গল্পঃ- পিচ্চি বউ
লেখাঃ- WäHîdūl Ïslâm
.
#নবম_পর্বঃ- অনেকটা সময় একত্রে পাড় করেছি পাগলীটার সাথে, তাই জীবনটা রুটিন মাফিক হয়ে এসেছে।
সকালে মিথুর মিষ্টি কন্ঠে ঘুম ভাঙ্গে, নাস্তা করে অফিসে যাই, লাঞ্চ টাইমে সময় পেলে বাসায় আসি, নাহলে মিথু নিজে খাবার নিয়ে অফিসে চলে যায়। সারাদিন যুদ্ধ শেষে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত দেহ নিয়ে বাড়িতে ফিরতে হয়। কখনো ভাবতে পারি নি, মিথুর মত একটা মেয়ে, এত সংসারি হয়ে উঠবে, আম্মু তার হাতে সব কিছু বুঝিয়ে দিয়ে বিশ্রাম করছে। আর সেও একহাতে আম্মুর দেখাশুনো দেখে শুরু করে আমার খেয়াল রাখা, সকল কিছু একহাতে সামলাচ্ছে।আজকাল রান্না-বান্নার কাজটাও নিজে করতে শুরু করেছে। তাতে আমার অবস্থা কিছুটা বিপন্ন, কারণ আম্মাজান আমাকে ভুলে তার বউকে নিয়ে সব কিছু করছেন। যাক ভালোই হল, নিজের উপর এখন এতটা চাপ আসে না।
.
কিন্তু আব্বু বিশেষ একটা কাজে দেশের বাইরে যাওয়ায় একা সকল দিক দেখতে হচ্ছে। অফিসের বাইরে ফ্যাক্টরিগুলোতে বেশি সময় দিতে হচ্ছে, আজকে হুট করে অফিস থেকে বেড়িয়ে গেছি, আমার খেয়াল নেই মিথুকে ফোন দিয়ে বলে দিব আজকে আর বাসায় আসা হচ্ছে না, একদম মনে নেই। হাতে ফোন সব নিয়েছি এর মধ্যে মিথুর ফোন,
-হ্যালো
-হ্যাঁ বলো...
বলতে ভুলে গেছি, আজকাল বউ আমার, তুই বাদ দিয়ে তুমি ডাকতে শুরু করেছে। আমাকেও বাধ্য করে তাই করতে হচ্ছে।
-কোথায় আছ তুমি?
-একটু বাইরে এসেছি।
-লাঞ্চ করতে আসবে না?
-মনে হচ্ছে না। ফ্যাক্টরিতে এসেছি, তোমাকে ফোন দিব একদম খেয়াল ছিল না।
-ঠিক আছে
বলে রেখে দিল। রাগ করেছে পাগলীটা। আমি বাসায় না ফিরলে না খেয়ে বসে থাকবে। তাই শশব্যস্ত হয়ে সব কিছু শেষ করে বাসার উদ্দেশ্যে বের হলাম। রাস্তা থেকে একটা গোলাপ ফুল নিয়ে নিলাম। অনেকটা সময় পর বাসায় গিয়ে পৌঁছলাম। কলিং বেল দিতেই আম্মু দরজা খুলে দিল,
-কি রে বাবা, আজকে এত দেড়ি করলি কেন? মেয়েটা না খেয়ে বসে আছে।
-আসলে আম্মু, আমার একদম মনে ছিল না, আব্বু বাইরে যাওয়ায় অনেক বেশি চাপ পরছে আমার উপর।
-তাই বলে, আপন মানুষ গুলোর কথাও বেমালুম ভুলে যাবি?
-তুমি খেয়েছ?
-হ্যাঁ, মিথু আমাকে খাইয়ে দিয়ে রুমে গিয়ে বসে আছে।
-আচ্ছা আমি দেখছি।
.
