āϰāĻŦিāĻŦাāϰ, ⧍ā§Ē āϏেāĻĒ্āϟেāĻŽ্āĻŦāϰ, ⧍ā§Ļā§§ā§­

2286 (6)

বিবাগীর বৃষ্টিবিলাস
পর্ব নং :- (৬/৮)
লেখক :- বিবাগী শাকিল
====================
.
রাত প্রায় বারোটার কাছাকাছি। আমি হাঁটছি। মোল্লা সাহেবের বাড়িতে নাস্তা করার পর ক্ষুধা একটু কমে গিয়েছিল। এখন আবার বেড়েছে। ক্ষুধা যদি না থাকত তাহলে কতই যে ভালো হত। এভাবে পেটের দায়ে কেউ রাজকন্যা থেকে নিশিকন্যা হত না। আমি ফুটপাত ধরে হাঁটছি। বাজারের দিকে চলে আসলাম। আশেপাশে কয়েকটা হোটেল খোলা আছে। এগুলো সারারাতই খোলা থাকে। আমার কাছে টাকা নেই তাই হোটেলে গিয়ে কিছু খেতে পারছিনা। কি আর করার আছে আমার, হাঁটতে থাকি। বিচিত্র সব মানুষ দেখছি আমি। কেউ ফুটপাতে বস্তা গায়ে দিয়ে শুয়ে আছে। কেউ গায়ের কাপড়টাকেই টেনে নিয়ে শুয়ে শুয়ে কাঁপছে। এত বড় দুনিয়ায় কত কিছুই তো আছে। শুধু কারো কারো মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। আমারও নেই। সেজন্য মাঝে মাঝে পুরো বাংলাদেশকে আমার বাসস্থান মনে হয়। পরিচিত একজনকে দেখতে পেলাম। মইনুল ভাইয়ের শ্বশুর জামান সাহেবকে দেখলাম। উনিও ফুটপাত ধরে হাঁটছেন। আমি উনার পিছু পিছু এগিয়ে যাচ্ছি। আমাকে এমন কিছু করতে হবে যাতে উনি আমাকে দেখে কিন্তু যাতে বুঝতে না পারে আমি উনাকে আগেই দেখেছি। আমি অন্যদিকে তাকিয়ে দ্রুত পায়ে জামান সাহেবকে ক্রস করে সামনে চলে গেলাম। উনি বোধ হয় এবার আমায় দেখেছে। আমি এমন ভাবে হাঁটছি যেন মনে হয় আমি উনাকে দেখতে পাইনি। জামান সাহেব বললেন
-- "কোথায় যাচ্ছ, বাবা?"
আমি জামান সাহেবের দিকে ফিরলাম। ভদ্রলোক খুবই মিষ্টভাষী। আমায় কেমন বাবা বলে ডাকে। উনার বাড়িতে যখন গিয়েছিলাম তখনও তিনি আমায় বাবা বলে ডেকেছিলেন। আমি মুখটা হাসি হাসি করে বললাম
- "আঙ্কেল, আসসালামু আলাইকুম।"
-- "ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছ?"
- "ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?"
-- "হ্যা ভালো আছি, কোথায় যাচ্ছ?"
- "কোথাও যাচ্ছিনা। ক্ষুধা পেয়েছে তো তাই দেখি আশে পাশে কোন হোটেল পাই কিনা।"
-- "চল চল, আমিও হোটেলের দিকেই যাচ্ছি। একসঙ্গে খাব।"
এটাই তো চেয়েছিলাম আমি। উনার টাকা দিয়ে খেতে পারব। ক্ষুধা মিটে যাবে। আমরা একসঙ্গে হাঁটছি। উনার হাতে একটা ব্যাগ দেখলাম। ভেতরে যথাসম্ভব কাগজ পত্র থাকতে পারে। আমরা হোটেলে ঢুকলাম। যথাসময়ে খাবার চলে এল। আমরা খাওয়া শুরু করলাম। জামান সাহেবকে একটু খুশি খুশি মনে হচ্ছে। আমি বললাম
- "আঙ্কেল, আপনার পরিচিত ভাই, বন্ধু, বা কোন সহপাঠী কেউ কি গত একমাসে মারা গেছে?"
-- "হ্যা, আমার পার্টনার। একসাথে ব্যবসা করতাম। কিছুদিন আগেই মারা গেল। কিন্তু তুমি হঠাৎ এসব জিজ্ঞেস করছ যে?"
- "না, এমনিতেই। উনি কিভাবে মারা গেছেন?"
-- "দুর্ঘটনায়। মদ খেয়ে গাড়ি চালাচ্ছিল।"
- "আপনাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক কেমন ছিল?"
