"নির্বোধ এক অপরিচিতা"
.
.
এই ব্যস্ত নগরীতে সকালের শুরু থেকেই তীব্র রোদের রাজত্ব। প্রচণ্ড দাবদাহে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছে নগরীর সকল কর্মস্থলের প্রতিটি মানুষ। রোদের উষ্ণতায় ক্লান্ত হয়ে পড়েছে নগরীর রিক্সাচালক গুলো, তবুও তারা দমে যায়নি বিন্দু পরিমানও। জীবন যুদ্ধে যুদ্ধ করে যাচ্ছে অবিরত।
এই যান্ত্রিক শহর একটি যুদ্ধ ময়দান, অনেকের কাছেই যুদ্ধ ময়দান নামেই পরিচিত।
এই যান্ত্রিক শহরে জীবন যুদ্ধে ছুঁটে চলতে হয় সবাইকে, যে যতদ্রুত ছুঁটে চলতে পারবে সে ততদ্রুত জীবন যুদ্ধে জয়ের বন্দরে পৌঁছাতে পারবে।
ক্লান্ত হয়ে থমকে যাওয়া মানেই পিঁছিয়ে পরা।
.
অাজ বৃহস্পতিবার তাই অাজ হয়তো সবার ব্যস্ততা লান্চ টাইম পর্যন্তই সীমাবদ্ধ।
এখন সময় দুপুর দুটোর কাছাকাছি, এই সময়টায় সবাই নিজের কর্মস্থল থেকে ব্যস্ত হয়ে ক্লান্ত অবষণ্ণ শরীর নিয়ে নিজের বাড়ি ফিরছে।
অামি এই অবেলায় হাটছি এক ব্যস্ত হাইওয়ে ধরে। দুপুরে কোনো মানুষ সচারচর অকারণে হয়তো হাটাহাটি করেনা, তবে অামি করি। এর জন্য পাঠকগন অামাকে পাগলও ভাবতে পারে। তবে অামি পাগল নই, অামার ভাবনা এবং ইচ্ছে গুলো অপার্থিব।
যা সবার ভাবনা গুলো থেকে অামার ভাবনা গুলো ব্যতিক্রমী।
.
এই হাইওয়ের দুইপাশে তেমন কোনো মানুষ হাটাহাটি করেনা, তবে বলতে গেলে খুবই ব্যস্ত একটি রাস্তা।
এই রাস্তা দিয়ে তীব্র গতীতে গাড়ি গুলো ছুঁটে চলে নিজ গন্তব্যে।
রোদের প্রচণ্ড উত্তাপে চারপাশটা খা-খা করছে।
এই উষ্ণ পরিবেশে কানে হেট ফোন গুছে দিয়ে বেখেয়ালি মনে গান শুনতে অামার খুব ভালো লাগে, তাই গান শুনছি অার ভাবনাহীন মনে হাটছি।
প্লেলিষ্ট থেকে "Pain Change People" গানটি চলছে। ইংলিশ গানের তালিকায় এই গানটি অামার খুবই প্রিয়, গানটি বেশির ভাগই নির্জন যায়গা গুলোতে শোনা হয়।
অামার নির্জন যায়গার সঙ্গী অামার গান লিষ্টের সেড সং গুলো।
.
হাটতে হাটতে অামি একটি ব্রীজের কাছাকাছি চলে অাসলাম, যখন ব্রীজ ধরে হাটতে লাগলাম তখন হঠাৎ অামি থমকে দাড়ালাম, অামি দেখলাম ব্রিজের পূর্ব পাশে এক অপরিচিতা অানমনে দাড়িয়ে অাছে।
এই ব্রীজের নিচ দিয়ে একটি ছোট্ট নদী বয়ে গেছে।
এই নদীটির নাম অামি জানিনা, তবে অামি নদীটির একটি কাল্পনিক নাম দিয়েছি। নামঃ কালনী
যদিও নদীরটির সাথে এই নামের কোনো মিল নেই, তবুও অামার মনে হয়েছে এই নামটিই নদীটির জন্য সঙ্গত।
পাঁচ মিনিট ধরে চেষ্টা করছি রাস্তা পার হওয়ার জন্য। কিন্তু একের পর এক গাড়ি গুলো এমন ভাবে ছুঁটে অাসছে যে ভয়ে অামার পা এগোচ্ছেনা।
ওদিকে মেয়েটি নিচে কালনী নদীটির দিকে তাকিয়ে অাছে।
.
