নদীর পাড়ের খেয়া নৌকা
পর্ব নং :- (৪/১০)
লেখক :- বিবাগী শাকিল
==============================
.
নৌকায় বৈঠা ধরে বসে আছে মানিক। পাল তুলে দিয়েছে। পালে হাওয়া পেয়ে নৌকা স্রোতের অনুকুলে চলছে। এসময় মানিকের খুব ভাল লাগে। কারন এসময় কষ্ট করে বৈঠা চালাতে হয়না। শুধু নৌকার গতিবিধি রক্ষা করার জন্য বৈঠাকে নিয়ন্ত্রন করে রাখলেই হয়। যাত্রীদের দিকে তাকিয়ে মানিক যাত্রীদের গতিবিধি লক্ষ করছে। সবার মাঝে ব্যস্ততার ছাপ স্পষ্ট ভাবে ফুটে আছে। যাত্রীদের দেখতে ভালোই লাগে মানিকের। মহিন মিয়া পালের খুটির সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে। মানিক এলে তার পরিশ্রম একটু কমে যায়। নৌকার দিক পরিবর্তন করার জন্য মানিক বৈঠা ঘুরিয়ে দেয়। নৌকাকে ডানে ঘোরাতে হলে বৈঠাকে বাম দিকে নিয়ে যেতে হয়। তেমনি বাঁয়ে ঘোরাতে হলে বৈঠাকে ডানে ঘোরাতে হয়। মহিন মিয়ার সাথে থাকতে থাকতে এসব কৌশল মানিক ভালো করেই রপ্ত করে ফেলে। হঠাৎই মনে পড়ে রুমির কথা। মেয়েটার সাথে আজ এখনো দেখা হয়নি। মানিক সকাল সকাল উঠে মহিন মিয়ার সাথে নৌকায় চলে আসে। তখন রুমি হয়তো বা ঘুমিয়ে ছিল। পুরোপুরি নিশ্চিত না। কিন্তু রুমি ঘুম থেকে উঠে গেলে তো মানিকের সাথে দেখা হত। যেহেতু দেখা হয়নি তাই মানিক নিজে নিজেই ভেবে নেয় যে রুমি ঘুমিয়ে ছিল। কাল রাতে রুমিকে নিয়ে অনেক ভেবেছে মানিক। কিন্তু কোন ভাবনাই যেন পুর্ণ হচ্ছেনা। একটা না একটা অপুর্ণতা থাকেই। এটা কি কোন অপুর্ণতার পুর্বাভাস????
.
রুমির ঘুম থেকে উঠতে আজ অনেক দেরি হয়ে যায়। ইদানীং কেমন ভয় হচ্ছে ওর। যদি তার আম্মুরা জেনে যায় রুমি এখানে তাহলে তাকে এখান থেকে ধরে নিয়ে যাবে। এই ভয়টা রুমিকে কিছুতেই স্বাভাবিক হতে দিচ্ছেনা। হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে। নাস্তা করার মাঝে মানিকের মা এসে বসে রুমির পাশে।বলে
- রুমি
-- জি খালা বলুন
- এখানে তোর ভালো লাগছে তো মা?
-- হ্যা খালা অনেক ভাল লাগছে।
- অনেক তো বড় হয়েছিস। তোর মা তোর বিয়ের ব্যবস্থা করছেনা?
কথাটা শুনে রুমি একটু চুপসে যায়। মনটা আবার খারাপ হয়ে যায়। কিছুক্ষনের জন্য চুপ করে থাকে রুমি। তারপর আবার বলে
-- আচ্ছা খালা... বিয়ে ছাড়া কি কিছুই বোঝনা তোমরা। সবাই শুধু বিয়ে বিয়ে করে।
- হাহাহা.... পাগলিরে শ্বশুর বাড়িই হচ্ছে মেয়েদের আসল ঠিকানা। আসল ঠিকানায় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তত তাড়াতাড়ি যাওয়া ভাল।
-- সময় হোক তখন যাব নে। এখন এসব কথা বলোনা তো।
- আচ্ছা ঠিক আছে। এখন আয় আমার সাথে রান্নাঘরে। আজ তুই রান্না করবি।
-- আচ্ছা চল।
.
