āϰāĻŦিāĻŦাāϰ, ⧍ā§Ē āϏেāĻĒ্āϟেāĻŽ্āĻŦāϰ, ⧍ā§Ļā§§ā§­

2286 (4)

বিবাগীর বৃষ্টিবিলাস
পর্ব নং :- (৪/৮)
লেখক :- বিবাগী শাকিল
===================
.
চলতি ট্রেনের দরজার সিড়িতে বসে আছি। রাত প্রায় বারোটা। এই পরিস্থিতিতে কেমন যেন নিজেকে উদাস মনে হয়। অনুভূতিতা অন্যরকম। বলে বোঝানো যাবেনা। যারা রাতের বেলায় ট্রেনে দরজার সিড়িতে একা একা হাতে সিগারেট নিয়ে বসেছে তারাই বুঝতে পারবে অনুভূতিটা কেমন। ট্রেনটা গ্রামের ফাঁকে ফাঁকে চলছে। আশে পাশের মানুষগুলোর অভ্যাস হয়ে গেছে ঝকঝক শব্দ শুনে। তাদের এখন আর ঘুম ভাঙ্গেনা। সিগারেট খেয়েই চলেছি আমি। এত নিকোটিন নিয়ে আমি যে কিভাবে বেঁচে আছি আল্লাহই ভালো জানে। সিগারেট কোম্পানি গুলা অনেক মিথ্যা বলে। তারা প্যাকেটের গায়ে লিখে ধুমপান মৃত্যু ঘটায়। কথাটা ভুল। যারা ধুমপান করেনা তাদেরও মৃত্যু হয়। যার মৃত্যু সৃষ্টিকর্তা যেভাবে ঠিক করে রেখেছেন সে সেভাবেই মরবে। সম্ভবত মানুষের মৃত্যু লিখা হয়েছে তার পায়ে। যার যেখানে মরণ হবে সে সেখানেই হেঁটে যাবে। সিগারেটে নিকোটিনের মাত্রাটা আরেকটু বাড়ালে ভালো হত। এই স্বল্প নিকোটিনে আমার পুষে না। একটা ঘোরে পড়ে গেলাম আমি। খানিকটা উদাস, কিছুটা এলোমেলো, অনেকটা ছন্নছাড়া আর সব মিলিয়েই আমি হয়ে গেলাম বিবাগী। দরজায় হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে বসলাম। ট্রেন অনেক দ্রুত চলছে। এসময়ে প্রেমিকরা তাদের প্রেমিকাকে মিস করে। তারা ভাবে এই সময় তাদের প্রেমিকা সাথে থাকলে কতই না ভাল হত। কিন্তু আমি কাউকে মিস করিনা। আমার কোন টেনশন নেই। আমার শরীরে আবার কাঁপুনির সৃষ্টি হল। বুঝে ফেলেছি। আমার বৃষ্টি শুরু হবে। আর আমার দ্বিতীয় সত্তা এসে আমার সাথে কথা বলবে। এটা ভাবতে দেরি করেছি কিন্তু সে আমার সামনে আসতে দেরি করেনি। আমি বললাম
- "দেখলি, কি সুন্দর একটা পরিবেশে আমি বসে আছি"।
-- "আল্লাহ যে কেন আমাকে তোর মত পাগলের দেহে পাঠিয়েছে? এই শীতে মানুষ কিভাবে দরজার সামনে বসে থাকে"?
- "তুই আমার চেয়েও বড় পাগল। আমি তো তাও এই শীতে একটা পাঞ্জাবী পরে আছি। কিন্তু তুই খালি গায়ে কেন"?
