রুমটা অনেক পছন্দ হয়েছে আমার। ছোট নয় আবার তেমন বড়ও নয়। মাঝারি ধরনের রুম আমার খুব ভালো লাগে। তার সাথে যদি এটাচ্ড বাথরুম থাকে তাহলে তো সোনায় সোহাগা। বাথরুমটাও একদম মনের মত। ভেন্টিলেটরটা একটু বড় মনে হচ্ছে। তাতে অবশ্য অসুবিধে নেই। ইলেক্ট্রিসিটি না থাকলেও বাথরুমে আলো থাকবে। শুধু বাথরুমের দরজার লকটা নষ্ট হয়ে গেছে। দুএকদিনের ভেতরেই নতুন একটা লাগিয়ে দেব। সবে তো এলাম মাত্র। তাছাড়া এটা এটাচ্ড বাথরুম। লক না থাকলেও কিছু হবেনা। রুমের দরজা বন্ধ থাকলেই হল। রুমটাকে নিজের মনের মত গুছিয়ে নেব। আমার জন্য ঘরটা বেশ কমফোর্টেবল। রুমের দক্ষিণ পাশে একটা জানালা আছে। দক্ষিণ দিকে জানালাটা থাকার কারনে আমি বেশ খুশিই হয়েছি। ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেলেও সমস্যা হবেনা। দক্ষিণা হাওয়া এসে গা জুড়িয়ে দিতে পারবে। জানালার পাশেই খাট। খাটের পাশেই পড়ার টেবিল। বইপত্র গুলো টেবিলে গুছিয়ে রাখলাম। চেয়ারটাও টেবিলের সাথে পুরো মিলে গেছে। বেশিরভাগ সময়ে চেয়ার গুলো টেবিলের সাথে পারফেক্ট হয়না। চেয়ারে বসলে সুবিধামত হাতদুটো টেবিলে রাখা যায় না। একটু উপর-নিচ হবেই। কিন্তু এই চেয়ারটা টেবিলের উচ্চতার সাথে নিজেকে বেশ মানিয়ে রেখেছে। আমি এই চেয়ারে বসেই টেবিলের উপর সঠিক এবং স্বাচ্ছন্দ্যে হাত রাখতে পারি। দেয়ালে একটা আয়না ফিট করা আছে। অন্যান্য আয়নার চেয়ে এই আয়নাটা তুলনামূলক বড়। আয়নার উপর একটা পর্দা দেয়া আছে। এরকম একটা রুম পেলে মন সবসময় ভালো থাকবে। আমি রুমটা আমার মত করে সাজিয়ে নিলাম। গোসল সেরে নিলাম। নিজের প্যান্টশার্ট গুলো আলনায় ভাঁজ করে রেখে দিলাম। মেসে গাদাগাদি করে থাকার চেয়ে এই ফ্ল্যাটেই থাকা ভালো। ভাড়া না হয় একটু বেশিই দিতে হবে এই আর কি। তাও ভালো। অন্তত মেসের চেয়ে এখানে ভালো থাকব।
.
ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লে যে মাথার চুল উঠে যায় মানুষ সেটা এমনি এমনি বলেনা। এত দুর্বোধ্য আর জটিল বিষয় গুলো মাথার উপর দিয়ে ঝড় তুলে দেয়। কিছুই করার নেই। পড়তে তো হবেই। রাত জাগার অভ্যাস আছে আমার। পড়াশোনার পার্ট চুকিয়ে একেবারে খাটে শুয়ে পড়লাম। ক্ষুধা নেই তাই খেতে ইচ্ছা করছেনা। ঘড়িতে দেখলাম রাত দেড়টা বাজে। ঘুমানোর আগে কানে হেডফোন দিয়ে গান শোনাটা আমার নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন সব গান শুনি যেসব শুনলে এমনিতেই ঘুম এসে যায়।
.
শুয়ে শুয়ে জয় শাহরিয়ার এর 'একলা আমি' গানটা শুনছি। এই গানটা দিনে শুনতে একদমই ভালো লাগেনা। আমার মনে হয় এই গানটা মধ্যরাতের জন্য পারফেক্ট একটা গান। পুরো মন জুড়িয়ে যায়। আমি বাম দিকে কাত হয়ে শুয়ে পড়লাম। আর গানের মাঝে হারিয়ে গেলাম। হঠাৎই আয়নাটার দিকে চোখ পড়ল। যা দেখলাম তাতে আমার পুরো শরীরে একটা ঝাঁকুনি দিয়ে উঠল। আমি আয়নার ভিতর দেখতে পেলাম আগুনের একটা ঝলক জ্বলে আবার নিভে যায়। আগুনটা কোন দিক থেকে জ্বলছে সেটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছেনা। চার থেকে পাঁচ সেকেন্ড এর মত আগুনটা জ্বলে। এরপর নিভে যায়। আর এই চার পাঁচ সেকেন্ডে আগুনের আলোয় একটা হাতের তিনটা আঙ্গুল দেখতে পেলাম। আঙ্গুল দেখার সাথে সাথেই আগুনটা নিভে গেল। তার মানে কি হাতে আগুন জ্বলছে। আমি কিছুক্ষণের জন্য নড়তে পারলাম না। রুমটা অন্ধকার। হাত দিয়ে যে মোবাইল টা নেব সেটাও করতে পারছিনা। হাত পা সব অসাড় হয়ে গেছে। অনেক কষ্টে মোবাইলটার দিকে হাত বাড়ালাম। বালিশের