āϰāĻŦিāĻŦাāϰ, ⧍ā§Ē āϏেāĻĒ্āϟেāĻŽ্āĻŦāϰ, ⧍ā§Ļā§§ā§­

2286 (1)

বিবাগীর বৃষ্টিবিলাস
পর্ব নং :- (১/৮)
লেখক :- বিবাগী শাকিল
===================
.
-- "আপনার নাম কি একটু বলবেন"?
- "আমার নাম দিয়ে আপনি কি করবেন? তাবিজ করবেন নাকি? তাবিজ করতে শুধু নাম নয়, আরো অনেক কিছু লাগে। মাথার চুল, কাপড়ের টুকরো এজাতীয় আরো অনেক কিছু। মাথার চুল লাগবে নাকি? নিন যে কয়টা মন চায় ছিঁড়ে নিন"।
এই বলে আমি মেয়েটির দিকে মাথা এগিয়ে দিলাম। মেয়েটি আমার কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেল। যেন সে জীবনে এই প্রথম কোন অদ্ভুত কিছু দেখতে পেল। মেয়েটা আমার দিকে ভাবলেশহীন চোখে তাকিয়ে রইল। আমি অবশ্য এসবের ধার ধারিনা। আমি মেয়েটার দিকে না তাকিয়ে হাঁটা শুরু করলাম। সাথে সাথেই মেয়েটার গলা শুনতে পেলাম। মেয়েটা আমায় শুনুন শুনুন বলে আমার দিকে এগিয়ে এল। আমি হাঁটা বন্ধ করে ওর দিকে ঘুরে তাকালাম। মেয়েটি আমায় বলল
-- "আমি সামান্য আপনাকে নাম জিজ্ঞেস করেছি আর আপনি আমায় এতকিছু শুনিয়ে দিলেন? এর কারন কি? নাম জিজ্ঞেস করাতো কোন অপরাধ নয়"।
- "দেখুন ভাবনা ম্যাডাম, আমি আপনাকে চিনিনা। আর আমি অপরিচিত কাউকে আমার নাম ধাম কিছুই বলিনা। তাছাড়া আমি এখন বৃষ্টিতে ভিজছি। এসময় আমি আমার পরিচিত কারোর সাথেও কথা বলব না"।
ভাবনা আবারো হতভম্ব হয়ে গেল। সেই সাথে পুরো মুখে বিস্ময় ছড়িয়ে পড়েছে। ভাবনা নামটা আন্দাজে ঢিল মেরেছি। মিলে গেল নাকি? ভাবনা বলল
-- "আমার নাম ভাবনা সেটা আপনি কি করে জানলেন"?
- "আন্দাজে বলেছি। মিলে গেল নাকি"?
-- "না। আমার নাম ভাবনা নয়। আমার নাম আয়না"।
- "সে আপনি ভাবনা হন বা আয়না হন। আমার তাতে কিছু যায় আসেনা। আপনি ভাগেন। বললাম না আমি এখন বৃষ্টিতে ভিজছি"।
আয়না মেয়েটার মুখে বিরক্তি ছড়িয়ে পড়েছে। সম্ভবত আমার এমন অদ্ভুত ব্যবহারে। বিরক্ত হলে হোক। আমি কি ওকে বিরক্ত করছি নাকি। ও নিজে থেকে সেধে সেধে আমার সাথে কথা বলতে এসেছে। আমি ডেকে আনিনি। আয়না বলল
-- "আপনি এমন করে কথা বলছেন কেন"?
- "তো আপনাকে এই শীতের সকালে জড়িয়ে ধরে রোমান্টিক কথা বলব নাকি। আপনি আমায় বিরক্ত করবেন না। আপনাকে কতবার বলব আমি এখন বৃষ্টিতে ভিজছি"।
আয়নার চেহারার ভাবভঙ্গী বদলে যাচ্ছে। ভ্রুজোড়া প্রচন্ড ভাবে ভাঁজ নিয়েছে। রাগলে সাধারণত মানুষের চোখ সম্প্রসারিত হয়ে যায়। এই আয়না মেয়েটির ক্ষেত্রে সেটা একদম ভিন্ন। তার চোখ আস্তে আস্তে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। আমি মনে মনে হাসলাম। একটা মেয়েকে ধীরে ধীরে রাগতে দেখা এত ইন্টারেস্টিং সেটা তো আমার জানা ছিল না। আমার ভাগ্য ভালো। খুব কাছ থেকে এরকম একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার দেখতে পাচ্ছি। গাল দুটো তার লাল হয়ে গেল। বেশি ফর্সা মেয়েদের এই এক সমস্যা। কিছু একটা হলেই গাল লাল করে বসে থাকে। লাল রঙে লালায়িত গালটা তাদের সৌন্দর্য কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়। আমার ভবিষ্যৎ বউ যদি এরকম বেশি ফর্সা হয় তাহলে পার আওয়ারে একটা করে কষিয়ে থাপ্পড় মারব। ব্যস, গাল লাল হয়ে যাবে। আমি বসে বসে লাল গাল দেখব। সেই সাথে থাকবে আমার ভবিষ্যৎ বউয়ের চোখের পানি। ধুত্তোরি, আমি এসব ভাবছি কেন? আমার ভবিষ্যৎ বউ আসবে কোথাথেকে। আমি তো বিয়েই করব না। কারন আমি বিবাগী। আয়নার পুরো গা যেন থরথর করে কাঁপছে। আমি তো একটু ভয় পেয়ে গেলাম। এ আবার আমাকে থাপ্পড় মেরে বসে নাকি। আয়না আবার আমায় বলল