-- "তোর কারনে হতচ্ছাড়া। তোর দেহ থেকে যত তাড়াতাড়ি বিদায় নিতে পারি আমার জন্য তত বেশি মঙ্গল হবে"।
- "মঙ্গলে যেওনা কভু, অমঙ্গলে যাও। মঙ্গলে ফিরে এসে বুঝবে, কি তুমি পাও"।
-- "তোর এসব হাবিজাবি আমাকে বলবিনা। ওগুলো তোর কাছেই রাখ"।
- "তুই যখন আমার সাথে আছিস একটু আধটু শিখে নে"।
-- "আমার শেখার দরকার নাই। তুই সাবধানে থাকিস। তোর সামনে অনেক বড় বিপদ আছে"।
- "ঠিক আছে। তুই এখন যা। আর মনে রাখিস আমি বিপদে ভয় পাইনা"।
এই ভীতুরে যে আল্লাহ কেন আমার দেহে পাঠালো। বিপদে ভয় পেলে চলে নাকি? বিপদ তো মানুষের জন্যেই। নাকি মানুষ বিপদের জন্যেই। কথা দুটিই সঠিক। পরিবেশ অনুযায়ী এক সময় একটা ব্যবহৃত হয়। ঝরঝর করে বৃষ্টি হল। আশ্চর্য ব্যাপার। এই অন্ধকার রাতেও বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। গ্রামগুলো সব ভাসিয়ে নিচ্ছে আমার বৃষ্টি। আমি ট্রেনের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। মাথা বের করে রাতের অন্ধকারেও আমি দিনের মত পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি। মুখে সিগারেট অথচ বৃষ্টির ঝাপটায় সেটা ভিজছেনা। শুধু আমিই ভিজছি। এই বৃষ্টি অন্য কারো জন্য নয়। তবুও সেদিন নিপার গায়ে খানিকটা পড়ে গেল। বুঝতে পারলাম না, নিপা কি আমার বৃষ্টি কেড়ে নেবার চেষ্টা করছে? এতো আমার সম্পদ, নিপাকে কিছুতেই দেয়া যাবেনা। আর বিবাগী এক্সপ্রেসের ড্রাইভার একজনই হয়। সেটা শুধুই আমি। আমিই পরিচালনা করব। কাউকে তার নিয়ন্ত্রক বানাব না। এখন এই বৃষ্টিতে আমি যতই দেখিনা কেন, নিপার নুপূর পরে দৌড়ানো আমায় আকৃষ্ট করতে পারবেনা। ট্রেন চলাকালীন সত্ত্বেও আমি ট্রেনের শব্দ শুনতে পাচ্ছিনা। নিপার পায়ের নুপূরের শব্দটাই শুনতে পাচ্ছি। আমি সেই শব্দ শুনতে চাইনা। ভেজা নীল শাড়িতে তার সৌন্দর্য যতই ফুটে উঠুক, তবুও আমি ফিরে তাকাব না। বাড়ানো হাত দুটো কখনো আমায় ছুঁতে পারবেনা। কারন আমি বিবাগী। আর বিবাগী সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। নিপার নুপূরের শব্দটা যেন আমি না শুনতে পারি সেজন্য কি করা যায়? নিজে নিজেই গান গাওয়া শুরু করলাম আমি।
.
-- "একটু বসতে পারি"?
আমার ঘোর কেটে গেল। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখলাম একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। গায়ে একটা কালো জ্যাকেট, একটা কালো প্যান্ট আর একজোড়া কালো কেডস। মাথার উপর কালো চশমা। রাত্রিবেলা, তাই হয়ত চোখে পরেনি সেটা। ছেলেটাকে এই কালো আবরণে ভালোই লাগছে। আমি আবার সিঁড়িতে পা রেখে ওকে বসার জন্য জায়গা দিলাম। মুখে কিছু বললাম না। ছেলেটা এসে আমার পাশে বসল। আর বলল
-- "ধন্যবাদ, আপনার নাম জানা যাবে"?
- "চব্বিশ বছর কি কেউ সম্পূর্ণ একা থাকতে পারে"?
উত্তরে পরিবর্তে পাল্টা প্রশ্ন শুনে ছেলেটা হকচকিয়ে গেল। কিছু বলল না। আমি আবার তাকে প্রশ্নটা করলাম। ছেলেটা হেসে বলল
-- "কেন ভাই, চব্বিশ বছর আগে কি আপনি জোড়া ছিলেন"?
- "না। চব্বিশ বছর আগে আমার জন্ম হয়েছিল নাকি হয়নি সেটাও জানিনা। আমি নিজেই আমার বয়স জানিনা"।
-- "আপনি কি করেন"?
- "ডাকাতি করি"।
-- "আমার বিশ্বাস হচ্ছেনা।"
- "আমিও বিশ্বাসযোগ্য কিছু বলছিনা।"
ছেলেটা একটু চুপ হয়ে গেল। পকেট থেকে মোবাইল বের করে কানে হেডফোন গুঁজে দিয়ে গান শুনতে লাগল। আমি এবার বিরক্ত হয়ে গেলাম। গান যদি শুনতেই হয় তাহলে নিজের সীটে গিয়ে শুনলেই হয়। এখানে এসে আমায় বিরক্ত করার কি দরকার ছিল। আমি ছেলেটাকে কিছু বলতে যাব এমন সময় সে হেডফোন খুলে আমায় বলল
-- "এই বিষম ঠান্ডায় আপনি কিভাবে বসে আছেন"?
- "শব্দটা বিষম না, ভীষণ হবে"।
-- "একই কথা, দুটোর মানেই এক।"
- "সেটা অবশ্য ঠিক। তবে কখনো কখনো একটা অক্ষরই পুরো বাক্যটাকে বদলে দেয়"।
-- "যেমন?"
- "গভীর নেশায় তুমি নগ্ন, গভীর নেশায় আমি মগ্ন। দুটি কথা প্রায় একই, শুধু দুইটা অক্ষরের কারনে অর্থ দুরকম হয়ে গেল।"
ছেলেটা আমার কথা শুনে একটু ভাবতে শুরু করে। ভাবতে কিছুটা সময় লাগবে আমি জানি। সে আমার কথা ভাবুক। আমি কিছুক্ষণ চুপচাপ রাতের প্রকৃতি দেখি। গ্রামের ঘরবাড়ি গুলোতে লাইট জ্বলছে। এখন মধ্যরাত। সবাই নিশ্চয় ঘুমাচ্ছে। শীতের সময় সবাই একটু আরাম করেই ঘুমায়। আমি ছেলেটার দিকে তাকালাম। তাকে দেখে যা বুঝার বুঝে নিলাম। আমি বললাম
- "হাবিব ভাই, আপনার প্রেমিকার বিয়ে কবে হল?"