নিচেই মোবাইলটা রাখা আছে। যেই মোবাইলটা হাতে নেব ঠিক তখনই হঠাৎ করেই আবার আগুন দেখতে পেলাম। আমি চমকে উঠলাম। সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। কান থেকে হেডফোন সরিয়ে নিয়ে যে রুমের লাইট জ্বালাব সেই সাহসটাও পাচ্ছিনা। একটা ভৌতিক ভয় এসে আমায় গ্রাস করে রাখল। সায়েন্সের ছাত্র আমি। ভুতে একদম বিশ্বাস করিনা। কিন্তু এরকম একটা কান্ড দেখে আমি ভীষণ ভয় পেয়ে গেলাম। ভয় তো আর বিজ্ঞানের ছাত্র মানেনা। যার মনে একবার ঢুকে সহজে সেখান থেকে বের হয়না। আর আমিও ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছি। গানটা বেজেই চলেছে। আমি আস্তে আস্তে করে চোখ খুললাম। মনে মনে ঠিক করেছি আয়নার দিকে আর তাকাব না। মানবজাতির একটা দুরারোগ্য ব্যাধি হল নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি অধিক পরিমাণে আকর্ষিত হওয়া। আর আমিও এই আকর্ষণে আবদ্ধ হয়ে পড়ি। আড়চোখে আয়নার দিকে তাকাতেই আমি আবার আগুনটা দেখতে পেলাম। এবার দেখলাম আগুনটা ডান দিক থেকে বাঁদিকে সজোরে ঘুরে গেল। সেই সাথে আঙ্গুল তিনটাও দেখলাম। আমি আর তাকিয়ে থাকতে পারলাম না। ভয়ে কুল কুল করে ঘামছি। কি আশ্চর্য, যে আমি কোন অলৌকিকতা বিশ্বাস করিনা সেই আমিই কিনা আজ ভয়ে ঘামছি। সারারাত আর একটুও ঘুমাতে পারলাম না। আয়নার দিকে আর ঘুরেও তাকাইনি। সারারাত ঘামতে ঘামতেই কাটিয়ে দিলাম।
.
ঘুম থেকে উঠতে অনেকটাই দেরি হয়ে গেল। সম্ভবত ভোরের দিকে ঘুমিয়েছিলাম। তাই দেরি হল। গতরাতের ব্যাপারটা মনে পড়ে গেল। এখন আর এত ভয় লাগছেনা। আমি খাট থেকে নেমে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালাম। আবারো চমকে উঠলাম। কোন ভুতুড়ে কিছু দেখে নয়। আমাকে দেখেই চমকে উঠলাম। চোখদুটো লাল হয়ে আছে আমার। সারারাত ঘুমাতে পারিনি বলেই এমন হল। আয়নাটার দিকে ভালো করে নজর দিলাম। কোন অস্বাভাবিক কিছুই দেখলাম না। সব ঠিকঠাক। অথচ গত রাতেই কেমন যেন রহস্যময়ী হয়ে উঠেছিল এই আয়নাটা। ভাবলাম বাড়িওয়ালার সাথে ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলি। আয়নাটায় কোন বিশেষ কিছু আছে কিনা। আমি বাড়িওয়ালার সাথে কথা বললাম। তারা আয়নাটা সম্পর্কে তেমন কিছুই বলল না। আমি উনাকে গতরাতের ঘটনাটা বললাম। উনি হেসে উড়িয়ে দিলেন। বললেন এটা নাকি আমার দৃষ্টিভ্রম। নতুন এসেছি তাই এমনটা হল। যেহেতু আমি লৌকিকতায় বিশ্বাসী সেজন্য আমিও একপ্রকার ধরেই নিলাম এটা আমার মনের ভুল। আমি হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে চা বানালাম। চা খেয়ে ভার্সিটিতে চলে গেলাম।
.
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমি শুয়ে পড়লাম। মনের ভেতর আজ কোন ভীতি নেই। কারন আয়নাটা পর্দা দিয়ে ঢেকে রেখেছি। কাল হয়ত কোন ভুল হয়ে গিয়েছিল আমার। আজ যদি সেই ভুলটা আমার অজান্তে হয়েও যায় তবুও ভয় পাব না। কারন আয়নায় আজ কিছুই দেখা যাবেনা। পর্দায় আবরিত কোন আয়নায় নিশ্চয়ই কিছু দেখা যাবেনা। আমি পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হয়ে গান শুনছি। জানালাটা সন্ধ্যাবেলায় বন্ধ করে দিয়েছি। নইলে মশা ঢুকবে জানালা দিয়ে। মশা আমার কাছে সবচেয়ে বিরক্তিকর একটা প্রাণী। যদিও দরজা জানালা সব বন্ধ তারপরো মশারি টানিয়ে নিলাম। মশার প্যানপ্যানানি আমার একদম সহ্য হয়না। আমি বন্ধ জানালার দিকে মুখ করে শুয়ে শুয়ে গান শুনছি। আজ শুনছি 'সত্যি এবার' গানটা। এটাও জয় শাহরিয়ার এর। ওর গান আমার রাতেই শুনতে ভালো