āϰāĻŦিāĻŦাāϰ, ⧍ā§Ē āϏেāĻĒ্āϟেāĻŽ্āĻŦāϰ, ⧍ā§Ļā§§ā§­

2286 (8)

বিবাগীর বৃষ্টিবিলাস
পর্ব নং :- (৮/৮) [শেষ পর্ব]
লেখক :- বিবাগী শাকিল
======================
.
আমার জীবনটা থেমে থাকবেনা। সে তার নিজের গতিতেই বয়ে চলবে। আমি কখনো কোন কিছুর প্রতি আকৃষ্ট হইনি। জগৎ সংসার আমাকে টানেনা। সেজন্য আমি নিজেই নিজের সঙ্গী হয়ে জীবন কাটাব। এতে কোন পিছুটান থাকবেনা। যদিও বা থাকে সেগুলোকে এড়িয়ে চলতে হবে। আমি সমাজের নামীদামী মানুষ হতে চাইনা। আমি বিবাগী হয়েই থাকতে চাই। আমি কারো মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে থাকতে চাইনা। মায়া খুব বিপদজনক একটা জিনিস। আমি তার থেকে একশ হাত দূরে থাকতে চাই। যে যাই বলুক, আমার পুরো অস্তিত্ব জুড়ে বিবাগী শব্দটা মিশে আছে। আমি এই ছন্নছাড়া জীবনেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। আমার কোন চাওয়া পাওয়া নেই। তবুও আমি না চাইতেই অনেক কিছুই পেয়ে যাই। আমি সেই পাওয়া ধরে রাখিনা। নিজেকে সম্পদশালী করতে ইচ্ছে করেনা। কি হবে এই সম্পদ দিয়ে? শুধু শুধু চিন্তা বাড়ে। একজন কোটিপতির চেয়েও একজন দিনমজুর শান্তিতে ঘুমাতে পারে। তার কোন কিছু চুরি যাওয়ার ভয় নেই। আমারো কোন কিছু হারানোর ভয় নেই। ভয় পাবই বা কেন? আমি যদি ভীতু হতাম তাহলে এতদিনে আর বিবাগী হতে পারতাম না। আমার বৃষ্টিকে আমি খুব ভালোবাসি। আমি হয়ত কোন এক সময় মরে যাব। কিন্তু আমার বৃষ্টিটা অমর। সে মরবেনা। সে তখন অন্য কোন বিবাগীর গায়ে ঝরে পড়বে। অন্য কোন নিপাকে ভিজিয়ে দিবে। এই বৃষ্টি ঝরে পড়ুক চিরকাল। পুরো পৃথিবী জুড়ে সে বিচরণ করুক। সব বর্জ্য দূর করে দিয়ে পৃথিবীটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে তুলুক। তবে মনে হয় আমি যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন এই বৃষ্টি অন্য কোন বিবাগীর গায়ে পড়বেনা। আমার গায়েই পড়বে। আর আমাকে ক্রমে ক্রমে মহাবিবাগী বানিয়ে দিবে। বিবাগীর বৃষ্টিবিলাস, এটা আসলে কি? এটা হয়ত আমার কল্পনা। কিন্তু এই কল্পনাতেই আমি পেয়ে যাচ্ছি বাস্তবতার কিছু নির্ধারিত ভবিষ্যৎ। তাহলে কি এই বৃষ্টিকে কল্পনা বলা যায়? মনে হয়না। আমি বলব, বিবাগীর বৃষ্টি হচ্ছে কল্পনা আর বাস্তবের মাঝখানের সিঁড়ি। আমি সেই সিঁড়ি বেয়ে দুই জগতেই যেতে পারি। যেখানে কোন কাল্পনিকতার ছোঁয়া নেই। সব বাস্তব। দুটো আয়না যখন মুখোমুখি রাখা হয় তখন এক আয়নার প্রতিচ্ছবি অন্য আয়নার উপর প্রতিফলিত হয়। আর সে প্রতিফলনের কোন অন্ত নেই। আমার বৃষ্টিরও কোন অন্ত নেই। এটা হচ্ছে আমার অন্তহীন বৃষ্টি।
.
