আজও কেন এমন হয় – পর্ব–1
—শিক্ষিকার চাকুরিটা পেয়ে আমি এক দিকে যেমন খুশি হলাম খুব অন্যদিকে চিন্তিতও হলাম। আমি থাকি শহরে। এখানেই আমার বসবাস বেড়ে উঠা নিজ বাড়িতে, কিন্তু চাকুরীতে জয়েন করতে হবে আমাকে বহুদূর প্রত্যন্ত গ্রামে। বাড়ি থেকে আসা যাওয়া করে চাকুরী করা সম্ভব নয়। আমাকে তাই বাধ্য হয়ে স্কুলের কাছাকাছি একটি বাসা ভাড়া করতে হল।
—স্কুল থেকে প্রায় পনর বিশ মিনিটের হাঁটা পথে আমার বাসাটি । দুটি রুম আর দুপাশে দুটো বারান্দা সহ ছোট বাসাটি। পেছনের নিচু চালের বারান্দার দুপাশে রান্নাঘর আর বাথরুম। বাড়িটা পাকা। উপরে টিনের চাল। এখানে কে আসবে বাসা ভাড়া করে থাকতে ? নিতান্তই বিপদে না পড়লে । এই দূর গাঁয়ে এটাই অনেক পাওয়া ।
— যে ভদ্রলোক বাসাটির মালিক মানে বাড়িওয়ালা, উনাকে আমি আব্দুল চাচা বলেই ডাকি। গ্রামের আর দশটি সাধারন লোকের মতই তিনি ধার্মিক সরল ও নরম মেজাজের । তিনি আমাকে একটি রান্না আর অন্যান্য কাজের জন্য একটি মহিলা জোগাড় করে দিলেন। সফুরা । সফুরা সারাদিনের কাজ শেষে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে যায়। আর ওর ছোট মেয়েটাকে আমার কাছে রেখে যায়। রাতে একাকি থাকাটা আমার পছন্দ হচ্ছিল না বলে সফুরাকে বলে ওর মেয়ে সুমিকে আমার কাছে রাতে থাকার বন্ধবোস্ত করে নিলাম।
— প্রথম কয়েক দিন খুব অস্থিরতার মধ্যে কাটলো । এই প্রথম একাকি আমি স্বজন ছেড়ে বহুদুর। বাবা মাকে ছেড়ে এই প্রথম একাকি কোথাও থাকা । সফুরা আর সুমি আমার সে অভাব খানিকটা হলেও কমিয়ে দিলো । রাতে সুমির সাথে নানা রকম গল্প করে কাটিয়ে দেই সময়। নয় দশ বছরের মেয়েটি। গ্রাম্য-সবলতায় ভরা। মজার মজার সব কথা বলা ছোট্ট মেয়েটি ।
— মাঝে মাঝে বিকেলে বের হই আমি। গ্রাম দেখতে । আমার বাসার সামনে দিয়ে রাস্তাটি, আড়াআড়ি ভাবে পূর্ব পশ্চিমে চলে গেছে । পুব দিকে বিলের পাশ ঘেসে আমার স্কুলের সামনে দিয়ে রাস্তাটি গঞ্জের দিকে গেছে । পশ্চিমে রাস্তার শেষে মুল গ্রামটি । বাসার লাগোয়া বিশাল আম বাগানটির পরই আব্দুল চাচার বাড়ি । বাসার থেকে দুই মিনিটের দুরত্বে একটি মুদি দোকান ও চায়ের দোকান । স্কুলে যাবার পথে দোকানটি পড়ে । ওখানে সব সময় আব্দুল চাচাকে দেখি। তিনি একমনে পেপার পড়ছেন বা গল্প করছেন । এটা আব্দুল চাচার ভাতিজার দোকান । চাচা আমাকে দেখলেই জিজ্ঞেস করেন। ‘কেমন আছ মা ?’
