বিবাগীর বৃষ্টিবিলাস
পর্ব নং :- (২/৮)
লেখক :- বিবাগী শাকিল
===================
.
রাত দশটা। আমি এখন মইনুল ভাইয়ের শ্বশুর বাড়িতে। দুপুরে উনার সাথে খাওয়া দাওয়া করে বিকালে আমরা চলে এসেছি। আসার আগে মইনুল ভাই আমাকে এক প্রকার জোর করেই সেলুনে নিয়ে যান। চুল দাড়ি সব কেটে ফেলি। আহা, আমার এত সাধের চুল দাড়ি। উনার জোরাজুরিতে আমি বাধ্য হই। প্রায় বিকেল সাড়ে পাঁচটায় আমরা এখানে আসি। আসতে প্রায় বিশ মিনিট লাগে। অনেকটা কাছেই বিয়ে করেছেন মইনুল ভাই। ভাবি আমাকে আগে থেকেই চিনে। তবে উনি আমাকে এতটা দেখতে পারেন না। আমার বাউন্ডুলে চাল চলনের কারনে উনি আমাকে অপছন্দ করেন। তবে কখনো আমায় কিছু বলেননি। আমি উনার কার্যকলাপ দেখে বুঝেছি। মইনুল ভাই যে আমাকে এখানে নিয়ে এল সেটা নিয়েও ভাবি মনে মনে অসন্তুষ্ট। কিন্তু মুখে মধু নিয়েই উনি আমার সাথে কথা বলেছেন। ভাবির নাম সুষমা। পুরো নাম জান্নাতুল ফেরদৌসি সুষমা। মইনুল ভাই সুষমা বলেই ডাকেন। ভাবি দেখতে সুন্দরই আছে। তবে চোখজোড়া দেখেই বুঝা যায় উনি অনেক ধূর্ত প্রকৃতির। ভাবির ছোট বোনের নাম সুমি। ওর বিয়ের কথাবার্তা চলছে। ভাবির মতই সুন্দরি তবে চেহারা দেখে একটু সহজ সরল মনে হচ্ছে। মইনুল ভাই হয়ত ভাবির সাথে কথা বলছেন। আমি ছাদের উপর বসে বসে সিগারেট খাচ্ছি। রাতের শহরটা দেখতে ভালোই লাগছে। এই শহরেই আমার বেড়ে ওঠা। অথচ এই শহরের অনেক কিছুই আমার অচেনা অজানা। শহরটাকে ভালো মত চিনতে হবে। আমি যেহেতু বিবাগী সেহেতু আমার কোন পিছুটান নেই। সত্যিই কি নেই? একটু ভেবে দেখি। বাবা মা গত হওয়ার পর থেকেই তো আমি একা। নিজে নিজে কষ্ট করে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়েছি। বাঁচতে শিখেছি একা একা। উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করার পর পড়ালেখায় আর মন বসে নি। কোন চাকরি করতেও ইচ্ছে করেনা আমার। মইনুল ভাই আমাকে ছোট বেলা থেকেই চিনেন। এই মানুষটা আমার পাশে ছায়ার মত রয়েছে। আমার হাত খরচের টাকা উনিই দেন। পিছুটান যদি থাকে তাহলে সেটা থাকবে শুধু মইনুল ভাইয়ের প্রতি। আর কারো জন্যে কোন পিছুটান নেই। পিছুটানের কথা মনে পড়তেই আমার নিপার কথা মনে পড়ে গেল। এই মেয়েটার কথা আমার এতবার মনে পড়ে কেন? তাহলে কি ওর জন্য আমার কোন পিছুটান সৃষ্টি হয়েছে? আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না।
-- "এই যে শুনছেন"?
আমি নিপার কন্ঠ শুনে চমকে উঠলাম। কি আশ্চর্য ব্যাপার, আমি নিপার কথা ভাবতেই নিপার কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম। নির্ঘাত মেয়েটা অনেক আয়ু নিয়ে জন্মেছে। আমি পিছু ফিরে তাকালাম। এ তো নিপা নয়। এ হল সুমি। ছাদে এসে আমার কিছুটা দুরত্বে দাঁড়িয়ে আমায় পিছন থেকে ডাকছে। কিন্তু কন্ঠটা নিপার মত মনে হল কেন? মনে হয় নিপার কথা ভাবছিলাম তাই। আমি হাত থেকে সিগারেটটা ফেলে দিলাম। এরপর উঠে দাড়ালাম। সুমি আবার বলল
-- "আপা আর দুলাভাই ডাকছে। রাতের খাবার খেতে হবে"।
এই বলে সুমি চলেই যাচ্ছিল। আমি ওকে থামালাম। আমি দেখলাম রাতের বেলাতেও সুমি সাজগোজ করেছে। মেয়েদের এই একটা অদ্ভুত শখ। যখন তখন সাজগোজ করে। বাদ দিই, এটা ওদের ইচ্ছা। আমি বললাম
- "তোমার নাম সুমি। তুমি করে বলছি। কিছু মনে করছ না তো"?
