āϰāĻŦিāĻŦাāϰ, ⧍ā§Ē āϏেāĻĒ্āϟেāĻŽ্āĻŦāϰ, ⧍ā§Ļā§§ā§­

2289

অন্তিম প্রান্তে বসন্ত
লেখক :- বিবাগী শাকিল
=================
.
জীবনের আঁকা বাঁকা রাস্তায় কত মানুষের সাথে দেখা হয়ে যায়। হঠাৎ করেই পরিচয় হয়ে যায়। কিছু কিছু পরিচয় পর্ব এত অলৌকিক ভাবে হয়ে যায় যেটা বিশ্বাসও করা যায় না। জীবনটা কল্পনার দেশ নয় কিন্তু মাঝে মাঝে কল্পনার চেয়েও বেশি রোমাঞ্চকর হয়ে যায়। জীবনের টার্ণির পয়েন্ট টা খুব অদ্ভুত।
.
এক রাতে রাস্তায় বসে ছিলাম। মন খারাপ ছিল। কারন গতদিনই সাথীর বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। সেজন্য প্রচন্ড মন খারাপ। সিগারেট খাচ্ছিলাম আর গান শুনছিলাম। আমি গ্রামে থাকি। আর তখন সময় ছিল পৌনে এগারোটা। গ্রাম্য পরিবেশে পৌনে এগারোটা অনেক গভীর রাত। আর আমি একটু একা একা থাকতে পছন্দ করি। একটু না, আমার একা একা থাকতে অনেক ভালো লাগে। রাস্তায় বসে গান শুনছিলাম আর সিগারেট খাচ্ছিলাম। চাঁদনি রাত ছিল। রাস্তায় কারো পায়ের শব্দ শুনে আমি ঘুরে তাকালাম। একটা মেয়েলী অবয়ব দেখতে পেলাম। ধীর পায়ে হাঁটছে। এত রাতে একটা মেয়ে এই রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। ব্যাপারটা মোটেই স্বাভাবিক না। এমনিতে এই রাস্তা টা এত ভালো না। আরেকটু সামনে এগিয়ে গেলে একটা পুল দেখতে পাওয়া যায়। ঐ পুলের আশে পাশে কয়েকটা ঝোঁপঝাড় আছে। ঐ ঝোঁপের আড়ালে আমার গ্রামেরই কিছু ছেলে লুকিয়ে থাকে। আমারই বন্ধুবান্ধব তারা। রাস্তা দিয়ে একা কেউ গেলে তাদের ধরে যা টাকা পয়সা থাকে নিয়ে নেয়। ঘটনাটা সবারই জানা। কিন্তু হাতেনাতে ধরতে পারেনি তাই কেউ কিছু করতে পারত না। মেয়েটা বোধ হয় এই কথা জানে না। জানলে নিশ্চয়ই এই রাস্তা দিয়ে যেত না। আমাকে দেখে মেয়েটা একটু ঘাবড়ে যায়। সেও একা আমিও একা। ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক। আমি বসা থেকে উঠলাম। মেয়েটা একটু থমকে যায়। কি যেন ভেবে আবার সামনের দিকে হাঁটা শুরু করে। বোরকা পরা মেয়ে। হিজাব দ্বারা পুরো মুখ ঢেকে রেখেছে তাই চেহারা দেখতে পাইনি। মেয়েটা আমার সামনা সামনি এসে দাঁড়ায়। আমি কিছু জিজ্ঞেস করতে যাব তার আগেই মেয়েটা বলে
-- আসসালামু আলাইকুম।
- ওয়ালাইকুম আসসালাম।
-- ভাইয়া, আপনি কি এই গ্রামের?
- হ্যা, কেন?
-- না মানে, রাত অনেক হয়ে গেছে। বাড়িতে যেতে হলে আরো প্রায় ৪০ মিনিট হাঁটতে হবে। একা একা যেতে ভয় লাগছে। যদি একটু সাহায্য করতেন খুব ভালো হত। প্লিজ ভাইয়া একটু সাহায্য করবেন?
- আপনার বাড়ি কোথায়?