-- "খুবই ভালো ছিল। এমনকি আমি আর হুমায়ুন তো ছোটবেলা থেকেই বন্ধু ছিলাম।"
- "যাই হোক, হুমায়ুন সাহেবের মৃত্যুতে আপনার তো অনেক লাভ হয়েছে। ব্যবসার পুরো অংশীদার এখন আপনি।"
জামান সাহেব আমার কথা শুনে একটু চমকে গেলেন। লোকমা হাতে নিয়ে বসে আছেন। তিনি আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলেন। আমি নির্বিকার ভাবে খাওয়া শেষ করে বললাম
- "আঙ্কেল, আমার খাওয়া শেষ। আমি চলে যাচ্ছি। বিলটা দিয়ে দিবেন। কাল তো বিশ তারিখ। আমি কাল আসছি আপনাদের বাড়িতে। আপনাদের বাড়িতে উড়ো চিঠি দেয়া সেই ডাকাতকে ধরব।"
আমি উনাকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলাম না। হোটেল থেকে বেরিয়ে গেলাম। জামান সাহেব নিশ্চয় একটু ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলেন। বাড়িতে গিয়ে মইনুল ভাইকে হয়ত আমার সম্পর্কে দুএকটা বাজে কথা বলবে। বললে বলুক, আমার কি। আমি আবার ফুটপাত ধরে হেঁটে চলেছি। নিশিকন্যাটা কোথায় আছে কে জানে? খুজে পেলে ভালোই হত। গল্পগুজব করে সারারাত কাটিয়ে দিতাম। পরিবেশ বলে, তোমরা আমাকে একটা কন্যা দাও আমি তাকে রাজকন্যা বানিয়ে দেব। আর পরিস্থিতি বলে, তোমরা আমাকে একটা রাজকন্যা দাও আমি তাকে নিশিকন্যা বানিয়ে দেব। মুচকি হাসলাম আমি। আফসোস করে লাভ নেই। হঠাৎই মোল্লা সাহেবকে চোখে পড়ল। পাশে একটা ব্যাগ রেখে তিনি মাথায় হাত দিয়ে ফুটপাতে বসে আছেন। নিশ্চয় শিউলি আবার পালিয়েছে। মোল্লা সাহেব বোধ হয় খুঁজতে খুঁজতে হয়রান হয়ে গেছে। আমি দ্রুত পায়ে মোল্লা সাহেবের সাথে গিয়ে বসলাম। তিনি আমাকে দেখেই আমার কাঁধে হাত রেখে হাউমাউ করে কেঁদে ফেললেন। আমি বললাম
- "কি হয়েছে চাচা?"
-- "মেয়েটা আবার পালিয়েছে। তুমি সন্ধায় যা বলেছিলে ঠিকই বলেছিলে।"
আমি চুপ করে রইলাম। খুবই কষ্ট লাগল আমার। ভদ্রলোক সব হারিয়ে মেয়েটাকে আকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই মেয়েটাই উনাকে ডুবিয়ে দিয়ে গেল। মেয়েটা স্বাধীনতা চায়। ঠিক স্বাধীনতা না, সে সমান অধিকার চায়। আর এসব মেয়েদের সমর্থন করে কিছু সুবিধাবাদী পুরুষ। কারন মুরগী স্বাধীন হলে শেয়ালেরই বেশি লাভ হয়। মেয়েগুলো যে কেন এই ষড়যন্ত্র বুঝেনা আল্লাহই ভালো জানে। মোল্লা সাহেবের কান্না দেখে আমি উনাকে কি বলব বুঝতে পারলাম না। আমি সান্ত্বনা দেয়া পছন্দ করিনা। তবুও কেন জানি মোল্লা সাহেবকে সান্ত্বনা দিতে ইচ্ছে করল। আমি বললাম
- "চাচা, ভেঙ্গে পড়বেন না। শিউলি দুএকদিন পরেই ফিরে আসবে।"
উনি তো আমার কথা বিশ্বাস করেই নিলেন। কারন তিনি মনে করেন আমি যাই বলি তাই সত্যি হয়ে যায়। অবশ্য আমার মন বলছে শিউলি আর ফিরে আসবেনা। যার সব কিছু আছে তার জীবনে অনেক কিছু থাকেনা। আমি এখন মোল্লা সাহেবকে মিথ্যা কথা বলেছি। সব সময় সত্যি বলতে নেই। এই সত্যটা যে অপ্রিয়। সত্যিটা জানলে মোল্লা সাহেবের বেঁচে থাকার আর কোন ইচ্ছে থাকবেনা। তার চেয়ে ভালো মিথ্যা আশা নিয়ে উনি আরো একটা যুগ বেঁচে থাকুক। আমি আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলাম এমন সময় কেউ একজন মোল্লা সাহেবের ব্যাগটা নিয়ে দৌড় দিল। মোল্লা সাহেব হকচকিয়ে গেলেন। আমরা দেখলাম একটা ছেলে ব্যাগটা নিয়ে পালাচ্ছে। আমি সাথে সাথে উঠে দাঁড়িয়ে ছেলেটার পিছু পিছু দৌড় শুরু করলাম। মোল্লা সাহেবও দৌড়াচ্ছেন। কিন্তু উনি আমার অনেক পিছনে পড়ে আছেন। আমি একটু লম্বা হওয়ায় লম্বা লম্বা পা ফেলে দুরন্ত গতিতে দৌড়াতে পারছি। ছেলেটাকে ধরেই ফেলতাম কিন্তু পারলাম না। অন্ধকারে ঠিকমত না দেখার কারনে ফুটপাতের ভাঙ্গা একটা অংশে আমার পা পড়ে যায়। তাতে আমি হোচট খেয়ে পড়ে গেলাম। সোজা একটা পিলারের সাথে মাথাটা বাড়ি খেল। কাছাকাছি এই পিলারটা থাকার কারনে মাথাটা একটু কেটে গেছে। সজোরে বাড়ি খেয়েছি। মাথাটা টনটন করছে। ছেলেটাকে আর ধরতে পারলাম না। সে পালিয়ে গেল। আমি ভাবলাম মোল্লা সাহেব আমায় ধরে ওঠাবেন। কিন্তু আমি উনার দেখাই পেলাম না। হয়ত উনি পথ ভুল করে অন্য পথে দৌড়াচ্ছে। হলেও হতে পারে। কারন উনি আমার অনেক পিছনে পড়ে ছিল। মাথায় হাত দিয়ে দেখলাম মাথা থেকে রক্ত বের হচ্ছে। রক্তে লাল হয়ে গেছে আমার হাত। ডান পায়ে, মাথায় আর পিঠে ব্যথা পেয়েছি। আমি অনেক কষ্টে উঠে বসলাম। এসময় আমায় দেখার মত কেউ নেই। আমি এই যন্ত্রণা নিয়েও হাসলাম। কারন আমি যতই সাবধানে থাকিনা কেন, আমি কখনো ভবিষ্যত বদলাতে পারব না। সেটা আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
.
