✔বৃষ্টির মাঝে একফোটা বিশ্বাস✔
••••••••••••••••🍀🌷🍀••••••••••••••
লেখকঃ-RB Raj
....
ক্লাস করে বের হবো মাত্র এমন সময়ে ঝুম
বৃষ্টি নামলো । সকালে ঘুম থেকে উঠেই
দেখি আকাশ প্রচণ্ড কালো । মাঝে
মাঝে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে ।আবার
থেমে যাচ্ছে ।এমন দিনে সকাল আটটা
বাজে সজীব স্যার এর ক্লাস ।
সামান্য দেরী হলেই পারসেন্টিস দেয় না ।
তাই তাড়াহুড়ো করে ছাতাটা আনতেই
ভুলে গেছি । আমরা যারা ছাতি আনিনি
তাদের মধ্যে দু গ্রুপ তৈরি হলো । দাঁড়িয়ে
থাকা গ্রুপ আর স্বেচ্ছায় বৃষ্টির হাতে
আত্মসমর্পণ গ্রুপ ।
পরের গ্রুপটিতে দু তিনজন ছাড়া আর
কেউ আগ্রহ দেখালোনা । অনেকে মাথার
উপরে ব্যাগ দিয়ে দৌড়ে চলে যাচ্ছে ।
আমি ধীরে ধীরে বৃষ্টির মধ্যেই হাটা
শুরু করলাম । সরাসরি হলে যাবো
নাকি ক্যাফেটেরিয়ায় যাব
ভাবছি । অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম
ক্যাফেটেরিয়া থেকে এক কাপ গরম
কফি খেয়ে যাবো । ক্যাফেটেরিয়ায়
তেমন মানুষ জন নেই । পিছনের দিকে
এক জোড়া কাপল ল্যাপটপে সম্ভবত
কিছু দেখছে । আর একজন জানালার
পাশে বসে
বৃষ্টি দেখছে শিঙাড়ার শেষ অংশটুকু
হাতে ধরে । আমি কফির অর্ডার দিয়ে
বসে আছি । পকেট থেকে মোবাইলটা
বের করে ফেইসবুকে লগইন করলাম ।
না কেউ ম্যাসেজ দেয় নি । দুই একটা
নোটিফিকেশন চেক করলাম ।
হোম পেইজে নতুন একটা ভালোবাসার
গল্প দেখলাম । হায়রে ভালোবাসা !
মাঝে মাঝে একটা হাতের এতো প্রয়োজন
অনুভব করি কিন্তু সেই হাত বাড়ানোর
কোনো মানুষ নেই । এই ব্যাপারে সম্পূর্ণ
ফ্রাস্ট্রেটেড হয়ে গেছি ।
কফি খাচ্ছি আর
গল্প পড়ছি তাই আশেপাশের পরিবেশ
থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লাম । হঠাৎ
পানির ছিটায় আবার বাস্তব জগতে
ফিরে আসলাম । আমার খুব কাছে
দাঁড়িয়েই দুইটা ছেলে আর তিনটা মেয়ে
আড্ডা দিচ্ছিলো । কোন কারনে
একটা মেয়ে একটা ছেলেকে গ্লাস থেকে
পানি ছিটিয়ে মারতে গিয়ে আমার গায়ে
মিস টার্গেট করলো । কখন আসলো
এরা ? আমার গায়ে পানি ছিটিয়ে দেয়ার
পর পুরো গ্রুপটা চুপ হয়ে গেলো ।
যে মেয়েটি পানি ছিটিয়েছিল ,বসে ছিলাম
বলে তাকে এতক্ষন ঠিক মতো দেখতে
পারছিলাম না । মেয়েটি আমার সামনে
এসেই খুব অনুনয় করে সরি জানালো ।
মেয়েটাকে দেখে আমি অনুভূতি শুন্য হয়ে
গেলাম ।
মানুষ এতো
কিউট হয় কিভাবে !লাল ফ্রেমের চশমা
পরা ।কার্ভ চুল । ফ্যানের বাতাসে চুল
গুলো এলোমেলো হয়ে বারবার ওর মুখের
উপর আছড়ে পড়ছে । মেয়েটি আমার
কাছে শুনতে চাচ্ছে
" ওকে । ঠিক আছে ।সমস্যা নেই " এমন
কিছু । কিন্তু আমি কিছুই না বলে হা হয়ে
তাকিয়ে আছি ।কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকার
পর যখন ওরা বুঝলো যে আমি কিছুই
বলবনা তখন ওরা নিজেরাই লজ্জায়
ক্যাফেটেরিয়া
থেকে বের হয়ে
গেলো । আমি কি খুব অদ্ভুত একটা কাজ
করে ফেললাম । মিনিমাম " ইটস ওকে "
টাইপ একটা ছোট রিস্পন্স দিলে কি হতো !
