3534

❤️❤️হতভাগা সেই ছেলেট❤️❤️

💐ইডিয়েট বয়💐

কলেজে আজ দুইটা ক্লাস হয়নি।ক্যাম্পাসের কাঠালতলায় সবাই আড্ডা দিচ্ছে। তারাতারি করে ব্যাগ খানা হাতে নিয়ে ক্যাম্পাসের বাইরে হাটছে রনি। ক্লাসে বন্ধু কেউ নেই। একটু সবার চেয়ে আলাদা বাকিটা নিজের মত।
ঠিক পিছন থেকে এইযে শুনছেন হেলো আপনাকে ডাকছি। পিছন ফিরে তাকাল রনি। ক্লাসের সেই মেয়েটা সব থেকে সুন্দরি রিপা। ক্লাসে বারবার রনির দিকে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে থাকে।
জী আমাকে বলছেন!
এখানে আর কেউ কি আছে?
জী বলুন!
ক্লাসের সবাই আড্ডা দিচ্ছি আর আপনি ব্যাগ হাতে নিয়ে চম্পেট মারছেন অ্যা..।
জী.. মানে… মানে আমার কাজ আছে যেতে হবে। বলেই চলে গেল রনি।
কি ছেলে রে বাবা আমি মেয়ে হয়ে তাকে যেছে কথা বললাম আর ধ্যাত কি জন্য যে বলতে গেলাম। আরও কিসব বিড়বিড় করতে করতে আবার সেই কাঠালতলায় ফিরলো রিপা।
কিরে রিপা দলে ফেরাতে পারলি বলদ টাকে এভাবেই রিনা, মিতা,টুম্পা সবাই বলছে আর হাসছে। ধ্যাত আসলেই একটা বলদ। বলে কিনা কাজ আছে উহঃ আর পাড়ি না। মনে হয় আমার দ্বারা হবে না রে এভাবেই বলছে রিপা। তোরা থাক আমিও যাই বলেই ক্যাম্পাস থেকে বাড়ির দিকে গেল রিপা।
পরদিন খুব সকালে ক্যাম্পাসে আসলো রিপা। সে জানে সবার আগে রনিই কলেজে আসে। গেটের কাছে দাঁড়িয়ে আছে রিপা। তখনো কলেজ খুলেনি। কিছুক্ষন পর দেখলো সেই শার্ট আর প্যান্ট পরে ঘাড়ে ব্যাগ নিয়ে হেটে আসতেছে রনি।
গেটের কাছে আসতেই রিপা বলল এইযে মিষ্টার রনি আপনার চশমাটা ঠিক জায়গায় নেই। চোখে চশমা পড়ে না রনি ।তারপরও কিছু না বলে গেটের দরজা ঠেলতে গেল রনি।
শুনুন গেট এখনো খুলে নি (রিপা)
সত্যি তো গেটে তালা ঝুলানো। এবার মুখ খুলল রনি তাহলে আজ কি কলেজ বন্ধ বলুনতো। না কলেজ বন্ধ নয় বাড়ি থেকে কি সময় দেখে বেড়োন না.. দেখি হাতেও তো ঘড়ি নেই। এত সকালে কি কলেজ খুলে। বলেই উত্তরের আসা করছে রিপা।
হুম সত্যি আমি না সময় দেখে আসি নি আমাকে বলবেন কয়টা বাজে।
এখন ৮:৩০.. কলেজ খুলবে নয় টায় । চলুন ওই বেঞ্চিটাতে গিয়ে বসি। রনি বলল না থাক আপনি গিয়ে বসেন আমি এখানেই অপেক্ষা করি। এবার আর কথা না বাড়িয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে রিপা বলতে শুরু করলো .. আপনি এমন করেছেন কেন আমাদের ক্লাস শুরু হওয়ার এককমাস হল আপনি কারো সাথে কোন কথা বলেন না, সেই এক শার্ট, এক প্যান্ট পড়ে কলেজে আসেন, কোন ছেলের সাথে আপনার বন্ধুত্ত নেই।হাতে কোন ফোন উহঃ ফোন বলছি কেন হাতে ঘড়িও নেই, আমরা সরি আমি কথা বলতে গেলে ইগনোর করে চলে যান এত ভাব কিসের আপনার অ্যা…।
রিপার কোন কথার উত্তর দিল না ঠায় দাঁড়িয়ে শুধু মাথা নিছ করে আছে রনি।
কি? কথার উত্তর দিচ্ছেন না কেন আর একটা কথা আমি তোমাকে সরি আপনাকে ভালবাসি। আপনার নিরবতা আর মায়াবি চেহারা আমাকে ভাল্লাগে তাই প্রতিদিন ক্লাসে আপনার দিকে চেয়ে থাকি।
এবারও মাথা নিচ করে সেভাবেই দাঁড়িয়ে রইলো রনি। একটা কথাও মুখ দিয়ে বেরুলো না।
এতক্ষনে কলেজের গেট খুলেছে তাই আর সেখানে দাড়ালো না রনি সোজা ক্লাসে গিয়ে বই খুলে পড়তে শুরু করলো। আর কোন উপায় না দেখে রিপাও ক্লাসে গিয়ে বিষন্নভাবে বসে পরলো।
কিছুদিন পর..