সুমি মুখে উত্তর না দিয়ে মাথা নাড়াল। ও বোধ হয় কথা কম বলে। নাকি অপরিচিত একটা ছেলের সাথে রাতের বেলায় ছাদে দাঁড়িয়ে কথা বলতে সংকোচ বোধ করছে। আমি ওসব ভাবব না। ওসব ভেবে কি হবে? আমাকে আমার কাজ করতে হবে। আমি বললাম
- "দেখ সুমি, কথাটা তোমাকে বলা উচিত হবে কিনা জানিনা। তারপরেও বলছি। বিকেলে যখন তোমাদের বাড়িতে পা রাখি তখন তোমাকে দেখেই আমার খুব ভালো লেগে যায়। সেই ভালো লাগা থেকে এই কয়েক ঘন্টা সময়ে আমার মনের ভেতর অনেক ভালোবাসার সৃষ্টি হয়। আর এখন তো আমি অনিয়ন্ত্রিত। এই রাতের শহরের সোডিয়াম আলোয় তোমাকে খুবই সুন্দর লাগছে। আমি তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি। তুমি কি আমায় ভালোবাসতে পারবে"?
আমি একটু থামলাম। কথাগুলো সুমির দিকে না তাকিয়েই বলেছি। সরাসরি চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে কেমন যেন লাগছিল। কথা শেষ করে আমি সুমির দিকে আড়চোখে তাকালাম। সুমি মুখ টিপে মুচকি হাসছে। আমি কি এটাকে গ্রীন সিগনাল হিসেবে ধরে নিব? আমি এই নিয়ে ভাবছি। আমার ভাবনার মাঝখানেই সুমি বলল
-- "যত চেষ্টাই করুন না কেন, আপনি আমায় বিভ্রান্ত করতে পারবেন না। দুলাভাই আমাকে আপনার ব্যাপারে সবকিছু বলেছে। আপনি নাকি মানুষকে অদ্ভুত কথা বলে চমকে দিতে পারেন। কিন্তু আপনি আমাকে চমকে দিতে পারেন নি। সো, নাও ইউ আর ফেইল্ড"।
আমি আর কি বলব। সুমি আমার মিথ্যে ধরে ফেলেছে। যতটা সহজ সরল ভেবেছি সে এতটা সহজ সরল নয়। একটু চালাক আছে। আমি তো সুমিকে এই মিথ্যেগুলো একটা কারনে বলেছি। দেখলাম মিথ্যে বলার সময় আমার চোখের পলক দ্রুত পড়ে নাকি স্বাভাবিক ভাবে পড়ে। আমার চোখের পলক স্বাভাবিক ছিল। তার মানে আমার থিওরি ভুল ছিল। তবে মিথ্যে বলার সময় চোখের পলক বেশি না পড়লেও চোখটা একটু আঁকুপাঁকু করে। আর সরাসরি চোখের দিকে তাকিয়ে মিথ্যে বলা অতটা সহজ না। যারা সরাসরি চোখের দিকে তাকিয়ে মিথ্যে বলতে পারে তারা একটা অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। আমার মনে হয় এই অসীম ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের মধ্যে পুরুষের চেয়ে মহিলার সংখ্যা অনেক বেশি। সুমিও কি চোখের দিকে তাকিয়ে মিথ্যে বলতে পারে? একটু দেখতে হবে।
-- "কি হল? কি ভাবছেন? আপনাকে ডিনারের জন্য ডাকা হচ্ছে।
- "চল"।
আমি আর সুমি একসাথে ছাদ থেকে নেমে এলাম। ডাইনিং টেবিলে দেখলাম মইনুল ভাই, সুষমা ভাবি এবং উনার বাবা মা বসে আছেন। সুমি গিয়ে একটা চেয়ারে বসল। মইনুল ভাই আমাকে বললেন
-- "কিরে তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেন? বসে পড়"।
- "আমার ক্ষুধা নেই ভাই। আমি খাবনা"।
-- "কথা বাড়াসনে। তাড়াতাড়ি খা। তারপর ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করব"।
আমি আর কথা বাড়ালাম না। মইনুল ভাইয়ের পাশে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লাম। সুষমা ভাবি এমন ভাবে খাচ্ছেন যেন তিনি আমাকে ভ্রুক্ষেপই করছেন না। উনি এমন কেন করে বুঝিনা আমি। আমি কি উনার বাড়া ভাতে ছাঁই দিয়েছি? অবশ্যই না। উনার কোন ক্ষতি করেছি বলে আমার মনে হয়না। তবে একদিক থেকে আমি উনার বাড়া ভাতে ছাঁই দিয়েছি। মইনুল ভাই আমার হাত খরচের জন্য যে টাকা দেন সে টাকা গুলো আমাকে না দিলে ভাবির জন্যে ভালো হত। উনার লিপষ্টিক এর সংখ্যা আরো কয়েকটা বাড়ত। মেয়েরা এমনি হয়। নিজের সম্পত্তি এবং নিজের সম্পদের উপর কাউকে ভাগ বসাতে দিতে চায়না। বাই দ্যা ওয়ে, সম্পত্তি এবং সম্পদের মাঝে কয়েকটা পার্থক্য আছে। এই মুহূর্তে মনে পড়ছেনা আমার। একটু ভেবে নিই।
.
