āĻļুāĻ•্āϰāĻŦাāϰ, ā§§ āĻĄিāϏেāĻŽ্āĻŦāϰ, ⧍ā§Ļā§§ā§­

3580 (6)

প্রিয়ার চোখে জল

পর্বঃ১১

লেখকঃ সাইদা ইসলাম বকুল

সুমি চিন্তায় পায়চারি করছে আর ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। নীলা সুমির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। সুমি ব্যাপারটা লক্ষ্য করলো। নীলার কাছে গিয়ে বললো, তুই আমার দিকে তাকিয়ে হাসছিস?  ভাই বোন মিলে তো আমাকে নিয়ে ভালই মজা করিস, তোর ভাই যাওয়ার সময় বলে গেল তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে। আর এখন রাত বাজে বারোটা, আর উনি এতটা ব্যস্ত, যে আমার ফোন ধরারও উপায় নেই। আসুক আজ। এমন সময় গাড়ি ভেতরে ঢোকার শব্দ শুনতে পেল। সুমি আর নীলা দরজা খুলে দাঁড়ালো। আকাশ সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে এল।সিঁড়িতে কারো পায়ের আওয়াজ শোনা গেল। সুমি তাকিয়ে রইলো। প্রিয়া ধীরে ধীরে উপরে উঠে এল। নীলা আর সুমি অবাক হয়ে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। প্রিয়া মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। সুমি আকাশ এর দিকে তাকালো। আকাশ বললো, ওর নাম প্রিয়া। গ্রামের মেয়ে আজই শহরে এসেছে, ওর থাকার কোন জায়গা ঠিক করতে পারেনি। রাতের বেলা মেয়েটা কোথায় থাকবে, তাই আমি সাথে করে নিয়ে এসেছি।

