ডুমুরের ফুল
৩.
জাদিদ তার বাবার একমাত্র সন্তান। মা বাবার ডিভোর্স এর পর মা চলে যান গ্রিসে আর জাদিদ বাবার সাথেই বাংলাদেশে থেকে যায়। জাদিদের বাবা ইমরান মোল্লা হাইসাম। মোল্লা সাহেব পেশায় একজন নাবিক। বর্তমানে তিনি প্রধান নাবিক । একমাত্র ছেলেকে তিনি ঢাকা রাখতে চেয়েছিলেন কিন্তু তার বৃদ্ধা মার জন্য ছেলেকে ফরিদপুরে রাখতে হয়েছে।
বছরের বেশিরভাগ সময় তিনি সমুদ্রে থাকেন। ২ মাসের ছুটিতে ১ মাস ছেলে ও মায়ের সাথে কাটান বাকি ১ মাস বন্ধুদের সাথে ঘুরে বেড়ান।
ঝিলটুলিতে থাকে জাদিদ আর তার দাদী। অর্ধ পাগল এই বৃদ্ধার সাথে জাদিদের অবসর সময় থেকে শুরু করে ব্যস্ত সময়ও কেটে যায়।
৩ তলা বাড়ির তিন তলাতেই থাকে জাদিদ আর তার দাদী। একজন কাজের মহিলা আর বাড়ির দারোয়ান থাকেন। বাজার করা থেকে বাড়ির সকল কাজ দারোয়ান করে থাকেন। ৩ দিন ধরে জাদিদের মাথায় হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি বিষয়ক একটা গণিত মাথায় ঢুকেছে। সমাধান আর করতে পারছে না। মাথায় একবার কোনো কিছু ঢুকলেই হলো খাওয়া দাওয়া ভুলে যায়। ঘুম ও থাকে না তার চোখে। হাবিব স্যারকেও সে বলেছে সমস্যার কথা। স্যার বলেছে তুমি পারবা, চেষ্টা করো।
৩ দিনের দিন পারলো। তারপর স্যারকে বলে বাসায় এসে গোসল করে খেয়ে দেয়ে ঘুমালো বিকালে।
এইরকম সমস্যার সমাধানের পর সে লম্বা এক ঘুম দেয়। এক ঘুমে সকাল।
সকাল ৭ টায় জাদিদের ঘুম ভাংলো।
ঘুম ভাঙার সাথে সাথেই সে ফ্রেশ হয়ে নিজ হাতে চা বানিয়ে খায়। আজকেও সে চা হাতে নিয়ে ছোট বারান্দায় চেয়ার নিয়ে বসে ফেসবুকে ঢুকলো। অনেকদিন ফেসবুকে আসা হয়না ভাবতে ভাবতে চায়ে চুমুক দিচ্ছিলো।জাদিদের চা বানানোর সময় টুংটাং আওয়াজে বৃদ্ধার ঘুম ভেঙে গেছে।
ছোট বারান্দায় এসে ফ্লোরে বসে পড়লো।
এই ঠাণ্ডার মধ্যে দাদীকে ফ্লোরে বসতে দেখে জাদিদ চেয়ার থেকে উঠে বলল
- young lady ফ্লোরে কী করছো? চেয়ারে বসো।
বৃদ্ধা হেসে বলল
- থাক ভাই তুই বয়। আমি এইখানে ঠিক আছি।
কথাগুলো বলতে বলতে চেয়ারে বসলেন। তারপর একটু হেসে বললেন
- তোর বাপ রে আরেকটা নিকা করতে কস না ক্যান?
চায়ের কাপ ফ্লোরে রেখে দিয়ে জাদিদ বলল
- তোমার ছেলেকে তুমি রাজি করাও। আমি ছেলে হয়ে বাবাকে কীভাবে বলবো বিয়ের কথা? আর বাবার যদি ইচ্ছা না থাকে তাহলে কী দরকার?
- কোন কুলক্ষুণে তোর মায়তে পোলাডা বিয়া করছিলো। জীবন টাই গেলো আমার পোলার।
জাদিদ খেয়াল করেছে যে তার বাবার ছুটিতে আসার সময় হলেই তার দাদী বিয়ে করানো নিয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়ে।
আরেকটু সময় এখানে থাকলে দাদী কেঁদে কেটে পরিস্থিতি খারাপ করে ফেলবে। তাই জাদিদ চুপচাপ তার রুমে এসে দরজা বন্ধ করে পড়তে বসলো।
অনেক পড়া তার বাকি। তাকে অনেক পড়তে হবে। ঢাবি তার চাই!
