বদ্ধ দুয়ার
.
.
মাটির রাস্তা ধরে একটা সাইকেল চলছে, সোজা পূব দিকে গিয়ে বায়ে ঘুরল। সড়কের দুইধারেই ধান ক্ষেত। ধান গাছগুলো এখনও ছোট। বড় বড় গাছগুলোর পাতা এখন আর নেই বললেই চলে। মাঘ মাস বলে কথা। লোকে বলে মাঘের শীতে নাকি বাঘও কাপে। আর সেখানে, গাছের পাতার টেক্কা দেওয়া! অশোভনীয়। তবুুও দু একটা গাছে কিছু পাতা শোভা পাচ্ছে।
.
এখনও মাটির রাস্তা ধরে সাইকেলটা চলছে। বেশ মরিচা ধরেছে লোহালক্কড়ের কলে। তবুও, খানিকটা পুরনো সাইকেল বলে তো আর এটাকে অবজ্ঞা করা যায় না। এটাতো এখনও চলতে পারে। তাই এটা এখন পাল্টানোর চিন্তাও করতে পারেনা সমিরুদ্দিন। কারণ এটা তার বাবার দেয়া শেষ স্মৃতি।
.
কয়েকটি তাল গাছের সারি পেরিয়ে, সামনেই দুটি লাউয়ের মাচা। দুই চারটে বড় বড় লাউ শোভা পাচ্ছে, লাউ মাচায়। সমিরুদ্দিনের সাইকেলটা থেমে গেল। নাহ্ চেইন ঠিকই আছে, কিন্তু সমিরুদ্দিনের সামনে এগোনোর জো নেই। কারণ লাউয়ের মাচার পেরিয়েই তার খড় কুটার কুটির। সমিরুদ্দিন সাইকেল নিয়ে ঢুকে গেল সংকুচিত মাটির আইল ধরে। বাড়ির পুরনো কাঠের দরজা প্রায় বছর বিশেক আগের। সন আর মাটি দিয়ে তৈরি এই ঘরটাই সমিরুদ্দিনের শেষ সম্বল। আর এই ছোট্ট এক টুকরো বসত ভিটার তিনদিকেই শোভা পাচ্ছে সবুজ ধান ক্ষেত। তবে একটিও সমিরুদ্দিনের নিজের না। নিজের বলতে বাড়ির উঠানে যে সামান্য সবজির চাষ এটি ছাড়া আর কিছুই নেই।
.
বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে সাইকেলের বেল বাজালো সমিরুদ্দিন। বারো বৎসরের নাতি এসে দাদার সামনে দাঁড়াল।
----তোর দাদির কি অবস্থা এহন, খাওন খাইছে?(সমিরুদ্দিন)
----না সকালে কয়ডা ভাত খাইছিল। কিন্তু এহনও তো গায়ে জ্বর আছে। তুমি ঔষধ আনছ?(রতন)
--- নারে ভাই, দোকান বন্ধ। হাটে যাওন ছাড়া উপায় নাই।
--দাদা তুমি থাক আমিই যাই।
----না তুই এইহানেই থাক। আমি দেহি লাউ দুইডা বেইচা কিছু টাকা পাওয়া যাই নি। তুই তর দাদির লগেই থাকিস।
.
সমিরুদ্দিন বটি নিয়ে লাউ মাচার দিকে যায়, তারপর যথারীতি গাঁয়ের হাটে যাত্রা।
সন্ধ্যা নামার বেশ আগেই বাড়ি ফিরল সমির। নাতির কাছে কয়েকটা ঔষধ ধরিয়ে দিল সে। তারপর নদীর দিকে ছুটল, কয়েকটা ডুব দিতে। তারপর ঘাটে দাঁড়িয়ে কাপড় পাল্টে, ভেজা লুঙ্গি কাধে নিয়ে বাড়ি ফিরল সমিরুদ্দিন।
"রতন আজকে কি খাইছস। কিছু রান্দস নাই, দাদা।" সমিরুদ্দিন কিছুটা উচ্চস্বরে বলে। রতন কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে শান্তকন্ঠে জবাব দেয় "দাদা, ভাত আর আলু গুডা ভর্তা করছিলাম, অহন পান্তা আছে। খাইবা?"
.