অনেক কষ্টে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে আমি মেসে এসে আমার রুমে ঢুকলাম। দৌড়ানোর জন্য আর আঘাত পাওয়ার জন্য পেটের ভাত সব হজম হয়ে গেছে। এখন আবার ক্ষুধা পেয়ে গেল। ঘরে মুড়ি ছাড়া আর কিছুই নেই। আমি তাই খেলাম। শুনেছি মুড়ি খেলে পেট ভরেনা। আমার কেমন পেট ভরে গেল। ফ্রেশ হবার জন্য বাথরুমে গেলাম। ঠান্ডা পানি শরীরে লাগতেই শীতের কাঁপুনিটা আরো অনেক বেড়ে গেল। আমি তাড়াতাড়ি করে এসে শুয়ে পড়লাম। কাঁথাটাকে পুরো গায়ে ভালোভাবে জড়িয়ে নিলাম। তারপরেও কাঁপছি আমি। নিপা বলেছিল ফোনটা অন করতে। সে নাকি কথা বলবে বলেছিল। আমার তো কাঁথা থেকে বের হতেই মন চাচ্ছেনা। ফোন অন করার কথা তো বাদই দিলাম। নিপার সাথে তো আমি কথা বলতেই পারব। কাল তো নিপার সাথে আমার দেখা হবেই। আমি বরং একটু ঘুমানোর চেষ্টা করি। চেষ্টা নিষ্ফল হল। বৃষ্টি আবার শুরু হয়েছে। আমার ভীষণ প্রিয় বৃষ্টি এসেছে। এই বৃষ্টি নিয়ে আমি অনেক গর্বিত। আমি ছাড়া আর কারোরই এটা নেই। আমি খাটে শুয়ে আছি। আর আমার দ্বিতীয় সত্তা খাটের একপাশে বসে আছে। সে আমাকে বলল
-- "তাহলে বুঝে ফেলেছিস, আমি তোকে ভবিষ্যৎ দেখাই?"
- "না বোঝার কি আছে। বুঝলাম তো।"
--  "যত চেষ্টাই করিস, তুই কখনো ভবিষ্যৎ বদলাতে পারবিনা।"
- "হ্যা, তা তো জানি।"
-- "তোকে যে বলেছিলাম তোর বিবাগী হবার পিছনে আমার অবদান রয়েছে, এটা কেন বলেছিলাম বল তো।"
- "তুই বল।"
-- "না আমি বলব না। তুই বুঝে নিস। এখন বল হুমায়ুন সাহেবের মৃত্যুতে তুই কি জামান সাহেবকে দায়ী করছিস?"
- "কিছুটা করছি। তবে সেটা নিতান্তই দুর্বল অনুমান।"
-- "ঠিক আছে, তোর মাথায় একটা বুদ্ধি ঢুকিয়ে দিলাম। তোর দুর্বল অনুমান এবার দৃঢ় হবে। একটু ভালো করে ভেবে নিস, জামান সাহেবের হাত না থেকে অন্য কারোও হাত থাকতে পারে।"
একথা বলেই সে চলে গেল। আমি কিছু বুঝলাম না। আমার মাথায় তো কোন বুদ্ধি এল না। অযথাই আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম। বৃষ্টিটা এখনো ঝরছে। আমি ভিজে যাচ্ছি। অথচ আমার একটুও ঠান্ডা লাগছেনা। বরং আমার ভিজতে খুবই ভালো লাগছে। আমি কোন এক বিল্ডিং এর ছাদে বসে আছি। পুরো আকাশে লাল হলুদ মেঘের ছড়াছড়ি। একটুও নীলের চিহ্ন নেই। স্বপ্নপুরীর দেশে আছি আমি। আমি খুবই আনন্দিত হয়ে গেলাম। এই স্বপ্নপুরীর দেশে কোন এয়ারপোর্ট নেই। ওখানে যেতে কোন পাসপোর্ট লাগেনা, কোন ভিসা লাগেনা। কারোরই এই দেশে ঢোকার অধিকার নেই। শুধু আমিই এই দেশে ঢুকতে পারলাম। ভাবতেই নিজেকে অসাধারণ মনে হল। তবে আমার মনে হচ্ছে এই দেশে ঢুকার অনুমতি আরো একজনের আছে। সে হল নিপা। কিভাবে জানি সেও এই দেশে আসার অনুমতি পেয়ে গেল। আসুক, তাতে আমার কি। আমি ছাদে বসে বৃষ্টিতে ভিজি। এক একটা বৃষ্টির ফোঁটা আমাকে বিবাগী থেকে মহাবিবাগী বানিয়ে দিচ্ছে। একটা ছায়া দেখতে পেলাম। কোন এক মেয়ে মানুষের। আমি পেছনে তাকিয়ে দেখলাম। এ যে নিপা। হাতে ছাতা নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমার পেছনে দাঁড়িয়ে আমার মাথার উপর ছাতা ধরে আছে। আমি যাতে বৃষ্টিতে না ভিজি সেজন্যে। আমার প্রচন্ড হাসি পেয়ে গেল। যে বৃষ্টি আমি নিজে সৃষ্টি করেছি আমাকে নাকি সেই বৃষ্টি থেকে রক্ষা করবে। এই বৃষ্টিটা আমার জন্যেই ঝরে পড়ে। একটা বৃষ্টির ফোঁটাও আমার গায়ে পড়া থেকে কেউ আটকাতে পারবেনা। নিপা ছাতা হাতে ধরে থাকলেও আমি ভিজতে পারছি। বিবাগীর বৃষ্টিকে পৃথিবীর কোন ছাতা আটকাতে পারবেনা। আমি নিপার বোকামি দেখে হাসলাম। কিছু বললাম না। নিপা তার চোখ দিয়ে দেখতে পাচ্ছে ছাতার কারনে আমার গায়ে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছেনা। আর আমি আমার চোখ দিয়ে দেখতে পাচ্ছি আমি একটা বৃষ্টির ফোঁটাও মিস করছিনা। নিপা সেটা ঘুণাক্ষরেও টের পাচ্ছেনা। অবশ্য টের না পাওয়াই ভালো। সে না হয় তার ভুল ধারণা নিয়েই শান্তিতে থাকুক। অন্তত সে এটাতে তো সুখ খুজে পাবে। সুখ সবাই খুজে পায়না। কারন সুখ সবাইকে ধরা দেয় না। তাই হাজারো কোটি মানুষ মিথ্যা সুখের আশ্রয় নেয়। আর আমিও সেই হাজারো কোটি মানুষের মত একজন আশ্রিত বিবাগী। আমি সত্য সুখ চাইনা। ওটা আমার পুষেনা। তাই আমিও চুপচাপ বৃষ্টিতে ভিজছি। আর নিপা ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে আছে। এভাবেই না হয় কয়েক যুগ পেরিয়ে যাক। তাতে কোন বিশেষ ক্ষতি হবেনা। হঠাৎ করেই আমার বৃষ্টি শেষ হয়ে গেল। আর আমিও নিজেকে আমার খাটেই আবিষ্কার করলাম। গলা শুকিয়ে গেছে। পানি খেতে ইচ্ছে করছে খুব। আমি খাট থেকে নামলাম। পানি খেয়ে আবার শুলাম। পানি খাওয়ার পর একটু আরাম লাগল আমার। তবে আমার এখন আর ঘুম আসছেনা। নিশাচর প্রাণী হয়ে গেলাম। একা একা কিছু না করে জেগে থাকাটা খুব বিরক্তিকর। আমাকে কিছু একটা করতে হবে। আবার খাট থেকে নামলাম। ড্রয়ার থেকে মোবাইলটা বের করলাম। অন করার সাথে সাথেই নিপার ফোন পেলাম। মেয়েটা বোধ হয় অনবরত ট্রাই করে যাচ্ছিল। তাই ফোন অন করার সাথে সাথে কল পেলাম। আমি কলটা রিসিভ করলাম
- "হ্যালো।"
-- "তোমার সমস্যাটা কি? তোমাকে তো সন্ধ্যায় বলেছিলাম ফোন অন করতে। আমি সেই কখন থেকে ট্রাই করছি।"
- "অনেক চেষ্টা করার পর যখন কোন মানুষ কাঙ্ক্ষিত জিনিস পায় তখন সেই মানুষটা অনেক খুশি হয়ে যায়। আমি তোমাকে সেই খুশিটা দিতে চেয়েছিলাম।"
-- "তুমি বোঝাতে চাচ্ছ যে, তুমি একজন দুর্লভ মানুষ?"
- "যতটা দুর্লভ তুমি ভাবছ ততটা না আবার যতটা সহজলভ্য হিসেবে আশা করছ ততটাও না।"
-- "আচ্ছা, বুঝলাম। আর বলতে হবেনা। এখন বল কি কর?"
- "কিছু করছিনা। তবে এখন কিছু করতে ইচ্ছে করছে।"
-- "কি করতে ইচ্ছে করছে?"
- "মদ খেতে ইচ্ছে করছে।"
-- "হঠাৎ মদ খেতে ইচ্ছে করছে কেন?"
- "হাবিব তার প্রেমিকার বিয়ের পরে মদপান করে গভীর নেশায় মগ্ন ছিল। সেই মুহূর্তে তার অনুভূতি কেমন ছিল সেটা জানার জন্য আমারো মদ খেতে ইচ্ছে করছে।"
-- "হাবিব কে?"