ফুলটা পিছনে রেছে, রুমে গিয়ে দেখি মিথু শুয়ে আছে,
-মিথু
-এসছেন জনাব? না আসলে হত না?
কিছুটা অপরাধী ভঙ্গিতে বললাম,
-আসলে, জানই তো, কত দিক একা মানুষ সামাল দিতে হয়।
ফুলটা বের করে তার কাছে দিলাম,
-বাব্বাহ, ঘুষ দেওয়া শিখেছ?
-হা হা, শোন তাড়াতাড়ি টেবিলে খাবার দাও, আমি আসছি।
ফ্রেস হতে চলে গেলাম। রুম থেকে বেড়িয়ে সোজা ডাইনিং রুমে চললাম, মিথু টেবিলে অপেক্ষা করছে। চেয়ার টেনে বসে পরার সাথে সাথে খাবার তুলে দিল, খাওয়া শুরু করেছি,
-আচ্ছা, প্রতিদিন আমার জন্য বসে থাকতে হয়? আম্মুর সাথে খেয়ে নিলেই তো পার।
-কখনো কি এমনটা হয়েছে?
-হয়নি তবে, ব্যস্ততা বাড়ছে। আর অনিয়ম করলে তো অসুস্থ হয়ে পরবে।
-কিছু হবে না। শোন, তোমাকে আর আজকে অফিসে যেতে হবে না।
-সে কি? কেন? কত কাজ বাকি পরে আছে।
-আমি শ্বশুড় মশাইয়ের সাথে কথা বলেছি, সে তোমাকে আর আম্মু কে নিয়ে আমাদের বাড়িতে যেতে বলেছে। আর অনেকদিন তো আমাদের বাড়িতে যাওয়া হয় না, তাই একটু খারাপ লাগছে।
-আম্মুর সাথে কথা বলেছ?
-হ্যাঁ। সে রাজি। আর আব্বুও দেশের বাইরে থেকে সোজা আমাদের বাড়িতে চলে আসবে।
ভালোই হল, অনেকদিন মিথুকে সময় দিতে পারছি না। আর যান্ত্রিকতার ভিতর থাকতে থাকতে হাপিয়ে উঠেছি।
.
সেদিন রাতেই আম্মু আর মিথুকে নিয়ে মামা বাড়ি দুঃখিত শ্বশুড় বাড়িতে রওনা দিলাম। অনেকটা পথ, আর সারাদিনের ক্লান্তি, সব মিলিয়ে যদিও কিছুটা শোচনীয় অবস্থা। তারপরেও কিছু করার নেই। সারা রাতের গাড়ি জার্নির পর ভোরে পৌঁছে গেছি। কিন্তু গিয়ে মোটামুটি সাইজের ছ্যাকা খেলাম। পুরো বাড়ি সেই আমাদের বিয়ের দিনের মত সাজানো। মনে মনে ভাবতে লাগলাম, মিথুর কোনো বোন নেই। সেও আমার মত একা। তাই কারো বিয়ে হওয়ার প্রশ্নই আসে না। কিন্তু এভাবে সাজানোর মানে কি?
.
কলিং বেল টিপতেই শ্বশুড় শ্বাশুড়ি একত্রে দরজা খুলে দিল। তাদের হাসি মুখ দেখে কিছুটা সন্দেহ হচ্ছে,
-কেমন আছিস তোরা?
আমি কিছু বললাম না, মিথু জবাব দিল,
-ভালো। তোমরা?
-হ্যাঁ ভালো।
বলেই ভিতরে ঢুকে গেল। আমি সোজা মিথুর রুমে চলে গেলাম। কিছুক্ষণ পর সে ও রুমে চলে আসল।
-এই শোন
-হুম বল
-তোমার বাবা কি আবার বিয়ে শাদী করবে নাকি?
-যাহ্ শয়তান, কি বলছ এইসব?
-তাহলে বাড়ি সাজিয়েছে কেন?