আমি একা একা হাঁটতে অনেক পছন্দ করি ।
আগে কোন উদ্দেশ্য থাকতো না । এখন
সেই কার্ভ চুল ,লাল ফ্রেমের চশমা পরা
মেয়েটিকে দেখার জন্য হাঁটি । ভার্সিটি
ডে তে হল থেকে গেঞ্জি দিলো । সব হল
থেকে র্যালী বের হলো । মেয়েদের হল
থেকে যখন র্যালী এসে আমাদের সাথে
যোগ
দিলো তখন
ছেলেদের উল্লাস ধ্বনি আরও বেড়ে গেলো ।
আমি খুঁজছি সেই লাল ফ্রেমের চশমা
পরা কার্ভ চুল ওয়ালী মেয়েটিকে ।
কিছুক্ষন খোঁজার পর না দেখে হতাশ
হয়ে পড়লাম । বিকেলে কনসার্টে গেলাম
অডিটরিয়ামে ।
হঠাৎ অন্য পাশের
দরজা দিয়ে একসাথে চার পাঁচটা মেয়ে
ঢুকল । ঐ পাঁচ জনের মধ্যে ঐ মেয়েটিও ছিল ।
। মেয়েটি আকাশী নীল একটা শাড়ি
পড়েছে । আজ আরও বেশি সুন্দর
লাগছে । পুরো কনসার্ট জুড়ে
আমি মেয়েটির দিকে তাকিয়েই রইলাম ।
মেয়েটির একবার আনমনে এপাশ ওপাশ
তাকাতে গিয়ে আমার সাথে চোখে চোখ
পড়লো । এরপর থেকে মেয়েটিও মাঝে
মাঝে তাকিয়ে দেখছে যে আমি ওকে
দেখছি কিনা ।
রাত আটটা বাজলে মেয়েদের হল বন্ধ
হয়ে যায় । তাই মেয়েরা আটটার দিকে
বের হয়ে গেলো কনসার্ট থেকে । মেয়েটি
অডিটরিয়াম থেকে বের হবার সময় আমার
দিকে একবার আড় চোখে তাকালো ।
কোনো অদৃশ্য টানের বলে আমিও সাথে
সাথে সীট থেকে উঠে ওর পিছু নেয়া শুরু
করলাম । কিছুদিন যাবৎ এক টানা বৃষ্টি
হচ্ছে । আজ সারাদিন বৃষ্টি হয়নি তবে
এখন অঝোরে বৃষ্টি হচ্ছে ।
মেয়েটির হাতে কোন ছাতা নেই । সবচেয়ে
অবাক হবার
ব্যাপার হচ্ছে মেয়েটার সাথে কোন বান্ধবী
নেই । এখন অডিটোরিয়াম এর সামনে
কোন রিকশাও নেই । আমি এই সুযোগ
হাতছাড়া করতে পারলাম না ।দ্রুত
মেয়েটির সামনে গেলাম
-ক্যামন আছো ? আমাকে চিনতে পারছো ?
-হম চিনছি ! আপনি সেই হা বাবা ! আজ
সারাক্ষন ও হা করে ছিলেন আমার দিকে
তাকিয়ে
আমি না শোনার ভান করলাম
-তোমার বান্ধবীরা কোথায় ?
-ওরা তো আসেনি
-দেখলাম যে একসাথে ঢুকলে চার পাঁচ জন ?
-আমি ওদের সাথে আসিনি ।
-তুমি কোন ইয়ার ?
