āĻļুāĻ•্āϰāĻŦাāϰ, ā§§ āĻĄিāϏেāĻŽ্āĻŦāϰ, ⧍ā§Ļā§§ā§­

3580 (7)

প্রিয়ার চোখে জল

পর্বঃ ১৩

লেখকঃ সাইদা ইসলাম বকুল

আপু একটু আগে আপনার ননদ এখানে এসেছিল। আমার পাশে বসেছিল। আমি তাকে দুটো কথা জিজ্ঞেস করলাম, উনি কোন উত্তর না দিয়ে চলে গেল। আমার মনে হচ্ছে, আমার এখানে থাকাটা উনার পছন্দ হচ্ছে না, তাই।
ও এই কথা, নীলা তোমাকে অপছন্দ করে , এটা তোমার ভুল ধারণা। আমি যখন তোমাকে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলেছিলাম, তখন নীলাই ওর চোখের ভাষায় আমাকে বলেছে তোমাকে নিয়ে আসতে। আর নীলা তোমার কথার উত্তর দেয়নি, কারণ ও কথা বলতে পারে না, যাকে বলে বোবা। ওর বয়স যখন সাড়ে তিন বছর, তখন নাকি একটা আঘাত পেয়ে নীলা কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলে। ও সব শুনতে পারে,বুঝতে পারে। কিন্তু বলতে পারে না। আমার বিয়ে হয়েছে আজ দশ বছর, আমার বিয়ের আগে আমার শ্বশুর মারা গেছেন। আর আমার বিয়ের দুই বছর পর আমার  শাশুড়ি মারা গেছেন। সেই থেকে ওকে আমি সন্তানের মত আদর ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছি। আকাশ অনেক চেষ্টা করেছে, অনেক ডাক্তার দেখিয়েছে, অনেক টাকা খরচ করেছে। কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি, তবে আমি ওর চোখের ভাষা বুঝতে পারি, ও কখন কি চায়, কি বোঝাতে চায়, সব বুঝতে পারি আমি। আসলে প্রত্যেকটা মানুষের একটা অদৃশ্য শক্তি আছে, যা দিয়ে একজন অন্যজনকে বুঝতে পারে। সৃষ্টিকর্তা যখন মানুষের কাছ থেকে কিছু কেড়ে নেয়, তখন মানুষ শত চেষ্টা করেও তা ফিরিয়ে আনতে পারে না। আর সময়ের সাথে সাথে মানুষ তার দুঃখ কষ্টও আস্তে আস্তে ভুলে যায়। আমরাও ভাগ্যকে মেনে নিয়েছি। সুমি উঠে দাঁড়ালো, প্রিয়াও উঠে দাঁড়ালো। সুমি বললো, প্রিয়া তুমি রুমে গিয়ে আরাম করো, আমি একটু বাহিরে যাচ্ছি। তোমার কোন কিছু লাগলে বুয়াকে বলো,লজ্জা করো না। প্রিয়া বললো, আপু আপনি কখন আসবেন?  সুমি বললো,দুই তিন ঘন্টার মধ্যেই ফিরে আসবো। বাড়িতে বুয়া আছে, নীলা আছে, তোমার ভয় পাবার কিছু নেই। আমি তাড়াতাড়ি চলে আসবো, ঠিক আছে? 

