......পাগলী বউ ও তার ভূলের প্রায়শ্চিত্ত......
:
Writer :MOSTAFIZUR RAHMAN AKASH
:
:
বাবা মার একমাত্র ছেলে আমি। সেই হিসেবে যতটুকু
স্মার্ট
হওয়ার কথা ছিল। ততটুকু স্মার্ট ছিলাম না। একটা
ক্ষ্যাত হিসেবেই
পরিচিতি পেয়েছিলাম। বিয়ের বয়স হয়েছে। বাবা
মাও বিয়ের
জন্য মেয়ে দেখছে। এই মুহূর্তে বসে আছি মেয়ের
বাড়ি।
:- বাবা, আমার মেয়েকে তোমার পছন্দ হইছে?
:- বাবা মার যদি পছন্দ হয়। আর আপনার মেয়ের যদি
আপত্তি না
থাকে তাহলে আমার কোন আপত্তি নাই।
:- গুড ডিশিসন। বিয়াই মশাই ছেলে আমাদের খুব
পছন্দ
হইছে। বিয়ের পাকা কথা সেড়ে ফেলুন।
:- বাবা, আমি ছেলের সাথে কিছু কথা বলতে চাই।
:- আচ্ছা মা। উপরে তোর রুমে নিয়ে যা।
আমি গিয়েই ভড়কে গেলাম। রুমের দেয়ালে, টম
ক্রুজ,
জাস্টিন বাইবার, মাইকেল জেকশন সহ আরো
অনেকের
ছবি দেওয়ালে টাঙ্গানো আছে। আরো একটা
নায়িকার ছবি
ছিল যা সে তাড়াতাড়ি লুকিয়ে ফেলল। ছবিটি
মোটামুটি
আপত্তিকর ছিল। আমি ভাল করে বুঝে গেলাম এই
মেয়ে
আমার জন্য নয়। এই মেয়ে আমার ঘরে গেলে সংসার
পুরিয়ে ছাই করে ফেলবে। আমার রুমে তো ইসলামিক
বই
আছে। আর দেওয়ালে আয়াতুল কুরসী, সূরা ইয়াছিন,
কালেমার ওয়ালপেপার টাঙ্গানো আছে। যা
দেখলে এই
মেয়ের মাথাই ঝলসিয়ে যাবে। না ভাই ওটা আমার
নামা্য ঘর।
আমার বেডরুমে কোন পিক বা ওয়ালপেপার রাখি
নি।
:- এই যে আবুল মিয়া। আপনার কি কোন আক্কেল
পছন্দ
নাই?
:- আমার একটা সুন্দর নাম আছে। বাপ মায়ে আকীকা
করে
নামটা রাখছে।
:- আচ্ছা। শুনেছি আপনি নাকি অনেক পড়াশোনা
করেছেন।
এই কমনসেন্স টুকু নাই যে আমি আপনার শরবতে লবন
মিশায়ে দিয়েছি। যাতে আমাকে পছন্দ না হয়। এর
পরেও
আপনি রাজি হয়ে গেলেন।
:- বাবা মা কখনো সন্তানের অমঙ্গল চান না।
:- আপ্নি কি এই বিয়েতে রাজি?
:- শতভাগ। আচ্ছা আপনার কি মত নেই?
:- না।
:- বি এফ আছে?
:- তাও নেই।
:- তো আমাকে বিয়ে করতে আপনার এত আপত্তি
কেন?
:- কারণ আপনি একটা ক্ষ্যাত ছেলে।
:- এইটা কোন কারণ হল?
:- হুম হল।
:- এইটা কোন ব্যাপার না।
,
দেখলেনই তো মেয়ে এই বিয়েতে কোন ভাবেই
রাজি নয়। আমিও রাজি নই। বাবা মায়ের কথাও
ফেলতে পারছি না।
আমি ভাল করেই বুঝেছি এই মেয়েকে বিয়ে করলে
আমার জীবন তেজপাতা করে দিবে। কোনদিন
একফোঁটা
শান্তি এই মেয়ের কাছ থেকে পাওয়া যাবে না।
.
মা বাবাকে কোনদিন কষ্ট দেই নি। আজ কি করে
দিই।
এদের জন্য না হয় নিজের জীবনটাকেই কোরবানি
দিলাম।
নিজের সুখ বিসর্জন দিলাম। আমার চোখের পানির
বিনিময়ে
যদি ওদের হাসিমাখা মুখ দেখতে পারি তাতেই
আমার খুশি।
,
মেয়ের পুরা অমতে বিয়েটা করেই ফেললাম। বুঝে
গেছিলাম। বাসরঘরে আমার জন্য কি অপেক্ষা
করছে? আমি
মনে মনে সব ধরনের অপমান সহ্য করতে পারি সেই
প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।
দরজা ঠেলা দিয়ে দেখি দরজা খোলাই আছে।
ভিতরে
ঢুকে দেখি। মেয়েটি। না। এখন আর মেয়ে নয়। নতুন
বউ। সে এখন ঘুমিয়ে পড়েছে। যাক অপমান সইতে হল
না।
আমি চাটাই বিছিয়ে নিচে শুয়ে পড়লাম। কেন যে
মনে হল
একবার ডাক দিয়ে বিয়ের শাড়ি খুলে শুতে বলি।
কিন্তু মৃত লাভা
কে আর জ্বালাতে চাই না। থাক ও ঘুমাক। আমি
আমার মত ঘুমাই।
,
ঘুম আসছিল না। শুয়ে শুয়ে চিন্তা করতেছিলাম। এই
বাসররাত
নিয়ে কত রঙিন স্বপ্নই না ছিল আমার। এক মুহূর্তেই
ধুলিস্মাৎ
হয়ে গেল। আমার স্বপ্ন ভঙ্গ করে দিল আমার বাবা
মা। কি
করে এত বড় একটা ভুল করতে পারল? ভাবতে ভাবতে
চোখের কিনার দিয়ে একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল।
সারাটা
রাত একটুও ঘুম হল না। কিছুক্ষণ পরেই আযান দিবে।
তাই
ওকে ডাক দিলাম। এমন বিহেভ করবে আমার জানা
ছিল না।
আধুনিক স্মার্ট মেয়ে তো সকাল নয়টার আগে তার
ঘুমই
ভাঙবেনা হয়তো।
আমি ফ্রেশ হয়ে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ে
আসলাম। রাত
জাগলে আমার প্রচন্ড মাথাব্যথা করে। সকালেই শুরু
হয়ে
গেল মাথাব্যথা। আমি ভাল করেই জানি যেদিন
সকালবেলা শুরু
হয় সেদিন আর এত সহজে থামে না। আমি বসে আছি।
মা
কিচেনে আর বাবা বাইরে গেছে বাজার করতে।
যেই
বাজারটা আমি করি সেই বাজার বাবা করতে
গেছে। নতুন বিয়ে
করেছি তাই বের হতে দিল না।
:- কখন উঠলে তুমি?