- "তুমি চিনবেনা।"
নিপা কিছু বলার আগেই ফোনটা কেটে গেল। ভাবলাম নেটওয়ার্কে সমস্যা হয়েছে। কয়েক মিনিট অপেক্ষা করার পরেও নিপার কল এল না। এবার বুঝতে পারলাম নিপার ফোনের ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেছে। আমার ফোনে কয়েক টাকা আছে। এবার আমি নিজেই কল দিলাম। নিপা কল রিসিভ করল
-- "স্যরি, আমার ফোনের ব্যালেন্স শেষ।"
- "হ্যা, তা বুঝতে পারলাম।"
-- "আমার কি ইচ্ছে করছে জানো?"
- "জানিনা তো।"
-- "তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।"
- "আমি কি আসব?"
-- "তুমি আমার বাসা চেনো নাকি?"
- "হ্যাঁ চিনি। আমি তোমার বাসায় একবার গিয়েছিলাম?
-- "কই, কবে আসছ? আমি তো দেখিনি।"
- "সেদিন যে কাঁচের কলসটা ভাঙলাম সেটা তো তোমার বাড়িতেই ভেঙ্গেছি।"
-- "তুমি যে কি বল আমি কিছুই বুঝিনা। ঠিক আছে, চিনলে তো ভালো কথা। চলে এসো এখন।"
- "একটা শর্তে আসতে পারি।"
-- "কি শর্ত?"
- "আমি আসলে আমাকে মদ খাওয়াতে হবে।"
-- "আমার বাসায় তো মদ নেই। কোনদিনও আমার বাসায় মদ আসেনি।"
- "নিপা তোমার হাতের লিখা খুব সুন্দর। তবে অমতম নাকি কিসব হাবিজাবি লিখেছ কিছুই বুঝতে পারলাম না।"
-- "যেদিন বুঝতে পারবে সেদিন এ ব্যাপারে কথা বলবে। এখন তুমি আসো।"
- "আচ্ছা আমি আসছি। তুমি ঘুমিয়ে পড়। আমি এসে তোমায় ডেকে তুলব।"
একথা বলেই ফোনটা রেখে দিলাম। তারপর অফ করে চার্জে বসিয়ে দিলাম। এখন আবার ঘুম পেতে শুরু করল। আমি খাটে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। একরাজ্যের ঘুম আমার চোখে জড়িয়ে আসল। আমি সেই রাজ্যের ঘুমন্ত নাগরিক হয়ে গেলাম।
.
ঘুম ভাঙ্গলো পরদিন দুপুরে। মাথায় ব্যথাটা এখন আর তেমন নেই। তবে পায়ের চোটটা এখনো আছে। আমি আড়মোড়া ভেঙ্গে খাট থেকে নামলাম। গোসল করলাম। ক্ষুধা লেগেছে। আজ তো বিশ তারিখ। এখন মইনুল ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ি যাই। দুপুরের খাবারটা সেখানেই খেয়ে নিব। আমি বেরিয়ে পড়লাম। নিপার অমতম চিঠিটাও পকেটে নিয়ে নিলাম। আমি তো হেটে যাব। প্রায় একঘন্টা সময় লাগবে। গাড়িতে গেলে আধঘন্টায় যেতে পারতাম। ক্ষুধা নিয়ে একঘন্টা হাঁটা খুব কষ্টকর হবে আমার জন্য। কি আর করব, যেতে তো হবেই। আমি এই দুপুরে হাঁটা শুরু করলাম। জামান সাহেব আমায় এখন কিভাবে নিবে আল্লাহই ভালো জানে। আগে তো বাবা বলে ডাকত। কাল রাতে আমার সাথে কথা হবার পর নিশ্চয় উনি আমার সাথে আগের মত ভদ্রভাবে কথা বলবেন না। আমি উনার বাড়িতে চলে আসলাম। কলিংবেল বাজালাম। কাজের মেয়েটা এসে দরজা খুলল। আমি বললাম
- "কেমন আছ সেলিনা?"
-- "ভালা না।"
- "ভালো না থাকাই ভালো। দরজা থেকে সরো। ভিতরে ঢুকব।"
-- "বাড়িতে কেউ নাই।"
- "কোথায় গেছে সবাই? আজ তো তাদের কোথাও যাওয়ার কথা নয়।"
-- "সবাই হাসপাতালে গেছে।"
- "কেন? কি হয়েছে?"
-- "সুষমা আপার জামাই আবার ইস্টোক করছে।"
আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম। এ আমি কি শুনলাম। পায়ের তলার মাটিটাও যেন নড়েচড়ে উঠল। আমি খুব ভয় পেয়ে গেলাম। এটা তিন নম্বর স্ট্রোক। বেঁচে থাকার আশঙ্কা খুবই কম। মইনুল ভাই ছাড়া আমার আর আপন বলতে কেউ নেই। আমি সেলিনার থেকে হাসপাতালের নাম জেনে নিয়ে আবার বেরিয়ে পড়লাম। এবার খুব দ্রুত পায়ে হাঁটছি। টেনশনে পেটের ক্ষুধাও চলে গেল। হাসপাতালে এসেই আমি সবাইকে দেখলাম। সুষমা ভাবি কাঁদছে। সুমি মন খারাপ করে বসে আছে। আমায় দেখেও তেমন কোন ভাবান্তর হলনা। জামান সাহেব চিন্তিত মুখ নিয়ে বসে আছে। উনার স্ত্রীরও একই অবস্থা। জামান সাহেব আমাকে দেখে কিছু বললেন না। আমি সুষমা ভাবিকে জিজ্ঞেস করলাম
- "ভাবি কি হয়েছে?"