ডাকাতের দেয়া উড়োচিঠি হাতে নিয়ে বসে আছি। খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমরা সবাই গোল হয়ে ড্রয়িং রুমে বসে আছি। আমাকে সবাই এমন ভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে যেন মনে হচ্ছে আমি কোন আইনবিভাগের লোক। এবং ডাকাতের হাত থেকে আমিই তাদের রক্ষা করব। আমার প্রতি মইনুল ভাইয়ের অগাধ বিশ্বাস আছে। তিনি ব্যাপারটা আমার হাতে তুলে দিয়েই নিশ্চিন্ত হয়ে বসে আছেন। শুধু সুষমা ভাবি আমার প্রতি অতটা অবলম্বী হন নি। তিনি যেন আমাকে সহ্যই করতে পারছেন না। ভাবির বাবা আমাকে বললেন
-- "দেখ বাবা, এই চিঠিটা গত পরশু দিন এসেছিল। কে দিয়ে গেছে, কিভাবে দিয়ে গেছে কিছুই বুঝতে পারছিনা। এর আগেও আরো দুইটা চিঠি দিয়েছে। সবগুলোতে একই কথা লিখা। শুধু আগের দুইটা চিঠিতে এটাই শেষ চিঠি আর দিনতারিখ এর কথা উল্লেখ করা ছিলনা। তোমাকে একটা চিঠিই দিলাম। কিন্তু চিঠিতে কি লিখল, কি বুঝাতে চাইলো কিছুই বুঝলাম না"।
আমি কিছু না বলে চিঠির ভাঁজ খুললাম। টানা টানা হাতের লিখা। খুব সুন্দর লিখা। আমি আকৃষ্ট হয়ে গেলাম। আমার হাতের লিখা একদম বিচ্ছিরি। এরকম হাতের লিখা যদি আমার হত তাহলে নিশ্চয় আমি কখনো পড়শোনা ছাড়তাম না। হাতের লিখা কি পড়াশোনার উপর প্রভাব ফেলে? জানিনা, এই ব্যাপারটা নিয়েও ভাবতে হবে। আমি চিঠিটা পড়া শুরু করলাম। চিঠিতে লিখা আছে
.
"(স্বপ্ন দেখার দেড় বছর পরে ঘটল ঘটনাটা। আমি চোখে দূরবীন লাগিয়ে সাগর পানে তাকালাম। কয়েকটা ছোট নৌকার মত কি যেন দেখা যাচ্ছে। আর তার পাশেই দেখলাম কয়েকটা নগ্ন মানুষ হৈ হুল্লোড় করছে। এদের কি মানুষ বলা যায়? এরা কয়েকজন গোল হয়ে নাচানাচি করছে। আমার মনে হল ওরা খুব আনন্দ ফুর্তি করছে। একটুও না নড়ে আমি ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম, মাটিতে কয়েকজনকে দড়ি দিয়ে বেঁধে শুইয়ে রাখা হয়েছে। তারাও বিবস্ত্র। সম্ভবত এরা মানুষখেকো। আমি দেখলাম বন্দী মানুষগুলোর থেকে একজন কিভাবে যেন ছুটে গিয়ে দৌড় শুরু করল। একি, এই বিবস্ত্র মানুষটা দেখছি আমার দিকেই দৌড়ে ছুটে আসছে)। ঐ লোকটা যেমন ছুটে আসছে তেমনি আমিও আসছি। দিনতারিখ বোধ হয় আর বলতে হবেনা। এটাই শেষ চিঠি। আমি আসছি। সাবধানে থাকবেন জনাব হায়দার জামান।"
.
আমি চিঠিটা পড়ে একটু মৃদু হাসলাম। যেমন তার হাতের লেখা তেমন তার বুদ্ধি। সরাসরি কিছু বলতে চায়না। এই লোক কি ডাকাত? নাকি অন্য কিছু? সে তো আর এখন বলতে পারব না। আমি এই চিঠিটা পড়ে বুঝলাম, এই চিঠিটা যে লিখেছে সে যদি তার নিজের বুদ্ধিতে লিখে তাহলে সে অনেক বুদ্ধিমান। ভাবনাটা একটু ভুল হয়ে গেল। এমনো তো হতে পারে এই চিঠিটা যে লিখেছে সে এসব ব্যাপারে কিছুই জানেনা। কেউ হয়ত তাকে লিখতে বলেছে। সে শুধু তার কথামত লিখেছে। কি লিখতে হবে সেটা হয়ত অন্য কেউ বলে দিয়েছে। তবে এর পেছনে যেই থাকুক, মেনে নিতে হবে সে অসম্ভব বুদ্ধিমান। ধুর, আমি আজ সব ভাবনাতেই একটু ফাঁক ফোকর রেখে যাচ্ছি। যেমন এই চিঠির পেছনে যার হাত রয়েছে সে বুদ্ধিমান না হয়ে বুদ্ধিমতীও হতে পারে। স্ত্রীলিঙ্গও হতে পারে। আমি চুপচাপ বসে বসে এসব ভাবলাম। এমন সময় মইনুল ভাই আমাকে বললেন
-- "কিরে চুপ করে আছিস কেন। চিঠিটা পড়ে কিছু বুঝলি"?