হেমলতা প্রতিদিনের মতো ফজর নামাজ পড়ে নাস্তা করে পড়তে গেলো। আজ তার বাবা আসেনি।
বাবাকে সে খুব ভালবাসে। মার মুখটা সে মনে করতে পারে না। মায়ের সাথের কোনো স্মৃতী তার মনে নেই।
মার ছবি তার কাছে আছে। কিন্তু তারপরও কেন যেন মনের স্বাদ মেটে না দেখে।
এই শীতের সকালে তার মা যেন তাকে খুব কাছে ডাকছে।
মিম্মার কাছে শোনা জাদিদের কথাও তার মনে পড়ছে। গোমড়া মুখ আর হাসিখুশি মুখ। দুটোতেই ছেলেটাকে ভালো লাগে।
জাদিদ সকালের নাস্তার সময় খেয়াল করলো কয়েকজন মুরুব্বী গোছের লোক ড্রয়িংরুম এ বসে আছে। ব্যাপার টা কী?
দাদী কি আবারো বাবার জন্য মেয়ে দেখছে? এরা কী তাদের লোক? এই প্রশ্নগুলো জাদিদ তার দাদীকে করতে যেয়েও করলো না। প্রশ্নগুলো এর আগেও একবার করেছিলো এবং বাসায় ভয়ংকর ঘটনা ঘটেছিলো। দাদী ইঁদুর মারার বিষ খেয়েছিলেন। তারপর বহুত কষ্টে তাকে বাঁচানো হয়েছে।
জাদিদ তার দাদীকে ডাকলো
- দাদী, দাদী
- কিরে ডাকোস ক্যা?
- বাসায় মেহমান এসেছে নাস্তা দাও নি?
- সেটাই তো করছি রে।
দাদী বিরক্ত হয়ে চলে গেলেন।
জাদিদ ও নাস্তা করে ব্যাগ গুছিয়ে পড়তে বের হলো।
টেরাকোটার সামনে আসতেই তার মনে হলো গতকাল একজন কেশবতী তার দিকে তাকিয়ে ছিলো। মেয়েটার তাকিয়ে থাকার কারন সে জানে। কিন্তু এতক্ষণ তাকিয়ে থাকার কারন কি বুঝতে পারছেনা।
কাকে জিজ্ঞেস করবে?
দূর থেকে যতটুক বোঝা গেছে মেয়েটার চেহারা খারাপ না।
মেয়েটাকে একদিন ভয় দেখাতে হবে বা চমকে দিতে হবে। হাবিব স্যারের কাছেও মেয়েটা পড়ে।
আমাকে না হয় জোকারের মতো লাগে তাই বলে এভাবে তাকাবে ক্যান?
অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা করতে হবে। প্ল্যান করতে হবে যখন সামনে পাবো। তার আগে করলে প্ল্যান মাটি হয়ে যাবে।
হেমলতার আজকে ১০ মিনিট দেরি হয়ে গেছে। কেন যেন ইংলিশ পড়তে আসলেই তার দেরি হয়। প্রায় দৌড়ে এসে দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো। স্যার ওর দিকে তাকিয়ে বললেন
- আজকেও লেট?