-- "ওর আবার হার্ট এটাক হয়েছে।"
- "কখন হল?"
-- "সারারাত ধরে ভালোই ছিল। সকালেই হঠাৎ করে স্ট্রোক করল।"
- "ডাক্তার কি বলেছে?"
-- "তারা পরিষ্কার করে কিছু বলছেনা। তোমাকে অনেক বার ফোন দিয়েছিলাম। কিন্তু তোমার ফোন বন্ধ ছিল। সকালে তোমার কথা খুব বলেছিল। তুমি আজ আসবে সেজন্যে সে কাল রাত থেকেই আনন্দে আটখানা হয়ে ছিল। তোমার জন্য নতুন জামা কাপড় কিনেছিল। এই সুস্থ মানুষটার কি হয়ে গেল হঠাৎ করে!"
আমি আর কিছু বললাম না। ভেতরে ভেতরে খুব ভয় পাচ্ছি। আগের দুটা স্ট্রোকের পরে তিনি কোনমতে জান নিয়ে বেঁচে ফিরেছেন। এবার না জানি কি হয়। ভাবি এখনো নিঃশব্দে কাঁদছেন। আমার মত তিনিও মইনুল ভাইকে খুব ভালোবাসেন। মইনুল ভাই খুবই ভালো মানুষ। তার মত ভালো মানুষকে কেউ না ভালোবেসে থাকতে পারবেনা। ভালো মানুষের হায়াত নাকি কম থাকে। পুরো পৃথিবী যদি আমার বিরুদ্ধে কথা বলে তাহলে মইনুল ভাই আমার পক্ষ নিয়ে পুরো পৃথিবীর সাথে তর্ক করবে। তিনি আমায় অনেক স্নেহ করেন। তিনি যদি চলে যান তাহলে আমাকে সাপোর্ট করার মত আর কেউ থাকবেনা। সুমি নির্লিপ্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি কি করব বুঝতে পারছিনা। এই মুহূর্তে আমার কি করা উচিত? আমার কিছুই করার নেই। সবই আল্লাহর ইচ্ছা। তিনি যখন যাকে ইচ্ছা তুলে নেবেন। কেউ কিছুই করতে পারবেনা। আমি অনেক টেনশনে পড়ে গেলাম। মইনুল ভাইয়ের কেবিনে উঁকি দিয়ে দেখলাম। নাকে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো। চোখ বন্ধ করে অসাড় দেহ নিয়ে শুয়ে আছেন। আমি ডাক্তারকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম। ডাক্তার বলল এটা লাস্ট স্টেজ হতে পারে। কথাটা শুনে আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলাম। বিবাগীদের যেটা করতে নিষেধ আমি সেটাই করতে শুরু করলাম। আমি হাসপাতাল থেকে বাইরে বেরিয়ে আসলাম। আমার চোখের পানি আমি কাউকে দেখাতে চাইনা। একটু প্রাণখুলে কাঁদলেই সব ভুলে যাব। মইনুল ভাইয়ের মৃত্যুর শোকটাও কাটিয়ে উঠতে পারব। নিজেই নিজেকে প্রবোধ দিতে শুরু করলাম মইনুল ভাই মরে যাচ্ছে তো কি হয়েছে। মরে যাক, আমার কি। উনি আমার জন্যে অনেক কিছু করেছেন। বিনিময়ে আমার থেকে কিছু পান নি। সেজন্য তিনি আমার জন্য আর কিছু করতে চান না। বেচে থাকলে চক্ষুলজ্জায় পড়ে করতে হবে। তাই তিনি মরে গিয়ে আমার হাত থেকে মুক্তি পেতে চান। ভালোই পরিকল্পনা সাজিয়েছেন তিনি। আধাঘণ্টার মত বসে ছিলাম। সুষমা ভাবির মত আমিও কেঁদেছি। বারবার চোখ মুছতে মুছতে বিরক্ত হয়ে গেলাম। মইনুল ভাই এখন মৃত্যু শয্যায় শায়িত। আমার তো অত বেশি কষ্ট হচ্ছেনা। তাহলে আমার চোখজোড়া এত অশ্রু কেন ঝরাচ্ছে। আমি চোখ মুছে ফেললাম। আকাশের দিকে তাকিয়ে আল্লাহকে কয়েকটা প্রশ্ন  জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করল। কিন্তু পারলাম না। এর আগেই সুমি দৌড়ে আসল আমার কাছে। অনেক হাঁপাচ্ছে মেয়েটা। আমি খুব আতঙ্কিত হয়ে গেলাম। না জানি এখন সে কোন সংবাদ দিতে এসেছে। আমি বললাম
- "কি হয়েছে সুমি?"
-- "দুলাভাই এখন সুস্থ আছে। ডাক্তার বলেছে আর কোন ভয় নেই।"
আমার দেহে যেন প্রাণ ফিরে এল একথা শুনে। এতক্ষন আমি যে ভয়টা পাচ্ছিলাম সেটা এখন আর নেই। হয়তবা আমার মায়ায় পড়ে মইনুল ভাই আবার ফিরে এলেন। আল্লাহ এখনো আমার থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেন নি। আমাকে টিকিয়ে রাখতে তিনি তার মাধ্যমকে এখনো আমার কাছ থেকে কেড়ে নেন নি। আমি সুমিকে বললাম
- "উনি কি করছে এখন?"
