বিবাগীর বৃষ্টিবিলাস
পর্ব নং :- (৩/৮)
লেখক :- বিবাগী শাকিল
====================
.
ট্রেনের ছাদে বসে আছি। ট্রেন দুরন্ত গতিতে ছুটে চলেছে। আমি এখন যে ট্রেনের উপরে আছি সেই ট্রেনের নামটাও জানিনা। ধরে নিলাম এই ট্রেনের নাম বিবাগী এক্সপ্রেস। বিবাগী যেই ট্রেনে থাকবে সেটা তো বিবাগীর নামেই হবে। তবে এটা জানি যে আমি এখন ঢাকা থেকে রাজশাহীগামি একটা ট্রেনের ছাদে উঠে বসে আছি। আর বর্তমানে বিবাগী এক্সপ্রেস এখন যমুনা নদীর উপরে। বঙ্গবন্ধু সেতুর উপর দিয়ে ধীর গতিতে এগিয়ে চলছে। আমি ডানে বাঁয়ে তাকালাম। চারিদিকে শুধুই জলরাশি। যমুনার দিকে তাকিয়ে আমার একটা গান মনে পড়ল। গানটা হল এরকম
''আমার যমুনার জল দেখতে কালো
স্নান করিতে লাগে ভালো
যৌবন মিশিয়া গেল জলে''।
যমুনার জলটা দেখতে কালো নয়। সেতুর উপর থেকে ধূসর সাদা মনে হচ্ছে। গানে বলা হয়েছে এই যমুনার জলে যৌবন মিশে আছে। এই নদীতে কত রমণী স্নান করেছে কে জানে। সবার যৌবন এই নদীতে মিশে আছে। আমি যদি এখন এই নদীতে স্নান করি তাহলে সেই রমণীদের যৌবন আমি হরণ করতে পারব। বাহ, খুব সুন্দর আইডিয়া তো। ধর্ষকরা যে কেন ধর্ষন করে কে জানে? যৌবন হরণ করার যখন এতই ইচ্ছা তোদের তাহলে এই যমুনায় নেমে স্নান কর। হাজার রমণীর যৌবন পাবি। আর তাতে তোদের আর কেউ ধর্ষক বলবেনা। থানা পুলিশ এসে তোদের সাথে ঝামেলাও করতে পারবেনা। কিন্তু কে শোনে কার কথা? সমাজটাই গোল্লায় গেল। আমার হাজার রমণীর যৌবন হরণ করার কোন ইচ্ছা নেই। তবে যমুনায় নিজের ছোঁয়া দিয়ে আসতে ইচ্ছা করছে। তাহলে এই নদীটাও আমার জন্য হয়ে যাবে বিবাগী নদী।
.
আমার কোন গন্তব্য নেই। ট্রেনের ছাদে বসে থেকে আশে পাশের পরিবেশ দেখে আমার পল্লীকবি জসীম উদ্দিন হতে ইচ্ছে করছে। বাংলাদেশ এত সুন্দর সেটা ঢাকা থেকে বের না হলে বুঝতেই পারতাম না। কিন্তু আমি যাচ্ছি কোথায়? আমার তো কোন গন্তব্য নেই। প্যান্টের পকেটে মইনুল ভাই এক হাজার টাকার একটা নোট দিয়েছিলেন। আমি জানতাম না। প্যান্টটা পরার সময়ও খেয়াল করিনি। পকেটে হাত দিয়ে হাঁটার অভ্যাস আমার আছে। আর এই অভ্যাসের কারনেই টাকাটা পেলাম। এক হাজার টাকা দিয়ে আমার এক মাস চলে যাবে। সিগারেট আর হালকা নাশতা আমার জন্য যথেষ্ট। আমি ইচ্ছে করলে ট্রেনের ভেতরে গিয়ে বসতে পারতাম। কিন্তু আমি প্রকৃতিটাকে উপভোগ করতে চাই। আর নিঃসঙ্গতা অনেক পছন্দ করি। সেজন্যেই ছাদে উঠেছি। যমুনা সেতু পার হয়ে গেছি। ট্রেন কমলাপুর থেকে যাত্রা শুরু করেছিল দুপুর বারোটায়। আর এখন গোধূলি বিকেল। একটু পরে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। সন্ধ্যা হবার আগেই বিবাগী এক্সপ্রেস থেকে নামতে হবে। আমার গন্তব্য না থাকলেও একটা উদ্দেশ্য আছে। গ্রামের দিকে এই শীতের প্রকোপ কেমন সেটা দেখার জন্যেই এসেছি।
.