বেশ কয়েকদিন কেটে গেল। আমি আমার আগের ধরাবাঁধা নিয়মের ভেতরেই আছি। আমি পরিবর্তিত হতে চাইনা। রাত জেগে অন্ধকার উপভোগ করা, কখনো বা রাস্তায় সোডিয়াম আলো উপভোগ করা, আবার কখনো ধূসর জোছনা উপভোগ করা। এসব নিয়েই আমি রয়ে গেলাম আগের মত। মেসের তিন মাসের ভাড়া বাকি পড়ে আছে। মেসের মালিক আমাকে তেমন একটা পছন্দ করেন না। সেজন্য তিনি এতদিন ভাড়ার জন্য তাগাদা দিতেন। কিন্তু এবার মেস থেকেই বহিষ্কার করে দিলেন। আমার অবশ্য তাতে কোন সমস্যা হয়নি। কমলাপুর গিয়ে পিন্টুর সাথে শুয়ে কয়েকটা রাত কাটিয়ে ফেলেছি। রমনা পার্কে শুয়ে জোছনা দেখেছি। অমাবস্যায় তীব্র অন্ধকারে নিজেকে চেনার চেষ্টা করেছি। মধ্যরাতে বুড়িগঙ্গার কনকনে ঠান্ডা পানিতে সম্পূর্ণ খালি গায়ে গোসল করেছি। একটা বৈঠাবিহীন নৌকায় চড়েছি। এধরনের নৌকায় চড়ার অনুভূতি খুব আনন্দদায়ক। তখন সত্যিই নিজেকে মহাবিবাগী মনে হয়। নিশাচর প্রাণী হয়ে রাত কাটাই, দিনে ঘুমাই, বিকেল আর রাতে ঘোরাঘুরি করি। মাঝে মাঝে কাউকে পটিয়ে হোটেলে গিয়ে খাই। আর আমার সিগারেট তো আমার পকেটেই থাকে। এইতো চলছে আমার জীবন। মুক্ত বিহঙ্গের মত উন্মুক্ত জীবন। মোবাইলটা মেসেই পড়ে আছে। নিয়ে আসিনি। সেজন্য হয়তবা মইনুল ভাই আমার কোন খোঁজ পাচ্ছে না। আমি অবশ্য তাকে একবার দেখতে গিয়েছিলাম। উনি এখন পুরোপুরি সুস্থ অবস্থায় আছেন। ভাবিকে নিয়ে নিজের বাসায় চলে এসেছেন। সেই সাথে সুমিকেও নিয়ে এসেছেন। কারন শেষ পর্যন্ত সুমির বিয়েটা হয়নি। ওর বিয়ের আগেই জামান সাহেব পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। তিনি বর্তমানে জেলে আছেন। তবে আমার মনে হয়না উনি খুব বেশিদিন জেলে থাকবেন। তিনি ধনী এবং ব্যবসায়ী মানুষ। জামিনের ব্যবস্থা খুব তাড়াতাড়ি করে ফেলতে পারবেন। পুলিশ উনাকে গ্রেফতার করার কারনে সুমির হবু শ্বশুর বিয়েটা ভেঙ্গে দেয়। তাতে অবশ্য সুমি এত বেশি কষ্ট পায়নি। আমি কিছুদিন আগে তাকে যখন দেখেছিলাম তখন ওকে তেমন দুঃখী মনে হয়নি। আমার মনে হয় বিয়েটা ভেঙ্গে যাওয়ায় সুমি নিজেই সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছে। কিন্তু কেন খুশি হয়েছে সেই কারনটা আমার জানা নেই। সে আমাকে দেখে অনেক খুশি হয়ে গিয়েছিল। কেন খুশি হয়েছে সে কারনটাও আমার জানা নেই। সুষমা ভাবী এখন আমায় অনেক পছন্দ করেন। কারনটা আমি এতদিন জানতাম না। সেদিন জানতে পারলাম। ভাবি সেদিন আমাকে বলেছিলেন
-- "সত্যি কথা বলতে গেলে আমি তোমায় দেখতে পারতাম না। তোমাকে দেখলেই আমার খুব বিরক্ত লাগত। তোমার ভাই একদিন আমাকে বলেছিল তুমি নাকি চোখের দৃষ্টি দিয়ে অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করে তুলতে পারো। তোমার মাঝে নাকি কিছু অদ্ভুত ক্ষমতা আছে। আমি এতদিন বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু হাসপাতালে তুমি যখন ওকে দেখতে গিয়েছিলে তখন আমি নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও তোমার দৃষ্টির উপর ভরসা করতে শুরু করলাম। আর সেই ভরসা তখন বিশ্বাসে রুপ নিল যখন তোমার ভাই সুস্থ হয়ে উঠল।"
আমি ভাবির কথা শুনে অবাক হইনি। কারন আমি জানি মইনুল ভাই সব সময় আমার সম্পর্কে বাড়িয়ে বলেন। এমন ভাবে বলেন যাতে কেউ অবিশ্বাস করতে না পারে। ভাবি প্রথমে অবিশ্বাস করলেও পরে প্রমাণ পেয়ে বিশ্বাস করে নিল। যদিও সেটা কোন যুক্তিযুক্ত প্রমাণ ছিল না। সম্পূর্ণ কাকতালীয় প্রমাণ ছিল। কিন্তু ভাবি সেটাই বিশ্বাস করে নিলেন যেটা তিনি দেখেছেন। আমি তখন ভাবিকে বলেছিলাম
- "ভাবি, আমার কোন ক্ষমতা নেই। আমি ভাইকে সুস্থ করিনি। আল্লাহ নিজেই উনাকে সুস্থ করে দিয়েছেন। তিনি নিজেই আমার দৃষ্টির মাধ্যমে ভাইকে সুস্থ করে দিয়েছেন।"
ইচ্ছে করেই শেষ কথাটা এমন করে বলেছিলাম। যাতে ভাবির কাছে নিজেকে অসাধারণ করে তুলতে পারি। কাজও হয়েছে এতে। ভাবির কাছে এখন আমি একজন এক্সেপশনাল মানুষ। সেদিন থেকেই ভাবি আমাকে খুব স্নেহ করা শুরু করেন। তবে আমার কাছে উনার স্নেহ অত ভালো লাগেনা। উনার আগের ঘৃণাটুকুই আমার কাছে ভাল লাগে। বিবাগীর কয়েকজন হেটার্স না থাকলে চলেনা। কারন হেটার্স যার থাকে সেই তো বিখ্যাত মানুষ। আমার কিছু হেটার্স তৈরী করতে হবে। আগামীতে চেষ্টা করব এই বিষয়টা নিয়ে।
.
