প্রিয়ার চোখে জল
পর্বঃ ৩০
লেখকঃ সাইদা ইসলাম বকুল
ভোর ছয়টায় সুমির ঘুম ভাঙলো। জেগে দেখে আকাশ পাশে নেই। সুজনের জন্য কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে। আকাশ যে পাশে নেই টেরই পায়নি। সুমি উঠে ড্রইংরুমে এলো। দেখে আকাশ সুজনের রুম থেকে বেরিয়ে আসছে। চোখ লাল হয়ে আছে। মুখটা ফোলা ফোলা দেখে বোঝা যাচ্ছে ঘুম ভালো হয়নি। হয়তো সারারাত বন্ধুর জন্য চোখের পানি ফেলেছে। আকাশ নিজের রুমে গিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল। সুমি খালার রুমে গিয়ে মিতুকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে এল। বুয়া নাস্তা তৈরি করতে লাগলো। তবে সবার মত বুয়ার মনটাও খুব খারাপ। সুমি মিতুকে প্রিয়ার কাছে দিয়ে বললো,ওকে কিছু খাওয়াতে। খালা সোফায় বসে রইলো। সবাই চুপচাপ প্রয়োজন ছাড়া কেউ কারো সাথে কথা বলছে না। আকাশ হাত মুখ ধুয়ে সোফায় হেলান দিয়ে বসলো। খালাকে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল।খালা বুঝতে পারলো আকাশের বুকের ভেতর অশান্তির ঝড় বয়ে যাচ্ছে। মায়ের মন তো সন্তানের ভালো মন্দ সবই বুঝতে পারে । সুমি আকাশের জন্য এক কাপ চা নিয়ে এল। আকাশ তা ফিরিয়ে দিলো। মিতু দৌড়ে সুজনের রুমে ঢুকলো। আকাশ ড্রইংরুমে বসে বাপ মেয়ের কথার আওয়াজ শুনতে পেল। আকাশ ভাবছে সুজন মিতুকে কি দিয়ে সান্ত্বনা দিয়ে যাবে, যে মিতু ওকে কখনো খুঁজবে না। জন্মদাতাকে সন্তান খুঁজবে না, এটা কি সম্ভব? তাছাড়া সুজনের সান্ত্বনা শুনেই কি মিতু আমাদের কাছে থাকতে রাজী হবে? যে সন্তানকে এত কষ্ট করে, এত আদর ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছে। মৃত্যুর আগে সেই সন্তানের মুখ দেখতে পাবে না! আকাশ আর কিছু ভাবতে পারলো না,মাথা নিচু করে বসে রইলো। একটু পর মিতুকে কোলে নিয়ে সুজন এসে আকাশের পাশে বসলো। সুমি আর প্রিয়া এসে দাঁড়ালো। সুজন মিতুকে বললো,
মামণি, তুমি কি চিনতে পেরেছো কে তোমার মা?
না বাবা তুমিই বলো না, কে আমার মা?
মিতু এই বাড়ির কে তোমাকে সবচেয়ে বেশি আদর করেছে, বুঝতে হবে সেই তোমার মা। কারণ মা-ই সন্তানকে অনেক বেশি আদর করে, ভালোবাসে।
বাবা, সুমি আন্টি আমাকে অনেক আদর করে, অনেক ভালোবাসে। আমাকে গোসল করিয়ে দেয়, খাইয়ে দেয়, আবার আমাকে অনেক খেলনাও কিনে দিয়েছে।
মামণি, তুমি পরীক্ষায় পাশ করেছো, উনিই তো তোমার মা।
এবার বুঝতে পেরেছি তাই তো আমাকে এত আদর করেছে! মিতু দৌড়ে সুমির কাছে গেল। সুমি মিতুকে জড়িয়ে ধরলো, কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে, তবুও সুমি কাঁদতেও পারছে।
না,আর কিছু বলতেও পারছে না। বুয়া দূরে দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলছে। খালা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। প্রিয়া চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। সুজন উঠে এসে মিতুর পাশে বসে বললো, মিতু উনি তোমার মা,আর তোমার আকাশ আংকেল তোমার বাবা।
তাহলে তুমি কে? ( মিতু)
আমি চোর। ( সুজন)
সবাই সুজনের দিকে তাকালো। আকাশ উঠে দাঁড়ালো কিছু বলতে যাবে, সুজন চোখ ইশারায় না করলো। আকাশ রেগে বসে পড়লো। সুজনের দিকে মিতু অভিমানের দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে রইলো। সুজন বললো, মিতু তুমি তো জানো, আকাশ আমার ছোট বেলার বন্ধু। আমি সবসময় এই বাড়িতেই থাকতাম। আমার বাবা মা ভাই বোন কেউ নেই তো, তাই আকাশ আমাকে এই বাড়িতে থাকতে দিয়েছিল। তুমি তখন অনেক ছোট ছিলে, মানে খুবই ছোট। তখন আমি কাউকে না বলে তোমাকে এই বাড়ি থেকে চুরি করে লুকিয়ে নিয়ে চলে গিয়েছিলাম লন্ডনে।
তাহলে এতদিন যে বলেছো তুমি আমার বাবা?
