#রূপার ভাঙা চুড়ি (৩য় ও শেষ পর্ব)
লেখা: Umme Nipa
এরপর প্রতিদিন ই কলেজ থেকে এসে আমি ছাদ এ গিয়ে ইকবাল এর জন্য অপেক্ষা করতাম।
একবার ক্ষমা চাইতে ইচ্ছে হত খুব।আমি জানিনা ইকবাল কোন ফ্লাট এ থাকে আর জানলেও আমার পক্ষে বাসায় যাওয়া সম্ভব নয়।
একে একে ৫দিন হয়ে গেল ইকবাল এর সাথে আমার দেখা হচ্ছেনা...
একসময় আশা ছেড়েই দিলাম।
কিছুদিন পর ই দেখলাম একজন মহিলা গাছ এ পানি দিতে আসছে।
তাকে জিজ্ঞেস করে জানলাম এই গাছ বাড়িওয়ালার আর ইকবাল বাড়িওয়ালার ছোট ছেলে।
জ্বরের কারনে সে পানি দিতে আসেনা।
নিজেকে আরো ছোট লাগছে।আমার জন্যই জ্বর।
প্রতিদিন-রাত আমি না চাইলেও ইকবালের ভাবনা আমার মনে এসেই যেত। চুড়ি দেখলে ওর কথা, বৃষ্টি দেখলে ওর কথা..
আমি কোন ভাবেই ইকবাল এর ভাবনা আমার মন থেকে সরাতে পারছিনা।
আমার ওকে ভাবতেই ভালো লাগতো। আমি জানি ও আমায় নিয়ে ভাবেনা..বরং ঘৃনাই করে..
আর হয়তো দেখাই হবেনা তবুও ওকে ভেবেই একা একা হাসতে আমার ভালো লাগে।
কিছুদিন পর সকালে দরজা খুলতেই দেখি একটা হলুদ খাম দরজার সামনে।
খাম নিয়েই দেখি তাতে লেখা, এক ভরা জ্যোৎস্নায় যাবে আমার সাথে রূপা?
আমার সবকিছু স্বপ্ন মনে হচ্ছে।এ কাজ ইকবাল ছাড়া কারো নয়।
খামটা আমার সকল সুখের কারন হয়ে গেল।আমি বার বার ওই খাম খুলে দেখি আর ভাবি ইকবাল ও আমায় নিয়ে ভাবে..
আমি কি করে এ লেখার উত্তর দিব তাও আমার জানানেই।
২দিন পর আবারো একটি খাম
পেল আমার ছোট বোন..
সে আমার আর মায়ের সামনে চিঠি খুললো..
খুব ভয় লাগছে যদি ইকবাল আমার নাম লিখে তাহলে আমার কপালে আজ খারাপ ই আছে..
লিমা হাসছে আর পড়ছে, রূপা কুয়াশার ভিতর খালি পায়ে হেঁটে দেখেছো কখনো?
মা হাসি দিয়া বলে মনে হয় ভুলে দিছে।
আমি বোনের হাত থেকে চিঠি নিয়ে গেলাম...
বুদ্ধুরাম এসব কি করছে..!আমার সামনে এসে বললেই তো হয়।
ভীতু একটা..
কি করে যোগাযোগ করবো তাই ভাবতে ভাবতে ফেবুতে গিয়ে ইকবাল লিখে সার্চ দিলাম।
হাজারটা ইকবাল কে পেলেও এই ইকবাল কে খুঁজে পেলামনা।
খামগুলি নিয়ে বাড়িওয়ালার ফ্লাট এ গেলাম।ওনারা ২য় তলায় থাকে আর আমরা ৩য়।দরজা নক করতেই বাসার বুয়া দরজা খুললো।
আমি: আন্টি আছেন?
বুয়া :আছে বাসার ভিতরে আসেন।
বাসার ভিতরে গিয়ে দেখি ইকবাল বিছানায় ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে।
আমাকে দেখেও একবার তাকাচ্ছেনা।ল্যাপটপ এর দিকে তাকিয়েই আছে।মনে হয় ভাজা মাছ উল্টাতে পারেনা।
আন্টি এসে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে?
আমি বললাম, কে যেন আমাদের বাসার সামনে এরকম খাম রেখে যায়। আমি, মা, বোন থাকি বাসায় বুঝছিনা এটা কেউ কেন করছে..
