নদীর পাড়ের খেয়া নৌকা
পর্ব নং :- (৮/১০)
লেখক :- বিবাগী শাকিল
=============================
.
সকাল থেকে ছটফট করছে রুমি। অন্যরকম একটা অস্থিরতা কাজ করছে তার ভেতরে। বিকেল বেলা ব্রীজে যাবে। মানিক ঘুম থেকে উঠেই নৌকায় গেছে। দুপুর বেলায় চলে আসবে। কেন যেন রুমি এখন মানিককে না দেখে থাকতে পারেনা। সারাক্ষন মানিককে দেখার জন্য অস্থির হয়ে যায়। যেমনটা আজ সকাল থেকেই হয়ে আছে। একটু পরপরই বড় বড় দীর্ঘশ্বাস ফেলে। একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে। আর কি যেন ভাবে। ব্যাপারটা মানিকের মা খেয়াল করে। উনি রুমির কাছে এসে বলে
- কিরে রুমি.... কি হয়েছে তোর?
রুমির ভাবনায় হঠাৎ ভাঙ্গন পড়ে তাই একটু চমকে ওঠে। পরক্ষনে আবার নিজেকে সামলে নেয়। কাঁচুমাচু করে বলে
-- কই কিছু হয়নিতো খালা
- কেমন যেন আনমনা হয়ে আছিস। আর বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলছিস। কিছু ভাবছিস?
-- না খালা কিছুনা। এমনিই ভাল লাগছেনা।
- কোন সমস্যা হলে বলিস... চাপা দিয়ে রাখবিনা।
-- আচ্ছা ঠিক আছে।
রুমি মনে মনে বলে "" সমস্যাতো আপনার ছেলেকে নিয়েই। এত্ত অগোছালো। গোছাতে আমার সারাটা জীবনই লেগে যাবে""""। ভাবতে ভাবতেই হেসে ফেলে রুমি। প্রচন্ড রৌদ্রতাপে তৃষ্ণার্ত কাক যেমন পানির জন্য প্রবল বেগে ছোটাছুটি করে তেমনি মানিকের দেখা পাবার জন্য অস্থির হয়ে ছটফট করছে রুমি। আজ দুপুরটাই যেন আসবেনা। সময়ের গতি মন্থর হয়ে গেল নাকি। ধ্যাত!!!!! বিরক্ত হয়ে যায় রুমি....।
.
প্যান্টের পকেটে কিছু লাল ফুল নিয়ে আসছে মানিক। বাড়ি ফেরার সময় এগুলো চোখে পড়ল। গাছটা একটু দুরেই ছিল। মানিক দূর থেকেই দেখেছে ফুলগুলোকে। মানিক সেই গাছ থেকে কয়েকটা ফুল ছিড়ে নেয়। তাই আজ আগের দিনের তুলনায় একটু বেশিই দেরি হয়ে যায়। মানিক জানে যে রুমি তাকে আজ আবার বকা দিবে। ভয়ে ভয়ে ধীর পায়ে বাড়িতে আসে মানিক। মানিককে দেখেই রুমির চোখ দুটো অগ্নি হয়ে যায়। যেন সেই অগ্নির প্রজ্জ্বলিত শিখা দিয়ে মানিককে ভস্ম করে ফেলবে এক্ষুনি। মানিক নিচের দিকে চোখ নামিয়ে ফেলে। রুমি কিছু বলে না মানিকের মা আছে বলে। নীরবে মানিকের সাথে খাওয়া দাওয়া করতে বসে। মনে মনে ভাবে ব্রীজে যাওয়ার সময় ইচ্ছে মত বকা দিবে মানিককে।
.
