নদীর পাড়ের খেয়া নৌকা
পর্ব নং :- (১/১০)
লেখক :- বিবাগী শাকিল
=============================
.
দাঁড় বেয়ে পাল তুলে অসংখ্য নৌকা এই নদীর উপর দিয়ে বয়ে যায়। পদ্মা নদীর অংশ বিশেষ এটা। পাকশী এলাকার পশ্চিম পাশ দিয়ে উত্তর- দক্ষিন হয়ে বয়ে চলেছে এই নদী। মাথার উপর দিয়ে দুটো ব্রীজ দেখা যায়। একটা হার্ডিঞ্জ ব্রীজ।অপরটা লালন শাহ। লালন শাহ এর উপর দিয়ে বাস,ট্রাক,মাইক্রো এসব সড়কীয় যানবাহন চলাচল করে। গুড়ুম,গুড়ুম শব্দ করে ট্রেন যখন হার্ডিঞ্জ ব্রীজের উপর দিয়ে যায় তখন মানিক নৌকার বৈঠা কিছুক্ষনের জন্য ছেড়ে দিয়ে তাকিয়ে থাকে চলতি ট্রেনের দিকে। মানিকের বয়স ১৯ পেরিয়েছে। কিন্তু এই বয়সেও ট্রেন দেখার ছেলেমানুষী ভাব টা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। কিন্তু আজ সে চাইলেও ব্রীজের চলতি ট্রেনের দিকে খুব বেশি তাকাতে পারবেনা। কারন আজ সে একা নৌকা চালাচ্ছে। আজ তার বাবা আসেনি। তাই আজ তাকে এই কষ্টটা করতে হচ্ছে। আস্তে আস্তে নৌকা পাড়ে এসে ভেরে। মানিক সন্তর্পণে নিচে নেমে যায়। যাত্রীরা সবাই নামছে। মানিকের কাছে ভাড়া দিয়ে একে একে সবাই নেমে গেছে। মানিক ভাবল সবাই নেমে গেছে। তাই সেও নোঙ্গর গেঁথে দিতে যাবে এমন সময় একটা মেয়েলী কন্ঠ তার কানে ভেসে আসল
-- এই যে শুনুন
মানিক পিছন ফিরে তাকায়। দেখে একটা ষোড়শী মেয়ে। মানিকের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।
- জি বলেন।
-- নেন ভাড়া নেন।
বলে মেয়েটি মানিকের দিকে দশ টাকার নোট এগিয়ে দিল। মানিক বলল
- ভাড়া বিশ টাকা। দশ টাকায় হবেনা। এলাকায় নতুন নাকি?
-- উফ.... স্যরি। জি এলাকায় নতুন।
বলে মানিকের দিকে আরো একটি দশ টাকার নোট এগিয়ে দেয়। মানিক এবার হাত বাড়িয়ে নেয়। মেয়েটি আবার বলল
-- এত উপর থেকে নামতে পারছিনা। একটু সাহায্য করবেন?
- হ্যা বলেন কি করতে পারি?
-- বলেছি নামতে পারছিনা। একটু সাহায্য করতে।
মানিক নৌকা থেকে ব্যাগ গুলো নামিয়ে দিয়ে নিচে দাড়িয়ে আছে। কিন্তু মেয়েটি নৌকা থেকে নামতে ভয় পাচ্ছে। তাই সে মেয়েটির দিকে হাত বাড়িয়ে বলল
- এবার নামতে পারেন।
মেয়েটি কিছুক্ষন ইতস্তত করে মানিকের হাত ধরে সাবধানে নিচে নেমে এল। মেয়েটি চলেই যাচ্ছিল কিন্তু তখন মানিক জিজ্ঞেস করল
- আপনার নাম জানা যাবে?
-- আমার নাম রুমকি। সবাই রুমি ডাকে।
- খুব সুন্দর নাম তো আপনার।
-- আপনার নাম কি?
- মানিক।
-- এই বয়সে তো আপনার পড়ালেখা করার কথা। নৌকা কেন চালাচ্ছেন?
