বিবাগীর বৃষ্টিবিলাস
পর্ব নং :- (৭/৮)
লেখক :- বিবাগী শাকিল
===================
.
সন্ধ্যার পর থেকে এক ঘন্টা যাবত ড্রয়িংরুমে বসে আছি। অপেক্ষা করছি কখন ডাকাত আসবে। অপেক্ষা করতে সচরাচর বিরক্ত লাগে। কিন্তু এখন এই পরিস্থিতিতে আমার বিরক্ত লাগছেনা। কারন আমি জানি ডাকাত বলে আখ্যায়িত যে মানুষটা আসবে সে বোরিং না। তাকে আমি ভালো করে না হলেও মোটামুটি ভাবে চিনি। আমি যখন বাসায় এসেছিলাম তখন দেখলাম সেলিনা তার রুমে বসে সাউন্ডবক্সে গান শুনছে। গায়কের সাথে সে নিজেও লিপ সিং করছে। কাজের মেয়েরা একটু এরকমই হয়। বাসায় কেউ না থাকলে তারা নিজেদেরকে বাড়ির কর্ত্রী মনে করে। তবে একদিক থেকে এটাকে খারাপ বলা যায় না। বিনোদন তো সবার জন্য। সে কেন বাদ পড়বে। আজ বাসায় কেউ নেই বলেই সে গান শুনতে পারছে। সবাই থাকলে তো পারতনা। আমি তার বিনোদনের মাঝখানে গোলমাল পাকিয়ে দিলাম। তাকে চা বানাতে বলেছি। সে অবশ্য এতটাও বিরক্ত হয়নি। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই চা নিয়ে এল। আমাকে বলল
-- "ভাইজান, বাসায় কেউ নাই। তয় আপনি এতক্ষন এইখানে বসে আছেন ক্যান?"
- "আমায় দেখে তোমার কি ভয় লাগছে?"
-- "না, ভয় পামু ক্যান?"
- "তুমি জানো আজ বাড়িতে কে আসবে?"
-- "আপনিই তো সেদিন যাওনের সময় কইছিলেন আইজ ডাকাইত আইব।"
- "তোমার কি মনে হয়? ডাকাতটা কি ছেলে না মেয়ে?"
-- "আমি জানিনা।"
- "ঠিক আছে, তুমি যাও। আবার তোমার রুমে গিয়ে গান শোন। সাউন্ড বাড়িয়ে দিও একটু। যাতে আমিও শুনতে পাই।"
সেলিনা চলে গেল। আমি গরম চায়ের কাপে চুমুক দিলাম। তীব্র গরমে জিহ্বা একটু ঝলসে গেল। এখন আর চায়ের স্বাধ পাচ্ছিনা। ঝলসানো জিহ্বার স্বাধ গ্রহণ করার ক্ষমতা অনেক কমে যায়। কাপটা টেবিলের উপর রেখে দিলাম। খেতে ইচ্ছে করছেনা। গানের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। সেলিনা একটা হিন্দী গান বাজাল। আমি হিন্দী ফিন্দী বুঝিনা। তারপরেও একটা বিশেষ কারনে হাসি পেল আমার। সবাই ইনোসেন্ট হবার অভিনয় করে। কিন্তু তারা কেউই জানেনা যে, তাদের সাধিত গোপন অপরাধজনক কর্মগুলি ছোট ছোট ভুলের মাধ্যমে নিজেদেরকে প্রকাশ করে। যেমনটা করেছিল জামান সাহেব। গানের সাউন্ড আরো একটু বেড়ে গেল। গায়ক দেঙ্গা, ফেঙ্গা কিসব গাচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছিনা। সেলিনা বোধ হয় হিন্দী বুঝতে পারে। আমি গভীর মনযোগের সহিত গানটা শুনতে লাগলাম। এমন সময় আমার শরীর প্রচন্ড একটা ঝাঁকুনি খেল। আগেও এমন হয়েছিল, কিন্তু এই প্রথম এত তীব্রভাবে ঝাঁকুনি খেলাম। রিমঝিম বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টা চলাকালীন সময়ে আমি মনের উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি। সে ক্ষমতা আমার আয়ত্তের বাইরে চলে যায়। আমার হাতে বন্দী থাকা অবস্থায় মনটা তেমন কিছু করতে পারেনা। কিন্তু বৃষ্টি শুরু হলেই আমি কাঠের পুতুল হয়ে যাই। সব ক্ষমতা আমার মনের কাছে চলে যায়। তখন সে ইচ্ছানুযায়ী আমার মনের পর্দায় বিচিত্র রকমের দৃশ্য ফেলে। আমি মুগ্ধ হয়ে সেগুলো দেখি। আমার দ্বিতীয় সত্তা আমার পাশে সোফায় বসে আছে। আজ আমার গায়ে যেমন পোশাক তার গায়েও ঠিক একই পোশাক। তার মানে নিকট ভবিষ্যতে আমি এমনই থাকব। সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বললাম
- "কিরে, এই অসময়ে এলি কেন? দেখছিস না, আমি একজনের জন্য অপেক্ষা করছি।"
-- "তুই তো দেখছি নিমকহারাম। তোর মাথায় বুদ্ধি ঢুকিয়ে দিলাম তোর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবার জন্য। আর তুই কিনা এখন এসব বলছিস?"