-- "নিজেকে কি মনে করেন? আপনি স্মার্ট? একটা মেয়ে আপনার সাথে কথা বলতে এসেছে আর অমনি ভেবে নিলেন সে আপনার প্রেমে পড়েছে। কি সব উদ্ভট চিন্তাভাবনা। শুনুন, আমি নিপা আজ পর্যন্ত কোন ছেলের প্রেমে পড়িনি। ছেলেরা আমার পিছে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এতই বিরক্ত হতাম যার কারনে বাবা সবসময় আমাকে আগলে রাখতেন। আর আপনি কিনা আমায় ইগ্নোর করছেন? আমি তো আপনার নাম জিজ্ঞেস করেছি। শীতের সকালে খালি গায়ে রাস্তায় হাঁটতে বেরিয়েছেন তাই বলে একটু মায়া মমতা দেখিয়ে আপনার সাথে কথা বলতে এসেছি আর আপনি কিনা ভাব নিচ্ছেন। এজন্যই বলে, সিমপ্যাথির মাম্মিকে ড্যাডি। আপনার সাথে কথা বলতে আমার বয়েই গেছে। আপনি এমন কি হয়ে গেছেন যে আপনার সাথে আমার কথা বলতেই হবে। বললাম না আপনার সাথে কথা। আর হ্যাঁ, পাবনায় গিয়ে একটা সীট বুকিং করে কিছুদিন থেকে আসুন। ছেঁড়া তার গুলো ডাক্তাররা জোড়া লাগিয়ে দিবে। এই কনকনে ঠান্ডা শীতের সকালে আপনি বৃষ্টি কোথায় পেলেন। বার বার বলছেন বৃষ্টিতে ভিজছেন। এখন তো বৃষ্টি হচ্ছেনা। আপনি নিজেকে আয়নায় দেখেছেন কখনো? বাদুড়ের মত চোখ, হনুমানের মত চেহারা, চুল দাড়ি সব মিলিয়ে দেবদাস হয়ে আছেন। কয়টা ছ্যাঁকা খেয়েছেন? এক এক করে বলেন আমি সেগুলো নোট করি"।
মেয়েটা একটানা কথা গুলো বলে থামল। যতক্ষন বলছিল ততক্ষণ আমার কান ঝালাপালা করে দিচ্ছিল। মনে হচ্ছিল মানসিংহ আর ঈশা খাঁ তরবারি দিয়ে দ্বন্দযুদ্ধ করছেন। যুদ্ধে তারা তরবারি দিয়ে ঝনঝন শব্দ করছেন। আমি মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বুঝলাম মেয়েটা একটু নীরব টাইপের। নীরবতা পছন্দ করে। যেসব মেয়েরা চুপচাপ থাকতে ভালোবাসে তারা রাগের সময় অতিরক্ত কথা বলে। এখন মেয়েটা রেগে আছে তাই অতি দ্রুত কথাগুলো বলে ফেলেছে। আমি বললাম
- "দেখি, পঞ্চাশ টাকা দেন"।
-- "কেন, ভিক্ষুকের মত টাকা চাচ্ছেন কেন। আমি গাঁজা খাওয়ার জন্য কাউকে টাকা দিইনা"।
- "আমি তো গাঁজা খাইনা। সিগারেট খাই। কোন ধরাবাঁধা নিয়ম নাই। যখন যেটা সামনে পড়ে সেটা খাই। মাঝে মাঝে আকিজ বিড়িও খাই। খানিকটা গাঁজার গন্ধ আসে"।
-- "গাঁজা না খেলে কি জন্য টাকা চাচ্ছেন"?
- "কাগজ কলমের জন্য"।
-- "কাগজ কলম দিয়ে আপনি কি করবেন"?
- "আমার জন্য না তো। আপনার জন্য। আমি আমার ছ্যাঁকার কাহিনী বলব আর আপনি তা কাগজ কলমে নোট করে রাখবেন"।
মেয়েটা আমার কথা শুনে একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেল। অপ্রস্তুত মানুষগুলোর চেহারা আর ভাবভঙ্গী দেখতে খুব ভালো লাগে। আমিও চেষ্টা করি মানুষকে অপ্রস্তুত করতে। আমি কিছু বললাম না। মেয়েটা এদিক ওদিক তাকিয়ে কি যেন খুঁজছে। না আসলে কিছুই খুঁজছেনা। নিজেকে নতুন করে প্রস্তুত করে নিচ্ছে। অপ্রস্তুত মানুষগুলো নিজেদের নতুন করে প্রস্তুত করার জন্য একটু সময় নেয়। এই মেয়েটিও হয়তবা নিচ্ছে। আমি কি চলে যাব? মইনুল ভাই খবর পাঠিয়েছে যাবার জন্য। কখন যেতে হবে সেটা বলেনি। আর তাছাড়া আমার কোন বাধ্যবাধকতা নেই। তাই আমি ভাবলাম এই মেয়েটার টকটকে ফর্সা গালের লাল আভাটা আরো কিছুক্ষণ দেখি। শীতের সকালে এটা অনেক রেয়ার কালেকশান। মেয়েটা এতক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়েছে। তারপর বলল
-- "আচ্ছা যাই হোক, আমি আরলি রাইজার। রোজই আসি। আপনি কি রোজ আসেন"?