নূপুরের রিনঝিন শব্দে আমার কানের শ্রবণ শক্তি একমুখো হয়ে গেল। শুধু রিনঝিন শব্দটাই শুনতে পাচ্ছি। অন্য কোন শব্দ আমার কানে বাজছেনা। পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখি নিপা আসছে। ওর জন্য অনেকক্ষণ বসে ছিলাম। মেস থেকে বের হবার পর থেকে ওর সাথে যোগাযোগ অনেকটাই কমে গিয়েছে। সে এখন তার বাবার অফিস নিয়ে ব্যস্ত। তারপরো সে আমার সাথে যোগাযোগের অনেক চেষ্টা করেছে। আমার কাছে এখন মোবাইল নেই। তাই আমাদের মাঝে কথা হয়নি অনেকদিন। কিছুদিন আগে রাস্তায় হুট করেই ওর সাথে দেখা হয়েছিল। আমাকে দেখে সে একপ্রকার কেঁদেই ফেলেছিল। কারন আমি তার বাবার হত্যাকারী গাড়িকে ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছি। তাকে তার প্রাপ্য অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছি। আমার সামনে কেউ কাঁদলে আমার ভালো লাগেনা। তাই আমি তাকে সেদিন এড়িয়ে গিয়েছিলাম। যাবার আগে সে আমাকে আজকের তারিখটা বলে দিয়েছিল। আজ ওর সাথে দেখা করতে বলল। আমি অনেক আগেই এসে বসে আছি। নিপার আসতে দেরি হল কেন সেটা এখন ওকে দেখে বুঝতে পারলাম। একটা গোলাপি শাড়ির আবরণে নিজেকে ঢেকে রেখেছে সে। তার সাথে ম্যাচ করা গোলাপি পাথরের কানের দুল। হাতে একই রঙের চুড়ি। আমি তাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। বাতাসের ঝাপটায় কুচির ভাঁজগুলো বারবার এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। আমি ওর দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারবনা। ভয়ঙ্কর সুন্দর বলে একটা ব্যাপার আছে। নিপাও ঠিক এখন একজন ভয়ঙ্কর সুন্দরী। তার দিকে তাকিয়ে থাকলে ভয়ঙ্কর কিছু না কিছু ঘটে যাবে। আমি চোখ ফিরিয়ে নিলাম। সেদিনের বিদ্রোহী গানটা মনে মনে গাইতে শুরু করলাম। যাতে আমি নিজের অন্তরকে পাথর করে তুলতে পারি। আপ্রাণ চেষ্টা করছি। একেবারেই যে চেষ্টা সফল হয়নি তা কিন্তু নয়। বেশ ভালোই সাফল্য অর্জন করেছি। অন্তরকে পাথর করার কাজে নিজেকে খুব ব্যস্ত রাখলাম। নিপা কখন পাশে এসে বসল সেটাও টের পেলাম না। আমি চুপটি করে বসে রইলাম। নিপাকে আজ বেশ হাসিখুশিই মনে হচ্ছে। কেন সে আজ এত খুশি সেটাও আমি জানি। কিন্তু ওর যে অনেক কিছুই অজানা পড়ে আছে। নিপা আমাকে বলল
-- "এমন একটা ভাব ধরে আছ যেন তুমি আমাকে দেখতেই পাওনি।"
- "দেখেছি তো। এই যে এখন আবার দেখলাম।"
-- "আমায় কেমন লাগছে?"
- "অনেক ভয়ঙ্কর লাগছে।"
-- "আমি এত কষ্ট করে তোমার জন্য সময় নিয়ে সেজেছি। আর তুমি কিনা বললে আমাকে ভয়ঙ্কর লাগছে!"
এই কথাটা নিপা মন খারাপের সুরে বললেও তার মন একটুও খারাপ হয়নি।সে আমার এমন সোজাসুজি উত্তর পেয়ে অভ্যস্ত। আমার মনে হল সে আজ লজ্জা পাচ্ছে। আমার দিকেও তেমন ঘুরে ফিরে তাকাচ্ছেনা। আগে তো সারাক্ষণ আমাকেই দেখত। আজ তার এমন কি হয়ে গেল। ভাবনার অবকাশ পেলাম না। নিপা এর আগেই বলে ফেলল
-- "আমার চিঠিটার মানে এখনো বুঝোনি?"
- "না, ওটা আমার মাথায় ঢুকেনি।"
-- "ভালো করে খেয়াল করে দেখনি তুমি। দেখলে বুঝতে পারতে।"
- "আচ্ছা নিপা, মাটির কলস তোমার কাছে কয়টা আছে?"