কেউ মজা করে কিনা তাও বুঝছিনা।
এসব বলছি আর ইকবাল এর দিকে তাকাচ্ছি কিন্তু ওর মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে যে ওটা ও না।
আন্টির সাথে কথা বলে বাসায় চলে আসলাম।ইকবাল কে সরি বলার সুযোগ ও পেলাম না।
কেমন এক গোলকধাঁধায় পরে গেলাম।আমার সাথে কি হচ্ছে আমি কিছুই বুঝতেছিনা।
পরের দিন আবার ও চিঠি আসলো,লেখা টিপ ছাড়া ভালো লাগেনা পাগলি।
এই পাগলি তো আমায় ইকবাল ই বলে।
অনেক্ষন ভেবে মায়ের ফোন থেকে ইকবাল এর বাবা-মায়ের নম্বর নিলাম।
এদের নম্বর দিয়ে আইডি থাকলে অবশ্যই তাতে ইকবাল এর আইডি ও পাওয়া যাবে।
ইকবাল এর বাবার নম্বর সার্চ দিয়ে কোন আইডি পেলাম না।
ইকবাল এর মায়ের নম্বর সার্চ দিতেই আইডি আসলো,জিসানুল হক ইকবাল।
আর তাতে ইকবাল এর ছবি দেয়া।মায়ের নম্বর দিয়ে আইডি খুলে রেখেছে...ভেবলা কান্ত...
মনে এক শান্তি অনুভব হল।
বার বার মনে হচ্ছে পাইলাম,আমার হিমুকে আমি খুঁজিয়া পাইলাম।
সে যদি আমার সাথে কাঁনামাছি খেলে তবে আমি তার সাথে বৌ ছি খেলবো...
পারলে ধরো....মশাই..
আমিও আমার মায়ের নম্বর দিয়ে আইডি খুললাম,"রূপালী সন্ধ্যা" নামে।
রিকোয়েষ্ট দেয়ার ৫মিনিট এর মাঝেই একসেপ্ট করেছে।
যে আইডিতে কোন ছবি নেই,অচেনা একজন মানুষ কে একসেপ্ট করে নিল এতো সহজেই!
আসলে ছেলেরা এমন ই।
একসেপ্ট করার সাথে সাথেই মেসেজ..নামটা সুন্দর...
আমি মনে মনে ভাবছি আজ পাশা খেলবোরে শ্যাম।
আমি মেসেজ দিলাম: ধন্যবাদ।ভালো আছেন?
ইকবাল: হুম।কই থাকেন?
আমি: কুমিল্লা আপনি?
ইকবাল: ঢাকা..
আমি সব ই ভুল তথ্য দিয়েছি আর ইকবাল সব ই ঠিক ঠাক উত্তর দিতেছে।
এভাবে ১৫দিন কথা চলতে থাকে।আর খাম ও আসতে থাকে।প্রতিদিন চিরকুট এ ১লাইন ই লেখা থাকে।
একসময় ইকবাল এর সাথে আমার ফেবুতে খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়। ও আমার পরিচয় জানেনা যে আমি লুবনা।একে একে ও শেয়ার করতে থাকে ওর ভালো লাগার সব কিছুই।
আর আমিও তাই চাইছিলাম যে ওর মুখ থেকেই জানবো যে আমার চিঠির প্রেরক ইকবাল ই।
কিছুদিন বাদে চিঠি আসা বন্ধ হয়ে যায়। এক সময় চিঠির অপেক্ষা করা আমার নেশা হয়ে গিয়েছিল।পর পর দুদিন চিঠি না আসায় আমার পাগল-পাগল লাগছে...
আর ইকবাল ও স্বীকার করছেনা যে ও চিঠি দেয় বা ও আমায় পছন্দ করে।
আমি ইকবাল কে মেসেজ দিলাম কাউকে পছন্দ করেন?
ইকবাল: হুম।
আমি: কে সে?
ইকবাল: আমার প্রতিবেশী কে..
আমার মন তখন বলছে,না আমি ঠিক দিকেই আগাচ্ছি।
আমি আবার মেসেজ দিলাম: তো তাকে বলেন নি যে তাকে পছন্দ করেন?
ইকবাল: না সাহস পাচ্ছিনা।একটু হেল্প করবেন?
আমি: কি করে?
ইকবাল: আমার হয়ে তাকে জানিয়ে দিবেন?
আমি: কি করে? আমি তো তাকে চিনিনা..
মনে মনে অনেক আনন্দ লাগছে।যে বোকা ছেলে আমাকে দিয়েই আমায় বলিয়ে ছাড়বে দেখছি।
আমি : মেয়ের নাম কি?