এই বলে সুমি ঘর থেকে বের হয়ে গেল। প্রিয়া রান্নাঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। বুয়া কাজ করছে। প্রিয়া তার রুমে গেল। বিছানায় শুয়ে পড়লো। শরীর কিছুটা দুর্বল, আবারও ঘুম পাচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে প্রিয়া ভেবেছিল সে কোথায় যাবে, কার কাছে যাবে, সেই চিন্তা সুমি দূর করে দিয়েছে। তারা প্রিয়ার জন্য কাজও জোগাড় করে দেবে। শীলা ঠিকই বলেছিল, পৃথিবীর সবাই খারাপ নয়। নীলার কথা মনে হতেই প্রিয়ার মন খারাপ হয়ে গেল। এত সুন্দর একটা মেয়ে, অথচ জবান নেই। এতদিন ভাবতাম ধন - সম্পদের মাঝেই মানুষের আসল সুখ। কিন্তু এত ধন -সম্পদের মাঝে থেকেও নীলা কত অসহায়। প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে কিছু শূন্যতা থাকে, যা তার একান্ত নিজস্ব। বাবা-মা, ভাই-বোন,আত্মীয়-স্বজন, স্বামী -সন্তান, স্ত্রী কাউকেই তার ভাগ দেয়া যায় না। প্রিয়া উঠে বসলো, বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। রাস্তার দিকে তাকিয়ে ভাবলো, কাল সারাদিন আমি ওই পথে ছিলাম। চোখ বেয়ে পানি পড়লো। প্রিয়া চোখের পানি মুছলো। এক মহিলা তার দুই সন্তানকে নিয়ে রাস্তার পাশে বসে আছে। একজনের পরনে ছেঁড়া প্যান্ট, আর কোলের শিশুর পরনে কিছুই নেই। মহিলার মুখে চিন্তা আর ক্লান্তির ছাপ। হয়তো ক্ষুধার্ত, মহিলার স্বামী আছে কিংবা ছেড়ে চলে গেছে। স্বামী থাকলে কেউ এভাবে রাস্তায় বসে থাকতো না। বাবা তার সন্তানদের ফেলে চলে যেতে পারে, কিন্তু মা পারে না। কোলের বাচ্চাটা কাঁদছে। আর যেটা মাটিতে বসে আছে, ওর বয়স চার কি পাঁচ, মহিলা অনেক চেষ্টা করেও বাচ্চার কান্না থামাতে পারছে না। ক্ষুধার কাছে মায়ের মমতাও হার মেনে যায়। একজন লোক আসছে কলা খেতে খেতে। মহিলা লোকটার সামনে হাত পাতলো,লোকটা কলাটা দিয়ে দিল। অর্ধেক কলা মহিলা ভাগ করে দুই সন্তানের হাতে দিল। এক দেড় বছরের বাচ্চার এই সামান্য কলা কি সেই প্রয়োজন মেটাতে পারবে?  হয়তো পারবে না, তবুও ক্ষণিকের সান্ত্বনা, মহিলার মুখে একটু হাসি ফুটে উঠলো। হয়তো সে নিজেও ক্ষুধার্ত, তবুও সন্তানদের শান্ত করতে পেরেছে, তাতেই সে খুশি। পরনে ছেঁড়া কাপড় হাতে -পায়ে মাটির চাপ,মুখে ক্ষুধা আর হতাশার ছাপ। সেই মুখে প্রিয়া বাংলার মানচিত্র দেখতে পেল। এরাই হচ্ছে বাংলার নারী, বাংলার মা। প্রিয়ার মন খারাপ হয়ে গেল। বারান্দা থেকে ভেতরে চলে এসে খাটের উপর বসলো। মামার কথা মনে পড়লো। শীলার কথা মনে পড়লো। কাল সারাদিনের কষ্টের কথা মনে পড়লো। সুমির কথা ভাবলো,এত বড়লোক, অথচ কোন অহংকার নেই। প্রিয়ার সাথে বোনের মতো আচরণ করেছে। সুমি যে জায়গায় প্রিয়াকে কাজে লাগিয়ে দেবে, তারাও নিশ্চয়ই ভালো হবে। বুয়া এক গ্লাস শরবত এনে প্রিয়ার হাতে দিয়ে বললো, নেন আফা, এই ঠাণ্ডা শরবত খান, বালা লাগবো। প্রিয়া খেল। বুয়া  মেঝেতে বসে পড়লো। বুয়া বললো, আফা আপনের সব কতা হুইনা আমার খুব খারাপ লাগছে, দুঃখ কষ্ট সবার জীবনেই আছে, তাই না আফা? 
হ্যাঁ, তবে কারো একটু কম, আর কারো একটু বেশি। আপনি এখানে কতদিন ধরে কাজ করেন?
আফা আপনে আমারে তুমি কইরাই কইয়েন। আপনি কইরা কইলে কেমন যেন খোঁচা খোঁচা লাগে, গরীব মানুষরে সবাই তুমি কইরাই কয়। আবার মাঝে মাঝে তুই কইরাও কয়। আর যারা বড়লোক তাগোর ছোড ছোড পোলা পাইনরেও মাইনষে আপনে কইরা কয়। আর এইডাই অইলো বড়লোক আর গরীবের মধ্যে পার্থক্য, তয় এই বাড়ির মানুষগুলো সবাই বালা, আমি এই বাড়িতে কাম করি সাত বছর, সবাই আমারে আপন এর মত দেহে।
আপনার স্বামী সন্তান ওরা কোথায় থাকে?