একটা মেয়েকে তুমি হঠাৎ করে বাড়ি নিয়ে এসেছো। এই ঢাকা শহরে মানুষ কত রুপ নিয়ে চলে।তা তুমি জানো  না? তুমি সব জেনে শুনে একটা অপরিচিত যুবতী মেয়েকে তোমার সাথে করে নিয়ে এসেছো। নীলা দেখ তোর ভাইয়ের কান্ড। আকাশ তোমাকে আমি বুদ্ধিমান ভেবেছিলাম, কিন্তু আজ বুঝলাম তুমি কতোটা বোকা। সুমি, তুমি এই সামান্য ব্যাপারটা এত কঠিনভাবে নিচ্ছ কেন?  মেয়েটা সত্যি বিপদে পড়েছে।
ওর মুখের কথা শুনে তুমি ওকে বিশ্বাস করেছো।
ঠিক আছে সুমি, ওকে শুধু রাতটুকু থাকতে দাও,সকালে বিদায় করে দিও।
আকাশ আমি ওকে এই বাড়িতে থাকতে দেব না। তুমি ওকে এক্ষণি বিদায় করে দাও। আকাশ কি করবে বুঝতে পারলো না। প্রিয়া আকাশের সামনে এসে দাঁড়ালো। ঠোঁট দুটো  কাঁপছে। তবুও সাহস করে বললো,ভাইয়া,আমি চলে যাচ্ছি। আমার জন্য আপনাদের সংসারে অশান্তির সৃষ্টি হোক, তা আমি চাই না। জন্মদাতা পিতা আর গর্ভধারিণী মা -ই যখন আমাকে এতিম করে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে, তখন আমি আর কার কাছে আদর ভালোবাসা আশা করবো।এই শহরে আজ কত ধরনের মানুষ দেখলাম। ভালো কথার আড়ালে খারাপ কাজ। বিশ্বাসের নামে ধোঁকাবাজি। আপু ঠিকই বলেছে। মানুষ দেখে তার ভালোমন্দ বিচার করা যায় না। তবুও আমার প্রতি যতটুকু সহানুভূতি দেখিয়েছেন, তার জন্য ধন্যবাদ, আমি চলে যাচ্ছি। এই বলে প্রিয়া সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেল। আকাশ সুমির দিকে তাকিয়ে বললো,কাজটা তুমি ঠিক করলে না। আজ যদি তোমার কিংবা আমার বোন হত, তাহলে তুমি তাকে এভাবে তাড়িয়ে দিতে পারতে?  পারতে না। রাতের বেলা একটা মেয়েকে তুমি বাড়ি থেকে বের করে দিলে। তুমি ওর সাথে সাথে আমাকেও অপমান করেছো। এই মেয়েটা আজ প্রথম এই শহরে এসেছে। ও দিনের ঢাকার নিষ্ঠুরতা দেখেছে, কিন্তু রাতের ঢাকার হিংস্রতা ও দেখেনি, ও জানে না রাতের ঢাকায় কিছু জানোয়ার রাস্তায় ঘোরাফেরা করে, যারা ওর শরীরে বিষাক্ত থাবা বসিয়ে দেবে। তারপর আকাশ প্রিয়ার সব দুঃখের কথা সুমিকে বললো। তারপর রেগে ঘরে চলে গেল। নীলা সুমিকে চোখের ইশারায় বললো,ভাবী তুমি মেয়েটাকে নিয়ে এসো। সুমিও মনে মনে ভাবলো মেয়েটাকে এভাবে তাড়িয়ে দেয়া ঠিক হয়নি। সুমি তাড়াতাড়ি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেল। বাইরে এসে দেখে প্রিয়া রাস্তার মাঝামাঝি চলে গেছে। একজন নাইট গার্ড প্রিয়ার সামনে দাঁড়ালো। সুমি জোরে জোরে হেঁটে গেল। সুমিকে দেখে প্রিয়া চেয়ে রইলো, সুমি নাইট গার্ডকে কি যেন বললো,নাইট গার্ড সালাম দিয়ে চলে গেল। সুমি প্রিয়ার সামনে এসে দাঁড়ালো। প্রিয়া ভয়ে মাথা নিচু করে রাখলো।সুমি প্রিয়ার হাত ধরলো, প্রিয়া চমকে গেল। সুমি বললো,তুমি আমার সাথে চল। প্রিয়া বললো,কোথায়?  সুমি বললো, আমাদের বাড়িতে। তুমি আজ আমাদের কাছে থাকবে। প্রিয়া বললো,কিন্তু আপু আপনিই তো আমাকে চলে যেতে বলেছেন। আমি চলে এসেছি। সুমি বললো, রাগের মাথায় বলে ফেলেছি। আমার কথায় মনে কষ্ট নিও না। প্রিয়া এবার আর কোন কথা  বললো না। আর তাছাড়া কথা বলার শক্তি ও প্রিয়ার নেই। তাই চুপচাপ সুমির সাথে হাঁটতে লাগলো। যাক রাতের জন্য তো আশ্রয় পেল। তারপর দেখা যাক কি হয়। প্রিয়া হাটছে আর সুমির দিকে তাকাচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে এই মহিলাকে অনেক নিষ্ঠুর মনে হয়েছিল,কিন্তু এই মুহূর্তে এই মহিলাকে খুব বেশি আপন মনে হচ্ছে। প্রিয়া হাটছে, এই চলার শেষ কোথায় প্রিয়া নিজেও জানে না। প্রিয়া আর সুমি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো। প্রিয়ার শরীর কাঁপছে, সারাদিনের চিন্তা আর ক্ষুধা প্রিয়াকে দুর্বল করে দিয়েছে। হঠাৎ করে প্রিয়া পা পিছলে পড়ে যেতে লাগলো। সুমির হাত ধরে ফেললো। সুমি বুঝতে পারলো প্রিয়া দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাই হাত ধরে উপরে উঠালো। প্রিয়াকে দেখে নীলা খুশি হল। আকাশ এসে প্রিয়াকে দেখে খুশি হল।সুমি নীলাকে ইশারা করলো, নীলা প্রিয়াকে নিয়ে ভেতরে গেলো। আকাশ সুমিকে বললো,তুমি কি আমার উপর রাগ করে প্রিয়াকে নিয়ে এসেছো।
