আজও কেন এমন হয় — পর্ব—৩
— আমি খুব সরল ভাবে বললাম। ‘এ গায়ে তো গাড়ি দেখাই যায় না । এমন কি দু চার মাসে কেউ কোন কাজে রিকশা নিয়ে আসে। কারন ব্রিজটা ভীষণ উঁচু এ পারে বাহন বলতে তেমন কিছু নেই । কিছু আনতে হলে দুতিন জনে টেনে ঠেলে আনতে হয় । কিন্তু মোটর সাইকেল দেখা যায়। এরা কারা । ‘
— ‘একটি মোটর সাইকেল তো বজলু মিয়ার। আমার পাশের বাড়ির । বিদেশ থেকে আসার পর কিনেছিল। কিন্তু সাইকেল চালিয়ে গ্রাম ছেড়ে দূরে যাওয়া খুব সমস্যার ব্যপার তাই বেশির ভাগ সময় বাড়িতেই পড়ে থাকে সেটি । যখন গঞ্জে বা শহরে যায় নিয়ে যায় । আর কার কার আছে আমি জানি না ।‘
— ‘কিন্তু দুটো ছেলেকে আমি প্রায়ই দেখি মোটর সাইকেল নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছে ?’ আমি আলতো ভাবে বললাম কথাটা ।
উত্তর দিতে গিয়ে একটু ভাবেন চাচি –‘হুম , মোটর সাইকেল নিয়ে দাবড়ে বেড়ানো, অভি আর বাদলের কথা বলছ না তো?’
—‘ আমি তো নাম জানিনা । দুজন কে বাইকে দেখি সব সময় ।’ , বললাম।
—‘ হ্যা ওরাই হবে। আর কেউ তো এমন করে গাড়ি চালায় না । শুনেছি, অভি হল এম পি সাবের ভাইয়ের ছেলে। আর বাদল উনার শ্বশুর বাড়ির পক্ষের আত্বিয়। এখানেই থাকে । এম পির গ্রামের বাড়িতে ।‘
—‘ হ্যা। পরিবার নিয়ে ঢাকায় আছেন। নিজের বাড়িতে । এখানে উনার ভাই আর অন্য আত্বিয়রা থাকে।‘
— ‘ শুনেছি , তোমার স্কুলের সামনে দিয়ে উত্তরে একটা রাস্তা গেছে। ওখানে কোথাও। আমি জানিনা ঠিক। তোমার চাচা বলতে পারবেন ।‘
—‘ ও তাহলে এম পি এই গ্রামেরই । উনার লোকেরা যেভাবে বাইক চালায়। ভয় হয়, কবে না একটা এক্সিডেন্ট করে বসে।‘
— ‘হ্যা শুনছিলাম । ওরা এমনই , কম বয়সি ছেলেরা একটু এমন হয়ই ।‘
—‘এভাবে গ্রামের হাঁটা পথে স্পিড তোলা – আমি মৃদু প্রতিবাদের ভঙ্গিতে বললাম , ‘ কখন কার গায়ে উঠে যায়, কে আহত হয় । কেউ কি কিছু বলে না ?’
— ‘ কার এতো সাহস হবে মা ?’—‘সাহস ? সাহস কেন ? ভয় পায় নাকি ?’
—চাচি আমার কথার উত্তর না দিয়ে বললেন , ‘এম পির লোককে কে সাহস করে বলবে ?’
— ‘এটা সাহসের কথা না । সতর্কতার কথা । কারও কিছু বলা উচিত ।‘ কথাটা শুনে চাচি একটু চমকালেন । সেটা দেখে বললাম, ‘গ্রামের বুড়ো মানুষেরা হাঁটছে বাচ্চারা হাঁটছে, স্কুলে যাচ্ছে , কখন কার গায়ে ধাক্কা লাগে ।‘
— চাচি একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমার কাছ ঘেসে বসলেন । যেন খুব জরুরি গোপন কথা বলছেন , ‘এসব কথা বলাবলি করোনা মা । কখন ওরা কাকে কি বিপদে ফেলে দেবে কে জানে । পুরো গ্রাম থানা পুলিশ সব ওদের ইশারায় চলে । আর আমি যে এসব কথা বলছি – ওরা যদি শুনে—‘ ভয়ে একটু কেঁপে উঠলেন চাচি ।
— ‘কি হয়ছে ? এমন ভয় পাচ্ছেন কেন ?’ চাচি চুপ করে থাকেন । ‘প্লিজ বলুন কিছু কি করেছে ওরা ? কি করেছে ?’ আমার অনেক অনুনয়ের পর চাচি আমাকে কিছু ঘটনা বললেন । এগুলো কিছু উনার দেখা , কিছু শুনা কথা । রুদ্ধশ্বাস হয়ে শুনলাম আমি ।
— ‘এমনও হয় ?’ প্রচণ্ড হতাশ সুরে বললাম আমি । ‘এতসব ভয়াবহ কাজ করার পরও এমন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে ?’
