গল্পঃ- পিচ্চি বউ
লেখাঃ- WäHîdūl Ïslâm
.
#সপ্তম_পর্বঃ- গত রাত টা স্বপ্নের মত ছিল। মিথিলা এত তাড়াতাড়ি কাছে চলে আসবে ভাবতে পারি নি। সকালের আলো ফুটেছে। সে আমাকে কোলবালিশ বানিয়ে বুকে মাথা রেখে এখনো ঘুমিয়ে আছে,
-মিথু
-হু
-সকাল হয়েছে তো। ওঠ না...
-ইচ্ছে করছে না!
-কেন?
-জানি না। আর শোন, তুই দেশে ফিরে Gym এর ধারে কাছেও যাবি না।
-কিহ? কেন?
-আমি রান্না করব, তুই খেয়ে-দেয়ে কুমড়ো পটাস হয়ে যাবি, তারপর তোকে আমি কোলবালিশের সাথে মাথার বালিশ বানিয়ে ঘুমবো।
-সবাই চায় তার বরের ফিটনেস থাকুক, আর তুই চাস কুমড়ো পটাস হই? হে উপরওয়ালা কি বউ দিয়েছ?
-কেন গো? তুমি কি ফিট থেকে অন্য মেয়েদের সাথে ফ্লাটিং করবে?
-করলে কি বিশেষ সমস্যা আছে?
-অন্য কারো সাথে যদি দেখেছি না, ঘুসি মেরে তোর নাক ফাটিয়ে ফেলব!
-হা হা, তুই আসলেই আমার পিচ্চি বউ...
মিথু কিছু না বলে আমাকে আরেকটু জড়িয়ে ধরল।
.
অনেকটা বেলা হয়ে গেছে, এখন না উঠলে হচ্ছে না, চা পর্যন্ত খাওয়া হয় নি। তাই উঠে পড়লাম মিথু এখনও বেডে শুয়ে আছে। আমি গিয়ে ফ্রেস হয়ে বের হয়ে দেখি, সে ওঠার নামই নিচ্ছে না, ওদিকে তার ফোন বেজে যাচ্ছে,
-মিথু, তোর ফোন
-ধরে দেখ তো কে।
ওর ফোন হাতের নিয়ে দেখি, আমার শ্বাশুড়ী ফোন দিয়েছেন,
-হ্যালো মিথু!
-না মামী, অভ্র
-কেমন আছিস বাবা?
-ভালো আপনারা?
-এইত আছি। কেমন কাটছে দিন?
-ভালো। আপনার মেয়ের যন্ত্রণায় শেষ হয়ে যাচ্ছি
-কেন বাবা, কি হয়েছে?
-ওর বাচ্চামো স্বভাবগুলোর জন্য...
-ও তো এমনই...
-পাগলীটা কোথায়?
-এখনো ঘুমোচ্ছে!
মিথুকে জোর করে উঠিয়ে বসালাম, ফোনটা ওর কানের কাছের ধরলাম,
-কি রে মা, কেমন আছিস?
-ভালো মা। তোমরা?
-ভালো আছি।
-দেশে ফিরবি কবে তোরা?
-খুব তাড়াতাড়ি।
-কেমন লাগছে জায়গাটা?
-খুব ভালো, তবে তোমাদের অভ্র সেদিন কি করেছে জান?
-কি করেছে?
সেড়েছে, এই কথা যদি তারা শুনে কপালে দুঃখ আছে তাতে বিন্দু মাত্র সন্দেহ নাই। তাই ফোন তার কাছ থেকে নিয়ে,
-মামী, আপনার মেয়ে এখনো বিছানা থেকে উঠে নি। কি বলছে না বলছে তার কোন ঠিক নেই। আচ্ছা পরে ফোন দিব
বলে রেখে দিলাম,
-মিথু, তুই এই কথা মামীকে বলতে যাচ্ছিলি কেন?
-তোর কি করব? আমি দেশে ফিরে ফুপ্পিকে বলব
-পাগল হয়েছিস? যাহ্ বলিস তুই তোর শ্বাশুড়িকে। এখন ওঠ ঘুরে আসি...