- "না। আমি নিশাচর প্রাণী। তাই খুব তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠা হয়না"।
-- "তাহলে আজ এত তাড়াতাড়ি উঠে গেলেন যে। তাড়াতাড়ি ঘুমিয়েছিলেন নাকি"?
- "ঘুমালে তো উঠব। সারারাত ঘুমাইনি। ভোরের আলো দেখে হাঁটতে বের হলাম। সেই সাথে বৃষ্টিতে ভিজতে বের হলাম"।
-- "আপনি কি পাগল টাগল আছেন নাকি"?
- "এই যে একটা ভুল কথা বললেন। পাগল কখনো নিজেকে পাগল বলে নাকি"?
-- "তাহলে বৃষ্টির কথা কেন বলছেন?  বৃষ্টি তো হচ্ছেনা"।
- "হচ্ছে। আপনি দেখছেন না। এটা সাধারণ বৃষ্টি না। সবাই এই বৃষ্টি দেখেনা। আমি বিবাগী। তাই এই বৃষ্টির নাম বিবাগীর বৃষ্টি।"
-- "আপনি কি বলছেন আমি আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছিনা"।
- "কেন? আমার প্রেমে পড়েছেন নাকি। মেয়েরা যাকে ভালোবাসে তার দিকে তাকিয়ে রোমাঞ্চিত হতে ভালোবাসে। কে কি বলছে তার কোন খেয়াল থাকেনা"।
-- "যেভাবে বলছেন তাতে মনে হচ্ছে কয়েক হাজার মেয়ের সাথে আপনি সংসার করে ফেলেছেন"।
- "না সংসার করিনি। করলে এতদিনে এইডস রোগী হয়ে কবরে গিয়ে ফেরেশতাদের পিটুনি খেতাম"।
-- "উফ, এত কথা যে কীভাবে বলেন"।
- "আমি বলছিনা তো। আপনি বলছেন বলেই তো আমি উত্তর দিচ্ছি"।
-- "ঠিক আছে। আর বলতে হবেনা। আপনি আপনার পথে যান। আমি আমার পথে যাচ্ছি। একদম পিছন পিছন আসবেন না। সুন্দরী মেয়ে দেখলেই পিছন পিছন আসতে হবে নাকি"।
- "আচ্ছা বলুন তো আমি বিয়ে করব কিনা"?
মেয়েটা এবার বিরক্ত হয়ে গেল। ওর বিরক্তি দেখে আমি ভীষণ মজা পাচ্ছি। হাহাহাহা.... কাউকে বিরক্ত করে মজা নেয়ার মজাই আলাদা। এই কাজে আমি খুব পারদর্শী। মেয়েটা একরাশ বিরক্তি নিয়ে বলল
-- "আমি আপনাকে কি বললাম আর আপনি কি বলছেন"?
- "আপনি যেভাবে ভবিষ্যৎ বলে দিচ্ছেন আমি আপনার পিছন পিছন যাব, সেজন্য জানতে চাইলাম আমার কপালে বিয়ে আছে কিনা"।
-- "না। আপনার সাথে কথা বলাটাই আমার অন্যায় হয়েছে"।
এই বলে মেয়েটা হাঁটা শুরু করল। চলে যাচ্ছে। শীতের সকালে কালো চাদর গায়ে একটা মেয়ে ক্যাট ওয়াকিং করে হেঁটে যাচ্ছে। একটু কল্পনা করে নিই। ঘন কুয়াশায় নির্জন রাস্তা দিয়ে একটা মেয়ে নূপুর পায়ে হাঁটছে। গায়ে কালো চাদর। নূপুরের ছন্দে একটা ঘোর তৈরী হচ্ছে। সেই ঘোরে বন্দী হচ্ছে আমার মত কিছু যুবক। আকর্ষিত হবার মত দৃশ্য। কিন্তু আমি হবনা। কারন আমি বিবাগী। আমি বললাম
- "এইযে নিপা ম্যাডাম, সাবধানে থাকবেন। বিবাগীর বৃষ্টির কয়েক ফোঁটা আপনার গায়েও পড়েছে"।
মেয়েটা আমার কথা শুনে থমকে দাঁড়াল। ভালো লেগেছে। তবে একটা জিনিস মিসিং। মেয়েটার পায়ে যদি নূপুর থাকত তাহলে থমকে দাঁড়ানোর সময় একটা ঝনঝন শব্দ হত। আহ, কি মধুর সেই ধ্বনি। একদম আমার মনের চালে ঝরে পড়া বৃষ্টির মত। যাকে বলে বিবাগীর বৃষ্টি। মেয়েটা ঘুরে দাঁড়িয়ে আমার দিকে এগিয়ে এল। মুখে বিস্ময় ভাব দেখা যাচ্ছে। মেয়েটা বলল
-- "আমার নাম নিপা এটা আপনি জানলেন কিভাবে"?
- "আমি আরো অনেক কিছু জানি"।
-- "কি কি জানেন"?