ক্লাস শুদ্ধু সবাই হেসে উঠলো।
হেমলতার অবশ্য অভ্যাস হয়ে গেছে কথা শোনার। তাই সে মন খারাপের ভান করে বলল
- sorry স্যার আর হবে না।
স্যার ধমক দিয়ে বললেন
- হইছে প্রতিদিন একই কথা বলো আর একদিনও তো পূরণ করো না।
হেমলতা সহ ক্লাস শুদ্ধু সবাই চুপ হয়ে গেলো।
স্যার কিছুক্ষণ চুপ হয়ে রইলেন। তারপর বললেন
- আসো। দাঁড়িয়ে থেকে কী লাভ? ক্লাসেই বসে থাকো।
হেমলতা চুপ করে পিছনের বেঞ্চে গিয়ে বসলো।
তারপর স্যার এবং পুরো ক্লাসের স্টুডেন্ট স্বাভাবিক হয়ে গেলো। যেন কিছুই ঘটেনি।
আগামীকাল দুপুর ৩ টায় হাবিব স্যারের কাছে পরীক্ষা। কিন্তু হেমলতার কিছুই পড়া হয়নি। ব্যাখ্যা মূলক প্রশ্নের থেকে গাণিতিক সমস্যাই বেশি। কী পরীক্ষা দিবে এই নিয়ে মিম্মার সাথে কথা হচ্ছিলো হেমলতার
- মিম্মা দোস্ত প্লিজ লাগে আমার পাশে বইসো।
- হেহ আইছে। আমি নিজেও বা কী পড়ছি?ঘুম এতো বাড়ছে।
- আমার ফিজিক্স বই দেখলেই ভয় লাগে। আবার সকালে রসায়ন এর জৈবযৌগ চ্যাপ্টারের উপর পরীক্ষা।
- আমি যাবোনা।
- আমার তো যাওয়াই লাগবে। নানী তো রুটিনের ফটোকপি তার রুমে টানায় রাখছে। না যাওয়ার উপায় নাই।
- চিন্তা না কইরা পড়। সাদা খাতা তো জমা দেয়া যায় না।
- আচ্ছা।
পড়তে পড়তে কখন যে টেবিলেই ঘুমায় পড়ছে সেই খেয়াল হেমের নাই।
ফজরের নামাজের সময় নানী এসে তাকে ডেকে তুললেন।
রসায়ন পরীক্ষা খারাপ হয়নি। রাতে তো রসায়ন পড়ছে।
মিম্মা আসেনি। তাই সে আর একা একা টেরাকোটার সামনে না গিয়ে বাসায় চলে আসলো।
কোনোরকম ফিজিক্স পড়েছে।এভাবে কী পরীক্ষা দিবে সে ভাবছিলো। হাবিব স্যার প্রশ্ন দিলেন।
একটা গাণিতিক সমস্যা বাদে কিছুই কমন পড়ে নাই। এমনকি ছোট প্রশ্নও ভুলে গেছে।
গাণিতিক সমস্যা সমাধানের সময় তার মনে পড়লো ক্যালকুলেটর ভুলে টেবিলের উপর রেখে আসা হয়েছে।
- মিম্মা ক্যালকুলেটর টা দে
মিম্মা, হেমলতার থেকে ৩ বেঞ্চ পিছনে বসেছে।
হেমলতা খেয়াল করলো মিম্মা লেখেই যাচ্ছে। হাত থামছে না। খাতার দিকে তাকিয়ে থাকা অবস্থায় বলল
- আমার এখন লাগবে। পরে দিবো।
কী আর করার চুপ করে বসে থাকা ছাড়া।
সবার শেষে এসেছে বলে তাকে সবার সামনের সিংগেল চেয়ার টেবিলে বসতে হয়েছে। কী কপাল? আগে আসলে মিম্মার সাথে বসিলেই হতো।
স্যার একটু দূরে চেয়ারে বসে ছিলেন।
কেউ একজন বলল
- স্যার আসতে পারি?
স্যার হেসে বললেন
- আসো।
আরে এতো সেই জাদিদ। হেমলতা ১ বার তাকিয়ে মাথা নিচু করে বসে রইলো।
ছোট্ট একটা ভাগে এসেই সে থেমে আছে। ক্যালকুলেটর ছাড়া সে কিছুই করতে পারেনা।
জাদিদ স্যারের কাছে বই চাইলো।
স্যার বলল একটু দাড়াও। আমি নিয়ে আসছি।
জাদিদ ইচ্ছাকৃত ভাবে এখন এসেছে। মেয়েটা একেবারে সামনেই বসে আছে। একটু চমকে দেয়া যাক। কী করা যায়? কী করা যায়?
জাদিদ মেয়েটার দিকে এগিয়ে এসে খাতার দিকে ঝুকে দেখলো কী করছে মেয়েটা।
জাদিদকে এই রুমে থাকা প্রত্যেকটা মেয়ে চিনে। সবাই অবাক। জাদিদ, হেমলতার দিকে ঝুকে আছে কেন?সবার একই প্রশ্ন মুখে আটকে আছে।
হেমলতাও অবাক।প্রায় আতকে উঠে চাপা স্বরে বলল
- একি। আপনি এভাবে আছেন কেন? সরে দাঁড়ান।
জাদিদ মুচকি হেসে বলল
- তুমি এতো সহজ একটা ভাগ পারছো না?