আমার বিয়া অইছিলো দশ বছর আগে। যহন স্বামীর বাড়ি প্রথম গেলাম, ভাবছিলাম বাপের বাড়ির কষ্ট থেকা মুক্তি পাইছি। এইবার স্বামীর সংসারে সুখে থাকুম। আমার বাপ গরীব মানুষ। সংসারে ছয় ভাই বইন, তিন বেলা পেট ভইরা ভাত খাইতে পারতাম না। বাপে গ্রামের লোকজন ধইরা আমাগো তিন বইনেরে এক লগে বিয়া দিয়া দিল। বড় জনরে বিয়া দিল এক বয়স্ক বেডার লগে, মেঝ জনের বিয়া দিল সতীনের ঘরে, আর আমারে বিয়া দিল এক মুদি দোকানদারের লগে। বিয়ার পর ভাবলাম আমার কপালে সুখ আইছে। কিন্তু ভাগ্যে না থাকলে কপালে বেশিদিন সুখ সয় না। বিয়ার পরের বছর আমার পেডে বাচ্চা আইলো। তারপর থেকাই আমার স্বামীর মনডা খালি বাইরে বাইরে থাকে। হাসে না,জিগাইলে বালা কইরা কতা কই না, কামে তার মন বসে না, সারাক্ষণ উদাস উদাস ভাব। পরে লোক মারফত জানতে পারলাম আমার স্বামী এক বিধবা মহিলার প্রেমে পড়ছে। কথাটা শুইনা মনে অইলো আমার সব শেষ অইয়া গেছে, আমি একা অইয়া গেছি, আমার বুকের ভেতরটা খালি অইয়া গেছে। যে বাপ-মা এত কষ্ট কইরা বড় করছে, হেই বাপ মারে ছাইড়া আইতে যতটা কষ্ট অয় নাই, স্বামীর কতা মনে অইয়া আমার তারচেয়ে বেশি কষ্ট লাগছে। তখন মনে অইছিলো স্বামী যদি আমারে ছাইড়া সত্যি সত্যি বিয়া করে, তাইলে আমি বাঁচুম কেমনে!  তারপর অনেক চেষ্টা করছি, কিন্তু হেই পথ থেকা তারে আমি ফিরাইতে পারি নাই। আমার পোলাডা অইলো, তার দশ দিন পর জমির লোভে ওই মহিলারে বিয়া করলো। অনেক কানলাম, তারপর আস্তে আস্তে মন শক্ত করলাম। শ্বশুর বাড়ির লোকজন, পাড়ার মানুষ আমারে নিয়া কানাঘুষা শুরু করলো, আমি বলে আমার স্বামীর মন রক্ষা কইরা চলতে পারি নাই। শুইনা নিজের উপরই রাগ অইলো, চইলা আইলাম। সেই বাড়ি থেকা মায়ের কাছে পোলাডারে রাইখা চইলা আইলাম ঢাকা শহরে। একজন মানুষ তার বউ বাচ্চা রেখে আরেকটা বিয়ে করলো, গ্রামের কেউ কিছু বললো না? 
আর আপনিও তার কোন প্রতিবাদ করেন নি? 
মাতব্বর চাচা বিচার বহাইতে চাইছিলো, আমি না করছি। বিচার কইরা আর কি অইবো,যা করার তা তো কইরাই ফেলছে। বিচার বইলে জোর কইরা হয়তো তার ঘরে ঠাঁই পাইতাম, জোর কইরা কি সংসার অয় আফা, অয় না। জোর কইরা হাত পা বান্ধন যায়, কিন্তু মন বান্ধন যায় না। আর যে চইলা যাইতে চায়,তারে আর কতদিন ধইরা রাখন যায়। আমার কষ্ট নিয়া আমি দূরে চইলা আইছি, এহেনে কাম কইরা যা পাই তার কিছু জমাই, আর কিছু দেশে মায়ের কাছে পাঠাই। সবাই বালা আছে। বাপ-মা আমারে নিয়া চিন্তা করে। মাঝে মাঝে কয় এইভাবে আমার জীবন কেমনে কাটাবো?  তহন আমি তাগো সান্ত্বনা দেই, সুখ অইলে প্রথম সংসারেই অইতো। এহন আমি যেমন আছি তাতেই আমি খুশি। তয় সুমি আপার লাইগা আমার কষ্ট লাগে, বিয়া অইছে দশ বছর, এহনো কোন সন্তানের মুখ দেখতে পারলো না। অনেক ডাক্তার কবিরাজ দেহাইছে, কোন লাভ অয় নাই। এই নিয়া সুমি আপার মনেও কষ্ট। তয় কাউরে বুঝতে দেয় না, নিজের কষ্ট নিজের ভেতর চাপা দিয়া রাখে।
এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠলো। বুয়া বেরিয়ে গেলো। প্রিয়া উঠে দাঁড়ালো, একটু গোসল করতে পারলে ভালো হত। প্রিয়া তার কাপড়ের ব্যাগ খুলে কাপড় বের করলো, দুটো কাপড় আছে, ছেঁড়া আর ময়লা। প্রিয়া একটা কাপড় হাতে নিল। সুমি আর বুয়া এলো। বুয়ার হাতে দুটো শপিং ব্যাগ। প্রিয়ার হাতে দুটো ব্যাগ দিল। প্রিয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। সুমি বললো, তোমার জন্য কিছু কাপড় এনেছি, লজ্জা করো না, পড়ে নাও। সুমি আর বুয়া চলে গেল। প্রিয়া ব্যাগ থেকে কাপড় বের করলো। এত সুন্দর কাপড় কখনো হাত দিয়েও ছুঁয়েও দেখেনি। সুমি তার জন্য এত কিছু করলো যে,প্রিয়ার চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেল। তারপর চোখের পানি মুছে নতুন কাপড় নিয়ে গোসল করতে ঢুকলো। গোসল করার পর অনেক ভালো লাগলো। বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলো। আলমারীর বড় আয়নায় প্রিয়া নিজেকে দেখলো। এত সুন্দর লাগছে যে, নিজের চোখেও বিশ্বাস হচ্ছে না। আসলে এত সুন্দর কাপড় পড়াতে প্রিয়াকে আরো বেশি সুন্দর লাগছে। প্রিয়া  আয়নায় নিজের চেহারা দেখার সময়ই পেত না। ভালো কাপড় আর ভালো পরিবেশ মানুষের সৌন্দর্য আরো বেশি বাড়িয়ে দেয়। সুমি প্রিয়ার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো, মনে মনে ভাবলো কত সুন্দর লাগছে। আজ প্রিয়াকে কেউ দেখলে ভাববে, কোন ভদ্র ঘরের মেয়ে, অথচ মেয়েটার ভাগ্যে কত দুঃখ কষ্ট। ওর মুখের দিকে তাকালেই মায়া লাগে, ওর দুঃখ কষ্ট কবে শেষ হবে বিধাতাই জানে।