মানিক কিছু না বলে চুপ করে রইল। মানিককে নিরুত্তর দেখে রুমিও আর কিছু বলেনা। একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে যায়। মানিক তাকিয়ে থাকে রুমকির দিকে। কিছুদুর গিয়ে রুমকি পেছন ফিরে মানিকের দিকে তাকায়। মানিক লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে ফেলে।তারপর রুমকির দিকে আবার মাথা তুলে তাকায়। দেখে রুমকি ভীষন ভাবে হাসছে। এত হাসি কোথায় যে পায় মেয়েটা কে জানে। কিছুক্ষনের মধ্যেই মেয়েটি হাঁটতে হাঁটতে অদৃশ্য হয়ে যায়।
.
সন্ধ্যা হয়ে এল। আকাশের অবস্থাও কেমন যেন ভাল ঠেকছেনা। বাতাস বইতে শুরু করেছে। সম্ভবত বৃষ্টি হতে পারে। মানিক এর মাঝেও ঘরে যাচ্ছেনা। বালিকা বিদ্যালয়ের পেছন দিকে যে মাঠ আছে তার এক কোনে বসে আছে। মেঘের গুড়ুম গুড়ুম আওয়াজ শুরু হয়েছে। একটু পর পরই শোনা যাচ্ছে। ঠান্ডা বাতাসে মানিকের শিরদাড়া বেয়ে একটা ঠান্ডা শিহরন বয়ে যায়। শরীরটা শিরশির করে ওঠে। টিপটিপ বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে তখন।এমন সময় মানিকের ছোট ভাই অনিক দৌড়ে আসে তার কাছে
- ভাইয়া... বাবা কইছে বাড়িতে যেতে।
-- তুই যা আমি এখন যামুনা।
- আচ্ছা। তবে তাড়াতাড়ি এসো কিন্তু। রুমি আপু এসেছে।
-- কোন রুমি?
- ঐযে মিতু খালার মেয়ে।
-- ও... কখন আসছে?
- এইতো একটু আগেই।
-- আচ্ছা যা তুই আমি আসছি।
বলেই অনিক চলে যায়। অতিথিদের বরাবরই মানিক অপছন্দ করে এসেছে। অতিথিরা বাসায় আসলে মানিক বাসায় যেতে চায়না।আর রুমি নামের মেয়েটিকে এখনো দেখেনি।আসলে সে কোথাও যেতে চায়না।মিতু খালার বাসায় আজো যায়নি তাই রুমিকে দেখেনি.. শুধু নামই শুনেছে। তাই মানিক বাসায় যাওয়ার বিষয়টাকে এতটা গুরুত্ব দেয়না। ততক্ষনে বৃষ্টির বেগ একটু বেড়ে গেছে। মানিক দৌড়ে আমতলা বাজারে চলে যায়। আশে পাশে কয়েকটা বিশাল মোটা করই গাছ আছে। সে হিসেবে বাজারটার নাম করইতলা হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু এই এলাকায় করইগাছের অভাব নেই। তাই করইতলা লোকে সহজে চিনবেনা। একটা আম গাছ আছে তাই বাজারটার নাম আমতলা। করই গাছ গুলো এত মোটা যে দশজন মিলে গাছটিকে ঘিরে ধরলে একজনের হাত আরেকজন ধরতে পারবেনা। গাছগুলোকে দুর থেকে বিশাল ফুলকপির মত দেখায়। বাজারটা মাঠ থেকে অনেক কাছেই। দৌড়ে গেলে ত্রিশ সেকেন্ড আর হেঁটে গেলে এক মিনিটের মত লাগে। একটা চায়ের দোকানে ঢুকে মানিক। ঠান্ডা পরিবেশের কারনে মানিকের একটু একটু শীত লাগে। তাই মানিক নিজেকে ফ্রেশ করার জন্য চায়ের অর্ডার করে। চা এর কাপে চুমুক দিতে দিতে কখন যে চা শেষ করে ফেলল মানিক নিজেও টের পায়নি। বৃষ্টি একটু থামতেই মানিক দোকান থেকে বের হবার জন্য দরজায় পা রাখে। তখন আসিফের সাথে দেখা হয়। আসিফ আর মানিক সমবয়সী। তাদের বন্ধুও বলা যায়। কারন তারা একত্রিত হলেই বন্ধুসুলভ আচরন,কাজ সবকিছু করে। মানিককে দেখে আসিফ বলে
- কিরে মানিক তুই এখানে?
