গল্প-"সেই রুপা"
(Polok Hossain)
.
Part-7
.
বিছানার এক কোনে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে থাকি।আজ সকাল সকাল উঠে দুই কাপ কফি আর বাকি সবার জন্য চা বানাতে ব্যস্ত হয়ে পরলাম।কাল আমাকে যেতে হবে শোভনের সাথে ওর কাজের জায়গায়। ওখানে থাকতে হবে।আজ তা-ই সবার জন্য খাবার বানাতে লাগলাম।শোভন কি কি খাবার পছন্দ করে জানতে ইচ্ছে হল।তাকেও তো ভালো মন্দ খাওয়াতে হবে।আমি ওর কাছে যাওয়ার জন্য রুমে যেতে লাগলাম। ও রুমের দরজা চাপিয়ে নিয়ে কি যেন করছে।তা-ই আর ভেতর গেলাম না।উকি মেরে দেখছি।কিছু বুঝে উঠতে পারছি না।একটু পর লক্ষ করে দেখলাম আমাদের বিয়ের ছবিগুলো ঘাটছে।তবে এতে লুকিয়ে ঘাটছে কেন!কিছুই বুঝলাম না।আমি রান্নাঘরের দিকে ফিরে গেলাম। আর জিজ্ঞাস করা হলো না।
রান্নাঘর টা বেশ পরিপাটি করেই সাজানো।সব জিনিসপত্র তাকে তাকে সাজানো।আচারের বয়ামে আমার অন্যরকম আকর্ষন থাকে সবসময়। ছোটবেলায় এই বয়াম থেকে চুরি করে আচার খেয়ে শেষ করতাম।আর মায়ের বকা থেকে বাচার জন্য লুকিয়ে থাকতে হতো।কি মজার ছিল সেই দিন।আগে আপুনি আর আমার খুনসুটিতে বাড়ি ভরে থাকতো।
একটা বিষয়কে এড়িয়ে গেলে হয়তো ভুল হবে।যেই শাশুড়িকে "মা" এর স্থান দিয়েছি সে যেন শুধু শাশুড়িই নয় বরং জন্ম দেওয়া মা এর ন্যায়। রক্তে রাগ নেই।না আছে অহংকার, না আছে বিবাদ। কথাতেও রাগ নেই।আমায় ডেকে বলল-
-রান্না করতে পারো মা..!
মাথায় লম্বা ঘোমটা টেনে আমি মাথা নাড়িয়ে জবাব দিলাম -
-"জি" তা পারি।
-এইখানে আসার পর কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো!
-জি। না।
আমাকে বুঝাতে নরম স্বরে বলতে লাগলো -
-মেয়েদের পছন্দ করি আমি।কারন মেয়েরা ঠান্ডা হয় আর ছেলেরা দুষ্ট।কিন্তু আমার ছেলেটা বিপরীত। আগে দুষ্ট ছিল কিন্তু এখন নরম মেজাজের হয়ে গেছে। ওখানে গিয়ে খেয়াল রেখো।
আমি তাকে কথা দিয়ে বললাম -
-চিন্তা করবেন না।আমি খেয়াল রাখবো।
.
দিন শেষে হাতের কাজ ফুরোলো।ফ্রেশ হয়ে বাসন্তী রংয়ের শাড়ি পরলাম।ছোট ননদ রাত্রি দেখেই বলতে লাগলো -"ভাবিকে খুব সুন্দর লাগছে।" আমি মিটি মিটি করে হাসছি।মেয়েটা আবারো বলতে লাগলো -"এই রং যে ভাইয়ার খুব পছন্দ। তা-ই ভাবি এই রংয়ের শাড়ি পরেছে।আর এই সুন্দরের রহস্য এইটাই।ঠিক বললাম তো।"
কলেজ পড়ুয়া মেয়েটার পাকামো কথা।কিন্তু রাত্রির কথা শুনে আনমনা হয়ে গেলাম আর ভাবতে লাগলাম এই রংয়ে আমাকে মানিয়েছে তো..এই শাড়িতে আমাকে দেখে কি ওর ভালো লাগবে!মনের মধ্যে ঘুরপাক করছে শত শত ভাবোনা।আয়নায় তাকিয়ে চুল গুলো ঠিক করছি।কোন সিঁথিকাটা চুলে আমাকে ভালো লাগবে।শাড়ির রংটা আমাকেও এখন অাকর্ষন করছে।এতো দিন তো কোনো রংকে এতো পছন্দের চোখে দেখি নি।আজ কেন তবে! শোভন বাহির থেকে এলো এই মাত্র আমাকে একবার হলেও চোখে পরেছে ওর।তবে চোখে পরলো একবার কিন্তু তাকাচ্ছে বার বার।কি যেন বলতে চাইছে কিন্তু আর বলছে না। আমিও কিছু বলবো বলবো করে আর বলতে পারছি না।দিনটা যেন এইভাবেই কেটে গেল।দু'জনের লজ্জিত ভাবে চাহনিতেই চোখে চোখে কথা ফুরিয়ে গেল মনে হয়।
.
