রহস্যময় মন্দির
পর্ব-৫ (শেষ পর্ব)
মঞ্জুরুল করিম
রহিম মিয়া,,, মন্দিরের সেই সাজানো-গোছানো কক্ষে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলেন। এদিকে "ফহিম" সহ বাকি সবাই ভয়ে হিসু করে দেবার মতো অবস্থা। কারো মুখে কোন কথা নেই।সবাই মৃত রহিম মিয়ার ফিরে আসা নিয়ে চিন্তিত। সেদিন রাতে সবাই মন্দির থেকে বাড়িতে ফিরে আসে।
দীপু তখনো ঘুমুচ্ছে। রাত প্রায় ৩টা বাজে। যদিও এখন সবার প্রচুর ঘুমের দরকার কিন্তু ভয়ে কারোরই ঘুম আসছেনা। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফজরের আযান শুনা যায়। এবার সবাই ঘুমিয়ে পড়ে।
ভোরে সবার আগে দীপুর ঘুম ভাঙে। কারণ গতরাতে দীপু মন্দিরে ছিলনা। এবার সে সবাইকে জাগিয়ে তুলে। ফাহিমের কাছ থেকে দীপু গতরাতের সব কাহিনী শুনতে পায়। "অর্ণব "গত রাতে মন্দিরে ছিল,,, তার মানে অর্ণব নিখোঁজ হয়নি সে নিখোঁজ হবার নাটক করছিল এতদিন ধরে। কিন্তু,,, অর্ণবের মা কেনো সবাইকে বলে বেড়াচ্ছেন অর্ণব নিখোঁজ?? তাহলে কি অর্ণবের "মা",,তার ছেলের নিখোঁজের ঘটনা নিয়ে মিথ্যা গুজব ছড়াচ্ছেন??? কিন্তু,,, তিনি কেনো এমন করবেন???এর কোন জবাব নেই কারো কাছে।
সারাটা দিন সবার খুবই চিন্তায় আর শংকায় কাঠলো। কারোর মনে এই রহস্যের কোন সমাধান নেই। বিষয়টা আস্তে আস্তে কেমন যেনো ঘোলাটে আর জগাখিচুড়ি হয়ে যাচ্ছে।
ফাহিম,,সকলের নিরবতা ভেঙে দিয়ে বলতে আরম্ভ করে,,,,
""এই মন্দিরটা হচ্ছে অনেক পুরনো মন্দির। বলতে গেলে ২০০-৩০০ বছর বা তার চেয়ে বেশি সময়ের আগের তৈরী এই মন্দিরটি। যার মানে এটা দাঁড়ায় এটা কোন সাধারণ মন্দির নয়।তাছাড়া এর কারুকার্য ও ভিতরের স্থাপনা গুলো হচ্ছে অনেক পৌরাণিক। এই পুরো মন্দিরটি হচ্ছে একটি অতুলনীয় শিল্পের সমারোহ।যার মানে এটা দাঁড়ায় যে,,, এটা কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি হতে পারে না। আর কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি হলেও এটা সরকারের বাজেয়াপ্ত করে নেয়ার কথা কিন্তু সেটা হয়নি।
কেউ একজন আছে যে,,,চাচ্ছে এই মন্দিরটি সকলের অগোচরে থাকুক বা এই মন্দিরের কথা যেনো বাহিরে ফাঁস না হয়ে যায় অথবা এই মন্দির নিয়ে সকলের ধারণা এমন হোক যেনো সবাই ভাবে এই মন্দিরটি ভৌতিক। কিন্তু কে হতে পারে এই ব্যক্তি??? এর কোন জবাব কারো কাছে নেই।
তবে ফাহিম ,,, "অর্ণবের" লেখা সেই ডায়েরিটা আবার খুলে দেখে,,,,,প্রথম থেকে ডায়েরিটা আবার পড়তে শুরু করে।পুরো ডায়েরিটা নতুন করে পড়ার পর ফাহিমের ধারণা পুরো বদলে গেলো। এই ডায়েরিটায় ৩টা মৃত্যুর কথা উল্লেখ ছিলো। অর্ণবের,,, পিতামহের পিতা,,, পিতামহ এবং তার কাকা মন্দির ঘটিত কারণে মারা গিয়েছিলেন।আর ডায়েরির শেষ পৃষ্টায় অর্নবের সুইসাইড নোটটাও কেমন জানি অন্যরকম লাগে,,,,,
পুরো ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে এবার দীপু তার গ্রামের নতুন বন্ধু অভি আর জাভেদের সাহায্য নেয়। অভি জানিয়ে দেয় যে এই মন্দির ঘটিত কারণে অর্নবের পরিবারের কেউই মৃত্যুবরণ করেনি।তাদের সকলেরই স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল।
ফাহিম নিজেই এইবার দুটানায় পড়ে যায়।তার মানে অর্ণব তাকে গ্রামে নিয়ে আসার জন্যই এই মিথ্যা ডায়েরি লিখেছিল। পুরো ব্যাপারটি এবার সকলের চোখের সামনে চলে আসলো।তবে মন্দিরটা যে রহস্যময় সেটা সত্য। এই মন্দিরটিই এলাকার সকলের ভয়ের কারণ তাইতো এতদিন থেকে মন্দিরটি পরিত্যক্ত।তবে মন্দিরের রহস্য কোন ভৌতিকতা নয় এগুলো মানুষের সৃষ্টি।
