"ভুল ছিলো সে"
:::::নিঃসঙ্গ শেরপা
:::::
চার তলার ছাদের কার্ণিসে দাড়িয়ে আছি। ভাবছি ঝাঁপ দেব কি না। ঝাঁপ দিলে নিমিষেই শেষ হয়ে যাবে সব কিছু। আমার লক্ষ্য,আমার ভবিষ্যৎ। বাবা -মার কথা খুব মনে পরছে। আমার মৃত্যুর সংবাদ তারা কিভাবে গ্রহন করবে। আমার মৃত্যু কে কি তারা মেনে নিতে পারবে। ভাবছি আমার ছোট বোনটার কথা, আমি না থাকলে তার চকলেট, আইসক্রীম আর আব্দারগুলো কে পূরণ করবে। আমি ছাড়া তো তার আর কোন ভাই নেই। দাড়িয়ে দাড়িয়ে ভাবছি ঝাঁপ দেব কি না। পাশে কারো উপস্থিত টের পাচ্ছি রকি হবে হয়তো। এখানে আমি আর ও ছাড়া কেও আসে না। ঘার ঘুরিয়ে দেখি যা ভেবেছিলাম তাই। রকি আমার দিকে না তাকিয়েই নিচের দিকে তাকালো। না তাকিয়েই বলতে লাগল ৪ তলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে লাভ নেই তুই বরং সামনের ওই উঁচু দালান থেকে ঝাঁপ দে। তাতে তোর কাজটা অনেক সহজ হয়ে যাবে পঙ্গু হবার ভয় থাকবে না। ভেবে দেখলাম ভুল বলে নি সে।রকি বলেই চলেছে, বলেছিলাম এসব প্রেম ট্রেম এর দরকার নেই। আমি অবাক নয়নে তাকিয়ে আছি ভাবছি এখন এসব কথার মানে কি।ও কি আমার বন্ধু নাকি শত্রু। নাহ্ ওর কথা শুনে লাভ নেই। লাফ টা বরং দিয়েই দিই। কিন্তু অনেক ভয় করছে, বাসার কথা মনে পরছে, বাবা -মার কথা মনে পরছে আমার আদোরের ছোট বোনটার কথা মনে পরছে।রকি আমার মনের কথা টি ধরে ফেলল, বলল ভয় করছে। আমি মাথা ঝাকালাম। ও কেমন করে যেন সব বুঝতে পারে যেমন টা আমি পারি তাকে বুঝতে। শুধু নীলা-ই আমাকে কোনদিন বুঝতে পারে নি। যদি আমাকে সে বুঝত তাহলে আজ আমায় এখানে দাড়িয়ে থাকতে হত না। দাড়িয়ে দাড়িয়ে পুরনো দিনের কথা গুলো মনে করার চেষ্টা করছি কিন্তু ছন্দ পতন হল যখন রকি আমায় টেনে নিচে নামিয়ে আনল। বলে কি অনেক রাত হয়েছে নিচে চল ঘুমাবি। কিন্তু আমি তাকে কিভাবে বুঝাব যে আমি ঘুমতে পারি না। আমার রাত গুলো নির্ঘুম কেটে যায়। আসলে সেটি বুঝানোর ক্ষমতা ই নেই আমার। আমি এখন অনুভুতিহীন একজন মানুষ। নীলা আমায় অনুভূতিহীন করে দিয়েছে।তবুও নিচে এসে ২ টো ঘুমের ঔষধ খেয়ে বিছানায় শরীর টা এলিয়ে দিলাম।বর্তমানে এটাই আমার নিত্য সঙ্গী। মাঝেমাঝে মনে হয় সব গুলো ঘুমের বড়ি একসাথে খেয়ে চিরকালের মত ঘুমিয়ে পরি। হাসি পায় আমার। ছোটবেলায় এক দুষ্টামির ছলে অর্ধেক বড়ি খেয়েছিলাম সেবার ৪ বেলা ঘুমিয়েছিলাম। আমার মা এর সে কি কান্না। বাবা প্রায় সকল ডাক্তার কে হাজির করিয়েছিলেন। কিন্তু এবার,এবার তো তার ছেলে আর উঠবে না তখন তাদের কি হবে।নাহ্ আর ভাবতে পারছি না, অনেক কান্না পাচ্ছে। বেশ তন্দ্রাভাব এসে গেছে এমন সময় ফিরে তাকালাম দেখি সিগারেট হাতে দাড়িয়ে আছে।আমি ডেব ডেব করে তার দিকে তাকিয়ে আছি কারন ও সিগারেট খায় না।ও বলল নিচে গিয়েছিলাম নিয়ে এসেছে। দোকানদার জ্বালিয়ে দিয়েছে।বললাম কাঁশছে কেন।