:- এইতো। তোমাদের ওয়াশরুম কোনদিকে?
:- তুমি বারান্দায় যাও আমি পানি এনে দিচ্ছি।
আমি গিয়ে ওকে পানি এনে দিলাম। ফ্রেশ হয়ে ও
তার
রুমে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর সে আমাকে ডাক দিল।
আমি রুমে গেলাম।
:- সকালে আমাকে ডাক দিলে কেন?
:- নামাজ পড়ার জন্য।
:- মাই ফুট। তুমি জাননা আমি সকালে উঠি না।
:- মনে ছিল না। নিচে যাও মনে হয় বাবা আসছে।
বাজার
গুলো এগিয়ে নিয়ে আস।
:- পারব না। আমি তোমার বাড়ির চাকরানি নই। যে
সবসময় কাজ
করব।
:- সবে তো কাল বিয়ে হল। কি কাজটা তুমি করলে?
:- কিছুই করতে পারব না। আমার এই বাড়িটাকে
জেলখানা মনে
হচ্ছে। এইরকম বন্ধী হয়ে কোন মানুষ থাকতে পারে?
:- তুমি বলতে চাচ্ছ আমরা মানুষ নই?
:- একদম গরু ছাগলের খোয়ারের মত লাগে।
:- এই খোয়ারেই তোমাকে থাকতে হবে।
এদিকে বাবা চলে এসেছে। হাই প্রেসারের রোগী।
কখন না জানি আবার স্ট্রোক করে বসে। আমি
বাবাকে
সাহায্য করতে চলে যাচ্ছিলাম। এমন সময় সে পিছন
থেকে
ডেকে বলল।
:- আমি ডিভোর্স চাই। এইভাবে আমি থাকতে পারব
না।
আমি শুনেও না শোনার ভান করে চলে আসলাম।
.:- কিরে আকাশ! বউমা কোথায় ?
:- ও উপরে আছে।
:- আসতে বলিস নি?
:- বলেছি। ও একটু বিজি আছে। তাই আসেনি।
:- আচ্ছা এগুলো নিয়ে যা। তোর ফুফুরা আসবে। ওকে
বল যেন তোর মায়ের সাথে একটু সাহায্য করে।
হুম! আর মানুষ খুজে পেলে না। শেষে সাফা
বেছে নিলে। যেই মেয়ে বাপের বাড়িতে এক গ্লাস
জল ভরে খায় না। সেই মেয়ে রান্না করবে। আর সেই
রান্না খেতে পারবে তো? কথা গুলো মনে মনেই
বললাম।
:- এই যা। ভেটকি মাছের মত হা করে দাড়িয়ে আছিস
কেন?
বৌমাকে নিচে পাঠা।
:- হুম যাচ্ছি।
গেলাম রুমে। গিয়ে দেখি সাফা শুয়ে আছে।
ডাক দিলাম।
:- সাফা শুনছ?
:- হুম্ম বল।
:- ফুফুরা আসবে। রান্নার কাজে মাকে সাহায্য কর।
:- আমি তোমাকে কতবার বলব,যে আমি এইবাড়ির
কাজের
মেয়ে নই।
:- মা একা রান্না করতে পারবে না।
:- তো আমি কি করব? পারলে একটা কাজের মেয়ে
রেখে দাও।
:- তুমি থাকতে কাজের মেয়ে কেন?
:- কিহ এতবড় সাহস তোমার? আমাকে কাজের মেয়ের
সাথে তুলনা কর।
:- নাতো। কাজ করলেই কি কাজের মেয়ে হয়ে
গেলা?
:- ঐ তুমি চুপ কর। একদম কথা বলবা না।
,
ভাইরে, বাবা মার ইচ্ছে ছিল। প্রতিষ্ঠিত একটা
মেয়েকে
আমার বউ করে আনবে। আনবেই না কেন? প্রতিষ্ঠিত
ছেলের জন্য প্রতিষ্ঠিত মেয়েই দরকার। এই চাহিদা
টা
এজেবারেই মূল্যহীন নয়। হ্যা ভাই আমি আকাশ ।
পেশায়
ইঞ্জিনিয়ার। আর আমার বউ সাফা। পেশায়
ডাক্তার। যদিও
চাকুরী হয় নি এখনো। এই বন্ধন যেন সোনায় সোহাগা।
সবাই ভাববে দুজনেই অনেক টাকা ইনকাম করবে।
একজনের টাকায় সংসার চলবে আরেকজনের টাকায়
ব্যাংক
একাউন্ট চলবে। কিন্তু কেউ আর চিন্তা করে না।
কেউ
কারো কাছে সহজে পরাস্ত হয় না। দুইজনই ভাববে,
আমি ওর
থেকে কম নাকি? কেন ওর সাথে আপস করব।
মোদ্দাকথা,
দুজনেরই মাঝে ইগো কাজ করবে। সংসার টা
হিজিবিজি হয়ে
যাবে। বাহির থেকে দেখা যাবে অনেক সুন্দর কিন্তু
ভেতরে মোটেই সুন্দর না। যেমন মাকাল ফল। অনেক
সুন্দর একটা ফল কিন্তু ওর স্বাদের কাকেও ঠোকর
দেয়
না।
আমাদের ঝুটিটাও ঐরকম হইছে। একজন ডাক্তার
আরেকজন
ইঞ্জিনিয়ার। গল্পেই বুঝে নিয়েন। আমরা কতটা
শান্তিতে
আছি।
,
যাইহোক ফুফুরা আসছে। সব মিলিয়ে আটজন।
ফুফাত বোনটা আমার বউ দেখবে।
:- ভাইয়া ভাবি কই?