হাবিবের মোবাইলের ডিসপ্লেতে তার ছবি দেয়া ছিল। তাতে তার নাম লিখা ছিল। তাতেই জানতে পারলাম ছেলেটার নাম হাবিব। সে বেশি চমকালো না। না চমকানোরই কথা। সে এখন একটু আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছে। কোন মানুষ আবেগপ্রবণ অবস্থায় চমকায়না। সে আমার সাথে এমন ভাবে কথা বলল যেন আমি তার প্রেমের ব্যাপারে সব জানি। সে বলল
-- "ওর বিয়ে এক সপ্তাহ আগে হয়েছে।"
- "কষ্ট হয়েছিল?"
-- "অনেক কেঁদেছি ভাই।"
- "ড্রিংক্স কোনটা খেয়েছেন?"
-- "হুইস্কি, রাম, নাম্বার ওয়ান, ওয়াইন সবই খেয়েছি।"
- "বাহ, গভীর নেশায় মগ্ন ছিলেন তখন?"
হাবিব কিছু বলল না। আবার চুপ হয়ে গেল। সিগারেটের প্যাকেট বের করে সিগারেট জ্বালাল। আমাকে পুরোপুরি অগ্রাহ্য করেই সে সিগারেট টানতে লাগল। আমার কাছে সিগারেট নেই। সেজন্য অনেকক্ষণ ধরে ভেতরটা নিশপিশ করছে। সিগারেটের গন্ধ পেয়ে সেটা আরো বেড়ে গেল। আমি বললাম
- "একটা সিগারেট দিন ভাই।"
-- "আমার কাছে আর নেই। থাকলে আপনাকে অফার করতাম।"
- "তাহলে অর্ধেকটা দিবেন।"
-- "স্যরি ভাই, আমি আমার মুখের সিগারেট কাউকে দিইনা। কারো মুখের সিগারেটও খাইনা।"
আমি কিছু বললাম না। একটু লজ্জা পেলাম মনে হচ্ছে। বিবাগীদের কি লজ্জা থাকে? মনে হয় না। তাদের চামড়া হয় গন্ডারের মত। সহজে কোন কিছু গায়ে মাখেনা। আমিও তেমন গায়ে মাখিনি। কিছু হয়নি ভেবে ভুলে গেলাম সেটা। হঠাৎ করেই রুপার কথা মনে পড়ে গেল। রাসেল এর হবু স্ত্রী রুপা। মেয়েটার সাথে আমার একবারো কথা হয়নি। তবে যেটুকু সময় আমি তাকে দেখেছি সেটুকুতেই বুঝেছি সে রাসেলকে অনেক ভালোবাসে। আমি তাদের সমস্যা সমাধান করে দেয়ায় সে ভীষণ খুশি হয়ে গিয়েছিল। সব মানুষের মুখে খুশির হাসি দেখতে খুব ভালো লাগে। তবে তাতে নিজের চরিত্র ফুটে উঠেনা। আমি মনে করি গাম্ভীর্য হচ্ছে মানব চরিত্রের আয়না স্বরুপ। গম্ভীর অবস্থায় একটা মানুষের মুখে যে ধরনের এক্সপ্রেশন দেখা যায় সেটাই একদম খাঁটি এক্সপ্রেশন। সেখানে কোন কৃত্রিম কিছু থাকেনা। আর গম্ভীর মানুষকে দেখলেই বোঝা যায় সে কেমন। এই তো, হাবিব এখন মুখ গম্ভীর করে বসে আছে। একমনে সিগারেট টানছে। সিগারেটে বেশি অভ্যস্ত না। তবুও সে জোরে জোরে টানছে। আমি জানি এই সিগারেট অর্ধেকটা শেষ হবার পর বাকি অর্ধেকটা সে আমায় দেবে। আজ সে তার নিয়ম ভঙ্গ করবে। কারন এই বিবাগী তার মনের কিছুটা অংশ ডাকাতি করে দখল করেছে। বিবাগীরা এই দিক থেকে পারফেক্ট ডাকাত। যেকোন মানুষের মনে অল্পতেই ঢুকে পড়তে পারে। আমি নিপার মনেও ঢুকে গেছি। তার মন আমায় নিয়ে খুব গভীর ভাবে ব্যস্ত থাকে। আমায় নিয়ে অনেক কল্পনা করে। আমার আর ওর বাসর ঘর কিভাবে সাজাবে সেটা ভাবে। গোলাপ ফুল দিয়ে "এন প্লাস" কি লিখবে সেটা চিন্তা করে। কারন সে এখনো আমার নাম জানেনা। তাই সে সিদ্ধান্ত নিল "এন প্লাস বি" লিখবে। ওর জন্য এটা অনেক সুখের কল্পনা। কিন্তু নিপার মন জানেনা সে অনধিকার চর্চা করছে। মেয়েরা যেমন অধিকার ফলাতে পারে তেমন অনধিকার চর্চাও করতে পারে। তবে আমার মনের শত পর্দার আড়ালে লুকিয়ে রাখা একটা কথা আমি জানি। সেটা হল, আমি যতই পাহারা দিয়ে রাখি, তবু জানি চুরি হবে। চুরি হবে ঠিকই, কিন্তু যার চুরি হবে সে কখনোই সেটা প্রকাশ করবেনা। তাই চুরির ব্যাপারটা কোনদিনও প্রকাশিত হবেনা। ব্যাপারটা অনেক মজার। তবে একটু কষ্টের। না না, একটু আফসোসের। না এটাও নয়, সঠিকটা হবে ব্যাপারটা হৃদয়হীনতার। আমি অনেক কনফিউজড হয়ে গেলাম। একটা প্রশ্নের চারটা উত্তর অথচ চারটা উত্তরই সঠিক। কি আশ্চর্য, এরই মাঝে আমি ভুলেই গেলাম কি চুরি হবে। চুরি হবে সেটা জানি, কিন্তু কি চুরি হবে সেটা কিছুতেই মনে পড়ছেনা। উফ, কি যে করি আমি। মেমোরি সেল আজকাল সব ভুলতে বসেছে।
.