বলল নিভে যেতে পারে ভেবে টান দিয়েছিল তাই কাঁশছে। একদিন নীলাকেও দিয়েছিলাম অনেক কেঁশেছিল সে। চোখ জোড়া লাল হয়ে গিয়েছিল কিন্তু বেশ সুন্দর লাগছিল তার লাল আভায় ঢেকে যাওয়া মুখটি। সিগারেট শেষে চোখ বন্ধ করলাম একটু ঘুমের আশায় কিন্তু নীলার মুখটা ভেসে উঠল। বারবার ভুলে যেতে চেয়েও যেন ভুলতে পারছি না তাকে। ভুলে যাবার জন্য তো তাকে ভালবাসি নি। নীলা আমার ভালোবাসা, আমার ভালোলাগা, আমার স্বপ্ন।যাকে ঘিরে ছিল আমার সমস্ত পৃথিবী,আমার পৃথিবী ছিল নীলা। তার প্রতি এই পাগল করা ভালোবাসার কারনে রকি মজার ছলে মাঝেমাঝে বলত এই ভালোবাসাই তোর কাল হবে। হয়েছেও ঠিক তাই। নীলার সাথে প্রথম পরিচয় হয়েছিল আমার কলেজের রি- ইউনিয়ন এ।আমার বান্ধবীর দূর সম্পর্কের আত্নীয় ছিল সে। বান্ধবীরর মাধ্যমেই পরিচয় হয়।সেদিন থেকেই তার প্রতি ভাল লাগা শুরু হয় আমার। পরবর্তী তে আমাদের ভার্সিটির ছাত্রী হিসেবে আসে সে। তার সাথে পুনরায় দেখা হয় আমার নবীন বরণ অনুষ্ঠানে।এভাবেই চলতে থাকে দেখা সাক্ষাত,আড্ডা, গল্প,মাঝেমাঝে ঘুরতে যাওয়া। বান্ধবীর আত্মীয় হওয়ায় সবসময় আমাদের সাথেই থাকত সে। বেশ সুন্দরী ছিল নীলা। গোল গাল গড়নের বেশ আধুনিক একাটা মেয়ে। তার হাসি তা টানতো আমায় খুব। বেশ আকর্ষনীয় হাসি ছিল তার,যা তার সৌন্দর্যতাকে আরো বাড়িয়ে তুলত বহুগুন। ধীরেধীরে আমি তার প্রতি দূর্বল হতে থাকি। আমার প্রতিও হয়ত তার কিছু কাজ করতো। কারন সব বিষয়ে সে আমায় প্রাধান্য দিত। আমার দূর্বলতার কাথা তার কাছে গোপন থাকে না।রকি নিষেধ করে আমায় আমি শুনি না। একদিন প্রোপোজ করে বসি কিন্তু সে কিছুদিন সময় চেয়ে নেয়। আমি অপেক্ষায় থাকি। একদিন কথা থেকে যেন হটাৎ করে এসে বলে আপনার সাথে কথা আছে।
- রকি টিটকারি করে
- আমি হাসি। হয়ত সে আজ আমার ভালোবাসাকে গ্রহন করবে
-কিন্তু নীলা বলে, দেখুন আমার সাথে আপনার সম্পর্ক টা হওয়া সম্ভব নয়। বেপারটি জানাজানি হলে খারাপ দেখাবে। আমার পরিবার অনেক কনজারভেটিভ।পরবর্তীতে অনেক সমস্যা হতে পারে।
- আমি বিরসবদনে ফেরত আসি।
- রকি টিটকারি করে, বলে এই মেয়ে ভাল না। তোকে নাচাচ্ছে।
- আমি অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকি তার দিকে। এত্ত ভালোএকটা মেয়েকে ও খারাপ ভাবে কি ভাবে। বই পড়ে পড়ে পাগল হয়ে হয়ে গেছে ও, ওর কথা সুনে লাভ নেই। নীলার কথায় আমি হাল ছাড়ি না। এভাবে অনেকদিন ঘুরোঘুরির পরে আমার ভালবাসা কে গ্রহন করে নীলা। আমি বেশ আনন্দিত হয়ে রকি কে বলি দেখলি হয়ে গেল না আমার প্রেম।
-ও হেসে বলে ভালো হয়েছে।