ইকবাল: রূপা
আমার সব হাসি ফিকে হয়ে গেল।
আমার নামতো রূপা না।সব কিছু এলোমেলো লাগছে।
আমি: রূপাকে কি করে জানাবো?
ইকবাল: নম্বর দিচ্ছি।আপনি বলবেন আপনি আমার ফ্রেন্ড।
আমি ভাবলাম দেখি আমার নম্বর দেয় কিনা।হতে পারে আমাকেই রূপা ডাকে।
আমি: হুম নম্বর দিন।
ইকবাল: 01..
আমি: কি হল?আর ডিজিট কই?
019?
ইকবাল: না 0179*******
সবকিছু শেষ এক মুহুর্তে।এ নম্বর তো আমার না..
তার মানে ও আরেক মেয়েকে ভালোবাসে।তাহলে ওই চিঠি?
ওই চিঠি অন্য কেউ দিত?
আমি কাঁদছি।খেলার চাল ঘুরে গেল।আমি হেরে গেলাম।গো হারা হেরে গেলাম।আমাকে কেউ কেন ভালোবাসতে যাবে।আমার কি আছে?
আমি আবার মেসেজ দিলাম: রূপা থাকে কই?
ইকবাল: আমাদের বাসার নিচ তলায়।
আমরা থাকি তিন তলায়।আমি একবার ওই মেয়েকে দেখতে চাই।একবার..
সে মেয়ে কি আমার চেয়েও সুন্দরী...!
ইকবাল: রূপালী প্লিস হেল্প মি।কল দিন রূপাকে।
আমি: হুম দিচ্ছি।
কল দিতেই রিসিভ করে চুপ করে আছে।
আমি: রূপা বলছেন?
ওপাশ থেকে: হুম,কে আপনি?
কণ্ঠ অনেক বিশ্রী। মনে হচ্ছে বয়স্ক।হতে পারে দেখতে সুন্দর।
যাক ওকে আমি সামনা সামনি দেখতে চাই।
আমি:আসলে আমি আপনার ই প্রতিবেশী। আমার নাম লুবনা।আপনার সাথে কিছু কথা ছিল।রাত ১০:৩০এ ছাদ এ আসবেন প্লিস।
রূপা: কি কথা?এখানেই বলুন।আর নম্বর পেলেন কই?
আমি: ইকবাল কে চিনেন?
রূপা: হুম।উনি আমার পিছনে অনেক দিন আগ থেকেই পরে আছে।
আমি: আপনার ভালো লাগে?
রূপা: হুম অনেক।বলতে পারিনি।
আমি : আচ্ছা, তাহলে বাকি কথা সামনা-সামনি বলবো...
রাখলাম এখন..
এই বলে ফোন কেটে দিলাম।
জানিনা আমার কষ্ট হচ্ছে কেন! তবে ভিতর থেকে দমকা বেগে কাঁন্না বের হয়ে আসতে চাইছে।
মেয়েটাও ভালোবাসে এই ভেবেও কাঁন্না পাচ্ছে খুব।
ফেবুতে চিঠির খাম গুলির ছবি তুলে আপলোড দিলাম আর লিখে দিলাম,গল্পে হিমুকে হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়। বাস্তবে মাঝে মাঝে হাত বাড়ায়, মাঝে মাঝে স্বপ্ন দেখায় কিন্তু গল্পের মতন পাশে এসে ভরসা দেয়া হিমুর খুব অভাব...হিমু তুমি অচেনাই রয়ে গেলে..
এর মাঝেই ইকবাল মেসেজ দিল,কি কল দিয়েছিলেন।
আমি: হুম
ইকবাল: ভয়েস কেমন?
আমি: খারাপ না।
সেও আপনাকে পছন্দ করে।রাতে কল দিয়ে বাকিটা জানাবে।
ইকবাল: আচ্ছা অপেক্ষায় রইলাম
আমিও অপেক্ষায় একটি বার রূপাকে দেখার।
নীল শাড়ি পরলাম।মন খারাপ থাকলেই শাড়ি পরি।মন ভালো হয়ে যায়।।
রাত ১০:৩০।
আমি ছাদে গিয়ে রূপাকে মেসেজ দিলাম ছাদ এ আসার জন্য।
অপেক্ষা করছি একা একা।বাইরে মেঘ করেছে আবারো।
রূপা আসবে কিনা তাও জানিনা।
কল দিচ্ছি রিসিভ ও করছেনা...
রেলিং ধরে দাড়িয়ে আকাশ দেখছি আর ভাবছি দিনটা অন্য রকম ও হতে পারতো।
আমি এমন ই বৌ ছিঁ খেলতে নিয়েছিলাম যেখানে বৌ অন্য কেউ আর আমি দুধভাত..