আমি একটু লজ্জা পেয়ে গেলাম। লজ্জা পাওয়াটাই স্বাভাবিক। পায়ের উপর পা তুলে চুপ করে বসে রইলাম। সে বলল
-- "আজ কে আসবে জানিস?"
- "হ্যা, জানি।"
-- "বল তো কে আসবে?"
- "নিপা আসবে।"
-- "নিপা আসবে সেটা বুঝলি কি করে?"
- "ফোনে কথা বলার সময় নিপা বলেছিল ওর বাসায় কোনদিন মদ আসেনি। ওর বাবা হুমায়ুন আহমেদ যদি মদ খেতেন তাহলে নিশ্চয়ই তিনি বাসায় মদ নিয়ে আসতেন। কারন ধনী ব্যক্তিরা নিজের ঘরে বসেই মদ খেতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তিনি বাসায় মদ নিয়ে আসেননি তার মানে হল তিনি মদ খেতেন না। যদি খেতেন তাহলে একবার না একবার নিয়ে আসতেন। হুমায়ুন সাহেব যে নিপার বাবা সেটা জানতে আমার তেমন বেগ পেতে হয়নি। উনি ব্যবসায়ী মানুষ ছিলেন। খোঁজখবর খুব সহজেই নিতে পেরেছি। আর তাছাড়া নিপাকে যখন চব্বিশ বছর একা থাকার প্রশ্নটা করলাম তখন সে অস্বস্তিতে পড়ে যায়। বিব্রত হয়ে তার কথা এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। তার মানে হল সে জানে রবিনসন ক্রুশোর এডভেঞ্চার কাহিনী। তাই সে ভয় পেয়ে গেল। ভয় পাওয়ার কারন হল ওয়ার্নিং চিঠিটা। চিঠিটা যদি সে না লিখত তাহলে সে ভয়ও পেতনা, কথার প্রসঙ্গও পাল্টাত না।"
-- "যাক, আমার দেয়া বুদ্ধিটা তুই ভালোই কাজে লাগাতে পারলি।"
- "আচ্ছা শোন, নিপা যে আমায় অমতম চিঠিটা দিল তার মানেটা কি তুই জানিস?"
-- "ওটা আমিও জানি, তুইও জানিস। কিন্তু তুই খেলতে পছন্দ করিস। সেজন্য চিঠিটা সুমির কাছে দিয়ে খেলা করছিস।"
- "বাহ, তুই তো দেখছি সবই জানিস।"
আমার কথা শুনে ওর মুখে একটা তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠল। আমি মুগ্ধ হয়ে তার হাসির দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমার যতদুর মনে হয় এরকম তৃপ্তির হাসি আমি কখনো এত সুন্দর করে হাসতে পারব না। সে মুখে চাপা হাসি নিয়েই আমাকে বলল
-- "আচ্ছা, এবার বল তোর প্রতি নিপার এত আগ্রহ কেন?"
- "নিপা নিঃসঙ্গ মানুষ ছিল। আর সে ভীষণ সুন্দরীও বটে। যার কারনে ওর বান্ধবীরাও জেলাসি হয়ে ওর সাথে কম মিশত। আর ছেলেরা তো ওর মত সুন্দরীকে কামনা করবেই। আমি যেদিন ওকে প্রথম দেখেছিলাম সেদিন ওর চোখে ঘুম ঘুম ভাব ছিল। একজন নিয়মিত আরলি রাইজারের চোখ এমন থাকেনা। যার থেকে বোঝা যায় সে নতুন আরলি রাইজার। হুমায়ুন সাহেব মারা যাবার পর থেকে সে নামাজ পড়া শুরু করে। ফজরের নামাজ পড়ে আর ঘুমায় না। বাইরে এসে হাঁটাহাঁটি করে। তার লাইফটা ছিল বোরিং। সেই লাইফে কোন চার্মিং ঘটনা ছিল না। প্রথম দিন আমার বিবাগী টাইপ কথা শুনে সে প্রচন্ড বিভ্রান্ত হয়েছিল। আর সেই বিভ্রান্তি থেকেই আমার প্রতি তার আগ্রহের সৃষ্টি হয়।"
আমি কথাগুলো বলে আবার টেবিল থেকে চায়ের কাপটা নিলাম। চা এতক্ষণে তীব্র গরম থেকে কুসুম গরমের পর্যায়ে চলে এসেছে। আমি কাপে চুমুক দেয়া শুরু করলাম। আমার দ্বিতীয় সত্তা আগের মতই বসে আছে। তার চোখে মুখে তাচ্ছিল্যের ভাবটা আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি। সে একপ্রকার সেরকম করেই বলল
-- "আচ্ছা, নিপার ব্যাপারটা বুঝলাম। এখন বল নিপার প্রতি তোর আগ্রহ আছে কিনা?"