মিথ্যা বলেছি মা। ( সুজন)
মিতু আকাশের সামনে গিয়ে বললো, তুমি কি আমার আসল বাবা? আকাশ সুজনের দিকে তাকালো। সুজন হাতজোড় করলো। আকাশ বললো,হ্যাঁ মা, আমিই তোর আসল বাবা। সুজন তোকে আমার কাছ থেকে চুরি করে নিয়ে গিয়েছিলো। এখন আবার তোকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিতে এসেছে। তুই এখন থেকে আমাদের কাছেই থাকবি। মিতু সুজনের দিকে তাকিয়ে বললো, তুমি অনেক খারাপ মানুষ, তুমি চোর। আমি আর কখনো তোমার সাথে কথা বলবো না,তুমি অনেক পচা।সুমি মিতুকে নিয়ে ভেতরে চলে গেল। প্রিয়াও সুমির পেছনে গেল। আকাশ সুজনের হাত চেপে ধরে বললো, তুই একি করলি বন্ধু? নিজের মেয়ের কাছে অপরাধী হয়ে গেলি চিরদিনের জন্য! সুজন বললো, এই মিথ্যাটা না বললে যে মিতু তোদের কাছে থাকতো না, আর বাবা মা বলেও স্বীকার করতো না। আমি তো এই পৃথিবী ছেড়ে চলেই যাচ্ছি, আমাকে যদি মিতু ঘৃণা না করে, তাহলে তোদের ভালোবাসবে কি করে? আমার মেয়ের সুখের জন্য আমার যা বলার দরকার ছিল, আমি তাই বলেছি। আমি জানি তোরা মিতুকে অনেক আদর ভালোবাসা দিবি। তবুও বলছি আমার মেয়েকে কখনো কষ্ট দিস না, আর ও কোনদিনও যাতে জানতে না পারে যে, তোরা ওর আপন বাবা মা না। আকাশ বললো, আমি তোর কাছে ওয়াদা করলাম, মৃত্যুর আগপর্যন্ত আমার আর সুমির সবটুকু আদর ভালোবাসা শুধু মিতুর জন্য। তুই তো জানিস, আমাদের কখনো সন্তান হবে না। তাই আমার সব সম্পত্তির মালিক মিতুই হবে। তোর ইচ্ছে অনুযায়ী আমি ওকে অনেক বড় ডাক্তার বানাবো। আজ থেকে আমরাই ওর বাবা -মা। সুজনের মনটা শান্তিতে ভরে গেল। কিন্তু বুকের ভেতরটা কেমন যেন খালিখালি লাগছে। সুজন উঠে দাঁড়ালো, মাথাটা কেমন ঘুরছে। খালা উঠে দাঁড়িয়ে সুজনের মাথায় হাত রেখে বললো, মিথ্যা বলা পাপ,কিন্তু তোমার এই মিথ্যায় কোন পাপ নেই। তুমি যা করেছো তোমার সন্তানের মঙ্গলের জন্যই করেছো। এখানে তোমার মেয়ের কোন অযত্ন হবে না। তোমার মেয়ে সুখেই থাকবে। তবে তোমার জন্য অনেক কষ্ট হচ্ছে বাবা। খালা চশমার ফাঁক দিয়ে নিজের চোখ মুছলো। সুজন বললো, আমি কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেবো, তারপর রাতের ফ্লাইটে লন্ডন চলে যাবো। এই বলে সুজন চলে গেল। আকাশ ওর চলে যাওয়া দেখলো।
চলবে,,,,,,,,
প্রিয়ার চোখে জল
পর্বঃ ৩১
লেখকঃ সাইদা ইসলাম বকুল
রাত আটটার দিকে সুজন ব্যাগ হাতে ঘর থেকে বের হয়ে এলো। মিতু ঘুমিয়ে পড়েছে। সুজন শেষবারের মত মিতুকে আদর করে দিল। ঘুমিয়ে ছিল বলে মিতু বুঝতে পারেনি। ড্রাইভার সুজনের ব্যাগ গাড়ির পেছনে রাখলো। খালা, প্রিয়া, সুমি ও আকাশ সবাই গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আকাশ বললো, আমার খুব কষ্ট হচ্ছে! তোকে বিদায় দিতে মন চাইছে না! তোর