এর মাঝেই আমার কাঁধে কেউ শিতল হাত রাখলো।
আমি চমকে পিছনে তাকিয়ে দেখি ইকবাল..
আমি: কি আপনি?
ও হাত দিয়ে আবার মুখ চেপে ধরে বললো হুম আমি।রূপাকে দেখতে এসেছি।
আমি ওর হাত সরিয়ে বললাম,রূপা এখনো আসেনি।
ইকবাল হেসে বললো,আমার সামনে এই যে শাড়িওয়ালি রূপা দাড়িয়ে।
আমি কেঁদে দিয়ে বললাম,তাহলে ফোনে কে ছিল..?
ইকবাল হেসে বললো আমি..
ফোন এ রুমাল পেঁচিয়ে, হাত দিয়ে নাক চেপে কথা বলে রূপা সেজেছিলাম।তা না হলে তোমার নম্বর পেতাম কই?তুমি কি সুন্দর নিজের নম্বর থেকে আমায় কল দিলে..
আমি: আর ওই আইডি যে আমার তা বুঝলেন কি করে?
ইকবাল: রূপালি নামে আমায় কেই বা রিকোয়েষ্ট দিবে!
তোমার মায়ের নম্বর আমি সেভ করে রেখেছিলাম।
রূপালি আইডিতে তার নম্বর সো করতে ছিল।
ওর পাঞ্জাবীর কলার চেপে ধরে বললাম,আমাকে বোকা পেয়েছো তাইনা?
ইকবাল: উম..হু...তোমায় রূপা পেয়েছি।
আমি: বাসায় যাব, বৃষ্টি নামছে।
ইকবাল: আজ আর আমায় একা রেখে যাওয়া হচ্ছেনা।
আজ একসাথে ভিজবো।
আমি:না আমি চলে যাব।
ইকবাল আমার হাত শক্ত করে ধরে বললো পারলে যাও।
ইকবাল আমায় তার কাছে টেনে নিয়ে বললো চিঠির প্রেরক কে পছন্দ হয়নি?
আমি নিচু হয়ে বললাম হুম হয়েছে...
ইকবাল: আর হিমুকে..
আমি হাসি দিয়ে বললাম না,হিমু এতো ভেবলাকান্ত না...?
ইকবাল: আমি ভেবলা?
আমি:হুম।হিমু অনেক সাহসী। তারা ভালোবাসি বলতে ভয় পায়না।
ইকবাল আমার হাত টা নিয়ে পকেট থেকে নীল চুড়ি বের করে আমার হাতে পরিয়ে দিল আর বলছে ভালোবাসি রূপাকে আর ভালোবাসি রূপার ভাঙা চুড়ি।
আমি: ভাঙা ?
ইকবাল: তোমার ভাঙা চুড়িগুলি জোড়া লাগালাম।
দেখ একটু ও বোঝা যাচ্ছেনা।
আমি: এখানে তো অনেক চুড়ি। আমার চুড়ি তো এতোগুলি ছিলনা।
ইকবাল: বাকিগুলি কিনেছি।
চুড়ি দু হাতে পরবা।এক হাতে ভালোলাগেনা।
আমি: এমন হিমু থাকলে জীবনে বৃষ্টি,জ্যোৎস্না, কুয়াশা কিছু লাগেনা।
একে দেখেই কাটিয়ে দেয়া যায়।
ইকবাল: তবে আমি দেখছিনা কেন?
আমি অবাক হয়ে বললাম,কি?
ও আমার কপালে নীল টিপ দিয়েই বললো,রূপার কপালে টিপ না দেখলে ভালো লাগেনা।
সেদিন আমার পাঞ্জাবীতে টিপটা লেগে ছিল।বাসায় গিয়ে পেলাম।
আমি: হুম ঠিক মানুষ এর কাছেই গেছে...
দুজন ছাদ এর মাঝে গিয়ে বসলাম।
ইকবাল আমার হাতে হাত রাখতেই মুষলধারে বৃষ্টি নামলো..
আমি: জ্বর হবে আবার বাসায় যাও ...
ইকবাল: কিছু জ্বর হলেই যেন বেশ হয়।শরীরে তাপমাত্রা এমনিতেই কমে যাচ্ছে, একটু জ্বর খুব প্রয়োজন।
আমি ওর কাঁধে মাথা রেখে বললাম,আচ্ছা এর চেয়ে বেশি তাপমাত্রা কি আছে??
*সমাপ্ত*
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