- "না, আমার কারো জন্য কোন আগ্রহ নেই। আমি মায়া কাটাতে শিখে গেছি।"
-- "মিথ্যে বলিস না। জেনে রাখ, নিকট ভবিষ্যতেই তোকে কেউ নিপাকে বিয়ে করার জন্য পরামর্শ দিবে। আর তুই উত্তরে 'হ্যাঁ' বলবি।"
আমি একটু চমকে গেলাম ওর এই কথাটা শুনে। সেই সাথে চিন্তিতও হয়ে গেলাম। আমি তো আগেই প্রমাণ পেয়েছি যে, সে আমাকে নিকট ভবিষ্যতের পূর্বাভাস দেয়। তার মানে সে এখন যেটা বলছে সেটা ভবিষ্যতে সত্যিই হবে। আমি কি তাহলে বিবাগী না? এত সহজে কি হাল ছেড়ে দেব? নিপার প্রতি আমার আগ্রহ আছে এটা আমিও মানি। ওকে আমি ভীষণ পছন্দ করি সেটাও মানি। তাই বলে ওকে বিয়ে করে ফেলব এমন কোন কিছু আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। আমার কাছে কেমন যেন অস্বস্তি লাগছে। কি করব বুঝতে পারছিনা। হঠাৎই মাথায় এল যে আমার কিছু একটা করার আছে। সৃষ্টিকর্তা মানব জাতিকে সব কিছু দিলেও কিছু কিছু জিনিস নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন। তার মধ্যে দুটা হল অতীত ও ভবিষ্যত। শুধু বর্তমানটা মানুষের হাতে দিয়েছেন। আর বর্তমানটা তাদের হাতে তুলে দেয়ার কারনেই কিছু মানুষ প্রকৃতিতে বিশ্বাস করা শুরু করেছে। যদি মানব জাতির হাত থেকে বর্তমান কেড়ে নেয়া হয় তাহলে আর কেউ প্রকৃতিতে বিশ্বাস করবেনা। সবাই অলমাইটিতেই বিশ্বাসী হবে। যাই হোক, সেটা বড় কথা না। আমি চাইলেই বিয়ের পরামর্শের প্রতিউত্তরে 'না' বলতে পারি। অবশ্যই পারব, কারন তখন বর্তমান আমার হাতে থাকবে। আমি এসব কিছু ভেবে একটু নিশ্চিন্ত হতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু পরক্ষণেই আরো অনেক গুণ বেশি দুশ্চিন্তা ঘিরে ধরল আমাকে। এর কারন হল, আমি যাই করি না কেন, কখনো ভবিষ্যত বদলাতে পারব না। তার মানে সে যা বলেছে সব ঠিকই বলেছে। আমি ভবিষ্যতে 'হ্যাঁ' বলবই। আমি চিন্তায় মগ্ন হয়ে আছি। এমন সময় সে বলল
-- "ওটা নিয়ে পরে ভাবিস। এত দুশ্চিন্তা করার বিষয় না ওটা। এখন বল নিপা যখন আসবে তখন তোকে দেখে সে কি করবে, তার রিয়েকশান কেমন হবে সেটা নিয়ে ভেবেছিস?"
- "না তো, এটা নিয়ে তো ভাবিনি।"
-- "ঠিক আছে, সেলিনাকে বল ড্রয়িংরুমে বসে থাকতে। আর তুই ভেতরের কোন এক রুমে চলে যা। সেলিনাকে কি বলবি সেটা জানিস তো? নাকি আবার আমাকেই বলতে হবে?"
- "আমিই বলব। তুই যেতে পারিস এখন।"
সে চলে গেল। আমার ঝুমঝুম বৃষ্টিও শেষ হল। শেষ হতেই আমার ঘোর কেটে গেল। তাকিয়ে দেখি সেলিনা আমার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখেমুখে বিস্ময় আর ভয় দুটোই বিরাজ করছে। ওকে আরো একটু ভয় পাইয়ে দেবার জন্যে আমি মৃদু হাসলাম। কাজ হয়েছে এতে। ভয়ের পরিমাণ আরো দ্বিগুণ বেড়ে গেল। সে আমতা আমতা করে বলল
-- "ভাইজান, আপনি একা একা কার লগে কথা কইতাছেন?"
- "তুমি কি ভয় পেয়েছ?"
-- "ভয় তো পামুই।"
- "তুমি তো সাহসী মেয়ে। তুমি ভয় পাবে কেন?"
-- "কে কইছে আমি সাহসী মাইয়া। আমি ইঁন্দুর দেখলেই ডরাই।"
- "বাহ, তুমি ইঁদুর দেখে ভয় পাও অথচ আজ বাড়িতে ডাকাত আসবে এটা জেনেও তুমি একটু ভয়ও পাচ্ছ না। তুমি আরাম করে গান শুনছ। যেন ডাকাতের বিষয়টা তুমি গায়েই মাখাচ্ছোনা।"
সেলিনা আমার কথা শুনে ঢোক গিলতে লাগল। মুখ কাঁচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এতক্ষণে সে নিশ্চয় বুঝে ফেলেছে আমি তার ব্যাপারটা জেনে গেছি। সে নিপার কোন সহচরী অথবা নিপাকে সে এই ব্যাপারে সাহায্য করেছে। হতে পারে নিপার দেয়া চিঠিগুলো সেলিনা নিজেই এবাড়িতে এনেছে। আমি আবার বললাম
- "দেখ সেলিনা, আমি জানি যে চিঠিগুলো তুমিই এনেছ। নিপা তোমাকে চিঠিগুলো দিয়েছিল এখানে নিয়ে আসার জন্য।"
-- "ভাইজান, আমারে মাফ কইরা দেন। আমি তো খালি ট্যাকার লাইগা এটা করছি।"
- "ঠিক আছে, কোন সমস্যা নেই। তুমি এখানে বসে থাকো। আমি উপরে চলে যাচ্ছি। নিপা এলে আমায় ডেকে দেবে।"
-- "ঠিক আছে ভাইজান।"
.
