বিবাগীর বৃষ্টিবিলাস
পর্ব নং :- (৫/৮)
লেখক :- বিবাগী শাকিল
==================
.
ঘুম ভাঙলো বিকেলে। খুব একটা ভালো ঘুম দিয়েছিলাম। পারফেক্ট ঘুমের পরে শরীরটাকে তাজা তাজা লাগে। এখন আমার তেমনটাই লাগছে। মনে হয় ঘুম এত তাড়াতাড়ি ভাঙ্গতো না। ইলেক্ট্রিসিটি চলে যাওয়ায় গরম লাগল খুব। তাই ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। গরমে একটু ঘামিয়ে গেলাম। বিছানা থেকে নামলাম আমি। সোজা বাথরুমে গিয়ে গোসল সেরে নিলাম। ঠান্ডায় কনকন করে কেঁপে উঠল পুরো শরীর। গোসল শেষে ঠান্ডার প্রকোপটা আরো দ্বিগুণ বেড়ে গেল। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে একটা টিশার্ট পেলাম। অনেক দিনের পুরনো। ভালো করে ঝেড়ে গায়ে দিলাম। নিজেকে কেমন ফ্রেশ লাগছে। আমার কেমন যেন একটু ফরমাল হবার ইচ্ছে হল। বিবাগী হয়েছি তো কি হয়েছে? তাই বলে একটু ফরমাল হতে পারব না? মাথার চুল ভালো ভাবে আঁচড়াতে ইচ্ছে করল। চিরুনি ড্রয়ারের ভেতর। আমি ড্রয়ার খুললাম। চিরুনির বদলে মোবাইলটা চোখে পড়ল। আমি ওটা অন করলাম। ব্যাটারির চার্জ প্রায়ই নেই। সিমে কয়েকটা টাকা আছে বোধ হয়। পকেট থেকে নিপার দেয়া কাগজ গুলো বের করলাম। সেই সাথে রাসেল এর নাম্বারের কাগজটাও পেলাম। নিপা যে দুটো কাগজ দিল তার একটাতে ওর নাম্বার দেয়া আছে। আর একটা কাগজে লিখা আছে
"অমত ময়খ বভ লব স
কন জনন
অম রশ ধএ কট ইচ ওয়
অমতম রহ তচই"
অনেকক্ষণ ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখেও বুঝতে পারলাম না নিপা কি লিখল এটা। কিসব অমতম লিখে বসে আছে। এটার কোন মানে হয়? কাগজটা পকেটে রেখে দিলাম। রাসেল এর নাম্বারে ফোন দিলাম। রিং হচ্ছে। কল যাবার কথা নয়। সিম অনেকদিন বন্ধ থাকায় ব্যালেন্স এর মেয়াদ শেষ হয়ে যাবার কথা। মনে হয় মইনুল ভাই রিচার্জ করে দিয়েছে। তাছাড়া সিমে টাকার পরিমাণটা আগের চেয়ে একটু বেশি। এটা মইনুল ভাই ছাড়া আর অন্য কেউ করেনি। আমি ফোনটা কানে নিয়ে ধরে রাখলাম। একসময় কলটা রিসিভ করা হল।
-- "হ্যালো।"
মেয়েলি কন্ঠ। আমি কথা না বলে নাম্বারটা মিলিয়ে নিলাম ঠিক আছে কিনা। নাম্বার ঠিকই আছে। তার মানে কল রিসিভ করেছে রুপা। আমি বললাম
- "আপনাদের বিয়ের দিনতারিখ ঠিক হয়েছে?"
রুপা আমায় চিনতে পারলনা। তাই সে আমায় বলল
-- "আপনি কে?"
- "আমি বিবাগী বলছি।"
-- "ও ভাইয়া কেমন আছেন?"
- "আমি সবসময় ভালো থাকি।"
-- "আপনি থাকলেন না কেন?"
- "আমি কোন জায়গায় বেশিক্ষণ থাকতে পারিনা।"
-- "তাই বলে এত তাড়াতাড়ি চলে যাবেন?"
- "বাদ দিন। আপনাদের বিয়ের দিনতারিখ ঠিক হয়েছে কিনা সেটা তো বলেন নি।"
-- "এখনো হয়নি। হয়ে যাবে।"
- "ঠিক আছে। ভালো থাকবেন। রাখলাম।"
-- "জ্বি ভাইয়া, দোয়া করবেন।"
আমি ফোনটা রেখে দিলাম। রুপা আমার সাথে কোন কথা না বলায় তার কন্ঠ আমি আগে কখনো শুনিনি। এখন শুনলাম। বেশ ভারী গলা। আমি এবার নিপার নাম্বারে কল দিলাম। নিপা রিসিভ করল।
-- "হ্যালো।"
- "ভাঙ্গা কাঁচের টুকরো গুলো কি করেছেন?"
নিপা আমায় চিনে ফেলল। কন্ঠ শুনে নয়। আমার অদ্ভুত কথা শুনে। কারন সে আমার এই আচরনের সাথে পরিচিত। নিপা বলল
-- "আপনি বিবাগী নাকি পাগল ঠিক বুঝিনা আমি। আমি কোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম!"
- "তা তো জানিনা।"
-- "আপনি জেনেও না জানার ভান করেন।"
- "বললেন না তো কাঁচের টুকরো গুলো কি ফেলে দিয়েছেন?"
