গল্প- "সেই রুপা "
(Polok Hossain )
.
Part -3
.
-রুপা শুনছো...রুপা...
গলার আওয়াজ টা চেনা চেনা মনে হচ্ছে।এই আওয়াজ এর সাথে আমার পরিচয় আছে আগের থেকেই।আবারও ডাক দিলো-
-রুপা..উঠছো না কেন..!
চিনে ফেলেছি গলার আওয়াজ এর মালিককে।আনান।।।আনান কি ডাকছে আমায়!না আনান নয়!
-কে তুমি!
-ওঠো রুপা..!
-কে তুমি!আনান!
আপুনি এসে হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। আমায় বলল-
-স্বপ্ন দেখছিস নাকি।ডাকা মাত্রই কি যেন বিড় বিড় করছিস।
-এর মানে তুমি ডেকেছো!
-হ্যাঁ।
-আর কেউ ডাকে নি?
-কে ডাকবে? কার কথা বলছিস! মাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি!
-না।কিছু না।
ধরমর করে বিছানা থেকে উঠে গেলাম।আপুনি এখনো আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হলাম।বিয়ের কার্ড বানানো শেষ।দিপু আমার ছোট চাচাতো ভাই, হাতে করে কার্ড নিয়ে এলো। আমি একটা হাতে নিয়ে পড়তে লাগলাম।আমার পরিচয় দেওয়া আছে সব ঠিক আছে।ছেলের পরিচয়ে দেখতে লাগলাম। বর শোভন শেখ। থাক নামই যথেষ্ট আর কিছু দেখার ইচ্ছে নেই।দাদু বারান্দায় বসা। দাদুর সাথে আমার চাচাতো ফুফাতো ছোট ভাই বোন গুলো বসে গল্প করছে।বাড়ি ভর্তি আত্মীয়স্বজন। একা নীরবে থাকার মতো জায়গা নেই।ঘর গুছিয়ে নিতে হবে কাল থেকে গায়ে হলুদের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।
আলমারি খুলতেই কাপড়ের স্তূপ নিচে গড়িয়ে পরলো আর কাপরগুলোর ভেতরে আড়াল করে রাখা ডায়েরী টা চোখে পরলো।কতো বছর হয় এই ডায়েরী টা ছুঁই না।এই ডায়েরী টা আমায় কাঁদায়।আনান আমায় কান্না করতে বারং করতো।আজ না হয় এই ডায়েরীর সাথে আমার শেষ দিন।শ্বশুরবাড়ি তে নিয়ে যাওয়া যাবে না।বাড়িতে রাখতে চাইলেও কারো চোখে পরবে।শেষবারের মতো ডায়েরী টা খুলে দেখার ইচ্ছে হলো।
.
-রুপা.. তোমার জন্য একটা জিনিস এনেছি।
-কি জিনিস!
-guess করো।
-এতো guess করার সময় নেই।
-তাহলে চোখ বন্ধ করো।
-আচ্ছা করলাম। এখন দেও।
-নেও।তোমার জন্য লাল গোলাপ।
-ভুল বললে।
-কি ভুল বললাম! তুমি খুশী হও নি!!
-এইটা কেবল ফুল-ই নয় আমাদের ভালোবাসার প্রতীক।
আনান হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।হাসির মাঝেই ছিল অন্যরকম এক ভালো লাগা।দিনগুলোর কাছে চলে যযেতে ইচ্ছে হয়।
এই হাসিটা কে যে মিস করছি।ডায়েরীর ভেতর আনানের দেওয়া সেই লাল গোলাপের পাপড়িগুলো শুকিয়ে আছে।গোলাপগুলো ডায়েরীর ভেতর যত্নে রেখে দিয়েছি।তা-ই আজও আমাকে সেই স্মৃতি মনে করিয়ে কাঁদিয়ে দেয়। সেই গোলাপ,সেই ভালোবাসা আর সেই অনুভূতি।
মাঝে মাঝে রাগ হয় আনানের উপর। আমায় ছেড়ে চলে গেল একা।হতভাগা কপাল। বিধাতা আমাদের মেনে নিলেন না। আমার কাছ থেকে আনান কে ছিনিয়ে নিলো। আর আমি কষ্টের আঘাতে ক্ষয় হতে চলেছি।কতোদিন পর আবার নতুন আলোর প্রবেশ হবে জীবনে।কিন্তু তাকে কি মেনে নিতে পারবো!!
চোখ জুরে সাগরের বন্যা বইছে।স্বচ্ছ আয়নায় নিজের চোখের দিকে তাকালাম একবার। চোখ দুটো ফ্যাকাশে লাগছে।আনান বলতো চোখ সবসময় কাজলমাখা রাখতে। আনান চলে যাওয়ার পর সেই চোখ দুটোতে আর কাজল মাখা হয় নি।আনান এই চোখ দেখলে হয়তো রাগ করতো।মনে করতে করতে কোন জগৎ এ চলে এলাম। ডায়েরীটা পুড়ে ঝলসে ফেলার সময় এসে গেছে।আনানকে হারানোর ব্যাথা সহ্য করতে পেরেছি আর এই ডায়েরীটা আগুনের উত্তাপে ঝলসে ফেলার বেদনা কি সহ্য করতে পারবো না..