:- গিয়ে দেখ। উপরে আছে হয়তো।
:- আচ্ছা দেখছি।
আধা ঘন্টা পর দেখি। ছোট বোনটি কাঁদতে কাঁদতে
বের
হচ্ছে। আমিও বুঝে গেলাম কিছুটা গড়বড় হয়েছে।
আমি বাহির থেকে রাত নটার দিকে আসলাম। এসেই
শুনি উনারা
চলে যাবে। আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম। উনারা চলে
যাবেন। এর আগে যতবার ই আসছে ততবার ই থেকে
গেছে। আজ কি এমন হয়েছে যে উনারা চলে
যাচ্ছেন।
:- আকাশ। আসছিস তাহলে।
:- কেন ফুফুজান?
:- তোর জন্যই অপেক্ষা করছি।
:- শুনলাম তোমরা চলে যাচ্ছ।
:- হ্যারে বাবা। অনেক কাজ। রাতেই যেতে হবে।
আমার বুঝতে বাকি রইল না। যে কেন চলে যাচ্ছে ?
আমি ওদেরকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে ভিতরে চলে
আসলাম।
রাতে খাওয়া দাওয়ার পর। সাফাকে বললাম।
তোমার সাথে খুব
জরুরী কথা আছে। আমার সাথে কথা না বলে
ঘুমাইয়ো না।
,
রাত সাড়ে দশটা। এই প্রথম সাফাা আমার কথা
মানল। গিয়ে
দেখি জেগে আছে। আমি বিছানায় বসতে বসতে
বললাম।
:- সাফা , সন্ধ্যায় কি হয়েছে?
:- কি হয়েছে? তারো তুমি জানই।
:- আমি বাহিরে যাবার পরে কি হইছে ?
:- কি আর হবে? তোমার ফুফা আমাকে বলল,
সাফা একটু
পানি দাও অযু করব।
:- তুমি কি করলে?
:- আমি ঐ লাল বদনায় পানি নিয়ে দিলাম। মা এসে
পানি ফেলে
দিল।
:- কোন বদনায়? লাল বদনায়?
.
:- হ্যা। লাল বদনায়।
:- বাড়িতে কি অন্যকিছু ছিল না? শেষে বদনায়ই।
বদনা দিয়েছ।
তারপরে লাল বদনা। সবুজ বদনা ছিল না?
:- বদনা তো বদনাই। লাল কি আর সবুজ কি?
:- লাল বদনাটা কোথায় ছিল?
:- টয়লেটের পাশে।
:- সবুজ বদনা কোথায় ছিল?
:- ট্যাংকির পাশে।
:- ঐ মেয়ে তোর কমনসেন্স নাই। পাশাপাশি
জাউগায় দুটো
বদনা কেন রেখেছি?
:- কেন?
:- যেটা লাল বদনা সেটা টয়লেটের জন্য ব্যবহার করা
হয়ে
থাকে। আর সবুজ বদনা এটা ছাড়া অন্য কাজে ব্যবহার
হয়ে
থাকে।
:- আমাকে তো কেউ বুঝায়ে বলেনি।
:- কমনসেন্স থাকলে কাউকে বুঝাতে হয় না। নিজেই
বুঝে যায়। রাবিশ কোথাকার!!!
,
এই প্রথম বউয়ের সাথে খারাপ ব্যাবহার করলাম।
বিয়ের
পরের রাতে। ইচ্ছা ছিল ঠাডায়ে দুইটা লাগায়ে
দেই।
ইচ্ছাটাকে মেরে ফেলেছি। স্বামী হয়েছি ঠিকই
স্বামীর অধিকার এখনো পাই নি। যেটা বাসর রাতে
পাওয়ার কথা
ছিল। নিজের বউ অথচ তাকে স্পর্শ করা এখনো আমার
জন্য
হারাম। কারণ মোহরানা এখনো আদায় করি নি।
,
বিয়ের জন্য লন্বা ছুটি নিয়েছিলাম। তা শেষ।
অফিসে যাওয়া
আসাও শুরু। দেখতে দেখতে একটি মাস কেটে গেল।
কিন্তু এখনো ওর অবস্থানেই ও আছে। আমাকে মেনে
নেয় নি। আমিও অপেক্ষায় আছি। যখন মন থেকে
মেনে
নিবে সেদিন ওকে ছোব। এর আগে নয়।
,
অফিসে যাচ্ছি।সাফা বলল, তাড়াতাড়ি ফিরে
এস। রাতে কিছু কথা
আছে। আমি বললাম, এখনি বল।
সে বলল, না। রাতের কথা রাতে বলাই ভাল।
,
আমি তো খুশিতে আত্মহারা। কেননা আমি ওর গ্রীন
সিগন্যাল পেয়ে গেছি। আজই বোধ হয় স্বামীর
অধিকার
পাব। একমাসে আমার জীবনটা পুড়িয়ে তামা তামা
করে
ফেলছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি চলে আসলাম।
আসার
সময় একটা লাল গোলাপ আর বেলি ফুলের মালা
কিনে
নিয়ে আসলাম। দুটোই এগিয়ে দিলাম। লাল গোলাপ
দেখে
অনেক খুশি হইছিল। আমি ওর খুশি হওয়া দেখে সুযোগ
বুঝে বেলি ফুলের মালাটা খোপায় বেধে দিলাম।
যা
রিয়্যাক্ট করেছিল। তা আমার ভাবনার বাইরে ছিল।
:- এই জন্যই তোমাকে আমি ক্ষ্যাত বলি। কি বেধে
দিলে
এটা? এটা কি কোন মানুষ পড়ে? একটা পায়েল
আনতে.....