–‘জি চাচা ভালো। একটু হাঁটতে বের হলাম।‘
–‘ভালো করছ মা। হাঁটাহাঁটি ভালো। শরীর ভালো থাকে । আমাদের গ্রাম খুব সুন্দর গ্রাম। দেখো। ঘুরে ঘুরে দেখো।‘
— ভাতিজা ছেলেটাও অমায়িক ব্যবহার চাচার সাথে গলা মিলিয়ে বলে, ‘টিচার আফা, এই গ্রামের আর গ্রামের বিলের মত সুন্দর জায়গা বাংলাদেশে নাই । আমাদের ছোট বেলার খেলার জায়গা । এখনও যেতে চাই কিন্তু দোকানের কাজে সময় হয় না ।‘
—এমনি আরও কত কথা । ওদের কথা শুনতে শুনতেই আমি দোকান পেরিয়ে এগিয়ে গেলেই এখানে এসে দুটো পথ দুদিকে চলে গেছে। এই তিন রাস্তার মোড়টি একটি বিলের দিকে অন্যটি স্কুলের দিকে চলে গেছে । এবং গঞ্জের দিকে ।
— বিলের ধারে আসতে আমার খুব ভালো লাগে । এখানে কোথাও ধানের ক্ষেত কোথাও খালি জমি। কোথাও পানির ডোবা। এখানে ওখানে বিচ্ছিন্ন কিছু গাছ জন্মে আছে । বহুদুর পর্যন্ত খোলা প্রান্তরের মত। এখানে এসে দাঁড়ালে উদ্দ্যাম বাতাসে যেন উড়িয়ে নেয়। ভীষণ ভালো লাগে আমার । চাষিরা ক্ষেতে কাজ করছে । বাচ্চারাও ছোট ছোট দলে খেলছে । বিলের কাঁদা পানিতে মাছ ধরার চেষ্টা করছে । কারও সামনে পড়লে হেসে সালাম দিচ্ছে , ‘টিচার আফা সালাম । ‘
— আমি একজন স্কুল শিক্ষক । সেই হিসেবে সাধারনের কাছে আমার সম্মান প্রাপ্য। এতে কেউ বয়সটা দেখেনা। যদিও আমি সবে ভার্সিটি শেষ করেছি। বয়স পঁচিশ পেরোয়নি ।
—এ গ্রামটি আমার ক্রমশই ভালো লাগছে । আমি ছোট না বড় নারী না পুরুষ সেটা ফ্যাক্ট না হয়ে আমার কাজটাকেই প্রাধান্য দেয় সবাই । এবং সেটাই দেয়া উচিত। একজন শিক্ষককে সমাজ প্রায় বাবা মায়ের সম পর্যায়ের সম্মান দেয় । তাই এ গ্রামে আমার বসবাস সহজ হয়েছে । দিনগুলো যাচ্ছে মসৃণ ভাবে ।
—আমি স্কুলে যাই বা আর কোথাও যাই এই একটি পথই আমাকে যেতে হয়। এতো সুন্দর গ্রাম । গ্রামের সরল সিধা মানুষগুলো, একটি সরকারী চাকুরী । ভালো বেতন । ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা । আর স্কুলটাও আমার পছন্দ হয়েছে । সবই বেশ ভালো লাগছে । আর সুমি তো দারুণ একটি মেয়ে । ওর সাথে সুন্দর সময় কাটে আমার । আনন্দ পাই ওর ছেলেমানুষী কাজে । অবাক হই ওর মায়ের সরলতায় ।
— একদিন সন্ধ্যায় ভেজা কাপড়ে সুমি আমার বাসায় আসে । হাতে একটা গামছার পুটুলি । অবাক হয়ে বললাম, ‘ কিরে তুই ভেজা কেন ? এখন এলি কেন ? তোর তো রাতে আসার কথা । কি হয়েছে ?’
— ‘আফা আপনের জন্যি আনছি ।‘ বলে গামছার পুটুলিটা বাড়িয়ে ধরে ও ।
— ‘মাছ ? মানে ? কি বলছিস । মাছ কেন ? গামছায় করেই বা কেন ?’
— ‘ আমি ধরছি । আপনের জন্যি । ওই বিলে। গামছা দিয়ে ধরছি গো আফা ।‘
— আমি তো হা । কি বলছিস তুই ? অবাক হয়ে বললাম, তুই বিলে গিয়ে গামছা দিয়ে মাছ ধরলি , আমার জন্যে ? কেন ?’