—চাচি আমাকে বারবার অনুরধ করলেন এসব বিষয়ে কাউকে যেন কিছু জিজ্ঞেস না করি । ‘কোথা থেকে কি হয় ? কে ওদের লোক আর কে নয় কে জানে ? এরাই শুধু নয় আরও আছে ওদের সাঙ্গ পাঙ্গ । কে কখন কোথা থেকে উদয় হবে কে জানে ? আমি এসব বলাবলি করছি ওরা জানলে তোমার চাচাকে হয়তো আর দেখবো না কিম্বা আমার ছেলেমেয়েদের কাউকে । এ নিয়ে আমি আর কথা বলতে চাই না ।‘
— তাকে কোথায় পাবো ? পেলেও তার কাছ পর্যন্ত যাবে কাকে ডিঙ্গিয়ে , বল ? এরাই তো । কেউ কেউ চেষ্টা করতে গিয়ে উল্টো বিপদে পড়েছে । আর প্রমান কই ? কে দেবে প্রমান ?‘
— আমি আবারও কিছু বলতে চাইলে চাচি আমার হাত চেপে ধরলেন , ‘মা আর কোন বিপদ সামলানোর মতো সাহস আমাদের নেই । ওরা কি কি করতে পারে তার কোন ধারনা নেই তোমার , তাই এসব ভাবছ । কিছুদিন গ্রামে থাকো বুঝবে ।‘
— আমি চাচিকে নিজের কথা আর কিছু বললাম না । বাসায় ফিরে এলাম । চাচি বা চাচা কোন সাহায্য করতে তো পারবেনই না । অযথা ভয় পেয়ে আমাকে না আবার বাসা ছাড়তে বলেন । এই গ্রামে ভাড়ায় ঘর পাওয়া খুব মুশকিল । উনারা যখন অপারগ তখন আর কাকেই বা বলবো । আমি আপাতত চুপ থাকার সিদ্ধান্ত নিলাম । ছুটিতে ঢাকায় গিয়ে কারও সাথে আলাপ করে দেখবো । কি করা যায় ? পরে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা ।
— আমি আজ কাল খুব একটা বের হচ্ছিনা । বাসায় বসে সারাদিন স্কুলের কাজ দেখা আর বই পড়াতেই লেগে থাকি । । কোথাও গেলে সুমিকে সাথে নিয়ে যাই । ছোট্ট সুমি আমার কিছু সাহাজ্যে হয়তো আসবে না । তবে এই পথে একা যাবার অস্বস্থিটা একটু কমেছে । ওর ও নিয়মিত স্কুল যাওয়া হচ্ছে । এখন থেকে আমি সুমিকে সাথে নিয়েই স্কুলে যাই । তাতে কি , তাতে তো দুই পাজীর দুষ্কর্মে বাঁধা পড়ে নি । ওরা আগের মতই ওদের নোংরামি করে যাচ্ছিল। আমি আর সুমি নিজের মত, কিছু না দেখার ভান করে হাঁটতে থাকি ।
— প্রতিদিনের মত আমি আর সুমি যাচ্ছিলাম । ওরা বেশ দূরে দাড়িয়ে ছিল । হটাত কি করলো ওরা – খুব স্পিডে বাইক চালিয়ে সুমির সামনে ঘ্যাঁচ করে ব্রেক করলো । আতংকিত সুমির সামনে এসে বাইক থেকে নেমে ওর সামনে এসে দাঁড়ালো ।
— ভয়ার্ত সুমির চুলের ফিতা টেনে ধরে একজন বলল, ‘কিরে লাল ফিতা নিল ফিতা । কি খবর ?‘ সুমি প্রতিদিন দুই বেনী করে । একটি বেণীতে লাল ফিতা আর অন্যটিতে নিল রঙের ফিতা বাঁধে। ওদের অসভ্যতায় সুমি ভয়ে আমার পেছনে লুকাতে চায় । লম্বু এবার ফিতা ছেড়ে হাসতে থাকে । কালো গ্লাস বলে, ‘আরে আরে বাদল দেখ , লাল ফিতা নিল ফিতাও তো কম সুন্দর না ।‘
—লম্বু হাতে তালি দিয়ে বলল , ‘বাহ, একটার সাথে একটা ফ্রি া’
—আমি হাতের কাছে কালো গ্লাসকে পেয়ে ওর গালে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলাম ।
