'অপেক্ষায়'
লেখা : Abu Bakar Siddique
.
.
- দোস্ত চল তোর ভালোবাসা আজকে আর আসবে না। আর কতক্ষণ অপেক্ষা করবি বলতো?
- আর একটু থাক, ও আসবে বলেছে আমাকে। হয়ত রাস্তায় জ্যামে আটকে আছে আসবে। একটু প্লিজ দোস্ত।
- একটু করতে করতে তো সেই বিকাল থেকে বসে আছি তোর সাথে একটুপরই সন্ধ্যা হবে।
- আর দশমিনিট প্লিজ দোস্ত।
- দশমিনিট হলেই আমি চলে যাবো তখন তুই তোর ভালোবাসার জন্য একা একা বসে থাকিস।
- ঠিক আছে,
- তুই আবার কল দিয়ে দেখ, দেখ কল ঢুকে কিনা।
- কল তো আসার পর থেকেই দিচ্ছি কিন্তু কল তো যাচ্ছে না।
- আমি শিওর তুই কোনো ফেইক আইডির পাল্লায় পরেছিস।
- আরে ধুর, ফেইক হতে যাবে কেন? আমি ওর কতগুলো পিক দেখেছি। ফোনে কথাও বলেছি।
- এখনকার পোলারা এতো কাঁচা মাছ খায় না। বান্ধবীদের দিয়াও কথা বলিয়ে প্রমাণ করে যে সে রিয়েল।
- সব সময় আমার সাথে কথা বলতে কোনো মেয়ে বসে আছে তো।
- ওকে যা তুই জীবনে প্রথম প্রেম করতেছিস তুই সব জানিস আমি কিছুই জানি না। তোর কপালে প্রেম নাই বলছিলাম না। তোর কপালে প্রেম নাই। ফেইকের সাথে প্রেম করেছিস এখন ছ্যাঁকাও খাবি।
- বুঝেছি, তোর খিদা লেগেছে চল কিছু খেয়ে নিই। তারপর অপেক্ষা করবো।
- তুই খা, তুই বসে বসে অপেক্ষা কর আমি গেলাম।
- আরে দাড়া,
.
আজকে প্রথম আমি আমার ভালোবাসার মানুষটির সাথে দেখা করতে এসেছি। আর আমার সাথে করে নিয়ে এসেছি আমার বেষ্টফ্রেন্ড নিয়লকে। সেই বিকাল তিনটা থেকে আমি আর নিলয় অপেক্ষা করে আছি কখন অর্থি আসবে। নিলয় রাগ করেই আমাকে একা রেখে চলে গেছে। রাগ করাই কথা, সন্ধ্যা হয়ে গেছে এখনো অর্থি আসার কোনো খবর নেই। অনেকবার কলও করেছি কিন্তু অর্থির মোবাইলে কল যায় না। তাই নিলয় ভাবছে আমি কোনো ফেইকের পাল্লায় পরেছি।
.
নিলয় চলে গেছে প্রায় একঘন্টা হয়ে গেল কিন্তু অর্থি এখনো এলো না। কল দিতে দিতে আমার মোবাইলটাও বন্ধ হয়ে গেছে। আর কিছু না ভেবে বাসার দিকে রওনা দিলাম। যেতে যেতে শুধু অর্থির কথাই মনে পড়ছে। অর্থি কেন আমার সাথে এমনটা করলো? তিন মাসের পরিচয়ে অর্থিকে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি।
.
ও আমার সাথে এমনটা করবে ভাবতেই কেমন যেন লাগছে। আসার পথে কোনো বিপদ হয়নি তো? ধুর... কিসব উল্টাপাল্টা ভাবতেছি?
.
- আপনার সাথে কি কিছুক্ষণ কথা বলতে পারি?
- জ্বি অবশ্যই বলুন।
- না থাক...
- বলতে পারেন কোনো সমস্যা নেই।
- আসলে বাসায় কেউ নেই তো, একা একা খুব ভয় করছে। আমি আপনার লিষ্টে আছি, আপনিও আমার লিষ্টে আছেন অথচ কখনো তো কথা হয়নি। তাই ভাবলাম...
- ও আচ্ছা, তো কেমন আছেন?
- জ্বি ভালো, আপনি?
- ভালো, আপনার বাসার অন্যরা কোথায় গেছে?