আমাদের প্রেম বেশ ভালো ই জমে উঠেছে বলা চলে। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ঘুরতে যাওয়া, মুভি দেখা, একটি আইসক্রিম দুজনে মিলে ভাগ করে খাওয়া।চলতে থাকে আমাদের প্রেম। আমার পৃথিবী টা ভরে যায় অনালবিল সুখে।কিন্তু এভাবে কিছুদিন চলে যাওয়ার পর ধীরেধীরে মনে হতে লাগলো নীলা আর আগের নীলা নেই।এ যেন এক অন্য নীলা।কারণে অকারণে আমার সাথে ঝগড়া করে। আগের মত করে আর হাসে না, আমার সাথে কম কথা বলে নানান রকম অজুহাত দেখায়। কিন্তু হাটাৎ করে মাঝেমধ্যে এসে আবদার করে এখানে যাব -ওখানে যাব,এটা নিব -ওটা নিব।আমি কিছু বলি না হেসে হেসে তার আবদার মেটাই। তবু যেন তার চাওয়ার শেষ নেই। আর কোন কিছুতে না বললে- ই তার মায়া কান্না শুরু তুমি আর আগের মতো নেই, আগের মতো আর ভালোবাসো না আমায়।
আমি কিছু বলি না তার সকল আবদার মেটানোর চেষ্টা করি।নিজের সকল দামী দামী জিনিষ গুলি বিক্রি করে দেই এমন কি রকির সাধের ফোন টি ও। সে কিছু বলে না শুধু হেসে বলে তোকে আর বাঁচাতে পারলাম না মাফ করে দিস। আমি রাগ দেখাই, ঝগড়া করি কিন্তু ও শুধু হাসে। বাসায় কিছু টাকা পাঠাতাম তা বন্ধ করে দেই। বাসায় বলি এখানে টাকার দরকার। বাবা হাসি মুখে বলে আমরা কি তোকে টাকা পাঠাতে বলেছি পাগল তুই ভালো করে পড়া-লেখা কর। বন্ধুবান্ধব দের সাথে আর সময় কাটাই না সেই সময়ে এক্সট্রা টিউশন করাই আমি শুধুই তার আবদার গুলি মেটাতে। কিন্তু নীলার আবদার দিন দিন বাড়তেই থাকে। দামী গিফট চায় সে সবসময়। আমার কষ্ট টা একটুকু ও বুঝতে চেষ্টা করে না সে।আমি রাগ দেখাই। নীলা ঝগড়া করে,কথা বলা বন্ধ করে দেয়।আমিও বলি যাও তোমার দরকার নেই। অনেক কষ্ট হয় আমার থাকতে পারি না তাকে ছাড়া। মাফ চেয়ে নেই কিন্তু ভালোবাসা টা আর থাকে না। শান্তি নেই আমাদের শুধুই অশান্তি। এভাবেই চলতে থাকি। একদিন টিউশনি তে আছি ছাত্রের উপর সমস্ত রাগ ঝাড়ছি। ছাত্র আমায় বলছে আমার কি হয়েছে।অনেক কষ্ট পাই আমি। কারণ আমার ছাত্র অর্নব কে বেশ ভালোবাসি আমি। হায়রে ভালোবাসা আজ আমায় কোথায় নিয়ে দাড় করিয়েছে।হটাৎ দেখি আমার এখানে রকি এসেছে বেশ ক্লান্তিময় লাগছে তাকে। কথা থেকে যে ছুটে এসেছে বলা মুশকিল।
- কোন কথা না বলে হাত ধরে টেনে বাহিরে নিয়ে এলো।
- কোন কথা না বলে চলতে লাগলাম তার সাথে।কোন কথা বলছে না বেশ বিরক্তিকর লাগছে আমার।
- আমি কিছু বলার আগেই বলল চল আজকে পার্কে যাই। কতদিন হয়ে গেল ২ বন্ধু পার্কে যাই না।
- এবার আর সহ্য করতে পারলাম না বাজে বকতে শুরু করলাম
- সে কিছু না বলে রিক্সা ডেকে বলল পার্কে নীলা আছে।আমি ভয় পেয়ে গেলাম এখন তো নীলার ক্লাস চলছে। কিন্তু রকি কে বেশ থমথমে মনে হচ্ছে। বললাম খারাপ কিছু হয়েছে নাকি। কোন উত্তর পেলাম না। চুপচাপ রিক্সায় যাচ্ছি। কিন্তু মনের ভিতোর যেন কালবৈশাখী ঝড় বইছে। রকির নিরবতা ভিতরে ভিতরে আমায় ভেঙ্গে চুরমার করে দিচ্ছে। পার্কে পৌছানো মাত্র তাকে বললাম কথায় নীলা। সে সোজা চলতে লাগল এবং ডান দিকের কোনার একটা ব্রেঞ্চে বসলো। আমি আবার বললাম কথায় আমার নীলা।
- তোর নীলা আর তোর নেই
-ধপ করে বসে পরলাম