কয়টা বাজে জানিনা। আমার হাতে ঘড়ি নেই। মোবাইল আছে তবে সেটা আমার মেসেই পড়ে আছে। আমি সেটা ব্যবহারও করিনা। সুইচ অফ করে ড্রয়ারে রেখে দিয়েছি। ঘড়ি না থাকলেও আমার মনে হল এখন প্রায় শেষ রাতই হবে। ট্রেন কমলাপুরে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ট্রেন থেকে নামলাম। প্ল্যাটফর্মে বসলাম। শীত লাগছে। আশেপাশের মানুষগুলোর দিকে তাকালাম। তারা কেউ আমার নজর গভীর ভাবে কেড়ে নিতে পারেনি। শুধু একটা বাচ্চাকে দেখে আমার ভেতরটা ডুকরে কেঁদে উঠল। অনেকগুলো পলিথিন দিয়ে মোড়ানো একটা পোটলা বালিশের মত করে মাথায় দিয়ে শুয়ে আছে। গায়ের উপর একটা বস্তা। সেটাকে কম্বলের মত মুড়িয়ে নিয়েছে। কে জানে, এই বাচ্চাটার কাছে হয়ত এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি আরামদায়ক কম্বল। আমি একটু একটু করে ছেলেটার দিকে এগিয়ে গেলাম। তার মাথার কাছে গিয়ে বসলাম। কোন শব্দ হয়নি। অথচ ছেলেটার ঘুম ভেঙ্গে গেল। কিভাবে ভাঙ্গলো বুঝতে পারলাম না। ছেলেটা আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। ওর চকচকে চোখ দুটো দেখে কেন জানি আমার মনে হল আমিও ছোটবেলায় ওর মত করেই বস্তা গায়ে দিয়ে শুয়েছি। হঠাৎ আমার এই কথা কেন মনে হল বুঝলাম না। ছোটবেলার কথা আমার একদমই মনে নেই। আমি ছেলেটাকে বললাম
- "তোর নাম কিরে?"
-- "পিন্টু। আপনের নাম কি?"
- "আয় তোর কানে কানে বলি। কারন আমার নাম কেউ জানেনা।"
পিন্টু আমার কথা শুনে উঠে বসল। মনে হচ্ছে আমাকে সে আপন করে নিয়েছে। কিন্তু কেন? পিন্টুর মুখে হাসির হালকা ঝলক দেখা যাচ্ছে। সে তার কানটা আমার মুখের সামনে নিয়ে এল। আমি তার কানে আস্তে করে আমার নাম বললাম। পিন্টু আমার নাম শুনে হেসে ফেলল। আর বলল
-- "আপনের নাম কাউরে কন না ক্যান?"
- "আমার কথা বাদ দে। তুই এখানে শুয়ে আছিস কেন?"
-- "কই আর শুমু কন। আমার থাকনের জায়গা নাই।"
- "কি করিস?"
-- "ভিক্ষা করি।"
- "ভিক্ষা করার সময় কি গান গাস?"
-- "হ্যা, বহুত সুন্দর একখান গান পারি আমি।"
- "দেখি গা। আমি শুনব।"
-- "শুনাইলে কি ট্যাকা দিবেন?"