পাড়ে এসে নৌকা ভেরায় মানিক। দুপুরের সূর্য্য তখন মাথার উপরে। প্রচন্ড গরম পড়ছে। আর তাতে মানিকের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম ঝমেছে। যাত্রীরা সব ভাড়া মিটিয়ে নেমে গেছে। নৌকার ভেতরে একটা বাক্স আছে। সেখান থেকে একটা লুঙ্গি বের করে পরে নেয়। তারপর নদীতে ঝাপিয়ে পড়ে। মহিন মিয়া নৌকার নোঙ্গর ফেলছে। প্রচন্ড গরমে নদীর পানিও কেমন গরম হয়ে আছে। তবে গভীরের পানিগুলো এখনো ঠান্ডা। সেই ঠান্ডা পানির অবগাহনে মানিকের পুরো দেহ অনেকটা শীতল হয়ে আসে।নদীর পানিতে সাতার কাটে। সাতার কাটতে কাটতে কিছুদুর যায়। নদীর এদিকে অসংখ্য শাপলা ফুল ফুটে আছে। রুমিকে শাপলা ফুল দেবে বলে কয়েকটা তুলে নেয়। তারপর আবার নৌকায় এসে একটা প্যান্ট পরে নেয়। প্রচন্ড খিধে পেয়েছে।আবার রুমির কথাও মনে পড়েছে। রুমির সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু রুমিতো বাসায়। আর মানিক নদীর পাড়ে। তাই মানিক বাড়ি চলে আসে। মহিন মিয়া কিছু বলেনা। কারন মানিক অর্ধদিন নৌকা চালালেও তিনি সন্তুষ্ট থাকেন।
.
বাড়িতে এসে খাটের উপর শুয়ে পড়ে মানিক। শাপলাগুলো লুকিয়ে রেখেছে।রুমিকে দেখতে পাচ্ছেনা।মানিক তার মাকে ডাক দেয়।
- মা... খিধে পেয়েছে।
-- দাড়া.... রুমির গোসল করা শেষ হোক তারপর সবাই একসাথে খাওয়া দাওয়া করব।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
রুমি গোসল করছে। এইজন্যে মানিক ঘরে এসে রুমিকে দেখতে পায়নি। কিছুক্ষন পর রুমি গোসল সেরে খাওয়া দাওয়া করতে বসে। আজ রুমিকে একটু হাসি খুশিই দেখাচ্ছে। মানিকের মা বলে
-- আজ কে রান্না করেছে জানিস?
- কে?
-- আজ রুমি রান্না করেছে।
- রান্না তো ভালোই হয়েছে। প্রশংসার দাবী রাখে।
প্রত্যক্ষ ভাবে প্রশংসিত হয়ে রুমি কিছুটা লজ্জা পায়। নীরবে খাওয়া দাওয়া করে।
.
বিকেলে রুমি উঠোনে বসে আছে। মানিক উঠোনে এল। অনিক সম্ভবত খেলার জন্য মাঠে গেছে। মানিক রুমিকে বলল
- এরপর কি হল?
-- কি?