লাগে। হঠাৎই গত রাতে আয়নার ঘটনাটা মনে পড়ে গেল। আমি নির্ভয়ে আয়নার দিকে তাকালাম। এবার যেন আমার প্রাণ বের হয়ে যাবার মত অবস্থা হল। আয়নায় কিছু দেখিনি। একেবারে সরাসরি দেখলাম। আমার রুমের পুব দিকের দেয়ালে আবার সেই আগুনের ঝলক দেখলাম। আগুনটা কোথা থেকে জ্বলছে সেটা দেখা যাচ্ছেনা। গতরাতের মতই দেখলাম শুধু আগুন জ্বলছে। কাল দেখলাম তিনটা আঙ্গুল। আজ চারটা দেখলাম। আঙ্গুল গুলো দেখা যেতেই আগুন নিভে যায়। শুধু তাই নয়, আগুনটা একবার ডান দিক থেকে বাঁদিকে ঘুরে সামনে এগিয়ে আসে। আরেকবার বাঁদিক থেকে ডান দিকে ঘুরে সামনে এগিয়ে আসে। এটা দেখে আমি ভয়ে আধমরা হয়ে গেলাম। আমি তাড়াতাড়ি আবার জানালার দিকে ফিরে চোখ বন্ধ করে পড়ে রইলাম। কালকের চেয়ে আজ ভয়টা আরো বেশি পেয়েছি। কাল আয়নায় দেখে ভাবলাম আমি ভুল দেখেছি। আজ সরাসরি আমার নিজের রুমে আগুন দেখে আরো ভয় পেলাম। আজ তো ভুল দেখিনি। তার মানে কি সত্যিই আমি ভুতে ভয় পাচ্ছি। আমার ফ্রেন্ডরা জানে যে আমি ভুতে বিশ্বাস করিনা। এটা নিয়ে আমার বন্ধু সায়মনের সাথেও তুমুল ঝগড়া হল। সে বারবার আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করে যে ভুত আছে। আমি তাকে সাফসাফ বলে দিই যে ভুত বলতে পৃথিবীতে কিছুই নেই। কিন্তু সে আমার কথা শোনেইনা। আমি ওকে রেগে গিয়ে কয়েকটা উল্টাপাল্টা কথা বলেছিলাম। সে আর কোন কথা বলেনি আমাকে। যাক গে, সেসব কথা বাদ দিলাম। এখন আমি যদি সায়মনকে বলি সত্যিই আমি ভুতে ভয় পেলাম তাহলে তার কাছে আমার আর মুখ থাকবেনা। সে আমাকে উল্টো ক্ষ্যাপাবে। আগুনটার কোন লৌকিক ব্যাখ্যা আমি পেলাম না। হেডফোনে অনবরত গান বেজেই চলেছে। প্রায় আধঘন্টার মত আমি একটুও নড়লাম না। আগুনটা আছে কিনা সেটা দেখার জন্য আমি আবার দেয়ালের দিকে চোখ ফেরালাম। আমি যেন এবার সেন্সলেস হয়ে যাব। এবার আর কোন আগুন দেখিনি। শুধু লম্বা একটা ছায়ামূর্তি দেখলাম। ছায়ামূর্তিটা আস্তে আস্তে আমার বাথরুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। হাঁটার কোন শব্দ পাচ্ছিনা। চোখ বন্ধ করে ফেললাম আমি। ভয়ে চিৎকার করতে চাইলাম। গলা থেকে কোন শব্দ বের হল না। মনে হল তালুর সাথে জিভটা আটকে আছে। আমি জড়োসড়ো হয়ে জানালার দিকে মুখ করে শুয়ে আছি। গরমের মাঝেও কম্বল দিয়ে নিজেকে পুরোপুরি ঢেকে ফেললাম। আমি এই ভয়াবহ দৃশ্য আর দেখতে চাইনা। প্রচন্ড গরমে আমি ঘেমেই চলেছি। কানে অনবরত গান বেজেই চলেছে। কতক্ষণ এভাবে পড়েছিলাম জানিনা। আমার রুমের অনেকটা কাছাকাছি একটা মসজিদ রয়েছে। আমি ফজরের আযান শুনতে পেলাম। মসজিদটা অনেক কাছেই তাই কানে হেডফোন থাকা সত্ত্বেও আমি আযান শুনলাম। আযানের শব্দ শুনে আমি একটু একটু করে সাহস পেতে শুরু করলাম। ভুত-প্রেত যাই হোক, আমার বিশ্বাস আযানের সময় তারা কিছুই করতে পারবেনা। আমি কম্বল সরিয়ে চোখ খুলে পুরো রুমে একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম। না, এখন কোন অস্বাভাবিক কিছুই চোখে পড়ল না। আমি একটা দম নিয়ে উঠে বসলাম। খাট থেকে নেমে গিয়ে রুমের লাইট জ্বালালাম। এখন আর কোন ভয় লাগছেনা। আমি মসজিদে নামায পড়তে চলে গেলাম। প্রতিনিয়ত পড়িনা। আজ হয়ত ভয় পেয়েছি বলেই যাচ্ছি। আসলে আমরা মানুষরা বড়ই অদ্ভুত। প্রয়োজন না হলে আল্লাহকে স্মরণই করিনা। আমি মসজিদে গিয়ে নামায পড়লাম। ততক্ষণে ভোরের আলোয় সব পরিষ্কার হয়ে গেছে। আমি রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। সারারাত ঘুমাইনি। এখন একটু ঘুমিয়ে নিই।
.