উল্লাপাড়া ষ্টেশনে ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে। আমি ছাদ থেকে নামলাম। ষ্টেশনে অনেক লোক দাঁড়িয়ে আছে। কিছু বসে আছে। কিছু মানুষ পায়চারি করছে। সবাই ব্যস্ত। শুধু আমার কোন ব্যস্ততা নেই। আমি মুক্ত বিহঙ্গ। পুরো বাংলাদেশ আমার সম্পত্তি। এখানে যা কিছু আছে সব আমার। আমি আমার সম্পত্তিতে ঘুরে বেড়াবো। মৃত্যু ছাড়া আমাকে আটকানোর ক্ষমতা কারোরই নেই। ষ্টেশনে এক ঝালমুড়িওয়ালাকে দেখতে পেলাম। আমি এগিয়ে গিয়ে দশ টাকার ঝালমুড়ি নিলাম। খেতে খেতে হাঁটা শুরু করলাম। প্রকৃতির যে জায়গাটা আমার কাছে গ্রামের মত মনে হল আমি সেই দিকেই হাঁটা শুরু করলাম। ঝালমুড়ি শেষ হয়ে গেল। তবুও মোড়ানো কাগজটা ফেলতে ইচ্ছে করছেনা। থাক এটা আমার হাতের মুঠোয় বন্দী থাকুক। এই কাগজটারো অনেক সৌভাগ্য। কারন সে বিবাগীর হাতে ঠাঁই পেয়েছে।
.
প্রায় একঘন্টা হাঁটলাম। এই এলাকাটা গ্রামের মতই মনে হচ্ছে। আমি আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে হেঁটেই চলেছি। কিন্তু আমি কোনদিকে যাচ্ছি? উত্তর-দক্ষিন, পুর্ব-পশ্চিম কোন দিকই আমার জানা নেই। আমি অজানায় হাঁটছি। কৌতুহলী মানুষজন আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। অবশ্য এটার পিছনে জনাব হুমায়ুন আহমেদের অবদান আছে। তিনি হিমু নিয়ে একটা আলোড়ন সৃষ্টি করে দিয়েছেন। হলুদ পাঞ্জাবী পরা কাউকে দেখলেই লোকজন হিমু ভাবতে শুরু করে। আমি মনে মনে মজা পাচ্ছি। আমি সাধারণ জনগনের নজর কাড়তে পেরেছি। রাত কত হল আমার জানা নেই। শীতকালের রাত অনেক লম্বা হয়। তাই সময়টা আন্দাজ করতে পারছিনা। ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে আমি গ্রামের রাস্তা দিয়ে হাঁটছি। চাঁদের আলো নেই তেমন। আশেপাশের বাড়ির উঠোনে যে লাইটগুলো জ্বলছে তারা তাদের কিছুটা আলো এই রাস্তায় দিয়ে রেখেছে। আমি সেই আবছা আলোয় ধীর পায়ে হাটছি। একটা বোরকা পরিহিতা মহিলাকে দেখলাম। তিনি রাস্তার উল্টো দিক থেকে হেটে হেটে আসছেন। আমি সামনে পড়তেই তিনি হাটা বন্ধ করে দাঁড়ালেন। আমার পানে চেয়ে আমায় বললেন
-- "এখন কটা বাজে বলতে পারবে"?
ভদ্রমহিলার কন্ঠটা কেমন যেন জড়িয়ে আছে। তিনি মনে হয় অনেকক্ষন ধরে কেঁদেছিলেন। দীর্ঘকান্নার পর সাধারণত মানুষের কন্ঠ এমন ভাবে জড়িয়ে যায়। আর তাতে স্পষ্ট বুঝা যায় যে সে কেঁদেছিল। আমি বললাম
- "মা রে, আমার কাছে তো ঘড়ি নেই। আপনি কেঁদেছিলেন কেন"?
ভদ্রমহিলা আমার কথা শুনে কিছুক্ষন কথা বললেন না। মা ডাক শুনে মহিলারা এরকম চুপ করে থাকে না। তারা এই ডাকটাকে আদরের সহিত গ্রহণ করে। কিন্তু এই ভদ্রমহিলা চুপ করে রইলেন। তার মানে কি আমি মা ডাকায় তিনি অসন্তুষ্ট হয়েছেন? মনে হয় না। মা ডাকায় কেউ অসন্তুষ্ট হয় না। যার দশটা সন্তান আছে সেও মা ডাক শনে খুশি হয়। মনে হয় মহিলার কোন সন্তান তাকে খুব কষ্ট দিয়েছে। যার কারনে তিনি কেঁদেছিলেন। আর একারনে মা ডাকটার প্রতি তার একটু অভিমান জন্মেছে। আমি কিছুক্ষন অপেক্ষা করলাম। না, ভদ্রমহিলা কোন কথা বলছেন না। আবার চলেও যাচ্ছেন না। আমি বললাম
- "আচ্ছা আমি যেদিকে যাচ্ছিলাম সেটা কোন দিক"?
-- "পশ্চিম দিক"।
- "সামনে কি রাত কাটানোর মত কোন জায়গা পাব"?
ভদ্রমহিলা আমার কথা শুনে আবার চুপ হয়ে গেলেন। হয়তবা একটু অবাকও হয়েছেন। আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না। অন্ধকারে তেমন কিছু দেখা যাচ্ছেনা। আর তাছাড়া ভদ্রমহিলা হিজাব পরে আছেন। আমি এবার তাকে পাশ কাটিয়ে হাঁটার জন্য উদ্ধত হলাম। ভদ্রমহিলা বললেন
-- "বাবা, তুমি কি কখনো তোমার মাকে কষ্ট দিয়েছ"?