-- "কিসের কাঁচের টুকরো বুঝতে পারলাম না।"
- "সেকি, আপনার সামনেই তো কাঁচের কলসটা ভেঙ্গে ফেললাম।"
-- "দেখুন, আমায় বোকা পেয়ে এভাবে বিভ্রান্ত করবেন না।"
- "শীতের বিকেল কখনো উপভোগ করেছেন?"
-- "তা তো প্রতিদিনই করি।"
- "আমি বের হচ্ছি। ঐ রাস্তায় যাব। কিছু কাজ আছে।"
বলেই কলটা কেটে দিলাম। ফোনটা অফ করে দিলাম। এখন আর ফরমাল হতে ইচ্ছে করছেনা। প্রচন্ড ক্ষুধা পেয়েছে। আমি বেরিয়ে গেলাম ঘর থেকে। আজ তো উনিশ তারিখ। কাল আবার মইনুল ভাইয়ের শ্বশুর বাড়িতে যেতে হবে। আমি হাঁটতে শুরু করলাম।
.
পা দুটো শরীরের ভার সইতে পারছেনা। হাঁটতে কেমন যেন কষ্ট হচ্ছে। তবুও হাঁটছি। ক্ষুধায় পেট চোঁ চোঁ করছে। কিন্তু পকেটে একটা টাকাও নেই। যে কয়টা টাকা ছিল সব খরচ হয়ে গেছে। প্যান্টের পকেটে শুধু সিগারেটের প্যাকেট আর দেশলাই ছাড়া আর কিছুই নেই। আমি সিগারেট ধরালাম। এই রাস্তাগুলো আমার চেনা। অচেনা রাস্তায় হাঁটতে খুব ভালো লাগে। তাই এই রাস্তায় হাঁটতে অত ভালো লাগছেনা। তবুও হাঁটছি। আশেপাশের হোটেল থেকে বিরিয়ানির গন্ধ পাচ্ছি। তাতে ক্ষুধা আরো তীব্র হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবী খেয়ে ফেলতে পারব। আমি আরো সামনে এগিয়ে গেলাম। আশেপাশে আর তেমন ভীড় নেই। এক ভদ্রলোককে দেখলাম রাস্তার এক পাশে বসে সিগারেট খাচ্ছে। লোকটা সম্পূর্ণরূপে ফরমাল হয়ে বসে আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে তিনি অনেক ধনী এবং প্রভাবশালী ব্যক্তি। আমি পাশ দিয়ে হেঁটে যেতেই উনি আমায় বললেন
-- "শুনছেন?"
আমি ভদ্রলোকের কথা শুনে থামলাম। উনার চেহারার দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম। পুরো মুখে হতাশার একটা গভীর ছাপ ছড়িয়ে পড়েছে। আমি বললাম
- "জ্বি, শুনছি।"
-- "আমার মেয়েকে দেখেছেন? আজ সকাল বেলায় মেয়েটা ঘর থেকে রাগ করে বের হয়ে গেল। আমি সেই সকাল থেকে খুঁজে চলেছি। এখনো পাইনি। বহু লোককে জিজ্ঞেস করেছি। কেউ কোন খবর দিতে পারেনি। ভাবছি পুলিশের কাছে যাব। ধানমন্ডি থানার ওসি জামিল সাহেবের সাথে আমার ভালো সম্পর্ক আছে। ওদের কাছে যাবার আগে আপনাকে একবার জিজ্ঞেস করলাম। আপনি কি আমার মেয়েকে দেখেছেন?"
আমি ভদ্রলোকের কথা শুনে চুপ করে রইলাম। এমতাবস্থায় কি আর বলার থাকতে পারে। এমন সময় আমার কানে চাপা একটা শব্দ হল। মনে হচ্ছে কেউ যেন আমার কানে নিচুকন্ঠে কিছু বলছে। পাশ ফিরে দেখলাম কেউই নেই আমার কাছাকাছি। আমি ভদ্রলোককে বললাম
- "আপনার মেয়েকে তো আমি দেখিনি। দেখতে কি রকম আমি সেটাও জানিনা। তবে আপনাকে পুলিশের কাছে যেতে হবেনা। কারন আমার মনে হচ্ছে আপনার মেয়ে এখন বাসায় ফিরেছে।"
-- "আপনাকে কে বলল?"