ঠেলে তাকে ওয়াশরুমে ফ্রেস হতে পাঠালাম, সোফায় গিয়ে মাত্র বসেছি, এর মধ্যে তার ডাক আসল,
-অভ্র
-কি হয়েছে আবার?
-আমার টাওয়াল টা দিয়ে যা তো।
নাহ, একে নিয়ে আর পারা যায় না। একটা কাজ যদি ঠিক মত করতে পারত, টাওয়াল নিয়ে তার কাছে গেলাম,
-এই নে তোর টাওয়াল।
সে টাওয়াল সমেত আমাকেও ভিতরে টেনে নিল...
.
আসাধারণ সময় কাটছে, কোনোদিন ভাবতে পারি নি আমার মত ছন্নছাড়া মানুষের জীবনটা মুহূর্তের মধ্যে পালটে যেতে পারে। তবে সব সময় ভয় হয়, কেন জানি না, আমার কপালে সুখ নামক জিনিট টা বেশি দিন স্থায়ী হয় না... তবে মিথু আসার পর থেকে সব কিছু ভালো হচ্ছে, ইহিতার সাথে দেখা, দুষ্ট মিস্টি খুনসুটি, আর নিঃসার্থ অনেকটা ভালোবাসা। আশা করি সে পারবে আমাকে নিজের মত করে গুছিয়ে নিতে।
সকালে আর বেড়নো হল না। তাই লাঞ্চ শেষ করে বিকেলে বীচ থেকে খানিকটা সামনে ঘুরতে বের হলাম। রাস্তা দিয়ে হাঁটছি, হঠাৎ ফোন বেজে উঠল, স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি অচেনা নম্বার। প্রথম বার না ধরে পকেটে রেখে দিলাম, আবার একই নম্বর থেকে ফোন আসল, একরাশ বিরক্তি নিয়ে ধরলাম,
-হ্যালো।
-অভ্র বলছিলে?
-জ্বী, কে বলছিলেন প্লীজ?
-আমি আবির ভাইয়া।
-ওহ, ভাইয়া। আপনি আমার নম্বার কোথায় পেলেন?
-তোমাদের রিসোর্টে গিয়েছিলাম, দেখলাম তোমরা নেই পরে রিসিপশন থেকে নিয়েছি।
-কোনো দরকার ভাইয়া?
-তোমরা কোথায় আছ এখন?
-একটু বাইরে এসেছিলাম।
জায়গার নামটা বললাম, আবির ভাইয়া কিছুক্ষন অপেক্ষা করতে বলল।
পাশের একটি কফি শপে ঢুকে কফি অর্ডার করে তার জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম। একটু পরে সে গাড়ি নিয়ে হাজির। শপে আসল,
-কি অভ্র, মিথিলা, কেমন যাচ্ছে? আশা করি ভালোই চলছে সব কিছু!
-জ্বি ভাইয়া ভাল। হঠাৎ জরুরী ভাবে ডাকলেন?
-আসলে, আজকে ইহিতার জন্মদিন। এখানে তো ওর তেমন কোনো আত্মীয় স্বজন নেই। আর আমাদের বিয়ের পরে এই প্রথম জন্মদিন। যদি একদম কেউই না থাকে হয়ত ওর খারাপ লাগবে। আর ব্যস্ততার কারণে খুব বেশি সময় থাকতে পারি না ওর পাশে। তাই আমি চাচ্ছিলাম তুমি আর মিথিলা যদি আজকে আমাদের বাসায় আসতে, হয়ত ইহিতার ভালো লাগত।
-আসলে ভাইয়া,
আমার কথা শেষ করার আগে, মিথু জবাব দিল,
-অবশ্যই...