হাঁটছে রুমি আর মানিক। সাথে আছে অনিক। অনিককে প্রথমে নিতে চায়নি মানিক। কিন্তু অনিক জায়গা মত ব্ল্যাকমেইল করেছে তাই নিতে হল। অনিক বলেছে তাকে না নিলে সে সবকিছু মানিকের মায়ের কাছে বলে দেবে। কি আর করা... বাধ্য হয়ে নিতে হল। অনিকের সামনে মানিক আর রুমি দুজনেই বারবার অপ্রস্তুত হয়ে যাচ্ছে। মানিক অনিককে বলল
- এই অনিক
-- জি ভাইয়া
- তুই একটু সামনে হাঁট.... যা।
-- কেন? আমার জন্যে কি সমস্যা হচ্ছে।
- চুপ কর... যা সামনে হাঁট
-- যাব তো দাড়াও না। আগে একটা স্বার্থ উদ্ধার করে নিই।
- কি বল।
-- ব্রীজে গেলে আমাকে দশ টাকার মুড়ি খাওয়াতে হবে।
- এই দেখ.. আবার শুরু হইছে।
-- না খাওয়ালে আমি তোমাদের সাথেই হাঁটব।
- আচ্ছা যা খাওয়াব।
অনিক একটু সামনে চলে যায়। মানিক আর রুমি পিছিয়ে আছে। ইচ্ছে করেই আস্তে আস্তে হাঁটছে। যাতে করে ব্রীজে যেতে একটু দেরি হয়। যাতে ওরা কথা বলার জন্য আরেকটু বেশি সময় পায়।রুমি এখনই মানিককে বকা দিতে যাবে কিন্তু রাস্তার এই মোড়টা পেরুতেই আর পারলনা।রাস্তার আগের পথটা ছিল অন্যসব রাস্তার মতই সাধারন। কিন্তু এই মোড়টা উত্তর থেকে এসে পশ্চিম দিকে বয়ে গেছে। রাস্তার দুপাশে সারি সারি গাছ লাইন ধরে দাড়িয়ে আছে। মাঝখানে সরু রাস্তা। দেখেই রুমির মন মানিককে বকতে গিয়েই আটকে যায়। অসাধারন এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। রুমির মুখে আশ্চর্য্যের হাসি ফুটে ওঠে। মানিক বলে
- বলেছিলাম না। এই রাস্তাটা অনেক সুন্দর।
-- হুম আসলেই.... এখানে আসলেই সবার মন ভাল হয়ে যাবে।
- দেখনা গাছগুলো রাস্তার দুপাশে দাড়িয়ে আছে। মনে হয় তোমায় দেখছে। তুমি যাবে আর তোমাকে তারা অভিনন্দন জানাবে।
রুমি কিছু বলেনা। হাঁটতে থাকে। অনিক সামনে থেকে চিৎকার করে বলে
- ভাইয়া আর হাঁটতে পারছিনা। একটা গাড়িতে উঠে যাই চল।
-- গাড়িতে উঠা হবেনা। হাঁটতে না পারলে এসেছিস কেন? তুই জানিস না এদিক দিয়ে গেলে ব্রীজ অনেক দুর।
অনিক মানিকের সম্মতি না পেয়ে আবার হাঁটা শুরু করে। রুমি চারিদিকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দেখতে ব্যস্ত। একবার এই গাছের কথা জিজ্ঞেস করে আরেকবার ঐ গাছের কথা জিজ্ঞেস করে। মানিক ধৈর্য্য ধরে সব প্রশ্নের উত্তর দেয়। এরপর রুমি একটু শান্ত হয়ে বলে
-- এই পথ যদি কোনদিন শেষ না হত তাহলে কতইনা ভাল হত।
- ভাল হত। কিন্তু একাই পথ চলতে নাকি সঙ্গী হিসেবে কাউকে নিতে।
-- আরে আমি আমাদের দুজনের কথাই বলছি।
- আমি যে তোমার সব পথচলার সঙ্গী হতে চাই।
-- আমিও তো আপনাকে সব পথচলার সঙ্গী হিসেবে পেতে চাই।
মানিক রুমির কথা শুনতে শুনতেই পকেটে হাত দেয়। এ কি জবা ফুল গুলো এখনো পকেটে। রুমিকে নিয়ে রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে একদমই ভুলে গেছে।মানিক ফুলগুলো পকেট থেকে বের করে। রুমির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে
- রুমি নাও এই গুলো তোমার জন্যেই এনেছি।
-- কই আমি তো দেখছি আপনি আমার সাথেই হাঁটছেন।
- আরেনা.... বাড়িতে ফেরার সময় ফুলগুলো চোখে পড়ে। কিন্তু গাছটা অনেক দূরে ছিল। সেখান থেকেই নিয়ে আসি। তাই আজ বাড়িতে আসতে একটু দেরি হয়ে যায়।
রুমি ভেতরে ভেতরে অনেক লজ্জা পায়। মানিকের দেরি হয়েছে রুমির জন্য ফুল আনতে গিয়ে। আর সেই রুমি কিনা মানিক কে বকার জন্য প্রস্তুত হয়েছিল। ভাগ্যিস বকা দেয়নি। দিলে এতক্ষনে প্রত্যক্ষ লজ্জায় পড়তে হত।
.
রাস্তাটা শেষ হয়ে এসেছে। ব্রীজের একদম কাছাকাছি চলে এসেছে। কিন্তু রাস্তাটা এখান থেকে অনেক উঁচু হয়ে উপরের দিকে গেছে। ছোটখাটো একটা পাহাড়ের মত। রুমির পায়ের গতি কমে আসছে। এত উঁচুতে উঠতে গিয়ে পা আর চলতে চায়না। মানিক রুমিকে বলে
- কি হল রুমি?