- "কেউ বলেনি। আমার মনে হল। আর আমার মন যা বলে তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মিলে যায়।"
-- "ঠিক আছে। আমি বাসায় যাচ্ছি। আপনিও আমার সাথে চলুন। দেখুন, এবার আপনার মন সত্যি বলল কিনা।"
আমারো খুব জানতে ইচ্ছে হল আমার মন যেটা বলেছে সেটা সত্য নাকি মিথ্যা। এই ভদ্রলোকের মেয়ে যে বাড়িতে ফিরে এল এটাই বা আমার মনে হল কেন? আমি কথা না বাড়িয়ে ভদ্রলোকের সাথে উনার বাড়ির পথ ধরলাম। যেতে যেতে উনার সাথে যে কথা হয়েছে তাতে জানতে পারলাম উনার নাম শফিউল মোল্লা। উনি একটা ফোম ফ্যাক্টিরির মালিক। উনার স্ত্রী মারা যাবার পর থেকে উনি একদম একা হয়ে যান। একমাত্র মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে তিনি আর দ্বিতীয় বিয়ে করেন নি। উনার মেয়ের নাম শিউলি। তাকে তিনি কোলেপিঠে করেই বড় করেছেন। সবসময় নিজের চোখে চোখে রেখেছেন। এজন্য শিউলি এক প্রকার ঘরে বন্দী হয়েই ছিল। আর তাতে তার খুব খারাপ লাগে। সে এখন স্বাধীনতা চায়। শফিউল সাহেব সেই স্বাধীনতা দিতে চাননি। তিনি মনে করেন যে, স্বাধীনতা পেলেই শিউলি খারাপ হয়ে যাবে। তাই শিউলি রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। আমরা শফিউল সাহেবের বাসায় চলে এলাম। উনি কলিংবেল চাপতেই একটা মেয়ে এসে দরজা খুলল। আমাদের দেখে সে মাথা নিচু করে ফেলল। আচমকাই মেয়েটা শফিউল সাহেবের হাত ধরে বলল
-- "বাবা আমার ভুল হয়ে গেছে, আমায় ক্ষমা করে দাও। আর কখনো আমি এমন করব না।"
শফিউল সাহেব কেঁদে ফেললেন। আমি বুঝতে পারলাম এই মেয়েটাই শিউলি। শিউলিও কান্না শুরু করল। আমি কি করব বুঝতে পারলাম না। বাবা মেয়ের কান্নার মাঝে আমার থাকাটা উচিত হবেনা। আমি ইতস্ততভাবে দাঁড়িয়ে রইলাম। শফিউল সাহেব আমায় বললেন
- "তোমার মন যা বলেছে সেটা সত্যি হয়ে গেল।"
আমি কিছু বললাম না। একটা মৃদু হাসি দিলাম। অবশ্য আমি নিজেই অবাক হয়ে গেলাম আমার অনুমান কিভাবে সঠিক হয়ে গেল। নিপার ব্যাপারটাও আগে থেকেই আমার মাথায় চলে এল। এখন আবার শফিউল সাহেবের ব্যাপারটাও। বুঝতে পারছিনা কিভাবে আমার মন সত্যি বলল। আমি কি মহাপুরুষদের কাতারে চলে যাচ্ছি? শফিউল সাহেব আমাকে ঘরে নিয়ে বসালেন। আমি আর উনি সোফায় বসে আছি। শিউলি আমাদের জন্য চা আনতে গেল। চা এর সাথে যদি কিছু আসে তাহলে ক্ষুধা কিছুটা হলেও কমে যাবে। আমি শফিউল সাহেবকে বললাম
- "মোল্লা সাহেব, আপনাকে একটা প্রশ্ন করব?"
-- "অবশ্যই, তবে তুমি আমাকে চাচা বলে ডাকবে।"
- "ঠিক আছে, তাহলে আপনিও আমায় ভাতিজা ডাকবেন।"
-- "হ্যা, অবশ্যই। এখন তোমার প্রশ্নটা বল।"
- "চাচা, চব্বিশ বছর কি কেউ সম্পূর্ণ একা থাকতে পারে?"
-- "আমার মনে হয়না। আমি আমার মেয়েকে ছাড়া এক মুহূর্তও থাকতে পারিনা।"
আমি আর কিছু বললাম না। শিউলি চায়ের সাথে বিস্কুট, চানাচুর নিয়ে এল। আমি মনে মনে খুশিই হয়ে গেলাম। শফিউল সাহেব আমাকে শিউলির সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। সে আমায় বলল
-- "বাবা যে তখন বলল আপনার মন যেটা বলেছে সেটা সত্যি হয়ে গেল। কি বলেছিল আপনার মন?"
- "কি বলেছিল সেটা জানার দরকার নেই। তবে এখন আমার মন বলছে আপনি আবার পালিয়ে যাবেন।"
শিউলি অগ্নিচক্ষু নিয়ে আমার দিকে তাকাল। আমার মনে হল আমি তার চোখের আগুনে ভস্ম হয়ে যাব। আমি চোখ ফিরিয়ে শফিউল সাহেবের দিকে তাকালাম। শফিউল সাহেব ভয়ার্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। উনার ভয় পাওয়ার কারনটা আমি জানি। উনি এখন বিশ্বাস করে নিয়েছে আমার মন যেটা বলে সেটাই সত্যি হয়ে যায়। আমি আর কিছু বললাম না। নাস্তা সেরে ওদের থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।
.