হেমলতা কী উত্তর দিবে? ভাবতেও পারছেনা। মাথা নিচু করে বলল
- আপনি যান তো এখান থেকে।
- আরে বোকা মেয়ে ১০০০ কে ৩ দিয়ে ভাগ করলে ভাগফল হয় ৩৩৩.৩৩। উত্তর টা লেখো।
তারপর ব্যাগ থেকে ক্যালকুলেটর বের করে হেমলতার বেঞ্চের উপর রেখে বলল
- রেখে দাও।পরে একদিন নিয়ে নিবো।
চলবে.......!
#Maria_kabir
ডুমুরের ফুল
৪.
ক্যালকুলেটর বেঞ্চের উপর রেখে দিয়ে জাদিদ যেখানে ছিলো সেখানে গিয়ে দাঁড়ালো। জাদিদ মনে মনে ভাবছে যাক খুব ভালো ভাবেই চমকে দিলাম। এবার ক্যালকুলেটর নিতে ওর বাড়ি যাবো। মেয়েটাকে দেখে যা মনে হচ্ছে ছেলে ফ্রেন্ড ওর নাই। আর বাসায়ও মনে হয় ছেলে ফ্রেন্ড এলাউ না।আমার দিকে তাকিয়ে থাকার ঝাল তোমাকে বোঝাবো খুব ভালো ভাবেই।
জাদিদ মনে মনে প্ল্যান করছিলো ঠিক এই সময় স্যার বই নিয়ে হাজির।
বইটা জাদিদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন
- নাও এই বইটা। যদি এটাতে কাজ না হয় তাহলে আরো বই আছে।
জাদিদ বই নিয়ে বলল
- থ্যাঙ্কু স্যার। স্যার আসি।
- হুম।
আশেপাশে না তাকিয়ে সোজা রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
সবাই হেমলতার দিকে তাকিয়ে ছিলো। হেমলতা ঘটনার আকস্মিকতায় চুপ হয়ে গেছে।
উত্তর টা লিখে সে বসে রইলো। স্যার চলে আসাতে সবাই আবার খাতায় মনোযোগ দিলো।
খাতা জমা দিয়ে যখন সবাই বের হলো। হেমলতা মিম্মার জন্য অপেক্ষা করছিলো। মিম্মা স্যারের সাথে জরুরী কথা বলছিলো।
কয়েকজন মেয়ে দূর থেকে হেমলতাকে ইংগিত করে কিছু বলছিলো।
হেমলতা বুঝতে পারছিলো ওকেই কিছু বলছে কিন্তু কী যে বলছে সেটা শুনতে পারছিলো না। আজকে যা ঘটেছে সেটা তার চিন্তার বাইরে ছিলো। তার মতো এতো সাধারণ মেয়েকে কোনো টপার স্টুডেন্ট তো পছন্দ করতে পারেনা। আর সেতো ওই ছেলের কোনো ক্ষতিও করেনি তাহলে এমন ক্যান করলো?
এই ধরনের ফাজলামি করার কোনো মানে হয়না। প্রত্যেকটা মেয়ে তার দিকে কীভাবে যেন তাকাচ্ছে। কেমন যেন অস্বস্তি লাগছে! এমনিতেই কেউ ওর সাথে কথা বলে না।
মিম্মাকে বের হয়ে আসতে দেখে হেমলতা একটু স্বস্তি ফিরে এলো।
মিম্মা কে একটু চিন্তিত লাগছে। হেমলতা জিজ্ঞেস করলো
- কিরে কিছু হয়েছে?
- জাদিদ এমন করলো ক্যান? ওর সাথে তোর কোনোদিন কথাও হয়নি।
- আমিও জানি না।
- ফেসবুকে চ্যাট হয়?
- না তো এডই তো নাই।
- শোন ওই ছেলে তোর সাথে মজা করছে। কারণ যখন তোর সাথে ও কথা বলছিলো তখন ওর চোখে দুষ্টুমি খেলা করছিলো।
- আমি কী করলাম?
- সেটা তো আমিও জানি না। ক্যালকুলেটর ঠিক আছে না?
- হ্যা ব্যাগে রেখে দিয়েছি।
- যত্ন করে রাখিস। যেকোনো সময় ও রাস্তায় তোর কাছে ক্যালকুলেটর চেয়ে বসতে পারে।
- যখনি বের হবো তখনি সাথে নিয়ে বের হবো।
বাট আমার সাথে এমন করলো ক্যান?