না আকাশ, তোমার উপর রাগ করে আমি ওকে নিয়ে আসিনি, আমার নিজের ইচ্ছেয় আমি ওকে নিয়ে এসেছি।
সুমি বাইরের একটা মেয়ের জন্য তোমার সাথে আমার খারাপ আচরণ করা ঠিক হয়নি। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও। আসলে মেয়েটাকে দেখে আমার কেন যেন এত মায়া লাগলো, যে সাথে করে নিয়ে এলাম। আর কখনো এমন ভুল করবো না।
আকাশ, তুমি অযথা নিজেকে অপরাধী ভাবছো, তুমি আমার সাথে আজ যে আচরণ করেছো, তার জন্য আমি  তোমাকে ধন্যবাদ জানাই। এমন কিছু আচরণ আছে যার দ্বারা মানুষ তার ছোটখাটো ভুল গুলো বুঝতে পারে। মানুষ যদি মানুষকে মুল্যায়ণ না করে, তাহলে কে করবে? আমাদের উচিত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো, যতটুকু সম্ভব তাদের সাহায্য করা। জানো, প্রিয়াকে নিয়ে আসার পর থেকে মনের ভেতরে খুব শান্তি পাচ্ছি, মনে হচ্ছে খুব বড় একটা ভালো কাজ করে ফেলেছি, নিজের উপরে নিজেরই গর্ববোধ হচ্ছে।সুমি এটা হলো ভালো কাজের আত্নতৃপ্তি একটা মানুষের ভেতর আরেকটা মানুষ বসবাস করে। মানুষ যখন খারাপ কাজ করে তখন ভেতরের মানুষটা মন খারাপ করে, আর তখনি মানুষের মন অশান্ত হয়ে উঠে। আর মানুষ যখন ভালো কাজ করে তখন ভেতরের মানুষটা খুশি হয়, তখন মানুষের মনে এক ধরনের প্রশান্তি আসে। সুমি তোমার হৃদয়টা অনেক বড়, এই আকাশের বুকে তুমি এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। আকাশ সুমিকে বুকে টেনে নিল। সুমি বললো,তুমি রুমে যাও, আমি আগে মেয়েটাকে পেট ভরে খেতে দেই। মনে হয় সারাদিন কিছুই খায়নি, সিঁড়ি বেয়ে উঠার সময় ওর শরীর কাঁপছিল। এই বলে সুমি রান্না ঘরে গেল। কাজের মহিলা জুলেখাকে ডাকলো। জুলেখা এলে সুমি বললো, তাড়াতাড়ি টেবিলে খাবার দেয়ার জন্য। জুলেখা টেবিলে খাবার দিল। সুমি প্রিয়াকে নিয়ে এলো। সুমি আর প্রিয়া বসলো। টেবিলে অনেক রকম খাবার, প্রিয়া এত খাবার এক সাথে কখনো দেখেনি। সুমি প্রিয়ার সামনে খাবার দিল। সারাদিনের ক্ষুধার্ত প্রিয়া কোন লজ্জা না করে খেতে লাগলো। প্রিয়া পেট ভরে খেল। সুমি এক গ্লাস দুধ এনে দিলো। প্রিয়া বললো, আপু অনেক খেয়েছি, এখন আর দুধ খেতে পারবো না। সুমি বললো, দুধটুকু খাও, তা না হলে শক্তি পাবে কোথা থেকে, আর শক্তি না থাকলে, এই জীবনটার সাথে যুদ্ধ করবে কিভাবে?  প্রিয়া আর কথা না বলে দুধ খেল। প্রিয়া উঠে দাঁড়ালো। সুমি প্রিয়াকে নিয়ে গেস্ট রুমে গেল। তারপর প্রিয়াকে বললো, এইটা আমাদের গেস্ট রুম,একা থাকতে তোমার ভয় লাগবে না তো?  প্রিয়া বললো, আপু ছোটকাল থেকে আমি একা থাকি। সুমি দরজা টেনে চলে গেল। প্রিয়া বিছানায় বসলো। এত সুন্দর ঘর, এত সুন্দর খট, প্রিয়া কখনো দেখেনি। প্রিয়া ঘরের চারদিকে তাকালো। ভাবলো ওনারা এত বড়লোক। এত সুন্দর বাড়িতে থাকে। পৃথিবীর সব সুখ তো ওনাদেরই। ভাগ্য আজ আমাকে কত দূর নিয়ে এসেছে। জানি না আমার এই পথ চলা কোথায় গিয়ে শেষ হবে। মামা আমি জানি তুমি আমার জন্য কাঁদছো, তুমি আমার জন্য দোয়া করো মামা, যাতে চলার পথে হোঁচট খেয়ে নর্দমায় পড়ে না যায়। প্রিয়া শুয়ে পড়লো, আর মনে মনে ভাবলো, আজ রাতের জন্য তো আশ্রয় পেলাম, কাল কোথায় যাবো জানি না। প্রিয়া কাঁদছে আর অনেক কিছু ভাবছে, ভাবতে ভাবতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়লো।