— কাল গ্লাস থমকে গিয়ে গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে আমার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে, হাসতে হাসতে বলল , ‘এক কিলোর সাথে আড়াই শ গ্রাম ফ্রি । ম্যাডাম আজকের চড়ের বিনিময়ে এইটুকু ফ্রি তো পেতেই পারি ।‘ তারপর শিস বাজাতে বাজাতে চলে গেল।
— ‘আমি আর কিছুই বলতে পারলাম না । বলতে গেলে ওরা না আবার আরও খারাপ আচরন করে এই নির্জন রাস্তায় এমন কেউ ছিল না যাকে ভরাসা করে কিছু বলবো । আর বলবোই বা কাকে ? দেখে শুনে এমন মনে হচ্ছে , এ গায়ে কিছু হিংস্র দাঁতাল বাঘ থাকে আর বিপরীতে নিরীহ মেষ শাবক ।
— এর একটা বিহিত হওয়া দরকার । কিন্তু কি ভাবে ? কোন সে পথে ?
— এর মাঝেই একদিন হটাত করে সুমি অসুখে পড়লো । কিছুদিন থেকে আমাকে একাই যেতে হচ্ছে । সুমি যে আমাকে প্রটেক্ট করবে তা নয় । কিন্তু ও থাকলে খুব সামান্য হলেও শক্তি পাই ,। এখন ভরসা একটাই- ছেলে দুটো মুখেই যা বলে । এছাড়া আর কোন অশালীন কাজ করেনি এযাবৎ।
আজও কেন এমন হয় -পর্ব — ৪
দুতিন দিন হল আমি একাই যাচ্ছি । পঞ্চম দিন ওদের দেখা পেলাম । আমাকে দেখে সোজা সামনে এসে পথরোধ করে দাঁড়াল। আমি এগিয়ে যেতে চাইলে একজন সামনে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল– ‘প্লিজ।‘ একি কাণ্ড আমার বুক ধুপ ধুপ করে কাঁপছে । নিজেকে স্বাভাবিক রাখার প্রয়াস পেলাম । লম্বু এগিয়ে এলো , কিছু কথা আছে ম্যাডাম।
— আমি গলা চড়িয়ে বললাম , ‘কি ?হয়েছে ?’ কাল গ্লাস এগিয়ে এলো । ওর চোখ দেখা যাচ্ছেনা । কিন্তু মুখ জুড়ে শয়তানি হাসি । বলল , ‘আপনি আপনি করছিস কেন বাদল ? ডার্লিংকে কেউ কি আপনি বলে ? তুমি করে বল ।‘ লম্বু যদি বাদল হয়, আমি ভাবলাম, কালো গ্লাস তাহলে অভি । আমার ভাইও কালো গ্লাস পরে । কি সুন্দর লাগে ওকে । মুখ জুড়ে তারুন্য আর সরল মুখের মায়াময় লাবন্যে গ্লাস পরা ভাইটি আরও যেন সুন্দর হয়ে উঠে । আর এই অভি ? আস্ত একটা শয়তান লাগে । লম্বু মানে বাদল এগিয়ে এসে বলল, ‘তুমি খুব সুন্দর ডার্লিং ।‘ আমার রাগে শরীর ফেটে যাচ্ছিল । বললাম, ‘পথ ছাড়ো বেয়াদপ, যেতে দাও ।‘
— অভি বলল, ‘নিশ্চয় যেতে দেব, নিশ্চয় । তার আগে একটু আবদার আছে । মহামান্য ।‘
— আমি কড়া ভাষায় বললাম, ‘তোমাদের মত বেয়াদপের সাথে কোন কথা নেই। সর, সরে দাঁড়াও।‘
— ‘ডার্লিং কথা তো তোমার শুনতেই হবে ।‘ বাদল বলল । সাথে অভিও গলা মেলাল, ‘হা শুনতেই হবে ।‘
—‘ আমার শুনার ইচ্ছে নেই সময়ও নেই ।‘ ভেতরে ভেতরে খুব ভয় পাচ্ছিলাম । কিন্তু নিজেকে কঠিন দেখালাম ।
—‘ না ডার্লিং , না , সময় আর ইচ্ছা আমাদের হাতে বন্ধি থাকে । একটু কথা শুনলে তো ক্ষয়ে যাবে না । কথা না বাড়িয়ে মন দিয়ে শুন , আমরা একটা জায়গা খুঁজছি। পিপাসা পেয়েছে তো তাই ।‘