যদি তোর যদি দুটো চোখ নষ্ট হয়ে যেত, তাহলে আমার একটি চোখ তোকে দিয়ে দিতাম। যদি তোর দুটো কিডনি নষ্ট হয়ে যেত, তাহলে আমার একটা কিডনি দিয়ে তোকে বাঁচিয়ে রাখতাম। কিন্তু তোর এমন এক রোগ হয়েছে যে ইচ্ছে করলেও আমি বাঁচাতে পারবো না। সুজন বললো, আমাকে বিদায় দে বন্ধু! আকাশ বললো, তোর বোনদের সাথে দেখা করবি না? সুজন বললো, না,কারো সাথে দেখা করবো না, মায়া বাড়িয়ে লাভ কি বল! আমারও কষ্ট হবে ওরাও কষ্ট পাবে। আমি চাই না ওরা সব জানুক। শোন আকাশ, আমি বাংলাদেশে এসেছি কেউ জানে না। মিতুকে তোর কাছে রেখে যাচ্ছি তাও কেউ জানে না। আর কখনো জানবেও না। তুইও কাউকে বলবি না। মানুষের মন বদলাতে সময় লাগে না, আমি চাই না। আমার আপনজন কেউ কখনো তোর কাছে এসে মিতুকে দাবী করুক। মিতু তোদের, আর তোদের পরিচয়েই ও বড় হবে। আর আমি কাউকে আমার রোগের কথাও বলিনি। আমি বেঁচে থাকতে কারো কান্নার শব্দ শুনতে চাই না। সুজন আকাশকে শেষবারের মত বুকে জড়িয়ে নিল। তারপর সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল। গাড়ি যত দূর গেল আকাশ চেয়ে রইলো। আকাশ এয়ার পোর্ট যেতে চেয়েছিল। কিন্তু কষ্ট বেশি হবে বলে যায়নি। মানুষ কষ্টকে দূরে সরানোর জন্য পালানোর চেষ্টা করে, কিন্তু কষ্ট কি তার পিছু ছাড়ে? সুজনের চিন্তায় আকাশ সারারাত ঘুমায়নি , তাই বেলা নয়টা বাজে এখনও ঘুম ভাঙছে না। সুমি একটু পরপর আসছে আর দেখছে আকাশ ঘুমিয়েই আছে। কিছুক্ষণ পর মিতু এসে আকাশের পাশে বসলো। গায়ে হাত রাখলো। মিতুর হাতের স্পর্শ পেয়ে আকাশের ঘুম ভেঙে গেল। মিতুর হাসিমুখ দেখে আকাশের মনটা ভালো হয়ে গেল। সন্তানের হাসিমুখ দেখলে নাকি বাবা -মায়ের দুঃখ কমে যায়। এই মুহূর্তে আকাশ তা অনুভব করলো। উঠে বসে মিতুকে কোলে নিয়ে বসে রইলো। সুমি এলো। কি, মেয়ের ডাকে ঘুম ভাঙলো তাহলে? আকাশ বললো, আজ অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুমালাম সুমি বললো, এবার উঠে হাত মুখ ধুয়ে এস।তোমার জন্য আমরা সবাই নাস্তা না খেয়ে বসে আছি। আকাশ উঠে বাথরুমে চলে গেল।
প্রিয়ার চোখে জল
পর্বঃ ৩২
লেখকঃ সাইদা ইসলাম বকুল
প্রিয়ার মনটা কেমন যেন লাগছে। ঘরের ভেতর ভালো লাগছে না,তাই ছাদে উঠে এল। সকাল প্রায় দশটা বাজে, কিন্তু এখনো রোদ উঠেনি। আকাশ আজ কিছুটা মেঘলা। মেঘলা আকাশ দেখতে প্রিয়ার খুব ভাল লাগে,তাই ছাদে আসার পর মনটা একটু ভালো লাগছে। বাইরে কে যেন গাড়ির হর্ন বাজাচ্ছে। প্রিয়া তা দেখার জন্য ছাদের কিনারায় এসে দাঁড়ালো। নীচে তাকিয়ে দেখে সাদা রঙের একটা গাড়ি বাড়ির সামনে দাঁড়ানো। গেটে দারোয়ান নেই। হয়তো কোন কাজে ভেতরে গেছে। কিছুক্ষণ বসে থেকে একটা লোক গাড়ি থেকে নেমে এলো। খুব সুন্দর একটা ছেলে। চোখে কালো চশমা থাকাতে আরো বেশি সুন্দর লাগছে। শার্টের বোতাম প্রায় অর্ধেক খোলা, তাই বুকের পশম দেখা যাচ্ছে। রোদের আলোয় গলায় ঝুলে থাকা চেইন চিকচিক করছে। প্রিয়া একদৃষ্টিতে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে। ইচ্ছে করেও চোখ ফেরাতে পারছে না। একটু পর দারোয়ান এসে সালাম দিয়ে গেট খুলে দিল। প্রিয়া ছাদ থেকে নিচে নেমে এলো। প্রিয়া খালার রুমে গেল। অমনি বুয়া ডাকতে লাগলো, খালাম্মা দেহেন কে আইছে! খালা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। প্রিয়া দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দেখলো, সেই ছেলেটা। আকাশ, সুমি,, মিতু ওর পাশে বসে আছে। ছেলেটাকে দেখে খালা মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। ছেলেটা উঠে এসে খালার সামনে দাঁড়িয়ে বললো, কেমন আছো মা? এতক্ষণে প্রিয়া বুঝতে পারলো ও কিরণ। খালা অভিমানী সুরে বললো, আমার খবর নিয়ে আর তোর লাভ কি, তুই তো আছিস তোর মত! এত করে বললাম নীলার বিয়েতে আসার জন্য, এলি না। লোকে তোকে কি বলে জানিস? মানুষ সমাজ ছাড়া থাকতে পারে না, আর সমাজে চলতে হলে সামাজিকতা বজায় রাখতে হয়। এই বলে খালা সোফায় একপাশে চুপচাপ বসে রইলো। সুমি বললো, এভাবে আপনজনদের কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখা কি ঠিক কিরণ? তোমার জীবনটাই তোমার কাছে বড়, আর আমরা সব তুচ্ছ। কিরণ বললো আপা এভাবে বলবেন না। সুমি বললো, কেন বলবো না। সত্য কথা শুনতে বুঝি খারাপ লাগে? সামান্য একটা ছলনাময়ী নারীর জন্য তুমি আমাদের সবাইকে কষ্ট দিচ্ছো, নিজের গর্ভধারিণী মাকে কাঁদাচ্ছো! আকাশ বললো, সুমি ঠিকই বলছে কিরণ, সবাই যদি অতীত মনে রেখে বসে থাকতো, তবে জীবন থমকে দাঁড়াতো। তুমি কি ভেবেছো সময় তোমার জন্য বসে থাকবে? কখনো না।সময় তার নিজের গতিতে চলে যাচ্ছে। আর তুমি তার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারছো না। এটা তোমার ভাগ্য নয়,ব্যর্থতা আর ব্যর্থতা মানুষের জীবনে অভিশাপের মত। যেটা তুমি ভোগ করছো, আর তোমার আপনজনদের তার ভাগ দিচ্ছো, এটা কি তোমার কাছে ঠিক মনে হচ্ছে কিরণ? জানি তোমার ভালোমন্দ তুমি বুঝ, তারপরও তোমার জীবনের উপর তো আমাদেরও কিছু অধিকার আছে। যে অধিকার থেকে তুমি সবাইকে বঞ্চিত করছো। নিজেও কষ্ট পাচ্ছো, আর সবাইকেও কষ্ট দিচ্ছো। আমাদের সবাইকে কষ্ট দাও, কিন্তু তোমার মাকে কষ্ট দিও না। মায়ের চেয়ে বড় ধন এই পৃথিবীতে আর কিছু নেই। স্বামী হারিয়ে এতটা বছর তোমার দিকে চেয়ে বেঁচে আছে। এখন তুমি যদি খালাম্মার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহলে এর চেয়ে বড় কষ্ট ওনার জন্য আর কি আছে বল! কিরণ বললো, ঠিকই বলেছেন ভাইয়া, আমি