- "না, দেয়ার সুযোগ পাইনি। সুযোগ পেলে অবশ্যই দিতাম"।
-- "একি, তুমি এসব কি বলছ"?
- "ঠিকই তো বলছি। ছেলে হয়ে যদি মাকে কষ্ট দিতে না পারি তাহলে কিসের ছেলে হলাম? মাকে কষ্ট দেয়া আমাদের সন্তানগত অধিকার"।
-- "তোমার কথা ঠিক না। তোমার বোধ হয় মা নেই সেজন্য অভিমান করে এমন কথা বলছ"।
আমি কিছু বললাম না। চোখজোড়া ছলছল করে উঠল। মায়ের মুখটা আমার ঝাপসা চোখে ভেসে এল। আমি চোখ মুছে ফেললাম। বিবাগীদের কাঁদতে নেই। আমি বললাম
- "যাই হোক, আপনার সন্তান হয়ত আপনাকে কোন কারনে কষ্ট দিয়েছে। আপনি সে কষ্ট সহ্য করতে না পেরে কেঁদেছিলেন। সন্তান তো অন্যায় করবেই। অন্যায়কে প্রশ্রয়হীন ক্ষমার চোখে দেখা প্রতিটা মায়ের কর্তব্য। কথায় বলে, মায়ের কাছে সন্তানের সাত খুন মাফ"।
-- "আমার ছেলে যে অন্যায় করেছে সেটা আট নাম্বার খুন। সেজন্য মাফ করতে পারলাম না। এত কষ্ট করে পড়ালেখা করিয়ে মানুষ করেছি। আর হতচ্ছাড়া রুপা নামে কোন একটা মেয়েকে পালিয়ে বিয়ে করে নিল। আমি কি তাকে এজন্য মানুষ করেছি"?
- "আজকালকার ছেলে গুলোই এরকম। পালিয়ে বিয়ে করা তাদের কাছে ভালোবাসার একটা অংশ"।
-- "তারপর কি হল শোন। রাসেল তার বউকে নিয়ে বাসায় আসল। আমি তো দেখে ভিরমি খেলাম। রুপা আমায় সালাম করতে এল। ওর উপর কোন রাগ দেখালাম না। যত দোষ সব হল হারামজাদা রাসেলের। তাই ওকে বললাম ঘর থেকে ওর বউকে নিয়ে বেরিয়ে যেতে। ও যদি না বের হয় তাহলে আমি বের হয়ে যাব। হারামিটা আমার কাছে কাঁচুমাচু হয়ে ক্ষমা চাইলো। আমার রাগ অনেক বেড়ে গেল। অন্যায় করেছে তো করেছে আবার আদিখ্যেতা দেখাচ্ছে। সেজন্য রাগে আমিই ঘর থেকে বের হয়ে গেলাম। এখন যাব শ্যামলীপাড়া বাস স্টপেজে। সেখান থেকে সোজা আজিম নগর চলে যাব। হারামিটা বুঝুক মায়ের মর্ম কি"।
ভদ্রমহিলা একটানা কথাগুলো বলে ফেললেন। নারীজাত এমনই হয়। নিজের দুঃখ যদি একবার প্রকাশ করা শুরু করে তাহলে তার শেষ করেই ছাড়ে। ভদ্রমহিলা কথাগুলো বলেই ফোঁপাতে লাগলেন। আমি কাউকে সান্ত্বনা দিতে জানিনা। পছন্দও করিনা। সেজন্য ভদ্রমহিলাকে কোন সান্ত্বনা দিলাম না। আমি বললাম
- "সেই ভালো। ছেলে বুঝবে মায়ের মর্ম, মা বুঝবে ছেলের মর্ম"।
-- "ঠিক আছে, আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। রাত সাড়ে নয়টায় বাস। দেরি হয়ে গেলে বাস ধরতে পারবনা"।
বলেই ভদ্রমহিলা চলে গেলেন। আমি আবার পা ফেলে হাঁটা শুরু করলাম। শীত বেড়ে গেল একটু। পকেটে একটাও সিগারেট নেই। সেজন্য নিজেকে কেমন রসহীন লাগছে। সামনে যদি কোন বাজার পড়ে তাহলে সেখান থেকে কিনে নিব। এখন আপাতত মনে মনে গান গাই। মনে মনে গান গাওয়ার মজাই আলাদা। কেউ শুনতে পায় না। আর গান গাওয়ার সময় মনে মনে নিজেকে কল্পনা করা যায়। সেই কল্পনায় নিজেকে সব সময় নায়ক মনে হয়। এমন কোন মানুষ নেই যে কল্পনায় নিজেকে খল নায়ক ভেবেছে। আমি গান গাওয়ার আগেই কল্পনায় নিজেকে দেখতে পেলাম। আমি একটা সবুজ মাঠে বসে আছি। চারিদিকে সবুজের সমারোহ। আমি মনে মনে গান গাইলাম।
''অনেক সাধনার পরে আমি
পেলাম তোমার মন
পেলাম খুঁজে ভুবনে
আমার আপন জন''।
আশ্চর্য ব্যাপার। আমি তো শুধু গানের এটুকুই গাইলাম। কিন্তু গানের বাকি অংশটা কে গাচ্ছে? মেয়েলি কন্ঠ মনে হচ্ছে। আমি শুনলাম একটা নারীকন্ঠ গান গাচ্ছে।
''তুমি বুকে টেনে
নাওনা প্রিয় আমাকে