- সামনে তাকিয়ে দেখালো
-যা দেকলাম তা কোনদিন ই চাইনি আমি। অন্যের বাহুডোরে নীলাকে আমি কোনদিন কল্পনা কিরি নি। নীলা তো শুধুই আমার। নীলা আমার সাথে এমনটি করতে পারল।চারদিকের সব কিছু আমার কাছে নিষ্ঠুর মনে হতে লাগল।নিজেকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।মনে হছে আমার ভালোবাসাকে কেউ দুমড়ে মুচড়ে ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে।এতোই সস্তা ছিলো আমার আর নীলার ভালোবাসা।অনেক কেঁদেছিলাম সেদিন। রকি নিয়ে এসেছিল আমায়।কিছুদিন সব কিছু ছেড়ে দিয়েছিলাম। খাওয়া দাওয়া সব কিছু। অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম। বেশ------
- কেউ যেন আমায় ডাকছে।চোখ মেলে দেখি রকি।
- বলছে কি রে কুম্ভ হয়ে গেলি নাকি সেই তখন থেকে ডাকছি।
-দেখি কাপড় গুছোচ্ছে, বলি কথায় যাচ্ছিস।
-কোন উত্তর না দিয়ে জলদি গোসল করে আসতে বলল।
- আমি আর কথা না বাড়িয়ে গোসল করে আসলাম। খেতে খেতে বললাম কোথায় যাচ্ছিস।
-আমি না আমরা যাচ্ছি গ্রামের বাসায়। ঘুরে আসি চল ভাল লাগবে।নতুন কিছুর আসায় ব্যাগপত্র নিয়ে চললাম তার সাথে। জানালার পাশে বসে শহুরে ব্যাস্ততা কে পাড়ি দিয়ে মোটর যান গুলোকে পাশ কাটিয়ে ছুটে চলেছি আমরা গ্রামের পথে।রাস্তায় ২ বন্ধু খুনসুটি করছে। হাসি পেল আমার অনেকদিন পরে হাসলাম। আমরাও এমন ছিলাম আমি আর রকি। রকির গ্রামে বেশ ভালো কাটলো আমার। ইস্ সারাটা জীবন যদি এখানেই কাটিয়ে দিতে পারতাম। কি সুন্দর চারপাশ শহুরে ব্যাস্ততা নেই। মানুষ গুলো অসাধারণ। সত্যি কারের ভালোবাসে, ভালোবাসতে জানে।শহুরে মানুষের মত অভিনয় করতে শেখেনি তারা।
আসার পথে রকি আমায় একটা কথাই বলেছিল, নতুন জীবন শুরু কর। আমিও আর পিছনে ফিরে তাকাই নি। ছাত্র জীবন শেষে আমি আজ সফল একজন।বিয়ে করেছি নীলার থেকেও সুন্দর এবং সুন্দর মনের একজন কে।ভালোবাসি তাকে অনেক বেশি।তার কাছেই আমার নতুন করে বাঁচতে শেখা। অনি আমার স্ত্রী। সে আমায় বুঝতে পারে আমার চাওয়া পাওয়াকে বুঝতে পারে। ঠিক আমি যেমন টা চেয়েছিলাম। কি সুন্দর গুছিয়ে কথা বলে আনি।আমায় কোনদিন ও কষ্ট দেয় নি মেয়েটা দিয়েছে সুধু অফুরন্ত ভালোবাসা।তাই আমিও কোনদিন কার্পণ্য করি নি তাকে ভালোবাসতে। অনেক সুখে আছি আমি। দেখে যাও নীলা আজ আমি কত সুখী।
আজ আবার সেই ছাদের কার্ণিস টায় দাড়িয়ে আছি। অনেক বছর হয়ে গেল।চারদিকের সব কিছু বদলে গেছে এমন কি আমিও।দাড়িয়ে দাড়িয়ে ভাবছি যদি ঝাঁপ দিতাম তাহলে কি নতুন করে বাঁচতে শিখতাম ? আজ আমি দাড়িয়ে দাড়িয়ে হাসছি আর রকি বলে চলেছে বলেছিলাম না ফিরে আয়। দেখলি তো, বন্ধুদের কথা শুনতে হয়, শুনতে হয়।
(তাই জীবনে কখনো হাল ছেড় না।নীলা-রা আসবে আবার চলে যাবে কিন্তু অনি-রা বেঁচে থাকবে চিরকাল)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