প্রিয়ার চোখে জল

পর্বঃ ১৪

লেখকঃ সাইদা ইসলাম বকুল

দুপুরে খেয়ে প্রিয়া ঘুমিয়েছিল। জেগে দেখে বিকেল হয়ে গেছে। সুমি চা বানাচ্ছে। আকাশ তার রুমে বসে টিভি দেখছে। প্রিয়া সুমির সামনে এসে দাঁড়ালো।
আপু আপনি ঘরে গিয়ে বসুন আমি চা বানিয়ে দিচ্ছি।
আমার চা বানানো শেষ, তুমি কি এক কাপ খাবে? 
জ্বী না, আপু নীলা কোথায়? 
নীলা আর বুয়া ছাদে। ফুল গাছে পানি দিচ্ছে। তুমি যাও নীলার ফুলের বাগান দেখে এসো, ভালো লাগবে।
ঠিক আছে আপু আমি ছাদে যাচ্ছি। এই বলে প্রিয়া চলে গেল। সিঁড়ি বেয়ে প্রিয়া উপরে উঠে এল। নীলা দেখিয়ে দিচ্ছে আর বুয়া গাছে পানি দিচ্ছে। প্রিয়ার চোখ জুরিয়ে গেল। ছাদ তো নয় যেন এক ফুলের বাগান। এত ফুটন্ত ফুল দেখে প্রিয়ার মন ভালো হয়ে গেল। পানির ছোঁয়া পেয়ে ফুলগুলো দুলছে। দেখলে মনে হয় এই ফুলগুলো নীলার প্রাণ। মানুষ কিছু একটা নিয়ে স্বপ্ন দেখে, আর তাই নিয়ে বেঁচে থাকে। মানুষ দুঃখকে জয় করে সুখ খোঁজার চেষ্টা করে। আর একেক জন একেকভাবে সুখ খোঁজে । হয়তো এই ফুলগুলো নীলার সেই সুখের উৎস। তবুও ভালো কিছু একটা নিয়ে ব্যস্ত থাকুক। কারণ একাকীত্বের চেয়ে বড় কষ্ট আর বড় অভিশাপ মানুষের জীবনে আর কিছু নেই। নীলা তার একাকীত্ব জয় করতে পেরেছে, এজন্য প্রিয়া খুব খুশি হল। হঠাৎ করে নীলা পেছন দিকে তাকালো। দেখলো প্রিয়া দাঁড়িয়ে আছে। নীলা হাত দিয়ে প্রিয়াকে ডাকলো। প্রিয়া নীলার সামনে এসে দাঁড়ালো। নীলা ইশারায় ফুলগুলো দেখালো। প্রিয়া নীলার হাত দুটো চেপে ধরে বললো, আমার চোখে দেখা সবচেয়ে সুন্দর ফুলের বাগান এটা। নীলা খুব খুশি হল।পাশের বাড়ির ছাদে একজন বয়স্ক ভদ্র মহিলা উঠলো। চেহারায় আভিজাত্যের ছাপ। চশমার ফাঁকেও মহিলার চোখ দুটো অসম্ভব সুন্দর লাগছে। প্রিয়া কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চোখ ফিরিয়ে নিল। ভদ্র মহিলা হাসিমাখা মুখ নিয়ে প্রিয়ার দিকে তাকিয়েই রইলো। প্রিয়া আবার দুই তিনবার তাকালো। দেখলো মহিলা ওর দিকে তাকিয়েই আছে। প্রিয়া কিছুটা লজ্জাবোধ করলো, ভাবলো এই মহিলা আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেন?  প্রিয়া মাথা নিচু করে রাখলো?  একটু পর তাকিয়ে দেখে মহিলা চলে গেছে। নীলা ছাদের কোণায় দাঁড়িয়ে পাশের বাড়ির এক বাচ্চার সাথে হাসছে। বুয়ার গাছে পানি দেয়া শেষ। পড়নের কাপড় দিয়ে হাত মুচছে। প্রিয়া বুয়ার পাশে দাঁড়িয়ে বললো, বুয়া কিছুক্ষণ আগে ওই ছাদে একজন ভদ্রমহিলা দাঁড়িয়ে ছিল, আপনি চেনেন তাকে? বুয়া বললো হ আফা উনি অইলো ওই বাড়ির মালিকের বউ। আমরা তারে খালাম্মা কইয়া ডাকি। উনি চৌধুরী সাহেবের স্ত্রী । ওনাগো দুই