ভেবেছিলাম কোনো ভাবে পাশ কাটিয়ে যাব। আমি চাচ্চিলাম না আবার ইহিতার সাথে আর কোনদিন দেখা হোক। সবে মাত্র মিথুকে আপন করতে শুরু করেছি। নিয়তি আমার সাথে কি খেলা শুরু করেছে? অনিচ্ছা স্বর্ত্বেও যেতে হবে।
আবির ভাইয়া তার গাড়িতে করে আমাদের সাথে নিয়ে তার বাসার দিকে রওনা দিল। আমার মুড টা পরিবর্তন হয়ে গেল। আবির ভাইয়া বলল, বাসা বেশি দূরে নয়। তাই চুপ করে বসে থাকলাম। মিথু আমার কানের কাছে মুখ এনে বলল,
-অভ্র, ইহিতার জন্য কিছু একটা নেওয়া দরকার না?
কথা শেষ করার আগে সে আবির ভাইকে গাড়ী পার্ক করতে বলল, কারণ জানতে চাইলে বলল, একটু দরকার আছে,
গাড়িত থেকে নেমে সোজা গিফট শপের দিকে হাটা ধরল, আমিও তার পিছে পিছে গেলাম, আবির ভাইয়া আমাদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকল,
-এই, সতিনের জন্য কি নেওয়া যায়?
-কি বললি?
-বললাম, ইহিতার জন্য কি নেওয়া যায়? ওর ফেভারিট জিনিস কি ছিল?
-টেডি বিয়ার।
মিথু গিফট শপের এক কর্নারে যেতে যেতে বলল,
-পেয়েছি।
-কি পেয়েছিস?
গিয়ে দেখি ইয়া বড় সাইজের এক টেডি বিয়ার। সাইজে আমার থেকেও বড় হবে। মিথু এইটা নেবে বলেই বায়না ধরল, কি করব, পেমেন্ট করে বেড়িয়ে পড়লাম, শপের লোকারা এসে গাড়ির পিছনে উঠিয়ে দিয়ে গেল। কিছুক্ষণের ভিতর পৌঁছে গেলাম ইহিতাদের আপার্ট্মেন্টে। টেডি বিয়ার টা ওয়াচ ম্যান কে দিয়ে উপরে পাঠিয়ে দিতে বললাম। আবির ভাইয়ার সাথে সাথে ঢুকলাম। কলিং বেলে চাপ দিতেই প্রায় সাথে সাথে দরজা খুলে দিল ইহিতা। আবির ভাইয়া বলল,
-হ্যালো, বাবু
-ওদের কোথায় পেলে?
-ধরে এনেছি।
বলে ভিতরে ঢুকে গেল সে। পিছু পিছু আমি আর মিথুও।
-হ্যালো ইহিতা। কেমন আছ?
-ভালো। তোমরা?
-হ্যাঁ ভালো
একবার তার সাথে চোখাচোখি হল। ইহিতা মনে হয় এখনও নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। দরজা ধরে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। আবির ভাইয়া আমাদের বসতে বলে নিজে বেডরুমে ফ্রেস হতে চলে গেল। সমস্ত ফ্লাট খুব সুন্দর করে সাজানো। বেশ চমৎকার, যত্ন করে সাজানো হয়েছে পুরোটা। পাশের বুক সেলফের উপর একটা জিনিস দেখে চোখ আটকে গেল। আরে, এইটা তো সেই ডল টা, যেটা আমি প্রথম গিফট দিয়েছিলাম ইহিতাকে।
.
তেমন কোনো লোকজনের সমাগম দেখলাম না, তাই আমরা ৪জনই কেক কেটে ইহিতাকে উইশ করলাম।আমার কেন জানি না মনে হচ্ছে, মিথিলার ফূর্তিটা একটু বেশি। কেন সেটা ধরতে পারছি না। ডিনারও করলাম একসাথে। হঠাৎ আবির বলল,
-অভ্র
-জ্বি ভাইয়া
-ড্রিংস কর?