- "আমার কাছে টাকা নেই। তুই শুনাবি কিনা বল।"
আমার কথা শুনে পিন্টুর মুখ মলিন হয়ে যাবার কথা। অথচ তার মুখে মলিনতার কোন চিহ্নই নেই। বরং আরো হাসি হাসি হয়ে গেল। বাহ, হাসলে পিন্টুকে খুব সুন্দর লাগে তো! পিন্টু হাসতে হাসতে বলল
-- "আপনে তো তাইলে আমার থেইকাও বড় ফকির।"
- "ঠিকই বলেছিস। এখন তুই আমারে একটা গান শিখা। কাল থেকে গান গেয়ে দুজন মিলে ভিক্ষা করব।"
আমার কথা শুনে পিন্টু অনেক খুশি হয়ে গেল। মনে হয়, এতদিনে সে একটা লিডার পেল। হয়ত বাচ্চা ভেবে মানুষ এতদিন পিন্টুকে ধমক দিত। পিন্টু এখন আমাকে তার গার্জেন হিসেবেই ভেবে নিল। পিন্টু গান গাওয়ার জন্য গলাটাকে একটু পরিষ্কার করে নিল। তারপর গাওয়া শুরু করল।
"ছোট্টকালে হারিয়েছি বাপ
তাই বাপের কথা মনে পড়েনা,
বেঁচে থাকলে শুধাতাম তারে
জন্ম দেয়া জরুরি ছিল না,
বাড়িতে মা বিকলাঙ্গ
ছোট বোনটাও খুব ক্ষুধার্ত,
ইচ্ছে করে ইঁদুর মারার বিষ দিয়ে
ওদেরকে মারি,
ইচ্ছে করে দশতলা থেকে
নিজেও লাফিয়ে মরি,
খোদা তুমি বল
গরীব হয়ে জন্মানো কি অপরাধ......"
খুব সুন্দর করে পিন্টু গানটা গাইলো। আমি মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম। জেনস সুমনের এই দুর্লভ একটা গান পিন্টু কিভাবে মুখস্থ করল সেই ভালো জানে। তবে সে এলোমেলো ভাবে গানটা গাইলো। যথাসম্ভব এর পরের লাইন গুলো সে ভুলে গেছে। তাই এটুকুই আবার গাইলো। কেন যেন ওর গান শুনে আমার চোখটা ছলছল করে উঠল। সেই সাথে মেজাজটাও খারাপ হতে শুরু করল। মাঝে মাঝে আমার এরকম হয়। কোন কিছুতে কষ্ট পেলে তেমন খারাপ লাগেনা। শুধু মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। আমি পিন্টুকে ধমক দিয়ে বললাম
- "এই চুপ কর। নইলে এক থাপ্পড়ে কান ফাটিয়ে ফেলব।"
পিন্টু আমার ধমক শুনে চমকে গেল। গান গাওয়া বন্ধ করে দিল। আমার থেকে এমন ব্যবহার পাবে সে আশা করেনি। তবে তার মন এতটাও খারাপ হয়নি। কারন সে এরই মাঝে আমাকে ওস্তাদ বলে ডাকল। আমাকে বলল
-- "ওস্তাদ, এই গান আপনের মুখে শুইনলে মাইনষে বহুত ট্যাকা দিব।"
আমি পিন্টুর কথার জবাব দিলাম না। বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম। পকেটে পাঁচশত টাকার একটা নোট আছে। আর খুচরা কয়েক টাকা আছে। মইনুল ভাইয়ের দেয়া হাজার টাকার থেকে এই কটা টাকাই অবশিষ্ট আছে। আমি পিন্টুর হাতে পাঁচশ টাকার নোটটা দিয়ে বললাম
- "পিন্টু, তুইও ভিখিরি, আমিও ভিখিরি। তবে আমি টাকার ভিখিরি না।"
এই বলে আমি চলে যাচ্ছিলাম। একটু এগিয়েই আমি পিছু ফিরলাম। পিন্টু আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আমি আবার পিন্টুর দিকে এগিয়ে গেলাম। হলুদ পাঞ্জাবীটা আমার গায়ে আর মানাচ্ছেনা। আমি খুলে ফেললাম। পিন্টুকে পাঞ্জাবীটা দিয়ে বললাম
- "এইটা দিয়ে নিজেকে ঢেকে রাখ। শীত কম লাগবে।"
আমি পিন্টুর মুখের দিকে আর তাকালাম না। সোজা হাঁটা শুরু করলাম। খালি গায়ে একটু একটু কাঁপছি আমি। তাতে কোন সমস্যা নাই। আমার অভ্যাস আছে। আকাশ ফর্সা হতে শুরু করেছে। তার মানে সকাল হতে শুরু করল। তাহলে এখন আর মেসে ফিরে যাবনা। কোথায় যাওয়া যায়? ও হ্যাঁ, পেয়েছি। আমি দ্রুত পা ফেলতে শুরু করলাম। কোথাও যেন রিনঝিন শব্দ হচ্ছে। আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি। যাই, এই শব্দটার উৎপত্তিস্থলে যাই।
.