প্রিয়ার চোখে জল

পর্বঃ ১২

লেখকঃ সাইদা ইসলাম বকুল

প্রায় মধ্যরাত। কারো চাপা কান্নার আওয়াজ এ শীলার ঘুম ভেঙে গেল। শীলা চোখ মেলে কান পেতে রইলো। হ্যাঁ কান্নার আওয়াজ, শীলা উঠে বসলো। এত রাতে কে কাঁদছে!  আস্তে আস্তে ঘর থেকে বেরিয়ে এল। আজ পূর্ণিমা। পুরো উঠোন জুড়ে চাঁদের আলো পড়েছে। কিন্তু কাউকে দেখা যাচ্ছে না। শীলা কিছুটা ভয় পেয়ে গেল। কান্নার শব্দ এখনো শুনছে, কিন্তু কাউকে দেখা যাচ্ছে না। হঠাৎ করে বড়ই গাছের নীচে কাউকে দেখতে পেল। শীলা ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল,তার বাবা দাঁড়িয়ে কাঁদছে।
বাবা তুমি কাঁদছো, এত রাতে তুমি এখানে একা একা দাঁড়িয়ে কাঁদছো, তুমি কি বলতো বাবা!
মা রে আমার যে ঘুম আসছে না, বাবা -মা মরা মেয়েটা আজ সকাল থেকে নিখোঁজ। কোথায় গেছে তাও জানি না, আমি কি করে ঠিক থাকি!
বাবা, তুমি এভাবে বেঙে পড়লে আমি কি করবো বলো?
প্রিয়া আমার জন্যই এই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। আমি ওর জন্য কিছুই করতে পারিনি। নিজেকে আজ খুব বেশি অপরাধী মনে হচ্ছে। মেয়েটার প্রতি আমি কোন দায়িত্ব  পালন করতে পারলাম না,আমার যে মরে.......
বাবা আর কখনো ওসব কথা মুখে আনবে না। তুমি শান্ত হও বাবা, তোমার কোন দোষ নেই। তুমি কোন অপরাধ করোনি। তাছাড়া আপু তো তোমার উপর রাগ করে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যায়নি।
তাহলে আমাকে না বলে চলে গেল কেন?
আপু যদি তোমাকে বলতো, তাহলে কি তুমি আপুকে চলে যেতে দিতে?  দিতে না। আচ্ছা বাবা তুমিই বলো, একটা মানুষ কত কষ্ট সহ্য করতে পারে। আর কিছুদিন পর হয়তো আপু আত্মহত্যাই করতো, তার চেয়ে ভালো হয়েছে এই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। দূরে কোথাও গিয়ে যদি একটু  ভালোভাবে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে, তাহলে দোষ কি আছে বল বাবা।
শীলা তুই এমনভাবে কথাগুলো বললি যেন, তুই জানিস প্রিয়া কোথায় গেছে।
হ্যাঁ বাবা তোমার কাছে কখনো মিথ্যা কথা বলিনি, আর কখনো বলবোও না। আমিই আপুকে বলেছি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে। যাতে আপু তার জীবনটা সুন্দরভাবে গড়তে পারে। চেষ্টা করলে মানুষ অনেক কিছু পারে, আমি জানি আপুও পারবে। তুই এসব কি বলছিস!  তুই নিজে বলেছিস প্রিয়াকে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে,এ তুই নিজে বলেছিস শীলা?  শীলা তার বাবাকে শাহেদ এর কথা সব খুলে বললো। বাবা চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। শীলা বললো, বাবা আমি আপুকে খুব ভালোবাসি, আমি কখনো চাইনি আমার দ্বারা আপুর কোন ক্ষতি  হোক, আর যতদিন বেঁচে থাকবো আপুর জন্য মঙ্গল কামনা করবো। আপু জীবনে অনেক কষ্ট করেছে, আর এখন যখন সাহস করে বাড়ির বাইরে পা রেখেছে, আমার বিশ্বাস সেই সাহস আর শক্তি দিয়ে আপু নিজের পায়ে অবশ্যই দাঁড়াবে। আমার কিছু টাকা জমানো ছিল, আমি তা আপুকে দিয়েছি। বাবা আমি কি খুব বড় অন্যায় করে ফেলেছি? 
না মা যে কাজ আমি করতে পারিনি, সে কাজ তুই করেছিস। আমি শুধু আল্লাহর কাছে দোআ করবো, প্রিয়া যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক।
বাবা তুমি আর কখনো কাঁদবে না, তোমার চোখের পানি যে প্রিয়া আপুর চলার পথকে পিচ্ছিল করে দেবে, তুমি কি তা চাও? 
না মা আমি তা কখনো চাই না, আজ থেকে আমি আর কাঁদবো না।
এবার ঘরে যাও বাবা, শুয়ে পড়ো, সকালে আবার অফিসে যেতে হবে। শীলা তার ঘরে চলে গেল। বাবাও তার ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লো।