:- কি বলছ তুমি?
:- হ্যা ঠিকই বলছি।
,
এই বলেই খোপা থেকে ফুলের মালাটা হেচকা টানে
খুলে ফেলেদিল। সাথে কিছু চুলও ছিড়ে গেল। সাথে
লাল গোলাপটাও ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিল। আমি
খুব কষ্ট
পেলাম। আমার ভালবাসা ওর বুকে ঠাই না পেয়ে
ঠাই পেল
ময়লার ঝুড়িতে।
আমি উত্তর দিকে মুখ করে শুয়ে পড়লাম। ও দক্ষিণ
দিকে।
আমাদের মাঝখানে একটা কোলবালিশ।
.
ওহ হ্যা পাঠক বৃন্দ। আমি নিচে থেকে উপরে শোয়ার
পারমিশন পেয়েছি। পেতাম না। যদি খুব জ্বর না
করত। বিয়ের
কিছুদিন পরেই ঠান্ডা লেগে জ্বর এসেছিল। জ্বরের
পর
থেকেই খাটে ঠাই পেয়েছি।
কিছুক্ষণ পর।
'- সাফা শুনছ?
:- হুম বল।
:- সকালে বলছিলা। কি যেন বলবা রাতে?
:- ওহ হ্যা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য তোমাকে
ধন্যবাদ।
আবারের জন্য মর্মাহত হলাম। মনে করে দেবার জন্য
আমাকে ধন্যবাদ?????
:- হ্যা কথাটি বল।
:- আমি ডিভোর্স চাই। এভাবে আমি আর পারছি না।
অযথা তুমিও
কষ্ট পাচ্ছ আমিও পাচ্ছি।
:- তুমি কি সত্যিই চাও?
:- হ্যা চাই। একেবারে তিন সত্যি।
আমার বুকটা হাহাকার করে উঠল। দুমরে মুচড়ে ভেঙে
যাচ্ছে। এই ব্যথাটা কেন জানি সহ্য করতে পারছি
না।
:- কি হল কথা বলছ না যে?
:- কি বলব? তুমি যা চাও তাই হবে।
:- তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। কবে ডিভোর্স দেবে
তুমি?
:- ছয় মাস অপেক্ষা কর।
:- আবার ছয় মাস কেন?
:- ছয় মাসের আগে ডিভোর্স দেওয়া যায় না।
:- উফফফ! এই ছয়মাস তোমাকে আমার সহ্য করতে
হবে?
:- আমি এতটাই তোমার কাছে অসহ্য হয়ে গেছি?
:- হুম অনেক।
:- আচ্ছা তুমি এক কাজ করতে পার।
:- কি?
:- এই আমাকে তোমার আর সহ্য করতে হবে না। তুমি
তোমাদের বাড়ি চলে যাও। ছয়মাস পরে পেপারে
সাইন
করে দিয়ে যেও।
:- ওকে তাহলে আমি কাল সকালেই চলে যাব।
:- সেটা তোমার খুশি।
:- ঘুমিয়ে পড়।
:- ওকে গুড নাইট।
,
সাফা ঘুমিয়ে পড়ল। আমি কিছুতেই ঘুমাতে
পারছি না। কাল
তাহলে ও চলেই যাবে। আজ রাতই অকে দেখতে
পারব।
এই সুযোগটা মিস করতে চাই না। না ভাই জোর করে
অধিকার
আদায় করব না। আজ সারারাত ওর সৌন্দর্য আমি
দেখব। সত্যিই
মেয়েরা ঘুমালে অনেক রুপবতী লাগে। আজ
সারারাত
তাকে দেখব। খুব অবাক নয়নে তাকে দেখছি।
বিয়ের পরে তেমন একটা ঘুমাতে পারি নি। দেখতে
দেখতে সকাল হয়ে গেল। এত তাড়াতাড়ি সময় চলে
গেল।
আজ শেষ দেখা তাই মনে হয় তাড়াতাড়ি ই চলে
গেল।
:- আমাকে গাড়িতে তুলে দিয়ে এস।
:- যাচ্ছি। বাবা মা কে বলে এস।
:- বলেছি।
:- উনারা কি বলল?
:- ভাবতে বলল।
:- তুমি যা করছ তা ঠিক মনে করছ?
:- ১০০% ঠিক। শোন আকাশ। আমাদের ডিভোর্সের
পরে
একটা বিয়ে করে নিও।
:- আমাকে নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না।
:- ওকে বাই। ভাল থেক।
:- সাবধানে যেও।
:- হুম্মম।
.
সাফা চলে গেল। ইচ্ছামত কাঁদতে ইচ্ছা করছে।
এই জন্যই
লোকে বলে কাউকে বেশী ভালবাসতে নাই। সবাই
ভালবাসার মূল্য দিতে জানে না। সাফাও না।
তামান্না চলে যাওয়ার পর খুব কষ্ট হত আমার। ভেঙে
পড়া শুরু
করে দিলাম। দিন দিন আমার অবনতি হতে আরম্ভ
করল।
এইভাবে আরো দুইমাস কেটে গেল। একটা বারের
জন্যও আমাকে ফোন দেয় নি। আমি ফোন দিলাম।
কিন্তু
আমার সব নাম্বার ব্ল্যাকলিষ্টে এড করা।
অনেক কষ্ট সয়েছি এই তিন মাসে। আর পারব না।
নিজেকে
সামলাতে হবে। আমিই যাদের একমাত্র অবলম্বনের
কর্ণধার। আমার কিছু হয়ে গেলে ওদের কি হবে?