- "না ভাই। কিছুই বুঝিনি"।
-- "ভালো করে পড়ে দেখ। তুই বুঝতে পারবিনা এমন কিছুই নেই"।
- "ভাই, হায়দার জামান কার নাম"?
মইনুল ভাই কিছু বলার আগেই উনার শ্বশুর বললেন
-- "আমি হায়দার জামান। চিঠিটা আমাকে উদ্দেশ্য করেই লিখা"।
- "আপনার কাউকে সন্দেহ হয়"?
-- "না। আমার তো কোন শত্রু নেই"।
- "বন্ধু তো আছে"?
জনাব হায়দার জামান কিছু বললেন না। আমার প্রশ্ন শুনেই তিনি ভড়কে গিয়েছেন। আমিও আর কিছু বললাম না। সুমির দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে আমার দিকে উৎসুক ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে। সুষমা ভাবি কেমন যেন মুখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। সবার মুখেই একরাশ নীরবতা আর দুশ্চিন্তার ছাপ ফুটে উঠেছে। আমি মইনুল ভাইকে বললাম
- "ভাই, আপনারা সবাই ঘুমিয়ে পড়ুন। আমি একটু ছাদে যাব। ছাদে বসে থেকে শহরটা দেখতে ভালোই লাগছে"।
কেউ কোন কথা বললনা। মইনুল ভাই আমাকে নীরবে হাতের ইশারা দিয়ে যেতে বললেন। আমি ছাদের দিকে পা বাড়ালাম। আর সাথে সাথেই সুমি বলল
-- "একটু দাড়ান, প্লিজ।
আমি দাঁড়ালাম। সবাই সুমির দিকে কেমন যেন দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। মইনুল ভাই ছাড়া। সবচেয়ে বেশি কঠিন চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে সুষমা ভাবি। উনার কি এমন সমস্যা কে জানে? সুমি আমাকে দাঁড়াতে বলে ওর ঘরে চলে গেল। আমি জানি সে এখন আমায় তার প্রিয় চাদরটা এনে দেবে। এই শীতের রাতে ছাদে যেন আমার ঠান্ডা না লাগে সেজন্য। একটু আগে সে যখন আমায় ডাকতে ছাদে গিয়েছিল তখন সে নিশ্চয়ই খেয়াল করেছিল আমি ঠান্ডায় কাঁপছিলাম। এখন সে আর আমাকে কাঁপতে দিতে চাচ্ছেনা। তার চাদরের উষ্ণতা দিয়ে আমার শীতকে দূরীভূত করে দিতে চায়। মইনুল ভাই তো এখন কম্বলের নিচে থেকে সুষমা ভাবিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবেন। উনার এত শীত লাগবেনা। শীতের রাতে কম্বলের নিচে বউকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে কেমন লাগে এটা বোঝার জন্যে হলেও আমার বিয়ে করা উচিত। আচ্ছা, সুমির চাদরের উষ্ণতা কতটুকু? আমায় ঠান্ডা থেকে রক্ষা করতে পারবে? নাকি সে নিজেই আমার উষ্ণতা হয়ে আসবে? কি ব্যাপার, আমি তো গাঁজা খাইনা। তাহলে এমন গাঁজাখুরি ভাবনা কেন ভাবছি? অবশ্য এই ভাবনার সমর্থনে আমি একটা উত্তর দাঁড় করাতে পারি। সঠিক ভাবে বলতে গেলে এটা উত্তর নয়। এটাও আরেকটা প্রশ্ন। হীরে দিয়ে হীরে কাটার মত প্রশ্ন দিয়ে প্রশ্নকে কেটে ফেলা। আর প্রশ্নটা হল এমন। মজনুর লাইলি ছিল, চণ্ডিদাসের রজকিনী ছিল, দেবদাসের পার্বতী ছিল কিন্তু বিবাগীর জন্য কে আছে? নির্ঘাত এটা একটা বিশাল প্রশ্নবোধক চিহ্ন।
.