পোলা, বড়জন ইঞ্জিনিয়ার, আর ছোডডা পড়তাছে। ওনারা মানুষ হিসেবে খুবই বালা। এত বড়লোক তবুও মনে কোন অহংকার নাই। বড়লোক অইলো দুই রকম, যারা পুরান বড়লোক, তাগো মনে মনে কোন অহংকার নাই। তারা সবার লগে হাইসা কতা কয়, আর যারা নতুন বড়লোক , তাগো লগে তো কতাই কওন যায় না। আর তাগো অহংকার ও বেশি থাকে। প্রিয়া বললো, বুয়া আপনার কথা গুলো  আমার খুব ভালো লাগে। বুয়া বললো, আফা আপনের মনডা বালা, তো তাই আমার কতা আপনের বালা লাগে। আফা আমি ঘরে গেলাম, আপনে নীলা আপার লগে থাকেন। এই বলে বুয়া চলে গেল। নীলা এসে প্রিয়ার সামনে দাঁড়ালো। নীলার হাসিমাখা মুখের দিকে প্রিয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। হাসলে নীলাকে কত সুন্দর লাগে!  প্রিয়াকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নীলা ইশারায় জিজ্ঞেস করলো, কি হয়েছে?  প্রিয়া হেসে নীলার হাত ধরে বললো,তুমি খুব সুন্দর! আর তোমার হাসি আরো বেশি সুন্দর। আমি যতদিন  বেঁচে থাকবো, তোমাদের কথা ভুলতে পারবো না। আকাশ ভাইয়া, সুমি আপু, আর তুমি, সবাই খুব ভালো। নীলা তুমি হয়তো ভাবো যে কথা বলতে না পারাটা তোমার অক্ষমতা। হয়তো তুমি নিজেকে খুব একা আর অসহায় ভাবো। কিন্তু এটা মোটেও ঠিক  নয়। যে অন্ধ সে ভাবে, আহা! যদি আমার দৃষ্টি শক্তি থাকতো, তাহলে এই সুন্দর পৃথিবীটা দু'চোখ ভরে দেখতে পেতাম। আমি বলি সে অন্ধ হয়ে ভালই হয়েছে। কারণ তাকে এই পৃথিবীর অনেক নিষ্ঠুরতা দেখতে হয় না। আর তুমি কথা বলতে পারো না তার জন্য কষ্ট পেও না। কারণ এই পৃথিবীর বুকে এমন কিছু মানুষ আছে, যারা মানুষের সাথে বলে, যে অন্যজন সহ্য করতে না পেরে নিজের জীবন পর্যন্ত দিয়ে দেয়। আমি বলবো তুমি ভাগ্যবতী, কারণ তোমার কথায় কেউ কখনো কষ্ট পাবে না। যে তোমাকে ভালোবাসবে , সে তোমার চোখের ভাষায় সব বুঝে নেবে। আর যে ফুলকে এত ভালোবাসে তার জীবনটা ফুলের মতই সুন্দর হবে। এটা আমার সান্ত্বনা নয়, আমার বিশ্বাস। নীলার চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো। প্রিয়াকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। প্রিয়া বুঝতে পারলো এটা নীলার নীরব ভালোবাসা।
বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। প্রিয়া আকাশের দিকে তাকালো। আকাশে তারা উঠেছে। প্রিয়া নীলাকে তারা দেখালো, নীলা খুশি হল। প্রিয়া বললো, আমার যখন খুব বেশি মন খারাপ হয়, তখন আমি ওই তারাগুলো দেখি। তোমার ছোট ছোট কষ্ট গুলো আকাশের ওই বিশালতার মাঝে ছড়িয়ে দাও,দেখবে কষ্ট অনেক কমে গেছে। নীলা আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো, আর প্রিয়া নীলার দিকে তাকিয়ে রইলো।