— ‘আপনি খাইবেন । এই নেন ।‘ লাজুক হেসে ও বলল।
— ‘কি পাগলামি এসব । আমি কি বলেছি মাছ খাবো ? সারাদিন কি এমন ঘুরে বেড়াস ? স্কুলে তো যাস না । স্কুল ফাঁকি দিয়ে কাঁদা পানিতে হুটোপুঁটী করিস । এটা কি ঠিক ? শোন এটা তোর মাকে দিয়ে আয় । আর পড়া ছেড়ে এসব করা বন্ধ কর সুমি , কেমন ?‘ কথাগুলো শুনে সুমি মুখ বেজার করে চলে গেল ।
—আমি জানি ও আমাকে খুশি দেখতে চায় । ওর সাধ্য মত ও কিছু করতে চায় । ওর সাথে আমার ধীরে ধীরে কোথাও একটি বন্ধন তৈরি হয়ে যাচ্ছে । প্রায়ই ভাবি সুমির জন্য কিছু করতে । আমি ভাবলাম অন্তত একটা সুমিকেও গাইড দিয়ে নিজের পায়ে দাড় করাতে সাহায্য করে, বড় কিছু একটা গড়ে দেওয়া যায় । সমাজের কিছু উপকার হয় ।
— সাবলীল দিনগুলোর মাঝেই একটা জিনিস আমার চোখে আজকাল লাগছে খুব । সেটা হচ্ছে তিন রাস্তার মোড়ে বেশ কিছু ছেলের আড্ডাবাজি । এক হিসাবে এটা অবাক করার কিছু নয় । এখানে দুতিনটি চা ও মুদির দোকান । লম্বা বেঞ্চ পাতা আছে । তাতে বসেই এই সব ইয়াং ছেলেরা চা যতটা না খায় হৈ চৈ করে তার শত গুন । গ্রামের বয়সীরা পারতপক্ষে এখানে আসেন না। কিছু পথিক হয়তো কখনও এসে বসে । ইয়াং ছেলেরা চায়ের দোকানে বসে গল্প করবে । দুষ্টুমি করবে এবং হেটে যাওয়া মেয়েদের দিকে হা হয়ে তাকাবে এটা খুবই স্বাভাবিক । অল্প বয়সী ছেলে মেয়েরা একে অন্যের দিকে কৌতূহলে তাকাবে এটাই মানুষের স্বাভাব ধর্ম ।
— আমি টিচার বলেই আমাকে কিছু বলছে না হয়তো । অন্য সাধারন মেয়েদের টিপ্পনী কাটতে ওদের উৎসাহের কমতি নেই । ঢালাও ভাবে ওদের সবাই হয়তো খারাপ নয় । কেউ সংগ দোষী বা সাধারন উৎসাহী দর্শক । সন্ত টাইপের কেউ যে নেই এটা ঠিক । যদিও কখনও এদের আমি শালীনতার উর্ধে যেতে দেখিনি ।
—তবে ইদানিং যে জিনিসটা আমাকে বিরক্তও করছে তা হল মোটর সাইকেলে করে দুটি ছেলে কাণ্ড । কখনও মোড় থেকে কখনও বাসার কাছ থেকে আমার পিছু নেয় । প্রথম দিকে আমি এগুলকে দুএকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বৈ কিছু নয় ভেবেছি । কিন্তু একসময় লক্ষ করলাম, প্রতিদিন ওদের তিব্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টির সামনে দিয়ে আমাকে জাতায়াত করতে হচ্ছে । প্রায় দিনই নিরিহ ভঙ্গিতে বাইকটি নিয়ে ওরা আমার সামনে পেছনে ছুটে যায় । কিন্তু বিরক্তিকর ব্যাপার যেটা সেটা হল যেখানেই রাস্তা একটু নির্জন সেখানে ওরা বাইকের গতি ধীর করে দিয়ে সিনেমার রোমান্টিক গান গুলো গাইতে থাকে । মিছে ঝামেলায় জড়াতে চাই না বলেই আমি ওদেরকে দেখলেই রাস্তার একেবারে কিনার ঘেসে দ্রুত হাঁটতে থাকি, কিছুই না জানার ভান করে । তাতে ওদের উৎসাহ মোটেই কমে না । আমাকে এমন এড়িয়ে যেতে দেখে হাসতে হাসতে গা ঘেসে চালেতে থাকে ।
— কি করবো , কাকে বলবো ? বলে আবার কোন ঝামেলায় পড়ি । পরিবার রেখে পরদেশে আমি । দূর প্রত্যন্ত গ্রামে একাকিনী এক যুবতি নারী আমি ।