- ঐ যে কাল বিকেলে বললে না।
-- ও হ্যা.... মনে পড়েছে।
- হ্যা তারপরের কাহিনী বল।
রুমি একটু মুচকি হেসে বলে
-- কতুটুকু বলেছিলাম মনে নেই তো। ভুলে গেছি।
- আমার মনে আছে। তুমি বলেছিলে তোমার বিয়ে দেবার জন্য সবাই উঠেপড়ে লেগেছিল। তারপর একদিন..... এটুকুতেই অনিক চলে আসে।
-- হ্যা মনে পড়েছে।
- হুম.... বল
-- তারপর একদিন কলেজ থেকে বাসায় এসে দেখি কিছু লোক আমাদের বাসায় বসে আছে। আমি বাসায় যেতেই মা আমাকে শাড়ি পরে সাজগোজ করার জন্য বলে।বুঝলাম আমাকে বিয়ের জন্য দেখতে এসেছে। আমি তখন তাদেরকে এড়িয়ে যেতে পারিনি। বাধ্য হয়ে শাড়ি পরে তাদের সামনে যাই। ওরা আমায় দেখেই পছন্দ করে ফেলে। ছেলের বয়স আমার চেয়ে দ্বিগুন হবে বোধ হয়। ওরা আমাকে সেদিন আংটি পরায়। আমি কিছু করতে পারিনি। রাগে আমার মাথা গরম হয়ে গেল। কিন্তু বাড়ির মান সম্মানের কথা চিন্তা করে তখন কিছু করিনি। ছেলেপক্ষ যাবার সময় বিয়ের দিনতারিখ ঠিক করে। তারপর থেকে আর কলেজে যেতে দিত না। আমি এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত নই। কিন্তু ওরা সেটা বুঝতেই চায়নি। বাসার সবাই আমাকে নজরে নজরে রাখত। আমি কোথাও গেলে একজন না একজন আমার সাথে থাকতই। আমার বিয়ের জন্য যে ছেলেটাকে পাত্র হিসেবে ঠিক করেছে তাকে আমার একটুও পছন্দ না। কারন বয়সের বিশাল ফারাকের কারনে সে আমাকে বুঝবেনা আর আমি তাকে বুঝবনা। যে কোন একটা সমর্কে বয়সের ফারাক যত কম হবে বোঝাপাড়া তত বেশি হবে। তাই বিয়ের আগের দিনই পালিয়ে এখানে চলে আসি। বাড়ির কেউ জানেনা আমি কোথায়। আপনার কাছে একটা অনুরোধ। আপনি প্লিজ কাউকে এসব বলবেন না। তাহলে হয়ত এখানেও থাকা হবেনা।
.
মানিক মনে মনে এমন কিছু একটাই ভেবেছিল। সে এক আকাশ বিশ্বাসকে সংকুচিত করে পুরোটা তার চোখে স্থানান্তরিত করে রুমির দিকে তাকিয়ে বলে
- কেউই জানবেনা।আমার উপর বিশ্বাস রাখো।
কথাটা শুনে রুমি একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। মানিক তখন বলে
- রুমি চোখ বন্ধ কর।
-- কেন?
- আহা.... কর তো...
-- আচ্ছা করলাম
প্রায় এক মিনিট পরে মানিক রুমিকে চোখ খুলতে বলে। রুমি চোখ খুলে দেখে অনেকগুলো শাপলা ফুল সুতো দিয়ে বাঁধা। রুমির ভীষন পছন্দ হয়। মানিকের দিকে না তাকিয়েই বলে
-- কোথায় পেয়েছেন এগুলো।
- কোথায় পাব? দুপুর বেলা নদীতে গোসল করছিলাম তখন এই শাপলা গুলো চোখে পড়ে।
-- আপনি নদীতে গোসল করেছেন? আমারও মন চায় নদীতে গোসল করতে।
মানিক মুখ গম্ভীর করে বলে
- মেয়েদের জন্য গোসল করতে বাড়ির আড়ালে পর্দায় ঘেরা গোসল খানা কি যথেষ্ট নয়?