- "আপনি একরোখা জেদি মেয়ে। অনেক চুপচাপ থাকেন। প্রয়োজন না হলে তেমন কথা বলেন না। ভার্সিটিতেও খুব একা থাকেন। মেয়েরা আপনার সাথে মিশতে চায়না। ছেলেরা দিনের পর দিন প্রপোজ করেই যাচ্ছে। কারো প্রপোজই এক্সেপ্ট করেন নি। আপনি হাঁপিয়ে উঠেছেন। আপনি একা একা থাকতে থাকতে নিজেকে খুব নিঃসঙ্গ বানিয়ে ফেলেছেন। সেজন্য আপনি মনে প্রাণে খুব করে চান মাঝে মাঝে কেউ আপনাকে সঙ্গ দিক। কিন্তু আপনি তেমন কাউকে খুঁজে পাননি। কারন আপনি এ পর্যন্ত যাদের দেখেছেন তারা সবাই সুন্দরের পূজারি। আর হ্যাঁ, আরেকটা কথা। আপনার বাবা দিনকয়েক আগে মারা গেছেন। আর আপনি আরলি রাইজার নন। বাবা মারা যাবার পর থেকে আপনি আরলি রাইজার। এরকম আরো অনেক কথা আমি জানি"।
নিপা আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। সুন্দরী কোন মেয়ে হা করে তাকিয়ে থাকলে খুবই বেমানান লাগে। বুঝলাম না, আমি এমন কি বলেছি যার কারনে সে হা করে তাকিয়ে আছে। এটা তো সাধারণ জ্ঞান। তলিয়ে দেখলে যে কেউই বলতে পারবে। নিপা ঠান্ডা গলায় বলল
-- "আপনি এসব জানেন কীভাবে"?
- "শুনেছি, পৃথিবীটা গোল। এখানে নাকি একটা মানুষের সাথে একবার দেখা হলে সে মানুষটার সাথে বার বার দেখা হয়। যদি কোন দিন আবার দেখা হয় সেদিন বলব। আমি আজ যাই। আমার কাজ আছে। আর হ্যাঁ এবার থেকে পায়ে নূপুর পরে হাঁটবেন। আপনার হাঁটার শব্দে ছন্দ তৈরী হবে। সেই ছন্দ শুনে আপনি নিজেই বিমোহিত হয়ে যাবেন। মনে মনে ভাববেন, আহ আমি কি সুন্দর করে হাঁটতে পারি। এমন কোন মেয়ে আছে নাকি যে আমার মত হাঁটতে পারবে"।
কথাগুলোই বলেই আমি হাঁটা শুরু করলাম। নিপা বিভ্রান্ত অবস্থায় থাকুক। আমি পিছু ফিরে তাকাচ্ছিনা। তাকালেই তার লাল গাল আবার আমায় আকর্ষন করার চেষ্টা করবে। সুন্দরী মেয়েদের একটা অদ্ভুত ক্ষমতা আছে। লাল গাল দিয়ে আকর্ষণ করতে পারে হাজার পুরুষদের। আমি চাইনা এসব। আমি এখন বৃষ্টিতে প্রাণ খুলে ভিজব। আমার বৃষ্টি। বিবাগীর বৃষ্টি। কারো কোন ভাগ নেই। একান্তই আমার।
.
ভাগ্যটা ভালো মনে হচ্ছে। সকাল বেলায় একটা গোল্ড লিফ যে বিনামূল্যে পায় তার ভাগ্যটা নিশ্চয় ভালো হবে। গোল্ড লিফ তো আর এই সেই সিগারেট না। একটু খেলেই মাথায় ধরে। একেবারে গরম। খালি গায়ে এতক্ষণ হেঁটেছি। ঠান্ডা লেগেছে তবে সেটা আমার সহনীয়। মইনুল ভাইয়ের কাছে আসতেই উনি একটা গোল্ড লিফ এগিয়ে দিলেন। আরাম করে বসে সিগারেটে টান দিচ্ছি। মইনুল ভাই আমার খুব আন্তরিক মানুষ। আমায় খুব পছন্দ করেন। তিনি বলেন আমার চালচলন নাকি একটু অদ্ভুত টাইপের। অবশ্য মানুষ হিসেবে মইনুল ভাই আমার চেয়েও বেশি অদ্ভুত। মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। হার্টের রোগী। দুবার অলরেডি স্ট্রোক করে ফেলেছেন। মরতে মরতে বেঁচে গিয়েছেন। আমি আর মইনুল ভাই খাটের উপরে বসে আছি। তিনি বললেন
-- "কিরে আজকাল তোকে দেখা যায়না কেন"?
- "কি যে বলেন ভাই, আমি কি অদৃশ্য নাকি? এইতো দিব্যি আপনার সামনে বসে আছি"।
-- "তোকে যে শার্টটা দিয়েছিলাম সেটা কি করেছিস? এই শীতে খালি গায়ে কেন"?
- "রাস্তা দিয়ে আসার সময় দেখলাম একটা লেজকাটা কুকুর ভয়ংকর শীতে থরথর করে কাঁপছে। দেখে খুবই খারাপ লাগল। শার্টটা ওকেই পরিয়ে দিলাম"।
মইনুল ভাই আমার দিকে অপ্রসন্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। এই ভাবে তাকিয়ে থাকার মানেটা আমি বের করতে পারলাম না। আচ্ছা, উনি কি ভাবছেন? আমি কাজটা কি ভালো করেছি? উনার চাহনিতে ভালো মন্দ কিছুই বুঝলাম না। তিনি আমায় বললেন
-- "আমার এত শখের শার্ট তুই একটা কুকুরকে দিয়ে দিলি"?
