আজও কেন এমন হয় পর্ব—৫
– গ্রামের জন্য রাত এগারোটা অনেক রাত। একঘুম হয়ে যায় এখানে। আমি আর সুমিই যা একটু রাত জাগি । পড়াশুনা করি । গল্প করি । আমি গান শুনি ও ছবি আঁকে । আমি আরেকটু অপেক্ষা করবো ভাবলাম। সফুরাও এসে কিছু বলে গেলো না। মনে হয় খুব ব্যস্ত ছিল । ঘুমিয়ে পড়েছে । গত দুবার তো বলে গিয়েছিল যে সুমি আজ আসবে না । আজকে কি ভুলে গেছে ?
– চোখ ভারি হয়ে আসছিল। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলাম রাত পৌনে বারোটা বাজে। ইচ্ছে হচ্ছিল না একা খেতে, তবুও প্লেটে খাবার নিয়ে কয়েক লোকমা খেলাম। আর না, রেখে দিলাম। ওকে রেখে খেতে মন চাইছে না । এখন কেন যেন মনটা হটাতই কেমন কেমন যেন করছে। খাবারেও রুচি নেই । ওকে এতটা মিস করছি কেন ? আমিও পাগল , সকালে বকে দিলেই হবে । হুট করে আসবে না, এটা কি ?
– ঘুমিয়ে পড়াটাই বেটার মনে হল । কাল সকালে সফুরাকে ডেকে বলে দেব সুমি না এলে যেন জানিয়ে দেয় । আর সুমি আসতে না পারলে যেন অন্য কাউকে রেখে যায় । আজকাল একা থাকাটা মোটেই ভালো লাগে না । গা ছম ছম করে । পাজী ছেলেগুলোর কথা মনে এসে যায় । তখুন খুব অসস্থি হয় । আজ আর কিছুই করার নেই । অতএব আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়লাম । পুরোপুরি অন্ধকারে আমি থাকতে পারি না । তাই দুই রুমে ও বারান্দায় সব সময় ডিম লাইট জ্বালিয়ে রাখি ।
– ঘুমিয়ে পড়লাম। হটাত যেন একটা আওয়াজ শুনলাম মনে হল । চমকে জাগলাম । আধো আলোতে চারিদিকে তাকালাম, আর কোন শব্দ নেই । একটু পর আবারও হোল । এবার বারবার টোকার শব্দ । দরজায় কেউ ? উঠে বসলাম, সুমি হয়তো । কোন কারনে আসতে দেরি হয়ে গেছে ? না তো, জানালায় টোকা পড়ছে । ও তাহলে সফুরা হবে। বলতে এসেছে সুমি আজ আসবে না । আমি উঠে আলো জ্বালালাম, জানালা খুললাম । তাকালাম অন্ধকারে । নেই কেউ ।
– কিন্তু কেউ তো টোকা দিয়েছে । আমি মৃদু গলায় বললাম, ‘কে সফুরা ? সুমি ? সুমি তুই ?’ কাউকে তো দেখছি না । সফুরা টোকা দিয়ে কোথায় গেলো । এতো রাতে এমন ফাজলামি করার মানে কি ?
-এবার আমাকে প্রচণ্ড অবাক করে যে লোকটি সামনে এসে দাঁড়াল – সে অভি । আমি বিস্মিত ভয়ার্ত কণ্ঠে বললাম, ‘তুমি ? তুমি এখানে কি করছ ?’ উত্তরের অপেক্ষা না করে আমি দ্রুত জানালা বন্ধ করতে চাইলাম । তখুনি অভি দ্রুত একটা হাত গ্রিলে ঢুকিয়ে জানালার পাল্লা আঁটকে দিলো । আমি তড়িতাহতের মত পেছনে সরে এলাম । কি চায় ও ? কি চায় ওরা ?
-অভি তেরছা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল , ‘ কি সুন্দুরি , কেমন আছো ? মনে নেই — তোমাকে বলেছিলাম আমাদেরকে দাওয়াত দাও , শুনলে না তো ?’
– আমি রাগে কাঁপতে কাঁপতে বললাম, ‘ প্রশ্নই উঠে না । তমাদেরকে দাওয়াত করে খাওয়াবো এটা কেমন কথা ? বাজে কথা বল না ছি , ছি , এমনটা ভাবো কি করে তোমরা ? এমন কথা বলছ কোন সাহসে ,চলে যাও ।‘
– ও আর একটু কাছে সরে এসে বলল, ‘শুনবে না ?’