সারারাত ধরে সুমির চাদর দিয়ে নিজেকে আবৃত করে রাতের শহর দেখেছি। এই শহরেই কত রহস্যময়ী ঘটনা ঘটে। পুরো প্রকৃতিটাই একটা রহস্য। আর মানুষ সেই রহস্য ভেদ করতে সর্বদা তৎপর হয়ে আছে। কেউ পারে, কেউ পারেনা। আর তাছাড়া প্রকৃতি রহস্যকে অনেক পছন্দ করে। ভোরের দিকে শীত অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। খুব ঠান্ডা লাগছে। বাড়ির সবাই তো এখন ঘুমাচ্ছে। মইনুল ভাই আর সুষমা ভাবি হয়ত জেগে আছে। সুমি কি করছে? সে কি আমায় ভাবছে? রাতের শেষ সিগারেটটা ধরালাম। আমার চোখগুলোকে যদি একটা ক্যামেরা হিসেবে অনেক উপরে ফিট করতে পারতাম তাহলে আমি আমাকে দেখতাম। একটা ছেলে এই রাতের কনকনে ঠান্ডায় ছাদের উপর চাদর গায়ে দিয়ে বসে আছে। হাতে সিগারেট। কেমন হবে দৃশ্যটা? আস্তে আস্তে ভোরের আলো ফুটে উঠছে। আকাশটা সাদা হয়ে আছে। নীল রঙের কোন চিহ্নই নেই। আকাশটাও কেমন যেন রং বদলায়। একদম আমাদের মনের মত। নাকি আমরাই আকাশের মত রং বদলাই। কিজানি, এই ব্যাপারটা নিয়েও ভাবতে হবে। চোখে ঘুম জড়িয়ে আসছে। সুমি এমন সময় ছাদে আসল। আমার দিকে তাকিয়ে অনেকটাই অবাক হয়ে গেল। হয়ত এই এত শীতে আমি কিভাবে ছাদে বসে আছি সে জন্য। সে আমাকে বলল
-- "আমি বুঝলাম না। এরকম ঠান্ডায় কোন মানুষ ছাদে থাকতে পারে"?
- "না, তা তো পারেনা"।
-- "তাহলে আপনি কিভাবে পারছেন"?
- "আমি তো মানুষ না। আমি বিবাগী"।
-- "বিবাগী মানে কি"?
- "তা তো জানিনা"।
-- "আপনি কি যে বলেন কোনটাই মাথায় ঢুকেনা"।
- "কোন কিছুই মাথায় ঢুকতে হবেনা। তুমি শুধু বল এত ভোরে তুমি ছাদে এলে কেন"?
-- "আপনাকে দেখতে এলাম"।
- "বাড়ির সবাই কি ঘুম থেকে উঠে গেছে"?
-- "না। সবাই ঘুমাচ্ছে। আমার ঘুম ভেঙ্গে গেছে। একা একা ভালো লাগছিল না। ভাবলাম আপনার সাথে একটু গল্প করি"।
- "আচ্ছা ঠিক আছে, তবে গল্প না। তুমি আমাকে একটা ধাঁধাঁর উত্তর দাও"।
-- "ঠিক আছে বলেন"।
- "মনে কর, তুমি একটা বাস চালাচ্ছ। বাসে যাত্রী আছে ২০ জন। পরের স্টপেজে ৫ জন যাত্রী নেমে গেল এবং আরো ১০ জন যাত্রী বাসে উঠল। আবার পরের স্টপেজে ১৪ জন যাত্রী নেমে গেল এবং আরো ৫ জন যাত্রী বাসে উঠল। আরো পরের স্টপেজে ৫ জন নেমে গেল এবং ১২ জন বাসে উঠল। এখন বল বাস ড্রাইভারের বয়স কত"?
সুমি আমার প্রশ্নটা শুনে চিন্তায় পড়ে গেল। আমি মনে মনে হাসছি। সুমি চুপ হয়ে গভীর ভাবে চিন্তা করছে। আমি এই ফাঁকে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। ছাদের কার্নিশের দিকে এগিয়ে গেলাম। রাতের শহর দেখার পরে এখন দেখছি ভোরের শহর। জায়গাটা একই হলেও চেহারা অন্যরকম হয়ে গেছে। এই শহরটাও দেখছি রং বদলায়। সুমির ডাকে আমি পিছু ফিরলাম। সে বলল
-- "পেয়েছি। নিজেকে অনেক বুদ্ধিমান ভাবেন তাইনা"?
- "না তো, আমি খুব সাধারণ মানুষ"।
-- "সরাসরি জিজ্ঞেস করলেই পারতেন আমার বয়স কত। এভাবে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে প্রশ্ন করার দরকার কি"?
- "যাক, ঘটে তাহলে বুদ্ধি আছে"।
-- "অবশ্যই, আপনি কি আমাকে বোকা ভাবেন নাকি"?