-- এইতো এই গ্রামের শেষে আরেকটা গ্রাম আছে। তার পরের গ্রামেই আমাদের বাড়ি।
- ঠিক আছে চলুন।
.
আমি আর মেয়েটা হাঁটা শুরু করলাম। পাশাপাশি হাঁটছি। কখনো আগে এরকম পরিস্থিতিতে পড়িনি তাই কেমন যেন লাগছে। হাঁটতে হাঁটতে পুলটার সামনে চলে এলাম। ঝোঁপের আড়াল থেকে কয়েক জন বের হয়ে আমাকে আর মেয়েটাকে ঘিরে ধরল। আমার হাসি চলে আসল। আমারই বন্ধুবান্ধব আসল আমাকেই ছিনতাই করতে। মুখ বেঁধেছিল তারা। কিন্তু আমি তো তাদেরকে চিনিই। আমি বললাম
- সুজন..
-- কিরে তুই?
- হ আমি, এইযে আপুটাকে একটু এগিয়ে দিচ্ছি। একা যেতে ভয় পাচ্ছে।
-- কোথায় বাড়ি উনার?
- এইতো রসুলপুর।
-- যেতে পারবি তো?
- হ্যা পারব।
-- আচ্ছা যা।
- ওকে....  আর শোন পরিচিত কাউরে টানা দিস না। অপরিচিত কাউকে পেলে তবেই টানা দিস।
-- আচ্ছা, যা তুই।
.
আমি হাসতে হাসতে আবারো হাঁটা শুরু করলাম। মেয়েটা এতক্ষণ কোন কথা বলেনি। আর একটু আগে ও অনেক ভয় পেয়েছিল। এখন ভয়টা কেটে গেছে। আর আমাকে জিজ্ঞেস করল।
-- টানা কি?
- ছিনতাই। আমরা গ্রাম্য ভাষায় টানা বলি আর কি।
-- ও।
- আচ্ছা আপু, আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
-- জ্বি, বলেন।
- এত রাতে আপনি কোথা থেকে আসছেন?
-- আসলে, আমার বাড়িতে বিয়ের জন্য খুব চাপ দিচ্ছিল আমাকে। দিন তারিখও ঠিক করে ফেলেছিল আমার মত ছাড়াই। আমিও কিছু করিনি। শুধু নির্ধারিত তারিখ এর দুদিন আগে আমি বাসা থেকে পালিয়ে যাই। বান্ধবীদের বাসায় থাকি। আজ এর বাসায় কাল ওর বাসায় এরকম করে পাঁচদিন ছিলাম যাতে খুব সহজে আমাকে না পায়। তারিখটা পেরিয়ে গেছে তাই এখন ফিরে যাচ্ছি।
- কি বলেন, আপনার বাড়ি রসুলপুর তাহলে আপনার বান্ধবীরাও নিশ্চয়ই সেখানকার হবে।
-- জ্বি আবার না, কলেজে যেহেতু পড়ি বান্ধবীতো বিভিন্ন এলাকার থাকবেই।
- কিসে পড়েন?
-- অনার্স করছি। ফার্স্ট ইয়ার।
- ভালো।
-- আপনি?
- আমি পড়িনা। ইন্টার পাস করেছি ছয় বছর আগে। তারপর আর পড়িনি।
-- ও।
- আচ্ছা আপনার ভয় করেনি আমার কাছে সাহায্য চাইতে। আমি তো আপনার ক্ষতি করলেও করতে পারি।
-- সত্যি বলতে কি, ভয় অনেক করেছে। সেজন্যই আপনি কিছু বলার আগে আমি আপনাকে সালাম দিয়ে দিই। আর যাই হোক, একজন প্রকৃত মুসলিম তো সালামের মর্যাদা নষ্ট করে না।
- তা ঠিক। আচ্ছা আপনি একটু সামনে হাঁটেন।
-- কেন? পিছন দিকে পালিয়ে যাবেন নাকি।
- আরে না না। আপনাকে আপনার বাসায় পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব আমার।
-- তাহলে?