- ধুরো আমি জানি না।
তারপর মিম্মা হা হা হা করে হেসে উঠলো।
হেমলতা বলল
- হাসার কী হলো?
মিম্মা হাসতে হাসতে বলল
- সবাই তোকে জাদিদের জিএফ ভাবছে।
- কী?
- হুম। আরে ওর তো কোনো মেয়ে ফ্রেন্ড নাই। কারণ হিসাবে সবাই জানতো ও মনে হয় ওসব পছন্দ করেনা। কিন্তু আজকে অনেকে তার কারণ হিসেবে বের করেছে যে - জিএফ এর ভয়ে ও কোনো মেয়ে ফ্রেন্ড রাখে না।
হেমলতা হতাশ হয়ে বলল
- কিন্তু এটা সত্যি না।
- সেটা তুই আর আমি জানি যে এটা সত্যি না। কিন্তু কেউ তো সেটা জানে না।
- আমরা বললেই তো বিশ্বাস করবে। তাই না?
- না কেউ বিশ্বাস করবে না। যেভাবে ওই পোলা তোর সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। আর কথা বলার স্টাইল........
হেমলতা মিম্মার কথার মাঝে কথা বলল
- শুধু ওভাবে কথা বললেই কী হয়?
- শুনো মানুষ তার চোখের সামনে যা ঘটে তাই বিশ্বাস করে। এর পিছনের কারণ, আসল কারণ কখনোই দেখেই না।
হেমলতা একেবারেই চুপ হয়ে গেলো।
মিম্মা হাসতে হাসতে বলল
- শোন তুই একা ঝামেলায় পড়িস নাই। জাদিদ তো নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারছে।
- কিসের কুড়াল? ছেলে মানুষ এর আবার কি? হাজার টা প্রেম করলেও বা কী?
- তোর নানী জানলে কী হতে পারে?
- জানি না।
হেমলতার জীবনে প্রথম এমন ধরনের ঘটনা ঘটলো।
মিম্মা রিক্সায় করে চলে গেলো। হেমলতা ওটোর জন্য দাঁড়ায় আছে।এতো ওটো কিন্তু আজকে কোনো ওটো পাচ্ছেনা। মেজাজ এমনিতেই খারাপ এখন আরো খারাপ হচ্ছে।
পাশে এসে কে যেন দাঁড়ালো।
হেমলতা তাকিয়ে দেখে বিরক্ত হলো। এই ছেলের জন্য আজকে সবাই তাকে নিয়ে আলোচনা করছে।
জাদিদ আশেপাশেই ছিলো। অপেক্ষা করছিলো কখন এই কেশবতী একা হবে। একা দেখেই সে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। হাত টা ধরলে কেমন হয়?
না না বেশি হয়ে যায়। মেয়েটা এমনিতেই মনে হয় ভয়ডর পেয়েছে। একটু হাসিহাসি মুখে মেয়েটাকে বলল
- এই মেয়ে এতো সোজা ভাগ কেন পারো না?
হেমলতা কিছুই বলল না। কী বলবে? মিম্মাও তো চলে গেলো।
- কথা বলবা না?
- আচ্ছা আপনি তো আমাকে চিনেন না। তাহলে কথা বলতে আসছেন কেন?
- আচ্ছা কথা না বললে কীভাবে পরিচিত হবো?
- তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু সবার সামনে এভাবে
আর কিছুই বলতে পারলো না। গলা আটকে আসছে তার।
- আসলে গত পরশুদিন তুমি আমার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলে। মনে হচ্ছিলো
গত পরশুদিন তো? হেমলতার মনে পড়লো। সত্যি তো ওর দিকে তো হা করে তাকিয়ে ছিলাম। কিন্তু ও কীভাবে খেয়াল করলো?
হেমলতাকে চুপ করে থাকতে দেখে বলল
- ধরা পড়ে গেছো
একটা ওটো ওদের সামনে এসে দাঁড়ালো। হেমলতা প্রায় দৌড়ে ওটোতে উঠলো।
হেমলতা শান্তির নিশ্বাস ছেড়ে ভাবলো
- যাক বাঁচলাম।
জাদিদও দৌড়ে অটোতে উঠলো।
হেমলতা দেখেও না দেখার ভান করলো।
জাদিদ হাসতে হাসতে বলল
- তোমার বাড়ি যাবো আজকে।
হেমলতা কোনো উত্তর দিলো না।
তারপর আস্তে আস্তে বলল
- আমি আপনার দিকে তাকিয়েছি।তাতে কী এমন হয়েছে? যে আমার পিছুপিছু ঘুরতে হবে? কতো মানুষ তো আপনার দিকে তাকায়। তাই বলে কি সবার পিছুপিছু আপনি ঘুরে বেড়ান?