আমি ছাদে চলে এলাম। সিগারেট ধরিয়েছি। এখন কটা বাজে তা আমার জানা নেই। উপর থেকে নিচের ব্যস্ত শহরটাকে দেখছি। নিপা এলে আমি কি বলব, ও কি বলবে ওটা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেলাম। আচ্ছা, সে কি বুঝতে পেরেছে আমি এখানে থাকব? আমি ঠিক জানিনা। ফোনটা মেসে পড়ে আছে। সাথে থাকলে নিপাকে ফোন দিয়ে কথা বলতাম। তাহলে পরিস্থিতিটা কিরকম হবে সেটা কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারতাম। এখন আর সে উপায় নেই। নিপাকে বিয়ে করার জন্য আমাকে পরামর্শ কে দেবে সেটা নিয়ে ভাবতে শুরু করলাম। অনেকজনই তো আছে পরামর্শ দেয়ার মত। সেই লোকটা কে সেটা বুঝতে পারছিনা। সেলিনা ছাদে এল এমন সময়। বলল নিপা নাকি চলে এসেছে। আমি সিগারেটটা ফেলে দিয়ে নিচে নামলাম। সেলিনাকে বললাম চা বানাতে। সে কিচেনের দিকে চলে গেল। আমি সোজা ড্রয়িংরুমে আসলাম। নিপা বসে আছে। আমি ভেবেছিলাম নিপা আমাকে দেখে চমকে যাবে। অথচ তার তেমন কিছুই হল না। সে আমায় দেখে একটু মৃদু হাসল। আমিই অবাক হয়ে গেলাম। সোফায় গিয়ে বসলাম। নিপা আমাকে বলল
-- "আমি জানতাম বিবু, তুমি আজ এখানে থাকবে?"
- "বিবু কে?"
-- "বারবার বিবাগী ডাকতে ভালো লাগেনা। তাই বিবাগী থেকে সংক্ষেপ করে তোমায় বিবু বানিয়ে দিলাম। এই নামেই ডাকব তোমাকে।"
- "আচ্ছা যাই হোক, আমি এখানে থাকব তুমি সেটা জানলে কি করে?"
-- "আমার মনে হয়েছে তাই বললাম।"
- "নিপা, তুমি কেন এসেছ সেটা আমি জানি?"
-- "জানলে বল।"
- "জামান সাহেব তোমাদের ব্যবসার পুরো অংশটাই দখল করে নিয়েছে তাই তো?"
-- "হ্যাঁ।"
- "তুমি এখন সেটা ফিরে পেতে চাও তাই তো?"
-- "হ্যা।"
- "তুমি কি জানো আজ বাড়িতে কেউ নেই?"
-- "না।"
- "তুমি এই বাড়িতে এমন একটা উদ্দেশ্য নিয়ে আসছ, অথচ খোঁজ নিয়ে দেখনি কেন বাড়িতে কেউ আছে কিনা?"
নিপা কিছু বলল না। চুপ করে আছে। মনে হচ্ছে সে কোন এক বড় ভুল করে ফেলেছে। আমি ওর দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম। ওর পুরো মুখে গভীর হতাশা প্রকাশ পাচ্ছে। এমনিতেই তাকে আমি পছন্দ করি। একারনে তার মলিন মুখ দেখতে আমার ভালো লাগছেনা। আমি ওর পাশে গিয়ে বসলাম। সে কিছু বলল না। আমার দিকে একবার তাকিয়ে আবার চোখ নিচে নামিয়ে ফেলেছে। আমি নিপাকে কোমল স্বরে বললাম
- "তোমার বাবার মৃত্যু কিভাবে হয়েছে সেটা জানো তুমি?"
-- "দুর্ঘটনায়।"
- "তার মানে তোমার বাবার হত্যাকারী হচ্ছে গাড়ি?"
-- "হ্যাঁ।"
- "আচ্ছা, তুমি ভেব না। আমি সেই গাড়িকে শাস্তি পাবার ব্যবস্থা করে দেব।"
নিপা আমার দিকে তাকাল। ও বুঝতে পারছেনা আমি কি বলতে চাচ্ছি। আমি ওর এমন চাহনী দেখে মৃদু হাসলাম। আমার হাসি দেখে সেও হেসে ফেলল। বাহ, হেব্বি সুন্দর লাগছে তো। সেলিনা চা নিয়ে এল। আমি আর নিপা পাশাপাশি বসে আছি দেখে তার মুখটা কেমন যেন হয়ে গেল। সে বিষয়টা সহজ ভাবে নিতে পারছেনা। সেলিনাকে দেখে নিপা একটু মুচকি হাসল। আমি নিপাকে বললাম
- "সেলিনা তোমায় চিঠির ব্যাপারে সাহায্য করেছে। তাহলে আজ বাড়িতে কেউ নেই এটা সে তোমায় বলেনি কেন?"