আমি ভালোবাসি, ভালোবাসি
ভালোবাসি তোমাকে''।
আমি অবাক হয়ে গেলাম। কন্ঠটা একদমই অচেনা। আমার পিছন থেকে শব্দটা ভেসে আসছে। আমি পিছন ঘুরে তাকালাম। নিপা দৌড়ে আসছে আমার কাছে। আমি তো নিপাকে চিনি। তাহলে তার কন্ঠ অচেনা লাগল কেন আমার কাছে? ও হ্যা, মনে পড়েছে। গান গাওয়ার সময় সবার কন্ঠই একটু বদলে যায়। আমি দেখলাম নিপা সবুজ শাড়ি পরে আমার দিকে দৌড়ে আসছে। সবুজের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে। এখন আমার মনে হচ্ছে নিপা এই সবুজ প্রকৃতিরই একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাহ, অস্থির এক মিউজিক ভিডিও চলছে আমার মনে। নিপা আমার খুব কাছাকাছি চলে এল। তার হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে বিনা সংকোচে সে আমায় জড়িয়ে ধরবে। আমি কি ওর জন্য বুক পেতে রাখব? অবশ্যই না। নিপা আমায় জড়িয়ে ধরার জন্য হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসতেই আমি সরে গেলাম। নিপার উল্লাসিত মনে রাজ্যের অন্ধকার নেমে এল। গাল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। আমি ভ্রুক্ষেপও করলাম না। কি ব্যাপার, আমার মন এত শক্ত আমি তো আগে জানতাম না। একটা সুন্দরী মেয়েকে সে এভাবে ফিরিয়ে দিতে পারল? আমার মন এখন আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। নিজে নিজেই অদ্ভুত সব দৃশ্যপট আমাকে দেখাচ্ছে। এখন দেখলাম আমি নিপাকে পাশ কাটিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। আর আমার মন গান গাচ্ছে
''অতি কষ্টে মানুষ নাকি
হয়ে যায় পাথর
মানুষ আছি ঠিকই এখন
পাথর আমার অন্তর''
আবারো অবাক হয়ে গেলাম। এই গানতো কোন গায়কের কন্ঠে শুনিনি। তাহলে আমার মন এই গানটা জানল কিভাবে? অদ্ভুত তো। পরক্ষণেই বুঝতে পারলাম এই গান অন্য কোন গায়কের গান নয়। এটা বিবাগীর গান। এটা আমার সৃষ্টি করা গান। গানটা গাইতে ভালোই লাগছে। আর মনে মনে নয়। আমি এবার হালকা শব্দ করে গুন গুন করে গানটা গাচ্ছি। গানের তালে তালে আমার পাদুটো সামনে এগিয়ে চলছে।
.
একটা গ্রাম্য বাজারে আমি এসে পড়লাম। প্রতিটা দোকানের উপর সাইনবোর্ড টানানো আছে। সেখানে দোকানের নাম আর বাজারের নাম লিখা আছে। এই বাজারের নাম গয়হাট্টা বাজার। তার মানে এই গ্রামের নাম গয়হাট্টা। আমি একটা হোটেলে ঢুকে পড়লাম। হোটেলের সবার গায়ে শীতের কাপড়। শুধু আমি সাধারণ একটা পাঞ্জাবী পরে আছি। এতক্ষন শীতে কাঁপছিলাম তাই ঠান্ডা কম লেগেছে। এখন জোর করে একপ্রকার কাঁপাকাঁপি বন্ধ করে দিয়েছি। তাই শীত বেশি লাগছে। সুমির চাদরটা সঙ্গে করে নিয়ে আসলে ভালো হত। আমি একটা লেবু চা খেলাম। আর কিছু খেতে মন চাচ্ছেনা। হোটেল থেকে বেরিয়ে একটা দোকান থেকে এক প্যাকেট সিগারেট নিলাম। এই বাজারে আমার থাকার মত কোন উপযুক্ত জায়গা নেই। আর যদিও বা থাকত তাও আমি থাকতাম না। বাজারে যারা রাত কাটায় তাদের সাধারণত মানুষ পাগল ভাবে। আমি পাগল না। আমি বিবাগী। পাগল আর অপাগলের মাঝখানেরটা আমি। আমি বাজার পেরিয়ে আবার পশ্চিম দিকেই হাঁটতে শুরু করলাম। মুখে জ্বলন্ত সিগারেট। শীতে কাঁপতে কাঁপতে সিগারেট খাওয়ার মজাই আলাদা। এখন একটা গান মনে পড়ে গেল। নগর বাউল জেমস এর গান। আমি গানটা গাইতে শুরু করলাম
''জীবনটা সিগারেটের ছাই
ছু দিয়ে তাকে উড়াই
কি হবে ভেবে আর
যে জীবন দম গেলে নাই''
.