বের হয়েই বুঝতে পারলাম সন্ধ্যা অনেক আগেই পেরিয়ে গেছে। এই শহরটা তার কালো রুপ দেখাতে নিজেকে পুরোপুরি প্রস্তুত করে ফেলেছে। রাস্তায় রাস্তায় সোডিয়াম লাইট জ্বালানো। আর সেই আলো গায়ে মেখে আমি হেটে চলেছি। নিজেকেও সোডিয়াম মানুষ মনে হচ্ছে। আরেকটা সিগারেট ধরালাম। নিপার অমতম চিঠিটা নিয়ে ভাবছি। ও আসলে কি বুঝাতে চাচ্ছে? এটা কি কোন সাংকেতিক চিহ্ন? নাকি সে আমায় বিভ্রান্ত করার জন্য চিঠিটা দিল? হলেও হতে পারে। ও আমার কাছে বার বার বিভ্রান্ত হয়েছে। মেয়েরা সহজে হারতে চায়না। তারা যার কাছে পরাজিত হয় তাকে পরাজিত করার জন্য যেকোন অর্থহীন কাজ করতে পারে। হতে পারে নিপা এজন্য এই অর্থহীন চিঠিটা দিয়েছে। আমি এ ব্যাপারে আর ভাবলাম না। শিউলি আবার কেন পালাবে সেটা নিয়ে ভাবলাম। সে কি কাউকে ভালোবাসে? জানিনা, আমার জানার কথাও না। তবুও কেন যেন আমার মনে হল সে কাউকে ভালোবাসে। এবং তার সাথেই পালিয়ে যাবে। শরীরটা একবার কেঁপে উঠল। খুশি হয়ে গেলাম। কারন বিবাগী এখন হাঁটতে হাঁটতে বৃষ্টিবিলাস করবে। পিচঢালা রাস্তায় নিজের পদধূলি দিচ্ছে আমার বৃষ্টি। সোডিয়াম আলোয় এই ঘনবৃষ্টি দেখতে খুবই ভালো লাগছে। আর আমি সেই বৃষ্টিতে ভিজে চলেছি। সারাদেহে আশ্চর্য এক অনুভূতি। আমি এই অনুভূতি গভীর ভাবে উপলব্ধি করছি। সামনের ল্যাম্পপোস্টের নিচে মনে হয় কেউ দাঁড়িয়ে আছে। সেও আমার মত বৃষ্টিবিলাস করছে। আমি হাঁটার গতি একটু বাড়িয়ে দিলাম। দেখলাম অন্য কেউ নয়, আমার দ্বিতীয় সত্তা দাঁড়িয়ে আছে। সবকিছু ঠিকঠাক কিন্তু তার মাথা থেকে রক্ত পড়ছে। আমি বললাম
- "কিরে, তোর কি হল? রক্তারক্তি কিভাবে হল?"
-- "ব্যথা পেলাম। তোর দেহে না থাকলে আমি এই ব্যথাটা পেতাম না।"
- "ভালোই করেছিস ব্যথা পেয়ে। তোকে ব্যথিত হতে দেখলে আমার খুব ভালো লাগে।"
-- "তুই আসলে অনেক বোকা।"
- "তুই তো চালাক। ব্যস, এতেই হবে।"
-- "আমি একা চালাক হলে হবেনা। তোকেও চালাক হতে হবে।"
- "আচ্ছা হব। এখন চল আমার সাথে হাঁটতে শুরু কর। দুজনে বৃষ্টিবিলাস করি।"
-- "না। আমি এখন চলে যাব। তুই শুধু এটা মনে রাখিস, তোর বিবাগী হবার পেছনে শুধু আমারই অবদান রয়েছে।"
একথা বলেই সে চলে গেল। কোথায় গেল দেখলাম না। হঠাৎ করেই উধাও হয়ে গেল। সেই সাথে আমার বৃষ্টিও শেষ হল। সোডিয়াম লাইট, ল্যাম্পপোস্ট সব ঠিকই আছে শুধু আমার বৃষ্টিটা নেই। আমি একটু ভয় পেয়ে গেলাম। ভয় পাওয়ার একটা যুক্তিযুক্ত কারন আছে। প্রথম থেকে একবার ভেবে নিলাম। যেদিন আমার দ্বিতীয় সত্তার সাথে আমার প্রথম কথা হয়েছিল সেদিন আমার চুলদাড়ি ছিল অথচ তার ছিলনা। তার মুখ পুরো পরিষ্কার ছিল। আর ঠিক সেদিন দুপুরেই মইনুল ভাই আমায় বাধ্য করে চুলদাড়ি কাটিয়ে নিলেন। দ্বিতীয় বার যখন দেখা হল তখন আমার গায়ে কালো শার্ট ছিল আর তার গায়ে হলুদ পাঞ্জাবী ছিল। এর পরের দিনই মইনুল ভাই আমাকে হলুদ পাঞ্জাবী দিল। ট্রেনে থাকাকালীন সময়ে যখন তৃতীয় বার ওর সাথে দেখা হল তখন আমার গায়ে হলুদ পাঞ্জাবী ছিল আর সে খালি গায়ে ছিল। ট্রেন থেকে নামার পরেই আমি পিন্টুকে পাঞ্জাবীটা দিয়ে ফেলি আর আমি খালি গায়ে থাকলাম। তার মানে আমার দ্বিতীয় সত্তা আমাকে নিকট ভবিষ্যতের পূর্বাভাস দেয়। এখন যেহেতু আমি ওর মাথায় রক্ত দেখলাম তাহলে অবশ্যই নিকট ভবিষ্যতে আমার মাথা থেকে রক্ত পড়বে। আমি আহত হব। এটা ভেবে একটু ভয় পেয়ে গেলাম। ভাবতে ভাবতেই নিপার সাথে যে রাস্তায় প্রথম দেখা হয়েছিল সেই রাস্তায় চলে এলাম। আর সেখানে নিপাকেও পেয়ে গেলাম। নিপা আমায় দেখতে পেল। সে বসা অবস্থায় ছিল। আমায় দেখে দাঁড়িয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসল। আমায় বলল
-- "সেই বিকেল থেকে বসে আছি। তুমি বলেছিলে তুমি নাকি এখানে আসবে। তোমার নাকি কি কাজ আছে। কই, এলেনা তো।"
আমি একটু চমকে গেলাম। প্রথমবারের মত নিপা আমায় তুমি করে বলল। শুনতে কেমন যেন লেগেছে আমার। নিপা খুব সন্তর্পণে আমার মনে ঢুকতে চাচ্ছে। ঢুকতে চাচ্ছে নাকি ঢুকে গেছে আমি ঠিক জানিনা। আমি নিজেই এখন স্বীকার করলাম বিবাগীদেরও অনেক কিছু অজানা থাকে। আমি নিপার কথার উত্তর না দিয়ে বললাম
- "চব্বিশ বছর কি কেউ সম্পূর্ণ একা থাকতে পারে?"