-- "ওর সাথে আমার কোন যোগাযোগ নেই। শুধু চিঠিগুলো দেয়ার সময় ওকে ব্যাবহার করেছি।"
- "ঠিক আছে। চা খাও।"
নিপা চায়ের কাপ নিল না। আমিই ওর হাতে কাপটা তুলে দিলাম। সে কাপটা হাতে নিয়ে বসে আছে। চুমুক দিচ্ছেনা। একমনে কি যেন ভাবছে। আমি চায়ে চুমুক দিলাম। নিপার দেহ থেকে কি সুন্দর একটা সুগন্ধ বের হচ্ছে। এটা হয়ত কোন পারফিউম হবে। কিন্তু এমন একটা সুন্দর সুগন্ধওয়ালি মেয়ে যদি মুখ গোমড়া করে বসে থাকে তাহলে ভালো লাগেনা। নিপা হঠাৎ করেই আমার দিকে তাকাল। আমি ওর চোখ দেখে একটু কষ্ট পেলাম। দুফোঁটা অশ্রু ওর গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে। নিপা ওড়না দিয়ে চোখের পানি মুছে ফেলল। সেলিনা আমাদের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। হয়ত সে ভাবছে আমার মত এমন একটা ভ্যাগাবন্ডের পাশে এরকম একটা সুন্দরী মেয়ে কিভাবে বসে আছে। কলিংবেলের শব্দ শুনে নিপা একটু চমকে উঠল। তবে একটুও ভয় পেল না। তার মুখ শক্ত হতে শুরু করল। চোখে তীব্র আগুনের শিখা দেখা যাচ্ছে। আমি সেলিনাকে বললাম দরজা খুলতে। নিপা একটুও নড়ল না। তার ভেতর ভয়ের লেশ মাত্র নেই। সে বেপরোয়া ভাবেই বসে আছে। সেলিনা দরজা খুলল। জামান সাহেব, উনার স্ত্রী, সুমি, ভাবি আর মইনুল ভাই সবাই একসাথেই ঘরে প্রবেশ করল। মইনুল ভাই বোধ হয় হাসপাতালে থাকতে চাননি। তাই তিনি দুজন নার্স নিয়ে এসেছেন। নার্স দুজন ওদের সাথেই ঘরে প্রবেশ করল। ওরা মইনুল ভাইকে উনার রুমে নিয়ে গেলেন। রুমে যাবার আগে তিনি আমাকে আর নিপাকে ভালো করে তাকিয়ে দেখলেন। জামান সাহেব আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছেন। সুমি ভ্রু কুচকে অন্য রকম অদ্ভুত এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ভাবি আজ তেমন কঠোর চোখে তাকালেন না। একটু খুশি খুশিই মনে হচ্ছে উনাকে। আমি তখন নিচুস্বরে নিপাকে বললাম
- "তুমি যাও নিপা। তোমার বিবুর উপর ভরসা রেখো।"
বলতে গিয়ে গলাটা কেঁপে উঠল আমার। এভাবে 'তোমার বিবু' বলাটা আমার উচিত হয়নি। আমার এই কথা শুনে নিপার মুখ থেকে গম্বীরতা দূরীভূত হয়ে গেল। পুরো মুখে কোমলতার আভাস দেখা যাচ্ছে। নিপা তার মায়াবী চোখ দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি সেই চোখে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি একটা বিশাল ভরসার আকাশ। যে আকাশকে আমি আমার আঙ্গুলে ধরে রেখেছি। নিপা উঠে চলে গেল। যাওয়ার সময় কারো দিকেই তাকায়নি। খুবই শান্ত ভাবে গিয়েছে। আমি বুঝে ফেলেছি সে আমার উপর সম্পূর্ণরুপে ভরসা করা শুরু করেছে। তার দায়িত্বটা এবার আমাকে পালন করতে হবে। সুমি আমাকে বলল
-- "এটাই কি সেই ডাকাত?"
- "না। ডাকাত আসেনি। ও আমার বান্ধবী। বাড়িতে কেউ নেই দেখে আমি ওকে এখানে ডেকেছি। যাতে গল্প করে সময় কাটাতে পারি।"
সুমির মুখটা আরো গম্ভীর হয়ে গেল। আমি জানি সেও বিষয়টাকে অন্য চোখে দেখছে। জামান সাহেব বোধ হয় একটু রেগে গেলেন। তিনি ভারী গলায় আমাকে বললেন
-- "তুমি তো দেখছি আচ্ছা বেয়াদব ছেলে। তুমি আমার বাড়িতে বসে মেয়েদের সাথে আড্ডা দিচ্ছ। এটা কি তুমি পার্টি সেন্টার পেয়েছ?"