-আমাদের বিয়ের পরে আগামী পরশু আমার প্রথম জন্মদিন। তাই সবাই একসাথে সেলিব্রেট করবে তাই।
-ওহ
.
সেড়েছে, আমি ভুলেই গিয়েছিলাম, মিথুর বার্থডে সামনে। কোনো এক অজানা কারণে আমি কারো জন্মদিন মনে রাখতে পারি না। এমন কি, নিজের ক্ষেত্রেও, কেউ যদি উইশ না করে তাহলে বলতে পারি না আজকে আমার জন্মদিন। পরলাম আরেক বিপদে। বিয়ের পরে তার প্রথম জন্মদিন, কিছু একটা না দিলে কেমন লাগে? হয়ত সে মুখ ফুটে কিছু চাইবে না, কিন্তু নিজের কাছে খারাপ লাগছে। আব্বুকে ফোন দিলাম,
-হ্যালো, আব্বু
-জ্বি বাবা, বল
-আপনি কি আজকেই ফিরবেন?
-হ্যাঁ, এইত কিছুক্ষণ পরেই ফ্লাইট। হোটেল থেকে বের হব।
-আসলে আব্বু, একটা সমস্যা পরেছে।
-কি হয়েছে বাবা, তোমার শরীর ঠিক আছে তো?
-আসলে সবই ঠিক আছে, কিন্তু আপনি তো মিথুদের বাড়িতে চলে আসতে বললেন, আমরা আম্মুকে নিয়ে চলেও এসেছি।আমি ভুলেই গিয়েছিলাম, মিথুর জন্মদিন। কিছু একটা না দিলে কেমন দেখায়?
-ঠিক আছে বাবা, তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। আমি ব্যবস্থা করছি।
-TanQ আব্বু
-Always welcome
বলে ফোন রেখে দিলাম। যাক, নিশ্চিন্ত হলাম। আসলে দুনিয়াতে বাবাগুলো কেন জানি না অনেক বেশি ভালো হয়। তারা জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত সন্তানের মাথার উপর বট বৃক্ষের মত ছায়া দিয়ে যায় নিঃসার্থ ভাবে। দুনিয়াতে হয়ত খারাপ পুরুষ থাকতে পারে। কিন্তু খারাপ একজন বাবা নেই..
.
সারা রাত গাড়ির জার্নি করে এসেছি, ভাবলাম একটু বিশ্রাম নিব, তা আর হচ্ছে কোথায়? বাড়ি ভর্তি মানুষজন, হৈ চৈ লেগেই আছে। তবে সব থেকে মজার ব্যাপার হচ্ছে, এদের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষকে আমি চিনি না। আম্মু ধরে ধরে একেক জনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে, আর আমি সুবোধ বালকের মত দেখে যাচ্ছি। মিথু এসেই তার দুঃসম্পর্কের এক বোনের বাবু নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরেছে। ব্যক্তিগত ভাবে বাচ্চাদের আমার খুবই ভালো লাগে। কিন্তু এই বাচ্চাটাকে কেন জানি না একটু বেশি ভালো লাগছে। তাই আমিও মিথুর সাথে বাবুটাকে নিয়ে ছাঁদে চলে গেলাম। হঠাৎ আকাশটা মেঘাচ্ছন্ন হতে শুরু করেছে। আমার কোল থেকে বাবুটাকে মিথুর কাছে দিয়ে ওর মায়ের কাছে রেখে আসতে বললাম। বৃষ্টির পানি গায়ে পরলে হয়ত ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে। মিথুও তাই করল। সে নিচে চলে গেল। আমি ছাঁদের কর্নারে রাখা দোলনায় একা বসে থাকলাম। মুষল্ধারে বৃষ্টি শুরু হল। তারপরেও বসে থাকলাম, মিথুও চলে আসল প্রায় সাথে সাথেই,
-এই, নিচে যাবে না? বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর আসবে তোমার!