- "ভাই, আমরা মানুষ। আমাদের এবেলা ওবেলা করে চলে যাবে। একটা শার্ট যদি দিতে পারেন তাহলে আরেকটা শার্ট অবশ্যই আপনি আমায় দিতে পারবেন। কিন্তু কুকুরটার কে আছে? ওরা পশু বলেই কি ওদের পশুর মত জীবন কাটাতে হবে? কোন একদিন হয়ত এই কুকুরটাই আমার উপকার করবে"।
-- "তোর যা মনে হয় তাই কর। ঐ যে আলনায় ঝুলছে ঐ কালো শার্টটা গায়ে দে"।
- "এখন না, আরো পরে গায়ে দিব। শীতটাকে একটু উপভোগ করি। যদি শীতই না লাগে তাহলে পৌষ আর মাঘ মাস খুব রাগ করবে। তারা নিজেরাই হয়ত বলবে, এই চান্দু মনে রাইখো, এক মাঘে শীত যায়না"।
মইনুল ভাই একটু শব্দ করে হাসলেন। খুবই সুন্দর লাগল আমার কাছে। মৃত্যুর দুয়ার থেকে দুবার ফিরে এসে উনি হাসাহাসি একদমই বন্ধ করে দিয়েছেন। মাঝে মাঝে আমার সাথেই হাসেন। আমি নাকি উদ্ভট কথা বলি। কিন্তু কই, আমি তো সাধারণ কথাই বলি। কে জানে, মানুষ বড়ই বিচিত্র প্রাণী। একটা মানুষের প্রতি একেক জনের একেক রকম ধারণা। ধুর, আমিওবা এসব ভাবছি কেন? মইনুল ভাই আমায় ডেকেছে। নিশ্চয় কোন না কোন কারন আছে। কারনটা জানতে হবে। আমি বললাম
- "তো ভাই, এখন আছেন কেমন"?
-- "আল্লাহ যেমন রেখেছে তেমন আছি"।
- "আমায় বোধ হয় কিছু বলবেন আপনি"।
-- "তোর নাকি অনেক ক্ষমতা। দেখি বলতো আমি তোকে কিজন্যে ডেকেছি"?
- "মইনুল ভাই, আমার কোন ক্ষমতা নেই। বাদ দিন। এখন আমায় নিয়ে কোথায় যাবেন সেটা বলুন"?
মইনুল ভাই আমার দিকে তাকালেন। একটু আনমনা হলেন। কয়েক মুহূর্ত পর তিনি হেসে উঠলেন। বললেন
-- "তুই কীভাবে বুঝলি আমি তোকে নিয়ে কোথাও বের হব"?
- "আপনার আলনায় মাত্র একটা শার্ট দেখলাম। আর কিছু অতি পুরনো প্যান্ট আর গেঞ্জি। এগুলো আপনি পরেন না। টেবিলের উপরে একটা ফোলা ব্যাগ দেখছি। আর আপনার যে দুইজোড়া জুতা আছে সেগুলো দেখছি ফকফকা পরিষ্কার। তার মানে আপনি কোথাও যাবেন। যে শার্ট প্যান্ট আপনি পরেন সেগুলো আপনি ব্যাগভর্তি করে রেখেছেন। শুধু কালো শার্টটা রেখেছেন আমার জন্য। আর আপনি সচরাচর ঐ মেটে কালারের চামড়ার জুতাগুলো পায়ে দেন। ব্রাউন কালারের জুতাজোড়া আপনি ব্যবহার করেন না। তারপরেও সেগুলো ঝকঝকে পরিষ্কার। তার মানে এই জুতাজোড়া ব্যবহার হবে। আর আমাকে যেহেতু আপনি ডেকেছেন সেজন্য হয়ত আমিই ব্যবহার করব। সেজন্যেই বুঝলাম আপনি আমাকে নিয়ে কোথাও যাবেন"।
মইনুল ভাই এবার উচ্চস্বরে হেসে উঠলেন। এই হাসিটা একটু ভিন্ন রকম। আমরা কারো কথাকে অগ্রাহ্য বা উড়িয়ে ফেলার জন্য যে হাসিটা হাসি এই হাসিটা সেরকম। তার মানে কি মইনুল ভাই আমার কথা উড়য়ে দিচ্ছেন। এটা নিশ্চয়ই আমাকে অপমান করার জন্য। আমি কিছু বললাম না। মানুষটা আমায় অনেক স্নেহ করে। সেদিক থেকে একটু অপমান করার অধিকারও উনার আছে। করুক, তাতে কি। কথায় বলে, পেটে খেলে পিঠে সয়। মইনুল ভাই বললেন
-- "হাহাহাহা....আন্দাজে ঢিল মারাটা তোর অভ্যাস হয়ে গেছে। বাইরের মানুষের সাথে এমন করিস না। নইলে তোর কপালে দুঃখ আছে"।
আমি কিছু বললাম না। একটু মন খারাপ হল আমার। আমার অনুমানটা ভুল হয়ে গেল। কিছু কিছু ব্যাপার কাকতালীয় ভাবে মিলে যায়। এবার মিলল না। আমি বিরস মুখে বললাম
- "তাহলে কেন ডেকেছেন বলুন"?