-না ভাইয়া।
চল আজকে এক পেগ হয়ে যাক। না করতে পারলাম না। আড্ডা শেষে নিজেকে সামলে রাখতে কষ্ট হচ্ছে। লিমিট ক্রস করিনি ।তবে বউ আমার শুধু লিমিট না, তার উপরের স্তর ক্রস করে ফেলেছে। রিসোর্টে ফিরতে হবে, আবির ভাইয়া কে জানালাম, সে নামিয়ে দিয়ে আসতে চাইল, কিন্তু তার যে অবস্থা, সে ড্রাইভ করলে আমাদের ভব লিলা সাঙ্গ হয়ে যাবে।তাই তাদের কাছে বিদায় নিয়ে রওনা দিলাম।
.
ট্যাক্সি রিসোর্টের খুব কাছে নামিয়ে দিল। পুরো রাস্তা মিথু আমার ঘাড়ে মাথা দিয়ে শুয়ে ছিল,ট্যাক্সি থেকে নেমে তাকে সামলে রাখতে আমার বেগ পেতে হচ্ছে।
-অভ্র
-বল
-আমি হাঁটতে পারছি না
-তা তো দেখতে পাচ্ছি।
সে এসে আমার গলা জড়িয়ে ধরল, উপায় না দেখে তাকে কোলে করে নিয়ে রুমে ফিরতে হল। বেডে শুইয়ে দিলাম। খুব ক্লান্ত লাগছে তাই আমিও তার পাশে শুয়ে পরলাম।
বুঝতে পারছি না, উপরওয়ালা আমার ভাগ্যে কি লিখে রেখেছেন...
.
[চলবে...]
.
গল্পঃ- পিচ্চি বউ
লেখাঃ- WäHîdūl Ïslâm
.
#অষ্টম_পর্বঃ- ঢুলু ঢুলু চোখে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সকাল ১১টা বেজে গেছে। লাফ দিয়ে উঠলাম। রাতের নেশার ভাবটা এখনো কিছুটা রয়ে গেছে। ক্ষুধাও লেগেছে নেহাৎ কম না। মিথু যে ঘুম দিয়েছে, আজকে বিকেলের আগে উঠবে কি না সন্দেহ হচ্ছে। তাকে ডাকলাম,
-মিথু
কোনো জবার দিচ্ছে না,
-এই মিথু
-হু [ঘুমের মধ্যে]
-এগার টা বেজে গেছে উঠবি না।
-না
নাহ, একে নিয়ে পারা যায় না, তাই বাধ্য হয়ে বেড়িয়ে গেলাম। টেবিলে বসেছি, তাকে ছাড়া খেতে মন সায় দিচ্ছে না। তাই ওয়েটারকে রুমে নাস্তা পাঠাতে বলে চলে আসলাম, এসে দেখি সে এখনো বেডে শুয়ে, ব্রাশ খুঁজে নিয়ে তার কাছে গেলাম। জোর করে বেড থেকে নামিয়ে এনেছি, সে আমার ঘাড়ে মাথা দিয়ে কোনো মতে দাঁড়িয়ে আছে,
-অভ্র, ছাড় না। আমার খুব ঘুম পেয়েছে।
-পরে ঘুমাস! এখন ফ্রেস হয়ে নে। নাস্তা করতে হবে আমার খুব ক্ষুধা পেয়েছে।
কথাটি ম্যাজিকের মত কাজ করল,
-তুই নাস্তা করিস নি?
- না। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আয়।
সে সাথে সাথে ওয়াশ রুমে ঢুকে গেল। আমিও পশ্চাৎ প্রসারণ পূর্বক বেডের উপর গিয়ে বসলাম। অপেক্ষা করতে করতে মেজাজ গরম হয়ে যাচ্ছে,
-মিথু
-কি হয়েছে?
-এত সময় লাগে?
-শাওয়ার নিয়ে বের হব।
কিছু করার না দেখে বসে থাকলাম। ফোন নিয়ে কতক্ষণ গুতোগুতো করলাম, ভালো লাগছে না। কি করার যায় ভাবতে ভাবতে একখানা চিঠি লিখতে বসে গেলাম। কি লিখব ভেবে পাচ্ছি না। কিছু সময় পর, মিথু টাওয়াল পরে ভেজা চুলে ওয়াশরুম থেকে বের হল। ওর চেহারা থেকে চোখ ফেরাতে পারছি না। আচ্ছা, কোনো মনীষি কি বলেছিল, ভেজা চুলে মেয়েদের সব থেকে বেশি সুন্দর লাগে? মনে পরছে না! নিজেরই মনে হয় সাহিত্য রচনা শুরু করতে হবে আমার পিচ্চি বউ কে নিয়ে। এসে একদম আমার পাশে বসল, ওর চুল থেকে মন মাতানো সুঘ্রাণ আসতে শুরু করেছে,
-ঐ
ওর কথা শুনে বাস্তবে ফিরে আসলাম।
-হু বল।
-নাস্তা খাবি না?