-- "হ্যা পারে তো।"
আমি এবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে নিপার দিকে তাকালাম। নিপার এক্সপ্রেশন কেমন হয় সেটা দেখার জন্য। নিপা আমার এমন দৃষ্টি আগে কখনো দেখেনি। এই চাহনিটার সাথে সে অপরিচিত। আমার এমন দৃষ্টি দেখে নিপা একটু থতমত খেল। পরক্ষণেই ওর মুখের এক্সপ্রেশন বদলে গেল। মনে হচ্ছে সে কিছু লুকোতে চাচ্ছে। আচ্ছা, এমন কিছু কি আছে যা নিপা আমার কাছে লুকোতে চাচ্ছে? অবশ্যই থাকতে পারে। দুদিনের পরিচয়ে আমি নিপাকে আর কতটুকুই বা চিনলাম। মেয়েদের তো সারাজীবনেও চেনা যায়না। নিপা আমতা আমতা করে বলল
-- "না না, চব্বিশ বছর কেউ সম্পূর্ণ একা থাকতে পারেনা।"
- "তাহলে প্রথমে কেন বলেছিলে থাকতে পারে?"
এবার আমিও তুমি করে বললাম। নিপা বারবার অপ্রস্তুত হয়ে যাচ্ছে। এর পেছনে কারনটা কি? আমি তো এমন কিছু বলিনি যে নিপা অপ্রস্তুত হবে। তবে কি নিপা কোনকিছু আড়াল করছে? ওর চোখদুটোও আঁকুপাঁকু করছে। আমি ধরেই নিলাম নিপা কিছু একটা আড়াল করছে। আমি এই সুযোগটা নিলাম। তাকে আবার প্রশ্ন করলাম
- "নিপা, আটাশ বছর দুমাস ঊনত্রিশ দিনের মধ্যে কেউ কি চব্বিশ বছর সম্পূর্ণ একা থাকতে পারে?"
নিপা কেমন যেন চমকে উঠল। চোখজোড়া গোল আর বড় হয়ে গেল। চোখের দৃষ্টিতেও কিছুটা ভয় মিশে আছে। নিপার এই এক্সপ্রেশন দেখে আমার ধারণাটা বিশ্বাসে রুপ নিল। নিপা অবশ্যই কিছু একটা আড়াল করতে চাচ্ছে।
আমি বুঝে ফেললাম। নিপা আমার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য আমায় উল্টো প্রশ্ন করল। সে বলল
-- "কাঁচের কলসটা ভেঙ্গেছ কেন?"
- "আমার হাতে কাঁচের কলস মানায় না তাই ভেঙ্গে ফেললাম।"
-- "তাহলে তোমার হাতে কি মানায়?"
- "আমার হাতে সিগারেট ছাড়া অন্য কোন কিছুই মানায় না।"
-- "সিগারেট অনেক প্রিয় নাকি তোমার?"
- "হ্যা, সেজন্য সেই বাক্যটাকে একটু বদলেও ফেলেছি।"
-- "কোন বাক্যটা?"
- "কষ্টের রাজ্যে পৃথিবী বিষময়, সিগারেটের টানও যেন অক্সিজেনের সমান।"
-- "বাহ, ভালোই বলেছ। কিছু কষ্ট আমায় দিবে। দুজনে ভাগ করে নিব। তাতে তোমার কষ্ট কিছুটা হলেও কমে যাবে।"
- "ঠিক আছে। তোমাকে কষ্ট দেব।"
-- "ভালো কথা, তোমার ফোন বন্ধ কেন?"