রতন ও রতন আমারে ধরত আমি বমি করমু, রতন। সহসাই রতনের দাদির ডাকে রতন দাদির কাছে চলে গেল। জ্বরের শরীর নিয়ে নিজে উঠতে পারে না। রতনের উপর ভর করেই চলতে হয়। দাদি রতনের কাধে ভর করে বাইরের উঠানে যায়। পরে আবার রতন দাদিকে শুইয়ে রেখে, কোদাল নিয়ে যায় উঠানে। বমির সৎকার সাধনের জন্য। এত অস্থিরতার মাঝেও, তার যেন ক্লান্তি নেই। থেকেই বা কি হবে! তার তো আর এই দুজন ছাড়া কেউ নেই। যারা সেই ছোট্ট বেলায় বাপ মা হারা এতিম রতনকে মানুষ করছে। তাঁদের তো এই একটু আধটু খেদমত পাওয়ার অধিকার আছেই। তাই রতন এসব বিষয়ে ধৈর্য ধরে। বিরক্তকে অন্তরে দাফন করে দেওয়া তার অভ্যেস হয়ে গেছে।
.
ক'দিন পর জ্বর ছাড়ল রতনের দাদির। জীবনে আবার ছন্দ ফিরে এল। জীবন যেন ভাঙা তরীর মত, যারে চালানো খুব দুরূহ। কখনও নিশ্চল, কখনও সচল, আবার কখনও অচল।
রতন অবশ্য এই বছর ধান কাটার চুক্তি নিয়েছে। পাঁচ কুর জমির ধান। দাদা আর রতন দুজনে মিলে সকালে যায় বিকালে আসে। এভাবেই চলে দিন।
কিন্তু তবুও চিন্তা যেন ছাড়েনা। গরীবের সুখ যে দুঃখের সাথে লাগানো। ধানের মৌসুম শেষে আবার কাজ খুজতে খুজতে দিন যায়। ধান কাটার মৌসুম শেষে গ্রামে চলছে নানান আয়োজন। ব্যাপারিরা ধান কিনতে ব্যাস্ত। গাঁয়ের লোক ব্যস্ত ধান সেদ্ধ করতে। গ্রামের পথে পথে হাটুরের দল ঘুরে । কখনও মিষ্টি ঘন্টা বাজিয়ে আসে, হাওয়ায় মিঠাই বা নারিকেলি মালাই বিক্রেতা। গাঁয়ের পুঁচকে বুড়ো সবাই ছুটে ধান নিয়ে মালাই কিনতে। যাদের জমি জিরাত নাই আবাদ নাই তাদের মলিন ঘরের শুন্য দৃষ্টি কেউ দেখতে যায় না। যাবেই বা কোন লোভে। তাদের তো আর এতসব নেই।
.
গাঁয়ের সুখি দশার ইতি ঘটল রাতের চোর চোর ধ্বনিতে। গত দুই দিনে বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। মেম্বার বাড়ির উঠানে ছোট খাট একটা জটলা। কাল রাতে সুকুর মাতব্বরের ঘরে চুরি হয়ছে। ধান বেচার চার হাজার টাকা উধাও। এই নিয়ে গাঁয়ের লোকেরা কথা বলতে আসছে মেম্বারের সাথে। মেম্বার সাধারণ আশ্বাস দিয়ে বিদায় করলেন।
কিন্তু দু একদিন পর আবার ঘটনা। চোর যেন জীবন দিয়ে লেগেছে গ্রামের শান্তি নষ্ট করতে। তাঁর দোষ দিয়েই বা লাভ কি? যদি এদের কাজের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হত। তাহলে অভাবের জন্য পেটের তাড়নায় এই ঘৃণার পথ ধরত না। লোকে বলে অভাবে নাকি স্বভাব বদলায়। তাই হয়তো শান্তির গাঁয়ে অশান্তির দাবানল শুরু হয়েছে। মানুষ যখন ধৈর্যের চুড়ান্ত সিমানায় পৌছে তখন নাকি জীবনের মায়া করার সুযোগ থাকে না।
.
এমনি এক দিন সম্ভান্ত আজগর মোল্লার বাড়িতে ঘটল কান্ড। আজগর মোল্লার ছেলে ভিন দেশ যাবে বলে লাগেজ গুছিয়ে রেখেছিল। কিন্তু রাতে আবার চোরের হানা। বাড়ির কাজের লোকদের হাঁক ডাক শোনে, পাড়ার প্রায় অনেকে মিলে ধাওয়া করল চোরের পাছে। কিন্তু যে জান বাঁচাতে ছুটে, সাধ্য কার ছুটে তার পাছে। চোর যখন বুঝেছে জীবনের দাম লাগেজের চেয়ে বেশি। কারণ ধরা পরলে এ যাত্রায় আর রক্ষা নাই। সবশেষে কোন দিশা না পেয়ে, লাগেজ সমিরুদ্দিনের লাউ মাচার আড়ালে রেখে পালিয়ে যায়।
.