-- "তোর ভাবীর ছোট বোনের বিয়ে। বিয়ের মার্কেটিং করার সব দায়িত্ব পড়েছে আমার উপর। আমি তো আর পারবনা। এগুলো তুই করে দে। শাড়ী, পেটিকোট , ব্লাউজ আরো কি কি যেন আছে মেয়েদের এসব বিষয় আমি জানিনা। তুই গিয়ে মার্কেট থেকে কিনে আয়। তোকে সেজন্য ডেকেছি"।
আমি মইনুল ভাইয়ের কথা শুনে একটু মৃদু হাসলাম। উনি পুরো মুখে একটা লুকায়িত হাসি রেখে আমাকে কথাগুলো বলেছেন। বলার সময় চোখের পলক বারবার ফেলেছেন। আমার ধারণা মানুষ মিথ্যে কথা বলার সময় চোখের পলক বেশি ফেলে। এই রে, আবার আরেকটা আন্দাজি কথা  ভাবলাম। ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে হবে। ভাবলে হবেনা, পরীক্ষা করে দেখতে হবে। কাউকে ইচ্ছামত মিথ্যা কথা বলে দেখব আমার চোখের পলক বেশি পড়ে কিনা। যদি পড়ে তাহলে আমার থিওরি সফল। আপাতত এই চিন্তা এখানেই স্থগিত করলাম। তবে মইনুল ভাইয়ের চোখের দ্রুত পলক আর হাসিমুখ দেখে আমার মনে হল উনি মিথ্যে বলছেন। এটা আমার মন। আমি যা ইচ্ছা তাই মনে করব। এতে কার কি আসে যায় সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। আমি কাউকে কেয়ার করিনা। কারন আমি বিবাগী। আমি আমার মত। আমি শক্ত কন্ঠে সমস্ত বিশ্বাস নিয়ে বললাম
- "মইনুল ভাই, সবার সাথে মিথ্যে কথা বলে পার পেয়ে গেলেও এই বিবাগীর সাথে পাবেন না। একটা মেয়ের বিয়ের মার্কেটিং করার দায়িত্ব আপনার উপর পড়বে এটা একটা পাগলও বিশ্বাস করবেনা। মেয়েরা সাধারণত শপিং এ গেলেই নিজে গিয়ে পছন্দ করে কিনে। আর এত বড় একটা বিয়ের শপিং মেয়েরা না করে আপনার হাতে দিবে? এ যে বিশ্বাসের অযোগ্য। বিশ্বাসযোগ্য কিছু বলেন"।
দমকা বাতাস এলেই যেমন জ্বলন্ত প্রদীপ দপ করে নিভে যায় ঠিক তেমনি মইনুল ভাইয়ের মুখটাও অন্ধকার হয়ে গেল। হয়ত উনার মিথ্যে ধরা পড়েছে তাই। উনি যে কথাটা বলেছে সেটা শুনলে যে কেউই এটাকে অস্বীকার করবে। মইনুল ভাই আমার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষন চুপ করে রইলেন। আস্তে আস্তে উনার মুখ থেকে সব অন্ধকার সরে গিয়ে একটা মিষ্টি হাসি ফুটে উঠল। তিনি  বললেন
-- "তোকে নিয়ে আর পারা গেল না। তুই আসলেই একটা জিনিস রে ভাই"।
- "তো আর কি, নিউমার্কেটে আমায় নিলামে তুলে দেন। দেখি আমার সর্বোচ্চ মূল্য কত পড়ে"।
-- "তোর কি আর মুল্য আছেরে"?
- "কেন, আমি কি একেবারেই অমূল্য নাকি"?
-- "হ্যা তুই একেবারেই অমূল্য"।
- "মইনুল ভাই, এরকম করলে কিন্তু আমি আর আসবনা"।
-- "আরে আমার পুরো কথাটা শোন"।
- "হ্যা বলেন"।
-- "তুই একেবারেই একটা অমূল্য রতন"।
কথাটা বলে মইনুল ভাই আমার পিঠ চাপড়ে দিলেন। আমি একটু হাসলাম। একটা অদ্ভুত বিষয় খেয়াল করলাম। কোন মানুষকে অমূল্য বললে তখন তার খুব খারাপ লাগে। আর যদি বলে অমূল্য রতন তখন যতটা খারাপ লাগে তার চেয়ে হাজার গুণ বেশি ভাল লাগে। 'রতন' শব্দটা ছাড়া 'অমূল্য' শব্দটা আসলেই খুব অমূল্য। ঠিক যেমনটা নূপুর ছাড়া নিপার পা অমূল্য। উফ, ভালোই তো অমূল্য আর রতনে ডুবে ছিলাম। নিপার ভাবনা মাথায় কেন এলো? এটা তো ভালো লক্ষণ না। এ ভাবনাটা বিবাগীর বৈশিষ্ট্যকে ছেদ করতে চাচ্ছে। ভাবনাটা তাড়াতাড়ি মাথা থেকে সরাতে হবে। আমি বললাম
- "আচ্ছা মইনুল ভাই, এখন বলেন আমায় কেন ডেকেছেন। সত্যিটা বলেন"।
-- "তোকে কি আর সত্যি বলব আমি? তুই তো প্রথমেই ধরে ফেললি"।
- "তার মানে আমার ধারণা সঠিক"?
-- "হ্যা, সঠিক"।
- "তো, আমরা কোথায় যাচ্ছি তাহলে"?
-- "আমার শ্বশুরবাড়ি। তোর ভাবি তার বাপের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছে। তাকে আনতে হবে"।
- "এটা তো আপনিও করতে পারতেন। আমায় যেতে হবে কেন"?