- "আমার ফোন বন্ধই থাকে।"
-- "রাতে অন করবে। আমি কল দিব।"
- "ঠিক আছে।"
-- "আমাকে এখন যেতে হবে।"
- "ভালো থেকো।"
নিপা পিছন ফিরল। আমিও ফিরলাম। দুজনে দুদিকে ফিরে দুদিকে চলে যাচ্ছি। আমি পিছু ফিরলাম না। তবে আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি নিপা মনের মাঝে চাপা একটা ভয় নিয়ে আমার দিকে বারবার তাকাচ্ছে। আচ্ছা, নিপার ব্যাপারটা এখন বাদ দিলাম। এখন একটু আমাকে নিয়ে ভাবি। আমি জানি আমি হয়ত একটু পরেই আহত হব। সেজন্য একটু সাবধানে হাঁটছি। বিপদজনক সবকিছু থেকে তফাত রেখে চলছি। একটু সাবধানে হাঁটলে নিশ্চয়ই আমি আহত হব না। আমি এবার একটা নির্জন রাস্তায় ঢুকে পড়লাম। নির্জন রাস্তায় থাকলে আমার অবশ্য কোন ক্ষতি হবেনা। আর তাতে আমার আহত হবার সম্ভাবনা খুবই কম থাকবে। আমি হাঁটছি। সামনের দিকে একটু অন্ধকার। মোটা মোটা গাছ দেখা যাচ্ছে। ভালোই হল। গাছের গোড়ায় বসে রাতটা কাটিয়ে দিতে পারব। আমি একটা মোটা গাছের গোড়ায় বসলাম। আশেপাশে কোন সাড়াশব্দ নেই। নিশ্চুপ হয়ে বসে আছি। হঠাৎ করেই সুমির কথা মনে পড়ে গেল। সুমির বিয়ের কথাবার্তা চলছে। কিছুদিন পরেই ওর বিয়ে হয়ে যাবে। সেদিন সে তার চাদর না দিলে আমি ছাদে বসে সারারাত ঠান্ডায় কাঁপতাম। সেই চাদরে মিষ্টি একটা গন্ধ পেয়েছিলাম। ওটা পারফিউম এর গন্ধ ছিলনা। সুমির দেহের ন্যাচারাল গন্ধ ছিল। সুমির বর আর কিছু পাক বা না পাক, একটা মিষ্টি সুগন্ধওয়ালি বউ পাবে। হা হা হা, কত আবোল তাবোল চিন্তাই না আমার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। পাতার খসখস শব্দ শুনে আমি একটু চমকে উঠলাম। কারো পায়ের শব্দ মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ হেঁটে আমার দিকে আসছে। আমি নাড়াচাড়া না করে চুপচাপ বসে আছি। শাড়ি পরা একটা মেয়ে আমার পাশে এসে বসল। আর বলল
-- "একা একা এখানে কি করেন। চলেন যাই।"
আমি বুঝলাম মেয়েটা কে। এই মেয়েটা নিশিকন্যা। সভ্য ভাষায় এদেরকে রাতের পরী বলে। অসভ্য ভাষায় কি বলে সেটা আমি ভাবতে চাইনা। আমি মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললাম
- "কোথায় যাবেন?"
-- "আপনি যেখানে নিয়ে যাবেন।"
- "চলেন যাই।"
আমি উঠে দাঁড়ালাম। মেয়েটাও আমার সাথে উঠে দাড়াল। আমরা পাশাপাশি হাঁটছি। মনে মনে খুব হাসি পাচ্ছে আমার। হায়রে নিষ্ঠুর দুনিয়া। কেউ রাজকন্যা আর কেউ নিশিকন্যা। রাজকন্যার চেয়ে নিশিকন্যা শব্দটা শুনতে ভালো লাগে। কিন্তু এই শব্দের পেছনে একটা মেয়ের জর্জরিত জীবন জড়িয়ে আছে সেটা আপাত দৃষ্টিতেও কেউ দেখেনা। মেয়েটা আমায় বলল
-- "কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?"
- "আমি নিজেও জানিনা।"
-- "কেন? আপনার কোন নিরাপদ জায়গা নেই বুঝি।"
- "আমার নিজেরই তো থাকার জায়গা নেই। আপনাকে নিয়ে নিরাপদ জায়গায় যাব কিভাবে?"
-- "তাহলে আপনার পিছে সময় নষ্ট করার মত ইচ্ছে আমার নেই।"
বলেই মেয়েটা চলেই যেতে চাচ্ছিল। আচমকা তিনটা ছেলে এসে আমাদের ঘিরে দাঁড়াল। দুইজনের হাতে ছুরি আর একজনের হাতে একটা মোটা শক্ত লাঠি। আবারো হাসলাম মনে মনে। এক ফকির আরেক ফকিরের কাছে ভিক্ষা নিতে এসেছে। তবে একটু ভয় পেয়ে গেলাম। আমার মনে হল আমার আহত হবার সময়টা ঘনিয়ে এল। নিশ্চয় এই লাঠিটা আমার মাথায় আঘাত করবে। মেয়েটার মুখের দিকে তাকালাম। এতক্ষন অন্ধকারে ছিলাম তাই মেয়েটার চেহারা ভালো ভাবে দেখিনি। এখন তার চেহারা দেখে খুবই আশ্চর্য হয়ে গেলাম। অনেকটা রুপার মতই দেখতে। চেহারার এত মিল থাকতে পারে আগে জানতাম না তো। মেয়েটার চোখে তেমন ভয়ভীতি নেই। মনে হচ্ছে এসব পরিস্থিতিতে তাকে প্রায়ই পড়তে হয়। তিনজনের মধ্যে যে ছেলেটার হাতে লাঠি আছে সেই ছেলেটা বলল
-- "এই ছোঁড়া, এসব নষ্টামি ঘরে করতে পারিস না?"
- "ঘরে করলে দেখবে কে?"
-- "এই, ব্যাঁকা কথা বলবিনা। মাথা ফাটিয়ে দেব।"
- "ঠিকই তো বলছি আমি। সবাইকে দেখিয়ে নষ্টামি করা উচিত। যাতে সবাই আনন্দ পেতে পারে। এদেশের মানুষরা ধর্ষনের প্রতিবাদে শুধু হৈ চৈ করতে পারে। কই, আজ পর্যন্ত কোন ধর্ষকের ফাঁসি হয়েছে কি?"