অতঃপর অামি রাস্তা পার হয়ে মেয়েটির সামনে গিয়ে দাড়ালাম, মেয়েটি অামাকে দেখে তার দৃষ্টিতে তীক্ষ্ণতার ছাঁপ ফুঁটিয়ে অামার দিকে তাকিয়ে অাছে। কেউ এখানে অাসবে হয়তো মেয়েটা অাশা করেনি।
অামার মনে কৌতূহল জাগলো, এই অবেহলায় প্রচণ্ড গরমে এই রাস্তার পাশে কেউ দাড়িয়ে থাকবে তাও অাবার কোনো এক মেয়ে। নিশ্চই এর কোনো কারণ অাছে!
অামি অামার কান থেকে হেডফোন খুলে পকেটে রেখে দিয়ে মেয়েটির অারেকটু সামনে এগিয়ে গেলাম।
.
-কি নদী দেখছেন?(অামি)
.
মেয়েটি কিছু বললো না, এমনকি পাশ থেকে কে কথাটা বলেছে সেটা দেখারও বিন্দুমাত্র প্রয়োজন মনে করলো না।
.
-জানেন এই নদীটির কিন্তু কোনো নাম ছিলোনা, তবে অামি একটি নাম দিয়েছি। শুনবেন কি সেই নাম?
.
এবারও মেয়েটির কোনো কর্ণপাত নেই, মেয়েটির দৃষ্টি সেই অাগের স্থানেই স্থির হয়ে থাকতো।
অামি ব্রীজের নিচে তাকাতেই দেখলাম বড় বড় কয়েকটা পাথর দেখা যাচ্ছে।
ভুলক্রমে যদি কোনো মানুষ এখান থেকে পরে যায় তাহলে মানুষটির দেহ পাথের অাঘাতে একদম থেঁতলে যাবে।
.
-কি আত্মহত্যা করবেন ভাবছেন নাকি?
.
এবার মেয়েটি পূর্ণ দৃষ্টি নিয়ে অামার দিকে তাকালো, অামি লক্ষ করলাম মেয়েটির দৃষ্টিতে তীক্ষ্ণতার ছাঁয়ায় অন্ধকার হয়ে অাছে।
অামি বিভ্রান্তিকর একটি হাসি দিয়ে মেয়েটিকে বিচলিত করার চেষ্টা করলাম।
কিন্তু কি অাশ্চর্য! মেয়েটি একটুও বিচলিত হয়নি। উল্টো অামাকেই বিভ্রান্ত করে দিলো!
.
-আত্মহত্যা করি কিংবা না করি অাপনি জিজ্ঞেস করার কে?
.
মেয়েটি অনেকটা রাগান্বিত স্বরে কথাটা বললো
.
-নাহ্ মানে অামি একজন মানুষ! তবে যদি সত্যিই আত্মহত্যা করতে চান তাহলে অামি অাপনাকে একটি ভালো পরামর্শ দিতে পারি
.
মেয়েটা কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলো "কি পরামর্শ?"
.
-অামি জানি অাপনি এখান থেকে লাফ দিবেন ভাবছেন, তবে এখান থেকে লাফ দিলে অাপনার কিছুই হবেনা।
.
-মানে?
.
-মানে এখান থেকে লাফ দিলে মরার চান্স একদমই অনুচ্চ, অামার কথা মত যদি চেষ্টা করেন তাহলে ১০০% গ্যারান্টি অাপনি মরবেন
.
কথাটা বলেই অামি ফিক করে হেসে দিলাম, এবারের হাসিটা কাজে লেগেছে।
অামার হাসিটা মেয়েটিকে বিভ্রান্ত করতে সক্ষম হয়েছে
.
-বলেন কি করতে হবে
.
-অাপনি এই হাইওয়ের মাঝ রাস্তায় দুই হাত প্রসারিত করে চোখ দুটো বন্ধ করে নিজেকে প্রকৃতির মাঝে বিলিয়ে দিয়ে হাটতে থাকবেন।
.
মেয়েটা চোখ দুটো বড় করে জিজ্ঞাস করলো "তারপর"
.
-তারপর অার কি? পরের অংশ টুকু অাপনিই বুঝতে পারবেন
.
-মানে?
.
-মানে কোনো বাস বা লরি এসে অাপনাকে রাস্তায় চেপটা করে দিয়ে চলে যাবে তারপর অাপনি অাপনার গন্তব্যে পৌঁছে যাবেন।
.
.
কথাটা বলেই অামি হো হো করে হাসতে শুরু করলাম, অামার কথা শুনে মেয়েটিও হাসা শুরু করেছে।
নাহ্ অনেক মজা করেছি, এবার সিরিয়াস হওয়া দরকার।
.