-- "আমার শ্বশুরবাড়িতে কয়েকদিন ধরেই কিছু উড়ো চিঠি আসছে। তাতে নাকি কিছু অগ্রিম কথা লিখা থাকে। তোর ভাবির ধারনা এটা কোন ডাকাতের কাজ। কিছু কিছু দুঃসাহসী ডাকাত আছে যারা আগে থেকে খবর জানিয়ে আসে। তুই গিয়ে ব্যাপারটা একটু দেখবি"।
আমি আর কি বলব। যা শুনলাম তাতেই রোমাঞ্চিত হয়ে গেলাম। অষ্টম শ্রেণীতে থাকতে লাইব্রেরীতে একটা বই পড়েছিলাম। জনাব এখলাস উদ্দীন আহমেদ এর ডাকাতের মুখোমুখি বইটা। সে বইটাতে সিধু নামে এক ডাকাত আছে। সে আগামবার্তা দিয়ে গ্রামের মোড়ল মশাইয়ের বাড়িতে ডাকাতি করে। আগামবার্তা পেয়ে মোড়ল মশাই তার পুরো বাড়ি অনেক পাহারায় রাখে। অনেক লোকজন পাহারায় নিয়োজিত করে। কেউ কোন ডাকাত বা সন্দেহমূলক কাউকে দেখেনি। মোড়ল মশাইয়ের ঘরে একটা তরবারি ছিল। সেই তরবারিতে ছোট একটা বিশেষ পাথর ছিল। সেই পাথরটা অন্ধকারেও হীরের মত জ্বলত। সারা রাত ধরে মোড়ল মশাই ঘরের সবাইকে নিয়ে বৈঠক খানায় বসে ছিলেন। ঘরের ছোট বাচ্চাদের অন্যান্য বাড়িতে রাখেন। মোড়ল মশাই প্রায় শেষ রাতে নিজের ঘরে যান। গিয়ে দেখেন ঘরের সবকিছু ঠিক আছে কিন্তু তরবারিতে সেই পাথরটা নেই। তিনি ভেবেছেন হয়ত বাড়ির ছোট বাচ্চারা সেটা চুরি করেছে। কিন্তু সকাল বেলায় মোড়ল মশাই তার ভাগ্নে তপুর বন্ধু বিশুর মুখে শুনেছে, বিশুর সাথে মধ্যরাতে সিধু ডাকাতের দেখা হয়েছিল। সে বিশুর হাতে পাথরটা দিয়ে বলেছিল, পাথরটা মোড়ল মশাইয়ের হাতে দিতে। যাতে তিনি বুঝতে পারেন সিধু ডাকাত কাউকে ভয় পায়না। যেটা বলে সেটাই করে। মোড়ল মশাই প্রচন্ড অবাক হয়ে বিশুর হাত থেকে পাথরটা নিলেন। সিধু ডাকাত তার সামান্য একটা ট্রাম্প কার্ড দিয়ে মোড়ল মশাইয়ের গোলাম খেয়ে ফেলল। বিশু সিধু ডাকাতের কাছে জানতে চেয়েছিল, এত লোক পাহারায় থাকতেও সে কিভাবে মোড়ল মশাইয়ের ঘরে ঢুকেছে। সিধু বিশুকে বলেছিল.........
-- "কিরে চুপ হয়ে গেলি যে? কিছু বল"।
মইনুল ভাইয়ের কথা শুনে আমি একটু চমকে উঠলাম। সিধু ডাকাতের কথা মনে পড়ায় বইটার পুরো কাহিনী মাথায় চলে এল। আসলে অনেক আগে পড়েছি। এখনো মনে আছে আমার। সম্ভবত একটু আধটু ব্যাপার ভুলে গেছি। আমি বললাম
- "ঠিক আছে, যাব। কখন যাবেন আপনি"?
-- "বিকেলে গেলেও চলবে। আমার শ্বশুরবাড়িতো কাছেই"।
- "তাহলে বিকেল পর্যন্ত কোথাও থেকে ঘুরে আসি আমি"।
-- "ঠিক আছে যা। দুপুরে চলে আসিস। অনেক দিন তোর সাথে একসাথে বসে খাইনা"।
- "ঠিক আছে। চলে আসব"।
.
আমি এখন বুড়িগঙ্গার তীরে তিনঘন্টা যাবত বসে আছি। সূর্য্যের তাপে শীতের অনুভূতি অনেকটাই কেটে গেল। সে তাপে এক ধরনের আরাম অনুভব করলাম। মইনুল ভাই থেকে তিরিশ টাকা নিয়ে এক প্যাকেট ডার্বি সিগারেট কিনলাম। তিনঘণ্টায় এই প্যাকেট শেষ হয়ে যাবার কথা। কিন্তু আমি লম্বা সময় ব্যবধান রেখে একটা একটা করে খেয়েছি। আমরা মানুষরা অনেক কথা ভুল জেনেও ভুলটাই বলি। সঠিকটা বলিনা। আমরা সবাই জানি সিগারেট খাওয়া যায় না। সিগারেট পান করা যায়। একথা কয়জনই আর বলে? এই তিনঘণ্টায় ছয়টা সিগারেট খেলাম। আধা ঘন্টা পরপর একটা খেয়েছি। বাকি আছে চারটা। আমি সাত নাম্বার সিগারেটটা ধরালাম। আর সাথে সাথে আমার পুরো শরীরে অদ্ভুত এক শিহরণ খেলে গেল। বুঝতে পারলাম আমার বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এই বৃষ্টি হঠাৎ হঠাৎ আসে। আবার হঠাৎ করেই চলে যায়। আমার কাছে এটা একটা ঘোর। যতক্ষন এই ঘোরে আমি থাকি ততক্ষণ আমি কেমন যেন অন্যরকম হয়ে যাই। তখন আর এই দুনিয়ার কোন কিছুই আমার ভালো লাগেনা। এখন আবার এই বৃষ্টিটা শুরু হল। এই বৃষ্টি আমার চিন্তাধারা সব বদলে দেয়। এই যে আমি এখন দেখতে পাচ্ছি আমাকে। আমার সামনে আরেকটা আমি বসে আছি। প্রথম বারের মত আমি আমার দ্বিতীয় সত্তাকে দেখতে পেলাম। আশ্চর্য, আমার মুখ চুলদাড়িতে সব দেবদাস হয়ে গেলেও আমার সামনে যে বসে আছে তার মুখ পুরো পরিষ্কার। সে আমাকে বলল
-- "তুই নিজেকে বিবাগী সাজিয়ে ঘুরছিস। এটাই কি তোর জীবন"?