- "আচ্ছা, এবার তুমি নিচে যাও। দেখ কেউ জেগেছে কিনা। তুমি এভাবে আমার কাছে আসলে সবাই অনেক কিছু মনে করবে"।
সুমি আমার কথা শুনে আর কথা বাড়ালনা। মাথা নিচু করে নিচে চলে গেল। আমি চাদরটাকে এবার পাঞ্জাবীর ওড়নার মত করে কাঁধে রেখে সামনে ঝুলিয়ে দিলাম। কালো শার্টের সাথে এটা বেশ মানিয়ে গেছে। আকাশে একটু একটু সূর্য্যের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। গ্রামের চেয়ে শহরে কুয়াশার পরিমাণ অনেক কম। বলতে গেলে শহরে কুয়াশা থাকেইনা। গ্রামের কুয়াশাভরা রাস্তায় খালি গায়ে এবং খালি পায়ে হাঁটতে কেমন লাগে সেটা এখনো জানিনা। কখনো সুযোগ হলে জেনে নিব। আচ্ছা আমি কি কবিতা লিখতে পারব? বুঝলাম না, সব ছেড়ে কবিতা লিখার বিষয়টা আমার মাথায় এলো কেন? আমি দিন দিন খুবই অদ্ভুত হয়ে পড়ছি। নিজের কাছেই নিজেকে মাঝে মাঝে ভীষণ অচেনা মনে হয়। আমার শরীরে একটা কাঁপুনির সৃষ্টি হল। বুঝলাম আমার বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আমি খুবই খুশি হয়ে গেলাম। আমার বৃষ্টিটা আমার কাছে খুব প্রিয়। আমি ভিজতে শুরু করলাম। ভেজা চুলের পানি মাথা ঝাঁকিয়ে ফেলে দেয়া খুব আনন্দের ব্যাপার। আমি মাথা ঝাঁকালাম। কিন্তু চুলের পানি আর ছড়িয়ে পড়লনা। পরক্ষণেই আমি বোকার মত হেসে ফেললাম। আমার চুলতো আমি কালকেই কেটে ফেলেছি। এই বৃষ্টি আমাকে বদলে দেয়ার জন্য আসে। আজও সেকারনেই এসেছে। আমি দেখতে পেলাম আমাকে। আমার সামনে আমার দ্বিতীয় সত্তা দাঁড়িয়ে আছে। আজ তার গায়ে হলুদ পাঞ্জাবী। ওকে হিমু হিমু লাগছে। আমি হেসে ফেললাম। হাসতে হাসতে বললাম
- "কিরে তুইও কি হিমু হয়ে গেলি"?
-- "দেখ, আমি আবার তোকে সাবধান করতে এলাম"।
- "আমি সৃষ্টিকর্তাকে বলেছি যাতে তোকে আমার কাছ থেকে ছাড়িয়ে নেয়"।
-- "তোর কি ধারণা? তোর থেকে আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে গেলে তুই বেঁচে থাকবি"?
- "তা তো ভেবে দেখিনি"?
-- "তুই আসলেই বোকা। শুধু বোকা না। তুই একটা মহা বোকা"।
- "সেই সাথে আমি অমূল্য রতন"।
-- "হ্যা, মইনুল ভাই তোকে বলেছে আর তুই সেটা বিশ্বাস করে নিলি"?
- "বাদ দে, তোর কাছে একটা সিগারেট হবে? খুব নেশা পেয়েছে আমার"।
-- "তোর কাছে না থাকলে আমার কাছে থাকবে কিভাবে"?
- "কেন? আমি আর তুই কি এক নাকি"?
-- "হ্যা একই"।
- "তাহলে তুই আমার কার্যকলাপে খুশি না কেন"?
-- "জাহান্নামে তো আর তুই যাবিনা। যাব তো আমি"।
- "তাহলে তো ভালোই হবে। তুই জাহান্নামে থাকবি আর আমি জান্নাতে থাকব"।
-- "তুই কোথাও যাবিনা। তুই কবরের নিচে থেকে পচে গলে শেষ হয়ে যাবি"।
- "যা। আমার ভালো লাগছেনা"।