- কিছু মনে করবেন না। আমি ধুমপায়ী।
মেয়েটি কিছু না বলে কয়েক পা সামনে এগিয়ে যাই। ইচ্ছে করলে আমি সামনে হেঁটে ওকে পেছনে ফেলে সিগারেট খেতে পারতাম কিন্তু বাতাসের কারনে ধোঁয়াগুলো মেয়েটার দিকে যাবে তাই ওকে সামনে দিলাম। আমি চুপচাপ ভাবে সিগারেট খেলাম। খেয়ে আবার একটু এগিয়ে এসে মেয়েটার সাথে তাল মিলালাম। মেয়েটা জিজ্ঞেস করল
-- সিগারেট খান কেন?
- এমনিই ভালো লাগে।
-- কিন্তু এটা তো আপনার জানার কথা যে ধুমপান ক্যান্সার এর মুল কারন। এটা ক্ষতিকর।
- ক্ষতিকর তো ভালোবাসাও। কয়জন এর থেকে বিরত থাকে বলুন।
-- মানে কি, ভালোবাসা কোন দিক থেকে ক্ষতিকর। পুরো পৃথিবীটাই তো ভালোবাসার উপর নির্ভর করে আছে।
- আমি বিশ্বাস করিনা। ভালোবাসলেই কষ্ট পেতে হবে এটা দুরারোধ্য।
-- পেয়েছেন নাকি।
আমি জবাব দিলাম না। সাথীর ব্যাপারটা এখানে টানতে চাইনা। কিন্তু মেয়েটা আবারো জিজ্ঞেস করল
-- কি হল বললেন না যে?
- কি বলব?
-- কখনো ভালোবেসে কষ্ট পেয়েছেন?
আমি উত্তরটা দিতে পারলাম না। কারন আমার ফোনে একটা কল আসে। রিংটোন সাথীর কন্ঠের একটা গান ছিল। কলটা যদিও রিসিভ করিনি তবে রিংটোন শুনে মেয়েটা আমাকে বলল
-- কার গলা এটা? ভালোই তো গায়। চেষ্টা করলে গায়িকা হতে পারবে।
- সাথী। আমার ভালোবাসা ছিল।
-- ছিল? তার মানে অতীত কাল। বর্তমানে নেই?
- না। কাল ওর বিয়ে হয়ে গেছে।
-- ও সে জন্যেই বারবার বলছিলেন ভালোবাসলে কষ্ট পেতে হয়।
- পেয়েছি বলেই তো বলেছি। না পেলে তো আর বললাম না।
-- আমাকে পুরো কাহিনীটা বলবেন?
- আচ্ছা সংক্ষেপে বলছি। শুনুন..
সাথীর সাথে আমার ছয় বছরের রিলেশন ছিল। বলতে পারেন যখন পড়ালেখা ছেড়েছি তখন থেকেই সম্পর্কটা শুরু হয়। সাথী তখন কলেজে ভর্তি হয়। ভালোবাসতাম দুজন দুজনকে। কিন্তু জানেনই তো ভালোবাসার সিনেমায় সবসময় ভিলেন হয় মেয়ের বাবা বা ভাই অথবা ছেলের বাবা,মা। এই ক্ষেত্রেও তাই হল। সাথীর বাবার অনেক টাকা ছিল তাই তার অনেক অহংকার। আর আমার মা অহংকারি পরিবারের কাউকে নিজের ছেলের বউ বানাতে চায়না। আর সেজন্য আম্মু আমাকে কসম দেয় আমি যাতে আর কখনো প্রেম না করি। উনি ভালো দেখে একটা মেয়ে আমার বউ করে আনবে। আর এই কারনে আমি এখানে আর সাথী শ্বশুড় বাড়িতে।
.
কথাগুলো বলে একটু বিরতি নিলাম। সেই সাথে হাঁটছি। মেয়েটা আমার প্রেমের কাহিনী শুনে বলল
-- তাহলে এই কারনে ভালবাসার প্রতি আপনার এত অনীহা?
- কাল পর্যন্ত ছিল না। কিন্তু এখন থেকে তো থাকবেই। আম্মুর আদেশ তো মানতে হবে।
-- মায়ের বাধ্য ছেলে তো আপনি।
- অতটাও না। আচ্ছা একটা সত্যি কথা বলবেন?