- না।
- তাহলে?
- মন চাইলো। তাই!
- মন চাইলেই কি সেটাই করতে হবে?
- আসলে আমার মন যা চায় আমিই তাই করি। মন বলল তোমাকে একটু জ্বালাতে। তাই
- আমার অনেক বড় ভুল হয়েছে। আর কোনোদিন ভুলেও তাকাবো না।
- আবারো তো তাকালে
- না তাকিয়ে কথা বলা যায়?
- তুমিই তো বললা ভুলেও তাকাবা না।
হেমলতা কী উত্তর দিবে বুঝতে পারছিলো না।
জাদিদ গম্ভীর ভাবে বলল
- কথার প্যাঁচে পরে গেছো।
হেমলতা বাইরের দিকে তাকিয়ে জাদিদকে গুরুত্ব না দেয়ার ভান করলো।
কী আজব! এই কাউয়ার বাসাকে সে মনে মনেই খুজছিলো। আর এখন সেই তার সামনে বসে আছে।
ওদের বাড়ির সামনে আসার সাথে সাথেই হেমলতা নেমে পরলো।
ভাড়া দিয়ে গেটের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় তার মনে হলো। ক্যালকুলেটর এর জন্য এই ছেলে ওর বাসায়ও আসতে পারে।
তাই সে ব্যাগ থেকে ক্যালকুলেটর বের করে পিছনে ঘুরে দাঁড়ালো। কিন্তু ততক্ষণে ওটো অনেক দূরে চলে গেছে।
মিম্মাকে সব জানাতে হবে।
জাদিদ ওটোর পিছনের ফাকা দিয়ে দেখছিলো - মেয়েটা এখনো দাঁড়িয়ে আছে।
সে নিজেও জানে না কেন এমন করলো?
মেয়েটা মনে হয় একটু সেকেলে ফ্যাশনের। চুল তো হাটু সমান।
চুলে কোনো কাট দেওয়াও নাই।
ভুরু প্লাগ ও করেনা।
জামা কাপড়ে শালীনতা উপচে পড়ছে। হাতে একটা ঘড়ি তাও কালো ফিতার। আদ্দিকালের।
চোখ দুটো মায়াবী।
নাক একটু বেশিই বোঁচা।
কথা যখন বলছিলো তখন কান লাল টকটকে হয়ে ছিলো।
মজাই লাগছে মেয়েটাকে বিরক্ত করে।
ক্যালকুলেটর টা মেয়ের কাছেই থাকুক। তাহলে ভয়ে ভয়ে থাকবে। এমনিতেই আমার ক্যালকুলেটর লাগে না। ফিজিক্সের গণিত করতে গেলে লাগে তাও ঠ্যাকায় না পড়লে ব্যবহার করে না।
অটো ড্রাইভার জিজ্ঞেস করলো ভাই আপনি কই যাবেন?
অম্বিকায় নিয়ে যান।
জাদিদের একটা আফসোস রয়েই গেলো মেয়েটার নাম জানা হলো না।
নাম জানা কোনো ব্যাপার না।
ওর সাথের মেয়েটাকে চিনি।
প্রত্যেক ছেলের মেয়ে ফ্রেন্ড থাকেই। জুবায়ের এর তো অনেক মেয়ে ফ্রেন্ড। ফেসবুকে কতো চ্যাট করে।
অনেক মেয়ে অবশ্য নক করে। কিন্তু গায়ে পরা মেয়ে আমার ভালো লাগেনা। মেয়ে হবে এই কেশবতীর মতো।
দাদীর কথায় জাদিদ এতদিন মেয়েদের সাথে সেধে কথা বলতো না। তার দাদীর কড়া হুকুম
- কোনো মেয়েছেলের সাথে মিশবা না।
এতদিন হুকুম সে অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে।
কিন্তু এখন আর সে মানবে না এই হুকুম। সে মনে মনে স্থির করে ফেলেছে এই মেয়েকে তার ফ্রেন্ড বানাবে।
মনে মনে জাদিদ একটা শব্দই বলছে
- কেশবতী, কেশবতী....!
চলবে....!
#Maria_kabir
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