চৌধুরীবাড়িতে ড্রইংরুমে বসে টিভি দেখছে মুন্না। মুন্না এই বাড়ির ছোট ছেলে। আর বড় ছেলে জয়, পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। বাড়ির কাজের ছেলে মতি মেঝেতে এসে বসলো। টিভি দেখছে আর হাসছে। মতির হাসি দেখে মুন্না বিরক্ত হলো, ধমক দিয়ে বললো, এই বেটা মতি, একা একা হাসছিস কেন?  আমাকে বিরক্ত না করে যা এখান থেকে। সময় পেলেই টিভির সামনে বসে পড়িস।
বাইজান এহন তো কোন কাম নাই, কাম শেষ কইরাই তো টিভি দেহি। টিভি দেখতে আমার অনেক বালা লাগে, কি সুন্দর কইরা নাচে। 
এই গাধা, তুই কি হিন্দি ভাষা বুঝিস? 
না বুঝলেও দেখতে বালা লাগে।
শোন, যেটা বুঝতে পারবি, সেটা দেখবি, তাহলে তোর কিছুটা জ্ঞান হবে।
বাইজান, মূর্খ মানুষের আবার জ্ঞানের দরকার কি? 
আছে, অবশ্যই আছে,বইয়ের পড়া ছাড়াও মানুষের অনেক কিছু শেখার আছে, অনেক কিছু জানার আছে। প্রত্যেকটা মানুষের কিছু জ্ঞান থাকা দরকার। তা না হলে সবাই তাকে বোকা বলে।
ঠিক আছে বাইজান, এহন থেকা যা বুঝতে পারুম তা দেখুম আর শুনুম।
এমন সময় বাবা এলো। মতি আর মুন্না উঠে চলে গেল। কারণ বাবা এখন সংবাদ দেখবে। আর মুন্না গিয়ে পড়তে বসবে।মিসেস চৌধুরী এসে পাশে  সোফায় বসলো।  সাফায়াত চৌধুরী টিভি দেখছে আর স্ত্রীর দিকে তাকাচ্ছে। মিসেস চৌধুরী রাগ করে উঠে দাঁড়ালো। চৌধুরী সাহেব স্ত্রীর হাত ধরে পাশে বসালো। রাগ করে উঠে চলে যাচ্ছ কেন, মনে হচ্ছে তুমি আমাকে কিছু বলবে?
তোমার মত স্বামীর সাথে রাগ করেও লাভ কি!  আমার রাগ বোঝার ক্ষমতা তোমার আছে?  তুমি শুধু বোঝ ব্যবসা, অফিসে গেলে ব্যবসা, আর বাড়িতে এলে টিভি, অন্য কোন দিকে তোমার নজর পড়ে? 
বেগম রাগ করো না, এই দেখ আমার নজর এখন তোমার দিকে। কি বলবে বল,আমি মন দিয়ে শুনছি। আসল কথা কি তুমি সব কিছু এত সুন্দরভাবে সামলিয়ে দাও যে,আমার আর সংসার নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। ব্যবসায়ী মানুষ, ব্যবসাটাই ভালো বুঝি। তবে তুমি যদি বুঝিয়ে বলো, তবে বুঝতে কোন অসুবিধা হয় না।
থাক আর ঢং করে কথা বলতে হবে না। তোমার ছেলে জয়, ঠিক তোমার মতই হয়েছে। কাজ ছাড়া যে জীবনে অনেক কিছু আছে তা বুঝতে চায় না।
তুমি হঠাৎ করে আমার ছেলের বদনাম করছো কেন!  আচ্ছা আর রাগ না করে কি হয়েছে আমাকে বল?
ওর বয়স হয়েছে, আমি ওকে বিয়ে করাবো। আরো কয়েকবার বলেছি, না করেছে। এবার যদি  তোমার ছেলে না করে, তাহলে তোমরা বাপ-ছেলে মিলে থাকবে এখানে। আমি চলে যাবো আমার বাপের বাড়ি।
এই বয়সে রাগ করে বাপের বাড়ি চলে গেলে লোকে কি বলবে!  শোন, আমি চাই না, আমার বাড়ি থাকতে, আমার বউ বাপের বাড়িতে থাকুক। ঠিক আছে এবার জয়কে আমি কড়া করে বলে দেবো, যাতে বিয়ের জন্য রাজী হয়ে যায়। আর তোমার মনের আশা পূরণ করে।