– আমি আঙ্গুল তূলে কঠিন ভাষায় বললাম, ‘ দূর হ কুকুরের দল, আমার সামনে থেকে সর । শয়তান বদমাশ গুন্ডা । তোদেরকে পুলিসে যদি না দেই তো দেখিস । বজ্জাত ছেলে ।
-‘পুলিশ ? ভালোই বলেছ । যাও না একবার মন যদি চায় । প্রয়োজনে বাইকে করে পৌঁছে দেব । বড্ড দূর কিনা ।‘ বলে হাসতে লাগলো ।
-‘সব পুলিশ তোদের চাটুকার নয় । তোদের মত শয়তানদের কিভাবে শায়েস্তা করতে হয় সেসব পুলিশরা ভালোই জানে ।‘
-‘ ওকে ।‘ হাল ছেড়ে দেয়ের ভঙ্গিতে বলল অভি, ‘জানতাম সুন্দরী এটাই তুমি করবে । কিছুতেই হাতে আসবে না। এরকম দুয়েকটা ঘাড় তেড়া মেয়ে পাওয়া যায় । নানান কথা তাঁদের । নানান ভাবনা । আর তাই তোমার ঔষধের ব্যবস্থা করে এসেছি ।‘
-‘ বাজে কথা না বলে যাও । দুর হও । সবাইকে ডাকবো এখনি ।‘
– হা হা হা । এ কথায় অভি খুব হাসল । ‘ডাকবে ? ডাকো ? শুধু রাতে নয় , দিনেও যদি মাঝ রাস্তায় দাড়িয়ে আমাদের বিরুদ্ধে কিছু বল তো দেখবে আমাদের নাম শুনলেই মুহূর্তেই সব ফাঁকা । কোথাও কেউ নেই । দেখবে নাকি একবার পরিক্ষা করে ? বাজে কোথায় সময় নষ্ট করতে চাই না । যা দেখাতে এসেছি তা দেখে নাও ।‘ ও পেছনে তাকিয়ে শিস বাজাল । অমনি অন্ধকার চিরে আলোয় বেরিয়ে এলো বাদল ।
– আমি তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছি কি দেখাবে ওরা ? ভালো করে তাকালাম । দেখলাম । দেখে আমি একেবারে বজ্রাহত। বাদল সুমির হাত ধরে আছে । সুমির হাত বাঁধা । মুখে রুমাল বাঁধা । সুমি হাত ছাড়াতে ছটফট করছে । ও আতঙ্কে কাঁপছে । সেই সাথে আমিও চরম আতঙ্কিত হয় তাকিয়ে আছি । আমি ওদের দুজনের দিকে তাকালাম । কুৎসিত হাসি হাসছে ওরা ।
– অভি খুব স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল , ‘তোমার শাস্তি হিসাবে আজ আমরা লাল ফিতা নিল ফিতাকে নিয়ে যাচ্ছি ম্যাডাম, আজকে ও আমাদের আদর যত্ন দেখভাল করবো । আজকের মেহমান ।‘
– ওর পেছন থেকে বাদল বলল , ‘মেহমানদারী , সুন্দরী মেডাম । মেহমানদারী । তোমার মত কৃপণ নই যে মেহমানদারীকে ভয় পাবো । ‘ কথাটা বলেই খিক খিক করে হাসতে লাগলো ।
‘-ছাড়ো , ছাড়ো ওকে।‘ আমি ফ্যাস ফ্যাসে গলায় বললাম । অভি মুখ বাকা করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো । এবার আমি মিনতি শুরু করলাম। কান্নায় আমার গলা বুজে আসছিলো। ‘প্লিজ, ওকে ছেড়ে দেও, প্লিজ।‘