- আপু আর আম্মু ডাক্তারের কাছে গেছে। আমাকে বাসায় রেখে গেছে আর বাসাটাতে নতুুন তো, কারেন্টও নাই তাই একটু ভয় লাগছে।
- ও, আপনার বাসায় কে কে আছে?
- আমি, আপু আর আম্মু।
- বাবা!
- বাবা দেশের বাইরে।
- ওহ, তো কি করছেন?
- এই তো বসে বসে আপনার সাথে চ্যাটিং, আপনি?
- আমিও বসে আছি। আপনার নামটা তো জানা হলো না।
- ও সরি, আমার নাম অর্থি।
- আমি আরিফ, আপনার নামটা বেশ সুন্দর।
- থ্যাংকস...
.
অর্থি অনলাইন থেকে চলে গেল। দু’জন দু’জনের ফ্রেন্ডলিষ্টে আছি কিন্তু আমরা কখনো কেউ কারো সাথে পার্সোনালি এভাবে কথা হয়নি বা বলিনি। আজকেই প্রথম কথা বললাম মেয়েটি বাসাতে একা, ভয়ও পাচ্ছে তাই একাকীত্ব সময়টাতে মেয়েটার সাথে কিছুক্ষণ কথা বললাম।
.
রাত নয়টার দিকে আবার অনলাইনে আসছে। আমার নিজে থেকে কাউকে মেসেজ করার অভ্যাস নাই। কিন্তু কেন জানি অর্থিকে নিজে থেকে মেসেজ করে বসলাম।
.
- ওনারা আসছে?
- হুম, আসছে।
.
এভাবেই আমাদের মাঝে কথার শুরুটা হয়। আস্তে আস্তে আমি অর্থির খুব ভালো ফ্রেন্ড হয়ে গেলাম। নাম্বার দেয়া নেয়াও হয়ে গেছে। মোবাইলে অর্থির কণ্ঠ অনেক সুন্দর। আমার কাছে শুনতে অনেক ভালো লাগে। প্রতিদিন বেশিরভাগ সময় আমার অর্থির সাথে কথা বলেই কেটে যাচ্ছে।
.
দিন যত যাচ্ছে অর্থির জন্য আমার অনুভুতিটাও কেমন যেন একটা পরিবর্তন অনুভব করতে পারছি। অর্থির প্রতি ভালোলাগাটা আমার ভালোবাসায় পরিণত হচ্ছে না তো। অর্থিকে তো আমি এখনো দেখিনি, কাউকে না দেখে ভালোবাসা যায় নাকি? হয়ত যায় আমার তা জানা নেই।
.
আজকে অর্থির কাছে তার ফটো চাইবো ভাবছি। কিন্তু ভয় হচ্ছে কি না কি মনে করে বসে! যদি রাগ করে? না থাক চাইবো না। না... চাই। না দিলে আর কখনো চাইবো না। অর্থিকে মেসেজ দিলাম।
.
- তোমার কাছে একটা জিনিস চাইবো ভাবছি।
- আমার কাছে! কি জিনিস বলো?
- তেমন বেশি কিছু না, আবার বেশি কিছুও।
- এ কেমন কথা? বেশি কিছুু না, আবার বেশি কিছুও। আচ্ছা কি চাও বলো।
- না মানে, যদি তুমি রাগ করো?
- রাগ করার মতো কিছু চাইলে তো রাগ করতে পারি তাই না।
- আসলে তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছিলো।
.
আমি প্রস্তুত ছিলাম অর্থি রাগ দেখাবে আর আমি সরি বলার জন্য, কিন্তু...
.
- আমাকে দেখতে ইচ্ছে করছিলো?
- আসলেই তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছিলো।
- তো এখন ইচ্ছে করছে না।
- করছে তো... যদি তোমার একটা পিক দিতে তাহলে সুন্দরী তোমাকে দেখার সৌভাগ্যটা আমার হতো।
- যেভাবে বলতেছো যেন তুমি আমাকে আগেই দেখেছো।
- যার গলার স্বর এতো সুন্দর, না জানি সে কতো সুন্দর।
- হয়েছে কবিদের মতো কাব্যিক কথাবার্তা বলতে হবে না।
- তো... আমার কি সৌভাগ্যটা হবে নাকি দূর্ভাগ্য হবে।
- এক মিনিট দিচ্ছি।
- ওকে...
.
একটুপর অর্থি আমাকে ওর ফটো দিলো। কিন্তু নেট সমস্যার কারণে ফটো তখনও মেসেঞ্জারে দেখা যাচ্ছিলো না। নেট সমস্যা করারও আর সময় পেলো না এখনি সমস্যা করতে হলো।
.
অর্থির ফটো আমার সামনে আসলে অর্থির সৌন্দর্যের কোনো তুলনা হয় না। অসম্ভব সুন্দরী একটা মেয়ে। আমি আবার অর্থিকে ভালোবেসে ফেলেছি।
.
- এতো সুন্দর কেন তুমি?
- কোথায় এতো সুন্দর?
- পৃথিবীতে সব মেয়েরাই এমন নিজেকে কখনো সুন্দর বলে না। জানো তুমি কত সুন্দর?
- হয়েছে, বলতে হবে না আমি জানি আমি কেমন?
- আসলেই তুমি অনেক সুন্দর।
- হুম, তোমার মাথা। যাও ডাক্তার দেখাও পরে আবার কানা হয়ে যাবে।
- আমি তো তোমার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে অন্ধ হয়ে গেছি। তোমার সৌন্দর্য আমাকে অন্ধ করে দিয়েছে।
- তোমার চোখের সাথে সাথে মাথাটাও গেছে মনে হচ্ছে। কি বলছো আবোলতাবোল?
- আচ্ছা তোমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই তো?
- না... কেন?
- না মানে, আমি তোমার প্রেমে পড়ে গেছি।
- হা হা, তোমার না সত্যি সত্যি মাথায় সমস্যা আছে। যাও যাও ডাক্তার দেখাও তাড়াতাড়ি।
.
আসলেই আমি অর্থির প্রেমে পড়ে গেছি। প্রথমেই আমি ওর কণ্ঠের প্রেমে পড়েছি আর এখন ওকে দেখে আরও বেশি। ওর সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধ করেছে।
.
সবকিছু দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থির প্রতি আমার ভালোলাগাটা প্রকাশ করার জন্য আমার মন ছটফট করছে। কিন্তু কোনো ভাবেই অর্থিকে বুঝাতে পারছি না। ও ভাবে আমি ওর না সাথে মজা করে কথাগুলো বলি। যেদিন ওকে মোবাইলে কল দিয়ে বলি...
.
- অর্থি,
- বলো...
- বিশ্বাস করবে যদি একটা কথা বলি।
- হুম... করবো। বলো কি কথা বলবে?
- ভালোবাসি।
- হুম, জানি তো।
- মজা করছি না, আমি সিরিয়াস।
- আমিও না, আমিও সিরিয়াস।
- আচ্ছা বাই, পরে কথা বলবো।
- সত্যি আমি বিশ্বাস করেছি।
- তাহলে উত্তর দিবে না।
- উঁহু দিবো না।
- কেন?
- এমনিতে,
- ভালোবাসো না?
- হুম, ভালোবাসি কিনা তা তো জানি না।
.
ওর মুখ থেকে আমি ভালোবাসি কথাটা শুনতে বেকুল হয়ে থাকি কিন্তু কখনো বলতো না আমাকে “আমিও ভালোবাসি।” ও কি আমার অস্থিরতাটা বুঝে নাকি বুঝে না।
.
অর্থির মুখে আমি “ভালোবাসি” কথাটা শুনবো বলে ঠিক করলাম। অর্থিকে না জানিয়ে ফেসবুক আইডি ডিএক্টিভ করে দিলাম। তারপর মোবাইলটাও বন্ধ করে দিলাম।
.
অর্থির সাথে আজকে পাঁচদিন হয়ে গেছে কোনো ধরণের যোগাযোগ নেই। অর্থির সাথে কথা না বলে থাকাটা যে কতটা কষ্টকর সেটা এই পাঁচদিনে খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছি। চেয়েছিলাম আরও কয়েকদিন এভাবে থাকবো কিন্তু না আমার দ্বারা আর সম্ভব হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়েই মোবাইলটা চালু করলাম।
.
মোবাইলটা চালু করতেই একটার পর একটা মেসেজ আসতে লাগলো। একটাও মেসেজ দেখিনি অপেক্ষা করছি সর্বমোট কয়টা মেসেজ এসে জমা হয়। আমি মেসেজের পরিমাণ দেখে নিজেই থ' হয়ে গেলাম। দুইশত চৌষট্টিটা মেসেজ আর সবগুলোই অর্থির করা।
.
বসে বসে সবগুলো মেসেজ পড়তেছি। অর্থির শেষ মেসেজটি ছিলো, “তুমি কেন আমার সাথে এমনটা করতেছো? কোথায় হারিয়ে গেলে তুমি? প্লিজ একটাবার ফিরে এসো। আমি হাজারবার বলবো আরিফ আমি তোমাকে ভালোবাসি। প্লিজ তুমি ফিরে এসো। একবার মোবাইলটা ওপেন করো প্লিজ।” আর অধিকাংশ প্রায় মেসেজে দুইটা কথা লেখা ছিলো, “তোমাকে খুব মিস করছি, প্লিজ মোবাইলটা অন করো।”
.
মেসেজগুলো পড়তে পড়তে আমার প্রতি কারও এতো ভালোবাসা দেখে নিজের অজানতেই চোখ দিলে অশ্রু প্রবাহিত হতে লাগলো। আমি একটু বেশিই খারাপ করে ফেলেছি। কোনো কথা না ভেবেই অর্থিকে কল দিলাম। কল ঢুকতে না ঢুকতেই রিসিভ হয়ে গেল। আমি কোনো কথা বলার সুযোগ পাচ্ছি না। শুধু চুপ করে শুনে যাচ্ছি অর্থির কথাগুলো।
.
“কোথায় ছিলে এতোদিন? তোমাকে কতবার কল করেছি, কতগুলো মেসেজ করেছি তোমায়? একটা মেসেজেও রিপ্লে পাইনি। কোথায় ছিলে তুমি? আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। আমি তোমাকে সত্যি অনেক বেশি ভালোবাসি আরিফ। তোমাকে ছাড়া আমার একটা মুহূর্তও চলবে না। তুমি আমাকে এভাবে একা করে কোথায় হারিয়ে গেছো? জানো তোমাকে ছাড়া আমি কতটা কষ্টে ছিলাম। কথা বলছো নানা কেন তুমি?”
.
আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না। আমার চোখ দিয়ে অশ্রু ফেলানো ছাড়া বলার মতো কিছুই আমার মুখ দিয়ে আসছে না। আমি অর্থিকে অনেক বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। আমি বুঝতে পারিনি আমার অনুপস্থিতি অর্থির জন্য এতটা কষ্টের হবে। যদি জানতাম তাহলে কখনোই এমনটা করতাম না।
.
কিছুক্ষণ চুপ থেকে আমি অর্থিকে বললাম, “সরি... তোমাকে এতো কষ্ট দেয়ার জন্য।” অর্থি কান্নার শব্দটা আমার বুকে চিনচিন ব্যথা উঠিয়ে দিলো। আমি বুঝতে পারছি না কিভাবে অর্থির কান্না থামাবো। কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে অর্থিকে বললাম, “আমার ভুল হয়ে গেছে, প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও। আর কখনো তোমাকে এমন কষ্ট দিবো না।” অর্থি কথাটা শুনে একটু স্থির হয়ে বললো, “খুব ভালোবাসি তোমায়, আমি তোমাকে কখনো হারাতে চাই না।” অর্থির কথার জবাবটা আমার কাছে অনেক কঠিন মনে হচ্ছিলো কারণ আমিও তো অর্থিকে কম ভালোবাসি না, তাহলে কিভাবে আমি অর্থিকে এমন করে কষ্ট দিতে পারলাম। একক মুহূর্তের জন্য নিজেকে অনেক বড় অপরাধী মনে হচ্ছিলো।
.
- ঐ মিয়া মরতে চান নাকি? হর্ণ দিচ্ছি কানে শুনেন না। সাইড দিয়া হাটেন যান।
.
ট্রাকের হেল্পার কথাগুলো বলতেই ট্রাকটা চলে গেল। পথিমধ্যেই আমার ভাবনার অবসান ঘটলো। ফেলা আসা দিনগুলোর কথা ভাবতে ভাবতে বাসা পিছনে ফেলে অনেকটা পথ চলে এসেছি বলতে পারবো না। রিক্সা একটা নিয়ে বাসায় আসলাম। বাসার বেলে চাপ দিতেই নিলয় দরজাটা খুলে দিলো।
.
কোনো কথা না বলে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। অনেকটা পথ হেটেছি যার কারণে শরীর অনেক ক্লান্ত শুতেই ঘুম চলে আসে। রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে গেলাম।
.
প্রতিদিন আমি অর্থির মোবাইলে কল দিয়ে যাই। কিন্তু শুধু একটা কথাই শুনতে পাই, “আপনার ডায়েলকৃত নাম্বাটিতে এই মুহূর্তে বন্ধ আছে।” কথাটা শুনতে শুনতে আমি বিরক্ত হলেও কল দিতে দিতে এখন আমি অভ্যস্ত।
.
একাকীত্ব সময় আর একদম ভালো লাগছে না। অর্থির অনুপস্থিতি আমার জন্য অনেকটা কষ্টদায়ক হয়ে উঠেছে। যাকে ছাড়া আমার দিনগুলো কাটতো না আজ তাকে ছাড়াই দিনগুলো কেটে যাচ্ছে।
.
যেতে যেতে একটা বছর পার হয়ে গেল। আমি আজও অর্থিকে কল দিই। কিন্তু কোনো লাভ হয় না। আমার এখন আর একাকীত্ব নেই। কারণ একটা কোম্পানীতে চাকরী করে নানা ব্যস্ততার মাঝে দিনগুলো কেটে যাচ্ছে।
.
দুইবছর হয়ে যাচ্ছে অর্থির কোনো খোঁজ পেলাম না। মেয়েটা কেন আমার জীবনে এসেছিলো? কেন এভাবে হারিয়ে গেল। অর্থি কি ইচ্ছে করেই আমার সাথে এমন করলো? আমার সেই পাঁচদিনের প্রতিশোধ নিলো?
.
প্রতিদিন নানা ভাবনা মাথার মধ্যে এসে ঘুরপাক খেয়ে বেড়ায়। আর এই ভাবনাগুলো আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। কি ভুলের কারণে অর্থি আমার সাথে এমন করলো? এই প্রশ্নের উত্তরটা আজও জানা হলো না।
.
কখনো যে নিকোটন নামক বস্তুটাতে হাত দিয়ে স্পর্শও করিনি। আর সেই নিকোটিন এখন আমার ঠোঁট স্পর্শ করে। নিজের কষ্টগুলোকে নিকোটিনের ধোঁয়ায় উড়িয়ে দেয়ার বৃথা চেষ্টা করি প্রতিনিয়ত।
.
কোনো এক নিঝুম রাতে ছাদের এককোণে দাঁড়িয়ে আছি। কিছুক্ষণ পর পর একবার এই কোণে আরেকবার অন্যকোণে হাঁটছি। দাঁড়িয়ে থাকার সময়টা একটু বেশিই। মৃদু বাতাস গা স্পর্শ করে যাচ্ছে তা অনুভব করতে পারছিলাম।
.
হঠাৎ করে পকেটে থাকা মোবাইলটা বেজে উঠলো। মোবাইলের স্ক্রিনে চোখ পড়তেই দেখি একটি অচেনা নাম্বার। কল রিসিভ করে বললাম, “হ্যালো,” ওপাশ থেকে কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। আবারও বললাম, “হ্যালো,” এবারও কোনো সাড়াশব্দ পেলাম না, বাধ্য হয়ে একটু জোরে বললাম, “কল করেছেন কথা বলছেন না কেন? কাকে চাচ্ছেন কথা তো বলুন।” কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে একপ্রকার বিরক্ত হয়ে কেটে দিলাম।
.
আবারও কল আসলো, একি নাম্বার থেকে রিসিভ করে বললাম। “কে ভাই আপনি কল দিয়ে কথা বলেন না কেন? টাকা কি বেশি হয়ে গেছে নাকি শেষ করতে পারছেন না?”
.
কোনো সাড়াশব্দ না পেলেও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করার শব্দ কানের মধ্যে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিলাম। কোনো কথা ছাড়া কেঁদে চলেছে। কোনো মেয়ের কান্নার শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম? একটু স্থির ভাবে বললাম, “কে আপনি? প্লিজ একটু বলবেন কি? কল করে এভাবে কাঁদার তো কোনো মানে হয় না।”
.
মেয়েটি কোনো কথা ছাড়াই কাঁদছে আমার মেজাজ খারাপ হওয়ার উপক্রম প্রায়। আমাকে কল করে এভাবে কাঁদার কারণটা কি বুঝতে পারছিলাম না। তাই শেষবারে মতো বলেছি, “ভাই শেষবার বলছি, আপনি কে বলুন অন্যথায় আমি কল কেটে দিয়ে নাম্বার ব্লকে রাখতে বাধ্য হবো। আপনাকে চিনি নানা জানি না আর আপনি কল দিয়ে কান্না করছেন। কে আপনি বলুন প্লিজ।”
.
কথাটা বলে শেষ করতেই জবাব আসলো, “আমি,” কথাটা শুনে আমি মুহূর্তে নির্বাক হয়ে গেলাম। এটা কোনো অপরিচিত কণ্ঠ নয়। আমার চিরচেনা একটি কণ্ঠ। যে কণ্ঠ কখনোই ভুলে যাওয়ার নয়। এই কণ্ঠের প্রেমে পড়েছিলাম আমি। এটা আর কেউ নয় আমার হারিয়ে ফেলা অর্থি।
.
কিছু সময় নীরব থেকে অর্থিকে জিজ্ঞেস করলাম, “তুমি? এতোদিন কোথায় ছিলে তুমি?” অর্থি এখন আরও বেশি কাঁদছে। আমি অর্থিকে কান্না থামাতে বললাম, “তুমি কান্না বন্ধ করো, আমাকে বলো এতোদিন কোথায় ছিলে? কি হয়েছে তোমার? সেদিন আমার সাথে দেখা করতে আসোনি কেন? তুমি জানো সেদিন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত তোমার সিমটাতে আমি আজও কল দেই, কিন্তু সিমটাতে কল যায় না। কত মিস করেছি তুমি জানো? কোথায় ছিলে তুমি?”
.
অর্থির কান্না থামছেই না কাঁদতেই আছে শুধু কিন্তু অর্থি এমন কাঁদছে কেন? জানতে বার বার জিজ্ঞেস করছি, “তুমি এতো কাঁদতেছো কেন? কি হয়েছে তুমি আমাকে বলো? আর কেঁদো না কান্না বন্ধ করো প্লিজ। আমাকে বলো কি হয়েছে?” অর্থি আমাকে কাঁদতে কাঁদতে বললো, “সেদিন আসতে পারিনি বলে আমাকে প্রতারক ভাবছো। হয়ত এতোদিনে আমার প্রতি তোমার ঘৃণার পাহাড় তৈরি হয়েছে।”
.
অর্থির এসব কথা আমি বুঝতে পারছি না, অর্থিকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বললাম, “চুপ করো তুমি, কীসব বাজে বকছো? কালকে সকালে তুমি আমার সাথে দেখা করো, তোমার বাসার ঠিকানা দাও আমাকে।” অর্থি আমাকে বললো, “দেখা করে কি করবে? আমি তো আগের মতো নেই।”
.
ওর কথা আমার মাথাতে ঢুকতেছিলো না। তাই রাগী কণ্ঠে অর্থিকে বললাম,
- তোমাকে বলেছি আমি তোমার সাথে কালকে দেখা করবো। তুমি তোমার ঠিকানা দাও, আর কোনো কথা বাড়াবে না।
- কি হবে আর দেখা করে?
- তোমাকে যেটা বলেছি শুনো, ঠিকানা দাও।
.
অর্থির কাছ থেকে ওর বাসার ঠিকানা নিলাম। সকাল বেলার অপেক্ষায় রাত্রিটা নির্ঘুম কাটিয়ে দিলাম। পরেরদিন সকাল দশটার দিকে আমি অর্থিদের বাসার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। বেলে চাপ দিলাম, কিছুক্ষণ পর একটা মেয়ে দরজা খুলে দিলো। বয়সে আমার থেকে অনেক বড় হবে। দরজা খুলে আমাকে জিজ্ঞেস করলো,
.
- জ্বি কাকে চাচ্ছেন?
- এটা কি অর্থিদের বাসা?
- জ্বি অর্থিদের বাসা,
- অর্থি কি বাসায় আছে?
- আছে, আপনি?
- জ্বি আমি আরিফ, অর্থির ফ্রেন্ড?
- আসুন, ভেতরে আসুন।
.
মেয়েটি আমাকে বাসায় ঢুকালো, অর্থির বড় বোন হবে। আপনাক বসতে বললো। তারপর আমাকে বললো,
.
- আপনাকে তো আগে কখনো দেখিনি, আর অর্থিও কিছু বলেনি।
- আমি কখনো আসিনি তো তাই আপনাদের সাথে পরিচয়ও হয়নি।
- ও আচ্ছা আমি অর্থিকে ডেকে দিচ্ছি।
- জ্বি,
.
একটুপর অর্থি আসলো, মাথা ঘোমটা দেয়া। আমার বাম দিকে সোপায় এসে বসলো। আমাকে জিজ্ঞেস করলো, “কেমন আছো?” আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললাম, “ভালো, তুমি কেমন আছো?” অর্থি কোনো জবাব দিলো না। আমিও চুপচাপ বসে আছি। কিছুক্ষণ পর অর্থি বললো, “কি খাবে? চা না কফি?” আমি বললাম, “না, কিছু খাবো না। তোমাদের ছাদে গিয়ে কথা বলা যাবে?” অর্থি একটু চুপ থেকে বললো, “চলো,”
.
ছাদের একপাশে দাঁড়িয়ে আছি দু’জন। এক হাত দূরত্বে আমার বাম পাশে দাঁড়িয়ে আছে অর্থি। নিস্তব্ধ দু’জন, কিন্তু মানুষের কোলাহলে পরিবেশটা আর নিস্তব্ধ নেই। মেঘের আড়ালে সূর্যটা আজ লুকায়িত। চারপাশটা অনেকটা ঠান্ডা প্রকৃতির, গরমের কোনো আভাস নেই। নীরবতা ভেঙ্গে অর্থিকে বললাম...
.
- কেমন আছো বললে না তো?
- ভালো থাকার মতোই ভালো।
- মানে?
- কিছু না। এখন কি করছো?
- একটা কোম্পানীতে জব করছি।
- গার্লফ্রেন্ড?
- যাকে প্রথম ভালোবেসেছি শেষ পর্যন্ত তাকেই ভালোবেসে যাবো।
.
অর্থি আবার চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। আমি এখনো জানতে পারলাম না, ও সেদিন আমার সাথে দেখা করতে গেল না। তাই ওকে জিজ্ঞেস করলাম। “সেদিন আসোনি কেন? তিনটা থেকে আমি আর নিলয় অপেক্ষায় ছিলাম, আর এতোদিন কেন আমাকে এতো দূরে সরিয়ে রেখেছো?” অর্থি চুপচাপ কোনো কথা ছাড়া দাঁড়িয়ে আছে। একটুপর অর্থিকে বললাম, “আমি এখনো তোমায় অনেক ভালোবাসি। তুমি আমার উপর সেই পাঁচদিনের প্রতিশোধ নিলে তাই না।”
.
আমার কথাটা শুনে অর্থি ছলছল চোখে আমার দিকে তাকালো। ওর চোখে জল টলমল করছে, এখনি যেন গাল বেয়ে নিচে পড়বে। ভাবতে না ভাবতেই টুপ করে এক ফোটা জল গাল বেয়ে পড়তে লাগলো। ওর গালের দিকে হাত বাড়াতেই অর্থি আমার হাত আটকে দিলো। দু’জন আবারও চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি। অর্থি কোনো কথা বলে না তাই ভালোও লাগছিলো না। আবার ওকে বললাম,
.
- তুমি কোনো কথা বলো না কেন? সেদিন কেন তুমি আমার সাথে দেখা করতে গেলে না?
- আমি দেখা করতে ঘর থেকে বের হয়েছি কিন্তু তোমার কাছ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারিনি।
- পৌঁছাতে পারোনি মানে?
- কারণ পথেই আমাকে দুর্ঘটনা স্বীকার হতে হয়। আর একটি দুর্ঘটনা আমার জীবনের সব কিছুই কেড়ে নিয়েছে।
- মানে? তুমি কি বলতেছো আমি তো কিছুই বুঝতেছি না।
- তোমার সাথে দেখার জন্য যাওয়ার পথে গাড়ি এক্সিডেন্ট করে। আর সেই এক্সিডেন্টে আমার স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। সেই সাথে দেখো...
.
তখনি অর্থি তার ঘোমটা নামিয়ে দিলো। ঘোমটা নামাতেই দেখি অর্থির গালের বামপাশটা অনেক ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। পুড়ে গেলে যেমন হয় অনেকটা সেইরকম। ওর এমনটা দেখে আমি নিজের চোখের অশ্রু ধরে রাখতে পারলাম না। অর্থি শুরু থেকেই কান্না করতেছিলো।
.