-- "দশটা আছে।"
একথা বলেই নিপা শব্দ করে হেসে ফেলল। আমার প্রশ্নটার উত্তর ওর জানা নেই। তারপরো সে আমার সাথে তাল মিলানোর চেষ্টা করছে। আমার অবশ্য খুব ভালো লেগেছে। আমি ওর মুখের দিকে একবার তাকালাম। পুরো মুখে একটা চাপা উত্তেজনার ছাপ পড়ে আছে। আমি ওকে বললাম
- "এতগুলো দিয়ে কি কর?"
-- "তোমার কাঁচের কলসে যাতে জলের অভাব না পড়ে সেজন্য আমার সব মাটির কলসকে ভর্তি করে রাখি।"
- "তুমি হয়ত ভুলে যাচ্ছ আমার কাছে কোন কাঁচের কলস নেই। যেটা ছিল সেটা আমি তোমার সামনেই ভেঙ্গে ফেলেছি।"
-- "বিবু, তুমিও হয়ত ভুলে যাচ্ছ আমি ভাঙ্গা কাঁচের টুকরোকে জোড়া লাগাতে পারি। তুমি কাঁচের কলসটা ভেঙ্গে দেয়ার পর আমি সেটা একটু একটু করে সযত্নে জোড়া লাগিয়েছি। নেক্সট টাইম তোমার বৃষ্টি শুরু হলে দেখে নিও তোমার হাতে কাঁচের কলসটা কতটা সুন্দর ভাবে মানিয়েছে।"
নিপা খুব সন্তর্পণে আমাকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে। আমি খুবই অবাক হয়ে গেলাম। যে নিপাকে আমি আগে তুড়ি মেরে বিভ্রান্ত করেছিলাম সে আজ আমাকেই বিভ্রান্ত করছে। বাহ, আমার বৃষ্টির ক্ষমতা তো দেখছি অসাধারণ। নিপার গায়ে আমার বৃষ্টির ঝাপটা পড়ার কারনে কিছু ক্ষমতা সেও পেয়ে গেল। ভেতরে ভেতরে খুব হিংসা লাগল আমার। আমি নির্বিকার ভাবে বসে রইলাম। আমি যে এখন ওর কথা শুনে বিভ্রান্ত হয়েছি সেটা কিছুতেই ওকে বুঝতে দিলাম না। আমি চুপ করে রইলাম। তবে চুপ করে থাকাটা আমার বোকামি হবে। নিপা ভাববে আমি সত্যিই ওর প্রতি নরম হয়ে যাচ্ছি। এটা যাতে সে না ভাবে সেজন্য আমাকে এখন কিছু একটা বলতে হবে। কিন্তু আমি বলার আগেই সে বলল
-- "বিবু, একটা কথা বলব?"
- "বল। নিষেধ করেছে কে?"
-- "আমি জানি তুমি এখন আমার কথা শুনে একটু চমকে গিয়েছ। আসলে আমি কথাগুলো এমনিই বলেছি। তুমি মাঝে মাঝে এমন অদ্ভুত ভাবে কথা বল যে তখন আমার নিজেকে খুব বোকা মনে হয়। সেজন্যে আজ আমিও তোমার অদ্ভুত কথার উত্তর অদ্ভুত ভাবেই দিলাম। সত্যি কথা বলতে তোমার কাছে বিভ্রান্ত হতে আমার খুব ভালো লাগে। নিজেকে বোকা মনে হলেও একটা অন্যরকম তৃপ্তি পাই। মনে হয় কোন এক শূন্যস্থান পূরণ হয়ে গেছে।"
- "নিপা, এখন তোমার বয়সটা বিভ্রান্ত হওয়াকে পছন্দ করে। তাই তোমার ভালো লাগছে। যখন তুমি এই বয়সটা অতিক্রম করবে তখন আর বিভ্রান্ত হতে তোমার ভালো লাগবেনা। আমি জানি আমার একথা তোমার বিশ্বাস হবেনা। কারন এই বয়সটা তোমাকে আমার কথা বিশ্বাস করতে দেবেনা। তুমি এই বয়সটা পাড়ি দিলে দেখবে আমাকেও তোমার ভালো লাগবেনা। তখন আমার সাথে কথা বলতেও তোমার ইচ্ছে করবেনা। নিপা, তোমার এই বয়সকে এত বেশি প্রাধান্য দিওনা। জানোই তো, 'আড়চোখে দেখ তুমি, বয়স দিচ্ছে উঁকি। তার টানে গেলে তোমার, বাঁচাই হবে ঝুঁকি।"
এবার নিপার মন খারাপ হয়ে গেল। মাথা নিচু করে বসে আছে। বাতাসে তার আঁচল দোল খাচ্ছে। চুলের ঝাপটা কয়েকবার আমার মুখে এসে লেগেছে। আমি ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম অনেকক্ষণ ধরে। সে বেশ কিছুক্ষণ ধরে চুপ করে বসেছিল। তারপর দৃঢ় কণ্ঠে বলল
-- "আমি আমার বয়স এখানেই আটকে রাখব বিবু। তবুও আমি তোমার হতে চাই।"
নিপার অর্থহীন কথা শোনার কোন মানেই হয়না। এখানে আর একমিনিট বসে থাকলে ওকে প্রশ্রয় দেয়া হবে। আমি চাইনা সেটা। আমি উঠে দাঁড়ালাম। থমথমে মুখ নিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে আছি। নিপার দিকে তাকাতে পারবনা। তাকালেই প্রশ্রয় দিতে বাধ্য হব। নিপাও উঠে দাঁড়ালো। অনেকটা মিনতির সুরে সে বলল
-- "কি হল বিবু, কিছু বলছনা কেন?"