-- হ্যা.... বাসায় ভাল লাগছেনা। মাঠে বসেছিলাম কিন্তু বৃষ্টি এসে সব গড়বড় করে দিল।
- হুম.... বৃষ্টি আমারও ভাল লাগেনা।
-- আমার লাগে তবে এই মুহুর্তে লাগছেনা।
- তাইলে চল বোর্ড খেলি।
-- চল তাহলে।
.
মানিকের বাবার নাম মহিন মিয়া। তিনি কিছুটা অসুস্থ। তাই আজ নৌকায় যেতে পারেনি। পাকশী বাজারে গিয়ে ফার্মেসীর দোকানে গিয়ে কিছু ঔষধ নিল। তারপর তিনি বাসায় ফিরলেন। তার স্ত্রী সামিনা বেগল বলল
-- ঔষধ কিনেছ?
- হ্যা কিনেছি।
-- আচ্ছা... রুমি এসেছে।
- কি বল কখন এসেছে?
-- এইতো সন্ধ্যার একটু আগে।
সামিনা বেগম রুমিকে ডাক দেয়। রুমি তখন ঘরের অন্য রুমে ছিল। সামিনা বেগমের ডাক শুনে রুমি আসে। মহিন মিয়াকে দেখে সালাম দেয়। মহিন মিয়া বলে
- ভালো আছ রুমি?
-- জ্বি আংকেল ভাল আছি।
- কখন এলে তুমি। কীভাবে এলে। আমাদেরকে তো জানাতে পারতে যে তুমি আসবে।
-- কোনদিন তো আসিনি। তাই হঠাৎ করেই আসলাম যাতে আপনারা চমকে যান।
- ভাল করেছ এসে। কিভাবে এলে?
-- নৌকায় এসেছি।
- ও আজকে তো আমি নৌকায় যাইনি। গেলে হয়ত তোমার সাথে ঘাটে দেখা হয়ত।
-- আমি মানিক নামের একটা ছেলের নৌকা করে এসেছি।
- হাহাহাহাহ.... মানিক তো আমারই ছেলে। তুমি তো আমার নৌকা করেই এসেছ।
রুমি অবাক হয়ে যায় এই কথা শুনে। তারপর আমতা আমতা করে বলে
-- না মানে আমি তো উনাকে চিনিনা।
- আচ্ছা ও বাড়িতে আসুক। আসলে পরিচয় করিয়ে দেব।
মহিন মিয়া তখন তার স্ত্রী সামিনাকে ডাক দেয়
- সামিনা... এই সামিনা
-- কি বল
- রাত হইছে। খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা কর। রুমি এসেছে আর কতক্ষন ওকে বসিয়ে রাখবে।
-- মানিক আসেনি যে এখনো।
- ও আসতে আসতে রাত হয়ে যাবে বোধ হয়।
তখন সামিনা আর কোন কথা না বলে সবাইকে খাওয়ার জন্য ডাক দেয়। সবাই মিলে খেতে শুরু করে।
.
মানিক এবং আসিফ বোর্ড খেলা শুরু করে। খেলতে খেলতে রাত প্রায় এগারোটা বাজে। মানিক তখন খেলা শেষ করে বাসায় যাওয়ার জন্য রাস্তায় হাঁটা শুরু করে। প্রায় দশ মিনিট পরে বাসায় পৌঁছায়। দরজায় কড়া নাড়ে। ভেতর থেকে অনিক জিজ্ঞেস করল
- কে?
-- আমি। দরজা খোল।
- ও ভাইয়া। খুলতেছি।
মানিক দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে। মানিক বলে
- কিরে বাবা কই?
-- ঘুমিয়ে পড়েছে।
- রুমি কই?
-- এতক্ষনে বোধ হয় ঘুমিয়ে পড়েছে...
- তুই কি করছিস তাহলে?