-ও হ্যাঁ।
সে উঠে গিয়ে নাস্তা নিয়ে আসল। আবার আগের জায়গায় এসে বসল,
-নাও।
এ কি, বউ আমার আজকে নিজেই খাইয়ে দিতে চাইছে? বাহ
-এই শোন, আজকে বিকেলে ফ্লাইট। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।
-কি? আমাদের না দশ দিনের ট্রিপ ছিল?
-হ্যাঁ জানি। আমার ভালো লাগছে না। যার সাথে গত ৬ বছর কোনো যোগাযোগ ছিল না, আমি চাইছি না আবার তার মায়ায় আবদ্ধ হতে। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়েছি। আমি ভালো থাকতে চাই। তোকে নিয়ে অনেকটা পথ হাঁটতে চাই। এর মাঝে নতুন করে কেউ কাটা হয়ে আসুক তা আমি চাই না।
-পারবি তো আমাকে আগলে রাখতে অভ্র?
কিছু বললাম না, শুধু তার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে বুকে জড়িয়ে নিলাম।
.
যেহেতু ট্রিপ শেষ হওয়ার আগেই বাড়িতে ফিরছি, তাই আগেই বাড়িতে ফোন দিয়ে জানানো দরকার। আম্মু ফোন দিলাম।
-হ্যালো আম্মু
-হ্যাঁ বাবা, বল
-আমরা ফিরছি আজকে। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় ফ্লাইট। তাহলে আমাদের দেশের সময়ে ৪.৩০ টায় ফ্লাইটে উঠব। তুমি গাড়ি পাঠিয়ে দিতে বলে দিও
-সে কি? তোদের না আরো কয়েকদিন পরে আসার কথা ছিল?
-হ্যাঁ ছিল। ভালো লাগছে না মা
-মিথুর সাথে কিছু হয়েছে?
-ওর সাথে কি হবে? আসলে মা, রিসোর্টের পাশে ইহিতাদের বাসা। আবিরের সাথে সেও এখানে থাকে। দেখাও হয়েছে কয়েকবার, আমি চাচ্ছি না, তার জন্য মিথুর সাথে আমার সম্পর্কের কোনো ভাঁটা পরুক। তাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
-আচ্ছা, যা ভালো বুঝিস কর।
-ঠিক আছে আম্মু। রাখি তাহলে দেখা হচ্ছে খুব দ্রুত।
ফোন রেখে দিলাম।
.
তাড়াতাড়ি এয়ারপোর্টে যেতে হবে, বোর্ডিং পাস নিয়ে সব কমপ্লিট করতে বেশ খানিক টা সময় লাগবে। তাই লাঞ্চ শেষ করে ৩টার মধ্যে বেড়িয়ে গেলাম। সকল ব্যাগপত্র গাড়িতে তুলে রওনা দিয়েছি। এখনকার রাস্তা ঘাট অনেকটা উন্নত। তাই বেশি সময় লাগবে না যেতে। আনমনে বসে আছি, হঠাৎ মিথু বলল,
-অভ্র, তোর চিঠিটা
অবাক হয়ে গেলাম। আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। ঠিক যেভাবে রুমে খাম বন্দি করে রেখেছিলাম সেভাবেই আছে। সে খুলেও দেখে নি।
-এটা কোথায় পেলি?