- "হ্যা, এটাই আমার জীবন"।
-- "দেখ, এসব বাদ দে। এখনো সময় আছে। স্বাভাবিক মানুষের মত একটা ভালো জীবন যাপন কর"।
- "শোন, আমাকে উপদেশ দিতে আসিস না। পৃথিবীর সব মানুষই যদি সাধারণ জীবন যাপন করে তাহলে অসাধারণ জীবন কার জন্য"?
-- "দেখ, অর্থহীন কোন কথা বলবিনা। তুই নিজেও শেষ হবি। আমাকেও শেষ করবি"।
- "তাহলে আমার সাথে পড়ে আছিস কেন? চলে যা"।
-- "যেতে পারলে চলেই যেতাম। তোকে ছেড়ে দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব না"।
- "কেন সম্ভব না"?
-- "সৃষ্টিকর্তার হুকুম ছাড়া আমি তোকে ছাড়তে পারব না"।
- "ঠিক আছে। আমি সৃষ্টিকর্তাকে বলে দিব। যাতে তোকে আমার কাছ থেকে ছাড়িয়ে নেয়"।
-- "সৃষ্টিকর্তা তোর মত পাপীর কথা জীবনেও শুনবেনা"।
- "এই যা তো। তোর সাথে কথা বলতে আমার ভালো লাগছেনা। আমাকে একটু ভিজতে দে"।
কখন যে সিগারেটটা শেষ হয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না। আগুনটা আমার হাতে তীব্র ছোঁয়া দেয়ার পরেই আমার সমস্ত অনুভূতি ফিরে এল। আমি শেষ হওয়া সিগারেট ফেলে দিলাম। আরেকটা ধরালাম। আমি বুড়িগঙ্গার দিকে  ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছি। আমার বৃষ্টির দাপট অনেক বেড়েছে। খুব বেশি বেড়েছে। আকাশ অন্ধকার। আমি বুড়িগঙ্গায় একটা নৌকার গলুইয়ে বসে আছি। আমার হাতে কোন বৈঠা নেই। আমার মত গন্তব্যহীন বিবাগীর জন্য এর চেয়ে উপযুক্ত জিনিস আর কি হতে পারে। একটা বৈঠাবিহীন নৌকা। নৌকাটা ঢেউয়ের তালে তালে দুলছে। বৃষ্টিতে আমি পুরোপুরি ভিজে গেছি। মনে হচ্ছে সমস্ত বৃষ্টির ফোঁটা আমার গায়ে পড়ছে। হঠাৎই দেখলাম মাঝনদী থেকে নৌকাটা তীরের দিকে এগিয়ে চলছে। আমি অবাক হয়ে গেলাম। বৈঠা ছাড়া নৌকা কিভাবে চলছে? পাশে তাকিয়ে দেখি আমার পাশে নিপা বসে আছে। আমার বৃষ্টির কয়েক ফোঁটা তার গায়েও পড়ছে। সে সেই স্বল্প কয়েক ফোটায় ভিজছে আর বৈঠা দিয়ে নৌকাটা তীরের দিকে এগিয়ে নিচ্ছে। নিপা আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিল। ফর্সা গালে লাল আভাটা এখন নেই। বৃষ্টির ফোঁটায় হালকা গোলাপি হয়ে গেছে। এ যে এক অপরূপ সুন্দরী এক রমণী। নিপা তার চোখ দিয়ে আমায় তার দিকে তাকিয়ে রেখেছে। আমি তার চোখের কালো তারার দিকে তাকিয়ে আছি। সে আমায় ডাকছে। আচ্ছা, আমি কি তার ডাকে সাড়া দেব? না, এভাবে নিপার দিকে তাকিয়ে থাকা চলবেনা। নইলে তার চোখ আমায় সম্মোহন করে ফেলবে। আমি চোখ সরিয়ে নিলাম। হঠাৎ করেই আমি চমকে উঠলাম। দেখলাম কোন বৃষ্টি নেই, কোন নৌকা নেই। আমার পাশে কেউ নেই। আমি বুড়িগঙ্গার তীরে সিগারেট মুখে বসে আছি। আমি নিজের প্রতি নিজেই বিরক্ত হয়ে গেলাম। ধুত্তোরি, সকাল থেকেই কোন কিছু চিন্তা করলেই সে চিন্তায় নিপা কোন না কোন ভাবে ঢুকে যায়। আমি ওকে আর ভাবতে চাইনা। আমি বিবাগী। কাউকে ভাবার জন্য আমার এত সময় নেই। সিগারেট মুখে নিয়ে উঠে পড়লাম। মইনুল ভাইয়ের বাসায় ফিরতে হবে। দুপুরে উনার সাথে খাওয়া সেরে বিকালে উনার শ্বশুরবাড়িতে যাব। আমি সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে এলো চুলে হাত বুলিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম।
.
(চলবে)
.
.
লেখক :- বিবাগী শাকিল

āĻ•োāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāχ:

āĻāĻ•āϟি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āϟ āĻ•āϰুāύ