-আসুক। অনেক দিন একসাথে ভেজা হয় না।
সে মৃদু হেসে আমার পাশে এসে বসে পরল,
-হয়ত উপরওয়ালা আজ খুব খুশি, তাই এত সুন্দর বৃষ্টি উপহার দিচ্ছেন
-হ্যাঁ। ঠিকই বলেছ
-হয়ত আরো কিছু উপহারও রয়ে গেছে।
-যেমন?
-সেটা না হয় কালকে জানতে পারবে।
জন্মদিন তার, অথচ উপহার আমার জন্য অদ্ভুত।
.
সকাল সকাল উঠে পরেছি আজ, চারিদিকে ব্যস্ততা। এক কাপ চা পর্যন্ত খাওয়া হয় নি, রুম থেকে বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েছি, এর মধ্যে আব্বুর সাথে দেখ,
-এই যে অভ্র, তোমাকেই খুঁজছিলাম
-কেন আব্বু?
-এই নাও, যেটার কথা বলেছিলে।
আমার হাতে প্যাকেটে মোড়ানো কি যেন একটা হাতে দিয়ে আব্বু চলে গেল। আবার রুমে ঢুকলাম। খুলে দেখি, মিথুর জন্য ডায়মন্ড রিং। বাহ, অসম্ভব রকম সুন্দর, বলতে দ্বিধা নেই, আমার থেকে আমার বাবার পছন্দ অনেক বেশি ভালো। মিথুর আজ সারাদিন দেখা নেই। আমিও খুব একটা চিন্তা করলাম না। অনেক দিন পর এসেছে বাবার বাড়িতে হয়ত সকলের সাথে আড্ডা দিচ্ছে। রুমে এসে আমিও রেডি হয়ে বের হলাম, তার দেখা মিলল সন্ধায় কিছুটা আগে, একেবারে পরীর মত লাগছে তাকে। নীল রঙ এর শাড়িতে তাকে অসম্ভব রকমের সুন্দর মনে হচ্ছে।দু’চোখের পাশের কাজল দেওয়াতে চোখের গভীরতা কয়েক হাজার গুণ বেড়ে গেছে। মনে হয় সে গভীরতা মাপতে গেলে আমি অতলে হারিয়ে যাব।
.
ডাক পড়ল তাই দুইজন একত্রে গেলাম, কেক কাটলাম, ফর্মালিটি শেষ করে, তার হাত ধরে, রিং টা পরিয়ে দিলাম। অনেক বেশি অবাক হয়েছে পাগলীটা। অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।মৃদু একটু হাসি দিলাম। হুট করে সে কানের কাছে মুখ এনে বলল,
-তোমার উপহার’টির শুনবে না?
- কি?
-তুমি বাবা হতে যাচ্ছ...
.
[চলবে...]
গল্পঃ- পিচ্চি বউ
লেখাঃ- WäHîdūl Ïslâm
.
#দশম_পর্বঃ- সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে রুমে ফিরলাম। খুশিতে আমার নাচতে ইচ্ছে করছে। জামা কাপড় চেঞ্জ করে বসেছি, এর মধ্য মিথু চলে এসেছে। তাকে ধরেই নাচতে শুরু করলাম,
-এই কি করছ? ছাড়!
-আজকে কোনো কথা হবে না?
-হা হা, বলে কি পাগলটা!
-হুম। এত বড় একটা সু-সংবাদ। জানো, আজকে আমার থেকে খুশি মনে হয় এই জগতে আর কেউ নেই।
-তাই নাকি জনাব?