-ফার্স্ট ইয়ার ।আপনি?
-ফোর্থ ইয়ার
-অনেক বড় ভাই !
-হুম ! তুমি কোন ডিপার্টমেন্ট ?
-আই পি ই । আপনি ?
-আমি ট্রিপল ই
-ভাইয়া ! একটা রিকশা ঠিক করে দিতে পারবেন ?
আমার হল বন্ধ হয়ে যাবে এখনি
-ওকে দাঁড়াও
বৃষ্টির মাঝে আমি রিক্সা খুঁজতে নামলাম ।
জীবনে রিক্সা খোঁজার মাঝে এতো আনন্দ
কোনদিন পাই নি ।
মেয়েটি রিক্সায় চলে যাবার সময় আমাকে
থ্যাঙ্কস জানালো । আমি রিপ্লাই দিতে ভুলে
গেলাম । সত্যিকারের হা বাবার মতো
আবার তাকিয়ে রইলাম । আকাশী নীল
শাড়ী ,নীল টিপ ,লাল ফ্রেমের চশমা ,
কার্ভ চুল সব কিছু
আমার মাথা একেবারে গোব্লেট করে
দিচ্ছিলো ।
মেয়েটি চলে যাবার পর আমি জিভে
কামড় দিলাম । কারন মেয়েটার নামটাই
জানা হয়নি । এরপর নিয়মিত ওদের
ডিপার্টমেন্ট এর সামনে দিয়ে আসা
যাওয়া করতে লাগলাম । কোন লাল
ফ্রেমের
চশমা পরা মেয়ে দেখলেই তাকিয়ে থাকি ।
মেয়েটিকে একদিন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে
দেখলাম । আমি সাথে সাথে কোন কিছু
কেনার ভাব করে ঢুকলাম ।
-মামা ! এক হাজার টাকার ভাঙতি হবে ?
-না মামা !
দেখি ও একা দাঁড়িয়ে কিছু চানাচুর , বিস্কুট ,
চিপস কিনছে । এখন যদি কথা না বলতে
পারি তবে কিছুই হবে না । ও আমাকে
খেয়ালই করলো না ।
ও টাকা দিয়ে ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে
বের হয়ে গেলো ।সাথে সাথে আমিও
বের হলাম ।
আমাদের ইলেকট্রিকাল ডিপার্টমেন্ট
ভবনের সামনে চলে আসতেই ওর পাশে
গিয়ে বললাম ,
-তোমার নামটাই তো জানা হল না
ও কিছুটা চমকে গেলো ।পরক্ষনেই নিজেকে
সামলে বলল ,
-স্নিগ্ধা ৷
-খুব সুন্দর নাম তো
ও হাসি দিয়ে বলল , হুম !
-আপনি,,?
-আমি রাজ ৷
-তোমার ফেইসবুক আইডি আছে ?
-নাহ
-ওহ ! এই যুগের একটা মেয়ের ফেইসবুক
আইডি নেই ? খুব অবাক হলাম !
-ভাইয়া ! এসব আমার ভালো লাগে না
-হুম ! ফেইসবুক আসলেই ভালো না । আমিও
ছাড়তে চাচ্ছি । একবারে চীরদিনের জন্য
ছাড়বো । কিন্তু আমার একজন ভালো
বন্ধু দরকার । মনে করো বাস্তব জগতের
বন্ধু । তুমি কি আমার বন্ধু হবে ?
-আমার লাভ কি ?
-বন্ধুত্তের মোড়কে বিশ্বাস উপহার দেবো
তোমাকে । আর বিশ্বাস অনেক গুরুত্বপূর্ণ
একটা বিষয় । প্রতিটা মানুষের একজন
বিশ্বাসী বন্ধুর প্রয়োজন হয় । আমি সেই
মানুষটি হতে চাই
-আপনাকে বিশ্বাস করবো কি করে ?
-নিজেকে বিশ্বাস করো ?
-সব সময় না ।
-তাহলে কি করে বুঝাবো ?
-আপনি যদি অন্য ছেলেদের চেয়ে ভিন্য
না হন তাহলে ওদেরকে বিশ্বাস না করে
আপনাকে বিশ্বাস করবো ক্যান ?