আজ আমার বন্ধু রাকিবের বার্থ ডে। সন্ধ্যাবেলায় ওর বাসায় চলে গেলাম। পার্টি হবে আজ। আমি, সায়মন, নিজাম, পলাশ, হাসিব এবং আরো অনেক বন্ধুবান্ধব সেখানে উপস্থিত হলাম। কেক কাটলাম, আনন্দ ফূর্তি করলাম। সায়মন তার চাচার বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করছে। তার চাচা মধু ব্যবসায়ী। সায়মন মধু নিয়ে আসল পার্টিতে। আমি কখনো মধু খাইনি। তাই জানিনা এর স্বাধ কেমন। শুনেছি মধু নাকি অনেক মিষ্টি। আমি একটু খানি মধু খেলাম। কই, যতটা আশা করেছিলাম ততটা মিষ্টি নয় মধুটা। কেমন যেন লাগে। তারপরেও মধু বলে কথা। আমরা বন্ধুরা সবাই চেটেপুটে খেলাম। বোতলে আর অল্প একটু মধু বাকি আছে। আমি বোতলটা সায়মনের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম
- "সায়মন, একটু খানি আছে তাড়াতাড়ি খা। নইলে পরে আর একফোঁটাও পাবিনা"।
সায়মন মধুর বোতলটা নেয়ার আগেই হাসিব আমার হাত থেকে বোতলটা ছোঁ মেরে নিয়ে গেল। আর বোতলের বাকি মধুটা গিলে ফেলল। হাসিব এমনিতেই পেটুক ছেলে। যা পায় তাই সাবাড় করে দেয়। আমি হাসিবকে বললাম
- "কিরে, তুইতো একবার খেয়েছিস। ওরে দিলিনা কেন"?
-- "আরে ওর চাচার বাসা হল মধুর ফ্যাক্টরি। ও সেখান থেকে প্রতিদিনই খেতে পারবে। এমনিতে তো সায়মন আমাদের কিছু খাওয়ায় না। আজ মধু এনেছে। খেয়ে ফেললাম। ওর না খেলেও চলবে"।
আমি হাসিবের কথা শুনে কিছু বললাম না। সায়মনের এ নিয়ে কোন দুঃখ বা কোন প্রতিক্রিয়া দেখলাম না। ও ব্যাপারটা সহজ ভাবেই নিয়েছে। সহজ ভাবে নিলেই ভালো। মধু খাওয়ার পর্ব শেষ হতেই পলাশ পাঁচ ছয়টা বিয়ারের বোতল বের করল। আমি তো বেজায় খুশি হয়ে গেলাম। বিয়ার আমি প্রচুর পছন্দ করি। বন্ধুরা সবাই মিলে বিয়ার খেতে শুরু করলাম। আমি সাউন্ড বক্সে জয় শাহরিয়ারের গান বাজিয়ে দিলাম। বন্ধুরা সবাই একই রুমের ভেতর দরজা বন্ধ করে বসে বসে বিয়ার খাচ্ছি। আর সেই সাথে যদি জয় শাহরিয়ার এর 'ভালো আছি' গানটা বাজে তাহলে তো কোন কথাই নেই। সবাই মন দিয়ে গানটা শুনছি। আহ, কি সুন্দর গানের চারটি লাইন।
.
"যদি তুমি আমাকে ছেড়ে
এত ভালো থাকতে পারো
তবে কেন মিছেমিছি
তোমায় ভালোবাসব আরো"?
.
বন্ধুরা বিয়ার খেতে খেতে গানটা শুনে সবাই আবেগী কথা বলতে শুরু করল। এ এর প্রেমিকার কথা, ও ওর প্রেমিকার কথা, কে কবে কার সাথে ডেট করেছে, কে কবে ছ্যাঁকা খেয়েছে সব বলতে শুরু করল। আমি আর সায়মন কোন ধরনের প্রেমে আক্রান্ত হইনি। তাই আমরা চুপচাপ ওদের কথা শুনলাম। কি এক অবস্থা। সবাই এমন ভাবে নিজের প্রেমিকার বর্ণণা দিচ্ছে যেন মনে হচ্ছে কয়েক জনম ধরে তারা সংসার করেছে। সায়মন ওদের কান্ড দেখে হাসতে হাসতে বলে
-- "কিরে, জয় শাহরিয়ার কি তোদের আবেগী করে তুলল নাকি। দেখিস কোনদিন সে বড় বড় চুল নিয়ে, বড় বড় দাঁত নিয়ে তোদের ঘুমের ভেতর জানালা দিয়ে টেনে নিয়ে যায়। পরে ওর গান শোনার ভুত তোদের মাথা থেকে নামবে"।
ওর কথা শুনে আমরা সবাই একসাথে হেসে উঠলাম। সায়মনও আমাদের সাথে তাল মিলিয়ে হাসল। যদিও হাসার মত কোন কথা বলেনি সে। আসলে রুমে বসে বিয়ার খাচ্ছি আর একটা বিদ্রোহী টাইপ গান শুনছি সেজন্য সবার মাঝেই একটা উদাসীন ভাব চলে এল। সেজন্যে আমরা সবাই অল্পতেই হেসে উঠলাম। আরো প্রায় দুঘন্টা আমরা একসঙ্গে আড্ডা দিলাম আর গান শুনলাম।
.