-- "সবার সাথেই কথা বলেছে। আপনি এসেছেন শুনে তিনি অনেক খুশি হয়েছেন। আপনাকে উনি ডাকছে।"
- "ঠিক আছে, চল তাড়াতাড়ি।"
আমি আর সুমি একসাথেই মইনুল ভাইয়ের কেবিনে আসলাম। কেবিনে সবাই আছে। মইনুল ভাই আমাকে দেখে একটা মুচকি হাসি দিলেন। আমি উনার কাছে গিয়ে বসলাম। তারপর বললাম
- "আমার ভার আর নিতে পারছেন না তাই তো?"
-- "সুস্থ থাকলে এখন এক থাপ্পড়ে তোর কান ফাটিয়ে দিতাম।"
- "কেন ভাই, আমি কি করলাম?"
-- "তুই ঐ কথাটা কেন বললি?"
- "ঠিকই তো বললাম, আমার ভার নিতে পারছেন না বলেই তো বারবার পালাতে চেষ্টা করছেন।"
মইনুল ভাই কিছু বললেন না। হাসি হাসি মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি আড়চোখে জামান সাহেবকে একবার দেখলাম। আমি আসার পর থেকেই তিনি অনেক অস্বস্তিতে পড়েছেন। চোরের মনে পুলিশের ভয়টা যেরকম সবসময় থাকে ঠিক তেমনি জামান সাহেবের মনেও একটা ভয় ঢুকে গেছে। হঠাৎ করেই মইনুল ভাই আমি ছাড়া বাকি সবাইকে কেবিনের বাইরে চলে যেতে বললেন। সবাই স্বাভাবিক ভাবেই বের হল। শুধু জামান সাহেব একটু সন্দেহের চোখ নিয়ে আমার দিকে তাকালেন। তারপর তিনিও বের হলেন। কেবিনে এখন আমি আর মইনুল ভাই। আমি বললাম
- "ভাই, এভাবে সবাইকে বের করে দিলেন যে?"
-- "শোন, কাল রাতে তুই নাকি আমার শ্বশুরকে খারাপ কিছু বলেছিস?"
- "খারাপ না, ভালোই বলেছি। তিনি যদি খারাপ কাজ করেন তাহলে তো উনার কাছে খারাপ লাগবেই।"
-- "আচ্ছা বাদ দে। আজ তো বিশ তারিখ। তুই তো বলেছিলি আজ নাকি ডাকাত আসবে।"
- "হ্যা বলেছিলাম। তবে আমি এখনো জানিনা ডাকাতটা কি চলে এসেছে নাকি এখনো আসেনি।"
মইনুল ভাই আমার কথা শুনে উঠে বসার চেষ্টা করলেন। আমি উনাকে উঠতে দিলাম না। উনাকে ভালো করে শুইয়ে দিলাম। তিনি আমায় বললেন
-- "এই শোন না, তুই সেদিন কিভাবে বুঝলি যে ডাকাতটা আজকে আসবে? দিনতারিখের কথা তো চিঠিতে লিখা ছিলনা।"
- "লিখা ছিল।"
-- "কিভাবে বুঝলি সেটা তো বলবি।"
- "সেই চিঠিতে যে স্বপ্ন নিয়ে লিখাটা ছিল সেটা ছিল একটা এডভেঞ্চার এর কাহিনী। যে এই এডভেঞ্চার করেছিল তার নাম হল রবিনসন ক্রুশো। জাহাজ ভ্রমণের সময় সে ঝড়ের কবলে পড়ে একটা দ্বীপে ভেসে আসে। সেই দ্বীপের সাথে পৃথিবীর কোন দেশের কোন যোগাযোগ ছিলনা। রবিনসন কর্মঠ মানুষ ছিল। হাজার রকমের প্রতিকুলতা মোকাবিলা করতে করতে সে সেই দ্বীপে আটাশ বছর দুমাস ঊনত্রিশ দিন কাটিয়ে দেয়। তার মধ্যে চব্বিশ বছর সে সম্পূর্ণ একা ছিল। সাড়ে বাইশ বছর চলাকালীন সময়ে রবিন সেই স্বপ্নটা দেখে। আর সেই স্বপ্ন পূরণ হয় চব্বিশ বছর চলাকালীন সময়ে। রবিন অনেক বুদ্ধিমান ছিল। যেদিন প্রথম সে এই দ্বীপে ভেসে এসেছিল সেদিন থেকেই সে দিনতারিখের হিসাব রাখত। সে যেরকম ভাবে স্বপ্নটা দেখেছিল দেড় বছর পরে ঠিক সেরকম ভাবেই স্বপ্নটা পূরণ হল। একটা বিবস্ত্র পুরুষ ঐ নরখাদক গুলোর গাফেলতির সুযোগ নিয়ে জীবন বাঁচানোর জন্য দৌড় শুরু করল। রবিন নরখাদক গুলোর হাত থেকে লোকটাকে বাঁচায়। লোকটা নিজেও মানুষখেকো জংলী ছিল। কিন্তু রবিনের প্রতি তার অগাধ শ্রদ্ধা ছিল। এখন আমার আসল কথায় আসি। রবিন এই লোকটাকে যেদিন আশ্রয় দিয়েছিল সেদিন ছিল ফ্রাইডে, মানে শুক্রবার। আর একারনে রবিন সেই লোকটার নামও রাখে ফ্রাইডে। চিঠিতে এই ফ্রাইডের কথাই লিখা ছিল। আমি যেদিন চিঠিটা পড়েছিলাম সেদিন ছিল ১৬ তারিখ, সোমবার। চিঠিতে লিখা ছিল "এটাই শেষ চিঠি"। যার মানে হল আর কোন চিঠি আসবেনা। তার মানে এটা দাঁড়ায়, চিঠিটা দেয়ার পর থেকে প্রথম শুক্রবার যত তারিখে পড়বে সে তত তারিখেই আসবে। তো চিঠি দেয়ার পর থেকে প্রথম শুক্রবার পড়ল আজকে বিশ তারিখে। তাই আমি বুঝতে পারলাম ডাকাতটা আজকেই আসবে।"
মইনুল ভাই আমার কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে গেলেন। উনার মুখে একটা বিস্মিত হাসি ফুটে উঠেছে। আমি একটানা কথাগুলো বলায় একটু পানির পিপাসা পেল। রুমে পানি ছিল। আমি পানি খেলাম। মইনুল ভাই আমাকে বললেন
-- "চিঠির প্ল্যানটা দারুণ ইমপ্রেসিভ। এখন বল, এই চিঠিটা কে দিয়েছে সেটা জানতে পারলি?"