আজও কেন এমন হয় — পর্ব—২
— আজ যাবার পথে ওদের দেখিনি । কিন্তু ফেরার পথে নির্জন স্থানটিতে ঠিকই দাড়িয়ে আছে দেখলাম । ওরা আমার পেছন পেছন ধীরে বাইক চালিয়ে আসছিলো আর দুই পাজী বেসুরো গলায় গাইছিল—‘তু চিজ বাড়ি হে মাস্ত মাস্ত ।‘ আরেক জন গলা মেলাল– ‘আমার বাইকের পেছনে হেব্বি সাজিয়ে, তোকে নিয়ে যাবো রে ডার্লিং বানিয়ে ।‘
— এসব অশালীন কথায় আমি ভেতরে ভেতরে ভীষণ ক্রুদ্ধ হয়ে আছি । আমি একজন শিক্ষক হয়ে এখানে এসেছি । এসব বাক্য আমার তো বটেই , অন্য যে কারও জন্যেও খুবই অশালীন । ওরা হটাত বাইক থামিয়ে দিলো । আমি আরও কিনার ঘেসে হাঁটছি । ওরা বেশ দূরে দাড়িয়ে হা হা করে হাসছে । আর ঠিক তখন হটাত ফুল স্পিড তূলে আমার গা ছুঁয়ে ছুটে গেল । আমি এমন ভয় পেলাম যে একটি গাছের শেকড়ে পা বেঁধে উপুড় হয়ে পড়লাম । আবারও ওরা একটু দূরে দাড়িয়ে কিছু সময় হাসতে হাসতে শিস দিতে দিতে চলে গেল । এদিকে আমার দুহাতের চামড়া ছিলে গেল ।
—বাসায় ফিরেও মনটা খুব খারাপ ছিল । বিকেলে বিলে ঘুরতে চলে গেলাম । এখানটায় এলে আমার মন ভালো হয়ে যায় । কি সুন্দর জায়গাটা । উপরে বিস্তৃত নীল আকাশ, নিচে বিস্তৃত বিল । মেঘেরা দুরন্ত বাতাসে ছুটে যাচ্ছে । নিচের পানি তির তির করে কাঁপছে । নড়ছে গাছের পাতারা । নড়ছে ফসলের গাছ গুলো । সাথে শিশুদের আনন্দ কলকাকলি ।
— দুতিন দিন ওদের আর দেখা যায় নি । কখনও একটানা দেখি আর কখনও দুইতিন দিনের জন্য হাওয়া । মনে মনে ভাবি না জানি কোন কুকর্মের জন্য গিয়েছে । আজও বিকেলে আমি বিলের ওদিকটায় হাঁটছি । হটাতই পেছনে কারও আওয়াজে চমকে তাকালাম। এবং দেখি সেই দুই ছেলে দাড়িয়ে হাসছে । আমি তাকাতেই কালগ্লাস বলল, ‘কি ম্যাডাম বাতাস খান?’ ওদেরকে আমি কালো গ্লাস ও লম্বু বলে মনে মনে ডাকি । কারন ওদের একজন সবসময় কালো গ্লাসো পরে থাকে, অন্যটি বেশ লম্বা ।
— লম্বু বলল, ‘ভালো ভালো জিনিস রেখে শুধু বাতাস খাচ্ছেন কেন ?’
— কালো গ্লাস বলল, বাতাস খেয়ে আগে নিজেরে ফিট করুক, তারপর ভালো জিনিস ভালো হজম হবে।‘
—‘ভাই এক্কেবারে আসল কথা বলছ । শহরের মেম । গ্রামের বাতাস দরকার ।‘
— ক্ষেতের চিকন আইল জুড়ে ওরা দাড়িয়ে হাসছে আর উল্টো পাল্টা কথা বলছে । আইলের এক পাশে ক্ষেত অন্যপাশে ডোবা। মাঝখানে চিকন আইলটি । ওরা না সরলে যাওয়া সম্ভব নয়। আমি বললাম, ‘সরে দাঁড়ান যেতে দিন।‘ লম্বু বলল, ‘ যান ম্যাডাম যান।‘ কিন্তু কালো গ্লাস বলল, ‘আগে বলেন কবে খাওয়াবেন।‘
—‘দাওয়াত না পেলে যে পা নড়ছে না ম্যাডাম ।‘
— ‘মানে? হি হি মানে?’ দু’জন হি হি করে হাসতে থাকে।
— আমি কঠিন গলায় বললাম, ‘যেতে দিন।‘
— এবার দুজন দুপাশে সরে দাঁড়ায়। আমি দ্রুত হাঁটছি । এর মধ্যে লম্বু আমার কানের কাছে মুখ এনে বলল, ‘খুব খিদা লেগেছে ম্যাডাম। ভুলে যাবেন না । কালকে আপনার বাসায় কি একটু খাওয়াদাওয়ার ব্যাবস্থা করা যায় ? ‘