-- "আমি তোর কাছে এসব লেকচার শুনতে আসিনি।"
- "এটা লেকচার না। বাস্তব কথা বলছি আমি।"
-- "তোদের কাছে কি আছে সব তাড়াতাড়ি দে। নইলে এই লাঠিটা দিয়ে মাথা ভেঙ্গে ফেলব।"
-- "তোমরা আমাদের এখানে এভাবে ধরবে আমি সেটা আগে থেকেই জানতাম। সেজন্য আমি আগে থেকেই পুলিশকে খবর দিয়ে এসেছি। যাতে আমরা স্বামী স্ত্রী এখানে একান্তে সময় কাটাতে পারি।"
ওরা তিনজনই মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে লাগল। আমি ওদের কনফিউস করার হালকা চেষ্টা করলাম। তবে এখন যদি কাকতালীয় ভাবে পুলিশ চলে আসত তাহলে খুবই ভালো হত। আমায় নিয়ে ওদের মনে ভীতির সঞ্চার হত। আমি খুব করে চাইলাম যাতে কোন পুলিশ এখানে আসুক। কিন্তু বিবাগীর সব চাওয়া পূর্ণতা পায় না। আবার কোন চাওয়া অপূর্ণও থাকেনা। বিবাগী সব সময় পূর্ণতা আর অপূর্ণতার মাঝখানে থাকে। লাঠিওয়ালা ছেলেটি বলল
-- "দেখি, তোর কোন পুলিশ বাপ এখন তোকে বাঁচায়।"
বলার সাথে সাথেই ছেলেটা লাঠি উঁচু করল। এক্ষুনি সেটা আমার মাথায় এসে পড়বে। আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। আহত হবার জন্যে অপেক্ষা করছি। ঠিক এমন সময় কয়েকটা কুকুর একসাথে ঘেউ ঘেউ করে ডেকে উঠল। আর তিনজনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। আমি অবাক হয়ে গেলাম। যে কুকুরটা সবচেয়ে বেশি উত্তেজিত সে কুকুরটাকে দেখে আমি চিনে ফেললাম। এটা সেই লেজকাটা কুকুর যাকে আমি কয়েকদিন আগেই আমার গায়ের শার্ট দিয়ে ঢেকে দিয়েছিলাম। লেজটা কাটা থাকার কারনে আমি তাকে চিনতে পারলাম। কুকুরটা আমার উপকার মনে রেখেছে। সেজন্য আজ সে আমায় সাহায্য করছে। একা না, সাথে দলবল নিয়ে এসেছে। কুকুরের শ্রদ্ধাভক্তি মানুষের চেয়ে ভালো। তারা সবসময় কৃতজ্ঞ থাকে। পৃথিবীতে সবচেয়ে উঁচু লেভেলের অকৃতজ্ঞ প্রাণী হল কিছু সংখ্যক মানুষ। আমি মুগ্ধ চোখে কুকুর গুলোর দিকে তাকিয়ে আছি। নিশিকন্যা একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে, একবার কুকুর গুলোর দিকে তাকাচ্ছে। তার মনে কিছুটা বিস্ময় ঢুকে গেছে। হয়ত এই কুকুর গুলো আমায় সাহায্য করেছে সে কারনে। ছেলেগুলো লাঠি, ছুরি ফেলে রেখে কোনমতে জান নিয়ে পালাল। নইলে আজ আর রক্ষা হত না। কুকুরগুলো যেভাবে ক্ষেপেছে তাতে মনে হল আজ তারা নিস্তার পেতনা। আমি একটু নিশ্চিন্ত হলাম। কারন আমি আর আহত হব না। আহত হবার সম্ভাবনাও নেই। ছেলেগুলো পালিয়ে যাবার পর লেজকাটা কুকুরটা আমার পায়ের সাথে মাথা ঘষতে শুরু করল। তার যদি লেজ থাকত তাহলে নিশচয় সেটাও নাচাত। আমি বুঝতে পারলাম কুকুরটা আমাকে বলছে, "বস ক্ষমা করবেন, ঐ শালা গুলোরে ভালো করে কামড়াতে পারিনি।" আমি আবার হাঁটা শুরু করলাম। নিশিকন্যা দাঁড়িয়ে আছে। কুকুরগুলো চলে গেল। আমি আবার নিশিকন্যার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। তার চোখে এখনো সেই আতঙ্কিত ভাবটা রয়ে গেছে। আমি ওকে বললাম
- "আমি যদি বিয়ে করতাম তাহলে আপনাকেই করতাম। আপনাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত আমি কখনো বিয়ে করবনা।"
-- "এরকম অনেকেই বলে উদারতা দেখানোর জন্য। এই শহরের মানুষগুলো আমার চেনা আছে। যতক্ষণ বিছানা গরম থাকে ততক্ষণ তাদের মুখ থেকে ভালো কথা বেরিয়ে আসে।"
- "আমি তো আর এখন বিছানায় নেই।"
নিশিকন্যা আর কিছু বললনা। মাটির দিকে তাকিয়ে আছে। একটা মেয়ে কিভাবে রাজকন্যা থেকে নিশিকন্যা হয় সেটা ভাবতে আমার খুব অবাক লাগল। কেমন যেন একটা দুঃখ অনুভূত হয়। নিশিকন্যার মুখের দিকে তাকিয়ে আমার খুব খারাপ লাগল। মনে হয় আজ তার পেটের খোরাক মিটবেনা। আমারও যে কিছু করার নেই। পকেটে কানাকড়িও নেই। আজ আমার এক মুহূর্তের জন্যে হলেও মনে হল আমার কাছে এখন টাকা থাকাটা খুব জরুরি। আমি নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। নিশিকন্যা আমায় কিছু বলতে যাবে এমন সময় শোঁ করে একটা গাড়ি এসে থামল। গাড়িটা দেখে আমি মনে মনে খুশি হলেও নিশিকন্যা তীব্র ভয় পেল এবং বিস্মিত হল। কারন গাড়িটা পুলিশের গাড়ি। বলেছিলাম না, বিবাগীর সব চাওয়া পূরণ হয়না এবং অপূর্ণও থাকেনা। বিবাগীরা চাওয়া পাওয়ার পূর্ণতা এবং অপূর্ণতার মাঝখানে থাকে। পুলিশ এসেছে ঠিকই কিন্তু যখন প্রয়োজন ছিল তখন না এসে এখন এসেছে। গাড়ি থেকে একজন পুলিশ নামলেন। উনার ইউনিফর্মে নাম লিখা আছে। উনার নাম জামিল হোসেন। তিনি আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন
-- "আপনারা কে?"