এই গ্রামে কোন স্কুল নেই নাকি? এখনো পেলাম না। পেলে ভালোই হত। অন্তত স্কুলের বারান্দায় রাতটা কাটাতে পারতাম। নাকি আমি স্কুল পেরিয়ে গেছি। বোধ হয় আমার চোখে পড়েনি। সাধারণত গ্রাম্য বাজার স্কুলের আশে পাশেই গড়ে উঠে। যাক গে, আমি আমলে নিলাম না। সিগারেটটা ফেলে দিতেই আমার বয়সী একটা ছেলের মুখোমুখি হলাম। ছেলেটা আমার মুখে লাইটের আলো ফেলল। আগে কখনো আমায় এই গ্রামে দেখেনি। তাই চিনতে পারছেনা। লাইটের আলো সরাসরি আমার চোখে পড়ায় আমার খুব রাগ হল। কিন্তু প্রকাশ করলাম না। আমি হাধারামের মত একটা বোকা হাসি দিয়ে বললাম
- "দেখা হয়েছে? এবার আসি"।
-- "আপনাকে আগে কখনো এ গ্রামে দেখিনি। আপনি কে"?
- "আপনার নাম রাসেল"?
-- "হ্যা। আপনি কিভাবে জানলেন"?
- "বলছি। আগে বলুন আপনি নিশ্চয়ই আপনার মাকে খুজছেন"?
রাসেল আমার দিকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল। আমি তার অপরিচিত। সেজন্য আমার মুখে এসব শুনতে পেয়ে সে বেশ অবাকই হল। সে আমায় বলল
-- "হ্যা। মা রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে"।
- "কটা বাজে এখন"?
-- "নয়টা বাজে"।
- "তাড়াতাড়ি শ্যামলীপাড়া বাস স্টপেজে যান। আপনার মা সেখানেই আছে। উনি সাড়ে নয়টার বাসে উঠে আজিম নগর চলে যাবেন। আপনার হাতে আধঘন্টা সময় আছে"।
-- "আপনি এসব কিভাবে জানলেন ভাই"?
- "সেগুলো পরেও বলা যাবে। এখন আপনি যান। দেরি হয়ে যাবে নইলে"।
রাসেল আমার সাথে আর কথা বাড়াল না। সে চলে গেল। আমি আবার হাঁটতে শুরু করলাম। এই গ্রামে কি রাত কাটানোর মত কোন জায়গা নেই নাকি? ধুর, গ্রামে এসে ঝামেলায় পড়লাম দেখছি।
.
ভোর হতে শুরু করল। আর শীতের প্রকোপটা এখন ভালো করেই টের পাচ্ছি। ঠান্ডায় আমার হাড় পর্যন্ত কাঁপছে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর কাল রাতে একটা প্রাইমারী স্কুল পেলাম। সারারাত বারান্দায় বসে সিগারেট খেয়ে কাটিয়েছি। সারাদিনের জার্নিতে আমার দেহের উপর দিয়ে প্রচন্ড ধকল গিয়েছে। আর তাতে আমি একটু ঘুমিয়ে পড়লাম। যাক, ঘুম হয়েছে ভালোই হল। এখন এই ভোরে আমার খুব খিদে পেল। দোকানপাট এখনো খোলা হয়নি। আমি বারান্দা থেকে বেরিয়ে গ্রাম্য রাস্তায় হাঁটতে শুরু করলাম। উফ, কি সুন্দর ঘন কুয়াশা। এত বেশি কুয়াশা যে দশ হাত সামনে কি আছে সেটাও ঠিকমত দেখা যাচ্ছেনা। এই ঘন কুয়াশাতেই আমি নিপাকে কল্পনা করেছিলাম। আমি সিগারেট ধরালাম। এমনিতেই ঠান্ডায় মুখ থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। এখন এই সিগারেটটা ধরিয়ে খুব আরাম পাচ্ছি। আমি হাঁটছি। সামনের দিকে দুটো মানুষের অবয়ব দেখা যাচ্ছে। ঘন কুয়াশার কারনে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছেনা। আমি একটু একটু করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি আর সে দুজনের অবয়ব আস্তে আস্তে পরিষ্কার হচ্ছে। আমি ওদের কাছাকাছি চলে আসলাম। দেখলাম রাসেল আর তার পাশে একটা মেয়ে। সম্ভবত ওর স্ত্রী রুপা হবে। দুজনের গায়ে শীতের পোশাক। রুপার হাত ধরে রাসেল হাঁটছিল। আমাকে দেখেই সে বলল
-- "আরে ভাই, আপনি"?
- "হ্যা ভাই। আমি"।
-- "কাল আপনি আমার অনেক উপকার করেছেন। আমি খুব দ্রুত বাস স্টপেজে গিয়েছিলাম। তারপর মাকে হাত ধরে বাড়িতে নিয়ে আসি। উনি আসতে চাইছিলেন না। আমি এক প্রকার জোর করেই নিয়ে এসেছি। কিন্তু মা এখনো রেগে আছে"।
- "ভালো করেছেন নিয়ে এসে। মাকে কষ্ট দিবেন না। মা হারালে বুঝবেন মা কত আপন ছিল"।
-- "ভাই, আপনি কাল আমায় দেখেই সব কিছু বলে দিলেন কিভাবে"?