-- অবশ্যই, বলেন।
- আপনি শুধু বিয়ের জন্যেই পালিয়েছেন নাকি কারো সাথে...
মেয়েটা এই প্রথম শব্দ করে হাসল। এমনিতেও মেয়েটার কন্ঠ সুন্দর ছিল তার উপর শব্দ করা হাসি। খুব ভাল লেগেছিল আমার। মেয়েটি বলল
-- আরে না না, আমি কখনো কাউকে ভালোবাসিনি আর কি কারো সাথে পালাব।
- ও আচ্ছা। তাহলে তো ভালোই।
.
কথা বলতে বলতে আমরা রসুলপুর এসে গেলাম। ওদের বাড়ির সামনে। মেয়েটা বলল
-- ভাইয়া, এইটা আমাদের বাড়ি। আপনাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।
- না না এমন কেন বলছেন। একজন মানুষ হিসেবে এটা আমার কর্তব্য।
-- আচ্ছা ভাইয়া.. আপনার নাম টা তো জানা হল না।
- ও হ্যা.. আমিও তো আপনার নাম জানিনা। আমার নাম হৃদয়।
-- আমি সাফিকা ইসলাম।
- খুব সুন্দর নাম।
-- আচ্ছা আসি। বেঁচে থাকলে আবার দেখা হবে।
- আচ্ছা। আসি।
.
বলেই আমি পিছু ফিরলাম। বাড়িতে যাবার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম। কয়েক কদম এগিয়ে যেতেই মেয়েটি আবার আমার কাছে ফিরে আসে। আমি বললাম
- কি হল?
-- আমার খুব ভয় করছে। আপনি একটু আসুন না। বাবা মার সাথে আপনি একটু কথা বলেন।
- দেখুন আমি আপনার পরিবারের অপরিচিত। আমি এখানে কথা বললে কি লাভ?
-- যাই লাভ হোক না কেন। আপনি আসলে আমি উপকৃত হব।
- আচ্ছা চলেন।
.
সাফিকার বাসার সামনে গিয়ে দাড়ালাম। দরজায় টোকা দিয়ে বললাম
- কেউ আছে?
আমারই বয়সের একটা ছেলে এসে দরজা খুলল। সম্ভবত সাফিকার ভাই হবে। আমি বললাম
- ভাইয়া, আপনার বাবা মা কে একটু ডাক দিবেন?
-- কেন?
- দরকার আছে।
ছেলেটা তখন তার বাবা মাকে ডাক দিল। তারা সবাই আসল। সাফিকা এতক্ষণ উঠোনের এক কোণে লুকিয়ে ছিল। তার বাবা মা আসাতে আমি সাফিকাকে বললাম
- আপনি যান। আমি আপনার পরিবারের সাথে কথা বলছি।
সাফিকা নিশ্চুপ ভাবে ঘরে চলে যায়। তার বাবা মা ভাই ওকে দেখে মুখের ভাব ভঙ্গি বদলে যায়। আমি বললাম
- আংকেল,আন্টি আর ভাইয়া... প্লিজ এখন আপনারা রেগে যাবেন না। আগে আমার কিছু কথা শুনুন।
কিন্তু মেয়েটির বাবা আমার কথা শুনলেন না। তিনি রেগে গিয়ে বললেন
-- তুমি আমাদের পারিবারিক ব্যাপারে নাক গলানোর কে?