-রুম থেকে বের হবার সময় দেখলাম টেবিলের উপর রেখেছিস। ভাবলাম হয়ত কোনো জরুরী কিছু। তাও আবার ইহিতার এপার্ট্মেন্টের ঠিকানায় তাই নিয়ে এলাম।
-না আনলেই ভালো হত।
মনে মনে বললাম,
-কিছু বললি?
-না। খুলেছিলি?
-নাহ।
-জানতে চাইবি না, কি লেখা আছে?
-কি দরকার? কিছু কথা না হয় আমার অজানাই থাকল।
আমি মাঝেমধ্যে ভেবে পাই না, মেয়েটা এত ভালো কেন? আমার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে ছিল না চিঠিটা পোস্ট করার। মিথুর জোরাজুরিতে মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে পোস্ট বক্সে ফেলে আসলাম।
.
ভালোয় ভালোয় দেশের মাটিতে পা রেখেছি।রাত হয়েছে অনেকটা। এয়ারপোর্ট থেকে সকল ফর্মালিটি শেষ করে বাইরে এসে দেখি গাড়ি হাজির। উঠে পরলাম। শীতের তীব্রতা কিছুটা বেড়েছে মনে হচ্ছে। গাড়িটি তার চূড়ান্ত বেগ তুলে ছুটে চলেছে। হিম বাতাসে আমার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। গ্লাস উঠিয়ে দিতে বললে মিথু বারণ করল, তাই আর উঠাতে পারলাম না। তার নাকি ভালো লাগছে। এই মেয়েকে মনে হয় আমি এক জীবনে বুঝে উঠতে পারব না।
দেখতে দেখতে বাসার কাছাকাছি চলে আসলাম। গাড়ি থেকে নেমে কলিং বেল দিতে আম্মু দরজা খুলে দিল। মিথু সাথে সাথে গিয়ে আম্মুকে সালাম করল। কোনো মেয়ে দেশের বাইরে থেকেও এত রীতি নীতি মানতে পারে ওর অভ্যাস না দেখলে হয়ত আমি জানতে পারতাম না। আম্মুও তাকে আদর করে দিল। আসলে তার ভালোবাসার কোনো কমতি হবে না, কারণ আমার পরিবারে আমিই একা সন্তান। আর ছোট থেকে মিথুকে আম্মু খুব ভালোবাসত। এখন আমার ভয় হচ্ছে, আম্মু আমাকে ভুলে না যায়...
.
রুমে এসে ডিরেক্ট বিছানায় শুয়ে পরেছি। কেন জানি না মনে হচ্ছে, দুনিয়ার সকল ক্লান্তি আমার উপরে ভর করেছে। আর সব থেকে বড় কথা হচ্ছে, মিথুর সতিন দুঃখিত আমার কোলবালিশ সাত জনম পর কাছে পেয়েছি। মিথু ঘরে এসেই শুরু করল,
-অভ্র, ভালোয় ভালোয় কোলবালিশ আমার কাছে দিয়ে দে
-দিব না। কি করবি?
-দেখতে চাস?
-হু
সে গগন ফাটানো চিৎকার দিয়ে আম্মুকে ডাক দিল,
-ফুপ্পিইইইইইইইইইইইহ
আম্মাজানও আমার রকেটের গতিতে আমার রুমে হাজির।
-কি মা, কি হল তোদের?
-দেখ না ফুপ্পি, তোমার ছেলে আমার জায়গায় কোলবালিশ দিয়ে রেখেছে।
-অভ্র, দে কোলবালিশ দে, এক্ষুনি। আমার ভুল হয়েছে, আগেই সড়িয়ে রাখা উচিত ছিল।
.
আম্মু যেহেতু বলেছে, না করার কোনো উপায় দেখছি না। সুবোধ বালকের মত দিয়ে দিলাম।হন হন করে আমার দ্বিতীয় বউখানা নিয়ে আম্মু চলে গেল। আর অন্য দিকে বউয়ের মুখে বিজয়ীর হাসি দেখা যাচ্ছে। মেজাজ সপ্তমে উঠে গেল। কোনো রকম জামা কাপড় চেঞ্জ করে বিছানায় শুয়ে পরলাম। কিছুক্ষণ পর মিথুও এসে পাশে শুয়ে পরল,
-ওগো।
-রাখ তোর ওগো। আমি কোলবালিশ এনে দিবি তুই!