বিকেল বেলা বাবা মায়ের সাথে ট্রেনে চড়ে খালার বাসায় যাচ্ছে রিপা। সেই বগিতে এক ছেলে ডালা মাথায় নিয়ে হাক ছাড়লো বাদাম আছে দেশি বুট কাবলি বুট….. ইত্যাদি…..।রিপাদের সিটের কাছে আসতেই রিপা যেই না বলবে ৫ টাকার দেন সে অবাক আরে রনি। রনিও তাড়াতাড়ি করে পিছনের দিকে হাটতে একটু জোরেই গেটের কাছে আড়াল হতে বৃথা চেষ্টা করল। তার ঠিক পিছনেই হাজির রিপা।
কিছুক্ষন চুপ থাকার পর এবার রনি বলতে শুরু করল। জেনেই যেহুতু গেছেন আর লুকাবো না। হ্যা আমি এই ট্রেনে ফেরি করি বিকাল থেকে রাত অব্দি। আর রাতে স্টেশনের ফ্লোরে ঘুমাই, সকাল হলে কলেজে যাই পাশের হোটেল হতে দুটো ডাল পুড়ি খেয়ে। স্টেশনের ঘড়িখানা অচল তাই সময় মেপে কলেজে যেতে পাড়িনা প্রতিদিন আগে গিয়ে কলেজের গেটে তালা ঝুলানো দেখি। এই শহর আমাকে সব দিয়ে কেড়ে নিয়ে নিয়েছে। এস এস সি তে A+ পাওয়ার পর বাবা মায়ের ইচ্ছে ছেলেকে ভাল কলেজে পড়াবে তাই গ্রামের ভিটামাটি বেচে বাবা, মা আর ৫ বছরের ছোট বোন সহ এই শহরে আসি। ছোট্ট একটা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতাম। কলেজে ভর্তিও হলাম বাবা মায়ের সপ্ন পুরন করবো বলে।বাবা এখানে শ্রমিকের কাজ করতো। একদিন সবাই মিলে পার্কে ঘুরতে বেড়িয়েছিলাম পথে ছোট বোনটা বায়না ধরলো আইস্ক্রিম খাবে। আমি দৌড়ে গিয়ে দুটো আইস্ক্রিম কিনলাম একটা ছোটবোনের জন্য আর একটা আমার জন্য। কিন্তু সেই আইস্ক্রিম আর কারওরেই খাওয়া হল না। এসে দেখি বাবা, মা ছোটবোন সবাই রাস্তায় শুয়ে আছে আর স্রতের বেগে রক্তে লাল হয়ে যাচ্ছে রাস্তাটা।
তারপর আমার ঠিকানা হয় এই স্টেশন আর ট্রেন। বাবার একটা মাটির ব্যাংক ছিল সেটা ভেংগে আমার এই ব্যাবসা ভিক্ষা করতে পারবো না বলে। বাবার কিনে দেওয়া সেই শার্ট প্যান্ট ছাড়া আর ভাল কোন কলেজে পড়ে যাওয়ার মত কাপড় নেই। আর ব্যাগটা হাই স্কুলের কলেজে ভর্তির পর একটা ভাল কলেজ ব্যাগ কিনে দিতে চেয়েছিল বাবা কিন্তু বই কিনে দিতে গিয়ে আর ব্যাগ কেনাটা হয় নি।
ক্লাসে কারও সাথে কথা বলি না কেন জানেন কারও সাথে বন্ধুত্ব হলে তাকে খাওয়াতে হবে তার সাথে মিশতে হবে তার মত হতে হবে। কিন্তু সে সাধ্য আমার নেই তাই কারও সাথে মিশতে পাড়ি না।
সেদিন আপনার কথার উত্তর দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু পাড়ি নি ভিতর থেকে কেউ যেন বারণ করছিল। আর ভালবাসা আমাদের মত ছেলেদের জন্য নয় রিপা।যার নিজের কোন ভবিস্যত নেই সে কিভাবে অন্যকে সুন্দর ভবিস্যতের সপ্ন দেখাবে বলুন। তাই অযথা আপনার মত সুন্দরি মেয়েকে নিজের সাথে জড়াবো না।
ভাল থাকবেন সাম্নের স্টেশনে আমাকে পরের বগিতে উঠতে হবে। এবার রনি লক্ষ করলো রিপার চোখ দিয়ে পানির ঝরনা বইছে। রনি কি বলবে কি করবে আর ভেবে পাচ্ছে না। রিপার মুখেও কোন কথা নেই সুধু কেদেই চলছে। এভাবেই চলে এল স্টেশন রনি সেই বগি হতে নেমে পরের বগিতে চলে গেল।।
।
পরেরদিন সকালে সুন্দর একটা শার্ট, প্যান্ট আর কলেজ ব্যাগ নিয়ে কলেজের গেটের সামনে অপেক্ষা করছে রিপা। রনি কে সে আজ তার সব কিছু জেনেই ভেবেই ভালবাসবে তার পড়াশুনার সব ব্যায় সে নিবে। বেলা বাড়িয়ে গেল এতক্ষনে কলেজের গেটও খুলেছে তারপরও আসছে না রনি।
শুধু সেদিন নয় আর কোনদিন দেখা পায় নি রনির। খুজেছে সেই স্টেশনেও তারপরও কেউ রনির খোজ দিতে পারে নি…