রুমি প্রচন্ড হতবাক হয়ে যায়। কারন মানিকের চেহারায় এখন একটা জ্ঞানী জ্ঞানী ভাব চলে এসেছে। ওকে দেখে কেউই এখন বলবেনা যে ব্রীজে ট্রেন চলা অবস্থায় সেই ট্রেন দেখার জন্য ব্রীজের দিকে তাকিয়ে থাকার মত ছেলেমানুষীটা মানিক করে। অদ্ভুত একটা ভালো লাগা জন্মে যায় মানিকের প্রতি। মানিকের চোখে মুখে গাম্ভীর্য্যের ভাব। রুমি একটু হেসে বলে
-- বাহ!!!! আপনাকে এখন খুব সুন্দর লাগছে।
মানিক এবার লজ্জায় মুচকি হাসি দেয়। রুমির দিকে না তাকিয়েই বলে
- হইছে এখন আর পাম্প দিতে হবেনা।
-- আচ্ছা নদীতে গোসল করার শখ বাদ। এখন আর ঐ বয়স নেই। তবে নৌকার চড়া তো যাবে নাকি?
- হ্যা অবশ্যই।
-- তবে সেটা ছোট নৌকা হবে। যাত্রী পরিবাহি নৌকা হবেনা।
- ছোট নৌকা অবশ্য আমাদের নাই। তবে যোগাড় করতে পারব। কবে চড়বে তুমি?
-- আপনার যেদিন ইচ্ছে।
- আচ্ছা আমি নৌকা যোগাড় করে তোমাকে বলব।
-- আচ্ছা ঠিক আছে।
.
মানিকের ভেতর প্রচন্ড খুশির ঝড় বইতে শুরু করে। চাপা দিয়ে রাখা ভীষন কষ্টকর। ঘরে এই খুশি রাখতে পারবেনা।কারন জায়গাটা ছোট আর খুশিটা বিশাল বড়। মানিক ঘর থেকে বেরিয়ে মাঠে চলে যায়। নিজে নিজেই একটু পর পর মুচকি হাসছে। আর কি যেন চিন্তা করছে। নিশ্চয় রুমিকে নিয়ে ভাবছে মানিক। রুমির সাথে একান্তে কিছু সময় কাটানোর সুযোগ এসেছে। মানিক এখন নৌকা যোগাড় করার জন্য নদীর পাড়ে যাবে। বসা থেকে উঠে হাঁটতে শুরু করে। গন্তব্য নদীর পাড়। উদ্দেশ্য নৌকা যোগাড় করা।
.
সন্ধ্যার পর রুমি বাইরে এসে বসে। কেন যেন একা একা থাকতে ভাল লাগছে ওর। একা একা না... একজনকে নিয়ে ভাবতে ভীষন ইচ্ছে করে। ইচ্ছেটা পুরন করেও ফেলে। কোন এক অজানা কারনে মানিক কে ভালো লাগে রুমির কাছে। মানিকের ছেলেমানুষী, গম্ভীর ভাব, দুষ্টুমি সবকিছুই কেন যেন রুমির কাছে আকর্ষনীয় মনে হয়। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই রুমির আকর্ষনীয় জিনিসগুলি হঠাৎ করেই বিকর্ষিত হয়ে অনেক দুরে চলে যায়। এবারেও কি তাই হবে?????
.
(চলবে)
āĻāϞ্āĻĒ āϏংāĻ্āϰāĻš āĻāϰা āĻāĻŽাāϰ āύেāĻļা। āϰোāĻŽাāύ্āĻিāĻ, āĻৌāϤিāĻ, āϰāĻŽ্āϝ, āĻৌāϤুāĻ āϏāĻš āĻšাāĻাāϰো āĻāϞ্āĻĒ āĻāĻে āĻāĻŽাāϰ āϏংāĻ্āϰāĻšে।
āϰāĻŦিāĻŦাāϰ, ⧍ā§Ē āϏেāĻĒ্āĻেāĻŽ্āĻŦāϰ, ⧍ā§Ļā§§ā§
2288 (4)
āĻāϰ āĻĻ্āĻŦাāϰা āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰা
Rahathossain1010100@gmail.com
āĻāĻ āϏāĻŽā§ে
ā§§:⧍ā§Ē AM

āĻāϤে āϏāĻĻāϏ্āϝāϤা:
āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝāĻুāϞি āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ (Atom)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