সবাই ঠিক করে যে আজ রাতেই তারা আবার মন্দিরে যাবে এবং সব রহস্যের সমাধান করে ছাড়বে। আর এই গ্রামের সবাইকে মন্দিরের মিথ্যে অভিশাপ থেকে রক্ষা করবে।
রাতে সকলে মিলে মন্দিরের ভিতরে চলে যায় আর এবার সঙে নেয় অভি আর জাভেদকে। গতকাল রাতের গুহার মধ্যে দিয়ে মন্দিরের ভিতরে চলে আসে। আজ ভিতরে কেউ নেই। সবাই ছোট্ট একটা রুমে ঢুকে অর্ণবদের আসার অপেক্ষা করে।
কিছুক্ষণের মধ্যে অর্ণব,, রহিম মিয়া আর সেলিম শেখ মন্দিরের ভিতরে এসে পৌঁছায়।তারা সবাই এসেই মন্দিরের উত্তর পাশে খুঁড়াখুড়ি আরম্ভ করে। আস্তে আস্তে অনেক টুকু জায়গা খুঁড়ে ফেলে তারা। তার পর ভিতর থেকে পুরণো আমলের বিভিন্ন জিনিস পত্র বের করতে থাকে। মাটির হাড়ি,,,মুকুট,, পাতিলের কলস এই রকম অনেক গুলা জিনিস তারা বের করে।
সকলেই বুঝতে পারে যে,,,, এইগুলা গুপ্তধন। এবার ফাহিম,,,সহ সবাই বাহিরে বেরিয়ে আসে। সকলে মিলে,,, রহিম মিয়া,,, সেলিম শেখ আর অর্ণবকে হাতেনাতে ধরে ফেলে।
তিনজনকে বেঁধে মন্দিরের সাজানো কক্ষে নিয়ে আসা হয়। এবার " অর্ণব " তার দোষ স্বীকার করে তাদের পুরো প্লান সবাইকে বলতে শুরু করে,,,
"" মন্দিরটি অর্নবদের পারিবারিক সম্পত্তি নয়। কয়েকদিন আগে এই জঙগল পরিষ্কার করতে গিয়ে এলাকার সবাই এই মন্দিরটি আবিষ্কার করে। কিন্তু,,, অর্ণব, রহিম মিয়া আর সেলিম শেখ এই মন্দিরটি নিয়ে মিথ্যা গুজব ছড়াতে তাকে। তারা এলাকার সবাইকে বলে দেয় যে,, এই মন্দিরটি ভৌতিক আর যে এই মন্দির নিয়ে চর্চা করবে তার মৃত্যু হবে। তাই রহিম মিয়া মিথ্যে মৃত্যুর অভিনয় করেছিল সেদিন।তাদের এই মিথ্যে গুজবে এলাকার কেউই মন্দিরের আশেপাশেও আসেনি। আর এর সুবিধা নিয়ে তারা তিনজন মন্দিরের ভিতরের জিনিসপত্র লুটতে থাকে। আর মন্দির নিয়ে সব রহস্য অর্ণবের সাজানো নাটক ছিলো। ""
এবার তানভির প্রশ্নকরে,,,, তাহলে তুই মিথ্যে ডায়েরি লিখে আমাদের গ্রামে নিয়ে আসলি কেনো?
অর্ণব,, জবাব দেয়,,, আমি ভেবেছিলাম এই মন্দিরের রহস্য উদঘাটন করতে তোমরা নিশ্চয় আসবে,,, তবে তোমরা এতজন আসবে সেটা ভাবিনি। আমার ধারণা ছিল তোমরা ২/৩জন আসবে আর তোরা যখন মন্দিরে যাবে তখন আমরা তোদের খুন করে তোরা ভূতের হাতে খুন হয়েছিস বলে চালিয়ে দিতাম,,যাতে করে এলাকার সবাই আরো বেশি ভয় পেতো। কিন্তু তোমরা ৬/৭ জন হওয়ায় আমাদের পক্ষে খুন বা কোন ক্ষতি করা সম্ভব হয়নি।
এবার ফাহিম,,, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। তাদের সকলের প্রাণে রক্ষা হয়েছে। ভোর হতেই ফাহিমরা,,,, অর্ণব,, সেলিম শেখ আর রহিম মিয়ার মুখোশ সমস্ত এলাকার সামনে উন্মোচন করে দেয়। আর তাদেরকে স্থানীয় থানায় সমর্পণ করা হয়।
কিছুদিনের মধ্যে সেই মন্দিরটি সরকারের অধীনস্ত হয়ে যায় আর সেটাকে একটা "জাদুঘরে" পরিবর্তন করা হয়।
ফাহিম,,,তানভির,,,ইশান,,সুফিয়ান,,ও দীপু সহ সকলেই শহরে ফিরে আসে এবং এই মন্দির রহস্য উন্মোচন করার জন্য তাদের সকলকে সরকারের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা ও প্রত্যেককে ২০ হাজার করে পুরষ্কার দেওয়া হয়।(সমাপ্ত)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