এমন কথা শুনে আমি চুপ হয়ে গেলাম ।
আসলেই কিভাবে বুঝাবো ওকে আমি
অন্যদের থেকে ভিন্য । যে কখনো বিশ্বাস
ভাঙবেনা । যে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে
বিশ্বাস এর জন্য পথ তৈরি করবে । এমন
কি করা যায় হঠাৎ
যাতে সে বিশ্বাস করে আমি সবচেয়ে
বিশ্বাসী ।আমি সবচেয়ে ভিন্য ।আমি
সবচেয়ে যোগ্য তার জন্য ।
-তুমি বলো আমি কি করবো ?
-আমি কেন বলবো ? আপনি এমন কিছু
বলেন যাতে আমি আপনাকে বিশ্বাস
করতে পারি ।তবে প্লীজ ! আমি কোন
ভায়োলেন্স চাই না । সিনেমার মতো হাত
কেটে আমাকে লাভ লেটার দেয়া কিম্বা
ঘুমের ওষুধ খেয়ে
ইমোশনাল ব্ল্যাক মেইল করতে যাবেন না ।
আমি এসব প্রচণ্ড অপছন্দ করি ।
-আগে বন্ধু হবার তো সুযোগ দাও ।
তাহলেই বুঝবে আমি ক্যামন !
-আপনাকে আমি বন্ধু করলে তো হলই ।
কিন্তু আপনাকে আমি কেন বন্ধু করবো
সেটা আমাকে বলবেন না ?
-কারন তোমাকে প্রথম দেখার পর থেকেই
সব সময় এখন তোমাকে নিয়ে চিন্তা করি
-আমি যদি বলি অন্য কেউ ও আমাকে
নিয়ে চিন্তা করে ? এখন সেই অন্য কেউ
কে বাদ দিয়ে ক্যান আপনাকে বন্ধু বানাবো ?
মেয়ের তো দেখি কার্ভ চুলের মতো মাথায়
ভীষণ প্যাঁচ । আমি কি বলবো বুঝতে
পারছিলাম না । সত্যিই নিজেকে খুব
অসহায় মনে হচ্ছিলো । আমি চুপ হয়ে
দাঁড়িয়েই রইলাম । মনে হচ্ছে খুব বড়
অপরাধ করে ওর সামনে
অপরাধ স্বীকার করছি । আমি বললাম ,
আমি কখনো ওভাবে চিন্তা করিনি ।
আমাকে ভাবতে হবে । মেয়েটি ঠোটের
কোনে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলল ,
আপনি ভাবতে থাকেন । আর যেদিন
প্রমান করতে পারবেন
আপনি সবার থেকে ভিন্য , সবার থেকে
বিশ্বাসী । সেদিন আমরা বন্ধু হবো ।
ক্যামন ? ভালো থাকবেন । আমাকে যেতে হবে ।
এই কথা গুলো বলে মেয়েটি চলে গেলো ।
আমি সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলাম ।
আমি রুমে এসে বিশাল টেনশনে পড়লাম ।
কি করবো কিছুই মাথায় আসছেনা ।
ছোট ক্যাম্পাস । এক মেয়ের পিছনে
কয়েকদিন ঘুরলেই জানাজানি হতে
টাইম লাগবেনা । প্রেসটিজ পুরা পান্তা
ভাত হয়ে যাবে ।
পরের দিন ক্লাস করে আনমনেই
ওদের ডিপার্টমেন্ট এর সামনে গিয়ে
দাঁড়ালাম । ওর ক্লাস কখন শেষ হবে
অথবা শেষ হয়ে গেছে কিছুই জানিনা ।
ক্লাস টাইমে ওদের ডিপার্টমেন্ট
এর সামনে আর বিকেলে ওদের হল
থেকে একটু দূরে পদ্ম পুকুরের সামনে
দাঁড়িয়ে থাকা আমার বদ অভ্যাসে পরিনত হল ।
তবে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে
কিছুদিন এর মধ্যে ওর ক্লাস এর সময়
সূচীর একটা আনুমানিক ধারনা
পেলাম । রবিবার ল্যাব আছে বিকেলে ।
সোমবার আর মঙ্গলবার সকাল দশটা
ত্রিশ এ ক্লাস শেষ হয় ......।
শুধু ক্লাস না ও বিকেলে কবে কখন
হাঁটতে কিম্বা ঘুরতে বের হয় তার ও
একটা আনুমানিক ধারণা পেলাম ।
দুই সপ্তাহে অন্তত একবার খুলনা ঘুরতে
যায় বান্ধবীদের নিয়ে । তবে অবশ্যই
বৃহস্পতি বার । পছন্দের রেস্তোরাঁ
কাউন্ট্রি লাউঞ্জ । ক্যাম্পাসে ঘুরলে
সন্ধ্যার পর বের হয় । চালাক মেয়ে ।
সাথে
দুজন বডী গার্ড বান্ধবী থাকে । আর
কিছু কষ্টকর তথ্য পেলাম । ডিপার্টমেন্ট
এর অনেক ছেলেই ওর উপর ক্রাশ ।
স্বস্তির ব্যাপার হচ্ছে কারো প্রতি ওর
কোনো আগ্রহ নেই ।
আজ আমাদের মাত্র একটি ক্লাস হল ।
আমি ক্লাস শেষে ওদের ডিপার্টমেন্ট
এর সামনে দাঁড়িয়ে আছি । আকাশ
টা আজও খুব কালো । যেকোনো
সময় বৃষ্টি নামতে পারে । মাঝে মাঝেই
অনেক দূরে বিজলী চমকাচ্ছে ।
স্নিগ্ধা যখন ক্লাস শেষ করে ডিপার্টমেন্ট
ভবন থেকে বের হল তখন বৃষ্টির মাত্রা
অনেক বেড়ে গেছে । ও আমাকে দেখে
নিচে তাকিয়ে হালকা একটা হাসি দিয়ে
ওদের হলের দিকে হাটা শুরু করলো ।
আমিও একটা নির্দিষ্ট
দূরত্ব বজায় রেখে ওর পিছে আপন মনে
হাঁটতে লাগলাম । ওর হাতে খুব সুন্দর
একটা রঙিন ছাতা । মাঝে মাঝে ছাতাটা
একটু নিচু করে পিছনে ফিরে আমাকে
দেখছে । বৃষ্টির পানিতে আমার শার্ট
প্যান্ট ভিজে একাকার
অবস্থা । আমার চুল থেকে পানি আমার
গাল বেয়ে বেয়ে নিচে পড়ছে । মাঝে মাঝে
পানির প্রবল গতিবেগ এর কারনে
সামনের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে । ওর
হলের কিছু দূরে আমি দাঁড়িয়ে গেলাম ।
ও হলের গেট দিয়ে ঢোকার
সময় ও একবার আমাকে দেখে নিলো ।
আজ ও অনেক বার তাকিয়েছে । এটা কি
প্রশ্রয় ? নাকি পরে তোকে দেখে নেবো
টাইপ লুক ছিল ?
মেয়েটি আজ বাসে তিন নম্বর সারিতে
বসা । বাসে প্রচণ্ড ভীর । শ্বাস করার ও
জায়গা নেই ।
আর আমি পিছনের গেটে বাঁদরের ন্যায়
ঝুলে আছি । বাস এর গেটে ঝোলার
অভ্যাসটা ঢাকা কলেজ থেকে পাওয়া ।
বাস চলছে আমি গেটে দাঁড়িয়ে বাতাস
খাচ্ছি । মেয়েটি খুলনা নিউমার্কেটে
নামলো । সাথে দুজন বান্ধবী ।
( আর
ঐ ছেলে দুটি । আমি ও নেমে গেলাম ।
ওরা একটা ফাস্ট ফুড এর দোকানে ঢুকে
গেলো ।আমি বাইরে দাঁড়িয়ে রইলাম
একটু দূরে । হঠাৎ বিদ্যুতের বেগে ফাস্ট
ফুডের দোকান থেকে মেয়েটি বেরিয়ে
এলো । পিছনে আরেকটি
মেয়ে ওকে ডাকছে , স্নিগ্ধা! এই স্নিগ্ধা !