আমি তখন সাফিকার ভাইকে বললাম
- ভাইয়া প্লিজ আগে আপনি আমার কথা শুনুন।
ছেলেটা তখন তার বাবাকে চুপ করায়। সাফিকা তখন তার রুমের দরজার কোণে দাড়িয়েছিল। তখনও বোরকা পরা অবস্থায় ছিল। ছেলেটি বলল
-- ভাই আপনি কি বলবেন বলেন।
তখন আমি বললাম
- ভাইয়া.. আমি আপনার বোনের কাছে সবকিছু শুনেছি। আপনারা ওর মত ছাড়াই ওকে জোর করে বিয়ে দিতে চাচ্ছিলেন। যার জন্য সে বাসা থেকে পালিয়ে যায়। আমি জানি এতে আপনাদের পরিবারের সম্মান নষ্ট হয়েছে। কিন্তু যদি আপনারা ওর মত নিয়ে বিষয়টা দেখতেন তাহলে এমনটা হত না। জোর করে বিয়ে, সংসার এসব হয় না। যদি বিয়েটা হয়ে যাবার পর সাফিকা পালাত তাহলে আপনাদের সম্মান কোথায় গিয়ে দাড়াত ভেবে দেখেছেন। আর এখন যখন একটা ভুল হয়ে গেছে তখন তো কিছু করার নেই। ওকে এখন বকাবকি করেও কিছু করতে পারবেন না। আংকলে আন্টি আপনারা সাফিকাকে মেয়ে হিসেবে ক্ষমা করে দেন। আর ভাইয়া সাফিকা তো আপনারই বোন। আপনিও তাকে বোন হিসেবে ক্ষমা করে দেন। আর হ্যা..  আমি রাস্তায় বসে ছিলাম। আর উনি সেই রাস্তা দিয়ে আসছিল। একা মেয়ে এত রাতে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে তাই ওনাকে জিজ্ঞেস করলাম। উনি বলল যে বাড়িতে যাচ্ছে। রাত বেশি হবার কারনে ভয় পাচ্ছে। সেজন্য আমি উনাকে নিজেই নিয়ে এসেছি। এছাড়া আমার আর উনার মধ্যে কোন সম্পর্ক নাই। আর কোনদিন কথা তো দুরের কথা দেখিওনি।
.
আমার কথা শুনে সবাই চুপ হয়ে রইল।কেউ কিছু বলছেনা। এতক্ষণ আমি কথাগুলো সাফিকার বাবা মা ভাইকে বলেছি। এবার সাফিকার দিকে না তাকিয়েই বলছি
- আর.. সাফিকা আপু.. আপনাকে বলছি। আপনি যে বাসা থেকে পালিয়েছেন এটা আপনার অন্যায় হয়েছে। দেখেন.. এতে আপনার পরিবারের সম্মান নষ্ট হয়েছে। আপনি এখন কাউকে বললে কেউই বিশ্বাস করবেনা যে আপনি বান্ধবীদের বাড়িতে ছিলেন। সবাই ভাববে আপনি কারো সাথে পালিয়েছেন। এতে আপনারই ক্ষতি হয়েছে। আমি মানছি যে আপনি এখন বিয়ে করতে প্রস্তুত নন। তবে আপনি কথাটা আপনার পরিবারকে বুঝিয়ে বলতে পারতেন। আপনি এখন হয়ত একটা অজুহাত দেখাবেন যে আপনার পরিবার আপনাকে বুঝতে চায়না। এটা আসলে ভুল কথা। বুঝিয়ে বললে কে না বুঝে। সবচেয়ে বড় কথা.. বাবা মা সন্তানকে যেভাবে ফীল করে সন্তান কখনো বাবা মাকে সেভাবে ফীল করতে পারেনা। সন্তানের পক্ষে সম্ভবই না বাবা মা কে সেভাবে ফীল করা। আরেকটা কথা.. আপনি বান্ধবীর বাসা থেকে একা একা আসাটা আপনার উচিত হয় নি। কোন মেয়ে একা বাইরে নিরাপদ না। আপনি সাথে করে কাউকে নিয়ে আসতে পারতেন। যা হবার হয়েছে... নেক্সট টাইম থেকে একটু সতর্ক হয়ে চলবেন তাহলে আর কোন ঝুঁকি থাকবেনা।
.
আমার কথা শুনে মেয়েটির চোখে পানি চলে আসে। চোখ মুছে বলল
-- আপনি ঠিকই বলেছেন। আমার আসলে অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে।
- ভুল করেই মানুষ সঠিকটার গুরুত্ব বোঝে। এখন তো ভুল বুঝতে পেরেছেন। এটাই সবচেয়ে বড় বিষয়। আমি চলে যাব এখন। আমি যাওয়ার পর আপনার বাবা মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিবেন।
.