– ওরা আমার কোন কথাকেই পাত্তাই দিলো না । আমার ধমক আমার কান্না মিনতি অনুরোধ আমার ভয় দেখানো। সবই ওদের কাছে ছেলেমানুষি যেন ।
– হটাত করে অভি গম্ভীর হয়ে বলল , ‘চুপ করো , কথা শোন । আজ আমরা যাচ্ছি লাল ফিতা নিল ফিতাকে নিয়ে ।আর তোমাকে সাত দিন সময় দিচ্ছি । এর মধ্যে যদি মত না পালটাও তাহলে তুমি ভাবতেই পারবেনা আর কি কি করবো । আর একটা কথা, যদি তুমি এ বিষয়ে কাউকে কিছু বল তাহলে—ও হাত দিয়ে কুচি কুচি করে কাটার ভঙ্গি করলো। ‘এই ভাবে । হা এই ভাবে, লাল ফিতা নিল ফিতাকে টুকরো করবো । আর ফিতা গুলো তোমাকে উপহার হিসাবে পাঠিয়ে দেব । তারপর তুমিও আমাদের জন্য লাল নিল ফিতা তোমার ওই লম্বা চুলে বেঁধে নেবে ।‘ কথা গুলো বলেই অভি নিজেই জানালার পাল্লা টেনে বন্ধ দিলো ।
– আমি নিরুপায় রাগে ক্ষোভে ভয়ে লজ্জায় আধ্মরা হয়ে আছি । এখন কি করবো ? কি করা উচিত ? কাকে বলবো ? থানায় যাবো ? আব্দুল চাচার বাড়ি যাবো ? সুমিদের বাড়ি যাবো ? বেরিয়ে কারও সাহায্য চাইবো ? আর বাইরে যাবোই বা কোন সাহসে । বাইরে আজ কে কোথায় ওঁত পেটে আছে কে জানে ? আর কিছু করতে গেলে সুমিকে না মেরে ফেলে । হয়তো আমাকেও ।
– কত কি ভাবছিলাম । কত উপায়, কত পথ । যেটাই ভাবছিলাম সাথে সাথে চাচির কথা গুলো মাথায় আসছিলো । চাচির কথায় যদি সত্যতা একটুও থাকে এরা খুব ভয়ঙ্কর একটি দল । এ গাঁয়ের অলিখিত স্বেচ্ছাচারী রাজত্ব ওদের । কাছের শহর আর কাছের থানাটিও বহু দূরে । আর কাছে থাকলেই বা কি এমন ফায়দা হতো তাতে । পুলিশ বাবারা ওদের কাছে ঘন ঘন আপ্যায়িত হত আর পকেট ভর্তি করতো । আমার মত সামান্য এক স্কুল শিক্ষয়িত্রী কি করতে পারে ? আর কতটুকু করার ক্ষমতাই বা রাখে ।
– সারাটি রাত জুবু থুবু হয়ে বসে বসে ভাবলাম । আমি অনেক পথেই যেতে পারি । কিন্তু তাতে সফলতার সম্ভাবনা জিরো । যাদের হাতে আইন এবং অগুনিত টাকা তারাই তো এলাকার একচ্ছত্র হুকুমের মালিক হতে পারে মন চাইলেই । যাদেরকে প্রচলিত নিয়মে কিছু করা না যায় তাদেরকে কে কিভাবে কি করার ক্ষমতা রাখে । তাদেরকে কিছু করতে হবে একেবারে কঠিন কোন পদ্ধতিতে । এই দূর প্রত্যন্ত গ্রামে ওদেরকে এসে রুখে দেবার ক্ষমতা কি কারও আছে ?
