গল্পঃ বিবাহ
.
রাজিব বাবু বিবাহকার্য সম্পূর্ণ করিয়া ফেলিয়াছেন। লেবু বাবু আর সহিতে পারিতেছে না। তাহার নাম লেবু বাবু নহে। নাম মোঃ লিয়াকত বাবর উসমান। তাহার কর্মকাণ্ডের দণ্ডে তাহাকে গ্রামের প্রত্যেকে এই নামেই চিনিয়া থাকে। তাহার পিতা রমজান আলী উসমান। কৃপণ কত প্রকার ও কী কী তাহাকে না দেখিলে বুঝাই যাইবেনা। লেবু বাবুর দুইখান সঙ্গী রহিয়াছে। বাদাইম্ম্যা কিরূপ হইতে পারে তাহাদের না দেখিলে বুঝাই যাইবেনা। সাপ ওরফে আজাদ শেখ। আজাদ বাবু সাপে অত্যন্ত ভয় পাইয়া থাকেন। তাহাকে তিন তিনবার সাপে কামড়াইয়াছিল যেই অজুহাতে তাহার নাম সাপ হইয়া গিয়াছে। ফুটবল ওরফে আরমান ভূঁইয়া। দীবস তথাপি রজনী বলিতে তাহার ডায়েরীতে সব শব্দই শুন্য। আল্লাহ্র দান প্রতি প্রহরেই তাহার খাদ্য লাগিবে। খাওয়া অপেক্ষা তাহার মদীয় এবং কিছুই প্রসার নহে। দ্বি-প্রহরে পরন্ত রৌদ্রে বসিয়া তাহারা ভাবিতে লাগিল। বিবাহ তাহাদের করিতেই হইবে এবং নিতান্ত অবিলম্ববে। লেবু বাবু গত কয়েকমাস ধরিয়া আলু ওরফে আলেয়া আক্তারের সহিত প্রেমগিঁট বাঁধিতে চাইতেছে। তবে আলেয়া আক্তার চুল পরিমাণও পাত্তা না দিয়া চলিয়াছে। দেবদাস দেবদাস ভাব লইয়া বিবাহ করিতে চাইতেছে। বাঁধা হইতেছে তাহার বাবা রমজান আলী উসমান। পয়সা-গহণার বিয়োগ একেবারেই নাহি। তথাপি তাহার একমাথ পুত্রকে বিবাহ করাইতে নাহি চান। লেবু বাবু মানবিকে মেট্রিক উত্তীর্ণ হইয়াছিল সেই দ্বাদশ বছর পূর্বে। লেবু বাবু বিবাহ অতি লগ্নে করিতে চাইতেছে দুই কারণে। প্রথমত বিবাহ করিয়া আলুকে দেখাইয়া দেয়া। দ্বিতীয় রাজিব বাবুর সম্মুখ দিয়া বধূ লইয়া হাঁটিবার জন্য। রাজিব বাবু এইসময়ে তাহার বধূ লইয়া সম্মুখ দিয়া অগ্রসর হইয়া যায়। দুঃখে লেবু বাবুর বুক ফাটিয়া চৌচির হইয়া যায়। স্থির করিল কিঞ্চিৎ হইলেও কিছু করিতে হইবে। ফুটবলকে লইয়া পিতার সম্মুখে দাঁড়াইয়া রোদন করিয়া করিয়া বুক ভাসাইয়া ফেলিয়াছে তথাপি পিতার হৃদয় নাহি কোমল হইয়া উঠিবার চায়। ফুটবল লেবুর পিতার হস্তে টাকা দেখিয়া লোভ না সামলাইতে পারিয়া বলিয়া বসিল ' উসমান চাচা আমাকে পাঁচটা টাকা দিবার পারিবেন? এহ হইয়াছে কি প্রভাত হইতে কিছু গলার নিচ দিয়া নামেনি। সাধনদার বিপণি হইতে বিস্কিট কিনিয়া খাইতাম আরকি ' দন্ত ক্যালাইয়া ক্যালাইয়া বলিল ফুটবল। লেবু বাবু অগ্নিমূর্তি হইয়া জোর করিয়া দিয়া বসিল ফুটবলের গালে থাপ্পড় পিতার সম্মুখে। পিতা লম্বা ধমক দিয়া দৌড়াইয়া গৃহবিয়োগ করিল তৎক্ষণাৎ। মাসকয়েক পরের কথা। লেবু বাবুর প্রেম হইয়াছে এক রমণীর সহিত। লেবু বাবু প্রতিদিন লুকাইয়া লুকাইয়া রমণীর সহিত দেখা করিতে যায় বটগাছ তলায়। আলতা হইতে শুরু করিয়া সনু পাউডার সর্বস্থ দিয়া ফেলিয়াছে রমণীকে। সন্ধ্যা হইবে হইবে ভাব। লেবু বাবু রমণীর জন্য দাঁড়াইয়া রইয়াছে। কিয়ৎক্ষণ পার রমণী আসিয়া লেবু বাবুর হস্তে রমণীর বিবাহের কার্ড ধরাইয়া দিয়া চলিয়া গিয়াছে। বলিয়া গিয়াছে এতদিন যাহা করিয়াছে সবই সময় পার করিবার জন্য। লেবু বাবু সেইখানেই অজ্ঞান হইয়া পরিয়া যায়। রমণী লেবু বাবুকে বিবাহের স্বপ্ন দেখাইয়াছিল। দেবদাস পূর্ণ জীবনে আলো বাতাস আনয়ন করিবার পূর্বাভাস দিয়াছিল। এই মুহুর্তে সবই মাঠি হইয়া গিয়াছে লেবু বাবুর। লেবু বাবুর দুঃখের দিন পার হইল। আলেয়া আক্তার তাহার প্রেমে রাজি হইয়াছে। লেবু বাবু সব ভুলিয়া যাইয়া আলেয়া আক্তারের সহিত বিবাহের স্বপ্ন দেখিতে লাগিল। কিন্তু বেশিদিন এই সুখ কপালে সহিতে নাহি চায়।
...