কিছু একটা বলতে চেয়েছিলাম, এর মধ্যে তার দুঃসম্পর্কের ভাই এসে নিচে ডাকল। সবাই নাকি অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। চলে গেলাম। নানু, আম্মু আব্বু, শ্বশুড় শ্বাশুড়ি সহ আরো অনেকে বসে আছে। আমি মিথু কে বসিয়ে দিয়ে মাঝখানে গিয়ে দাঁড়ালাম, একটু ঝেড়ে কাশি দিয়ে শুরু করলাম,
-শোন, সবাই, তোমাদের সবার জন্য একটা শুভ সংবাদ আছে। আমি বাবা হতে যাচ্ছি।
বলে একটা বিজয়ের হাসি দিলাম। কিন্তু এ কি? কেউ কোনো পাত্তাই দিল না। শুধু নানু উঠে এসে আমার কান মলে দিয়ে বলল,
-এ খবর আমরা সবাই জানি। এখন মিষ্টি খাওয়ানোর কথা কি আমাকে বলে দিতে হবে?
মক্কেল বনে গেলাম। তার কথা মতে যা দাঁড়াল তা হচ্ছে, আমি বাদে সকলে এই খবর ভালো মত অবগত। মিথুর দিকে তাকিয়ে দেখি সে হাসছে। খুব দ্রুত করে মিষ্টি নিয়ে আসা হল, প্রথমে আম্মু উঠে এসে আমাকে মিষ্টি খাইয়ে দিল,
-দাদু হচ্ছি, বুঝেছিস? সেই খুশিতে...
তার পর এক এক করে সকলে আমাকে মিষ্টি খেরাপি দিয়ে গেল। বাড়িতে খুশির ধুম উঠেছে। তবে খুশির মাত্রাটা আমার থেকে কারো বেশি হবে না বাজি দিয়ে বলতে পারি।উচ্চ স্বরে গান বাজনা শুরু হয়েছে। একে তো মিথুর জন্ম দিন, তার উপর নতুন মেহমান আসছে। ব্যাপারটা অনেকটা আগুনে পেট্রল দেবার মত।
.
মিষ্টি খেরাপি হজম করে রাতে আর খাবার খেতে ইচ্ছে করছে না। তবুও মিথু খাবার নিয়ে সোজা রুমে এসেছে। শুয়ে ছিলাম, তার উপস্থিতি টের পেয়ে উঠে বসলাম, সেও আমার পাশে এসে বসল,
-না খেয়ে রুমে চলে আসলে কেন? মন খারাপ?
-বলে কি পাগলীটা, যে থেরাপি হজম করতে হয়েছে, খেতে ইচ্ছে করছে না।
-তা বললে তো চলবে না।
-তুমি খেয়েছ?
-উহু।
প্লেট টা আমি হাতে নিলাম। সব সময় তো সে আমার খেয়াল রেখেছে। এখন থেকে না হয় আমিই একটু করি। তাকে খাইয়ে দিতে শুরু করলাম,
-মিথু,
-হু
-জানো, এইদিন টার জন্য কত দিন অপেক্ষা করেছি?
-তাই?
-হ্যাঁ।
-আচ্ছা, তোমার কি চাই ছেলে না মেয়ে?
-তোমার মত মিষ্টি আর লক্ষ্মী একটা মেয়ে
-কিন্তু মেয়েদের নাকি বাবাদের মত হলে ভালো হয়।
-উহু। আমার মেয়েকে আমি তার মায়ের মত শান্ত আর ধৈর্যশীল করে তুলব।
-হা হা, ঠিক আছে।
-তবে নাম নিয়ে কিন্তু আমি ঠিক করে রেখেছি।
-কি?
-আয়েশা মেহজাবিন ।
-ইহিতা দিয়েছিল নামটা তাই না???
কি বলব বুঝতে পারছি না। কথাটা যে মিথ্যা তাও না, তাই হাল ছেড়ে দিলাম,
-হ্যাঁ। তোমার পছন্দ হয় নি?
-সেটা বলি নি। তাছাড়া নামটা অনেক সুন্দর। আর যদি ছেলে হয় তাহলে আহনাদ রনওক।
চুপসে গেলাম। এই নামটাও ইহিতা দিয়েছিল। আমি বুঝতে পারছি, মিথু মেয়েটা এত ধৈর্যশীল কেন? আর কেনইবা ইহিতার পছন্দ অপছন্দ গুলোকে প্রাধান্য দিয়ে যাচ্ছে। এতটা বেশি ভালোবাসে মেয়েটা আমাকে?