এই বলে আমি উঠে দাড়ালাম। সঙ্গে সঙ্গে সাফিকার বাবা বলল
- তুমি এখন যেয়োনা বাবা। রাত প্রায় পৌনে বারোটা। এত রাতে যাবে কিভাবে।
-- না আংকেল। যেতে পারব।
- এই সাইফুল..  তুই ওকে তোর সাথে রাখ।
-- না না আংকেল। আমাকে যেতে হবে। আম্মু চিন্তা করবে আমার জন্য।
- তোমাকে কি বলে ধন্যবাদ দিব বুঝতে পারছিনা। মেয়েটা এত পাগলামি করে। কখন যে কি হয়ে যায় তার কোন ঠিক নাই।
-- কিছু হবেনা। এখন তো সবার ভুল ভেঙ্গে গেছে। আর কোন সমস্যা নাই। রাত হয়ে গেছে আমাকে এবার যেতে হবে।
- সাবধানে যেও।
-- আচ্ছা আসি। আসসালামু আলাইকুম।
এবার সাফিকাকে বললাম
- আসি সাফিকা আপু। ভালো থাকবেন।
উনি আমার কথার উত্তর না দিয়ে তার বাবাকে বলল
-- বাবা আমি উনাকে উঠোন পর্যন্ত দিয়ে আসি?
- যা.. সাইফুল তুইও যা।
আমরা তিনজন উঠোনে। সাফিকা আমাকে বলল
-- ভাইয়া, আপনি না থাকলে ভাইয়া আমাকে মেরে ফেলত। আস্ত গুন্ডা একটা।
সাইফুল বলল
--- ঐ...তুই কিরকম বোন। নিজের ভাইয়ের নামে বদনামি করছিস।
আমি বললাম
- ভাইরা একটু গুন্ডা গুন্ডা হওয়া ভালো। বোনদের নিরাপত্তা দেয়া যায়।
আমার কথা শুনে দুজনই হেসে উঠে। আমি আর কথা না বাড়িয়ে বললাম
- আচ্ছা আপনারা যান। সাফিকা আপু বোধ হয় এখনো কিছু খায়নি। ঘরে গিয়ে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়ুন। সব ঠিক হয়ে যাবে।
সাইফুলের সাথে করমর্দন করে আমি চলে আসলাম বাড়িতে।
.
এর মাঝে অনেক দিন কেটে গেল। সাফিকার কথা অনেক মনে পড়ত। ইচ্ছে করলে ওদের বাড়িতে যেতে পারতাম। কিন্তু যাইনি। উপকার করেছি বলেই যে যেতে হবে এমন কোন কথা নেই। সাফিকার কন্ঠস্বর আমার কানে এখনো বাজে। কিন্তু ওর চেহারা কখনো দেখিনি। যেটুকু সময় তাকে দেখেছি সেটুকু সময় সে হিজাব দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছিল। আম্মু বিয়ের জন্য আমাকে বলছে। আমি আম্মুর কসম পালন করার জন্য আর নিষেধ করিনি। আম্মু বলল
-- হৃদয়..  কাল একটা মেয়ে দেখতে যাব। যাবি তো আমার সাথে।
- না মা.. আমার যাবার দরকার নেই। আমার আম্মুর উপর আমার বিশ্বাস আছে। উনি আমার জন্য সবসময় উত্তমটাই পছন্দ করবে।
.
সিফাত নামে একটা মেয়ের ছবি আম্মু আমার হাতে দিল। মেয়েটা খুবই সুন্দর। গ্রাম রসুলপুর। সাফিকাদের গ্রাম। সাফিকাকে দেখার খুব ইচ্ছে। ওদের গ্রামের জামাই হব। একবার তো দেখা হবেই। সিফাতের পরিবার আমাকে দেখতে আসার কথা ছিল। কিন্তু তারা নাকি আমার ছবি দেখেই পছন্দ করেছে। আমি দেখতে এতটাও আকর্ষনীও নই। বুঝলাম না কিছু।
.