আমি বোঝার চেষ্টা করলাম কি হয়েছে ।
এখন ওরা সবাই বের হয়ে এসেছে ।আমি
ওদের খুব কাছেই হাঁটতে লাগলাম ।একটা
মেয়ে ওদের মধ্যে একটা ছেলেকে বলছে ,
এতো দ্রুত
প্রপস করতে গেলি ক্যান গাধা ? এই কথা
শুনেই আমার বুকে প্রচণ্ড আঘাত লাগলো ।
আমি আর ওদের পিছু নেয়া ছেড়ে
দাঁড়িয়ে পড়লাম । এতো খারাপ লাগছে
আমার কি করবো বুঝতে
পারছিনা । আমি হাইওয়ে রোড ধরে
একা একা হাঁটতে লাগলাম ।
খুলনার রাস্তা গুলো এম্নিতেই ফাকা
ফাকা ।আজ যেন আমার কষ্টের মাত্রাটা
আরও বাড়িয়ে একদম যানবাহন
শুন্য অবস্থা । আমি একটা ছোট রাস্তার
মধ্যে সামান্য ভীর দেখে ঢুকলাম ।
দেখলাম
একজন অন্ধ লোক গলা ছেড়ে লালন
গীতি গাইছে
" মিলন হবে কত দিনে ? আমার মনের
মানুষের ও সনে ? "
এতো সুন্দর কণ্ঠ আমি কখনো টিভি
কিম্বা রেডিওতে শুনিনি । একেই
বলে প্রকৃতি প্রদত্ত কণ্ঠ । সব কিছু
ছেড়ে ছুঁড়ে ওনার কাছে গান শিখতে
পারতাম ! আর এভাবে রাস্তায় গলা
ছেড়ে গাইতে পারতাম ! গান শুনছি
আর আমার মাথায় অনেক ভার অনুভব
করছি ।শরীর গরম হয়ে যাচ্ছে আর খুব
শীত শীত লাগছে । এখানেই ঘুমিয়ে
পড়তে ইচ্ছে করছে । কিভাবে অতদুর
যাবো ? প্রচণ্ড জ্বরের ঘোরে তবুও
কিভাবে কিভাবে
যেন অটো রিক্সায় চলে আসলাম
ক্যাম্পাসে । রাতে ধুম জ্বর উঠলো । তবুও
মাথার মধ্যে সেই লোকটার গান " মিলন
হবে কত দিনে ? আমার মনের মানুষের
ও সনে ? " বাজছে । আমি হারিয়ে
গেলাম গভীর অচেতনে । রাতে খুব
সুন্দর একটা স্বপ্ন
দেখলাম । দেখলাম স্নিগ্ধাকে নিয়ে
আমি নদীর পাশে হাঁটছি । পাশে বড়
বড় সাদা কাশ ফুলের বাগান ।একটু
পর পর সেই কাশফুল গুলো বাতাসের
তালে তালে মাথা নুয়ে আমাদের অভিবাদন
জানাচ্ছে । স্নিগ্ধা
একটু পর পর রাগ করে আমার থেকে
দূরে সরে যাচ্ছে ।আমি ওর পিছে হাঁটছি
ওকে ধরার জন্য । মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে
আমি ক্যাম্পাসে হাঁটছি ওর পিছু
পিছু । কিন্তু সেই গানটি এখনো শুনছি
আমি । মনে হচ্ছে বহুদূর থেকে ভেসে আসছে ।
একসপ্তাহ জ্বরের ঘোরে একদম বেহুশ
ছিলাম । দুইটা ক্লাস টেস্ট , তিনটা
প্র্যাকটিকাল ক্লাস মিস করেছি । এতো
দুর্বল ছিলাম যে বন্ধুরা রিক্সায় করে
( আমার হল থেকে মাত্র দুই মিনিটের রাস্তা )
মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে ডাক্তার
দেখিয়ে আনলো । ডাক্তার বলেছে
ভাইরাস জ্বর । বুঝলাম না ! স্নিগ্ধাকে
ঐ ছেলের প্রপস করার সাথে আমার
ভাইরাস জ্বরের কি সম্পর্ক ।
এক সপ্তাহ পর জ্বর কমে গেলো ।কিন্তু
শরীর প্রচণ্ড দুর্বল । স্নিগ্ধাকে দেখা
হয়নি কতদিন ! ওহ ! আমি আজ শেষ
বার এর মতো দাঁড়িয়ে আছি । আমি
স্নিগ্ধাকে বলবো ," আমি আসলে
নিজেকে তোমার বিশ্বাসী প্রমান
করতে ব্যর্থ হয়েছি । এতদিন যা করেছি
তার জন্য আমাকে ক্ষমা করে দিও " ।
আজ এতো রোদ ! মাথার মধ্যে ঝিম ঝিম
ব্যথা শুরু হয়েছে । মাথার দু সাইডে
টিকটিক শব্দ শুনতে পাচ্ছি । আমার
কি আবার জ্বর
উঠবে নাকি ?