আর কখনো মাকে কষ্ট দেব না। কিরণ মায়ের কোলে মাথা রাখলো। সবাই খুশি হল। আকাশ বললো, তুমি থাক,আমি একটু বাইরে থেকে আসছি। দুপুরে এসে একসাথে বসে খাবো। কিরণ বললো, ভাইয়া আমি মাকে নিয়ে যেতে এসেছি। সুমি বললো,আজ নয়, আজ তুমি আমাদের এখানে বেড়াবে। কাল চলে যেও। এখন যাও নীলাকে গিয়ে দেখে এসো। পাশের বাড়িতেই আছে। তোমাকে দেখলে অনেক খুশি হবে। কিরণ নীলাকে দেখার জন্য চলে গেল। খালা খুশিমনে রান্নাঘরে গেল, ছেলের পছন্দমত কিছু তৈরি করার জন্য। আসলে মা তো, মা সব সময় খেয়াল রাখে তার সন্তানের প্রতি। আর সন্তানদেরও উচিৎ তার মায়ের পছন্দের দিকে খেয়াল রাখা। সুমি দেখলো আকাশ মন খারাপ করে বসে আছে। আকাশের পাশে বসে বললো, তুমি যদি এভাবে মন খারাপ করে থাক, তাহলে আমি কি করবো বলো? সুজন ভাইয়ের সবচেয়ে বড় আমানত আমাদের কাছে রেখে গেছে। তোমাকে বিশ্বাস করেছে বলেই তার প্রিয় সন্তানকে এখানে রেখে গেছে। তাকে ভালোভাবে মানুষ করতে পারলেই তোমার বন্ধুর প্রতি তোমার দায়িত্ব পালন করা হবে। আকাশ বললো, মিতু আমার চোখের দিকে তাকালে মনে হয়, সুজন আমার দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সুমি বললো, জন্ম যেমন সত্য, ঠিক তেমনি মৃত্যুও সত্য। তবে কেউ আগে যায়, আর কেউ পরে যায়। এখন আমাদের সব ভাবনা শুধু মিতুকে নিয়ে। সুজন ভাই আমাদের অন্ধকার ঘরে আলো জ্বেলে গেছে। সেই আলোকে যত্ন করে রাখতে হবে। আকাশ বললো, তুমি ঠিকই বলেছো, চিন্তা করে আর কি হবে। সুমি বললো, এবার উঠ, অফিসে যাও। আর ভালো কোন স্কুলে মিতুকে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করো। আকাশ উঠে চলে গেল। সুমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। দুপুরে খাওয়ার পর কিরণ নীলার শশুরবাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলো। আকাশ এখনো বাড়ি ফেরেনি। মিতুর সব কথা সুমি কিরণের কাছে বললো। শুনে কিরণ খুব খুশি হল। মিতু কিরণকে মামা বলে গলা জড়িয়ে ধরলো। খালা আর সুমি হাসলো। প্রিয়া দূর থেকে তাকিয়ে রইলো। মিতু কিরণকে পুতুল দেখানোর জন্য তার রুমে নিয়ে গেল। আকাশ এলো। খুশি মনে সুমিকে বললো,মিতুর ভর্তির ব্যবস্থা হয়ে গেছে। শুনে সুমি খুশি হল। কারণ সুমির সব ভাবনা এখন শুধু মিতুকে নিয়ে। খালা আকাশকে বললো,আমি তোমাদের একটা কথা বলতে চাই,জানি না বলাটা ঠিক হবে কিনা। সুমি আর আকাশ দু'জন দু'জনের দিকে তাকালো। খালা কি বলতে চাইছে ওরা বুঝতে পারছে না। আকাশ বললো, খালাম্মা কি বলবেন বলেন। খালা বললো,মায়ের মন তো, তাই সন্তানের স্বার্থটাই বেশি দেখি। আমি চাই আমার ছেলে সংসারী হোক। তার জন্য একজন মেয়ে আমার পছন্দ হয়েছে।
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