রাত বারোটা। আজ একটু তাড়াতাড়িই ঘুম পেয়ে যাচ্ছে। বিয়ারও অনেক খেয়ে ফেলেছি। কিন্তু তারপরেও মাথাটা কেমন ভার হয়ে আছে। বিয়ার খেলে তো এমন হবার কথা নয়। আমি ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিছানায় ধপাস করে শুয়ে পড়লাম। কানে হেডফোন গুঁজে দিয়ে গান শুনতে শুনতেই ঘুমিয়ে পড়লাম। কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম জানিনা। হঠাৎই দেখলাম আমার রুমের জানালাটা খোলা। আর আমি যাকে দেখলাম তাতে মনে হয় আমি হাজার ভোল্টেজ এর শক খেয়েছি। আমি জয় শাহরিয়ারকে দেখতে পেলাম। যতটা আশ্চর্য হয়েছি তার চেয়ে অনেক বেশি ভয় পেয়েছি আমি। কারন আমি জয় শাহরিয়ার এর মাথার চুলগুলো লম্বা দেখতে পেলাম। দাঁতগুলো ভীষণ বড় বড় দেখাচ্ছে। যেমনটা আমাকে সায়মন বলেছিল ঠিক তেমনটাই দেখতে পেলাম। অথচ বাস্তব জীবনে জয় শাহরিয়ার এর চুল একদম স্বাভাবিক। কিন্তু আমি দেখতে পেলাম তার চুল প্রায় মেয়েদের মত লম্বা। তারপর দেখলাম জয় শাহরিয়ার আমাকে জানালা দিয়ে বের করার জন্য টানাটানি করছে। আমি ভীষণ ভয় পেয়ে গেলাম। কলিজাটা যেন শুকিয়ে গেল। টানাটানির সময় আমি গ্রীলের সাথে সজোরে একটা বাড়ি খেলাম। ডান কাঁধে প্রচন্ড ব্যথা পেয়েছি। ঠিক তখনই আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। আমি বিছানায় উঠে বসলাম। শরীরটা প্রচন্ড ঘেমে গিয়েছে। জানালার দিকে তাকিয়ে দেখলাম এটা বন্ধ হয়েই আছে। বুঝলাম, আমি এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম। যাক বাবা, বাঁচা গেল। আমি তো সত্যি সত্যিই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। স্বপ্ন এমন ভয়ংকর হতে পারে আমার জানাই ছিল না। আমি যে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম সে ব্যাপারে আমি সুনিশ্চিত। তাই মন থেকে সব ভয় দূরীভূত হয়ে গেল। আমি আবার শুয়ে পড়লাম। ডান দিকে কাত হয়ে শুতেই আমি তীব্র ব্যথা অনুভব করলাম। ব্যথায় কঁকিয়ে উঠলাম আমি। তার মানে এতক্ষণ স্বপ্ন নয়। সবই সত্যি ছিল। ব্যথা অনুভব করার পর আমাকে আবার প্রচন্ড ভয় এসে ঘিরে ধরল। আমি ব্যথা আর ভয়ে নড়তে পারলাম না। ডানকাত হয়ে শুতে পারবনা। তাই বামদিকে ফিরলাম। পুবদিকের দেয়ালে চোখ পড়তেই আমি আবার সেই আগুনের ঝলকটা দেখলাম। আমার সাথে এ কি শুরু হল। এমনিতেই ভয়ে আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি। আগুনটা আগের মতই হাতের মুঠোয় জ্বলে আর নিভে। আমি আর তাকিয়ে থাকতে পারলাম না। কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে মরার মত পড়ে রইলাম। চোখ খুলতেই দেখি সেদিনের ছায়ামূর্তিটা আমার ঘরে পায়চারি করছে। ঘরের দরজা জানালা সব বন্ধ। এই ছায়ামূর্তিটা এল কি করে। আমি ভয়ে কুঁকড়ে পড়ে আছি। প্রচন্ড ব্যথা নিয়েও আমি ডানকাত হয়ে শুয়ে পড়লাম। এই দৃশ্য আমি আর দেখতে চাইনা।
.
সকাল দশটায় ঘুম ভাঙলো আমার। ঘুম ভাঙ্গার পরেও আমি চোখ বন্ধ রেখে শুয়ে রইলাম। কিন্তু অবাক হলাম এই কারনে যে, কাল রাতে ডান কাঁধে প্রচন্ড ব্যথা পেলেও এখন একটুও সেটা পাচ্ছিনা। আশ্চর্য ব্যাপার। ব্যথা কি ভালো হয়ে গেল নাকি। আমি আর শুয়ে থাকতে পারলাম না। হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হলাম। নাস্তা করতে বসলাম এমন সময় আমার ফোনে সায়মনের কল এল। আমি কলটা রিসিভ করলাম।
- "হ্যালো"।
-- "তুই কইরে"?
- "বাসায়। নাস্তা করছি। তুই কই"?
-- "আমি ভার্সিটিতে। রাকিব, নিজাম, পলাশ, হাসিব সবাই এসে গেছে। আমরা একসাথেই আছি"।
- "আচ্ছা বস তোরা। আমি তাড়াতাড়ি আসছি"।
-- "আচ্ছা তাড়াতাড়ি আয়। আমাদের সবার সাথে একটা ভৌতিক ব্যাপার ঘটে গেছে"।
আমি সায়মনের মুখে ভৌতিক ব্যাপারের কথা শুনেই হন্তদন্ত হয়ে ভার্সিটির পথে চললাম। গিয়ে দেখি সবাই চিন্তিত মুখে বসে আছে। সবার মুখে ভয়ের একটা স্পষ্ট ছাপ দেখতে পেলাম। আমি ওদের কাছে জানতে চাইলাম আসল ঘটনা কি? ওরা যা বলল তাতে আমি নিজেই প্রচন্ড রকমের বিস্মিত হলাম। কাল রাতে ওরাও আমার মত জয় শাহরিয়ারকে দেখেছে। আমি যেরকম ভাবে দেখেছি ঠিক একইরকম ভাবে তারা দেখেছে। জয় শাহরিয়ার নাকি বড় বড় চুল, বড় বড় দাঁত নিয়ে ওদেরকেও জানালা দিয়ে টানাটানি শুরু করেছিল। আমি কিছু বললাম না। আমার সাথেও যে ব্যাপারটা ঘটেছে সেটাও বললাম না। ব্যাপারটা হেসেই উড়িয়ে দিলাম। কিন্তু নিজের মনকে প্রবোধ দিতে পারলাম না। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম যে এটা আমার দুঃস্বপ্ন ছিল। কিন্তু এখন ওদের কথা শুনে আমার মনে হচ্ছে ব্যাপারটা আসলেই অন্য কিছু। আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম একজন সাইকোলজিষ্টের সাথে কথা বলব।
.
