পরিধিহীন বৃত্ত ও আত্মার আর্তনাদ
পর্ব নং :- {৩/৩} [শেষ পর্ব]
লেখক :- বিবাগী শাকিল
==================================
.
আমি সবাইকে আবার গোল করে বসালাম। একটা সিগারেট জ্বালিয়ে আনমনে টানলাম। কারন আমি সিগারেট খাওয়ার সময় কম কথা বলি। সিগারেটটা ফেলে দিয়ে মুকুলের দিকে তাকালাম। বললাম
- মুকুল, তোর মনে আছে স্কুলের লাইব্রেরীতে তোকে একটা বই পড়তে বলেছিলাম।
-- অনেক গুলো বই পড়তে বলেছিলি। তার মধ্যে কোন বইটার কথা বলছিস?
- মধুদার ক্যান্টিন। লেখক মনজুর মোরশেদ।
কথাটা শুনে মুকুল চমকে যায়। কারন সে বইটাই প্রথম বই যেটা মুকুলের চোখ থেকে পানি বের করেছিল। বাকি বন্ধুরা বইটা পড়েনি তাই কিছু না বুঝে চুপ করে ছিল। মুকুল টেনশনে পড়ে গিয়ে বলল
-- দোস্ত.. কি হয়েছে সোজা ক্লিয়ার করে বল। খুব টেনশন হচ্ছে।
আমি চুপ করে রইলাম। মুকুল আবার বলল
-- দোস্ত কি হইছে বল?
আমি আমতা আমতা করে বললাম
- I have been suffering from cancer since four month...
বন্ধুরা সবাই চমকে গিয়ে নিস্তব্ধ হয়ে গেল। কারো মুখ থেকে কোন কথা বের হচ্ছেনা। একটু আগের উল্লাস, গালি, কিল কিছুই নেই এখন। এক নিমিষেই সব উধাও হয়ে গেছে। ফরহাদ বলল
-- কি বললি তুই? আবার বল।
- হ্যা দোস্ত এটা সত্যি। চট্টগ্রাম থাকা অবস্থায় রোগটা ধরা পড়ে। আর এই রোগের কারন অতিরিক্ত ধুমপান। তোদেরকে সাবধান করে দিচ্ছি সিগারেট খাওয়া কমিয়ে ফেল। পারলে ছেড়ে দে। রাশেদ বলল
-- আমি তোরে আগেই বলছিলাম যে এত সিগারেট কেন খাস। তুই বেশিদিন বাঁচবিনা। কথাতো কানেই তুলছ না।
মুকুল বলল
-- কথাটা মিথ্যে হলে অনেক খুশি হতাম। জীবনের সবথেকে খুশি আজ হতাম।
নাহিদ বলল
-- দোস্ত এটা হতে পারেনা।
হাসান বলল
-- দোস্ত তুই আমাদের সাথে মজা করছিস। রাইট?