– ঘুম তো দূর , দমবন্ধ অস্থিরতায় সময় যেন স্থির হয়ে আছে ।
– খুব ভোরে । তখনও আলো ফোটেনি । দরোজার বাইরে কারও কান্নার আওয়াজে চমকে লাফিয়ে উঠলাম। কণ্ঠ শুনে মনে হল সুমি । দরজা খুলতে সাহস হল না । খুব কাঁদছে । এ সুমিই । হা এটা ওরই কণ্ঠ । সাবধানে জানালা দিয়ে দেখলাম । হা সুমিই তো । বসে আছে মাটিতে । কাঁদছে । চারিদিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম আসে পাশে কেউ নেই । আমি খুব সাবধানে ভয়ে ভয়ে দরজা খুলে সুমিকে টেনে ঘরে ঢুকিয়ে দ্রুত দরজা লাগিয়ে দিলাম । ওকে খাটে বসিয়ে আহত বিস্ময়ে দেখলাম, ওর সে সকল চিহ্ন গুলো । যা বয়ান করে তার উপর যৌন নির্যাতনের দুর্বিষহ কাহিনী । যা একটি মেয়েকে সারা জীবনের জন্যেই হয়তো শারীরিক মানুষিক আত্মিক ভাবে শেষ করে দেয় । অথর্ব করে দেয় । হৃদয় মনকে এমনই ছিঁড়ে ছিঁড়ে রাখে যে সেই দুঃস্বপ্ন গুলো দেখতে দেয় না নতুন কোন মধুময় স্বপ্ন ।
-ওর সাথে সাথে আমিও কাঁদছিলাম। ভাবলাম সফুরা আসুক , তিনজন একসাথে থানায় যাবো । এবং যেভাবেই হোক আমি লড়বো । সুমির হয়ে লড়বো । অবশ্যই লড়বো । ওকে সুবিচার দিবই । ওকে নিয়ে শহরে যাবো । যতটুকু করার তা করবো । তার চেয়ে বেশি করতে চেষ্টা করবো ।
-সকালে সফুরা যখন কাজে এলো আমি কিছু বলতে যেতেই ও একপলকে সব বুঝে গেলো । দ্রুত ও দরজাটা বন্ধ করে সুমিকে জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কাঁদতে লাগলো । আমি ওকে বললাম চল থানায় যাই । কথাটা শুনে সুফুরা কান্না থাময়ে মিনতি ভরা গলায় যা বলল , তার অর্থ এই দাঁড়ায় যে , সফুরা কিছুতেই এম পির লোকদের সাথে ঝামেলায় যেতে রাজি নয় । কারন ও এ বিষয়ে নিশ্চিত যে ও এম পির লোকদের বিরুদ্ধে কিছু করতে গেলে তারা ওর পুরো পরিবারকে শেষ করে দেবে । ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দেবে । গ্রাম ছাড়া করবে । কিম্বা কোন মিথ্যা মামলায় ফাসিয়ে দেবে । তার উপর মেয়ের সম্মান । তার তো বিয়ে দিতে হবে । মেয়ের বদনাম বা নিজের ক্ষতি , কোনটাই ও চায় না ।
– তারপরও আমি জোরাজুরি করছি । এতো বড় অন্যায়ের পরও চুপ থাকা বা ওদেরকে হাতে নাতে ধরিয়ে দেবার সুযোগটা হাতছাড়া করাটা মারাত্বক ভুল । বেশি জোরাজুরি করতেই সফুরা আমার পা জড়িয়ে ধরল । অনুনয় করতে লাগলো আমি যেন কিছুতেই এ ব্যাপারে কিছু না করি । এবং কখনওই মুখ না খুলি । আমি সফুরার হাত ধরে কিছু বলতে চাইলে ও ঝটকা মেরে আমার হাত ছাড়িয়ে কঠিন কণ্ঠে বলল, ‘টিচার আফা আপনের আর আমার মাইয়ার জন্যি কিছু ভাবতে হইব না । আমার মাইয়ার ভালো আমি বুঝি । আপনে কে ?’ খুব রেগে কথাগুলো বলে ও আহত সুমিকে টেনে নিয়ে চলে গেলো ।
– আমি কিছু করতে গেলে ওর মেয়ে নয় শুধু ওর পুরো পরিবারই ভুগবে । আর আমি যেন ওর মেয়ের ভবিষ্যৎ নষ্ট না করি । এই যদি ওর বক্তব্য হয় তাহলে ওর দোষ কি দেয়া যায় ?
– এম পি সাহেব পারিবারিক ভাবেই বহু আগেই এরা অর্থ আর ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত । নৈরাজ্য সৃষ্টি করা ছেলেগুলো উনার জ্ঞাতে কি অজ্ঞাতে এসব করছে এটা জানা কঠিন । ওরা মা মেয়ে চলে যেতেই আমি ভাবতে বসলাম সামনে যে বিপদ আমার উপর আসছে তার কি করা । কিছু তো করতেই হবে ।
– ভাবতে ভাবতেই সহসাই একটা উপায় মাথায় এলো। কয়েক দিনের ছুটি নিলাম স্কুল থেকে । ওদেরকে নিমন্ত্রন করবো । অতিথি হবার জন্য যারা এতটা মরিয়া, এতটা হা পিত্যেশ, এতটাই নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী তাঁদের স্পেশাল নিমন্ত্রন পাবার শতভাগ । তাই গঞ্জে যেতে হবে কিছু কেনাকাটার জন্য । স্কুল থেকেই গঞ্জে যাবার পথেই দুই শয়তানকে পেলাম । আমাকে দেখেই বলল, ‘ কি সুন্দুরি কেমন আছো ? কোন খবর আছে ?’
– নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে । শান্ত গলায় বললাম, ‘পরশুদিন রাতে তোমাদের নিমন্ত্রন ।‘
– কথাটা এমন আচমকা শুনে ওরা হকচকিয়ে গেলো । কিন্তু আমার শান্ত অসহায় আচরন দেখে ওরা খিক খিক হাসতে লাগলো । ভাবখানা এমন যে, কি ? উপায় ছিল ? পথে তো এলেই মিছেই কথা খরচ করেছো । আমি বললাম, ‘পরশু রাতে এসো । তবে আমার বাসায় নয় ।‘
– ‘এ কেমন দাওয়াত ? বাসায় নয় তো কোথায় খাওয়া দাওয়াত ? ‘
– আমি মিনতির সুরে বললাম, ‘দেখো, আমি একজন টিচার। আমার বাসায় তোমরা আস এটা সেটা পান করো এটা ঠিক নয় । তোমরা অন্য জায়গা দেখো । আমি টিফিন বাটিতে করে তোমাদের জন্য খাবার নিয়ে আসবো । ওখানেই আপ্যায়ন হবে তোমাদের । তাই কিছু ভালো বাজার আনতে গঞ্জে যাচ্ছি ।‘
– ওরা মহা খুশিতে আমাকে এক পরিচিতের বাড়ি চিনিয়ে দিলো । মালিক সপরিবারে কয়েকদিনের জন্য কোথাও গিয়েছে । তবে আমার বাসা হলেই যে ওরা স্বস্তি পেতো । সেটা বার বার বলতে লাগলো ।
– আজ আমি বদমাসদের জন্য রাঁধছি । এছাড়া আর কোন পথ নেই । অনেক ভেবেই এটা করা । এ গাঁয়ের বিভীষিকা ওদেরকে যখন ফেরাতে পারবোনা তখন এটাই পথ । খুব সুন্দর করে কিছু আইটেম রান্না করে ফেললাম । কাল চেনা পরিচত সবাইকে বলেছি রাতেই আমি কিছুদিনের জন্য বাড়ি যাচ্ছি । সবাই জানে আমি চলে গেছি । – – – আমি বদমাশ গুলোর ওখান থেকে হয়ে বাড়ি চলে যাবো । মন খুব খারাপ আমার । অনাকাঙ্ক্ষিত এক ঘটনায় জড়িয়ে যাচ্ছি আমি । মা কে খুব মনে পড়ছে । মায়ের কোলে মাথা রেখে কাঁদতে পারলে একটু যেন শান্তি পাবো ।
-তখন বেশ রাত । গ্রামের জন্য এটা অনেকবেশি রাত । পুরো গ্রাম যেন ঘুমিয়ে আছে । টিফিন বাটিতে খাবার ভরে দুটো টিফিন বাটি নিয়ে সবার অলক্ষে নির্ধারিত বাড়িটির সামনে এসে হাজির হলাম । চারিদিক ভীষণ নির্জন আর অন্ধকার । এমনিতেই নয়টা না বাজতেই গ্রাম ঘুমিয়ে পড়ে । এখন তো এগারোটা প্রায় ।
আজও কেন এমন হয় পর্ব—৬
– ঘরের দরজা খোলা । শয়তান গুলো আমার জন্যেই খুলে রেখেছে হয়তো । আমি ঢুকতেই বাদল দরজাটায় ছিটকিনি লাগিয়ে দিলো । আমি দেখলাম ঘরে একটি খাট । খাটের দুইপাশে আলমারি আর টেবিল । খাটের সামনে মেঝেতে মাদুর পাতা । ওরা মেঝেতে বসে বসে মদ গিলছিল । আমাকে দেখে দিগুন উৎসাহে দুজনে খাটে হেলান দিয়ে আয়েশ করে ধূমপান ও শূরা পান চলছিলো । ধোঁয়ায় ঘর ভরে আছে । দুর্গন্ধ আর ধোঁয়ায় আমার কাশির সাথে বমিও আসছিলো ।