- "আপনার মায়ের সাথে রাস্তায় আমার দেখা হয়েছিল। উনি আমাকে সব বলেছেন। আর আপনার সাথে যখন দেখা হয়েছিল তখন আপনার গলায় একটা লকেট দেখেছিলাম। সেই লকেটে ইংরেজী "R" অক্ষরের একটা পাথর ঝুলছিল। এটা দেখে আমার মনে হল আপনি হয়তবা রাসেল হতে পারেন। পরে তো আপনি নিজেই বলে দিলেন। তবে হ্যা, একটা কথা। এই লকেটটা আপনি আপনার নামের উদ্দেশ্যে গলায় ঝুলান নি। এটা আপনাকে আপনার স্ত্রী রুপা দিয়েছে। আর আপনি রুপা নামের উদ্দেশ্যেই লকেটটা গলায় ঝুলান। বোঝাই যাচ্ছে, আপনারা খুব সুন্দর এবং কেয়ারিং কাপল"।
রুপা আর রাসেল আমার দিকে হা করে তাকিয়ে রইল। আমার তেমন কোন প্রতিক্রিয়া হল না। রাসেল এর হাতে একটা রুমাল দেখলাম। সেটাতে রুপার নাম লিখা। দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে, রুমালটা রুপা নিজেই বানিয়েছে। আর রাসেল এর হাতে কোন ব্রেসলেট নেই। যেসব ছেলেরা হাতে ব্রেসলেট দিতে পছন্দ করেনা সেসব ছেলেরা কখনো গলায় লকেট ঝুলাবেনা। কারন বেশিরভাগ ছেলেরা লকেট এর চেয়ে ব্রেসলেট বেশি পছন্দ করে। কারন লকেট গলায় দিলে মনে হয় কেউ গলায় দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছে। রাসেল এর হাতে ব্রেসলেট নেই তবুও লকেট আছে তার মানে সেটা রুপাকে খুশি করার জন্যেই। বাদ দিই, এটা ওদের ব্যাপার। ওরা যা ইচ্ছা তা করুক। আমি প্রকৃতি দেখতে এসেছি। রাসেল আর রুপা এখনো নীরব হয়েই আছে। কিছুক্ষণ পর রাসেল বলল
-- "আপনি কে ভাই"?
- "আমি বিবাগী"।
-- "পরিচয় দিতে না চাইলে জোর করব না। শুধু বলেন কেন এসেছেন এই গ্রামে"?
- "আপনার মা যাতে আপনার থেকে দূরে না যেতে পারে সেজন্য আমি এসেছি"।
-- "আপনি কি আমার বাড়ির অতিথি হবেন"?
- "না ভাই। আমি এই দুনিয়ার অতিথি। আর কারোর অতিথি না। এই দুনিয়াতে কয়েকদিন ঘুরে বেড়াব। এরপর উড়াল দেব আকাশে"।
-- "এইদিক থেকে ভাবলে শুধু আপনি না, আমরা সবাই এই দুনিয়ার অতিথি"।
- "ঠিক বলেছেন"।
-- "আচ্ছা ঠিক আছে। আপনাকে আমার অতিথি হতে হবেনা। আপনি আমায় একটু সাহায্য করবেন"?
- "সাহায্য করার মালিক তো একমাত্র সৃষ্টিকর্তা"।
-- "সৃষ্টিকর্তা তো নিজ হাতে সাহায্য করেনা। মাধ্যম দিয়ে সাহায্য করে। আপনার মাধ্যমে হয়ত সৃষ্টিকর্তা আমায় সাহায্য করতে পারে"।
- "কি সাহায্য করতে হবে বলুন"।
-- "কাল রাতে মা একটা ছেলের কথা বলেছিল। মায়ের বর্ণণা আপনার সাথে পুরোপুরি মিলে গেছে। আর আপনি নাকি মাকে মা বলে ডেকেছিলেন। সেজন্য মা আপনার উপর যথেষ্ট খুশি হয়েছে। মা এখনো রেগে আছে আমাদের উপর। আপনি যদি আমার মাকে একটু বুঝিয়ে বলেন তাহলে আমার বিশ্বাস মা আমাদের বিয়েটা মেনে নিবে"।
.