তাই নিজেকে পাল্টাতে আরম্ভ করলাম। যতটুকু
আবেগ ছিল
সব বাদ দিলাম। আবেগের কথা শুনলেই মনে হত কেউ
হয়তো মশকারি করতেছে। এতটা কঠিন হতে পারব
আমি
ভাবতেও পারি নি। পাঁচ মাসে পুরো চেঞ্জ। এখন
নিজেকে নিজেই চিনতে পারি না। মাঝে মাঝে
ভাবি এত কঠিন
হলাম কি করে?
ছয়মাসের মধ্যে একমাস বাঁকি। গত পাঁচমাসে দুইবার
সাফার
সাথে দেখা হইছে। সাফা চাকুরী পেয়েছে। এখন
সে
চাকুরী জীবী। সে নিজের পায়ে দাড়াতে
শিখেছে।
ওকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে। মোটেই ভাল নাই। এমনকি
হয়তো ও অসুস্থ। সেদিন দেখা হয়েছিল ভাবছিলাম
জিজ্ঞেস করব।সাফা তোমার এই অবস্থা কেন?
কিন্তু করি
নি। ঐ যে বললাম আমি এখন আগের অবস্থায় নাই।
পুরো
পাথর হয়ে গেছি। আমার সাথে শিলা ছিল। আমার
কলিগ। একই
রিক্সায় যাচ্ছিলাম। দেখে যেকেউ ভাববে আমরা
প্রেমিক
ঝুটি। সেও হয়তো ভেবেছে। দেখে ওর মুখ যতটা
কালো হয়েছিল ততটা কালো কাল বৈশাখী ঝড়ের
সময়ও
আকাশ হয় না। আরেকদিন দেখা হয়েছে। যখন আমি
আর
শিলা রেস্টুরেন্ট এ বসে খাচ্ছিলাম আর হাসাহাসি
করছিলাম। এমন
সময় দেখি সাফা রুমের সামনে দাড়িয়ে আছে।
আমিও
শিলার হাতে হাত রেখে ওরই সামনে দিয়ে বের হয়ে
গেলাম। যেন ওকে আমি দেখি নি।
সত্যিই অভিনয় টা অনেক কঠিন একটা জিনিস।
তাইতো আমি
হাফিয়ে উঠতেছি। তিনবার দেখা হইছে এতেই
চলবে।
আরতো মাত্র কয়েকটা দিন। তারপরেই ডিভোর্স।
এরই মাঝে ওর পিছনে খোজ লাগালাম। ও কেন এত
রোগা
হয়ে গেছে? যা জানলাম। তা আমার ধারণাতীত। ওর
বাবা মা
কে মানে আমার শ্বশুড় শ্বাশুড়ি কে বৃদ্ধাশ্রমে
পাঠিয়ে
দিয়েছে। আর ওকে আমার সুমুন্ধি বউ মানে ওর
আদরের
ভাবি তাকে নিত্যদিন কটু কথা শুনায় । তাই বাধ্য
হয়ে চাকুরী টা
নিয়েছে। নিজে চলে আর বাবা মার জন্য খরচ
পাঠায়। দিনরাত
তো খাটেই ওভারটাইম করেও কূল পায় না।
হাসপাতালে সবার
কটু কথা তো ফ্রি শুনতে হয়। সেই কথা গুলো নাই বা
বললাম। যেহেতু এখনো ও আমার স্ত্রী। স্ত্রীর
সবকিছু গোপন করা স্বামীর দায়িত্ব এবং কর্তব্য।
আর
এখানে বললাম যেন সবাই সাবধান হয়ে যায়। আপাতত
এইটুকু
বুঝে যে কারো ঘর ভেঙে দিয়ে নিজের ঘর আস্ত
রাখা যায় না।সাফার ঘরও আস্ত নাই। এখন
সীফা বুঝেছে
আসলে বাস্তব কতটা কঠিন।
,
গত আট তারিখে আমাদের বিয়ের ছয়মাস পূর্ণ হল।
আজকে
বারো তারিখ। শিলার নাম্বার থেকে সাফাকে
ফোন দিলাম।
:- হ্যালো।
:- কেমন আছ?
:- তা জানা তোমার দরকার নাই। শুধু এইটুকু জান। কাল
তোমাকে
আর আমাকে কোর্টে যেতে হবে। উকিল সাহেব
যেতে বলেছে।
:- হ্যালো। শোন।
আমি আর কিছু না বলে ফোন কেটে দিলাম।
ডিভোর্স
যখন হয়েই যাবে মায়া বাড়িয়ে লাভ কি?
কালকের দিনের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।
শিলা আমাকে ফোন দিল।
:- হুম শিলা বল।
:-সাফা ফোন দিছিল।
:- কি বলল?
:- তোমার নাম্বার বন্ধ কেন? জিজ্ঞেস করল।
:- লাইন কাট আমি ফোন দিচ্ছি।
আমি বাইরে গিয়ে ল্যান্ডফোন থেকে সাফাকে
ফোন
দিলাম।
:- আকাশ। তোমার নাম্বার বন্ধ কেন?
:- তোমার না জানলেও চলবে।
:- কি এমন অপরাধ করেছি যে তুমি আমাকে এভাবে
কষ্ট
দিচ্ছ?
:- কিছুই করনি তুমি?
:- আমার তো কিছুই মনে পড়ছে না।
:- পাঁচ মাসের ইতিহাস ঘেটে দেখ মনে পড়বে।
:- আমি তোমার বাড়ি হয়ে আসব?
:- না। তুমি ডাইরেক্ট কোর্টে চলে যাবে। আমিও
চলে
আসব।
:- তোমার নাম্বার তো নাই। কেমনে যোগাযোগ করব?