-- আর হাঁটতে পারছিনা। এত উঁচু জায়গা।
মানিক রুমির দিকে দুহাত বাড়িয়ে দেয়। বলে
- আচ্ছা এই আমার হাত ধর। আমি টেনে টেনে উঠাচ্ছি।
রুমি হাত বাড়িয়ে মানিকের হাত ধরে। পায়ের সাথে তাল মিলিয়ে একই সাথে উঠে। একেবারে ব্রীজের নিচে এসে দাড়ায় তিনজন। এমন সময় ট্রেনের হুইসেল এর শব্দ শোনা যায়। মানিক বলে চল চল ট্রেন দেখব। তিনজনে মিলে দ্রুত স্টেশনে উঠে। এখান থেকে ব্রীজের এপার থেকে ওপার দেখা যায়। ব্রীজের উপর দিয়ে দুটো রেললাইন বয়ে চলেছে। একটা তে ট্রেন আসবে আর একটাতে যাবে। মানিক,রুমি আর অনিক তাকিয়ে আছে ট্রেনের দিকে। স্টেশনটার নাম পাকশী। যাত্রীরা সবাই নামছে। নামা শেষে কিছু কিছু যাত্রীরা উঠছে। উঠানামা শেষ হলে আবার হুইসেল এর শব্দ শোনা যায়। ট্রেনটা ঝকঝক আওয়াজ তুলে চলতে শুরু করে। আস্তে আস্তে ব্রীজের উপরে উঠে চলে যায় নদীর ওপারে। কিন্তু মানিক,রুমি আর অনিক তো আর জানে না ট্রেনের ভেতর থেকে একজোড়া চোখ ওদের দিকে তাকিয়েছিল।রুমিকে দেখে সেই চোখজোড়া অবাক হয়ে সংকুচিত হয়ে যায়। সেইটা তো ওদের অজানাই রয়ে গেল।
.
স্টেশন থেকে নেমে যায় তারা। নদীর দিকে এগোতে থাকে। আশেপাশে প্রচুর আখ চাষ করছে কৃষকরা। ব্রীজের নিচ বরাবর নদীর এপাড়টা সবসময় মুখরিত থাকে। অনেক মানুষ আসে প্রতিদিন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্য। হঠাৎ অনিক বলে
- ভাই ঝালমুড়ি খাব।
-- আচ্ছা চল ঐ দিকটায় যাই। ঐ দিকে ঝালমুড়ি পাওয়া যায়।
বলেই তিনজনে এক ঝালমুড়িওয়ালার কাছে যায়। ঝালমুড়ি নিয়ে অনিক আর রুমি হাঁটতে হাঁটতে মানিকের থেকে একটু দুরে চলে যায়। মানিক পকেট থেকে টাকা বের করে ঝালমুড়ির বিল দিচ্ছে। হঠাৎই মানিকের চোখ পড়ল একটা ফেরিওয়ালার দিকে। সেখানে অনেক রকম নুপুর সাজানো হয়েছে। মানিক একটু একটু করে এগিয়ে যায়। একজোড়া নুপুর মানিকের ভীষন পছন্দ হয়। কিন্তু পকেটে টাকা নেই বলে কিনতে পারেনা। তাই মানিক ভাবল কাল এসে কিনে নিয়ে যাবে। রুমির পায়ে নিজ হাতে পরিয়ে দেবে। কিন্তু অন্যকোন ক্রেতা যদি এসে কিনে নিয়ে যায়। তাই মানিক ফেরিওয়ালাকে বলে
- ভাই... এই জোড়ার দাম কত।
-- ১৪০ টাকা ভাই।
- এত দাম??
-- ভাই ভালো মাল এগুলো।
- তা জানি। আমি যদি ফেরি করতাম তাহলে আমিও এটাকে ভাল বলতাম।
-- কি যে বলেন ভাই।
- আমি কিছুই বলছিনা। একটু কমিয়ে বলেন
-- আচ্ছা ২০ টাকা কম দিয়েন।
- ঠিক আছে কাল এসে নিয়ে যাব। কথা দিলাম। এই জোড়া কারো কাছে বিক্রি করবেন না।
মানিকের কথাটা বোধ হয় ফেরিওয়ালার পছন্দ হয়নি। তাই ফেরিওয়ালা নিশ্চুপ হয়ে আছে। মানিক আর কিছু না বলে রুমি আর অনিককে নিয়ে বাড়ি চলে আসে।
.
(চলবে)
āĻāϞ্āĻĒ āϏংāĻ্āϰāĻš āĻāϰা āĻāĻŽাāϰ āύেāĻļা। āϰোāĻŽাāύ্āĻিāĻ, āĻৌāϤিāĻ, āϰāĻŽ্āϝ, āĻৌāϤুāĻ āϏāĻš āĻšাāĻাāϰো āĻāϞ্āĻĒ āĻāĻে āĻāĻŽাāϰ āϏংāĻ্āϰāĻšে।
āϰāĻŦিāĻŦাāϰ, ⧍ā§Ē āϏেāĻĒ্āĻেāĻŽ্āĻŦāϰ, ⧍ā§Ļā§§ā§
2288 (8)
āĻāϰ āĻĻ্āĻŦাāϰা āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰা
Rahathossain1010100@gmail.com
āĻāĻ āϏāĻŽā§ে
ā§§:⧍ā§Ģ AM

āĻāϤে āϏāĻĻāϏ্āϝāϤা:
āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝāĻুāϞি āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ (Atom)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