঠোঁটে।
(চলবে.......??
লেখা:ShoheL Rana
_______অশরীরী প্রেম-৩_______
______পর্ব-১০ (শেষ পর্ব)______
ইভাকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে আত্মার জগতে প্রবেশ করল শিহাব। ওদের দু'জনের শক্তি মিলিত হওয়ায়, এখন তারা আত্মার জগতের সর্বোচ্চ শক্তির অধিকারী। সকল আত্মারা তাদের দু'জনকে দেখে কুর্ণিশ করতে লাগল। সেদিকে নজর না দিয়ে ইভা ও শিহাব অনিককে খুঁজতে লাগল।
খুঁজতে খুঁজতে ওরা পেয়ে গেলো। নীলা ওদেরকে আসতে দেখে অনিককে মেরে ফেলতে চাইল। তখন ইভা শিহাবকে সাথে নিয়ে আক্রমণ করতে গেলো নীলাকে। অনিক বেহুশ হয়ে পড়ে গেলো। নীলা ভয়ংকর রূপ ধারণ করে ইভা ও শিহাবের বিরুদ্ধে লড়তে লাগল। কিন্তু বেশিক্ষণ লড়তে পারলনা ওদের শক্তির বিরুদ্ধে। তখন অদৃশ্য হয়ে সে পালাতে চাইল। কিন্তু ইভা ও শিহাবের শক্তির কাছে সে অদৃশ্য হতে পারলনা। অবশেষে পরাজিত হল সে। একটা ধোয়া হয়ে আত্মার জগত থেকে বিদায় নিল নীলা।
তারপর ইভা ও শিহাব অনিককে সাথে নিয়ে পৃথিবীতে এল। অনিককে পৌঁছে দিল রিতুর কাছে।
তারপর তারা শিহাবের কবরে এল। আকাশে তখন চাদ ছিল। জোছনা চারদিকে। সেই আলো তে দুজন দেখল শিহাবের কবরটা ফাকা। লাশ নেই সেখানে। সর্বনাশ! এই লাশ যদি কবরে না থাকে খুব শীঘ্রই ইভা ও শিহাবের বিচ্ছেদ হয়ে যাবে।
ইদানীং লাশ চোর বেড়ে গেছে। কবর থেকে লাশ চুরি করে লাশ কেটে মানুষের প্রয়োজনীয় অংশগুলো রেখে দেয়।
ইভা হঠাৎ ভয় পেয়ে গেলো। আবার বুঝি সে শিহাবকে হারাতে যাচ্ছে। সে শিহাবের বুকে মাথা রেখে কাঁদতে লাগল।
কাঁদতে কাঁদতে সে বলতে লাগল: শিহাব, কি দোষ করেছি আমি, কেন আমি বারবার নিয়তির কাছে হেরে যায়? শেষ মুহূর্তে এসেও কি তোমাকে হারাতে হবে? আমি তোমাকে আর হারাতে চাইনা শিহাব। আমি তোমার ভালোবাসা পেতে চাই।" জোরে চিৎকার করে উঠল ইভা।
শিহাব বলল: ইভা আর বেশিক্ষণ সময় নেই, তাড়াতাড়ি দেহটা খুঁজে কবর দিতে হবে, আমিও আর হারাতে চাইনা তোমাকে।"
শিহাব ও ইভা পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল, তখন তারা দেখল সাদিয়া আর মিরাজ হেটে আসছে কবরের দিকে। কবরের পাশে এসে তারা চিৎকার করে উঠল কবর ফাকা দেখে।
ইভা ও শিহাব সাদিয়াদের সামনে দৃশ্যমান হলো। সাদিয়া ও মিরাজ কাঁদতে কাঁদতে জিজ্ঞেস করল তাদের: লাশ গেলো কোথায়?"