ছেলেটা এমন করে বলছিল যে, তাকে নিষেধ করতে পারছিলাম না। নিষেধ করা আমার অনুচিত ছিল। আর রুপার চোখেও এক ধরনের অসহায়ত্বের ছাপ দেখতে পেলাম। শ্বশুরবাড়ি এসে এখনো ঘরের বউয়ের মর্যাদা পায়নি তাই। আমি রাসেল এর কথায় বাধ্য হয়ে ওদের বাড়িতে গিয়ে উঠলাম। ভালোই হয়েছে একদিকে। আমার খিদে মিটাতে পারব। আর একটু বিশ্রামও নিতে পারব। রাসেল এর মা আমায় দেখে প্রচন্ড খুশি হয়ে গেল। তিনি আমাকে যেভাবে এক্সেপ্ট করেছেন তাতে মনে হচ্ছে আমি উনার হারিয়ে যাওয়া সন্তান। ওরা আমাকে নাশতা দিল। খিদে ছিল তাই বেশি সংকোচ বোধ করিনি। কারন বিবাগীরা ন্যাকামি পছন্দ করেনা। আর নিজেও ন্যাকামি করেনা। আমি পেটপুরে নাশতা খেলাম। রুপা এখন রাসেল এর রুমে। রাসেল একপাশে মাথা নিচু করে বসে আছে। আর ভদ্রমহিলা সোফায় বসে আমার সাথে হাসিমুখে কথা বলছেন। আমি ভাবলাম এই সুযোগ হাতছাড়া করা ঠিক হবেনা। আমি বললাম
- "মা, কাল রাতে আপনার মুখে যেমনটা শুনেছিলাম তাতে আমার মনে হয়েছিল সম্পূর্ণ দোষ রাসেলের। কিন্তু আজ সকালে ওর সাথে দেখা হবার জানতে পারলাম ওরা এখনো বিয়েই করেনি"।
আমার মুখে এই কথা শুনে ভদ্রমহিলার মুখের অবস্থা পাল্টে গেল। তিনি খুশি হয়েছেন নাকি বেজার হয়েছেন কিছুই বুঝতে পারছিনা। আর তাছাড়া উনার কাছে খুশি হবার কারনও আছে আবার বেজার হবার কারনও আছে। আমি ভদ্রমহিলার দিকে তাকিয়ে আছি। রাসেলের দিকে তাকালাম না। তাই ওর চেহারার বহিরাবস্থা কিরকম সেটা বলতে পারছিনা। ভদ্রমহিলা কিছু বলতে যাচ্ছিলেন তার আগেই আমি বললাম
- "মা, রাসেল এখনো বিয়ে করেনি। শুধু নাটক করেছে। রুপার সাথে ওর সম্পর্ক ছিল। রুপার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছিল। আর সেজন্য তারা দুজনে পালিয়ে গেল। কিন্তু রাসেল বিয়ে করার সাহস পায়নি। কারন সে আপনাকে খুব ভয় করে। এবং আপনাকে অনেক ভালোবাসে। সেজন্য আপনার অজান্তে এত বড় অন্যায় সে করতে পারেনি। শুধু বাড়িতে এসে আপনাকে বিয়ের কথা বলেছে। যাতে আপনার সমস্ত রাগ আগে থেকেই চলে যায়। পরে সে আপনাকে সব বুঝিয়ে বলত। কিন্তু তার আগেই আমি বলে দিলাম"।
ভদ্রমহিলা আমার কথা ঠান্ডা মাথায় শুনলেন। গালে হাত দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
-- "তাহলে সে যে আমাকে তার ম্যারেজ রেজিস্টার পত্র দেখালো সেটা কোথাথেকে এল। সে তোমাকে মিথ্যে বলেছে বাবা। এখন আমার মন গলানোর জন্য সে তোমাকে দিয়ে মিথ্যে নাটক করাচ্ছে"।
- "মা রে, আপনি তো জানেন এখন বিজ্ঞানের যুগ। টাকা খরচ করলে এরকম আরো দশটা ম্যারেজ রেজিস্টার পত্র বানানো যায়। এসব কিছুই না। রাসেল আপনাকে যে পত্রটা দেখিয়েছে সেটা নকল ছিল। সত্যি তো এটাই যে সে এখনো বিয়ে করেনি। তার অনেক আশা আপনি তার এই সম্পর্ক মেনে নিয়ে ধুমধাম করে বিয়ে দিবেন। আপনি তাকে শেয়ালের মত পালিয়ে বিয়ে করতে দিবেন না। সে আপনার ছেলে। আপনি তাকে রাজপুত্রের মত বিয়ে করাবেন। আর আপনার চোখে রাসেল নিশ্চয়ই কোন শেয়াল নয়। সে আপনারই রাজপুত্র। এবার আপনি একটু ভাবুন। আপনার প্রতি রাসেলের যে শ্রদ্ধাভক্তি আছে আপনি কি সেই শ্রদ্ধার অবমাননা করবেন"?
ভদ্রমহিলা চুপ করে রইলেন আমার কথা শুনে। মনে হচ্ছে তিনি আমার বলা কথাগুলো বারবার শুনতে পাচ্ছেন। রাসেল এর দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে মাথা নিচু করে বসে আছে। বেচারা, বিয়ে করেছে তো করেছে এখন আবার মাথা নিচু করে আছে।
.