পাগড়ি পরে গাড়িতে চেপে বসলাম। রসুলপুরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। মনে মনে একটু উত্তেজিত হচ্ছি। যদি সিফাতের বাড়ি সাফিকাদের বাড়ির পরে হয় তাহলে নিশ্চয়ই সাফিকাদের বাড়ি অতিক্রম করে যেতে হবে। সাফিকাদের বাড়ি অতিক্রম করার সময় একবার ওদের বাড়ির দিকে তাকাব ভাবছি। তাকাব ভেবেছি, কিন্তু তাকিয়ে থাকতে হবে এটা ভাবিনি। মানে সাফিকাদের বাড়িতেই সিফাতের বাড়ি। আমি তো প্রচন্ড অবাক হয়ে গেলাম। সাফিকার বোন নাকি সিফাত? সিফাতকে দেখলাম। খুব সুন্দর মেয়েটা। ছবির চেয়েও বেশি সুন্দর। কিন্তু সাফিকাকে দেখার খুব ইচ্ছে ছিল। কাউকে জিজ্ঞেস করতে পারছিনা লজ্জ্বায়। জিজ্ঞেস করলে যদি কেউ বলে নতুন বউ সামনে রেখে অন্য মেয়ের খবর নিচ্ছি। এজন্য কাউকে জিজ্ঞেস করিনি। তাই সাফিকাকে দেখার ভাগ্য আমার কপালে ছিল না।
.
বাসর রাত। আমি ঘরে ঢুকলাম। সিফাত এসে আমাকে সালাম করল। আমি খাটের উপর গিয়ে বসলাম। জিজ্ঞেস করলাম
- আচ্ছা তোমাদের বাড়িতো সাফিকাদের বাড়িই?
-- হ্যা। কেন? চেনেন নাকি?
- হ্যা চিনি। খুব ভাল ছিল মেয়েটা।
--  আপনি কি সাফিকাকে ভালবাসতেন?
- ভালো বাসতাম যে তা না। অনেক কথা হয়েছিল উনার সঙ্গে কিন্তু কখনো দেখিনি। তাই দেখার খুব ইচ্ছে এ আর কি।
-- কিন্তু সাফিকা তো আপনাকে ভালোবাসতো।
- কি বলছেন? আপনি জানেন কিভাবে?
-- সময় হলেই বলব।
- সময় কখন হবে?
-- দেখা যাক। তাছাড়া আমার কপালটা খুব খারাপ। বাসর রাতেই আমার নতুন বর অন্য মেয়ের খোঁজ করছে।
.
আমি কিছু বলিনি। চুপ হয়ে গেলাম। কারন একথার কোন উত্তর নেই। সত্যিই এদিক থেকে তো সিফাতের কপাল খারাপ। আমি নিচের দিকে তাকিয়ে বললাম
- আপনি শুয়ে পড়ুন।
-- আপনি?
- আমি পরে শুয়ে পড়ব।
সিফাত শুয়ে পড়ল। আর ঘুমিয়ে পড়ল। আমিও একসময় জেগে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়লাম। হঠাৎ সিফাতের ডাকে আমার ঘুম ভাঙলো। রাত তখন আড়াইটা। কিন্তু সিফাত বোরকা পরে আছে কেন। তাও আবার হিজাব দিয়ে মুখ ঢেকে আছে। আমি অবাক হয়ে বললাম
- কি হল ঘুমান নি?
-- ঘুমের ভান ধরেছিলাম। যাতে আগে আপনি ঘুমিয়ে পড়েন।
- তো বোরকা কেন পরলেন?
সিফাত একটু দুরে গিয়ে বলল
-- ভাল করে তাকিয়ে দেখুন তো.. আমাকে সাফিকার মত লাগে কি না?
আমি সিফাতের মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখলাম। কিছুই বুঝলাম না। কিন্তু চোখের দিকে তাকিয়ে লাফ দিয়ে উঠলাম। এটা তো সাফিকা। সাফিকার চোখের সাথে হুবহু মিলে যাচ্ছে। আমি প্রচন্ড রকমের আশ্চর্য্য হলাম।
- সাফিকা?