খুচরা যে কটা টাকা ছিল তা দিয়ে এক প্যাকেট সিগারেট নিয়ে নিলাম। শীতের সকালে সিগারেট খুবই আরামদায়ক পানীয়। তরল পদার্থ হলেই যে পানীয় হতে হবে এমন কোন কথা নেই। যে জিনিস পান করা যায় সে জিনিসকেই পানীয় বলা যায়। নাকি যায়না? আমি জানিনা। চলে আসলাম রিনঝিন শব্দের উৎপত্তিস্থলে। কিন্তু শব্দটার উৎস খুঁজে পেলাম না। আমি কি তাহলে অপেক্ষা করব? না, অপেক্ষা করব না। আমি বরং একটু হাঁটাহাঁটি করি। আমি হাঁটতে শুরু করলাম। হাঁটতে হাঁটতে একটু সামনে এগিয়ে গেলাম। আর দেখলাম একটা মেয়ে ক্যাট ওয়াকিং করে নুপূর পায়ে রিনঝিন শব্দ তৈরী করে হাঁটছে। মেয়েটা চলে যাচ্ছে। আমি চিনে ফেললাম মেয়েটাকে। এই সেই নিপা, যে আমার কল্পনায় ঢুকে পড়ে। কিন্তু আমার প্রতি নিপার এত আগ্রহ আছে সেটা তো আমার জানার কথা না। তবুও আমি কিভাবে জানলাম? উত্তরটা নিয়ে ভাবতে সুযোগ পেলাম না। কারন নিপা ঘুরে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকাল। কিভাবে যেন সে আমার উপস্থিতি টের পেয়ে গেল। তারপর এক প্রকার দৌড়েই আমার সামনে এসে থমকে দাড়াল। অলস একটা মেয়ে। অল্প একটু দ্রুত হেঁটেই হাঁপিয়ে গেল। ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলছে। আর সেই সাথে বুকের ওঠানামাও শুরু হল। নিপা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-- "কোথায় ছিলেন এতদিন?"
- "বাংলাদেশেই ছিলাম। কেন?"
-- "আমি প্রতিদিন ভোরে এসে আপনাকে খুজেছি। মাঝে মাঝে বিকেলেও এসেছি। কিন্তু আপনার দেখা পেলাম না।"
- "আমাকে খোঁজার কারনটা জানতে পারি?"
-- "আপনি সেদিন আমাকে দেখেই এতকিছু বলে দিলেন। তাহলে আজও বলে ফেলুন আমি কেন খুজেছি।"
- "স্যরি, আমার মাটির কলসে কোন জল নেই। আপনার কাঁচের কলসে কিভাবে ঢালব?"
নিপা আবার বিভ্রান্ত হয়ে গেল। চোখে খানিকটা বিস্ময় ফুটে উঠেছে। আজ তার গালে লাল আভাটা নেই। কেন নেই সেটা বুঝতে পারলাম না। এই ফাঁকে আমি নিপার পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম। কালো জামা, কালো পায়জামা, কালো চাদর। বাহ, নিপাকেও হাবিবের মত কালো আবরণে ভালো লাগছে। তবে একটা অদ্ভুত জিনিস দেখলাম। নিপা খালি পায়ে নুপূর পরে আছে। তার মানে নিপা সত্যিই তার কাঁচের কলসে জল নিতে এসেছে। আমার কল্পনায় যা যা আসত তা তো সঠিক মনে হচ্ছে। অথচ আমি এত নিঁখুত ভাবে সঠিক ব্যাপারটা কল্পনা করলাম কিভাবে? নিপা আমার প্রতি ইন্টারেস্টেড এটা আমি জানলাম কিভাবে? এবারো সেটা ভাবার সুযোগ পেলাম না। কারন নিপার বাগযন্ত্র আবার শব্দ তৈরী করল।
-- "আপনি কোথায় যে এত অদ্ভুত কথা পান কে জানে।"
- "কই অদ্ভুত কথা বললাম। আমি তো সাধারণ কথাই বলি।"
-- "সাধারণ নাকি অসাধারণ সেটা আমি জানি। আমাকে শিখাতে হবেনা।"
- "সবকিছু জানলে তো ভালোই। বুদ্ধিমতী মেয়ে বলতে হবে আপনাকে।"
-- "আচ্ছা বাদ দিন। সেদিন তো খুব একটা ভাব মেরে চলে গিয়েছেন। আমি বুঝেছি আপনি কিভাবে জানলেন আমার বাবা মারা গেছে।"
- "কিভাবে বুঝেছেন?"
-- "আমি বলেছিলাম যে বাবা আমায় আগলে রাখতেন। তার মানে অতীত কাল। এখন আগলে রাখেনা। যার কারনে আপনি বুঝে ফেলেছেন আমার বাবা আর নেই।"
- "কেন? আমি তো এমনটাও ভাবতে পারতাম আপনার বাবা বেচে আছে। হয়ত আপনাদের ছেড়ে দূরে কোথাও চলে গেছে।"
নিপা আবার চুপ হয়ে গেল আমার কথা শুনে। এই মেয়েটা চুপ থাকলেও ভালো লাগে। কথা বললেও ভালো লাগে। আমি কথা ঘুরিয়ে নিলাম। ওকে বললাম
- "কোন যুবক বন্দী হয়েছে?"
-- "বুঝলাম না।"
- "নুপূরের ছন্দের ঘোরে কেউ বন্দী হয়েছে?"