— ‘একটু পান টান করতে চাই । পিপাসার্ত মানুষকে পানিয় দেয়া কর্তব্য তোমার । তাই তোমার বাড়িটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে । আমরা চাই তুমি আমাদেরকে দাওয়াত দাও । খুদারতকে খাবার দাও । পিপাসার্ত কে পানীয় দাও । কি , ওই দিন বলেছিলাম না ? মনে রাখা উচিত ছিল ।‘
—লম্বু বলল, আমাদের কথা আমরা ভুলিনা । কাউকে ভুলতেও দেই না ।‘
—‘ আমরা পান করবো আর ডার্লিং তুমি তো আছোই । মেহমানদারী করবা । বড়ই খিদা, বড়ই পিপাসা ।‘ জিব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে কালো গ্লাস বলল ।
— বাদল খুব উৎসাহের সাথে বলল, ‘বিদেশী বোতল । তোমার মত সুন্দুরি মেমের জন্য বিদেশী, আমদানি ‘
— প্রবল রাগে আমার চোখ জ্বালা করে মনে হচ্ছে মাথা ফেটে যাবে । আমি আমার পায়ের দুটো স্যান্ডেল দু হাতে নিয়ে ওদের দুজনের গায়ে মারলাম । অভির হাতে আর বাদলের পেটে গিয়ে লাগলো বাড়ি । এবার অভি আমার হাত ধরে ফেলল, এবং আমার চোখের দিকে তাকিয়ে শীতল কণ্ঠে বলল, ‘তোমাকে সাত দিন সময় দিলাম । সাত দিন । তারপর দেখো ।‘
— বাদল বলল, ‘সাত দিনের মধ্যেই জানাইতে হবে । আমরা এখানেই থাকবো দাওয়াতের অপেক্ষায়।‘
— অভি আমার হাতে জোরে চাপ দিয়ে বলল, ‘তোমার সাথে সুন্দর সিস্টেমে আসতে চাচ্ছি । অন্য কেউ হোলে—‘ বলে , অনেকক্ষণ আমার দিকে অর্থ পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ঝটকা মেরে আমার হাত ছেড়ে ওরা উল্টো পথে টার্ন করলো ।
— আমার ভীষণ কান্না পাচ্ছিল । আমি একটা গাছের শিকড়ে বসে অসহায় রাগে কাঁদলাম কিছু সময় । পরে নিজেকে ধাতস্থ করে স্কুলে রওনা দিলাম । এসব কথা বলার মত কাউকে পাচ্ছিলাম না । চার পাশ দেখে শুনে যা বুঝলাম , সবাই গা বাচিয়ে চলতে চায় । উল্টো আমাকেই গ্রাম ছাড়া করবে হয়তো । সাধারন নিরীহ নিরুপায় লোক আমার কষ্ট বুঝবে । কিন্তু ওদের চাটুকারী ও অধিনস্থ যারা তারা নিজেরাই আগুন দিবে আমার জীবনে ও সেই আগুনে ইন্দনও দিবে ওরাই । আমার চাই একজন ওয়ান ম্যান আর্মি কেউ । এমন কেউ তো নিশ্চয়ই কোথাও না কোথাও আছে । অন্তত সাহসী কেউ । আমারই চোখে পড়ে নি শুধু ।
— এর পর সুমি সুস্থ হয়ে এলে আমি আবার ওকে নিয়ে স্কুলে যেতে লাগলাম । ওরা এখন আর কাছে আসে না । গান টানও গায় না । ওরা তো আমাকে ওয়ার্নিং দিয়েই রেখেছে তাই দূরে দাড়িয়েই হাসাহাসি করে ।
— নিজের অজান্তেই আমি দিন গুলো গুনছিলাম। আজ সপ্তম দিন । তাই ভেতরে ভেতরে খুব অস্থির হয়ে আছি ।
— বরাবরের মত সুমিকে নিয়ে আজও যাচ্ছিলাম । ওদেরকে আগের জায়গাতেই পেলাম । না তাকিয়েও বুঝলাম ওরা আজ চুপ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । কিন্তু কিছুই করলো না।