– মুখে বিজয়ের হাসি হেসে অভি বলল, ‘এলে তাহলে ।’
-‘হুম , বুদ্ধি যত জলদি হবে তত ভালো হবে , মনে রেখো ।’
-‘যেটা করা উচিত সেটাই তো করে ফেলা চাই । ‘ বলে কাশতে লাগলাম । ইসস কি ধোঁয়া যে খেতে পারে ।
-‘কাশি হচ্ছে তাই না ? সুন্দরী এমন ধোঁয়া সহ্য তো করতেই হবে । ‘এসো বস ।‘ ওর পাশে বসতে ইঙ্গিত করলো অভি ।
-‘লম্বু বলল, টানতেও হবে । এই নাও একটু খেয়েই দেখো দারুণ জিনিস ।‘ বলে ও ওর হাতের সিগারেটটা আমার দিকে বাড়িয়ে ধরে ।
-আমি স্পর্শের দুরত্বে বসে কাশতে কাশতে বললাম ‘সময় দাও, তোমাদের চেয়ে বড় স্মোকার হয়ে দেখিয়ে দেব । আজ থাক ।’ মনে মনে ভাবছি ওদেরকে কিভাবে সামলাবো । ওরা ক্রমশই মাতাল হচ্ছে । আর আমার ভেতর ভয় বাড়ছে । আমি যথেষ্ট সাহসী মেয়ে । তাই এখানে আসতে পেরেছি । জীবন মান হাতে নিয়ে । তারপরও–।
– ‘কি সুন্দরী , এতো দূরে বসে কেন ? কাছে এসো, একটু ঢেলে টেলে দাও, তোমার জন্য এতদিন অপেক্ষা করেছি , একটু তো রহম করো । হা হা হা । হা হা হা । দুজন কি কি যে বলছে আর হাসছে ।
– আমি সহাস্যে বললাম, ‘নিশ্চয়ই , আগে খাবারটা খেয়ে নাও ।‘
-‘এতো ভালো করে রেঁধেছি ,শুধু তোমাদের জন্য । সেই কোন সকালে গঞ্জে গিয়েছি । কত কি এনে রেঁধেছি । গরম জিনিসটা ঠাণ্ডা হয়ে যাবে যে । এতো কষ্ট করে কি হোল বল ?’ মিষ্টি হেসে বললাম ,’ তিনজন একসাথে ড্রিংক করবো তারপরে ,প্লিজ ।‘
-অভি বলল, ‘না না , পরে খাবো । আগে তোমার সাথে বসে কথা বলি । খাবার তো জরুরি নয় ,আসল জিনিস তো তুমি ।‘
-আমি কৃত্তিম দুখের ভাব করে বললাম, ‘জানি তোমরা পয়সাওয়ালা আমার হাতের খাবার কি আর ভালো লাগবে ?’
– ‘ আরে তা নয় , কি বলছ । আয় তো অভি খেয়ে নি । সেটাই ভালো ।‘ বাদল বলল । ‘খিদেও পেয়েছে । কই সাজিয়ে দাও ।‘
-আমি মিষ্টি একটি হাসি দিয়ে ভেতর থেকে প্লেট বাটি এনে খুব যত্ন করে ওদেরকে আপ্যায়ন করতে লাগলাম । ওরা যখনই না বলছে অমনি আমি আরও এক চামচ খাবার পাতে তূলে দিতে লাগলাম । অভি খেতে খেতে অন্য টিফিন বাটির দিকে ইঙ্গিত করে বলল, , ‘ওটায় কি ? ওটা তো খুললে না । ওখানে আবার কি খাবার ?’
-‘আমার হৃৎপিণ্ডে কেউ যেন খামছে ধরল । কষ্টে নিজেকে সামলে আমি মধুময় হেসে বললাম, ‘ ওটা ? ও আচ্ছা । আমার প্রিয় গেস্ট, তোমরা কি জানো না, প্রিয়জনকে খাবারের পর কি দিতে হয় ?’