বিকেল পর্যন্ত ছিলাম ওদের বাড়িতে। ওরা আমাকে আপ্যায়নের চুড়ান্ত পর্যায় দেখিয়েছে। বিশেষ করে রাসেল আমার অনেক যত্ন নিয়েছে। কারন ওর মা ওর আর রুপার সম্পর্ক মেনে মিয়েছে এবং ধুমধাম করে ওদের বিয়ে দিবেন। রুপাও খুশি। আমার দিকে শ্রদ্ধাভক্তি নিয়ে তাকায়। আর রাসেল এর মা তো আমাকে তার পুত্রের আসনে বসিয়ে দিলেন। আমি বিকেলে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বের হলাম। আমাকে এগিয়ে দেয়ার জন্য রাসেল আমার সাথে বের হল। রাত দশটায় আমার ট্রেন। ট্রেনে করে সোজা আবার ঢাকায় চলে যাব। রাসেল আমার সাথে শ্যামলীপাড়া বাস স্টপেজ পর্যন্ত এল। উল্লাপাড়া যাবার বাসের টিকিটটাও সে কেটে দিল। বাসের এখনো আধাঘন্টা বাকি আছে। আমি একটা দোকানে ঢুকলাম রাসেলকে নিয়ে। সে চা খাচ্ছে আর আমি সিগারেট খাচ্ছি। আমি বললাম
- "তোমার কপাল ভালো রাসেল। একই মেয়ের সাথে দুইবার বিয়ে হচ্ছে। প্রথম বিয়েতে বাসর হয়নি। দ্বিতীয় বিয়েতে হবে। তুমি অনেক উত্তেজিত হয়ে আছ এ বিষয়টা নিয়ে তাইনা"?
-- "ঠিকই বলেছ ভাই। আমি আসলেই অনেক চাপা উত্তেজনা নিয়ে আছি"।
- "কেন যে আমার সাথে মিথ্যে বল "?
-- "কিসের মিথ্যা বললাম"?
- "তোমার মাকে আমি বানিয়ে বানিয়ে যেটা বলেছি সেটা দেখছি সত্যি হয়ে গেছে। তোমরা আসলেই এখনো বিয়ে করো নি"।
রাসেল আমার দিকে বিস্মিত চোখ নিয়ে তাকিয়ে রইল। আমার অবশ্য ভালো লাগে এটা। কেউ আমার দিকে বিস্মিত চোখ নিয়ে তাকালে আমার নিজেকে অসাধারণ মনে হয়। রাসেল যে এখনো বিয়ে করেনি, শুধু তার মায়ের সাথে নাটক করেছে এটা বুঝতে অবশ্য আমি একটু দেরি করে ফেলেছি। তবে কিভাবে বুঝেছি সেটা একটা রহস্য। বিবাগীরা সব সহস্য প্রকাশ করেনা। কিছু কিছু রহস্য নিজের কাছেই রেখে দেয়। যার কারনে বিবাগীরাও হয়ে ওঠে রহস্যময়ী। রাসেল আমাকে বাসে তুলে দেয়। আমার ফোন নাম্বার চাইলো। কিন্তু আমি তো ফোনই চালাইনা। এটা নিয়ে ওর অনেক মন খারাপ হয়ে গেল। বিয়ের সময় আমাকে সময়মত দাওয়াত দিতে পারবেনা তাই। তবে সে আমায় তার ফোন নাম্বার একটা কাগজে লিখে দিল। বাসে বসে আছি। ঢাকায় গিয়ে মইনুল ভাইয়ের সাথে একবার দেখা করতে হবে। আমি চোখবন্ধ করে বসে রইলাম। আর তাতেই একটু ঝিমুনি চলে এল। আমি হালকা ঘুমিয়ে পড়লাম। আজ কোন স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছে করছেনা। আর আমার বৃষ্টিও আজ আমায় দেখা দিচ্ছেনা। তাতে অবশ্য আমার ভালোই লাগছে। আমি এখন আর কাউকে নিয়ে অদ্ভুতসব দৃশ্য দেখতে পারছিনা। আমি তাতেই খুশি। কাউকে নিয়ে আমি স্বপ্ন দেখিনা। কিন্তু আমার বৃষ্টি না এলেও শুধু নিপার কথাটা আমার মনে ভেসে এল। সেই নিপা, যে আমার কল্পনায় বারবার চলে আসে। আচ্ছা, নিপা এখন কেমন আছে?
.
(চলবে)
.
লেখক :- বিবাগী শাকিল
āĻāϞ্āĻĒ āϏংāĻ্āϰāĻš āĻāϰা āĻāĻŽাāϰ āύেāĻļা। āϰোāĻŽাāύ্āĻিāĻ, āĻৌāϤিāĻ, āϰāĻŽ্āϝ, āĻৌāϤুāĻ āϏāĻš āĻšাāĻাāϰো āĻāϞ্āĻĒ āĻāĻে āĻāĻŽাāϰ āϏংāĻ্āϰāĻšে।
āϰāĻŦিāĻŦাāϰ, ⧍ā§Ē āϏেāĻĒ্āĻেāĻŽ্āĻŦāϰ, ⧍ā§Ļā§§ā§
2286 (3)
āĻāϰ āĻĻ্āĻŦাāϰা āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰা
Rahathossain1010100@gmail.com
āĻāĻ āϏāĻŽā§ে
ā§§:⧍ā§Ļ AM

āĻāϤে āϏāĻĻāϏ্āϝāϤা:
āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝāĻুāϞি āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ (Atom)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