তাহার বন্ধু সাপের সহিত পলায়ন করিয়াছে আলেয়া। লেবু বাবু নিতান্ত মরে মরে ভাব। সারাবেলা খাইয়া উঠিতে পারেনা। পিতাকে বলিয়াছিল ' পিতা আমি আত্মহত্যা করিব ' পিতা সাধনের বিপণি হইতে মোটা রশি আনিয়া লেবু বাবুর হস্তে ধরাইয়া বলিয়াছিল ' আমি কি তোমাকে সাহায্য করিতে পারি পুত্র?' সেই হইতে লেবু বাবুর জ্বর। বহুমাত্রার জ্বর। বহুজাতের ডাক্তার কবিরাজ দেখাইয়াছে পিতা তবুও লেবু বাবু সুস্থ হইয়া উঠিতেছেনা। অবশেষে পিতা বিবাহ করাইবে বলিয়াছে। তারপরে দুইদীবস পার হইবার পরে লেবু বাবু সুস্থ হইতা উঠিতেছে। লেবু বাবুর জন্য একেরপর এক পাত্রী দেখিতে ব্যাস্ত হইয়া পরিয়াছেন পিতা। বহু বালিকা দেখিয়া এক বালিকা পছন্দ করিলেন পিতা। লেবু বাবুকে বলিলে লেবু বাবু খুশীতে নাচিতে পারিয়া উঠিয়াছিলনা মাত্র। অদ্য লেবু বাবুর বিবাহ। শানাই বাজিয়া উঠিয়াছে। নাচিতে নাচিতে পাত্রীদের উঠানে উপস্থিত হইয়া গিয়াছে পাত্রপক্ষ। কিয়ৎক্ষণ পর সংবাদ আসিল পাত্রী তাহার প্রেমিকের হাত ধরিয়া পলায়ন করিয়াছে। এই সংবাদ শুনিয়া লেবু বাবু মাথা ঘুরাইয়া পরিয়া গিয়াছে। তাহার মাথায় পানি ঢালিতে ঢালিতে মানুষের প্রাণ যায় তবুও লেবু বাবু চক্ষু খুলিয়া উঠেনা। বহু চেষ্টার পর লেবু বাবুর চক্ষু খুলিয়াছে। তবে লেবু বাবুর জ্বর পুরানোমাত্রা ধরিয়াছে। পিতা ব্যস্ত হইয়া ঘটক লাগাইয়া দিয়াছেন। ঘটক দুই মাস পর এক অস্পরীর সন্ধান মিলাইয়া দিয়াছেন। বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করিতে নহে এইবার একেবারেই পাত্রী দেখিয়াই বিবাহ করাইয়া লইয়া আসিবেন বলিয়া রওনা দিয়াছেন পিতা লেবু বাবুকে লইয়া। লেবু বাবু মনে মনে বলিতেছে ' এইবার বধূ লইয়াই বাড়ি ফিরিব হিহি ' পাত্রীদের বাড়ির উঠানে বসিয়া রইয়াছে লেবু বাবু সহিত তাহার পিতা। কিয়ৎক্ষণ পার পাত্রী আসিয়া ঘোমটা খুলিল। এত সুন্দরী রমণী কোনদিন দেখিয়াছিলেন না পিতা। পাত্রী দেখিয়া পিতার বিবাহের স্বাদ পাইয়া গিয়াছে। লেবু বাবুর জননী নেই দের-যোগ হইয়াছে। সেইজন্য পুত্রের পরিবর্তনে পিতাই বিবাহ করিয়া বসিল। লেবু বাবু তৎক্ষণাৎ অজ্ঞান হইয়া পরিয়া মনে মনে বলিল ' আল্লাহ পিতা যেন বাসর ঘরে প্রবেশ করিবার পূর্বেই স্ট্রোক করিয়া মরিয়া যায় ' |
Siam Ahmed Joy
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