পরদিন সকালেই মাতব্বরের নির্দেশে গায়ের সকল ঘরে খোঁজ লাগানো হয়। সমিরুদ্দিনের ছোট্ট সবজির টাল থেকে লাগেজ উদ্ধার করা হলো। রিতিমত এলাকার সবাই সমিরুদ্দিন আর তার নাতিকে চোর সাব্যস্ত করে। গ্রাম মাতাব্বর তাদের এক ঘরে করে দেয়। একেই বলে বিপদ। যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা। কি দোষ ছিল তার!! গ্রামে যেহেতু মাতবরের কথার উপর কারও কথা বলার এখতিয়ার নেই। তাই বিচার যাই হোক বিচারপতির আদেশই শিরোধার্য।
এসবে সমিরুদ্দিন মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ে। পরিবারের হাল দুর্বল হতে থাকে। রতনকে কেউ কাজে নেয়না উল্টো খুটা দেয় চুর বলে। সমির আর গাঁয়ের হাটে যায় না। মসজিদের আজান শুনে, কিন্তু মসজিদে যাওয়া মানা।
কারণ সমাজের চোখে সে অপরাধ না করেও অপরাধী। সে যেন জ্যান্ত লাশ। সবাই তাকে দেখে কিন্তু কথা বলে না। তার সাথে সব কারবার বন্ধ।
.
সপ্তাহ খানেক পরের কথা। সমিরুদ্দিনের বাড়ির দিক থেকে দুর্গন্ধ আসায় সকলের টনক নড়ে। কারণ সমিরুদ্দিনকে একঘরে করার পর কেউ আর তাদের বাড়ির সীমানায় যায় না। পরদিন ফজরের পর, মেম্বার লোকজন নিয়ে সমিরুদ্দিনের বাড়ি যায়। ঘরের অবস্থা দেখে সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়। কারণ এই পরিস্থিতি কারও কাম্য ছিলোনা। সবার অপমান সইতে না পেরে, তারা স্বপরিবারে আত্মহত্যা করেছে। পুলিশ আসে লাশের সুরত হাল করতে। লাশ গুলো যেন সবার বিবেকে কুঠারাঘাত করছে। চারদিকের স্তব্ধতা যেন হাহাকার করে বলছে এইতো চেয়েছিলে। তুমরা এক নির্দোষ কে দোষী করে নিজেদের দোষ বাড়িয়েছ। এই পারে বিচার পায়নি, তাই পরপারের সেই বিচারপতির কাছে যাচ্ছি।
.
এই ঘটনা হয়তো কিছুটা নাড়া দিয়ে গেছে গ্রামের মানুষদের। এখন তারা মানে চোখের দেখা সবই ঠিক না। জানার আগে মানতে গেলে বিপদ তো হবেই। এখন আর কেউ কাওকে অযথা হেয় করেনা। সবার সচেতন বিবেকের বদ্ধ দুয়ারে কড়া দিয়ে গেছে মৃত সমিরুদ্দিন। আর রেখে গেছে সত্য বলার স্বাধীনতা। গরীবরাও যে মানুষ। ওদেরও তো দুবেলা খাবারের অধিকার আছে।
কিন্তু যারা হারিয়ে গেছে, আর ফিরবে না গাঁয়ের ভাঙা ঘরে।
বারবার ফিরবে সবার, রঙিন হৃদয় ঘরে।
তাইতো সেই বদ্ধ দুয়ার এখন ভেঙে গেছে মনুষ্যত্বের আঘাতে।
.
লেখক: মো.সাইফ উদ্দিন
āĻāϞ্āĻĒ āϏংāĻ্āϰāĻš āĻāϰা āĻāĻŽাāϰ āύেāĻļা। āϰোāĻŽাāύ্āĻিāĻ, āĻৌāϤিāĻ, āϰāĻŽ্āϝ, āĻৌāϤুāĻ āϏāĻš āĻšাāĻাāϰো āĻāϞ্āĻĒ āĻāĻে āĻāĻŽাāϰ āϏংāĻ্āϰāĻšে।
āĻŦুāϧāĻŦাāϰ, ā§§ā§Š āϏেāĻĒ্āĻেāĻŽ্āĻŦāϰ, ⧍ā§Ļā§§ā§
1493
āĻāϰ āĻĻ্āĻŦাāϰা āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰা
Rahathossain1010100@gmail.com
āĻāĻ āϏāĻŽā§ে
ā§Ē:ā§¨ā§Ž AM

āĻāϤে āϏāĻĻāϏ্āϝāϤা:
āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝāĻুāϞি āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ (Atom)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