প্রিয়ার ঘুম ভাঙলো, কিন্তু চোখ খুলতে ইচ্ছে করছে না। হঠাৎ করে মনে হল সে অন্যের বাড়িতে শুয়ে আছে। চোখ মেলে তাকালো। জানালায় ভারী পর্দার কারণে বোঝা যাচ্ছে না বেলা কত হয়েছে। প্রিয়া উঠে বসলো। দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালো, বেলা সারে এগারোটা বাজে। প্রিয়া চোখ মুছে আবার দেখলো, না সে ভুল দেখেনি। প্রিয়া আজ এত বেলা পর্যন্ত ঘুমিয়েছে!  কেউ তো তাকে ডাকেনি। প্রিয়া উঠে বাথরুমে ঢুকলো,দেয়ালে লাগানো আয়নায় নিজের মুখ দেখলো। তারপর হাত-মুখ ধুয়ে বেরিয়ে এল। মনে মনে ভাবলো,এই বাড়ির সবাই কি এখনো ঘুমিয়ে আছে?  কারণ আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না। প্রিয়া কাপড়ের ব্যাগটা হাতে নিল, তারপর দরজা খুলে বেরিয়ে এল। সুমি ড্রইংরুমে বসে পত্রিকা পড়ছে। প্রিয়া এলে সুমি হাসি মুখে জিজ্ঞেস করলো, ঘুম কেমন হয়েছে? 
আপু জীবনে এতো আরাম করে কখনো ঘুমাইনি।
অনেক ক্লান্ত ছিলে তো তাই ঘুম দেরিতে ভেঙেছে। আর আমি তোমাকে ইচ্ছে করেই ডাকিনি, এখন তোমার ঘুম পুরোপুরি হয়েছে, দেখবে শরীরও ভালো লাগবে। আপু আমার জন্য যা করলেন, তা চিরদিন মনে রাখবো। আমি চলে যাচ্ছি আপু, আমার জন্য দোয়া  করবেন, যাতে কিছু একটা করতে পারি। আর সম্মান বজায় রেখে চলতে পারি।
কোথায় যাবে তুমি? 
আপু তা আমি নিজেও জানি না। তবুও যেতে তো হবেই। যদি কোন একটা কাজ জোগাড় করতে পারতাম, তাহলে আর নিজেকে নিয়ে ভাবতে হত না। জানি না এই কঠিন জায়গায় এত মানুষের মাঝে আমি আমার জায়গা করে নিতে পারবো কিনা।
প্রিয়া,তুমি এই ঢাকা শহরে নতুন এসেছো। তাই সবকিছু তোমার কাছে জটিল মনে হচ্ছে। আসলে কিছু কিছু মানুষ আছে, যারা সবকিছু জটিল করে তোলে, আমরা মানবজাতি, অথচ মানুষের প্রতি আমাদের মায়ামমতা দায়িত্ববোধ খুবই কম। আমরা আদর করে বাড়িতে কুকুর বেড়াল পুষি, তাদের ভালো ভালো খাবার দেই। অথচ আমাদের সামনে একজন অসহায় মানুষ এসে দাঁড়ালো, আমরা তাকে দুরদুর করে তাড়িয়ে দেই। মানুষের প্রতি মানুষের মানবতা কমে যাচ্ছে।
আপু আপনাদের মত মানুষ যত দিন বেঁচে থাকবে, মানবতা ততদিন বেঁচে থাকবে। আমি চলে যাচ্ছি আপু।
আমি আর আকাশ সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে,তুমি আমাদের এখানে কিছুদিন থাকবে। তারপর তোমার একটা কাজের ব্যবস্থা করে দেবো তখন চলে যেও।
আপু আমার জন্য আপনারা এত কিছু করবেন? 