— বাসায় ফেরার সময়ও ওদের দেখলাম। ওরা কিছুই করলো না , দূরে দাড়িয়ে ফিসফাস করছে ।
— আমার ভেতরে কি ভীষণ উদ্বিগ্নতা ছিল সেটা আমি জানি । ভয়ার্ত দৃষ্টিতে চারিদিকে তাকাতে তাকাতে জলদি পা চালিয়ে বাসায় এলাম । সুমি ওর বাড়ি চলে গেল । ও রাতে আবার আসবে । আমি নিজের ঘরে এসেই হাত পা ছড়িয়ে খাটে শুয়ে পড়লাম । ভালো লাগছে । ওরা কিছুই করলো না । আরও তিনটি দিন কেটে গেছে এভাবেই । কিছুই করলো না ওরা ? এতো ভালো লাগছিলো । নতুন করে নিজের জন্য স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম । সুমির জন্যও ।
—শোনা কোথায় কান দিতে নেই । যতটা খারাপ ওদের ভাবছিলাম ওরা ততটা খারাপ নয় । একটু বিগড়ে গিয়েছে এই আর কি । সঙ্গ দোষ আর বেহিসাবি সম্পদ অনেক সময়ই মানুষকে বাঁকা পথে টানে । ভাবলাম একদিন ওদেরকে স্কুলে ডেকে সবাই মিলে সুন্দর করে বোঝাবো । ওরা হয়তো নিজের অজান্তেই কতোটা গর্হিত ঘৃণিত কাজ করছে ।
— দিনগুলো কাটছে ভারহীন । মনটা ফুরফুরে । এই গ্রাম নিয়ে মনে মনে কত কি করার কল্পনা করছি । নিজেকে নিয়ে , সুমিকে নিয়ে , সুমির মা আর চাচিকে মানে আমার বাড়িওয়ালীকে নিয়ে । গান বাজিয়ে নিজেও গুন গুন করছিলাম । ভাবলাম আজ সুমির সাথে রবীন্দ্রনাথ ও তার গান নিয়ে সুমিকে কিছু বলবো । সেই সাথে উনার গানের সাথেও ওর পরিচয় করিয়ে দেব ।
—রাতে খাবার রেডি করে চলে গেল সফুরা। ও গেলেই মেয়ে সুমিকে পাঠিয়ে দেবে। সুমি এলেই ওকে নিয়ে একসাথে খেতে বসবো। বই পড়ছিলাম। রাতে এই সময়টুকু আমি বই পড়ি। স্কুলের পেন্ডিং কাজগুলো দেখি। সুমি এলে খাবার পর আমরা একটু গল্প গুজব করি, ও স্কুলে কেমন পড়াশুনা করছে সে ব্যপারে কথা বলি। ওকে মাঝে মাঝে পড়া দেখিয়ে দেই। কখনও আবার দুজনই বই পড়তে থাকি। আমি ওকে কিছু ছড়ার বই জোগাড় করে দিয়েছি। ও ওগুলো খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ে। আজ ওর সাথে শুধু রবীন্দ্রনাথ নিয়ে আলাপ আর গান শুনা ।
— একদিন খেয়াল করেছিলাম ও আঁকতে খুব পছন্দ করে। এবং ওর আকাঁর হাতও দারুণ ভালো। ভাবছি এবার যখন ছুটিতে বাড়ি যাবো ওর জন্য আকাঁর সব সরঞ্জাম নিয়ে আসবো। মেয়েটাকে এ বিষয় গাইড করলে বহুদুর যাবে। ভালো একজন আর্টিস্ট হবার সম্ভাবনা ওর মধ্যে আছে। এবং আমি ওকে যতদূর সম্ভব সাহায্য করবো।
— বই পড়তে পড়তে কখন যে এতো রাত হয়ে গেল খেয়ালই করিনি। ঘড়িতে রাত এগারোটা । চিন্তিত চোখে দরজার দিকে তাকালাম। সুমি এখনও আসছে না কেন। আজ কি আসবেনা? আরও দু একবারও এমন হয়েছে আসেনি । একবার ওর নানি এসেছিল তাই আসেনি । আবার যখন ও অসুস্থ্য তখন । আজ কি হল? হয়তো পরে আসবে ।
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