মোমবাতিতে আগুন ধরিয়ে ডায়েরী টা পুড়তে লাগলাম। একটি অদ্ভুত আওয়াজ কানে বেজে উঠলো। "বিদায় রুপা"। আবারো আনানের গলার আওয়াজ।
আনানকে বিদায় দিয়েছি ৩ বছর হলো।এক সাথে কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত মনে আছে।
ওর ফটোগ্রাফি নেই আমার কাছে। ওকে দেখতে হলে আমার ফটোগ্রাফি লাগে না।চোখে ভেসে সেই চেহারা।সাদা মেঘের মতো গায়ের রঙ।চোখ মায়া মাখানো।আমি শ্যামলা আর আনান ফর্সা এই নিয়ে অনেক দুষ্টুমি করেছিলাম ওর সাথে।
ইশশ...দিনগুলো যদি ফিরে আসতো..."রুপা" বলে মধুর সুরে আর কেউ ডাকবে না আমায়।নতুন জীবনে আমাকে প্রবেশ করতে হবে।আর সেই জীবন ভালো কিংবা মন্দ হোক আমাকে খাপ খাওইয়ে নিতে হবে।মরীচিকা ধরে যাওয়া মন রংহীন হয়ে আছে।
আগের মতো আর গুনগুনিয়ে গান গাইতে ইচ্ছে হয় না।মা আর আপুনিও বলে "আমাদের রুপা বদলে গেছে"।
আনান চলে যাওয়ার পর আসলেই বদলে গেছি,জীবন যেই ভাবে মোর নিচ্ছে আমিও সেই পথের পথিক হয়েই হাটছি।আমাকে আরও হেটে যেতে হবে।তবে এই পথে আনান নেই।হয়তো একাই হাটতে হবে। যদি এই পথে কাটা থাকে তবে সেই কাটার ক্ষত সহ্য করার ক্ষমতা রাখতে হবে নিজের।
.
চলবে..
গল্প- "সেই রুপা "
(Polok Hossain)
.
Part-4
.
হাতে মেহেদী আর মুখে কাচা হলুদের মিশ্রন লাগিয়ে যেই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় তা-ই আমাদের দেশে গায়ে হলুদ।আর এই হলুদের জন্যই আমাকে পুতুলের মতো করে সাজানো হচ্ছে।৩ বছর পর সাজছি জমকালোভাবে।কাল মুনার মা হাতে মেহেদী পরিয়ে দিয়েছিল। ভালো রঙ হয়েছে হাতে।আপুনি হাতে করে দুটো স্বর্নের বালা নিয়ে আসছে। এসে বলতে লাগলো-
-হাতের বালা দুটো তোর জন্য বানিয়েছি।
-বাহ...সুন্দর হয়েছে।
-বিয়ের দিন পরিস।
-আচ্ছা। রেখে দাও।
আলমারি খুলতেই সেই ডায়েরীর কাগজ পুড়া স্তূপ থেকে পোড়ানো কালো কাগজের গুড়ি গুলো নিচে গড়িয়ে পরলো।তা দেখেই আপুনির ভ্রু কুঁচকে গেল।আমার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো -
-কি এই গুলি?
-কিছু না।
-কিছু না মানে!কাগজ পুড়িয়েছে কে।আর এই গুলো আলমারির এক কোণে কেন।কিসের কাগজ ছিল?