রায়হান বলল
-- দেখ শাকিল এসব বিষয় নিয়ে মজা করবিনা।
জাহিদ বলল
-- ফালতু কথা বলার জায়গা পাস না। মেজাজ খারাপ করিস না।
রনি বলল
-- ঐ বেটা ঐ.. যদি তুই মজা করছিস তো তোর একদিন কি আমাদের একদিন।
শুভ বলল
-- তোরে মারা ছাড়া আর কোন উপায় নাই। এরকম সিরিয়াস ব্যাপার নিয়ে কেউ মজা করে।
টিপু বলল
-- দেখ ভাগিনা,, মজা না করে সত্যিটা বল।
করিম বলল
-- শাকিল এরকম করিস না। খারাপ লাগে তো।
রবিন বলল
-- দোস্ত প্লিজ... এখন এরকম করিস না।
আমি ওদের কথা শুনে কেঁদে ফেললাম। যে বন্ধুরা একটু আগেই আমায় ঝাপটে ধরে মারছিল তারা কি করে কয়েক মিনিটের ব্যবধানে এতটা বদলে গেল। খুব কান্না পেয়েছিল আমার। চোখে ঝাপসা দেখতে শুরু করলাম। একটু আগে ওরা আমাকে হাজার গালি দিয়েছিল এখন শুধু একটা বাক্যেই তারা অস্থির হয়ে পড়েছে। কিন্তু কি আর করব। রবি ঠাকুরের একটা কথা আছে।
""" মন রে আজ কহ যে
ভালো মন্দ যাই হোক, সত্য মানো সহজে"""।
যেটা সত্য সেটা ভালো হোক বা মন্দ হোক সেটাই সহজে মেনে নিতে হবে। সবার মুখ এক নিমিষে গম্ভীর হয়ে গেল। এতক্ষণের উদ্দীপনা, চাঞ্চল্যতা কিছুই নেই। শুধু তেরটা নাক দিয়ে পড়ছে তেরটা বড় দীর্ঘশ্বাস। একেবারে আনলাকি থার্টিন। আমরা সবাই যেন তখন বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু আমি পরিবেশটাকে গম্ভীর করিনি। আবার হালকা করে ফেলেছিলাম প্রায়ই। কিন্তু চেষ্টা নিস্ফল হল। আমি জানি এই মুহুর্তে আমি কি করলে ওরা আবার হাসবে। বন্ধু মহলে গালি ছাড়া তো কোন কথাই থাকেনা। ব্যস... ওটাকেই হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিলাম। সবার মুখ গম্ভীর দেখে আমি ওদেরকে হাসানোর জন্য এক নি:শ্বাসে বলি
- ঐ হারামজাদা, বা*****, মাতারী, কুত্তা, আবুইল্লা, ******* জামাই তোদের কি বউ মরছে নাকি? সবাই চুপ হয়ে আছিস কেন? আরে শোন সেদিন জিনিয়াকে দেখেছিলাম। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। আমি ওরে কি বলছি জানোস। বলছি ওর জন্য আমার কোন সময় নাই। ওর মত মাইয়া আমি...
.
আর বলতে পারলাম না। হারামী বন্ধুরা বলতে দিলনা। একসাথে সবাই আমাকে জড়িয়ে ধরে ফেলল। কিভাবে যেন তারাও বুঝে গেল যে এটা আমার অভিনয় ছিল। খুব কষ্ট হচ্ছিল তখন আমার। কাউকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করেনি। বিশেষ করে এই হারামীদের কে তো ছাড়া অসম্ভব। এক মুহুর্তের জন্য আমার মনে হল যে আমার কিছুই হয়নি। এতজন হারামী থাকতে আমার কিছু হতে পারেনা। কিন্তু বাস্তব থেকে পিছন ফিরে তাকালে সেটা মিথ্যে হয়ে যায়না। আর আমিও এই সত্যটাকে কি করে অস্বীকার করব। কাউকে ছাড়তে ইচ্ছে করেনি। স্কুলটার দিকে তাকালাম। ক্লাস সিক্সের রুমটা যেন আমাদের সবাইকে ডাকছে। যেন বলছে আমরা যেন আবার চৌদ্দটা হাইবেঞ্চ একত্রিত করে চৌদ্দজন একসাথে শুই। কিন্তু আমি সে ডাক শুনিনি। আমি কারো ডাক শুনিনি। কোন মায়াজাল আমাকে