সকাল সকাল প্রস্তুত হয়ে নিতে হচ্ছে দুইজনের আজ তো সেই নতুন বাড়িতে যেতে হবে।শোভন ওইখানে থেকেই কাজ করবে।তাই আমারও যেতে হচ্ছে।টেক্সি ভাড়া করে যেতে হল।কারো মুখে কোনো কথা নেই এখন। তবুও কথার ঝুড়ি জমা হয়ে আছে দু'জনের।কপালে টিপ,চোখে কাজল,ঠোঁটে লাল রঙয়ের অঙ্কিত রেখাচিত্র আর সাথে বাসন্তী রংয়ের শাড়ি।আজ সাজতে ভালো লাগছিল।তাই সেজে নিয়েছি।এমন সাজে কখনো নিজেকে উপস্থাপন করা হয় নি।হয়তো আজ প্রথমবার। তাই একটু লজ্জা লাগলেও ভালো লাগছে।শুধু নিজের জন্য সাজি নি, সেজেছি নব মানুষটির জন্য।ফুলহীন বনে যেন ফুল ফুটতে শুরু করেছে, আকাশে রংধনুর মতো জীবনও কেমন যেন রঙিন হয়ে উঠছে।আর মন বলছে আমি সেই রুপা তো যে হাসতে ভুলে গিয়েছিল।যার মনে ছিল কালো মেঘের ভেলা।
.
নতুন বাড়িতে গিয়ে পৌঁছলাম। সুন্দর করে সাজানো গোছানো। দেওয়ালে ওয়ালম্যাট লাগানো। আর সাথে একটি ফটোগ্রাফি।ফটোগ্রাফির দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষন। শোভন এসে হাসি দিয়ে বলতে লাগলো -সারপ্রাইজ।
ফটোগ্রাফিটি আমার আর শোভনের বিয়ের আসরে তোলা ক্যামেরা বন্দি ছবি।আমি শোভনের দিকে তাকিয়ে রইলাম।ছবিটি আমায় ওর অনুভূতির কথা বলে দিলো। ব্যাপার টা এতোক্ষনে স্পষ্ট হচ্ছিল।ওইদিন লুকিয়ে শোভন যে বিয়ের এলবামগুলো ঘাটছিল তখনই ছবিটি সংগ্রহ করে বাধাই করে আমাদের এই নতুন ঘরে লাগিয়েছে।দূরত্ব আমাদের টেনে আনছে। ও হারিয়েছে ওর রুপালি কে আর আমি আনানকে।কাহিনী ভিন্ন হলেও ভাগ্য আমাদের পিছু ছাড়ে নি।আবারও আমাদের মাঝে নতুন এক পথের সন্ধান বাতলে দিচ্ছে।
চলবে..
গল্প- "সেই রুপা"
(Polok Hossain)
.
Part-8
.
নতুন বাড়িটা আমার পছন্দ হয়েছে।বাড়ির পরিবেশ, চারদিক সুন্দর করে সাজানো। খোলা বারান্দা দিয়ে বাতাস বয়।সেই বাতাস প্রাণ জুরিয়ে নেওয়ার মতো। আমি ঘুরে ঘুরে চারদিকে যতো দেখছি ততই ভালো লাগছে।উপরে বড় ছাদ আর ছাদে একটি দোলনার ব্যবস্থা করা রয়েছে।মনে হচ্ছে এই সুন্দরের পথে এসে হারিয়ে গেছি।প্রথমে মন একটু খারাপ ছিল একা থাকার ভয়ে কিন্তু এখন ভয় ভয় ভাবটা কেটে যাচ্ছে মনে হচ্ছে।
.
কাজ করতে আমার ভালো লাগতো ছোট থেকেই।বাড়ির সব কিছু আগে আমিই গুছিয়ে সাজিয়ে রাখতাম। আপুনি আমায় ব্যঙ্গ করে বলতো "তোকে আমার শ্বশুর বাড়ির কাজের বুয়া রাখবো আর মাইনে পাবি মাসে মাসে দুই একটা কাপড় "। আলমারি তে কাপড়গুলো গুছিয়ে রাখছিলাম ভাজে ভাজে।আর তাতেই পুরোনো কথা মনে পরে গেল।মা,বাবা,আপুনি কি আমায় নিয়ে চিন্তা করছে!,আমাকে কি তাদের মনে পরছে! জানতে খুব ইচ্ছে হয়।আর আমিও ইচ্ছে করেই মুঠোফোনে তাদের সাথে কথা বলি না।কারন আমি জানি আমি ফোন দিলেই ভাববে আমি অসুবিধায় কাটাচ্ছি আর তা-ই ফোন দিয়েছি।
আপুনির ছেলে রেয়াতকে কোলে তুলে লালন করেছি।বাচ্চাটা সারাক্ষন পিছু পিছু ছুটোছুটি করতো। এখন ওদের কাউকে আর দেখি না।কান্না আসছিল ভেবে।মা বলতো আমার মায়া বেশী। আর তাই কথায় কথায় কেঁদে দেই।
.