- "স্যার, আপনি ধানমন্ডি থানার ওসি না?"
-- "হ্যাঁ, আপনারা এখানে এত রাতে কি করছেন?"
- "স্যার, আমি শফিউল মোল্লার ভাতিজা।"
-- "কোন শফিউল মোল্লা?"
- "ফোম ফ্যাক্টরি এর মালিক শফিউল মোল্লা।"
-- "ও আচ্ছা। আপনার নাম কি?"
- "স্যার আমার নাম বিবাগী।"
-- "ফাজলামো করছেন আপনি আমার সাথে?"
জামিল সাহেব একটু রেগে গেল। আমি তবুও নির্বিকার থাকলাম। আজ যা কিছুই হোক, আমি আমার নাম বলব না। আমি বললাম
- "স্যার, আমি আমার নাম জানিনা। তাই আমি আমার নাম বিবাগী রেখে দিয়েছি। সাতকুলে আমার কেউ নেই। মোল্লা চাচা আমার দূর সম্পর্কের চাচা। উনার আজকে একটা সমস্যা নিয়ে আপনার সাথে দেখা করার কথা ছিল। কিন্তু আমি সেই সমস্যাটা সমাধান করে দেয়ায় উনি আপনার সাথে দেখা করেননি। আমার কথা বিশ্বাস না হলে আপনি মোল্লা চাচার সাথে কথা বলে দেখুন।"
আমার কথা শুনে জামিল সাহেবের চেহারা থেকে কাঠিন্যতা মুছে গেল। আমার জন্যে এটা প্লাস পয়েন্ট। জামিল সাহেব এবার আপনি থেকে তুমিতে নেমে এলেন। আমি এটাকেও প্লাস পয়েন্ট হিসেবে ধরে নিলাম। তিনি আমাকে বললেন
-- "হ্যাঁ, একটু আগে মোল্লা সাহেবের সাথে আমার কথা হয়েছিল। উনি আমাকে সব বলেছে। তুমিই তাহলে সেই ছেলে যার ভবিষ্যত বাণী সত্যি হয়।"
- "সব সময় হয় না স্যার। মাঝে মাঝে হয়।"
-- "ঠিক আছে, এই মেয়েটা কে?"
- "আমার স্ত্রী।"
-- "তুমি যে একটু আগে বললে তোমার সাতকুলে কেউ নেই।"
- "বউ কি কখনো আপন হয় নাকি? এদের যত শাড়িচুড়ি কিনে দেয়া যায় এরা ততই আপন হয়। শাড়িচুড়ি না দিলে বউও পর হয়ে যায়।"
জামিল সাহেব ভেবে নিয়েছেন আমরা স্বামী স্ত্রী। আমাদের মাঝে অভিমান চলছে। শাড়িচুড়ি নিয়ে প্রচন্ড ঝগড়া করেছি। এগুলো ভেবে তিনি একটা মুচকি হাসি দিয়ে গাড়িতে উঠে চলে গেলেন। নিশিকন্যা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এবার সে পুরোপুরি বিস্মিত হয়ে গেল। আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। একটুও নাড়াচাড়া করছেনা। প্রাণহীন রোবটের মত মনে হচ্ছে। আমি একটা রহস্যময়ী হাসি দিয়ে পিছু ফিরলাম। তারপর আবার হাঁটতে শুরু করলাম। আমার তো অনেক কাজ। মানুষকে বিভ্রান্ত করা আমার বেতন বিহীন চাকরি। কে জানে, কেউ হয়ত আমার দ্বারা বিভ্রান্ত হবার জন্য অপেক্ষা করছে।
.
(চলবে)
.
.
লেখক :- বিবাগী শাকিল
āĻāϞ্āĻĒ āϏংāĻ্āϰāĻš āĻāϰা āĻāĻŽাāϰ āύেāĻļা। āϰোāĻŽাāύ্āĻিāĻ, āĻৌāϤিāĻ, āϰāĻŽ্āϝ, āĻৌāϤুāĻ āϏāĻš āĻšাāĻাāϰো āĻāϞ্āĻĒ āĻāĻে āĻāĻŽাāϰ āϏংāĻ্āϰāĻšে।
āϰāĻŦিāĻŦাāϰ, ⧍ā§Ē āϏেāĻĒ্āĻেāĻŽ্āĻŦāϰ, ⧍ā§Ļā§§ā§
2286 (5)
āĻāϰ āĻĻ্āĻŦাāϰা āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰা
Rahathossain1010100@gmail.com
āĻāĻ āϏāĻŽā§ে
⧧:⧍⧧ AM

āĻāϤে āϏāĻĻāϏ্āϝāϤা:
āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝāĻুāϞি āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ (Atom)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