—কালো গ্লাস বলল, ‘তুই শালা একটা হারামি । এতো তর তর করছিস কেন ? সময় দে । ম্যাডামকে , যান ম্যাডাম সময় দিলাম ।‘
— আমি কোন উত্তর না করে একরকম দৌড়েই বাসায় ফিরে এলাম। অসুস্থতার কথা বলে পরদিন স্কুলে গেলাম না। কি হচ্ছে এগুলো ? এদের কথা কাকে বলা যায় , বুঝতে পারছি না ।
— গতকাল স্কুলে যাওয়া হয়নি। প্রাইমারি স্কুলে ছুটি কম। যেতেই হবে। বাচ্চাদের পড়াশোনার বিষয়টাও আছে । সামনে পরিক্ষা । তাই স্কুলের বড় আপা কথা শোনালেন । এ সময় ছুটি নেয়া চলবে না। বাচ্ছাদের পড়ায় ক্ষতি হবে। পরিক্ষা খারাপ করবে। নানান কথা মাথা নিচু করে দশ মিনিট বড় আপার কথা শুনলাম। আমার সমস্যাও সত্যি বড় আপার কথাও সত্যি। ব্যক্তিগত সমস্যার জন্য তো দায়িত্বে অবহেলা করা যাবে না।
—আজ পথে দুই যন্ত্রণাকে দেখিনি। এই স্বস্তিটুকু ক্ষণস্থায়ী জানি, তারপরও ভালো লাগছে । পথের দুপাশের অসাধারন সৌন্দর্যকে দেখছি । আমার বাংলাদেশের সবুজ সুন্দরতা । আজ কি প্রশান্তি । যেদিন ওরা থাকে সেদিন তো কেঁচো হয়ে থাকি । উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটতে থাকি আপন গন্তব্যে । অন্ধ বোবা কালা এক অবলা । যদিও আমি নিজেকে ততটা অবলা ভাবি না । কিন্তু এই পরভুমে কিংকর্তব্যবিমুড় হয়ে আছি । ইভ টিজিং বহু দেখেছি । এরা বাড়াবাড়ি করছে । কারও সাথে আলাপ করতেই হয় এসব নিয়ে ।
— কিছু তো করতে হবেই । কি করি ? কি করি ? ভাবতে ভাবতে রাতে আমি সুমিকে নিয়ে আব্দুল চাচার বাড়ি গেলাম । আব্দুল চাচা বাড়ি নেই । গঞ্জে গেছেন । আমাকে দেখে খুব খুশি তিনি । আমি চাচির সাথে বসেই কথা বলতে লাগলাম । চাচি আমাকে আদরে বসালেন । চাচি ব্যাস্ত হলেন আমাকে আপ্যায়নে, প্রথমে লাল রঙের শরবত নিয়ে এলেন। আমি বারবার মানা করার পরও প্লেটে করে চমচম পিঠা, মুড়ির মোয়া, নারিকেলের নাড়ু নিয়ে এলেন। আমাকে খুব যত্ন করে খাবার দিতে লাগলেন। চাচি নিজের হাতের পায়েস কত মজাদার সেটা বলে দাওয়াতও দিয়ে ফেললেন ।
— কিন্তু আমিতো এসেছি ঐ পাজী দুই ছেলের ব্যপারে কথা বলতে । কিন্তু কিভাবে কি বলবো বুঝতে পারছিনা । চাচি ভীষণ খুশি মনে হাসছেন আর কথা বলছেন কত কথা । আমার কথা উনার কথা । কত কি । এতদিন এলাম না কেন সেই অভিযোগ করলেন । তিনি গেরস্ত বাড়ির বউ । কোথাও বের হন না। বাড়ির কাজ নিয়ে খুব ব্যস্ত থাকেন । অতএব আমি যেন সব সময় যাই । ব্যবহারে কি ভীষণ অমায়িক । গাঁয়ের সুদ্ধ সরল পরিচ্ছন্ন মন । বাংলার চির চেনা এক নারী । আর সেই একই গাঁয়ের এমন দুর্মুখ ছেলে, অবাক কাণ্ড। এই দুটো পাজী একেবারেই দলছুট।
— কথার এক সুযোগে আমি ওই দুটি ছেলের কথা জিজ্ঞেস করলাম। থমকে দাড়িয়ে গেলেন তিনি । ‘কার কথা বলছেন টিচার আপা ?’ এতক্ষনের হাসিখুশি মানুষটি মিইয়ে গেলেন যেন মুহূর্তেই ।
Collected
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