ইভা বলল: আমরাও জানিনা, সাদিয়া এ লাশ খুঁজে না পেলে আমিও আর শিহাবকে পাবনা।"
মিরাজ বলল: আসার সময় কিছু লোককে যেতে দেখেছি হাতে একটা ভারি বস্তা নিয়ে, ওরা হয়তো লাশ চোর।"
মিরাজের কথা শুনে ইভা ও শিহাব আর দেরি করলনা। বায়ুর বেগে ছুটে গেলো। লোকগুলোকে পেয়ে গেলো। ওদেরকে থামতে বলল ইভা। লোকগুলো থামল।
--বস্তা খুলো।" আদেশের সুরে বলল শিহাব।
--কেন?" লোকগুলো জিজ্ঞেস করল।
--খুলতে বলছে, খুলো।" ইভা রেগে উঠে বলল।
লোকগুলো তখন পিস্তল বের করে তাক করল শিহাব ও ইভার দিকে। ইভা ও শিহাব হেসে উঠল তা দেখে। ইভা ওদের থেকে বস্তাটা কেড়ে নিতে চাইলে, গুলি করল ওরা। সাথে সাথে চমকে উঠল লোকগুলো। কারণ শিহাব তখন ভয়ংকর রূপ ধারণ করল। লোকগুলো ভয়ে কাঁপতে লাগল। এতক্ষণ তারা এদের মানুষ ভেবেছিল।
শিহাব ইভাকে বলল: ইভা তুমি বস্তাটা খুলে দেখ।
ইভা শিহাবের আদেশ পালন করল। বস্তা খুলে দেখল ওখানে শিহাবের লাশ। লোকগুলোও অবাক হলো লাশের চেহারা ও সামনে দাড়ানো আত্মার চেহারা এক দেখে।
শিহাব চিৎকার করে বলল: ইভা, তুমি আমার দেহটা নিয়ে তাড়াতাড়ি দাফন করতে যাও। এদেরকে আমি শাস্তি দিচ্ছি।"
ইভা বস্তাটা নিয়ে তাড়াতাড়ি চলে গেলো। শিহাব তখন ভয়ংকর ভাবে আক্রমণ করল লোকগুলোকে। হাত থেকে তার লম্বা লম্বা নখ বেরিয়ে আসল। সেই নখ দিয়ে সে লোকগুলোকে আঘাত করতে লাগল। সবারর পেটে সে লম্বা লম্বা নখ ঢুকিয়ে নাড়িভুঁড়ি বের করে আনল ঠিক ইভার মতো, যেভাবে ইভা আগে অনেককে মেরেছে।
মুহূর্তেই শেষ করে দিল শিহাব সবাইকে। তারপর কবরস্থানে এল। ততক্ষণে ইভা, সাদিয়া আর মিরাজ মিলে লাশের কবর দিয়ে ফেলেছে। শিহাব গিয়ে ইভাকে জড়িয়ে ধরল। দু'জনে কিছুক্ষণ কান্না করল। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদতে লাগল সাদিয়া আর মিরাজ। তাদের কাছ থেকে বিদায় নিল শিহাব ও ইভা। সাদিয়ার দিকে তাকিয়ে শিহাব বলল: সাদিয়া, আমার শেষ আমানত আমার সন্তানকে আমি তোমার হাতে তুলে দিলাম, সারাজীবন ওকে আগলে রেখো। আমার সন্তানটা আমার চেয়েও বড় দুঃখী। অল্প বয়সে বাবা মা দু'জনকে হারিয়েছে। তুমি তাকে আর কষ্ট পেতে দিওনা।
সাদিয়া মিরাজকে জড়িয়ে ধরে সজোরে কাঁদতে লাগল। ইভা ও শিহাব মিরাজের মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করে দিল। তারপর বলল: যাচ্ছি আব্বু, ভালো থেকো তোমরা।"
ইভা ও শিহাব ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে যেতে লাগল। অনেক্ষণ সাদিয়া ও মিরাজ দাঁড়িয়ে থেকে খোলা আকাশের দিকে চেয়ে থাকল। তারপর শিহাবের কবরে একটা ফুলের মালা দিয়ে ধীরে ধীরে হাটতে লাগল বাসার দিকে। আশেপাশে কেউ ছিলনা তখন। শধু আকাশের চাঁদটা তাদের এই কষ্টের সাক্ষী হয়ে রইল আজীবনের জন্য। (সমাপ্ত)
লেখা:ShoheL Rana
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