আমি এখন জনাব মেহতাব সাহেবের চেম্বারে বসে আছি। ইনি একজন স্বনামধন্য সাইকোলজিষ্ট। আমি উনাকে প্রথম থেকে সব ব্যাপার খুলে বললাম। আয়নায় আগুনের ঝলক দেখা, ঘরের ভেতর ছায়ামূর্তি দেখা তারপর জয় শাহরিয়ারকে নিয়ে আমার দুঃস্বপ্ন, এবং তার পরেই আবার আগুনের ঝলক এবং ছায়ামূর্তির কথা সবই বলেছি। শুধু আমার বন্ধুরাও যে আমার মত জয় শাহরিয়াকে নিয়ে দুঃস্বপ্ন দেখেছে সেটা বলিনি। দেখি আগে মেহতাব সাহেব কি বলে। উনি আমার সব কথা শুনে কিছুক্ষণ নীরব হয়ে রইলেন। তারপর আমায় জিজ্ঞেস করলেন
- "তোমার বাথরুমের লকটা নষ্ট, তাইনা"?
আমি প্রচন্ড অবাক হয়ে গেলাম উনার কথা শুনে। আমি উনাকে আমার রুমের বৃত্তান্ত কিছুই বলিনি। তবু উনি একথা জানলেন কিভাবে? আমার বিস্ময়ের ঘোর এখনো কাটেনি। ঘোরের মাঝে থেকেই বললাম
-- "হ্যা"।
- "যাক, তাহলে তো বিষয়টা একদম পরিষ্কার হয়ে গেল"।
-- "কি পরিষ্কার হল"?
মেহতাব সাহেব আমার কথার উত্তর না দিয়ে নিজের পকেট থেকে একটা সিগারেট আর লাইটার বের করলেন। সিগারেটটা মুখে নিলেন। তারপর নিজের বাঁ হাত মুঠো করে টেবিলের উপর রাখলেন। এবার উনি লাইটারের গ্যাস কী চেপে ধরে হাতের মুঠোর সাথে লাইটারটা লাগিয়ে ধরে রাখলেন। ভদ্রলোক কি করতে যাচ্ছেন কিছুই বুঝছিনা। প্রায় দশ সেকেন্ড এভাবে লাইটারটাকে চেপে ধরে রাখলেন। তারপর লাইটারের হুইল ঘুরাতেই উনার হাতে আগুন জ্বলতে শুরু করল। আগুনটা হাতের মুঠোর ভেতরেই জ্বলছে। উনি খুব দ্রুত এবং সন্তর্পণে সিগারেটটা হাতের মুঠোয় ঢুকিয়ে ঘন ঘন দুটা টান দিয়েই সিগারেট ধরিয়ে ফেললেন। তারপর উনি হাতের মুঠো খুলে ফেললেন। মুঠো খোলার সাথে সাথেই আগুনটা নিভে গেল। এই কাজটা করে উনি হাসিমুখে আমার দিকে তাকালেন। আমি প্রচন্ড ভাবে চমকে গিয়েছি। আমি যে তাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাব সেটা পর্যন্ত বেমালুম ভুলে গেলাম। মেহতাব সাহেব বললেন
-- "বিষয়টা তোমাকে বুঝিয়ে বলছি। মন দিয়ে শোন। তোমার রুমের দরজা জানালা সব বন্ধ থাকলেও যে কেউ তোমার রুমে অনায়াসে ঢুকতে পারবে। তোমার বাথরুমের লকটা নষ্ট। আর বাথরুমের ভেন্টিলেটর দিয়ে একটা মানুষ সহজে ঢুকতে পারেনা। যার কারনে আমার মনে হচ্ছে তোমার বাথরুমের ভেন্টিলেটরটা বড়। তাই নয় কি"?