প্রিয়া,আমাদের টাকা -পয়সার কোন অভাব নেই। তোমার মত মেয়ে আমাদের এখানে কিছুদিন থাকলে, আমাদের কোন ক্ষতি হবে না। তুমি একজন অসহায় মেয়ে বলে আমি তোমাকে দয়া দেখাচ্ছি না। আমি মন থেকে বলছি, তোমার কোন ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত তুমি এখানেই থাকো। এবার যাও রুমে কাপড় রেখে এসো, নাস্তা খাবে। প্রিয়া সুমির পায়ের কাছে বসে পড়লো। সুমি তাড়াতাড়ি করে উঠে দাঁড়ালো। প্রিয়াও উঠে দাঁড়ালো। সুমির হাত ধরে বললো, আপু এই শহরে এসে যে আপনার মত মানুষ পাবো তা  ভাবিনি কখনো। আমি আপনাকে কি বলবো বুঝতে পারছি না। সুমি বললো, থাক তোমাকে আর কিছু বলতে হবে না, চল নাস্তা খেয়ে নাও। সুমি চলে গেল। প্রিয়াও সুমির সাথে গেল। প্রিয়া মনে মনে খুব খুশি, কেউ তাকে আদর করে আশ্রয় দিয়েছে এটা প্রিয়ার জন্য অনেক বড় পাওয়া। পুরো ব্যাপারটা স্বপ্নের মত মনে হচ্ছে। প্রিয়া এখন স্বপ্ন আর বাস্তবতার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। ভবিষ্যৎ কি জানা নেই, তবুও প্রিয়া খুশি। সুমি প্রিয়াকে নাস্তা দিয়ে রান্নাঘরে গেল। নীলা এসে প্রিয়ার পাশে বসলো। প্রিয়া নাস্তা খাচ্ছে আর নীলার দিকে তাকাচ্ছে। নীলাও হাসি মুখে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। প্রিয়ার নাস্তা খাওয়া শেষ। নীলার দিকে তাকিয়ে বললো, আপনারা আমার জন্য যা করলেন, জানি না তার ঋণ কোনদিন শোধ করতে পারবো কি না। নীলা কিছু বললো না,প্রিয়া আবারও বললো, আপু আপনার নাম কি?  নীলা তবুও কোন জবাব দিল না। প্রিয়া নীলার দিকে তাকিয়ে রইলো। নীলার কাছে কোন জবাব না পেয়ে প্রিয়া কিছুটা কষ্ট পেল। তবুও হাসিমুখে নীলার দিকে তাকালো। নীলা উঠে চলে গেল। প্রিয়া ভাবলো নীলা তাকে পছন্দ করেনি। প্রিয়া মাথা নিচু করে বসে রইলো। মনে মনে ভাবলো,আমি কি এই সংসারের বোঝা হয়ে গেলাম!  উনি মনে হয় আমার এখানে থাকাটা পছন্দ করছে না। আমার ভাগ্যটা এমন খারাপ কেন? যেখানে যাই, সেখানেই বোঝা হয়ে যাই। কিন্তু আমি তো কারো বোঝা হতে চাই না, কাউকে কষ্ট দিতে চাই না। সুমি এলো। প্রিয়ার মন খারাপ দেখে জিজ্ঞেস করলো, কি হয়েছে, মন খারাপ করে বসে আছো কেন? বাড়ির কথা মনে পড়েছে?  প্রিয়া বললো, না আপু, বাড়ির কথা মনে পড়েনি। আসলে আমার মনে হয় এখানে থাকাটা ঠিক হবে না। অযথা আপনাদের বোঝা হয়ে থাকবো। সুমি বললো প্রিয়া, তুমি এভাবে বলছো কেন!  কেউ কিছু বলেছে? 

āĻ•োāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāχ:

āĻāĻ•āϟি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āϟ āĻ•āϰুāύ