আমি ওকে আর দেখতে পেলাম না। ও চলে গেল। আমি আবারো ছাদে একা হয়ে গেলাম। আচ্ছা সত্যিই কি আমি আমার সাথে কথা বলতে পারি? সম্ভবত হ্যা। এই নিয়ে দুবার হল। আমি আবার আমার বৃষ্টিবিলাস শুরু করলাম। বৃষ্টির ফোঁটা খুব ঘন হয়ে পড়ছে। কাল তো আমার বৃষ্টি শুরু হবার সাথে সাথে নিপাও এসে বৃষ্টিবিলাস করেছিল। আজও কি সে আসবে? আমি আকাশের দিকে তাকালাম। দেখলাম আমি একটা পাখি হয়ে উড়ছি। এদিক ওদিক যেদিকে পারছি সেদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছি। পুরো শহরটাকে দেখতে পাচ্ছি। সেই সাথে দেখতে পেলাম আমাকে। রাতের বেলায় চাদর গায়ে দিয়ে ছাদে বসে সিগারেট খাচ্ছি। যাক, তাহলে আমার ইচ্ছেটা পূর্ণ হল। আমার তো শখ ছিল নিজের চোখ গুলো ক্যামেরার মত ফিট করে আমাকে দেখতে। জানার ইচ্ছা ছিল উপর থেকে আমাকে দেখতে কেমন লাগে? দেখলাম, আমাকে খুবই ভালো লাগছে। আর কেউ কি আছে যাকে আমার চেয়ে বেশি ভালো লাগবে? না, আমার মত আর কেউ নেই। পৃথিবীতে বিবাগী একজনই আছে। সেটা হলাম আমি। আর কেউ না। আর কারো কোন যোগ্যতা আছে নাকি বিবাগী হবার? একটু অহংকার করে ফেললাম মনে হচ্ছে। অহংকার তো সৃষ্টিকর্তার চাদর। সেটা নিয়ে টানাটানি শুরু করলাম আমি? ছি, এমনটা আর হবেনা। আর অহংকার করব না। আচ্ছা আমি যে এখন পাখি হয়ে আকাশে উড়ছি, তা আমি এখন কি পাখি হলাম? এই পাখির কি কোন নাম আছে? নাতো, আমি নিজেই নিজের নাম বলতে পারছিনা। তার মানে আমি অচিন পাখি? না, এই নামটা অনেক কমন নাম। আমি তো আর সাধারণ কোন পাখিনা। তাই আমি নিজেই নিজের নাম দিলাম বিবাগী পাখি। অদ্ভুত নাম। আমার নিজেরই খুব পছন্দ হয়েছে। আমি উড়ছি তো উড়ছিই। একদেশ থেকে আরেক দেশে। পুরো পৃথিবীটাই আমার নিচে। আমি পুরো বিশ্বকে পাড়ি দিচ্ছি। কিন্তু আর কোন পাখি আমি দেখতে পাচ্ছিনা কেন? পৃথিবীর অন্যান্য পাখি গুলো কোথায়? হঠাৎ করেই শুনতে পেলাম মেয়েলি কন্ঠে কেউ আমায় ডাকছে। আমি কি পিছনে তাকিয়ে দেখব? আমি এখন ভুপৃষ্ঠ থেকে অনেক উপরে। কোন মানুষের পক্ষে এখানে আসা সম্ভব না। তাহলে কে আসবে? আমায় কে ডাকবে? আমার মতই কোন পাখি? মনে হচ্ছে তাই। সেই পাখির কন্ঠটা আমায় অনবরত ডেকেই চলেছে। এই পাখিটার কণ্ঠ মেয়ে পাখির মত। তাহলে এই পাখিটার নাম কি? বিবাগীনি পাখি? অসম্ভব। বিবাগীর কোন স্ত্রীলিঙ্গ থাকতে পারেনা। আমি পিছু ফিরে তাকাব না। আমি উড়ব অসীম আকাশে। পুরো দেহটা আবার কেঁপে উঠল। আর আমার ভাবনার অবসান হল। সেই সাথে আমার বৃষ্টিও শেষ হয়ে গেল। আমি এখন দাঁড়িয়ে আছি মইনুল ভাইয়ের শ্বশুর বাড়ির ছাদে। আমার বৃষ্টিটা আমার মনে অদ্ভুত অদ্ভুত ভাবনার সৃষ্টি করে। আমি খুব মজা পাই সেই ভাবনার মাঝে ডুবে থেকে। ধন্যবাদ বৃষ্টি। তোমার কারনে আমার নিজেকে অসাধারন মনে হয়।
.
নাস্তা সেরে নিলাম। এখানে আমার ভালো লাগছেনা। শুধু এখানে না, কোন জায়গায় বন্দী হয়ে থাকতে আমার ভালো লাগেনা। আমার কাজ ঘুরে বেড়ানো। আমার ধারণা ঘুরে বেড়ানোর মত কোন কঠিন কাজ এই দুনিয়াতে নেই। আমি তো শুধু ঘুরে বেড়াইনা। ঘুরে ঘুরে এই প্রকৃতিটা দেখি। প্রকৃতিতে কত রহস্য লুকিয়ে আছে। সেই রহস্য গুলোকে আমি অনেক কাছ থেকে দেখি। আর প্রকৃতির কিছুটা রহস্য আমি নিজের কাছে টেনে নিয়েছি। মইনুল ভাই আমাকে বললেন
-- "কিরে, সারারাত ছাদে ছিলি। শীত লাগেনি"?