আমি জনাব মেহতাব সাহেবের কথায় সায় দিলাম। হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালাম। উনি একটু মৃদু হাসলেন। তারপর আবার বললেন
-- "তোমার বাথরুমটা হল এটাচ্ড বাথরুম। কেউ একজন ভেন্টিলেটর দিয়ে তোমার বাথরুমে ঢুকেছে। আর যেহেতু বাথরুমের দরজার লক নষ্ট সেহেতু সে অবশ্যই বাথরুম থেকে তোমার রুমে প্রবেশ করতে পারবে। কেউ একজন খুব চালাকি করে আয়নার বিপরীতে দাঁড়িয়ে লাইটারের গ্যাস কী চেপে ধরে হাতের মুঠোয় কিছু গ্যাস প্রবেশ করিয়ে নেয়। তারপর আগুন ধরিয়ে দেয় হাতের মুঠোয়। চার পাঁচ সেকেন্ডের আগুনে হাতের কিছুই হয়না। যেমনটা আমি একটু আগে করলাম। সম্ভবত সেই লোকটা নিজের হাত দুটো পেছনে নিয়ে হাতের মুঠোয় আগুন জ্বালায়। তারপর সে জ্বলন্ত আগুনকে সামনে নিয়ে আসে। যার কারনে তুমি দেখতে পাওনি আগুনটা কোনদিক থেকে জ্বলে। শুধু জ্বলন্ত আগুনটাই দেখেছ। আর হাতের মুঠোকে যেদিকে নিয়ে যাওয়া হবে আগুনটাও সেদিকেই জ্বলবে। তুমি হয়ত তখন খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলে। যার কারনে তুমি শুধু আয়নায় আগুন দেখেছ। ভালো করে খেয়াল দিয়ে দেখলে হয়ত তুমি আয়নাতেই সেই ছায়ামূর্তি দেখতে পেতে। অন্ধকারে যেকোন মানুষকেই ছায়ামূর্তি মনে হবে। আমি যদি অন্ধকারে তোমার রুমে ঢুকি তাহলে তুমি আমারও ছায়ামূর্তি দেখতে পাবে। তোমার গলায় হেডফোন ঝুলিয়ে রেখেছ। শার্টের কলারের সাথে হিয়ার স্পীকারটা দেখা যাচ্ছে। এটা দেখে আমার মনে হচ্ছে তুমি রাতে হেডফোনে গান শুনে ঘুমাও। আর হয়ত এই কারনেই তুমি কোন শব্দ পাওনি। ভেন্টিলেটর দিয়ে খুব সাবধানে নামা যায় শব্দ না করেই। কিন্তু লাইটার জ্বালাতে শব্দ হবেই। তোমার কানে হেডফোন থাকার কারনে তুমি সে শব্দ শোননি। আর জয় শাহরিয়ার নামে যে গায়কটার কথা বলেছিলে, তাকে নিয়ে তোমার যে ঘটনাটা বললে সেটা ছিল তোমার দুঃস্বপ্ন। তুমি তার প্রতি, তার গানের প্রতি একটু বেশি এডিক্টেড। আর তাছাড়া গত দুদিনের ভয় তোমার স্নায়ুকে একটু দুর্বল করে ফেলেছিল তাই এমন দুঃস্বপ্ন দেখেছ"।
আমি মেহতাব সাহেবের কথা মন দিয়ে শুনলাম। এমন একটা ঘটনা আমার সাথে ঘটবে আমি কল্পনাও করিনি। কে হতে পারে যে এমন কাজটা করবে। আমি সেটা চিন্তা না করে উনাকে আবার বললাম
- "আপনার সব কথাই আমি মেনে নিলাম। কিন্তু একটা কথা আপনাকে এখনো বলিনি। জয় শাহরিয়ার কে নিয়ে আমার ব্যাপারটা দুঃস্বপ্ন ছিল সেটা আমি মানতে পারলাম না। কারন ঘুম ভাঙ্গার পরে আমি আমার ডান কাঁধে ব্যথা অনুভব করি। যদি স্বপ্নই হত তাহলে আমি ব্যথা কেন অনুভব করব। আর তাছাড়া সেই রাতে স্বপ্নটা আমি একা দেখিনি। আমার আরো পাঁচজন বন্ধু দেখেছে। এর ব্যাপারে আপনি কি বলবেন"?
মেহতাব সাহেব আমার কথা শুনে গম্ভীর হয়ে রইলেন। মনে হচ্ছে তার যেসব ব্যাখ্যা ছিল সব ব্যর্থ হয়ে গেছে। তিনি অনেকক্ষন ধরে চুপচাপ বসে রইলেন। এই ফাঁকে তিনি একটা সিগারেট ধরিয়ে ফেললেন। তারপর বললেন
-- "আমার মনে হচ্ছে তুমি বেশ কিছু কথা আমাকে বলোনি। হয়ত তোমার কাছে সেসব তুচ্ছ। হতে পারে সেগুলো আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তোমার যদি এমন কোন তুচ্ছ বিষয় মনে থাকে তাহলে আমায় বল। আমার কাজে লাগবে হয়ত"।
আমি উনার কথা শুনে কিছু বুঝলাম না। তুচ্ছ তো অনেক বিষয় হতে পারে। আমি উনাকে এখন কি বলব। তারপরেও উনাকে সব বললাম। উনি আমাকে দিয়ে সেই তুচ্ছ বিষয়গুলো তিনবার বলালেন। তিনবারই তিনি আমার কথাগুলো মনযোগ দিয়ে শুনলেন। তারপর চুপ করে বসে কিসব যেন চিন্তা করছেন। আমি প্রায় বিরক্তই হয়ে গেলাম। ভাবলাম উনার থেকে বিদায় নিয়ে চলে যাব। ঠিক এমন সময় উনি বললেন
-- "তুমি আমাকে যেসব কথা এখন বলেছ সেগুলো আগেই বলা উচিত ছিল তোমার। আমি আগেই সব বুঝতে পারতাম। তোমার সাথে যে আগুন আর ছায়ামূর্তির ঘটনা ছিল সেটা তো বলেই দিলাম। বাকি রইল তোমার আর তোমার বন্ধুদের দুঃস্বপ্ন। এটাও খুব স্বাভাবিক। রাকিবের বার্থ ডে পার্টিতে সায়মন যে মধুর বোতল নিয়ে এল সেটা ছিল ধুতরা ফুলের মধু। আমরা সবাই জানি ধুতরা ফুল খুবই বিষাক্ত। আর এই ফুলের মধুর একটা বিশেষ গুণ আছে। বলতে পার মধুটা হল একটা হেলুসিনেটিং ড্রাগ। তোমরা যারা যারা এই মধু খেয়েছ তারা তারাই হেলুসিনেট করেছ। তোমরা যখন জয় শাহরিয়ার এর গান শুনছিলে তখন সায়মন যে মন্তব্যটা করেছিল সেটা তোমাদের মাথায় ঢুকে গেছে। যার কারনে তোমরা সবাই হেলুসিনেশনে পড়েছিলে। জয় শাহরিয়ার এর চুল এবং দাঁত বাস্তব জীবনে স্বাভাবিক থাকলেও তোমরা হেলুসিনেশনের মাধ্যমে ওর চুল এবং দাঁত বড় বড় দেখেছ। কারন সায়মন যেমনটা বলেছে তোমাদের মাথায় তেমনটাই ঢুকেছে। হেলুসিনেশন হল এক ধরনের ঘোর। এই ঘোরে থেকে তুমি যা দেখবে সবই তোমার কাছে বাস্তব মনে হবে কিন্তু আসলে সব নিতান্তই কল্পনা। যার কারনে স্বপ্ন ভেঙ্গে যাবার পরেও তুমি তোমার ডান কাঁধে ব্যথা অনুভব করেছ। বুঝতে পেরেছ এবার"?