:- না থাকলেও চলবে। আমিই তোমার সাথে
যোগাযোগ
করব। হ্যা মনে করে ফোনটা সাথে এন।
লাইন কেটে দিলাম। আমি আমার নাম্বার চেঞ্জ
করে
ফেলেছি। নতুন নাম্বার থেকে ফোন দেই না।
অন্যকারো থেকে দেই।
খুব ভাল করেই বুঝতে পারছি। ওর ভুল ও ধরতে পারছে।
ভুলের প্রায়শ্চিত্তও করতেছে খুব। আমি চাই আরো
বুঝুক। স্বর্ণ পোড়ালে যেমন খাটি হয়। সেও পুড়ে
খাটি
মানুষ হোক। ওকে ডিভোর্স দেওয়ার কোন নিয়্যত
আমার নেই। ওকে ছাচে ফেলে একটু বেহায়া থেকে
মানুষ করার চেষ্টা করছি।
পাঠকদের বলছি কষ্ট করে অপেক্ষা করুন। আরো
অনেক মজা পাবেন।
.
শিলা হচ্ছে আমার ক্লোজ বান্ধবী + কলিগ। সে
বিবাহিত
তবে স্বামী ঢাকার বাইরে থাকে। আমি আর শিলা
একইসাথে
কোর্টে গেলাম। সাফা ওর কয়েকটা বান্ধবীর
সাথে
কোর্টে আসল।
উকিল সাহেব জিজ্ঞেস করলেন।
:- আপনারা এসেছেন তাহলে?
:- হুম। এসেছি।
:- মিসেস সাফা , আপনি কি এখনো আপনার
সিদ্ধান্তে অটল?
:-............. ( চুপচাপ )
:- আমাকে আরো একমাস সময় দেওয়া হোক। আমার
আরেকটু বোঝার আছে।
:- না। উকিল সাহেব। আমার হাতে আর সময় নাই।
আজকেই
ব্যবস্থা করেন। এই যে শিলা কে দেখছেন। উনি
আমাকে
বিয়ে করার আনন্দে কোর্ট পর্যন্ত চলে এসেছে।
সাফাকে ডিভোর্স করে শিলাকে বউ করতে চাই।
:- হ্যা উকিল সাহেব। আমি রাজি। ( শিলা )
,
সাফা কটমট চোখে একবার শিলা আবার আমার
দিকে তাকায়।
রাগে কিছুই বলতে পারে না। মেয়েরা আর যাই হোক
স্বামীর ভাগ কাউকে দিতে চায় না।
উকিল সাহেব বললেন।
:- দেখুন আকাশ। ডিভোর্স একজনের সম্মতিতে
দেওয়া
যায় না। দুজনেই যখন সম্মতি দেয় তখন ই দেওয়া যায়।
:- উকিল সাহেব, সাফাও রাজি আমিও
রাজি.......
:- দেখুন । সাফা আবার সময় চাচ্ছে। এই মুহূর্তে
জজের
কাছে গেলে রাগান্বিত হবেন। তারচেয়ে বরং
আপনারা
একমাস পরেই আসুন।
কি বলেন সাফা?
:- হ্যা তাই করুন।
চেয়ে দেখলাম। স্বস্থির নি:শ্বাস ফেলল সাফা ।
তারপরে
আর কি! যে যার বাসায় চলে গেলাম।
পরের দিন সকালে। এই ধরেন দশটার মত হবে। কে যেন
কলিংবেল বাজাচ্ছে?
আমি আড়মোড়া দিয়ে গেট খুলতে গেলাম। গিয়ে
দেখি
সাফা।
:- একি আপনি এখানে কেন?
ওর রাগী লুকটা দেখতে খুব ভাল লাগে আমার। তাই
আপনি
করেই বললাম। কি করব? তাই আপনি করে বলে একটু
রাগালাম।
:- সরেন বলছি।
:- এই কে আপনি?
:- ঘুম থেকে উঠে মনে হয় মাথার তার ছিড়ে গেছে।
তাই
চিনতে পারছেন না।
:- আমি ঠিকই আয়ায়ায়ায়া......... । ও মাগো.... ।
.
এইবার আমার কোমরটাই না ভেঙে গেল। এইডা বউ
না
জল্লাদ? যে ধাক্কা মারছে। মেপে মেপে তিনহাত
হবে।
পিছনে নিয়ে ফেলেছে। বাপরে বাপ এই শক্তি ছিল
কই?
আমার চিৎকার শুনে মা হাজির। মা তো আল্লাদে
গদগদ হয়ে
গেল। তিনার বউমাকে নিয়েই ভিতরে চলে গেলেন।
আমাকে দেখলেন না। দেখেও না দেখে চলে
গেলেন। কি আর করব? আমি দাড়িয়েই খোড়াতে
খোড়াতে ভিতরে চললাম। যতটুকু ব্যাথা না পাইছি
তার চেয়ে
বেশী অভিনয়। সবার সামনে দিয়ে ইশ! আ! মাগো!
বলে
বলে আমার রুমে এলাম। সিড়ি দিয়ে উপরে উঠার
সময় এমন
ভাব করলাম যেন সত্যিই অনেক ব্যথা পেয়েছি।
আসলে
কিছুই না। কিছুই হয়নি। এমন ও না। হাটুতে ছিলে
গেছে।
পরনে ট্রাউজার ছিল। ডান পায়ের কাপড় টা হাটুর
উপরে তুলে
নিলাম। যাতে স্পষ্ট দেখা যায়।
কিছুক্ষণ পর কেউ রুমে আসল মনে হল। আমি আর
দরজার
দিকে তাকাই নি। তাকালে অসুবিধা হয়ে যাবে।
দেখি বউ আমার
পায়ের কাছে গিয়ে বসল। আমি তো সজাগই। খুব
ঘুমের
ভাব ধরলাম। যেন ঘুমিয়ে আমি একূলে নাই।
বউ এসে কি যেন একটা মলম লাগায়ে দিল। হেব্বি
তেজ।
মলম দিয়ে হালকা একটা পট্টি বেধে দিল। আমি তো
লাফ
মেরে বসে পড়েছি।
:- Get out from my room.