টেবিলে বইগুলো এলোমেলোভাবে ছরিয়ে ছিটিয়ে আছে। বইগুলো দেখে বইপড়ার ইচ্ছেটা জেগে উঠছিল। এই হচ্ছে শোভনের বইয়ের সংগ্রহশালা।সাথে করে অনেক বই নিয়ে এসেছে।বইয়ের কালেকশনগুলোও চোখে পরার মত। আমি একটা একটা করে বই পড়ছি আর বুকসেল্ফে রাখছি।পৃষ্ঠাগুলো উল্টিয়ে দেখতেই বই থেকে হঠাৎ একটি ভাজ করা কাগজের টুকরো নিচে গরিয়ে পরলো।আমি ওটা তুলে নিয়ে দেখতে লাগলাম।দেখলাম খুব সুন্দর এক কবিতা লেখা। হাতের লেখা আর কবিতার প্রেমময় ভাষাগুলো দারুনভাবে ব্যক্ত হয়েছে।
শোভন এলো রুমে।ওকে দেখেই আমি জানার জন্য উত্তেজনাজনিত কন্ঠে বলতে লাগলাম -
-এইটা কি আপনার লেখা কবিতা?
-হ্যাঁ। আমার লেখা।
এতোটা সুন্দরভাবে মাধুর্য মিশিয়ে ও কবিতা লিখতে পারে তা আজ দেখেই চমকে গেলাম আর বললাম -
-আপনি কবিতা লিখতে পারেন!
-স্কুলজীবন থেকেই লিখে আসছি।আরও অনেক কবিতা লিখেছি। দেখবে..?
আমি কোতূহলে বলতে লাগলাম-
-অবশ্যই দেখতে চাই।
সে একটি মোটা বাদামি রংয়ের ডায়েরী আমায় দেখালো।প্রতিটি পৃষ্ঠায় কবিতা।
তবে আরেকটি জিনিস দেখেও অবাক হলাম যা ছিল ডায়েরীর মাঝ পৃষ্ঠায় অাঁকা একটি স্কেচ।একটি মেয়ের স্কেচ অাঁকা। আমি আবারও বলতে লাগলাম-
-কে এঁকেছে!
সে জবাব দিলো -
-আমিই এঁকেছি।
আমার মন একটু ভার হয়ে রইলো। কেননা শোভনের ডায়েরীতে অাঁকা একটি মেয়ের ছবি দেখে আমার সহ্য হচ্ছিল না।আমি বললাম -
-কাকে এঁকেছিলেন!
-অনেক আগে এঁকেছিলাম ছবিটি।কিন্তু আজ তা নিরর্থক।ছবিটি রুপালীর।
আমি চুপ হয়ে গেলাম।আর কিছু বলতে পারছিলাম না।আর অদ্ভুত একটা জেদ মনে জেগে উঠছিল।আমি জেদ চাপিয়ে বলতে লাগলাম -
-খুব সুন্দর।আমার একটা ছবি একে দিবেন!!
হাসি মাখা কন্ঠে জবাব দিলো -
-ছবি অাঁকা ছেরে দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন তোমার ছবি আকা শুরু করে পুরোনো প্রতিভা কে আবার জাগ্রত করবো।
আমি বললাম -
-আমার স্কেচে শাড়ির রং যেন বাসন্তী হয়।
সে মুচকি হেসে জবাব দিলো -
-এইটা ভুল হবে না।তোমায় আমার মনের মতো করেই ছবিতে সাজাবো।
এই বলে আমার হাতের ডায়েরী টা নিয়ে রুপালির ছবিটির পৃষ্ঠা ছিঁড়ে মুচরে ফেলে দিলো।এই কান্ড কেনো করলো বুঝলাম না।আমি তাকিয়ে রইলাম। তবে আমার ভালো লাগছিল।হয়তো একটু জায়গা করে নিতে পেরেছি তার মনে।কতো গুন ঢেলে দিয়েছেন বিধাতা তাকে।আর আমি এখন তারই একটি অংশজুড়ে আছি।
এইদিনগুলো আমারই অপেক্ষায় দিন গুনছিল। বিষন্ন ঘেরা মনে এখন পুষ্প পল্লবের শোভা পাচ্ছে।আর ফুল শোভা পাচ্ছে কোনো এক রমণীর কুন্তলে।আর আমি পাচ্ছি এক মিষ্টি মধুর সমীরণ যা শুধু আমার অনুভবে স্পন্দন সৃষ্টি করে যাচ্ছে।
চলবে..
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