-অাচ্ছা একটা কথা বলুন তো (অামি)
.
-কি?
.
-অামি জানি অাপনি আত্মহত্যা করার জন্য এখানে এসেছেন। যদি অামি না অাসতাম তাহলে হয়তো এখান থেকে লাফ দিয়ে নিজেকে শেষ করে দিতেন।
কিন্তু একটা বিষয় জানার জন্য অামার মনের মাঝে কৌতূহল জাগলো
.
-কি বিষয়?
.
-কি এমন কারণ? যার কারণে অাপনি অাপনার এই সুন্দর জীবনটি অার রাখতে চান না? কেন এই সুন্দর পৃথিবী থেকে চলে যেতে চাইছেন?
.
হঠাৎ করেই অাকাশের মেঘের মত মেয়েটির মুখে বিষণ্ণতার ছাঁয়া জমতে শুরু করলো। কিছুক্ষণ পর হয়তো বৃষ্টির মত অশ্রুবর্ষণ শুরু হবে।
.
-কি হলো বলুন?
.
মেয়েটা অনেক সময় নিয়ে একটি দ্বীর্ঘশ্বাস নিলো, তারপর বলতে লাগলো
.
-অারিয়ান নামক একটি ছেলেকে অামি খুব ভালোবাসতাম, অামাদের রিলেশনের শুরু হয়েছিলো অামার এস.এস.সি পরিক্ষা চলাকালীন।
অারিয়ানকে অামি যতটা বিশ্বাস করতাম, ততটা বিশ্বাস করিনি অামি অামার নিজের পিতা-মাতা কে।
গত শুক্রবার অামাদের রিলেশনের চার বছর পূর্ণ হলো।
সেদিন বিকেলে অারিয়ান অামাকে ফোন করে তার বন্ধুর বাসায় অাসতে বলে।
.
অামি অনেক অাগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম "ফোনে কি বলেছিলো?"
.
-ফোনে বলেছিলো অামাদের রিলেশনের চার বছর পূর্ণ হওয়ায় অারিয়ান কেক কাটবে, সাথে নাকি তার বোন নুসরাতও থাকবে।
নুসরাত অামার পরিচিত, অামরা একই ভার্সিটিতে পড়ি।
নুসরাত থাকবে তাই অামি নির্ভয়ে সেদিন ওখানে গিয়েছিলাম।
.
মেয়েটি থামলো, অামি পকেট থেকে একটি গোল্ডলিপ সিগারেট ধরালাম।
দুটো টান দিয়ে অাবার জিজ্ঞেস করলাম "তারপর?"
.
-অামি অারিয়ানের বন্ধুর বাসায় যখন উপস্থিত হলাম তখন তার বোন নুসরাত সেখানে ছিলোনা। অারিয়ান অামাকে মিথ্যা বলেছিলো।
সাথে সেদিন অারিয়ান অামার সব বিশ্বাস ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে, সাথে তার পশুত্ব টা অামাকে দেখিয়ে দিয়েছে। সেদিন ওরা দুই বন্ধু মিলে অামাকে ভোগ করার একটা চেষ্টা করেছিলো কিন্তু অামি নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছি
.
-ওপপস! এর জন্য অাপনি আত্মহত্যার মত একটি জঘন্য পথ বেছে নিলেন?
.
-হ্যাঁ
.
-কিন্তু অাপনি তো সেদিন অক্ষত অবস্থায় ফিরে এসেছেন। নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছেন!
তাহলে কেন এই আত্মহত্যার মত একটি জঘন্য পথ অাপনি বেছে নিলেন?
.
-যে পৃথিবীর মানুষ গুলো স্বার্থপর সে পৃথিবীতে বেঁচে থাকা অামার পক্ষে দুস্কর।
.
-তার মানে অাপনি বলতে চাচ্ছেন অাপনার জন্মদাতা পিতা এবং অাপনার মাতা তারাও স্বার্থপর?
.
মেয়েটা ভুরু কুঁচকে অামার দিকে তাকিয়ে বললো "তারা কেন স্বার্থপর হবে?"
.
-না মানে তাহলে নিশ্চই অাপনার বাবা মা এই পৃথিবীতে বাস করেন না।
তবে একটি কথা অামি অাপনাকে বলতে চাই, পৃথিবীর সব মানুষ সমান নয়। একটা কথা প্রচলন হয় "পৃথিবীর সব ছেলেরা যেমন ভালো নয় ঠিক তেমনি পৃথিবীর সব মেয়েরাও ভালো নয়।
অাপনি খেয়াল করুন এই উক্তটিতে বলা হয়েছে সবাই ভালো নয় কথাটা, কিন্তু সবাই খারাপ কথাটি বলা হয়নি। অার এই উক্তটিই বাস্তবিক।
.