স্নিগ্ধা ওদের ভবন থেকে বের হয়ে
আসার পর আমি ওর পিছু নিলাম ।
স্নিগ্ধা অবশ্য আমাকে দেখেনি ।
কিন্তু হাঁটার সময় অনুভব করলাম
আমার প্রচণ্ড দুর্বল লাগছে ।পা আর
আগাচ্ছেনা ।আমি মাতালের মতো
এলোমেলো
পা ফেলছি । উফফ ! সব কিছু আঁধার
হয়ে আসছে ক্যান ? স্নিগ্ধাকে এখনই
ডাকতে হবে ।ঐ তো সামান্য সামনে
আছে । আমি সর্বশক্তি দিয়ে স্নিগ্ধা
বলে চিৎকার করে ডাকলাম । মেয়েটা
শুনতে পেলো কিনা জানিনা
এরপর আমার আর কিছু মনে নেই ।
চোখ মেলে দেখি আমি মেডিকেল সেন্টারে
শুয়ে আছি । আমার হাতে স্যালাইন
লাগানো । আমার আশে পাশে যে
অনেক উৎসুক জনতার ভীর সেটা
আমি না দেখেই বুঝতে পারছি ।
ডাক্তার জিজ্ঞেস করলেন
" এখন ক্যামন লাগছে ? "
-এইতো ভালো !
-রোদের মধ্যে সম্পূর্ণ হাটা নিষেধ ।
ছাতা নিয়ে হাঁটবে । মনে থাকবে ?
-হুম ।
ডাক্তার এর রুম থেকে বের হয়ে হয়ে
দেখলাম স্নিগ্ধা বাইরে দাঁড়িয়ে আছে ।
-তুমি এখানে ?
-আমাকে ডাক দিয়ে অজ্ঞান হলে
আমি কি করবো ?
স্নিগ্ধার মুখে লাজুক হাসি ।
এই প্রথম ক্যাম্পাসে স্নিগ্ধার পাশাপাশি
হাঁটছি । মাঝে মাঝে ওর ডান হাতের
আঙুল ছুঁতে চাচ্ছি কিন্তু ও আঙুল সরিয়ে
নিচ্ছে আর মুচকি মুচকি হাসছে ।
পদ্ম পাড়ে আসার সাথে সাথে আবার
অঝোরে বৃষ্টি শুরু হল ।
স্নিগ্ধা ওর বিশাল হ্যান্ড ব্যাগ থেকে
টিপ ছাতাটা বের করে দুজনের মাথার
উপর ধরলো । কিন্তু আমার মাথার
সাথে একটু পর পর বাড়ি লাগছে ছাতার সাথে ।
" দাও ! আমি ধরি ছাতাটা "
-নাহ আমি ধরবো
-আমি যে বাড়ি খাচ্ছি একটু পর পর ।
-এতো লম্বা ক্যান তুমি ?
-মানুষ লম্বা বি এফ এর জন্য পাগল ।
আর মেয়ে কি বলে এসব ?
-হুম তোমাকে বলসে ?
আচ্ছা দাও দুজন মিলে ধরি ।আমি ছাতি
ধরার ছলে ওর হাত শক্ত করে ধরলাম ।
জানিনা ও কি অনুভব করছে এখন !
শুধু কি আমার হাতের উষ্মতা নাকি প্রবল বিশ্বাস ?
Writer•••••••Raj
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