.
আজকে কেন যেন সকাল সকাল উঠে পরলাম। মিথু এখন ঘুমিয়ে আছে তাকে ডাক দিলাম না। গত কাল সারা রাত অনেক ফুর্তি হয়েছে। কেউ এখনো ঘুম থেকে জেগে উঠে নি। ফ্রেস হয়ে কিচেন রুমে চলে গেলাম। দু-কাপ কফি বানিয়ে আবার চলে আসলাম। তাকে ডাক দিলাম,
-মিথু, ওঠ না।
সে আমার কথা শুনে হুড়মুড় করে উঠে গেল,
-আজকে এত তাড়াতাড়ি উঠে গেলে? অন্যান্য দিন তো ডেকে তুলতে হয়।
-এমনি। কফি নাও
-আরেহ বাবা, আপনি কফি বানিয়েছেন আমার জন্য? নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে।
-কেমন হয়েছে?
-অসাধারণ।
-চলো বিকেলে ঘুরে আসি।
-আগে বের হয়ে দেখি।
বিকেল বেলা শ্বশুড় মশাইয়ের বাইকখানা নিয়ে বের হলাম। পিছনে মিথু। প্রায় ৬ বছর পরে বাইক নিয়ে বের হয়েছি। ইহিতার সাথে সব কিছু শেষ হবার পরে আর কোনো দিন বাইক নিয়ে বের হই নি। তার খুব পছন্দ ছিল বাইকে ঘোরা। আজকে কেন জানি না মিথুকে নিয়ে বের হতে ইচ্ছে হল। মিথু আমাকে জড়িয়ে বসে আছে। আর আমি খুব সাবধানে চালিয়ে যাচ্ছি। একটা পার্কে গিয়ে বসলাম। জায়গাটা অতি চমৎকার। ভালো লাগছে হাঁটতে। মিথু জোর করে ফুসকা খেল। যদিও আমার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে ছিল না, তবুও তার জোরাজুরির কারণে শেষ পর্যন্ত খেতে হল।
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে, বাড়ীতে ফিরতে হবে। তাকে নিয়ে রওনা দিলাম। রাস্তা মোটামুটি ফাঁকা। আমি নিশ্চিন্তে যাচ্ছি। হঠাৎ সামনে থেকে দ্রুত গতির একটি গাড়ি এসে আমাদের ধাক্কা দিল। শূন্যে ডিগবাজি খেয়ে গিয়ে পরলাম রাস্তার পাশে।শুধু মিথু বলে শেষ একটা চিৎকার দিয়েছিলাম। তারপরে আর কিছু মনে নেই।
.
চোখ খুলে দেখি আমি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছি। মাথায় ভোঁতা যন্ত্রণা। মাথায় সহ হাত পায়ে বেশ কয়েক জায়গায় ব্যান্ডেজ। মিথুর কথা মনে পরতেই বুকের বা-পাশটা চিন চিনে ব্যাথা শুরু হল। নার্সকে ডাকলাম।নার্সের প্রায় সাথে সাথে আব্বু কেবিনে চলে আসল,
-আব্বু, মিথিলা কোথায়?
-সে ভালো আছে।
-কোথায় সে?