আমি আবারো চমকে গেলাম। মেহতাব সাহেবের কথা শুনে আমি অনায়াসে বিশ্বাস করে নিলাম। আসলে এমনটা তো হওয়াই উচিত। আমি মেহতাব সাহেবকে বললাম
- "সায়মন তো সেই মধু খায়নি। তাহলে সে কেন হেলুসিনেট করবে"?
-- "সায়মন তোমাদের মিথ্যে বলেছে। সে হেলুসিনেট করেনি"।
- "আপনি এতটা বিশ্বাসের সাথে কীভাবে বলছেন"?
-- "সায়মনের সাথে তোমার তর্ক হয়েছিল। তুমি ভুত বিশ্বাস কর না। আর সে বিশ্বাস করে। এটা নিয়ে তর্কের সময় তুমি তার সাথে উত্তেজিত হয়ে কথা বলেছিলে। যার কারনে সে তোমাকে ভয় দেখিয়েছে। তোমার রুমে যার ছায়ামূর্তি দেখেছিলে সেটা সায়মনেরই ছিল। আর আগুনের ঝলকটাও সেই করেছে। যাতে তুমি ভুতে বিশ্বাস কর। আর সায়মন খুব ভালো করেই জানে যে, তুমি হেডফোনে গান শুনে ঘুমাও। তুমি ওকে ভালোভাবে জিজ্ঞেস কর। তাহলেই সব জানতে পারবে"।
.
এখন আমি সায়মনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। সায়মনের চোখ আমার চোখ বরাবর নেই। কথায় বলে, চোরের মন পুলিশ পুলিশ। সে বোধ হয় এতক্ষনে বুঝে গেছে যে, আমি সব জেনে ফেলেছি। আমি সায়মনকে বললাম
- "কিরে, আমি ভুতে বিশ্বাসী নই তাই বলে তুই আমাকে ভয় দেখাবি? কৌশলে সবাইকে ধুতরা ফুলের মধু খাইয়ে দিয়ে দুঃস্বপ্ন দেখিয়েছিস। সায়মন, এটা তো ঠিক না। যে যেটা বিশ্বাস করে তাকে সেটা বিশ্বাস করেই থাকতে দে। তুই যেটা করলি সেটা তো প্রতারণা। তুই আমার বন্ধু হয়েও এই কাজটা করতে পারলি"?
সায়মন কিছুক্ষন কোন কথাই বললনা। কোন রকম শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টাও করেনি। সে নিচু গলায় আমাকে বলল
-- "তোর সাথে যা করেছি তার জন্য আমি দুঃখিত। ব্যাপারটা মন থেকে ভুলে যাস। নাহলে আমাদের বন্ধুত্বের সমস্যা হবে। আর একটা ব্যাপার মাথায় রাখিস। পৃথিবীতে ভুত বলতে কিছু না থাকলেও জ্বিন অবশ্যই আছে। কারন স্বয়ং আল্লাহ পবিত্র কোরআন শরীফে বলেছেন, হাশরের মাঠে জ্বিন ও ইনসানের বিচার হবে। সেটাকে তুই অস্বীকার করিস"?
আমি সায়মনের কথায় চুপসে গেলাম। কোন উত্তর দিতে পারলাম না। আল্লাহ যেটা বলেছে সেটা নিঃসন্দেহে একশভাগ সত্যি। আল্লাহর উপর কারো হাত নেই। আমি কথাটা বিশ্বাস করে নিলাম। কারন আর যাই করি না কেন, আমি কখনোই নাস্তিক হতে চাইনা। (সমাপ্ত)
.
.
.
লেখক :- বিবাগী শাকিল
āĻāϞ্āĻĒ āϏংāĻ্āϰāĻš āĻāϰা āĻāĻŽাāϰ āύেāĻļা। āϰোāĻŽাāύ্āĻিāĻ, āĻৌāϤিāĻ, āϰāĻŽ্āϝ, āĻৌāϤুāĻ āϏāĻš āĻšাāĻাāϰো āĻāϞ্āĻĒ āĻāĻে āĻāĻŽাāϰ āϏংāĻ্āϰāĻšে।
āĻŦুāϧāĻŦাāϰ, ā§§ā§Š āϏেāĻĒ্āĻেāĻŽ্āĻŦāϰ, ⧍ā§Ļā§§ā§
1517
āĻāϰ āĻĻ্āĻŦাāϰা āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰা
Rahathossain1010100@gmail.com
āĻāĻ āϏāĻŽā§ে
ā§:ā§Ē⧍ AM

āĻāϤে āϏāĻĻāϏ্āϝāϤা:
āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝāĻুāϞি āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ (Atom)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