- "হুমায়ুন সাহেব কিন্তু মদ খেতেন না। কেউ তাকে ষড়যন্ত্র করে মদ খাইয়ে দিয়েছে।"
জামান সাহেব একেবারেই চুপসে গেলেন। উনার মুখে এখন রাগের কোন চিহ্নই নেই। তবে তিনি এখন অনেক ভয় পাচ্ছেন। ভীত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি উনাকে ভয় পাইয়ে দেয়ার জন্য মৃদু হাসলাম। তিনি থেমে থেমে আমাকে বললেন
-- "মেয়েটা কে ছিল? ওকে চেনা চেনা লাগছে।"
- "চেনা চেনা লাগাই ভালো। পুরোপুরি চিনে ফেললে খুব বিপদে পড়বেন। ভুলেও আর চেনার চেষ্টা করবেন না।"
জামান সাহেব আর কিছু বললেন না। এমন সময় নার্স দুজনের মধ্যে একজন এসে বলল আমাকে নাকি মইনুল ভাই ডাকছে। আমি মইনুল ভাইয়ের রুমে গেলাম। উনি শুয়ে আছেন। আমি উনার খাটে গিয়ে বসলাম। তিনি নার্স দুজনকে ড্রয়িংরুমে চলে যেতে বললেন। ওরা যাওয়ার পর তিনি আমাকে বললেন
-- "তোকে আমি কখনো কোন মেয়ের সাথে এভাবে একসাথে বসে থাকতে দেখিনি। এই মেয়েটা কে?"
আমি উনাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবকিছু খুলে বললাম। উনাকে তো আমি আগেই বলেছি যে জামান সাহেব হুমায়ুন সাহেবকে মেরে ফেলেছেন। তখন তিনি আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলেন। তবে এখন পুরো ব্যাপারটা জেনে জামান সাহেবের উপর খুব রেগেও গিয়েছেন। আসলে জামান সাহেবকে বাইরে থেকে পুরোপুরি ভদ্রলোকই মনে হয়। প্রকৃতপক্ষে উনি একটা মিষ্টভাষী শয়তান। মইনুল ভাই কখনো কল্পনাও করতে পারেনি উনার শ্বশুর এরকম জঘন্য একটা অপরাধ করবে। উনি আমাকে বললেন
-- "আমি সত্যিই হতবাক হয়ে গেলাম তোর কথা শুনে।"
- "ভাই, আপনি যখন আমাকে এখানে আসতে বলেছিলেন তখন আমি ঠিকই এসেছি। আমি আপনার কথা রেখেছি। এবার যে আমার একটা কথা আপনাকে রাখতে হবে।"
-- "হ্যাঁ, অবশ্যই রাখব। তুই বল।"
- "আমি জানি আপনি অন্যায় কখনো সহ্য করতে পারেন না। অপরাধ আর অপরাধী দুটোকেই আপনি অনেক ঘৃণা করেন। নিপার ব্যাপারটা আমি আপনার হাতে তুলে দিলাম। আশা করি আপনি তাকে সুবিচার পাইয়ে দিবেন।"
মইনুল ভাই আমার কথা শুনে চিন্তায় পড়ে গেলেন। তিনি এখন শ্বশুরের পক্ষ নিবেন নাকি ন্যায়ের পক্ষ নিবেন সেটা নিয়ে দোটানায় পড়ে গেলেন। তবে আমি খুব ভালো করেই জানি তিনি ন্যায়ের পথেই হাঁটবেন। তিনি নিপাকে অবশ্যই সুবিচার পাইয়ে দেবেন। তার কাছে অপরাধীর কোন জায়গা নেই। এসব ব্যাপার আপনা আপনি ভাবেই আমার মনে চলে এল। আমার মন তো আর মিথ্যে বলেনা। এমন সময় সুমি রুমে এল। তার পুরো মুখ এখনো সেই আগের মত গম্ভীর হয়ে আছে। সুমি অবশ্য নিজে থেকে রুমে আসেনি। তাকে পাঠানো হয়েছে। জামান সাহেব সুমিকে পাঠিয়েছেন আমাদের মাঝে কি কথা হয় সেটা জানার জন্য। কিন্তু সুমি সেটা জানবার চেষ্টা একটুও করেনি। সে রুমে এসেই মইনুল ভাইকে বলল
-- "দুলাভাই, উনার ব্যাপারে আপনার সাথে একটা কথা আছে।"
আমি একটু মৃদু হাসলাম ওর কথা শুনে। ও এখন মইনুল ভাইকে কি বলবে আমি সেটা ভালো করেই জানি। মইনুল ভাই সুমির প্রশ্নের জবাব দিলেন। উনি বললেন
- "কি বলবে বল।"
-- "আমি মুখে বলব না। আপনি নিজে এই চিঠিটা পড়ুন।"
এই বলে সুমি মইনুল ভাইয়ের দিকে একটা কাগজ এগিয়ে দিল। মইনুল ভাই অসুস্থ থাকায় তিনি হাত বাড়িয়ে কাগজটা নিতে পারেননি। সেজন্য সুমি নিজেই কাগজটা মইনুল ভাইয়ের চোখের সামনে মেলে ধরল। তিনি কাগজটার দিকে তাকিয়ে আছেন। তারপর কাগজের লিখা গুলো জোরে পড়লেন। "আমি তোমায় খুব ভালোবাসি। কেন জানিনা। আমার শুধু একটাই চাওয়া। আমি তোমার হতে চাই।" কাগজটা পড়ে তিনি সুমিকে জিজ্ঞেস করলেন
- "এই কাগজটা তোমাকে কে দিয়েছে?"