-আমি আছি না?
কথা শেষ করার আগেই অন্য দিকে ঘুরলাম, সে আমার গেঞ্জির হাতা ধরে টানতে শুরু করেছে,
-তুই এমন করলে আমি ঘুমবো কি করে?
এবার তার দিকে ফিরলাম, দুষ্ট এক হাসি দিয়ে বাচ্চাদের মত আমার বাহুতে শুয়ে পরল।
.
সকালের মিষ্টি আলো মুখে পরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেল। উঠে দেখি মিথিলা পাশে নেই। কোনো ব্যাচেলার যদি সকালে উঠে ফোন পাশে না পায়, ঠিক তখন যে কষ্ট টা লাগে তেমনই এক সদ্য বিবাহিত মানুষ ঘুম থেকে উঠে তার বউকে পাশে না দেখতে পেলে অবস্থা একই হয়। চোখ ডলতে ডলতে রুম থেকে বেরিয়ে আম্মুর কাছে যাচ্ছি, গিয়ে দেখি সেও রুমে নেই। আব্বু এখনো ঘুম। বউ শ্বাশুড়ি মিলে সাত-সকালে গেল কোথায়? ডাইনিং রুমে গিয়ে রান্না ঘর থেকে আম্মুর গলা শুনতে পেলাম।
-আরে মা, তুই ছাড় নাই, বুয়া আছে ওরা করে দিবে।
আগ্রহ নিয়ে গেলাম সেখানে, গিয়ে দেখি বউ আমার মহানন্দে রান্নার উৎসব বসিয়েছে। আর আম্মু পাশে বসে আছে।
রুমে ফিরলাম, ভাবলাম আরো কিছুক্ষণ ঘুমানো যাক, যে ভাবা সেই কাজ। আরাম করে শুয়ে পরলাম।
.
হুট করে কে যেন রুমে এসে এক জগ পানি আমার গায়ে ঢেলে দিল। লাফ দিয়ে উঠলাম। দেখি বউ আমার ভুবন ভুলানো হাসি দিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে আছে,
-কি হে জনাব? নাস্তা খেতে হবে না?
-সে জন্য তুই গায়ে পানি ঢেলে দিবি?
-ফুপ্পি তো বলেছিল, তোর কান টেনে তুলতে। কিছুটা মায়া দেখিয়েছি। থাক থ্যাংক্স দিতে হবে না।
ক্রুর দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম,
-উঠে নাস্তার টেবিলে চলে আয়, নাস্তা দিয়েছি?
-দিয়েছি মানে?রান্না তুই করেছিস?
-হ্যাঁ জনাব
-হে উপরওয়ালা, মুখে দিতে পারলে হয়।
.
কিছুটা রাগ নিয়ে বেড়িয়ে গেল মিথু, আমিও তার কিছুক্ষণ পরে নাস্তার টেবিলে চলে গেলাম, আম্মু আব্বু সবাই হাজির আমার সামনের চেয়ারে মিথু মুখ গোমরা করে বসে আছে!
-শুভ সকাল
-হুম বাবা, শুভ সকাল
নাস্তা খেতে শুরু করে আমি তো পুরো অবাক। একদম আম্মুর মত রান্না। অসাধারণ। কোনো কথা না বলে খাওয়া শেষ করে রুমে চলে আসলাম। আমার আগেই মিথু ফিরেছে, বান্দারায় গিয়ে একা মন মরা হয়ে বসে আছে, গিয়ে পিছ থেকে জড়িয়ে ধরলাম,
-কি হয়েছে তোমার?
-কিছু না। ছাড়
-বলবি না? ভালো কথা রান্না টা খুব সুন্দর হয়েছে। আমি তখন একটু মজা করেছিলাম।
-সত্যি
-হুম, তা আর কি কি পারেন আপনি?
-তা না হয় সময় আসলেই দেখতে পাবেন জনাব...
.
[চলবে...]
.
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