-পাশের কেবিনে।
দৌড়ে গেলাম সেখানে। গিয়ে দেখি মিথিলা শুয়ে আছে। পাশে গিয়ে বসে তার হাত ধরলাম। বাম হাত এবং পায়ে ব্যান্ডেজ ছিল। মিথুর এই অবস্থা দেখে নিজের বুক ফেটে কান্না আসতে চাইছে। এর মধ্যে সবাই মিথুর কেবিনে চলে আসল, জানতে চাইছিলা সেদিন কি হয়েছিল, আব্বুর কথায় সারাংশ দাঁড়াল, সেদিন ব্রেক ফেল করা একটি গাড়ি আমাদের উদ্দেশ্যহীন ভাবে ধাক্কা দেয়। আশেপাশে লোকজন থাকায় তারা সাথে সাথে হসপিটালে নিয়ে এসে বাড়িতে খবর দেয়। আমার আঘাত টা একটু বেশি গুরুত্বর ছিল,মাথায় বেশ কয়েকটা শেলাই দিতে হয়েছে। মিথুর বাম হাতে বেশ অনেকটা কেটে গিয়ে বেশ রক্তক্ষরণ হয়ে অবস্থা আশঙ্ককা জনক হয়ে উঠেছিল। কোথায়ও তার গ্রুপের সাথে মিলে এমন রক্ত পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেক খোঁজাখুঁজির পর অচেনা এক ব্যক্তি রক্ত দিতে সম্মতি জানায়।রক্তসংগ্রহ করে সবাই মিথুকে নিয়ে বুস্ত হয়ে পরেছিল হঠাৎ সেই মানুষটির কথা মনে হলে তার খোঁজ করা হয় কিন্তু পরে তাকে আর কোথায়ও খুঁজে পাওয়া যায় নি। সব থেকে বড় কথা হচ্ছে, সেদিন রক্ত পাওয়া না গেলে হয়ত অনেক বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারত।
মিথুর জ্ঞান ফিরেছি কিছুক্ষন আগে,
আমি নিজের কেবিন বাদ দিয়ে তার পাশে বসে আছি, কোন দিন ভাবতে পারি নি তাকে এই অবস্থায় দেখতে হবে।
-মিথু, একটু ভালো লাগছে?
-কিছুটা। তুমি ঠিক আছো তো?
-হ্যাঁ। একদম।
বেশ কয়েকদিন হসপিটালে থাকার পরে আমাদের রিলিজ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মিথুর হাঁটতে এখনো বেশ কষ্ট হয়। পায়ের আঘাত টা অনেক বেশি ছিল। সব থেকে বেশি ভয়ে ছিলাম, বাচ্চার কোনো সমস্যা হবে কি না। তবে এবার মনে হয় কপাল টা একটু বেশিই ভালো ছিল। হালকা আঘাতের উপর দিয়ে বেড়িয়ে গেছি। বাচ্চার কোনো সমস্যা হবে না বলে ডাক্তার আশ্বস্ত করেছেন।
.
আরো কিছুদিন পর মোটামুটি সুস্থ হয়ে উঠেছি। তবে সে দিনকার কালো দাগ টা এখনো মনের মধ্যে বসে আছে। মিথুর কিছু একটা হয়ে গেলে জানি না নিজেকে কোনো দিন ক্ষমা করতে পারতাম কি না।
ডাক্তার চেক আপ করে আরো কিছু দিন রেস্ট নিতে বলেছে।তাই আম্মু আর আব্বু বাড়িতে ফিরে গেছে। আমি আর সে তাদের বাড়ীতে আছি। মিথুকে নিয়ে ছাঁদে এলাম অনেক দিনপর, বিকেল পেড়িয়ে গোধুলী সময়, আকাশ টা পরিষ্কার, সূর্য্যের লাল আভাটা খুব সুন্দর লাগছে। সে বলল,
-আচ্ছা, সেদিন যদি আমার ভালো মন্দ কিছু একটা হয়ে যেত?
কথা শেষ করার আগে তার মুখে হাত দিলাম,
-এমন কথা আর কখনও বলবে না। তুমি চলে গেলে আমি কাকে নিয়ে থাকব?
-এতটা ভালোবাস আমাকে?
-হ্যাঁ! অনেক বেশি, নিজের থেকেও বেশি। কোথাও যেতে দিব না তোমাকে।
-তবে কোনদিন যদি নিয়তির কাছে আমাদের হেরে যেতে হয়???
.
[চলবে...]
.
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