-- "সে আমি জানিনা। আপনি বলেছিলেন নুপূর পরতে তাই পরেছি।"
- "সুন্দর লাগছে।"
-- "আমাকে তো সুন্দর লাগবেই। এমন কোন মেয়ে আছে নাকি যে আমার মত নুপূর পরে হাঁটতে পারবে।"
বলেই একটা মিষ্টি হাসি দিল নিপা। সে হাসির আড়ালে লুকিয়ে আছে কত না বলা কথা। আমি ওর হাসি দেখেই বুঝে ফেললাম নিপা পাল্টে যাচ্ছে। নিপা সেই হাসি থামিয়ে বলল
-- তো মিস্টার বিবাগী, আপনি আজও খালি গায়ে কেন?"
- "ভিখিরি তো তাই।"
-- "কিসের ভিখিরি?"
- "জানিনা।"
-- "বলবেন না সেটা বলেন।"
আমি চুপ করে রইলাম। চুপ হয়ে চিন্তা করতে লাগলাম আমি কিসের ভিখিরি। অনেক ভেবেও কোন কুল কিনারা খুঁজে পেলাম না। পৃথিবীতে মনে হয় আমিই একমাত্র ভিখিরি যে কিনা কিসের ভিখিরি সেটাই জানেনা। নিপার কথা শুনতে পেলাম আবার।
-- "বিবাগীর বৃষ্টির কি খবর?"
- "আছে, ভালোই।"
-- "মাঝে মাঝে এই বৃষ্টি আমার গায়ে পড়ে কেন?"
- "কাঁচের কলসে বিবাগীর বৃষ্টির জল নেয়ার চেষ্টা করছেন তাই।"
-- "এত ঘোরানো প্যাঁচানো কথা আমি বুঝিনা। বুঝিয়ে বলেন।"
- "বুঝতে হবেনা। চুরি হবে জেনেও আমি যেমন বুঝতে পারছিনা কি চুরি হবে তেমনি আপনিও বুঝতে পারবেন না বৃষ্টি কেন আপনার গায়ে পড়ে।"
-- "আর বিভ্রান্ত করবেন না প্লিজ।"
- "আচ্ছা করব না।"
নিপা এখনো ভ্রু কুঁচকে বিভ্রান্তি নিয়ে আছে। আমি ওর বিভ্রান্ত দুটি চোখ দেখছি। শুনেছি চোখ নাকি মনের কথা প্রকাশ করতে পারে। নিপার চোখের দিকে তাকালাম। কি প্রকাশ করছে বুঝতে পারলাম না। হয়ত বুঝেও বুঝার চেষ্টা করছিনা। নিপা আবার বলল
-- "আপনি তো ফোন ব্যবহার করেন না মনে হয়।"
- "ফোন আছে, তবে ব্যবহার করতে ভালো লাগেনা।"
-- "আমার নাম্বারটা নিন। বাসায় গিয়ে ফোন দিবেন। কথা আছে।"
আমি হাত বাড়িয়ে নিপার বাড়ানো হাত থেকে কাগজটা নিলাম। এখানে কাগজ দুইটা দেয়া আছে। কাগজগুলো দুএক দিনের পুরনো। তার মানে নিপা এই দুদিন ধরে এই কাগজগুলো নিয়েই আমাকে খুজেছিল। আমি কাগজ খুলে দেখলাম না। পকেটে রেখে দিলাম। নিপা এবার আমায় বলল
-- "আমি এখন গেলাম। ফোন দিতে ভুলবেন না কিন্তু।"
আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেল নিপা। আমি নিপার হেঁটে চলার ভঙ্গি দেখছি। ভালোই লাগছে। তবে মনে হচ্ছে নিপা ইচ্ছে করেই পা দুটো মাটিতে জোরে জোরে ফেলছে। আমি এটা দেখে হেসে ফেললাম। এই নিপা কেন যে বোঝেনা তার নুপূরের ছন্দের ঘোরে আমি বন্দী হব না। তা সে যতই জোরে মাটিতে পা ফেলে শব্দ তৈরী করুক। সেটা আমার কানে বাজলেও বুকে বাজবেনা। আমি চোখ সরিয়ে নিলাম। সারারাতের জার্নিতে শরীরটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। নির্ঘুম ছিলাম। তাই এই সকাল বেলায় চোখে ঘুম জড়িয়ে আসছে। আমি আমার মেসের দিকে পা ফেলতে শুরু করলাম।
.
রুমে ঢুকেই খাটে আছড়ে পড়লাম। কোন কিছু নিয়ে ভাবতে পারছিনা। মস্তিষ্ক দুর্বল হয়ে পড়েছে। অবশ্য এখন কোন কিছু নিয়ে না ভাবাই ভালো। ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসছে। আমি একটা কাঁথা গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়লাম। এখন আর অতবেশি ঠান্ডা লাগছেনা। নিপা কাগজে কি লিখেছে সেটাও দেখতে ইচ্ছে করছেনা। প্রচন্ড ঘুমে আমার চোখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ঠিক এমন সময় আমার পুরো দেহ কম্পিত হল। ঝরঝর করে বৃষ্টি শুরু হল। এটাকে বৃষ্টি বললে ভুল হবে। তুফান বলতে হবে। কারন আজ বৃষ্টির সাথে সাথে দক্ষিণা বাতাসও বইতে শুরু করেছে। চারিদিকে কালো অন্ধকার। ভয় পেয়ে গেলাম। এক্ষুনি তো সকাল ছিল। তাহলে এখন সব অন্ধকার কেন? আমি কি অন্ধ হয়ে গেলাম? আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম পূর্ণিমার চাঁদ আমার দিকে উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। তার মানে এখন রাত। আমি ঐ চাঁদকে বললাম
- "কিরে ওভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?"