সুমি আঙ্গুল দিয়ে আমাকে ইশারা করল। মইনুল ভাই প্রচন্ড অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। তিনি বিশ্বাসই করতে পারছেন না আমি এমন একটা কান্ড করতে পারি। তিনি আমাকে কিছু বলার আগেই সুমি আমাকে বলল
- "আপনি দুলাভাইয়ের আত্মীয় তাই আপনাকে কিছু বলব না। তবে আপনি কাজটা উচিত করেন নি। আপনি তো জানেন আমার বিয়ে প্রায় ঠিক হয়েই আছে। এরকম একটা কান্ড করা আপনাকে মানায়নি। আপনি চিঠিতে শুধু অক্ষর গুলো লিখেছেন। তাও এলোমেলো ভাবে। কোন আ-কার, ই-কার নেই। এটা আপনি চালাকি করে এমন ভাবে লিখেছেন যাতে আর কেউ বুঝতে না পারে। আমি প্রতিটা অক্ষর এক এক করে সাজিয়েছি। তারপর সেখানে উপযুক্ত আ-কার, ই-কার বসিয়েছি। তাতেই বুঝতে পারলাম আপনি চিঠিতে কি বলতে চাইছেন। আমি আবারো আপনাকে বলছি। কাজটা আপনাকে মোটেই মানায়নি।"
আমি সুমির কথা শুনে এবার শব্দ করে হেসে ফেললাম। এবার অবশ্য মইনুল ভাইয়ের মুখ গম্ভীর হয়ে গেল। তিনি যে আমার উপর রাগ করেছেন সেটা উনার মুখ দেখেই বুঝতে পারছি। উনার এমন দৃষ্টিভঙ্গি দেখে আমিও গম্ভীর হয়ে গেলাম। ঠান্ডা গলায় সুমিকে বললাম
- "সুমি, তুমি বুদ্ধিমতী মেয়ে সেটা তোমাকে আমি আগেই একবার বলেছিলাম। এবার তুমি চিঠির রহস্য উদঘাটন করে আবার তোমার বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিলে। কিন্তু আফসোসের ব্যাপার হচ্ছে তুমি তোমার বুদ্ধিমত্তা নেগেটিভ সাইডে কাজে লাগিয়েছ। যদি পজিটিভ সাইডে কাজে লাগাতে তাহলে এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পারতে তোমাদের বাড়িতে আসা ডাকাতের উড়ো চিঠি আর এই প্রেম নিবেদিত চিঠির হাতের লিখা একই রকম। যে মেয়েটা একটু আগে আমার সাথে ড্রয়িংরুমে বসেছিল সে মেয়েটাই আমাকে এই চিঠিটা দিয়েছে। আমি আগেই বুঝেছি যে চিঠিতে কি লিখা আছে। চিঠিতে হাতের লিখা দেখেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে তোমাদের বাড়িতে আসা উড়োচিঠি সেই মেয়েটা নিজেই লিখেছে। আমি শুধু তোমাকে চিঠিটা দিয়ে দেখলাম তুমি হাতের লিখা ধরতে পারো কিনা।"
সুমি চমকে উঠল আমার কথা শুনে। সেই সাথে অনেক লজ্জাও পেল। মাথা নিচু করে ফেলল। এবার মইনুল ভাইয়ের মুখ থেকে গম্ভীরতা উবে গেল। উনি মুচকি হাসলেন। আমি আর কিছু বললাম না। চুপচাপ বসে আছি। সুমির কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম আবার। সে বলল
-- "তার মানে সেই মেয়েটা ডাকাত ছিল?"
- "হ্যাঁ।"
-- "তাহলে তো তাকে পুলিশে দেয়া উচিত।"
- "না। ডাকাতি করাটা তার অন্যায় নয়। এটা তার অধিকার।"
সুমি আবার কঠিন চোখ নিয়ে আমার দিকে তাকাল। ও বুঝতে পারছেনা আমি কি বলতে চাচ্ছি। আমি ওর দৃষ্টি সম্পূর্ণরুপে অগ্রাহ্য করে আগের মতই স্থির ভাবে বসে রইলাম। মইনুল ভাই এতক্ষণ চুপচাপ আমাদের কথা শুনছিলেন। এখন তিনি বললেন
-- "মেয়েটাকে আমি এক পলক দেখেছি। সুন্দরীই মনে হচ্ছে।"
- "হ্যাঁ, ওর কাছে আমার জন্য মাটির কলসের অভাব নেই।"
-- "তোকে একটা কথা বলব।"
- "আচ্ছা, করে নেব।"
-- "কি করে নিবি?"