-- জ্বি মি: হৃদয়। আমিই সাফিকা। বাবা মা তো আপনাকে আগেই দেখেছে তাই দ্বিতীয়বার দেখার প্রয়োজন বোধ করেনি।
- তাহলে আপনার নাম সিফাত কেন?
-- সাফিকা ইসলাম সিফাত।
আমি হতভম্ব হয়ে বসে রইলাম খাটের উপর। সাফিকা বলল
-- সেই এক দেখাতেই আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলি। যেভাবে আপনি আমায় বাঁচতে শেখালেন তেমনটা কোনদিন আমাকে কেউ শেখায়নি। যখন আমাকে বিয়ের জন্য বাবা আপনার ছবি দেখায় তখন আমি রাজি হয়ে যাই। কিন্তু আপনার উপর আমার খুব অভিমান ছিল। সেদিনের পর থেকে একদিনও আমায় দেখতে আসেননি। আজ আর কোন অভিমান করব না। আজ আমি আপনার বাসর ঘরে দাড়িয়ে আছি। খুব তো বলতেন আমাকে দেখার খুব ইচ্ছে। এত কাছে থেকেও দেখে চিনেননি। আমার কন্ঠ শুনে চেনা উচিত ছিল।
.
ওর কথা শুনে প্রচন্ড আশ্চর্য্য হয়ে পড়ি। যাকে একটু দেখার জন্য খুব ইচ্ছে ছিল সে আজ আমার চোখের সামনে। সাফিকা এসে আমার পাশে বসে। সাফিকাকে আমার একটু একটু ভালো লাগত। আম্মুর উপর আমি ভীষণ সন্তুষ্ট। তিনি আমার জন্য উত্তমটাই বাছাই করেছে। সাফিকা কাঁপা কাঁপা হাত নিয়ে আমার হাত ধরল। আর বলে
-- আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি।
- আপনাকে আমার ভালো লাগে।
-- শুধু এটুকুই?
- হ্যা...  আপাতত এটুকুই।
-- ঠিক আছে সমস্যা নেই। তুমি যে বলেছিলে ভালোবাসা ক্ষতিকর। ভুল ছিল বাক্যটা। এটা দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। যে যেমন ভাবে দেখে। আমি তোমাকে ভালোবাসার ভালো দিকটা দেখিয়ে দেব।
এই বলে সাফিকা আমার বুকে মাথা গুঁজে দিয়ে রাখে।
.
এটাই ছিল আমার জীবনের টার্ণিং পয়েন্ট। আমার জীবনটা আনন্দময় হয়ে উঠল শুধু সাফিকার জন্য। সাফিকার জন্যেই আমার জীবনের অন্তিম প্রান্তে বসন্ত এল। জীবনটাকে কল্পনার চেয়েও বেশি চার্মিং করে তুলল। কখনো কোন কিছুর প্রয়োজনীয়তা বোধ করলে আমি বলার আগেই সাফিকা বুঝে ফেলত। অদ্ভুত একটা ক্ষমতা ছিল সাফিকার মাঝে। যার কারনে পরবর্তী জীবনে আমি ওকে খুব ভালবেসে ফেলি। এখনো ভালোবাসি। এইতো ও এতক্ষন আমার বুকে ঘুমিয়ে ছিল । আমার বকবকানিতে ওর ঘুম ভেঙ্গে যায়। আমাকে বলল
-- কি হল? কার সাথে কথা বলছ?
- এই যে শ্রোতাদের আমাদের গল্পটা শোনাচ্ছিলাম।
-- শোনাতে হবে না।
- কেন?
-- আরে তারা আমাদের থেকে শিখে যাবে। আমাদের ভালোবাসা কমন হয়ে যাবে। আমি এটা চাইনা। আমাদের ভালোবাসা এক্কেবারে আনকমন থাকবে।
- আচ্ছা ঠিক আছে আর কাউকে বলব না।
.
স্যরি রে ভাই/বোন। আর কমুনা। বউ মানা করছে। কি করব আর। বউয়ের ভালোবাসার প্রতিদান তো দিতেই হবে। (সমাপ্ত)
.
.
.
লেখক :- বিবাগী শাকিল

1 āϟি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ: