ডুমুরের ফুল
৯.
ঘুম ভেঙে গেলো জাদিদের। ঘুমের সাথে সাথে স্বপ্নও ভেঙে গেলো। এতো সুন্দর স্বপ্ন ভেঙে গেলো আফসোস করা ছাড়া কিছুই করার নাই।
জাদিদ ফোন ওপেন করলো সময় দেখার জন্য।স্বপ্নে এই প্রথম সে কোনো মেয়েকে দেখলো। তার মাকেও সে কখনো দেখেনি। একটা চাপা অভিমান আছে তার মা বাবার প্রতি।
হেমলতাকে তার ভালো লাগে। তবে ফ্রেন্ড হিসাবে। কিন্তু আজকে সন্ধ্যায় কী যে হলো। মেয়েটাকে কখনো সে এভাবে হাসতে দেখেনি। চোখ সরাতেই পারছিলো না সে।
রাত ৩ টা বাজে।
জাদিদ হেমলতার নাম্বারে কল করলো। বাজার সাথে সাথেই রিসিভ করলো হেমলতা।
এতো রাতে জাদিদের কল আসাটা তার কাছে স্বাভাবিক হয়ে গেছে। তাই সে স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলতে শুরু করলো।
জাদিদের কথা বলতে কেমন যেন লাগছিলো। হুট করে তার মাঝে যে পরিবর্তন এসেছে সেটাই মূলত দায়ী। তারপরও ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলল
- কী করো?
হেমলতা ঘুমাতে যাবে আর তখনি জাদিদের কল আসছে। তার ঘুম আসেনি কিন্তু পড়তে মন বসছিলো না। তাই বিছানায় শুয়ে শুয়ে ঘুমানোর জন্য অপেক্ষা করতে যাবে আর জাদিদের কল।
হেমলতা বলল
- কিছুই না। তুমি কী করো?
- আমি শুয়ে আছি।
- ঘুমাও তাহলে।
- কেবল ঘুম থেকে উঠলাম। আর কতো ঘুমাবো?
- তাহলে পড়ো।
- পড়া নাম নিও না তো।
- ভালো স্টুডেন্ট পড়া লাগে না। বুঝি তো।
- ভালো স্টুডেন্ট?
জাদিদ হাসলো।
হাসির কারণ বুঝতে না পেরে বলল
- হাসার কিছু বলছি আমি?
- আমি ভালো স্টুডেন্ট ছিলাম না।
- হইছে মিথ্যা বলা লাগবেনা।
- মিথ্যা না রে হেম সত্যি।
- বুঝলাম ভালো স্টুডেন্ট ছিলা না তাহলে এখন ভালো হলে কীভাবে?
- মা - বাবার ডিভোর্স এর পর আমি পুরোপুরিভাবে একা হয়ে যাই।ছোটবেলা থেকে আমার খেলার একমাত্র সংগী ছিলো মা। মা চলে গেলেন। বাবা তো মাত্র ১ মাস থাকেন আমার সাথে। কষ্ট টা ভুলে থাকার জন্য সারাদিন রাত বইতে ডুবে বসে থাকতাম। এক বইকে ৪-৫ বার করে পড়তাম। খবরেরকাগজ, ম্যাগাজিন সবকিছু পড়তাম। পড়তে পড়তে হয়ে গেলাম।
- টিভি দেখলেই তো পারতা।
- টিভি তে গান বা মুভিতে বা নাটকে পরিবার দেখাতো। বাচ্চাদের দেখাতো তাদের মা বাবা তো একসাথে থাকে কিন্তু...
জাদিদ আর বলতে পারলো না।
হেমলতা বুঝতে পেরে বলল
- আচ্ছা থাক আমি বুঝেছি। আর বলতে হবে না।
- না না আমি বলবো। তোমাকে শুনতে হবে।
- আমি শুনতে রাজি আছি। কিন্তু তুমি তো কষ্ট পাচ্ছো!
- মনের কষ্টগুলো কখনো কাউকে বলিনি। ফ্রেন্ডশিপ করিনি। কারন তাদের গল্পে মা বাবার কথা থাকে। আমার তো গল্প করার মতো তেমন কোনো কিছু নাই। মা বাবার কথা মনে পড়ে। নিজেকে ভালো রাখার জন্য আমি ফ্রেন্ড ছাড়া। জুবায়ের এর সাথে বলা আছে আমার মা বাবা পরিবার নিয়ে কোনো কথা যেন না বলে আমার সামনে।
- দেখো আমারো তো মা নেই। আমি কী.....
জাদিদ হেমলতার কথার মধ্যে কথা বলে উঠলো
- শুনো তোমার মা মারা গেছেন। আমার মা মারা যাননি। দুজন নিজের ইচ্ছা, ভালো থাকা টাকেই প্রাধান্য দিলো। আমার কথা কেউ ভাবলো না।
জাদিদ যে রেগে গেছে সেটা হেমলতা বুঝতে পেরেছে। রাগ ভাঙানোর উপায় তার জানা নেই। কী করবে বুঝতে পারছিলো না।
- এইজন্যই আমাকে তুমি ফ্রেন্ড হিসাবে বেছে নিয়েছো?
- অনেক কারণ আছে। একটা না হাজারটা কারণ আছে। যার বর্ণনা করা সম্ভব না।
- আচ্ছা হইছে এখন এগুলা বাদ দাও তো। এই ধরনের কথা আবার বললে আমি কিন্তু....
- কিন্তু কী? কথা বলবা না আর?
- আরে না মার কথা মনে পড়ে যাবে আর
- কি? কান্নাকাটি করবা?
কথাটা বলেই জাদিদ হাসতে শুরু করলো। হাসি থামিয়ে বলল
- তোমরা মেয়েরা খালি পারো কান্নাকাটি করতে।
হেমলতা হাসতে হাসতে বলল
- তোমরা তো সেটাও পারো না।
- আমরা এতো সহজে চোখের পানি ফেলি না।
- ভালো তো। পড়াশোনা কিছু করছো নাকি?
- ইনশাআল্লাহ সকাল থেকে শুরু করবো। জানো আমি স্বপ্ন দেখেছি।
- এমনভাবে বলছো যেন স্বপ্ন মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার মতো ব্যাপার।
- স্বপ্ন টা শুনলেই বুঝবা সেটা কোন গ্রহে যাওয়ার মতো ব্যাপার।
- তাহলে শোনায়। শুনি।
জাদিদ পুরো স্বপ্নটা নিখুঁত ভাবে বর্ণনা করলো।
কিন্তু কাকে সে দেখেছে সেটা হেমলতাকে বলল না।
হেমলতা একটু মজা করে বলল
- মেয়েটা কে?
- পরে বলবো।
- তুমি যা বললা তার সারমর্ম এটাই যে তুমি মেয়েটার প্রেমে পড়েছো।
- এটাই প্রেম?
- তাছাড়া খামোখা কেন একটা মেয়ের পিছনে এভাবে দৌড়াবা?
- ছিনতাই কারীর পিছনেও তো দৌড়ানো লাগে তাই বলে কী?
- খালি প্যাঁচাও কেন?
- তোমার লজিক টা আসলে অতো শক্ত না তাই প্রশ্ন টা করলাম।
- অতো লজিক আমি বলতে পারবো না।
- তাহলে সত্যি আমি প্রেমে পড়েছি?
- হ্যা।
- আহা! স্বপ্ন কী জিনিষ? সে কেন আমার স্বপ্নে আসলো? আমার সামনে আসুক।
- আহারে! একটু সবুর করো।
জাদিদের মন চাচ্ছিলো এখনি বলে দিতে। কিন্তু ও যদি মাইন্ড করে বসে? কথা না বলে তাহলে পরীক্ষা খুব খারাপ হবে। পরীক্ষা শেষ হলে বলবো।
হেমলতা যখন প্রথম এই ছেলেকে দেখেছিলো তখনি তার খুব মনে ধরেছিলো। ভালোলাগা টা তো প্রথম দেখাতেই শুরু হয়েছে। কিন্তু এতো ভালো স্টুডেন্ট, এতো সুন্দর ছেলে ওকে কীভাবে ভালবাসবে? ফ্রেন্ড হিসাবে চেয়েছে বলেই যে সে ওকে ভালবাসবে এমন কোনো আশা সে খুঁজে পায়নি।
কথা বলতে বলতে কখন যে হেমলতা ঘুমিয়ে গেছে জাদিদ বুঝতে পারেনি। ও এক নাগাড়ে কথা বলে যখন থামলো তখন বুঝতে পারলো হেমলতা ঘুমুচ্ছে। তা না হলে সে এতক্ষণ ধরে কথা বলছিলো আর হেমলতা চুপ করে আছে সেটা তো সম্ভব না। এমনিতে জাদিদ বেশি কথা বলেনা। কিন্তু হেমলতার সাথে সে প্রচুর কথা বলে। দাদীর সাথে তো সে ঠ্যাকায় না পড়লে কথা বলেনা। যতক্ষণ সে বাসায় থাকে ততক্ষণ দরজা বন্ধ করে সে বসে থাকে বা ঘুমায় বা পড়ে। তিনবেলা খাওয়া আর বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া রুম থেকে বের হয়না। কিন্তু দাদীর সাথে যদি কোনো কারণে কথা বলতেই হয় তাহলে খুব হাসিহাসি মুখ করে রসিকতা করে কথা বলে। মা - বাবার ডিভোর্স এর সব থেকে বড় কারণ এই বৃদ্ধা। এটা সে মনে প্রাণে বিশ্বাস করে। হেমলতাকে তার এই রুম এই বাসার ছাদ দেখানোর ইচ্ছা ছিলো কিন্তু দাদীর জন্য সে বাদ দিয়েছে। হেমলতাকে দেখলে সে তার ছেলের বউ বানানোর চেষ্টায় লেগে যাবে। এই কারণে এই বাসায় কোনো মেয়ে আসে না।
সে তার ছেলেকে এখনো যুবক ভাবে।
জাদিদ ফোন রেখে দিয়ে পড়তে বসলো।
হেমলতার একটা ছবিও তার কাছে নাই। ফেসবুকে হেমলতার কোনো ছবি নাই।
পরীক্ষা শুরুর আগেরদিন জাদিদের বাবা আসলেন। ছেলের এতো বড় পরীক্ষা আর সে আসবে না কেমন হয়?
এবার সে ছুটি একটু বেশি নিয়েছে। ছেলের সব পরীক্ষায় সে যাবে।
পরীক্ষার আগের রাতে হেমলতা জাদিদকে ফোন করলো। জাদিদ ফোন রিসিভ করে বলল
- পরীক্ষার আগের রাতে ঠিক মতো ঘুমাতে হয়।
- হেহ! তোমার পরীক্ষা নাই?
- আছে।
- তাহলে তুমি ঘুমাও নাই ক্যান?
- আমি লাস্ট রিভিশন দিচ্ছি। ১০ মিনিটেই ঘুমাতে যাবো।
- তাহলে তো ডিস্টার্ব করলাম।
- আরেনা। আমার বোরিং লাগছিলো। ফেসবুকেও যেতে মন চাচ্ছেনা। আর তোমাকে যে ফোন দিবো দেখা গেলো তুমি ঘুমুচ্ছো।
- হইছে হইছে বুঝছি কালকে পরীক্ষার হলে ফাটিয়ে দিবে তুমি!
- পরীক্ষার হল কোনো টাকবেল না যে ফাটাবো।
হেমলতা হাসতে শুরু করলো।কোনোরকম হাসি থামিয়ে বলল
- তোমার পাশে সিট পরলে ভালো হতো।
- আমি পরীক্ষার হলে কাউকে একটা কমা পর্যন্ত দেখাই না। তুমি আমার খুব ভালো ফ্রেন্ড তারপরও আমি দেখাবো না।
হেমলতা বলল
- আর এই কারণে আমাকে পড়ায় এতো সাহায্য করেছো?
- শুনো তুমি সারদায় পড়ো আর আমি রাজেন্দ্রে। এই দুই কলেজের সিট একসাথে জীবনেও পরবে না। ওই আশায় পানি ঢাইলা দাও।
- থাক থাক বুজছি। এখন আমি ঘুমাবে। তবে আমার সিট কিন্তু রাজেন্দ্রেই পরছে।
- ভালো হইছে বুঝবা গার্ড কাহাকে বলে।
- শুনো সারদা গার্ডে সেরা ফরিদপুর এ। একজন শিক্ষকই যথেষ্ট ৫০-৬০ জন স্টুডেন্ট কে টাইট দেয়ার জন্যে।
- উফ আল্লাহ এর রহমত সিট পরেছে ইয়াসিন কলেজে। তবে এটাও কম না।
হেমলতা হাম ছাড়তে ছাড়তে বলল
- আচ্ছা রাখি। ঘুমাবো আমি।
- আচ্ছা ঘুমাও। শুভ রাত্রি
- good night.
চলবে....!
#Maria_kabir
ডুমুরের ফুল
১০.
ফোন রেখে দেয়ার পর হেমলতাকে দেখার ইচ্ছে জাগলো। জাদিদের মনে হচ্ছিলো অনেকদিন দ্যাখেনি। কিন্তু মাত্র ৫-৬ দিন আগেও দেখা হয়েছে। হেমলতাকে কল করলো। হেমলতা কেবল চোখ বুজেছে আর তখনি ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো। সে এক চোখ বন্ধ রেখে আরেক চোখ খুলে কল রিসিভ করলো।
তারপর বলল
- কি?
জাদিদ একটু হেসে বলল
- ঘুমুচ্ছো?
- তুমি কী ঘুমুতে দিচ্ছো? কেবলি চোখ বুজেছি আর তুমি ফোন দিলা।
- আরে বাহ! আমি তো একবারমাত্র ফোন করলাম। আর আমার দোষ হয়ে গেলো?
- আর প্যাঁচানো বন্ধ করে বলো কী কারণে ফোন করলা?
- আমাকে খুব বিরক্তিকর লাগছে তোমার? কথা বলার তেমন কেউ নাই তাই ফোন করলাম আর তুমি?
হুট করে জাদিদ রেগে যায়। আজকেও তাই। রেগে গিয়ে ফোন কেটে দিয়ে টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে বসে রইলো।
জাদিদের কথায় পুরোপুরিভাবে বোঝা যাচ্ছিলো যে সে রেগে গেছে। রাগের কারণটা হেমলতা বুঝতে পেরে জাদিদকে কল দিলো। জাদিদ ফোন রিসিভ করে বলল
- তুমি নাকি ঘুমাবা? তাহলে আমাকে ফোন দিলা ক্যান?
- আমি অনেক দুঃখিত।
- কেন?
- তোমাকে রাগিয়ে দিলাম তাই ।
- এক শর্তে আমি দুঃখিত শব্দটা গ্রহণ করবো।
- বলে ফেলো।
- সত্যি তো?
- হ্যা!
কখনো হেমলতার ছবি জাদিদ চায়নি। কেমন যেন লাগছিলো ওর। তারপরও কাঁপা স্বরে বলল
- না মানে তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তাই আর কি একটা ছবি যদি ইনবক্সে দিতা। ভালো হতো।
হেমলতা জাদিদের কাঁপা স্বর শুনে হাসতে শুরু করলো।
হেমলতার হাসি তার বরাবরি ভালো লাগে কিন্তু আজকের হাসিতে তার কেমন যেন লজ্জা লাগছিলো। জীবনের সতেরো টা বছর সে পার করেছে কোনোদিন বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কোনো মেয়ের সাথে সে সেধে কথা বলেনি ছবি চাওয়া তো দূরে থাক। ফেসবুকে সে অনেক সুন্দরী, স্মার্ট মেয়েদের ছবি দেখেছে তেমন একটা ভালো লাগেনি। ফেসবুকে রিএক্ট অপশন থাকা সত্ত্বেও সে শুধু লাইক দিয়েই চলে এসেছে। কোন একটা মেয়ের ছবিতে কমেন্ট করেছিলো কারণ মেয়েটা তাকে ইনবক্সে কমেন্ট করতে বলেছিলো। তারপর নোটিফিকেশন আসতে আসতে সে শেষ পর্যন্ত কানে ধরেছে বাইচ্চা থাকতে সে কোনোদিন কোনো মেয়ের ছবিতে কমেন্ট করবেনা।
আর আজকে সেই ছেলে খুব সাধারণ এক মেয়ের কাছে ছবি চাচ্ছে।
হেমলতা হাসতে হাসতেই বলল
- আহারে।
ছবি তো তেমন তোলা হয়না। যা আছে তার মধ্যে থেকেই দিচ্ছি।
ফেসবুকে আসো।
- হুম।
ইনবক্সে কয়েকটি ছবি সেন্ড করে মেসেজ দিলো
- এখন আমি ঘুমাই।
- যাও ঘুমাও।
হেমলতা নেট কানেকশন অফ করে ঘুমাতে চেষ্টা করলো। একবার ঘুম ভাঙলে তার আর ঘুম আসেনা। ছবি চাওয়ার কারণ টা তো জাদিদ বলল। কিন্তু তাকে দেখতে কেন মন চাবে তার?
সেদিন যখন ও আমার চুল বেধে দিচ্ছিলো তখন ওর চোখে অন্য কিছু খেলা করতে দেখেছি।
যেভাবে আমাকে দেখছিলো তাতে তো অন্যকিছু বোঝাচ্ছে। কিন্তু কী বোঝাচ্ছে সেটা বুঝতে পারছি না। এই প্রথম কোনো পুরুষের চোখে তার জন্য কিছু একটা দেখেছে। সে কি আমায়?
প্রশ্নটা করেই হেমলতা তাচ্ছিল্য স্বরে নিজেকেই বলল
- নাহ হতে পারেনা। ওর সম পর্যায়ের আমি না। ফ্রেন্ড হিসেবে নিয়েছে বলেই কি.......
ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে নিজেও বুঝতে পারেনি।
ছবিগুলো দেখতে তার ভালোই লাগছে। এই প্রথম সে হেমলতাকে সাজা অবস্থায় দেখলো। সাজার ধরনে মনে হচ্ছে কোনো বিয়েবাড়ি তে দাওয়াতের সময় তোলা ছবি।
গাঢ় জাম রঙের শাড়ি পড়া, চোখে কাজল, জাম রঙের লিপস্টিক, চুল ছাড়া। দুইহাতে অনেক চুড়ি। সব মিলিয়ে হেমলতাকে তার অসম্ভব সুন্দরী লাগছে। আসলে যারা সবসময় খুব সাধারণ ভাবে থাকে তারা সাজলে অসম্ভব সুন্দরী লাগে।
জাদিদ শাড়ী পড়া ছবিটা দেখছে। হেমলতাকে কেউ সাজিয়ে দিয়েছে। ও তো চুল বেণী ছাড়া কিছুই পারেনা আর এভাবে সাজা তো অসম্ভব।
কেশবতী কেশ এলিয়ে দিয়ে এখন বিছানায় ঘুমিয়ে আছে। কথাগুলো নিজে নিজেই উচ্চারণ করছে।
সে যে প্রেমে পড়তে পারে এটা ওকে যারা চিনে তারা কিছুতেই বিশ্বাস করবে না।
প্রত্যেকটা মানুষ জীবনে একবার হলেও প্রেমে পড়ে।
জাদিদ বই গুছিয়ে রেখে ঘুমাতে গেলো। স্বপ্ন তাকে তাড়া করে ফিরছে। স্বপ্ন টা তাকে সুখী করছে। কিন্তু একবারের জন্যেও তার মাথায় আসছে না যে হেমলতা তার নাও হতে পারে। ছোটবেলা থেকে সে যা চেয়েছে তাই পেয়ে এসেছে। সে বুঝতে পেরেছিলো তার মা বাবা কখনো আর একসাথে থাকবে না। তাই সে কখনো সেটা চায়নি।
পরীক্ষার হলে যাওয়ার আগে হেমলতাকে মেসেজ দিলো
- all the best
হেমলতা মেসেজের রিপ্লে দিলো
- all the best
তত্ত্বীয় পরীক্ষা শেষ আর বাকি খালি ব্যবহারিক পরীক্ষা। ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষ হলেই জাদিদ ঢাকা চলে যাবে। তার বাবা ঢাকার কোচিং সেন্টারে ভর্তি করে রেখেছেন।
হেমলতার ফরিদপুর ছেড়ে কোথাও যাওয়ার মতো পরিস্থিতি নাই। কারণ তার নানী অনেক অসুস্থ। তার খুব ইচ্ছে ছিলো নাত্মীকে বড় কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবেন কিন্তু শরীর এতো খারাপ যে তার এখন বৃদ্ধ বয়সের শেষ সম্বলকে দূরে পাঠাতে মন মানছে না।
নানীর এই অবস্থা দেখে সেও ফরিদপুর এর বাইরে না যাওয়ার চিন্তা করেছে।
জাদিদ এই কথা শোনার পর বলেছে
- তুমি তোমার নানীর কাছেই থাকো। ফরিদপুরেও তো সরকারি মেডিকেল কলেজ আছে, ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ার কলেজ আছে তারপর রাজেন্দ্র কলেজ আছে।
- আমার মেডিকেল কলেজে পড়ার ইচ্ছা নাই। কাটা ছেঁড়া ভয় লাগে।
- ইঞ্জিনিয়ার কলেজে পড়বা
- নাহ আমার অনার্স করার ইচ্ছা।
- হ্যা খারাপ কী? রাজেন্দ্রতে তো পিওর সাইন্সের সাবজেক্ট আছে।
- আমার বাংলা নিয়ে পড়ার ইচ্ছা। খুব সহজ সাবজেক্ট। বেশি পড়া লাগবে না।
- শুনো বাংলা সহজ না। ছন্দ, মুক্ত অক্ষর উপন্যাসের ব্যাখ্যা পড়তে পড়তে বুঝবা।
- হইছে ভয় দেখানো লাগবে না।
- আমি ভয় দেখাচ্ছি না। সত্যি টা বললাম। তুমি যদি পারো আমার কী?
- হ্যা তাই তো।
ব্যবহারিক পরীক্ষা রসায়ন বাদে সবগুলো ভালোই হয়েছে হেমলতার। রসায়ন প্রথম পত্র ব্যবহারিক পরীক্ষায় লবণ দেয়া হয়। সনাক্ত করার জন্য। রঙিন লবণ সনাক্ত করা সহজ। আর ইন্টারমিডিয়েট এ একটাই লবণ দেয়া হয়। কিন্তু হেমলতার কপালে পরলো সাদা লবণ। সাদা লবণ সনাক্ত করা কঠিন। কারণ এতে সবগুলো গ্রুপ টেস্ট করতে হয়। সে বিশাল ঝামেলা। যারা পারে তাদের কাছে কম ঝামেলার। কিন্তু হেমলতা এতদিন ফাঁকিবাজি করে এসেছে। আর এখন তো তার ঠ্যালা বুঝছে। খাবার লবণও তো সাদা হয়। তাই হেমলতা ভাবলো খেয়ে দেখতে পারে। অল্প একটু লবণ জিহ্বায় দিয়ে বুঝতে পারলো এটা খাবার লবণ অর্থাৎ সোডিয়াম ক্লোরাইড।
ল্যাবরেটরি এর লবণ। শত শত স্টুডেন্ট পরীক্ষা দিয়েছে। লবণে যে ময়লা ছিলো আর সেটা যে ক্ষতি করতে পারে এটা হেমলতার মাথায় আসেনি। সোডিয়াম ক্লোরাইড এর সাথে যে লেড লবণ মিশ্রিত ছিলো সেটা কারো জানা ছিলো না। আর এটা ভুলবশত হেমলতাকে দেয়া হয়েছে। লেড লবণ গুলো সাধারণত বিষাক্ত হয়।
চলবে.....!
#Maria_kabir
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