-- "বিবাগী ভাই, আমি তোমায় অনেক পছন্দ করি। তাই তোমাকে সব সময় উপর থেকে দেখি।"
- "তুই আছিস, অথচ চারিদিকে এত অন্ধকার কেন? আজ তুই আলো ছড়াচ্ছিস না কেন?"
-- "আজ সূর্য্যের থেকে আলো ধার করিনি।"
- "কেন করিস নি?"
-- "শুধু তোমার জন্য বিবাগী ভাই।"
- "আমার জন্য কেন?"
-- "আমি আর কিছু বলবনা। তুমি বিবাগী, তুমি নিজেই বুঝে নাও। আর তোমার হাতে কাঁচের কলসটা সাবধানে রেখো। নইলে জল পড়ে যাবে।"
কি ব্যাপার, আজ আমি নিজেই বিভ্রান্ত হয়ে যাচ্ছি। আমার ডান হাতে একটা কাঁচের কলস অথচ আমি একটুও বুঝতে পারলাম না। আর আমি এখন এই তুফানে যাচ্ছিইবা কোথায়? আশ্চর্য ব্যাপার তো। আমি একটা বাড়িতে চলে এলাম। কেন যেন আমার বাম হাত স্বয়ংক্রিয় ভাবে কলিংবেল চেপে দিল। দরজা খুলতেই আমি নিপাকে দেখতে পেলাম। নিপা সুন্দর করে বউ সেজে দরজা খুলেছে। মনে হচ্ছে আমি বাসর ঘরে ঢুকছি। আমি ঘরে ঢুকলাম। আমি নিপার সাথে কোন কথা না বলেই একটা গান গাইলাম। জেনস সুমনের গান। খুব সুন্দর করে গাচ্ছি আমি।
"নিঃশব্দে মাঝরাতে
এসেছি তোমার কাছে,
শীতল জলের খোঁজে
জড়োসড়ো সংকোচে'
ফিরিয়ে দিওনা,
আমার ঘরে কাঁচের কলসে
জল থাকেনা।"
আমার গান শুনে নিপা কোন কথা না বলে ওর মাটির কলস থেকে শীতল জল আনতে চলে গেল। আমি প্রচন্ড আশ্চর্য হয়ে গেলাম। গানটা গাওয়ার কথা ছিল নিপার। কারন সে আমার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছে। কিন্তু বুঝতে পারলাম না, নিপার গান আমি কেন গাচ্ছি। ও আচ্ছা এবার বুঝতে পারলাম। আমি জানতাম চুরি হবে কিছু একটা। এখন দেখছি অলরেডি চুরি হয়ে গেছে। সেইসাথে কেমন যেন নিজেকে প্রেমী প্রেমী মনে হচ্ছে। আমি নিজেই নিজের দুরাবস্থা দেখে হাসতে শুরু করলাম। এখন আর এরকম করলে চলবেনা। এখন বিবাগীগিরি করতে হবে। আমি প্রস্তুত হয়ে আছি। নিপা মাটির কলস নিয়ে এল। যেই সে আমার কাঁচের কলসে জল ঢালতে গেল আমি তৎক্ষণাৎ কাঁচের কলসটাকে হাত থেকে মেঝেতে ফেলে দিলাম। ব্যস, এইবার আর চুরির ব্যাপারটা কোনদিন প্রকাশিত হবেনা। যে চুরি করেছে সেও জানবেনা। অদ্ভুত একটা বিষয়, চোর নিজেই জানলনা সে কি চুরি করেছে। স্যরি চোর না। এখানে বলতে হবে চোরনী। কলসটা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। ভাঙ্গা কাঁচের শব্দে কান ঝনঝন করে উঠল। আমি চমকে গেলাম হঠাৎ করে। তারপর আমার ঘোর কেটে গেল। আমার বৃষ্টিও শেষ হল। বুক জুড়ে বয়ে যাওয়া তুফান এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেল। কাঁচের কলসটা ভাঙ্গার পরে নিপার চেহারা কেমন করুণ হয়েছিল সেটা দেখতে পারলাম না। আফসোস নেই, সেটা বাস্তবে দেখতে পারব। আমি আর কিছু ভাবতে পারছিনা। ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলাম।
.
(চলবে)
.
.
.
লেখক :- বিবাগী শাকিল

āĻ•োāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāχ:

āĻāĻ•āϟি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āϟ āĻ•āϰুāύ