জোরে চিৎকার করেই বললাম। প্রচন্ড ভয় পেয়েছে
মেয়েটা। আমার এইরকম হার্ডনেস আগে কখনো
দেখাই
নি। আজই প্রথম।
.
শিলাকে কে যে খবর দিল। জানি না।
:- এই আকাশ। কি হয়েছে তোমার?
:- এইতো হাটুতে আর কোমড়ে ব্যাথা পাইছি।
:- কেমনে?
:- পা পিছলে পড়ে গেছিলাম।
:- দেখে চলতে পারো না?
:- হঠাৎ করেই এমন হল।
,
কিছু একটা মিথ্যা বললাম। সব কথাই তো বাইরের
লোককে
বলা যায় না। তাই শিলাকেও বললাম।
আমি আর রাতে বের হইনি।
খাওয়া দাওয়ার জন্য ডাকল। অবশ্য সাফাই
ডেকেছে। খাবার
টেবিলে আব্বু আম্মু আমি বসে আছি।
:-সাফা, আকাশকে ভাত বেড়ে দাও।
:- দরকার নাই। আম্মু। আমি নিজেই পারব।
এই বলে নিজেই নিয়ে খেতে লাগলাম। বড্ড ইচ্ছা
করতেছিল ওকে জিজ্ঞেস করতে। তুমি খাইছ?
কিন্তু এবার সত্যিই ইগো কাজ করল। আর জিজ্ঞেস
করলাম
না। মাছের মুড়ো রান্না করেছে। কিন্তু কে রেধেছে
জানি না। অনেক মজাই হইছে। প্লেটগুলোর দিকে
তাকিয়ে
দেখি। তরকারি একটু কম কমই। আব্বা আম্মা কে তো
আর
বলতে পারি না। যে কম খাও। আরো একজন রয়েছে।
খাবার ঠিকই ছিল। কিন্তু শিলা কে না খেয়ে যেতে
দেয় নি।
তাই আমাদের ভাগে একটু কম পড়ছে। কোন অসুবিধা
নাই।
আমিই না হয় একটু কম খাইলাম। এমন ভাব করলাম যেন
তরকারী
একটুও ভাল হয় নি। তাই কিছু ভাত নিজের প্লেট
থেকে
তুলে দিলাম। আর মাছের মাথা অর্ধেক তুলে
রাখলাম। যেন
তামান্না খেতে পারে। মেয়েটিকে দেখে
এমনেতেই মায়া লাগছে। আমি চলে এলাম উপরে।
কিছুক্ষণ
পর টেবলেট খাওয়ার নাম করে নিচে এলাম। দেখি
আমার
প্লেট থেকে তুলে দেওয়া ভাত আর মাছের মাথা
দিয়ে
খাচ্ছে। অনেক ইমোশনাল হয়ে গেলাম। স্বামী
স্ত্রীর মাঝে অনেক গভীর ভালবাসা থাকলে স্ত্রী
এই
কাজ করে। তার মানে তামান্না পুরোপুরি আমাকে
মেনে
নিয়েছে। এই ইমোশনালেই যদি হুট করে ভাল
ব্যাবহার শুরু
করি। নিশ্চিত ধরা খেয়ে যাব। মা, ওমা। টেবলেট
খাব। গরম পানি
কই?
:- মা ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি করে দিচ্ছি।
( সাফা )
:- দরকার নাই। আমি ঠান্ডা পানি দিয়েই কাজ
সেড়ে নিচ্ছি।
ঔষধ খেয়ে চলে আসলাম। তাড়াতাড়ি ই ঘুমিয়ে
পড়লাম।
মাঝরাতে সজাগ পেয়ে দেখি। ও আমার বুকের উপরে
মাথা
রেখে শুয়ে আছে। ধাক্কা মেরে ফেলে দিলাম।
:- এত্ত সাহস কই পেলে তুমি?
:- তুমি আমার স্বামী। স্বামীর বুকে মাথা রেখে
ঘুমানো
খারাপ কিছু নয়। তাছাড়া সাহসেরও দরকার হয় না।
:- এই চুপ কর!!!
:- না করব না। মারবেন? মারেন।
:- কেন মারব? মারতে গেলে অধিকার লাগে।
:- আমাকে মারার অধিকার আপনার আছে।
:- মানি না সেই অধিকার। যাকে কিছুদিন পরে
ডিভোর্স দিব।
তাকে অধিকার আর দেখাতে চাই না।
:- খুন করে ফেলব। আরেকবার ডিভোর্সের কথা
বললে।
:- কি করবা তুমি?
:- কি পাইছেন? শুনি। আমাকে তাড়িয়ে ঐ শিলাকে
বিয়ে
করবেন? কখনো হতে দেব না।
:- আমি ওকেই বিয়ে করব এবং অষ্ট্রেলিয়া চলে
যাব। তুমি
থাক তোমার দাম্ভিকতা নিয়ে।
:- বিশ্বাস করুন আমি অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছি।
আপনার
কাছ থেকে গিয়ে বুঝেছি। নারীদের স্বামী কি
জিনিস?
আমার ইচ্ছা ছিল আমি নিজের পায়ে দাড়াব।
দাড়িয়েও ছিলাম।
কিন্তু নিজের পায়ে দাড়াতে গিয়ে আমি অনেক
কিছুই
হারিয়েছি। এর জন্যই আমি আমার মহামুল্যবান
জিনিস হারাতে
বসেছি।
:- কি কি হারাইছ তুমি?