আমি আসলেই কিছু বলতে পারছিনা। এরকম একটা পরিস্থিতি কিভাবে সামলানো যায় সেটা আমার জানা নেই। আমি অবশ্য চুপ করে থাকার মত ভুল করব না। এখন খুবই সাবধানে থাকতে হবে আমাকে। একটু অসতর্ক হলেই কাঁচের কলস হাতে নিয়ে হাঁটতে হবে। আমি ভাবতে শুরু করলাম নিপাকে কি বলা যায়। কোন কিছুই মাথায় এলোনা। শুধু জেনস সুমনের একটা গান মনে পড়ে গেল। আমি সে গানটাই সুর করে গাইলাম
"একলা চলব আমি, একলা জ্বলব আমি,
আমার কাছে আর কখনো, এসোনাগো তুমি।"
এটুকুই গাইলাম। শুধু এই দুই লাইন মনে আছে আমার। তৃতীয় লাইনটা কিছুতেই মনে পড়ছেনা। অনেক আগে শুনেছিলাম গানটা। অনেকদিন কোন গান শুনিনা। তাই এই গানের আর কোন কিছুই আমার জানা নেই। নিপা যথাসম্ভব মনযোগ দিয়ে গানের কথা গুলো শোনেনি। সেজন্য সে গানের উদ্দেশ্যটা বুঝতে পারল না। আমাকে বলল
-- "আমি তোমায় যে প্রশ্নটা করেছি সেটার উত্তর দাও।"
- "নিপা, আমার একটু কাজ আছে। আমি গেলাম।"
-- "তোমার আবার কি কাজ?"
- "আমি গেলাম। তোমার সাথে পরে কথা হবে।"
বলেই আমি হাঁটা শুরু করলাম। নিপা কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে গেল। এতক্ষণে বোধ হয় সেও বুঝে গেছে আমায় কিছু বলে লাভ হবেনা। আমি পেছন ফিরে তাকাচ্ছিনা। কাঁচের কলসটা সেদিন ভেঙ্গে ফেলার কারনে ওর করুণ মুখটা দেখতে পারিনি। আশা ছিল সেটা বাস্তবে দেখতে পারব। এখন আর সেটা ইচ্ছা করছেনা। ওর করুণ মুখ দেখলেই যে আমাকে মায়ায় পড়তে হবে। আমি জানি নিপা খুব কষ্ট পেয়েছে। হয়ত চোখ ছলছল করছে। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে নিপা এখন আমার দিকে তাকিয়ে নেই। তাই আমি পিছু ফিরে ওর দিকে তাকালাম। দেখলাম সে অন্য দিকে তাকিয়ে চোখের পানি মুছছে। আমি আবার মুখ ফিরিয়ে নিলাম। গানের তৃতীয় লাইনটা মনে করার চেষ্টা করছি। মনে পড়ছেনা। হতে পারে সেই লাইনটা নিপাকে বেশি আঘাত করবে। সেজন্য আমার অবচেতন মন সেটা আমাকে বলতে দিচ্ছেনা। আমি খুব দ্রুত পায়ে হাঁটা শুরু করলাম। কারন নিপা এখন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি যত তাড়াতাড়ি ওর চোখের আড়াল হতে পারব ততই ভালো। ওর গোলাপি আঁচলে আমার জন্য বরাদ্দ করা আকাশটা শুন্য হয়ে আছে। শুন্যের মাঝেও অনেক সুখ আছে। সেটা নিপাকে খুজে নিতে হবে। কোথায় যাওয়া যায় ঠিক বুঝতে পারছিনা। তবে আমি জানি আজ রাসেল আর রুপার বিয়ে ধুমধাম করে হচ্ছে। আমার ফোন বন্ধ তাই সেটা রাসেল আমাকে জানাতে পারেনি। না জানালেও সমস্যা নেই। আমি আন্দাজ করতে পারছি। রাসেল এর বিয়েটা দেখে আসতে ইচ্ছে করছে। ওর বিয়েতে গিয়ে ওর জায়গায় আমাকে আর রুপার জায়গায় নিপাকে কল্পনা করব। দেখি, কেমন লাগে। নিপা যদি এটা জানে তাহলে অবশ্যই সে অনেক খুশি হবে। নিপা আমার কাছে কিছু কষ্ট চেয়েছিল। আজ তাকে সেটা দিয়ে ফেলেছি। যাই হোক, আমি রেলস্টেশনের দিকে পা বাড়ালাম। দেখি, গয়হাট্টা গ্রামে আমার আর নিপার বিয়েটা কেমন ভাবে হয়। আমি নিজেই বিয়ের অতিথি আবার আমি নিজেই বর। অদ্ভুত তো, এরকম একটা ব্যাপার কল্পনা করেই শিহরিত হয়ে গেলাম।
.