-ওরা বোকার মত তাকিয়ে থাকলো চোখে প্রশ্ন নিয়ে । আরে অবুজ ভালো মানুষেরা তোমাদের জন্য পায়েস আর মিষ্টি এনেছি । খাবারের পর সেটা দিচ্ছি ।‘
-‘ভালো মানুষ ?’ কথাটা অভি হজম করতে পারল না । নিজেই নিজের প্রতি সন্দেহে কনফিউজ চোখে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো । কিন্তু মাতাল মন মাতাল শরীর বেশি চিন্তা করতে পারল না ।
-‘ বাহ বাহ ‘ । বাদল খুব খুশির গলায় বলল , ‘শিক্ষিত মানুষের কাজই আলাদা । কেমন করে কি করা উচিত ওরা ভালো জানে ।‘
-‘হুম ঠিক । এবার অভি বলল, চমৎকার খাবারের সাথে যদি চমৎকার সুন্দরী নারী থাকে তো তার তুলনা হয় না । এর চেয়ে সুখ আর কি হতে পারে ?‘ আচমকা হাত বাড়িয়ে আমার হাত টেনে ধরে বলল , ‘তুমিও খেতে বসে যাও সুন্দরী । সত্যি চমৎকার রেঁধেছ ।‘
– ওদের সাথে খাবো না বলেই আমি বাসায় আগেই খেয়ে নিয়েছিলাম । আমি কষ্টে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম , ‘আজ রান্নার খাটুনিতে খুব খিদে পেয়েছিলো তো খেয়ে এসেছি । তোমরা মুল খাবারটা শেষ করো । মিষ্টি একসাথে খাবো ।‘ আর কিছু না বলে দুজন সানন্দে গোগ্রাসে গিলছে । মদ আর খাবার ।
– আমি মাদুরের এক কোনায় বসে বসে ওদের দেখছি । আর মনে মনে মিনিট গুনছি । পাঁচ মিনিট , দশ মিনিট , পনর মিনিট । দুজনেরি হাত আস্তে আস্তে স্লো হয়ে আসছে । মুখে খাবার দিতে গিয়েও পারছে না । ঢলছে । কাঁপছে ।
– নিজেদের এই অবস্থা দেখে ওরা আমার দিকে বোকার মত তাকাল । ‘কি হল , হাত কাঁপছে কেন ? ম্যাডাম কি খাইয়েছ ? কি ছিল খাবারে ? শক্তি পাচ্ছি না কেন ?’ একে অপরের দিকে তাকাচ্ছে , প্রশ্ন করছে কি হচ্ছে ?
– আমি নিরাপদ দুরত্বে বসে আছি । হাত বাড়িয়ে আমাকে ছুঁতে চাইলো । ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে আসার কারনে হাত তুলতে পারছিল না । ভয়ংকর খুনে চোখে তাকিয়ে আছে ওরা ।
– হাসছিলাম । ঘৃণার হাসি । প্রতিশোধের হাসি । বিজয়ের হাসি । হাত বাড়িয়ে ওরা আমাকে ধরতে চাইলো বার বার । আমি নাগালের বাইরে ঠায় বসে তাকিয়ে থাকলাম ঠাণ্ডা চোখে । ওরা এক সময় ঢলে পড়লো জ্ঞান হারিয়ে ।
-ওদের চেতনা নেই । এবার আমাকে দ্রুত কাজ সারতে হবে । অপর টিফিন বাটিটা খুললাম । ভেতর থেকে বের করলাম দড়ি, স্কচ টেপ কাজল পেন্সিল । এবার ওদের শরীর থেকে কাপড় গুলো খুলে নিলাম । লজ্জায় ঘৃণায় গা রি রি করছে আমার । এবার দড়ি দিয়ে দুজনের হাত পা বেঁধে ফেললাম । খাটের দুই পায়ের সাথে দুজনের কোমর বাধলাম । এবার একটি দড়ির টুকরো নিয়ে দড়ির একমাথা দিয়ে অভির এবং অন্য মাথা দিয়ে বাদলের বিশেষ অঙ্গকে বাধলাম ।
– এরপর কাজল পেন্সিলটা হাতে নিয়ে বসলাম । ওদের সামনে । পানি ছিটিয়ে অপেক্ষা করছিলাম ওদের সচেতন হবার ।
– ওরা আস্তে আস্তে চেতনা ফিরে পেতে শুরু করলো । এবং যখন বুঝল যে , ওদের সাথে কি করা হয়েছে, আমাকে ওদের ডিকশনারিতে যত গালাগালি আছে সব উজাড় করে দিলো । তার পর ভয় । ওদের কতোটা ক্ষমতা আছে আর ওরা কি কি করতে পারে তার ফিরিস্তি দিতে লাগলো ।
– আমি নির্বাক বসে আছি । এতো কিছু বলেও কাজ হচ্ছে না দেখে কাকুতি মিনতি শুরু করলো । অবশেষে চিৎকার জুড়ে দিলো ।
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