আমি কালই মেয়ে দেখার কাজ শুরু করবো। আজ অবশ্য একটা মেয়ে আমার খুবই পছন্দ হয়েছে। কাল খোঁজ নিয়ে দেখি বিয়ে হয়েছে কি না। যদি বিয়ে না হয়ে থাকে,তবে আমার জয় এর জন্য বিয়ের প্রস্তাব দেবো। আমি কোন কিছু চাই না, শুধু লক্ষ্মী একটা বউ চাই।
তুমি বস, আমি তোমার জন্য এক কাপ চা নিয়ে আসি।
আর কটা দিন কষ্ট করো, তারপর ছেলের বউ এর হাতের চা বুড়ো বুড়ি মিলে খাবো।
মিসেস চৌধুরী হাসতে হাসতে চলে গেল। আর সাফায়াত চৌধুরী মনের সুখে সোফায় হেলান দিয়ে বসলো।

রাত অনেক হয়েছে, হয়তো সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। শুধু প্রিয়ার চোখে ঘুম আসছে না। শোয়া থেকে উঠে বসলো প্রিয়া। আর মামার কথা মনে পড়লো। মানুষ যত দূরেই যাক, অতীত কখনো তার পিছু ছাড়ে না। মামীর রাগী চেহারাটাও সারাক্ষণ চোখের সামনে ভাসে। শাহেদের কথা যতবার মনে পড়ে ততবারই ঘৃণা লাগে। ঢাকায় প্রথম দিনের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়লে ভয়ে বুক শুকিয়ে আসে। আকাশ আর সুমির কথা মনে পড়লে শ্রদ্ধায় মনটা ভরে উঠে। প্রিয়া বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। রাতের নীরবতা চারিদিকে ভর করেছে। রাতের নীরবতার মাঝে প্রিয়া তার নিজস্ব স্বাধীনতা খুঁজে বেড়ায়। তাই রাতের নীরবতা প্রিয়ার খুব পছন্দের। হঠাৎ করে দূর থেকে কাউকে আসতে দেখা গেল। পড়নে ঝলমলে পোশাক। পুরুষ না মহিলা বোঝার জন্য প্রিয়া তাকিয়ে রইলো। কাছে আসতেই বোঝে গেল একজন যুবতী মেয়ে। রাত প্রায় দেড়টা হবে,এত রাতে একটা মেয়ে একা রাস্তায় কি করছে!  রাস্তায় জ্বলে থাকা আলোয় স্পষ্ট দেখা গেল পড়নে ঝলমলে পোশাক। মুখে গাঢ় মেকাপ, ঠোঁটে লাল রং এর লিপস্টিক। এত রাতে একটা মেয়ে এত সেজেগুজে কোথা থেকে আসলো?  ওর সাথে তো কেউ নেই, ও কি পথ হারিয়ে ফেলেছে?  কিন্তু ওকে দেখে তো চিন্তিত মনে হচ্ছে না। মেয়েটা এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। রিকশা দিয়ে একটা ছেলে যাচ্ছিল। মেয়েটাকে দেখে রিকশা থামালো।মেয়েটার কাছে গিয়ে যেন কি বললো। মেয়েটা হাসলো, তারপর ছেলেটার হাত ধরে রিকশায় উঠে চলে গেল। এতক্ষণে প্রিয়া বুঝতে পারলো। এই মেয়ে হচ্ছে রাস্তার পাশে ফুটে থাকা রাতের পদ্মফুল। যে ইচ্ছে করবে সেই তুলে নিতে পারবে। এটা কেমন জীবন, কেন এমন হয়?  এক মেয়ের জন্য কত মেয়ের বদনাম হয়। কেন তারা সমাজটাকে এভাবে দূষিত করছে, নিজেরা নষ্ট হচ্ছে, আর তার দূর্গন্ধ চারিদিকে ছড়াচ্ছে!  প্রিয়া আর ভাবতে পারছে না, মাথা ধরছে, গলা শুকিয়ে গেছে। পানি খাওয়া দরকার, ড্রইংরুমে গিয়ে হঠাৎ চমকে গেল। এই অন্ধকারে সোফায় কে বসে আছে?  প্রিয়া ভয় পেয়ে গেল, চোর নাকি!  চারিদিকে তাকিয়ে দেখলো দরজা জানালা বন্ধ। প্রিয়া ভাবলো চিৎকার দেবে, আবার ভাবলো না, ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়বে। আবার ভাবলো, যারা আমার জন্য এত কিছু করেছে, আশ্রয় দিয়েছে, আদর ভালোবাসা দিয়েছে। তাদের কোন ক্ষতি হতে দেব না। প্রিয়া আস্তে আস্তে সোফায় বসে থাকা মানুষটার পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো। এই অন্ধকারেও সুমিকে চিনতে প্রিয়ার ভুল হল না। সুমি একটা পুতুল বুকে নিয়ে বসে আছে। প্রিয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।  সারাদিন যে সুমিকে প্রিয়া দেখেছে, সেই সুমি আর এই সুমির মধ্যে অনেক পার্থক্য। সারাদিনের সুমি একজন স্ত্রী, একজন ভাবী, সংসারের একজন মালিক,একজন বড় মনের মানুষ।  