আটকাতে পারেনি। মায়ের ভালোবাসা, বাবার স্নেহ, বন্ধুদের গালাগালি, নিপুর প্রেম আমায় আটকাতে পারেনি। কারন প্রায় একমাস পর আল্লাহ যে আমায় ডাক দিয়েছে। তার ডাক পেলে সাড়া দিতেই হবে। পালিয়ে বাঁচার কোন সুযোগ নেই। জীবনটা এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে ভাবিনি। কিন্তু বাধ্য হয়ে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিলাম। আমি সবার কথা শুনেছি। সবার চোখের পানি দেখেছি। কতবার বলেছিলাম হারামীদেরকে যে তোরা কাঁদিস না। কিন্তু ওরা শোনেনি। ওদেরও কোন দোষ নেই। আল্লাহর সৃষ্টি এই নিয়তি। মৃত মানুষ সব কিছু দেখবে, শুনবে, বুঝবে কিন্তু কিছু বলতেও পারবেনা নড়তেও পারবেনা। আর আমার এই অক্ষমতার কারনেই তারা শুনতে পায়নি। আমায় কাঁধে করে নিয়ে যাচ্ছিল। আমার কবরটা মুকুল আর হাসানই কুঁড়েছিল। বাকিরা বাঁশ আর কলাপাতা, খেজুরের ডাল যোগাড় করেছিল। আমার দেহটাকে কবরে নামিয়েছে মুকুল আর রাশেদ। মৃত মানুষ অনেক ভারী হয়। বন্ধুদের মধ্যে রাশেদ আর মুকুল ছিল অনেক শক্তিশালী। তাই তারাই নামিয়েছে। আমি দেখেছি তাদের। অনেক কথা বলেছি। কিন্তু তারা শুনতে পায়নি। পাবেওনা। বাঁশের টুকরো গুলো এক এক করে আমার কবরে পেতে দিল ওরা। তারপর কলাপাতা দিল। এবার মাটি দেয়াটা বাকি আছে। বন্ধুদের চোখে পানি। মুঠো মুঠো মাটি আমার উপর চাপা হচ্ছে। সাদা কাফনে মাটির কয়েকটা টুকরো পড়েছিল। মুছতে পারিনি। থাক, মোছারই বা দরকার কি। সবাই চলে যাচ্ছে। শুধু আমিই রয়ে গেছে। একা। খুব একা। খুব খুব খুব একা।
.
এখানে গুমোট অন্ধকার। কিছুই দেখা যায়না। কিন্তু অন্তরের চোখ দিয়ে সব দেখতে পাই। মাঝে মাঝে ঐ আকাশে উড়াল দিয়ে যাই। বন্ধুদের দেখতে থাকি। তারা মাঝে মাঝে বলে আমি নাকি চলে গিয়ে ফ্রেন্ড সার্কেল টাকে পরিধিহীন বৃত্ত বানিয়ে দিয়েছি। এতক্ষন যা যা বলেছি সবই ছিল আমার আত্মার আর্তনাদ। মাঝে মাঝে বন্ধুদের খুব কাছ থেকে দেখে আসি। তারা সবাই আমাকে এখনো মনে রেখেছে এতেই আমি খুশি। এখনো ফ্রেন্ড সার্কেলের সবার নামের সাথে আমার নাম লেখা হয়। তেরটা নাম অথচ বারোজন মানুষ। আর যে বাকি একটা, সেটা আমার আত্মা। কেউই দেখতে পায় না। কারন আত্মার আর্তনাদ কেউ শুনতে পায়না। ( সমাপ্ত)
.
āĻāϞ্āĻĒ āϏংāĻ্āϰāĻš āĻāϰা āĻāĻŽাāϰ āύেāĻļা। āϰোāĻŽাāύ্āĻিāĻ, āĻৌāϤিāĻ, āϰāĻŽ্āϝ, āĻৌāϤুāĻ āϏāĻš āĻšাāĻাāϰো āĻāϞ্āĻĒ āĻāĻে āĻāĻŽাāϰ āϏংāĻ্āϰāĻšে।
āϰāĻŦিāĻŦাāϰ, ⧍ā§Ē āϏেāĻĒ্āĻেāĻŽ্āĻŦāϰ, ⧍ā§Ļā§§ā§
2285 (3)
āĻāϰ āĻĻ্āĻŦাāϰা āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰা
Rahathossain1010100@gmail.com
āĻāĻ āϏāĻŽā§ে
⧧:⧧⧝ AM

āĻāϤে āϏāĻĻāϏ্āϝāϤা:
āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝāĻুāϞি āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ (Atom)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