তারপর অর্থি আমাকে বললো, “তুমি যে সৌন্দর্যের প্রেমে পড়েছিলে সেই সৌন্দর্য আর নেই, দু’বছর আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। এখন কি আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা আছে? নেই তাই না!”অর্থির কথার কোনো জবাব না দিয়ে আমি ওর সামনে কিছুক্ষণ চুপ হয়ে বললাম...
- আমি প্রথম তোমার কণ্ঠের প্রেমে পড়েছিলাম। তোমাকে দেখার পর আমি আবার তোমার প্রেমে পড়েছি। কিন্তু তোমার বাহ্যিক সৌন্দর্য আমার চাই না। তুমি যদি আমাকে একটু ভালোবাসা দাও তাতেই আমার হবে।
- কিন্তু আমাকে নিয়ে তুমি সমাজে বের হবে কিভাবে? তোমার পরিবার পরিজন কি আমাকে তোমার পাশে মেনে নিবে? নিবে না, কখনোই নিবে না।
- তোমাকে আমি দেশের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করিয়ে তোমার চেহারা আগের স্থানে ফিরিয়ে আনবো। (মুখ প্লাস্টার) তবুও তোমাকে আমি এক সেকেন্ডের জন্যও হারানো কি চোখের আড়াল করতে চাই না।
- মুখের চিকিৎসা করাতে অনেক টাকার প্রয়োজন এতো টাকা কোথায় পাবে?
- বাবার টাকার অভাব আছে নাকি? আর আমি বেকার নাকি অনেক টাকার মালিক না।
- যদি কখনো আমার স্মৃতি ফিরে না আসতো, কাল রাতে যদি তোমায় কল না দিতাম, তাহলে কি আমার জন্য তোমার মনে এতো ভালোবাসা থাকতো। তখন তো তোমার কাছে আমি একজন প্রতারক হয়ে যেতাম। এতোদিনে হয়ত এটাই ভেবে নিয়েছো।
- আমার জীবনে হয়ত তুমি থাকতে না কিন্তু তোমার ভালোবাসা আমার মনে আজীবন থেকে যেত। যারা সত্যিকারে ভালোবাসতে জানে তারা কখনো ঘৃণা করতে জানে না। আচ্ছা ঠিক তোমার মতো যদি এমনটা আমার হতো তাহলে তুমি কি আমাকে ভুলে যেতে পারতে।
- চুপ, এমনটা কখনো হবে না।
- যদি হতো?
- আবার, বলছি না এমন কখনো হবে না।
.
হঠাৎ করে মেঘের ডাকে অর্থি ভয় পেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো আমিও অর্থিকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে নিলাম। মুহূর্তের মধ্যে ঝুম বৃষ্টি আরম্ভ হলো, ভিজিয়ে দিয়েছে দু’জনকে। বৃষ্টির সাথে দু’জনের পুরোনো যত কষ্ট আছে সব মুছে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে যখন হালকা বজ্রপাতের শব্দ হয় অর্থি আমাকে আরও শক্ত জড়িয়ে ধরে। ভালোবাসার বাঁধনে দু’জন দু’জনকে শক্ত করে বেঁধে রেখেছি...
.
.
'সমাপ্ত'
.
.
লেখায়ঃ- Abu Bakar Siddique (কাল্পনিক কল্পনাঙ্গীকার বর)
āĻāϞ্āĻĒ āϏংāĻ্āϰāĻš āĻāϰা āĻāĻŽাāϰ āύেāĻļা। āϰোāĻŽাāύ্āĻিāĻ, āĻৌāϤিāĻ, āϰāĻŽ্āϝ, āĻৌāϤুāĻ āϏāĻš āĻšাāĻাāϰো āĻāϞ্āĻĒ āĻāĻে āĻāĻŽাāϰ āϏংāĻ্āϰāĻšে।
āĻļāύিāĻŦাāϰ, ⧍ āϏেāĻĒ্āĻেāĻŽ্āĻŦāϰ, ⧍ā§Ļā§§ā§
701
āĻāϰ āĻĻ্āĻŦাāϰা āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰা
Rahathossain1010100@gmail.com
āĻāĻ āϏāĻŽā§ে
⧝:⧍ā§Ģ PM

āĻāϤে āϏāĻĻāϏ্āϝāϤা:
āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝāĻুāϞি āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ (Atom)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