:- অনেক। যা বলার মত না। ভাবি বাবা, মাকে
বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে
দিয়েছে। আমি রোজগার করে ভাইয়ার সংসারে
দিয়েছি। বাবা
মাকেও দিয়েছি। সেই সাথে আমি কত্তবড় ভুল
করেছি তা
বুঝতে পেরেছি।
:- কিছুই বুঝনি তুমি।
:- আমি রাগ করে চলে যাবার পরে কিছুদিনের
মাঝেই
আপনার শূণ্যতা অনুভব করি। আমি চাচ্ছিলাম আপনি
গিয়ে
আমাকে নিয়ে আসেন। কিন্তু যান নি। শেষে
ব্ল্যাকলিষ্টে ফেললাম যাতে ফোনে আমাকে না
পেয়ে। আমাদের বাসায় চলে আসেন। কিন্তু তাও
হলনা।
যেদিন আপনার নাম্বারে ফোন দিলাম। সেদিন
দেখি আপনার
নাম্বার বন্ধ। তখন খুব আঘাত পাই আমি। তারপর
আপনাকে
খুজতে বেরিয়ে পড়ি। যদি রাস্তায় কোনদিন দেখা
পাই।
দেখাও পেয়েছি। দেখি আপনার সাথে একটা মেয়ে।
এর
পরে যতবার দেখেছি ততবারই সেই মেয়েকে আপনার
সাথে দেখি। আমার আরো একটা কথা খুব কড়া
আঘাত করল।
যে আমিতো বলেছিলাম আপনি বিয়ে করে নিবেন।
আমার
সত্যিই মনে হচ্ছিল আপনি মেয়েটাকে বিয়েই করে
ফেলবেন। তারপর কোর্টে তো বলেই ফেললেন
শিলাকে আপনি বউ করবেন। তখন আমার মাথায় আগুন
ধরে
যায়। তাই পরের দিনই নিজেই চলে আসি।
:- এখন বুঝে তো কোন লাভ নেই। সময় শেষ।
শিলাকে পাকা কথা দিয়ে ফেলেছি।
:- আবার শিলা! শিলা, শিলা, শিলা । কেমন করে
ভালবাসল যে
আমাকে ভূলে ওকে বিয়ে করবেন।
:- তোমার আর ওর মাঝে প্রচুর তফাত। সেটা তুমি
বুঝবে না।
একটা ছেলে আরেকটা মেয়ের কাছে যা চায় তার
সবই
শিলার কাছে আছে। বিরক্ত করো না। ঘুমাতে দাও।
সাফার মুখ কেমন হয়েছিল জানি না। সত্যিই
ঘুমিয়ে গেছিলাম।
কয়দিন পরেই একমাস হল।
:- সাফা চল।
:- কোথায়?
:- কোর্টে।
এবার মা এসে ঠাস করে চড় মারল।
:- কি পেয়েছিস মেয়েটাকে? আর কত ভুগাবি?
:- মা তুমি কি সবকিছু ভুলে গেছ?
:- না কিছুই ভুলি নি। আমার ভাবতেও অবাক লাগছে
তুই এত পাষাণ
হয়ে গেছিস।
:- হ্যা আমি পাষাণ হইছি। তোমার আদরের বউমার
জন্য।
এই কথা শুনার পরেই আরেকটা মারার জন্য এগিয়ে
আসল।
সাফা মার কাছে হাতজোর করে ক্ষমা চাইল।
আকাশ এসব
করতেছে আমার জন্য।
সব আমার দোষ। ওকে আর মারবেন না ক্ষমা করে
দিন।
সাফার কান্ড দেখে আমি সত্যিই বিমোহিত।
বেচারী কে
আর কষ্ট দিতে মন চাইল না। ও নিজের ভুল ভাল করে
বুঝতে পারছে এতেই অনেক।
,
,আজ সাফা চলে আর আমার ২ম বিবাহ বারশিকি। হসপিটাল বেডের পাশে দাড়িয়ে আছি।
আর আমাদের কোল আলো করে এসেছে আমার আর সাফার মেয়ে তোয়া।।
অনেক ভালবাসি আমার সাফা পাগলি টাকে
,,,,,,,,,,, সমাপ্ত ,,,,,,,,,,,
.
.
.
বি : দ্র: আমার এই গল্পটি সেইসব মেয়েদের নিয়ে
লেখা যারা নিজের পায়ে দাড়াতে চায় আর
স্বামীকে
স্বামী বলেই মনে করে না। নিজের পায়ে দাড়াতে
চান
ভাল কথা দেশ ও দশের মঙ্গল এটা। কিন্তু একটা
চিন্তা
করছেন? আপনার অবস্থা কি হতে পারে? অন্যের
উপকারে আসব তবে নিজেকে পথে বসিয়ে নয়। আমি
কি
বলতে চাচ্ছি বুঝছেন? এই সমাজে অনেক মেয়েকেই
দেখি স্বামীকে দাস বা গোলাম বানিয়ে রাখে।
বউয়ের
কথায় উঠতে হয়, বসতে হয়। মুখে যা আসে তাই বলে
ফেলে। এমন মেয়ে এই সমাজে অহরহ পাওয়া যায়।
নিজের খেয়ে আর কি বলব? শুধু এইটুকু বলব নিজে
মুল্যবান হতে চাইলে স্বামীকে মূল্য দিন। বিয়ের
পরে
বাকি জীবন পার করবেন কিন্তু স্বামীর পরিচয়ে!
স্বামী
যদি এই গল্পের নায়ক আকাশের মত বেঁকে বসে।
সত্যিই
ডিভোর্স দিয়ে দেয়। তখন সাফার মতই অবস্থা
হবে।
কথার প্রমাণ চান। খোজ নিয়ে দেখুন যাদের
ডিভোর্স
হয়েছে। তাদের কাছে জিজ্ঞেস করলে হয়তো সঠিক
তথ্য পাবেন না। নিজে পরখ করে দেখুন। আমার কথার
সত্যতা ধরতে পারবেন।
(ধন্যবাদ সবাইকে। আমার এই লম্বা গল্পটি আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করে পড়ার জন্য। লেখকের পক্ষ থেকে সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন)
#_#_#আকাশ
āĻ āϏাāϧাāϰāĻŖ
āĻāϤ্āϤāϰāĻŽুāĻুāύ