আপুনির এক গাদা প্রশ্নের সামনে আমি মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছি।কি বলবো তা-ই ভাবছি মনে মনে।
আপুনির ছেলে রেয়াত এসে কান্না করতে লাগলো।ক্ষুদা সহ্য না করতে পারলেই কাঁদে।আপুনি তা-ই বিষয় টা আর খুটিয়ে দেখার সুযোগ পেল না।রেয়াতকে কোলে তুলে নিয়ে গেল।আমিও হাফ ছেরে বাঁচলাম।কাগজ পোড়া গুলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফেলে দিতে হবে নয়তো আবার ধরা পরলে আর এইভাবে ঘটনা এড়িয়ে চলার সুযোগ পাবো না।
।
গায়ে হলুদের আয়োজন শেষ।ফ্রেশ হয়ে ক্লান্তি মাথায় নিয়ে ঘুমিয়ে পরেছিলাম। উঠে দেখি ১১ টার মত বাজছে।আজ ছেলের বাড়ি গায়ে হলুদ।আপুনি আর আমার কাজিনরা মিলে সেখানে যাবে শুনেছি।তাই আজ আমার কাজ নেই।
নিরবতা কে আমি ভালোবাসি। চুপচাপ নিরবে থাকতেই ভালোবাসি কেননা এতে নিজেকে নিয়ে কাটানোর সময় পাওয়া যায়।টেবিলে খবরের কাগজ টা দেখলে একবার হলেও পড়ার শখ জাগে।চায়ে চুমুক দিচ্ছি আর পড়ছি।
হাতে কাচা হলুদ বাটা বাটিটা নিয়ে মা কাছে আসতে লাগলো। বুঝেই গিয়েছি যে কেন আনা হচ্ছে।মা আমার শ্যামলা মুখে কাচা হলুদের মিশ্রণ দিয়ে চাকচিক্য আনতে চাইছে।আমায় বলল-
-এই নে।এইটা মুখে মাখিয়ে বসে থাক।
-এইটা দিলে কিছুই হবে না।
-হবে।আগে দিয়েই দেখ।
-আমি দিব না।
-ছোটদের মত জেদ ধরিস না।যা বলছি তা কর।
-এই অল্পসময়ের জন্য সাদা চামড়া আমার লাগবে না।এইটা বরং ফেলে দেও।
ফেলে দেওয়ার কথা বলাতে মা বাটিটা হাতে নিয়েই চলে গেল।এই প্রচেষ্টা আমার ছোট থেকে বড় পর্যন্ত চলছে।
বাবা বলে আমি অনেক সুন্দর। আমার জন্য আর চন্দন, হলুদের প্রলেপ লাগে না।মা কেন বুঝে না তবে!প্রশ্ন টা কে আর প্রকাশে আনি না কারন আমি জানি মায়েদের চিন্তা সর্বদা-ই বেশী থাকে কারন মা তো মা-ই।
।
দুপুরের খাবারে আজ মাছ আর ভর্তা। মাছ আমার পছন্দের বাহিরে।এইটা থাকলে আর খেতে ইচ্ছে হয় না। কিন্তু অভ্যাস করতে হবে কারন শ্বশুর বাড়িতে আর আমার মন মর্জি মত খাবার বানানো হবে না।শুনেছি আমাকে প্রথমে বরের বাবার বাড়ি নিয়ে যাওয়া হবে।পরে কিছুটা সময় সেখানে কাটিয়ে আবার বরের কার্যালয় যেখানে ওইখানেই থাকবো একা।রান্নাবান্নাও তাই আমার হাতে।এখান থেকে বহু দূর সেই জায়গা।
।
অনেক শুকিয়ে গিয়েছি।যে দেখে সে-ই বলে।তাই কাপড়্গুলো একে একে করে সুই সুতো দিয়ে নিজের পারফেক্ট মত করছিলাম।এমন সময় মা এলো। চোখ দুটোতে অদ্ভুত চিন্তা। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।বললাম -
-কিছু হয়েছে!
-না।কেন জিজ্ঞেস করছিস।
-তোমাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে।
-বড়দের মত বোঝা শিখে গেছিস।
মুচকি হেসে বললাম
-বড় হয়েছি তাই বড়দের মত বুঝছি। বড় না হলে তো এখন আর তোমরা আমায় বিয়ে দিতে না।
মা হেসে বলতে লাগলো
-হুম। বুঝেছি।তুই অনেক বড় হয়ে গেছিস।
-বলোনা..কি হয়েছে তোমার?
-কি আর হবে! বিয়েবাড়ির খুঁটিনাটি সবকিছু নিয়েই চিন্তা।সব ঠিক মত হচ্ছে কি না।ভুল হলো না তো..
-কেন ভাবছো এইরকম। আল্লাহর রহমতে সব ঠিকঠাকই হবে।
সুই সুতো দিয়ে সেলাই করা থামিয়ে মা কে বোঝাতে লাগলাম।আপুনি আর যারা যারা বরের বাড়ি হলুদের অনুষ্ঠান এর জন্য গিয়েছিল সবাই এসে গেছে।আপুনি আমাদের বলতে লাগলো -
-ধুমধাম আয়োজন করেছে ওখানে।কোনো কিছুই কমতি রাখেনি বললেই চলে।
মা একটু স্বস্তির নিশ্বাস নিলো।আর বলল-
-হাতে অনেক কাজ।আমাদেরও সব দ্রুত সেরে নিতে হবে।
বলে মা চলে গেল। শাড়িতে খাট বোঝাই।সবগুলো গিফট পাওয়া আরও এসেছে বরের বাড়ি থেকে। সব গুছিয়ে নিতে হচ্ছে।আপুনি আমাকে সাহায্য করতে লাগলো।ছোটরা সবাই আনন্দ করছে।হৈ চৈ করে মাতিয়ে তুলেছে। কিন্তু আমার কেন আনন্দ হচ্ছে না।তবুও হাসি খুশি আছি।কারন সবাইকে বোঝাতে হবে যে আমিও অনেক খুশি।আজই শেষ দিন আমার। কাল আর আমার আপন কেউ আমার সাথে থাকবে না।একা-ই যেতে হবে।।।
চলবে..
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