-- আমি এত ক্ষন রুমি আপুর সাথে গল্প করছিলাম। একটু আগে উনি ঘুমুতে গেছে। তাই এখনো জেগে আছি।
- ঠিক আছে যা ঘুমিয়ে পড়।
বলে মানিক তার নিজের রুমে যায়। খাওয়া দাওয়া করতে ইচ্ছে করছেনা তাই লাইট অফ করে শুয়ে পড়ল। কিন্তু ঘুম আসছেনা। বৃষ্টির দিনে মানিকের এইটাই সমস্যা। সহজে ঘুম আসতে চায়না। খানিকক্ষন শুয়ে থাকার পর বিরক্ত হয়ে জানালা খুলে। বাইরে চাঁদের আলো চিকচিক করছে। মানিক ঘর থেকে আস্তে আস্তে বের হয়। উঠোনে কিছুক্ষন বসে থাকে। ঠান্ডার সময়ে ভেজা উঠোনে অনেক রাতে চাঁদের জোছনা সবমিলে একটা মনোমুগ্ধকর একটা পরিবেশ। মানিক অনেকক্ষন ধরে বসে থাকে উঠোনে। শরীর জুড়ে আশ্চর্য্য এক অবসাদ। গুন গুন করে গান গাওয়া শুরু করে মানিক। গান শেষ করে আকাশে তাকিয়ে দেখে চাঁদটা তার ঠিক মাথার উপরে। তার মানে এখন মধ্য রাত। হঠাৎ করেই রুমকির কথা মনে পড়ে যায়। কি সুন্দর মেয়েটি!!!! একটু চঞ্চল টাইপের তবে ভীষন ভালো। রুমকিকে হাত ধরে নৌকা থেকে নামানোর কথা মনে পড়ায় মানিকের মুখে হালকা হাসি ফুটে। চোখ বন্ধ করে রুমকির কথা ভাবে। রুমকির হাসি,কথা বলা,হেঁটে যাওয়া সবকিছু ভাবতে ভাবতে আরো অনেকক্ষন উঠোনে বসে কাটিয়ে দেয়। আস্তে আস্তে উঠে পড়ে। ঘরে ঢুকে নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে। কিন্তু তার ভীষন ক্ষুধা লাগে। আলমারি খুলে দেখে পাতিলের নিচের দিকে অল্প কয়টা ভাত আছে। কি আর করবে। সেগুলোকেই রাতের সম্বল ভেবে খাওয়া শুরু করে। অন্তত আজ রাত তো চলে যাবে। ক্ষুধা কিছুটা হলেও ঘুচে যাবে। তরকারি গুলো কেমন যেন পানসে লাগছে। খেতে ইচ্ছে করছেনা তবুও ক্ষুধার কারনে খেতে হচ্ছে। খেতে তো হবেই। পেটের ক্ষুধা কেই বা সইতে পারে। ভাত শেষ করে তিন গ্লাশ পানি খেয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে। আস্তে আস্তে মানিক ঘুমের দেশে তলিয়ে যায়।
.
(চলবে)।
āĻāϞ্āĻĒ āϏংāĻ্āϰāĻš āĻāϰা āĻāĻŽাāϰ āύেāĻļা। āϰোāĻŽাāύ্āĻিāĻ, āĻৌāϤিāĻ, āϰāĻŽ্āϝ, āĻৌāϤুāĻ āϏāĻš āĻšাāĻাāϰো āĻāϞ্āĻĒ āĻāĻে āĻāĻŽাāϰ āϏংāĻ্āϰāĻšে।
āϰāĻŦিāĻŦাāϰ, ⧍ā§Ē āϏেāĻĒ্āĻেāĻŽ্āĻŦāϰ, ⧍ā§Ļā§§ā§
2288 (1)
āĻāϰ āĻĻ্āĻŦাāϰা āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰা
Rahathossain1010100@gmail.com
āĻāĻ āϏāĻŽā§ে
ā§§:⧍ā§Ē AM

āĻāϤে āϏāĻĻāϏ্āϝāϤা:
āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝāĻুāϞি āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ (Atom)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