কমলাপুর ষ্টেশনে এসে একটা প্ল্যাটফর্মে বসলাম। ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে। আরো কিছুক্ষণ পরে ছাড়বে। প্রচুর লোকের সমাগম। এত গিজগিজ আমার ভালো লাগেনা। পিন্টুকে দেখলাম ঐ গানটা গেয়ে ভিক্ষা করছে। এই ভীড়ের মাঝে আমি নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছিনা। কি করা যায় এখন? অনেক কিছুই করতে পারি আমি। পুরো ষ্টেশন ফাঁকা করে দিতে পারি। শরীরটা কেঁপে উঠল আমার। ঝরঝর করে বৃষ্টি শুরু হল। মূষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। আর সাথে সাথে পুরো ষ্টেশন ফাঁকা হয়ে গেল। একটাও জনমানবের চিহ্ন দেখতে পেলাম না। শুধু আমি একাই বসে আছি প্ল্যাটফর্মে। বাহ, নিজেই নিজের ক্ষমতা দেখে বিমোহিত হয়ে গেলাম। আমি কি মানুষ? নাকি আমি অন্য কিছু? অন্য কিছু হলে সেটা কি? ভুত, প্রেত, আত্মা, জ্বিন, নাকি অশরীরী কোন কিছু। নাকি আমি কোন মহাপুরুষ? বুঝতে পারছিনা। তবে একটা পরিচয় তো আমার সর্বদাই থাকে। আমি বিবাগী। আর কোন পরিচয় লাগবেনা আমার। বৃষ্টির প্রবল বর্ষণে আমি ভিজে গেলাম। আশে পাশে তাকিয়ে দেখলাম দূর থেকে কেউ একজন হেঁটে হেঁটে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমি ওকে দেখে চিনতে পারলাম। ও আমার দ্বিতীয় সত্তা। কিন্তু তাকে দেখে আমি প্রচন্ড অবাক এবং ভয় পেয়ে গেলাম। কারন এখন তার গায়ে বিয়ের শেরওয়ানি দেখতে পাচ্ছি। আমি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। এ আমি কি দেখছি। এ দৃশ্যটা যাতে আমি না দেখি সেজন্য কত কিছু করলাম আর এখন তীরে এসে তরী ডুবে যাবে? আমার বিস্ময়ের ঘোর না কাটতেই ও এসে আমার পাশে বসল। আমিও চমকিত অবস্থায় বসলাম। সে আমাকে বলল
-- "কিরে, কেমন আছিস?"
- "ভালো আছি। তবে তোর জন্য বেশিদিন ভালো থাকতে পারব না।"
-- "আমার কারনে বিবাগী হয়েছিস। সো, রেসপেক্ট দিয়ে কথা বলবি।"
- "কিভাবে তোর কারনে বিবাগী হলাম বল তো শুনি?"
-- "তুই যে সব সময় সঠিক আন্দাজ করিস সেটা তো আমার কারনে। আমিই ওটা তোর মনে ঢুকিয়ে দিই। নিপা তোকে ভালোবাসে সেটা তুই আগে থেকে জানলি কিভাবে? আমার কারনে। শিউলি বাড়িতে ফিরে আসবে নাকি পালাবে এসব কিছু আমিই তোর মনে ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম। আজ যে রাসেল আর রুপার বিয়ে হচ্ছে সেটাও তোকে আমি বলে দিয়েছি। সেজন্য তুই নির্ভুল অনুমান করতে পারিস। এখন বল, তোর বিবাগী হবার পেছনে আমার অবদান আছে কিনা?"
আমি কিছু বললাম না। নীরব সম্মতি দিয়ে স্বীকার করলাম ওর অবদান আছে। সে আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে শুরু করল। আমাকে উপহাস করে বলল
-- "প্রকৃত বিবাগী তুই না, ওটা আমি।"
- "না, তুই তো শুধু আমার দ্বিতীয় সত্তা। প্রকৃত বিবাগী আমি।"
-- "আমি যদি তোকে সাহায্য না করতাম তাহলে তুই কখনো বিবাগী হতে পারতিনা। তাই প্রকৃত বিবাগী আমি।"
- "তোর কোন অস্তিত্ব নেই। অস্তিত্বহীন কেউ বিবাগী হতে পারেনা। আসল বিবাগী আমি।"
-- "ঠিক আছে, তোকে আর কখনো আমি সাহায্য করব না। তুই যে নিকট ভবিষ্যতে শেরওয়ানি পরে নিপাকে বিয়ে করবি তখন দেখব তোর কেমন লাগে।"
আমি ওর কথা শুনে হেসে ফেললাম। সে আমার হাসি দেখে চমকে গিয়েছে। আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে হা করে। এখন যদি ওর মুখে কয়েকটা মাছি ঢুকে যেত তাহলে আমি খুব খুশি হতাম। কিন্তু আমার বৃষ্টিবিলাসে মাছির কোন স্থান নেই। আমি ওকে হাসতে হাসতে বললাম
- "তুই আমায় সাহায্য না করলে আমার কিছু আসবে যাবেনা। কিছুদিন আগে ট্রেনে থাকাকালীন সময় তুই আমাকে বলেছিলি আমার সামনে নাকি বড় বিপদ আছে। ওটা মিথ্যা ছিল। আমার কোন বিপদ নেই। ওটা আমাকে ভয় পাওয়ানোর জন্য বলেছিলি। আর আজ তুই এই শেরওয়ানিটা ইচ্ছে করে পরে এসেছিস যাতে আমি তোকে দেখে চমকে যাই।"
-- "তুই কি করে বুঝলি?"