-উক্তিটি কার?
.
অামি মাথা নিচু করে বললাম "অামার"
তারপর মেয়েটি কিছু বললো না, অামার থেকে দৃষ্টি অাড়াল করে নিলো। অামি অাবার বলতে শুরু করলাম।
.
-অাপনার বয়স এখন কম করে হলেও অাঠারোর কাছাকাছি।
অাপনি কি জানেন এই অাঠারো বছর ধরে অাপনার বাবা অাপনাকে বড় করার জন্য কত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন?
অাপনি কি জানেন অাপনার জন্য অাপনার মা কতরাত নির্ঘুমে পার করেছেন?
.
মেয়েটি নিশ্চুপ, তবে অামি নই
.
-এখন অাপনি যদি এখান থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেন অার সেই খবরটা অাপনার বাবা মা যখন শুনবে তখন তাদের কি অবস্থা হবে?
অাপনাকে ঘীরে তাদের সব স্বপ্নের কি হবে? স্বপ্ন ভাঙ্গার কষ্ট অামি নিশ্চই বুঝবেন।
তবে অামার মনে হয় এখন হয়তো অাপনি বুঝবেন না, কিন্তু যখন মা হবেন তখন নিশ্চই বুঝবেন যে সন্তানের জন্য মা এবং বাবা কতটা পরিশ্রমী হন। এবং নিজের সন্তানকে কতটা ভালোবাসেন।
তাছাড়া একটা স্বার্থপরের জন্য অাপনি আত্মহত্যা কেন করবেন?
কোথায় সেই স্বার্থপরকে অাপনি একটি উচিত শিক্ষা দিবেন সেটা না করে অাপনি মরতে এসেছেন।
.
মেয়েটির চোখ মুখে এবার স্বস্তিকর একটি অালো ফুঁটে উঠলো।
মনে হচ্ছে মেয়েটি তার ভুল বুঝতে পেরেছে।
অামি অাবার কানে হেডফোন দিয়ে মেয়েটিকে কিছু না বলেই হাটা শুরু করলাম।
কিন্তু মেয়েটিও অামার পিছু পিছু অাসা শুরু করলো।
কিছুদূর যাওয়ার পরই মেয়েটি বললো
.
-এইযে মিঃ
.
-হুঁ অাপু বলুন
.
-যদি কিছু মনে না করেন অাপনার ফেসবুক অাইডিটা পেতে পারি?
.
অামি মুচকি হাসি দিয়ে কিছু না বলেই অাবার হাটা শুরু করলাম।
মেয়েটি এবার তীক্ষ্ণস্বরে বললো
.
-ফেসবুক অাইডি চেয়েছি এতে ভাব নেয়ার কি অাছে?
.
অামি অাবারও হাসলাম, তারপর বললাম Painboy.71 লিখে সার্চ দিলেই অাইডি পেয়ে যাবেন।
মুহূর্তেই মেয়েটির মুখে উৎফুল্লতা ফুটে উঠলো।
অামি হাটছি, খুব ক্ষিদে লেগেছে। বাসায় ফিরে গোসল করে খেয়ে একটা ঘুম দিতে হবে।
.
সমাপ্ত।
.
লেখাঃ Arif Mahamud
(Silent Writer)
āĻāϞ্āĻĒ āϏংāĻ্āϰāĻš āĻāϰা āĻāĻŽাāϰ āύেāĻļা। āϰোāĻŽাāύ্āĻিāĻ, āĻৌāϤিāĻ, āϰāĻŽ্āϝ, āĻৌāϤুāĻ āϏāĻš āĻšাāĻাāϰো āĻāϞ্āĻĒ āĻāĻে āĻāĻŽাāϰ āϏংāĻ্āϰāĻšে।
āĻŦুāϧāĻŦাāϰ, ā§§ā§Š āϏেāĻĒ্āĻেāĻŽ্āĻŦāϰ, ⧍ā§Ļā§§ā§
1482
āĻāϰ āĻĻ্āĻŦাāϰা āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰা
Rahathossain1010100@gmail.com
āĻāĻ āϏāĻŽā§ে
ā§Š:ā§Ģā§Ļ AM

āĻāϤে āϏāĻĻāϏ্āϝāϤা:
āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝāĻুāϞি āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ (Atom)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