যে এই প্রিয়াকে রাস্তা থেকে তুলে এনে এই বাড়িতে ঠাঁই দিয়েছে,নতুন কাপড় এনে দিয়েছে, আদর করে খাইয়েছে। আর এখনকার সুমি একজন মা,যে পুতুলের মাঝে তার সন্তানকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। দশ বছরেও কোন সন্তানের মুখ দেখতে পারেনি একজন নারী। তার জীবনের সব শূন্যতা হয়তো পূরণ করতে পারে, কিন্তু সন্তানের শূন্যতা পূরণ করতে পারে না। তার বুকের ভেতরটা হাহাকার করছে। যে সন্তান মা মা বলে ডাকতো, ছোট্ট তুলতুলে শরীর নিয়ে তার কোলে খেলা করতো, তার গালে আদর মেখে দিতো, ছোট্ট  হাতের আঙুল দিয়ে তার চুল টেনে ধরতো, সারা বাড়ি ছুটাছুটি করতো। আর সুমি তার পেছনে পেছনে দৌড়াতো,আর যখন ভয় পেত,তখন দৌড়ে এসে  মাকে জড়িয়ে ধরতো। এই সুখ কি একটা পুতুল দিতে পারবে? কখনো পারবে না। তবুও সুমি পুতুলটাকে বুকে জড়িয়ে ধরে সন্তানের অস্তিত্ব অনুভব করছে। সুমি কাঁদছে কি না বুঝা যাচ্ছে না। তবে প্রিয়া কাঁদছে। প্রিয়া কখন পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সুমি বুঝতে পারে নি। প্রিয়া নীরবে কাঁদছে। তবে চাপা কান্নারও একটা শব্দ আছে, একটা ভাষা আছে। সুমি উঠে দাঁড়ালো। প্রিয়া চুপ হয়ে গেল। কারণ অন্ধকারে কারো চোখের পানি কেউ দেখতে পাচ্ছে না। সুমি বললও,প্রিয়া তুমি এখানে কখন এসেছো? প্রিয়া বললো,আপু আমি একটু আগে এসেছি, পানি খেতে এসেছিলাম। দেখলাম অন্ধকারে কেউ বসে আছে, তাই এলাম। আপু আপনার কি হয়েছে, একা একা বসে আছেন? 
কিছু হয়নি মনটা অস্থির লাগছিল, তাই এখানে এসে বসেছি। লাইট জ্বালালে তোমার ভাইয়া টের পেয়ে যেতো। তাই অন্ধকারে বসে আছি। তোমার ভাইয়া টের পেলে আমার সাথে জেগে বসে থাকবে। সারাদিন মানুষটা ব্যস্ত থাকে। রাতে একটু ভালোভাবে না ঘুমালে অসুস্থ হয়ে পড়বে। তাছাড়া মাঝে মাঝে একা থাকতে ভালো লাগে। নিজের সাথে নিজে কথা বলা যায়। ভেতরটা যখন খুব অশান্ত হয়ে উঠে,তখন নিজের সাথে নিজে কথা বলি। তখন কিছুটা ভালো লাগে। অনেক রাত হয়েছে, গিয়ে শুয়ে পড়।
আপু আমার ঘুম আসছে না, আপনি অনেক বড় মনের মানুষ, তাই কষ্টকে আড়াল করে হাসতে পারেন।
প্রিয়া তুমি তো সবই জেনেছো, বিয়ের এতটা বছর পেরিয়ে গেল, অথচ মা হতে পারলাম না।মানুষের জীবনটা একটা শূন্য ঘরের মতো। আমি কারো মেয়ে,কারো বোন, কারো স্ত্রী, কারো ভাবী, কারো পুত্রবধূ শুধু মায়ের ঘরটা পূরণ করতে পারিনি,আসলে সবাই সব কিছু পারে না। মা হবার ক্ষমতা আমার নেই। আকাশকে অনেকবার বলেছি আরেকটা বিয়ে করার জন্য, রাজী হয়নি। আকাশ আমাকে অনেক ভালোবাসে, আমার চোখের পানি ও একদম সহ্য করতে পারে না। তাই ওর চোখের আড়ালে আমি কাঁদি। মাঝে মাঝে মনে হয় দূর থেকে কেউ আমাকে মা মা বলে ডাকছে। তখন আমার বুকের ভেতরটা হাহাকার করে উঠে।
আপু আপনাকে সান্ত্বনা দেবার মত ভাষা আমার জানা নেই।
প্রিয়া আমি কঠিন বাস্তবতাকে মেনে নিয়েছি।মাতৃ হৃদয়টা আমি পাথর দিয়ে সমাধি গড়েছি, তারপরও সেই পাথরের গাঁ বেয়ে মাঝে মাঝে দু'এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে। অনেক রাত হয়েছে ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়।
এই বলে সুমি আস্তে আস্তে হেঁটে চলে গেল। প্রিয়ার মনে হলো একটা জীবন্ত লাশ ওর সামনে দিয়ে চলে গেল। প্রিয়া গিয়ে শুয়ে পড়লো। কিন্তু চোখের পানি থামাতে পারছে না। এ কান্না কি সুমির জন্য,না বাচ্চার জন্য, প্রিয়া বুঝতে পারলো না। সুমির কথা ভাবতে ভাবতে শীলার কথা মনে পড়লো। শীলার জন্যই প্রিয়া আজ এখানে। শীলার মনোবলই প্রিয়াকে নতুন জীবনের সন্ধান দিয়েছে। শীলা আর মামা নিশ্চয়ই অনেক চিন্তায় আছে। শীলার কাছে ফোন করার দরকার। তাহলে কিছুটা চিন্তা দূর হবে। এখান থেকে প্রিয়া কোথায় যাবে জানে না। তবুও সুমির উপর বিশ্বাস আছে, প্রিয়াকে যেখানে কাজে লাগিয়ে দেবে সেখানকার মানুষগুলো ভালই হবে। এতটুকুই প্রিয়ার জন্য অনেক। সুমির ঋণ প্রিয়া কখনো শোধ করতে পারবে না। হয়তো টাকার ঋণশোধ করা যায়, কিন্তু ভালোবাসার ঋণ শোধ করা যায় না। সুমি প্রিয়াকে যে ভালোবাসা দিয়েছে, তার ঋণ শোধ করতে পারবে না। আর যদি কখনো সময় আসে, প্রিয়া সেই ঋণ শোধ করার জন্য যা করা দরকার তাই করবে। প্রিয়া ভাবলো,সুমি আপুর ফোন দিয়ে কাল শীলার সাথে কথা বলবো। ওদের চিন্তায় রেখে আমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারবো না। আমার ভাগ্যে যা আছে তাই হবে। কিন্তু আমার জন্য মামা আর শীলা যেন কোন চিন্তা না করে, সেভাবে কথা বলতে হবে। 

āĻ•োāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāχ:

āĻāĻ•āϟি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āϟ āĻ•āϰুāύ