- "হা হা হা। তুই বোধ হয় ভুলে যাচ্ছিস, আমি যদি আমার দ্বিতীয় সত্তা হিসেবে তোকে আনতে পারি তাহলে নিশ্চয় আমার তৃতীয় সত্তাকেও আনতে পারব। বিশ্বাস না হলে পেছনে তাকিয়ে দেখ।"
সে আমার কথা শুনে খুব দ্রুত পেছন দিকে তাকাল। আমিও সেদিকে তাকালাম। দেখলাম আমার তৃতীয় সত্তা বৃষ্টিতে ভিজছে। ওর হাতে সেই কাঁচের কলস যেটা নিপা জোড়া লাগিয়েছে। কিন্তু সে কলসটা হাতে নিয়ে বসে থাকেনি। একটা গান গাচ্ছে সে। আমি আর আমার দ্বিতীয় সত্তা কান পেতে গানটা শুনলাম। এটা সেই গান যার তৃতীয় লাইন আমার মনে পড়েনি। তৃতীয় সত্তার মনে পড়েছে গানের তৃতীয় লাইনটা। বাহ, ভালোই মিলেছে। আমরা চুপি চুপি ওর দিকে তাকিয়ে গান শুনছি। ও গান গাচ্ছে
"একলা চলব আমি, একলা জ্বলব আমি
আমার কাছে আর কখনো, এসোনাগো তুমি,
আমি প্রেমের বাগান পুড়িয়ে দিয়ে, করব মরুভূমি।"
আমরা গানটা শুনলাম। ও বেশ আয়েশ করেই গাইলো। গানটা গাওয়ার পর দেখলাম সে কাঁচের কলসটা হাত থেকে সজোরে মাটিতে ফেলে ভেঙ্গে ফেলল। এটা দেখে আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। মনে মনে বললাম, যাক বাবা বাঁচা গেল। কিন্তু পর মুহূর্তেই একটা অদ্ভুত কান্ড ঘটে গেল। কাঁচের কলসটার ভাঙ্গা অংশ গুলো নিজে নিজে জোড়া লেগে যাচ্ছে। আর নিজে নিজেই সেটা ওর হাতে উঠে গেল। আমি অবাক হয়ে গেলাম। মনে হচ্ছে এই কলসটার হাত থেকে আমি রেহাই পাব না। আমি দেখলাম আমার তৃতীয় সত্তা গানটা আবার গেয়ে কলসটা ভেঙ্গে ফেলল। কলসটা আবার জোড়া লাগল। সে আবার গান গেয়ে ভেঙ্গে ফেলল। এরকম করে চলতেই থাকল। তার মানে কাঁচের কলসের হাত থেকে আমার মুক্তি নেই। ওটা ভাঙ্গা অবস্থায় থাকলে আমি ভালো থাকব। আর যদি ওটা সম্পূর্ণ নিখুঁত থাকে তাহলে আমাকে নিপার মাটির কলস থেকে জল নিতে বাধ্য হতে হবে। আমি সেটা চাইনা। তাই তৃতীয় সত্তাকে লাগিয়ে দিলাম কলসটাকে বারবার ভেঙ্গে ফেলতে। ও আজীবন এমনই করতে থাকুক। আমি এবার দ্বিতীয় সত্তাকে বললাম
- "দেখলি, আমি তোকে ছাড়াও চলতে পারি।"
-- "হুম, তা দেখলাম। এখন কি তুই আমায় ভুলে যাবি?"