- "আমি জানি আপনি এখন আমায় নিপাকে বিয়ে করার জন্য পরামর্শ দিবেন। সেজন্য আগে থেকেই উত্তর দিয়ে দিলাম।"
-- "ঠিক এই কারনেই মাঝে মাঝে তোর উপর আমার রাগ হয়। আমি মনে মনে যেটা ভাবি সেটাই তুই ধরে ফেলিস। কেউ মানুক আর না মানুক কিন্তু আমি মানি, তুই আসলেই একটা মাইন্ড রিডার।"
একথা বলেই মইনুল ভাই একটু হাসলেন। আমিও উনার হাসির সাথে তাল মিলিয়ে হাসলাম। কিন্তু সুমি প্রচন্ড রকমের বিস্মিত হয়ে গেল। এবার সে হয়ত বিশ্বাস করে নিয়েছে আমার মাঝে আধ্যাত্মিক ক্ষমতা আছে। বিশ্বাস করে নেয়াই ভালো। আমার কোন ক্ষমতা নেই। তবু যদি মানুষ আমায় ক্ষমতাবান ভাবে তাহলে তো আমার খারাপ লাগবেনা। বরং ভালোই লাগবে। আমি ক্ষমতা ছাড়াই হয়ে গেলাম ক্ষমতাধর বিবাগী। আর আমাকে এই পর্যায়ে এনে দিয়েছে আমার বৃষ্টি। এই বৃষ্টিই আমাকে সাধারণের মাঝে রেখেও অসাধারণ করে তুলেছে। সুমি মুখ কালো করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আমি তখন মইনুল ভাইকে বললাম
- "ভাই, আমার কাজ শেষ। এবার আপনার কাজ শুরু।"
-- "ঠিক আছে। আমি তোকে কথা দিলাম। আমি মেয়েটার প্রাপ্য অধিকার ওকে ফিরিয়ে দেব। তুই চিন্তা করিস না।"
- "হুমায়ুন সাহেবের খুনের বিচারের কি হবে?"
-- "সেটা নিয়ে তুই ভাবিস না। আমার কাছে ক্রিমিনালের কোন জায়গা নেই। সে যেই হোক।"
- "ঠিক আছে ভাই। আমি এখন চলে যাব। আপনি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন।"
-- "তোর জন্য কিছু নতুন জামাকাপড় কিনেছি। সেগুলো নিয়ে যা।"
- "ঠিক আছে। আমি ভাবিকে বলছি।"
আমি ভাবিকে ডাকলাম। ভাবি রুমে এসে আলমারি থেকে শার্ট, প্যান্ট বের করে দিলেন। আমি সেগুলো নিলাম। একটা অদ্ভুত পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম। ভাবি আগে আমায় সহ্য করতে পারতেন না। আর আজ উনি আমার সাথে সহজ ভাবেই আচরণ করছেন। কিন্তু কেন? হতে পারে এই বিবাগী ভাবির মনেও ডাকাতি করেছে। উনার মনে স্নেহের সৃষ্টি করেছে। আমি রুম থেকে বের হবার জন্য উদ্ধত হলাম। এমন সময় মইনুল ভাই আমাকে বললেন
-- "তুই সত্যি সত্যি মেয়েটাকে বিয়ে করবি তো?"
আমি কথাটা শুনে থমকে দাঁড়ালাম। পেছন ফিরে উনার দিকে তাকালাম। উনি উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। ভাবিও উদগ্রীব হয়ে তাকিয়ে আছেন। উনি হয়ত আমার বিয়ের কথা শুনে অবাক হয়ে গেছেন। আমি যে বিয়ে করব এটা উনার পক্ষে বিশ্বাস করা কঠিন। আমি মুচকি হেসে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালাম। সাথে সাথে মইনুল ভাইয়ের মুখেও হাসির ঝলক খেলে গেল। আমি মনে মনে খুব হাসছি। কারন মইনুল ভাই মাইন্ড রিডিং জানেনা। শুধু আমি জানি। আমি আর দাঁড়ালাম না। খুনী জামান সাহেবের বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম। রাস্তায় বের হয়েই একটা সিগারেট জ্বালালাম। সিগারেট টানতে টানতেই মেসের দিকে রওনা হলাম।
.
(চলবে)
.
.
লেখক :- বিবাগী শাকিল
āĻāϞ্āĻĒ āϏংāĻ্āϰāĻš āĻāϰা āĻāĻŽাāϰ āύেāĻļা। āϰোāĻŽাāύ্āĻিāĻ, āĻৌāϤিāĻ, āϰāĻŽ্āϝ, āĻৌāϤুāĻ āϏāĻš āĻšাāĻাāϰো āĻāϞ্āĻĒ āĻāĻে āĻāĻŽাāϰ āϏংāĻ্āϰāĻšে।
āϰāĻŦিāĻŦাāϰ, ⧍ā§Ē āϏেāĻĒ্āĻেāĻŽ্āĻŦāϰ, ⧍ā§Ļā§§ā§
2286 (7)
āĻāϰ āĻĻ্āĻŦাāϰা āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰা
Rahathossain1010100@gmail.com
āĻāĻ āϏāĻŽā§ে
⧧:⧍⧧ AM

āĻāϤে āϏāĻĻāϏ্āϝāϤা:
āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝāĻুāϞি āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ (Atom)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