- "হ্যা, পেরেছি। আমি এখন আপনার শ্বশুরবাড়ি গিয়ে বসে থাকব। যখন সে আসবে তখন তাকে হাতেনাতে ধরতে পারব।"
-- "এক কাজ কর। তুই আমার শ্বশুরকে বল পুলিশকে খবর দিতে। যাতে হাতেনাতে ডাকাত ধরতে পারি।"
- "পুলিশ আসলে আপনার শ্বশুরেরই ক্ষতি হবে। তার কোন দরকার নেই।"
-- "ঠিক আছে, তুই তাহলে যা। সব শেষ করে আমাকে জানাস। আমি তো বোধ হয় আজ বাড়িতে যেতে পারবনা।"
- "ঠিক আছে আমি জানাব। তবে একটা কথা।"
-- "কি কথা, বল?"
আমি মইনুল ভাইয়ের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললাম
- "আপনার শ্বশুর জামান সাহেব একজন খুনি। তিনি হুমায়ুন আহমেদ নামে একজন ভদ্রলোককে খুন করেছে। হুমায়ুন সাহেব মদপান করতেন না। কিন্তু জামান সাহেব তাকে জোর করে অথবা কারচুপি করে শক্তিশালী এলকোহল খাইয়ে দেন। অতিমাত্রায় এলকোহল খাওয়ার পর হুমায়ুন সাহেবের তীব্র নেশা হয়ে যায়। তিনি নেশাগ্রস্থ অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলেন। তখন তার সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়। সবাই ভাবল এটা দুর্ঘটনা। কিন্তু আমি বুঝে ফেলেছি, এটা জামান সাহেবের কোল্ড ব্লাডেড মার্ডার ছিল।"
মইনুল ভাই প্রচন্ড আশ্চর্য হয়ে গেলেন। প্রশ্নবোধক চিহ্ন নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। আমি এই ফাঁকে কেবিন থেকে বের হয়ে সুমিকে ডাকলাম। বললাম যে মইনুল ভাই তাকে ডাকছে। আমার কথা বললে সবাই সন্দেহের চোখে তাকাত। মইনুল ভাইয়ের কথা বলাতে কেউ আর কোন সন্দেহ করলনা। সুমি কেবিনের ভেতরে আসার পর আমি নিপার দেয়া অমতম চিঠিটা ওর দিকে বাড়িয়ে বললাম
- "সুমি, এই চিঠিটা পড়বে। এটা কোন সাধারণ চিঠি নয়। এটা একটা সাংকেতিক চিহ্ন। তুমি বুদ্ধিমতি মেয়ে। আশা করি তুমি বুঝতে পারবে।"
সুমি হাত বাড়িয়ে আমার থেকে চিঠিটা নিল। তারপর সেটা ভ্যানিটিব্যাগে রেখে দিল। মইনুল ভাই কিছু বললেন না। তিনি জানেন যে আমি খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে কোন কাজ করিনা। আমি বললাম
- "ভাই, আমি গেলাম। আপনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন।"
-- "ঠিক আছে, যা।"
আমি হাসপাতাল থেকে বের হয়ে রাস্তায় নামলাম। রাস্তায় একটা সিগারেট পড়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে সদ্য কেনা হয়েছে দোকান থেকে। আমি দেরি না করে সিগারেটটা ধরিয়ে টানা শুরু করলাম। আর দ্রুত পায়ে আবার জামান সাহেবের বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করলাম। ডাকাত ধরার উত্তেজনায় ক্ষুধার কথাও ভুলে গেছি। ডাকাতটা কে আমি সেটা খুব ভালো করেই জানি। আজ তার সাথে জমপেশ আড্ডা হবে। ভাবতেই উত্তেজিত হয়ে গেলাম। আমি  হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিলাম।
.
(চলবে)
.
.
লেখক :- বিবাগী শাকিল

āĻ•োāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāχ:

āĻāĻ•āϟি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āϟ āĻ•āϰুāύ