- "না। হাজার হোক, তুই তো আমারই একটা সত্তা। তুই যে আমার কোন উপকার করিসনি তা কিন্তু আমি বলিনি। তুই আমাকে ছাড়া বিবাগী হতে পারবিনা। আর আমি তোদের ছাড়া বিবাগী হতে পারবনা। তাই তুই আর আমি দুজন মিলেই হয়ে গেলাম বিবাগী।"
সে আমার কথা শুনে অনেক খুশি হয়ে গেল। শেরওয়ানিটা খুলে মাটিতে ফেলে দিল। সেটা বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে। আমি আর সে দুজন মিলেই ওটার দিকে তাকিয়ে অবজ্ঞার হাসি হাসলাম। শেরওয়ানিটার জন্য কেমন যেন মায়া লাগছে। কিন্তু আমি তো মায়া কাটাতে শিখে গেছি। তাই আমার কোন দুঃখ থাকবেনা। বৃষ্টির দাপট ক্রমে ক্রমে কমতে শুরু করল। আস্তে আস্তে একটু আগের ব্যস্ত ষ্টেশনটা আমার চোখে স্পষ্ট হচ্ছে। বৃষ্টি এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। তাই আমি এখনো শত শত মানুষের ভীড়ে আমার দ্বিতীয় এবং তৃতীয় সত্তাকে দেখতে পাচ্ছি। দ্বিতীয়টা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তৃতীয়টা গান গেয়ে কাঁচের কলসটা ভাঙতে ব্যস্ত। আমি ট্রেনের হুইসেল শুনতে পেলাম। যাত্রীরা ট্রেনে ওঠার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আমিও উঠে দাঁড়ালাম। সেই সাথে আমার দ্বিতীয় সত্তাও দাঁড়ালো। আমি ওর থেকে বিদায় নেয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। এর মাঝেই সে আমাকে বলল
-- "আয় তোকে একবার জড়িয়ে ধরি।"
আমি কিছুনা বলে ওর দিকে দুহাত বাড়ালাম। ও এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমিও ধরলাম। ট্রেনের চাকা ঘুরতে শুরু করেছে। আমি ওকে "আসি, পরে দেখা হবে" হবে বলে তড়িঘড়ি করে ট্রেনের ছাদে উঠে গেলাম। বৃষ্টির দাপট ক্রমশ কমে যাচ্ছে। ট্রেনের গতি একটু একটু করে বাড়তে শুরু করল। আমি ট্রেনের ছাদে শুয়ে পড়লাম। দুএক ফোঁটা বৃষ্টি এখনো আমার গায়ে পড়ছে। আমি শুনতে পেলাম কে যেন আমাকে "বিবু" বলে ডাকল। আমি চমকে গেলাম। এই নামে আমায় শুধু নিপাই ডাকে। এখানে সে আসবে কোথাথেকে। তাকে তো আমি যেখানে দেখা হয়েছিল সেখানে রেখে এসেছি। আর নিপার কণ্ঠ আমি চিনি। এখন আমাকে যে ডাকল সেটা পুরুষের কণ্ঠ।  আমি উঠে বসলাম। দেখলাম আমার দ্বিতীয় এবং তৃতীয় সত্তা দুজনে আমার দিকে তাকিয়ে একসাথে বলছে
-- "বিবু, আমরা তোর সাথে আছি। তুই অনেক দূর যাবি। তোকে মানুষের মনে গেঁথে থাকতে হবে। এদেশের মানুষ যাতে তোকে খুব করে মনে রাখে সেজন্য তোকে বিবাগী হয়েই থাকতে হবে। বিবু, শুরু কর তোর পথচলা। যে পথের কোন শেষ নেই। শুরু কর একটা নতুন অধ্যায়। যে অধ্যায়ের কোন অন্ত নেই। তোর পথ আমরা নিষ্কণ্টক করে রাখব। তোর ময়লাটে কালো পা জোড়া দিয়ে সেই পথে তুই হেঁটে যাবি। আজ থেকে শুরু কর বিবু, নতুন পথচলা শুরু কর........।"
ওরা আরো কিছু বলতে চাচ্ছিল। কিন্তু ততক্ষণে আমার বৃষ্টি পুরোপুরি শেষ হয়ে গেছে। আমি ওদের আর দেখতে পেলাম না। ওদের কথা শুনে আমার চোখ ছলছল করে উঠল। ট্রেনের চাকার গতি আরো অনেক বেড়ে গেল। বাতাসের ঝাপটায় আমার লম্বা চুল এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। আমি আকাশের দিকে তাকালাম। তার মত অসীম হতে খুব ইচ্ছে করছে। কারন বিবাগীত্বের কোন সীমা নেই। চোখটা বেশি ছলছল করছে। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে অশ্রু মুছে ফেললাম। আমার বৃষ্টি আমার কাছে একটা অমূল্য সম্পদ। এটাকে আমি কারো সাথে ভাগাভাগি করতে চাইনা। এটা একমাত্র আমার। এই বৃষ্টি আমায় সবসময় মজার দৃশ্য দেখায়না। মাঝে মাঝে কাঁদিয়ে দেয়। আজ আমাকে এই বৃষ্টিটা কাঁদিয়ে দিল। এটা কষ্টের কান্না নাকি আনন্দের কান্না আমি ঠিক জানিনা। আমি শুধু জানি আজ থেকে আমাকে নতুন পথে হাঁটতে হবে। বিবাগীর পথচলা শুরু করতে হবে। নিজেকে মানুষের অন্তরে গেঁথে দিতে হবে। আমার সাথে তো আমার বৃষ্টি আছেই। তাই আমি কোথাও থেমে গেলে এই বৃষ্টি আমায় সেখান থেকে উদ্ধার করবে। আমাকে আবার চলতে সাহায্য করবে। মুচকি হাসলাম আমি। সে হাসির সাথে একটা বিশাল আকাশের মত অসীম গর্ব মিশে আছে। চোখ বন্ধ করে আবার শুয়ে পড়লাম। বৃষ্টিকে কিছু বলতে ইচ্ছে করছে। কি বলব ভেবে পাচ্ছিনা। তাই সেই পুরনো কথাটাই আবার বললাম, "ধন্যবাদ বৃষ্টি। তোমার কারনে আমার নিজেকে অসাধারণ মনে হয়।"
.
(সমাপ্ত
.
লেখক :- বিবাগী শাকিল

āĻ•োāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāχ:

āĻāĻ•āϟি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āϟ āĻ•āϰুāύ