- "শীত তো লাগার জন্যেই সৃষ্টি হয়েছে"।
-- "তোর আর অদ্ভুত কথাবার্তা গেল না"।
সুষমা ভাবি আমাদের পাশে বসে ছিলেন। তিনি এতক্ষন কোন কথা বলেন নি। এখন তিনি মইনুল ভাইকে বললেন
-- "হ্যা, ওর সাথে থেকে তুমিও এমন কথাবার্তা শিখে নিও। তোমরাতো এক গোয়ালের গরু"।
আমি কিছু বললাম না। মইনুল ভাইও কিছু বললেন না। আমি ভাবির কথা শুনে মৃদু হাসলাম। উনি আমায় কেন যে এত ঘৃণা করেন কে জানে? আমি মইনুল ভাইকে বললাম
- "ভাই, শার্টটা নোংরা হয়ে গেছে। এটা আপনি রেখে দেন। অন্য কিছু থাকলে আমায় দেন"।
-- "ঠিক আছে যা। আগে গোসল সেরে নে।"
আমি গোসল সেরে নিলাম। প্রচন্ড ঠান্ডা লেগেছে। এই শীতে গোসল করতে অনেক কষ্ট হয়। তাও আবার এই সকাল বেলায়। কিন্তু কি আর করব। বিবাগী যখন হয়েছি তখন সব কষ্ট সহ্য করে নিতেই হবে। বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখি মইনুল ভাই আমার জন্য একটা হলুদ পাঞ্জাবী আর একটা কুচকুচে কালো পায়জামা রেখে দিয়েছেন। আমি সেগুলো পরে আয়নার সামনে দাড়ালাম। নিজেকে হিমু হিমু লাগছে। আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেই আকৃষ্ট হয়ে গেলাম। আমি এত সুদর্শন আগে জানা ছিল না তো। আমি আবার বৈঠক খানায় গিয়ে বসলাম। সবাই বসে আছে। সুমি আমাকে দেখে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইল। সে যেন পলক ফেলতে ভুলে গেছে। আমি সোফায় বসলাম। মইনুল ভাইকে বললাম
- "ভাই, আমার এখানে ভালো লাগছেনা। আমি চলে যাব। ঘরে বন্দী হয়ে থাকতে ভালো লাগেনা"।
-- "ঠিক আছে। যেতে হলে যাবি। আমি কখনো তোর কাজে বাধা দিইনি। আজও দেব না। কিন্তু তোকে যে কারনে আনলাম সেটার কোন ব্যবস্থা করে যা"।
- "ব্যবস্থা হবে ভাই। আজ ১৬ তারিখ, সোমবার। আমি আবার ২০ তারিখে আসব। যে এই উড়োচিঠি দিয়েছে সে ২০ তারিখেই আসবে"।
মইনুল ভাই আমার সম্পর্কে ভালো করেই জানে। তিনি জানে আমি এমনি এমনি কিছু বলিনা। তিনি চুপ করে রইলেন। আর বাকি সবাই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। আমি উঠে দাঁড়ালাম। বের হবার জন্য পা বাড়াতেই সুমি বলল
-- "শুনুন শুনুন।
- "জ্বি, বলুন।
-- "আপনি আন্দাজের উপরে বলে দিলেন সে ২০ তারিখে আসবে। আপনার আন্দাজ কি সব সময় সঠিক হবে নাকি"?
আমি সুমির কথার উত্তর না দিয়ে একটু হাসলাম। মইনুল ভাইয়ের মুখেও আমার মতই একটা মৃদু হাসি ফুটে উঠেছে। তার হাসিটা হল গর্বের হাসি। তিনি আমাকে নিয়ে গর্ব করেন। কিন্তু আমার হাসিটা কিসের হাসি? আমার কাছে তো সাধারণই মনে হচ্ছে। কিন্তু সুমি সহ ওর পুরো পরিবারের কাছে আমার হাসি হল রহস্যময়ী হাসি। আরে, আমার হাসি যদি রহস্যময়ী না হয় তাহলে আমি বিবাগী হলাম কেন? এই রহস্যময়ী হাসিটাও আমার বৈশিষ্ট্য। আমি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম। সবাই আমার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে ছিল। তাকিয়ে থাকুক। বিবাগীকে অদ্ভুত ভাবে দেখার মাঝেও একটা আনন্দ আছে। সেটা যারা দেখে একমাত্র তারাই বুঝতে পারে। বের হবার সময় সুমির দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে বিষন্ন মুখে আমার দিকে চেয়ে আছে। ঘর থেকে তো বের হলাম ঠিকই। কিন্তু আমি এখন কোথায় যাব? আমি যে গন্তব্যহীন বিবাগী।
.
(চলবে)
.
.
লেখক :- বিবাগী শাকিল
āĻāϞ্āĻĒ āϏংāĻ্āϰāĻš āĻāϰা āĻāĻŽাāϰ āύেāĻļা। āϰোāĻŽাāύ্āĻিāĻ, āĻৌāϤিāĻ, āϰāĻŽ্āϝ, āĻৌāϤুāĻ āϏāĻš āĻšাāĻাāϰো āĻāϞ্āĻĒ āĻāĻে āĻāĻŽাāϰ āϏংāĻ্āϰāĻšে।
āϰāĻŦিāĻŦাāϰ, ⧍ā§Ē āϏেāĻĒ্āĻেāĻŽ্āĻŦāϰ, ⧍ā§Ļā§§ā§
2286 (2)
āĻāϰ āĻĻ্āĻŦাāϰা āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰা
Rahathossain1010100@gmail.com
āĻāĻ āϏāĻŽā§ে
ā§§:⧍ā§Ļ AM

āĻāϤে āϏāĻĻāϏ্āϝāϤা:
āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝāĻুāϞি āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ (Atom)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