গল্পঃ ডায়রী অতঃপর
.
আপনার গার্লফ্রেন্ড ছিলো নাহ? আমাকে বললে কি হত? আমি কি আপনার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে যেতাম? কথাটা বলেই হনহন করে নিচে চলে গেলো তাহমিনা। সিয়াম বোকার মত দাঁড়িয়ে আছে। আরে কি এমন বললো যে এভাবে চলে গেলো? জিজ্ঞেস করেছিলো গার্লফ্রেন্ড আছে কি না? সিয়াম বলেছিলো হ্যাঁ আছে কয়েকজন। সত্যিই তো কিছু মেয়ে বন্ধু আছে। পরক্ষণে সিয়াম বুঝতে পারলো অহ তাহমিনা মনে হয় প্রেমিকার কথা বলেছিলো। নিচের তলার মেয়ে। মানে নিচ তলায় থাকে। অদ্ভুত টাইপের। কথায় পটু কাজে পটু। খুব বেশি দিনের পরিচয় না। কারণ এই বাসাটায় নতুন তাঁরা। আর এখানে তাহমিনারা স্থানীয়। সিয়াম ছাদ থেকে নিচে নেমে রুমের জানালা খুলে সমরেশ মজুমদারের একটি উপন্যাস বের করলো পড়বে বলে। অনেকদিন হলো উপন্যাস পড়া হচ্ছেনা তাঁর। সাহিত্যের স্বাদ মনে লাগলে সাহিত্য থেকে দূরে থাকা বড় দ্বায়। এই সময়ে আবার তাঁর মা ডাকছে। কারণ হলো নিচ তলায় যেতে। কিন্তু কেন যেতে হবে? সে ব্যাপারে কিছু বলেনি! বললো গেলেই বুঝবি যা তো। তাহমিনাদের দরজায় বেল বাজানোর সাথে সাথেই তাহমিনা দরজা খুললো। সিয়াম একটু অবাক হলো। মনে হলো তাহমিনা আগে থেকেই অপেক্ষা করছিলো। তাহমিনা বললো বসতে, সিয়াম বসলো। সিয়াম বললো, বাসার আর সবাই কোথায়? তাহমিনা বললো, একটা দরকারে বাইরে গিয়েছে। আপনি বসুন আমি চা নিয়ে আসছি। সিয়াম ভাবলো তাহলে মা এখানে পাঠালো কেন? বাসায় তো তাহমিনা ছাড়া কেউই নেই। আচ্ছা সেটা পরে মাকে জিজ্ঞেস করা যাবে ভেবে সিয়াম বললো, না না আমি চা খাবোনা, মানে পান করবোনা।
.....
তাহমিনা ঠোঁটমুখ বাঁকা করে বললো, কেন? লেখক মানুষরা কি অন্যের বাড়ির চা'ও পান করেনা? লেখক শব্দটা শুনে সিয়াম অন্যরকম ভয় পেলো। মনে হলো তাঁর ডায়রীটা দেখে ফেলেছে। সেখানকার কিছু হাঁটু-পা ভাঙা কবিতার কথা সিয়াম চিন্তা করছেনা। চিন্তা করছে তাঁর যা হাতের লেখা! একদম খারাপ। সিয়াম ইতস্তত হয়ে বললো, লেখক মানে? তাহমিনা হাসি দিয়ে বললো, এত অস্থীর হওয়ার কিছু নেই। পরে বলছি, আগে চা তো নিয়ে আসি? সিয়াম কিছু বললোনা। তাহমিনা চা আনতে গেলো। মনে মনে মায়ের প্রতি রাগ হচ্ছে। মেয়েটা যা বলে তাই'ই দিয়ে দিতে হয় এজন্য তাঁর ডায়রীটাও! তাহমিনা চা নিয়ে এসে দিলো। সিয়াম বললো, চা পরে খাওয়া যাবে আগে আমার ডায়রীটা দিন। তাহমিনা হাসলো, ডায়রীটা তো দিবোনা। আপনার কাছ থেকে তো আনিনি। আন্টির কাছ থেকে এনেছি উনাকে দিব। সিয়াম একটু স্বরে বললো, আমার ডায়রী আমাকে দিবেন ব্যাস! আবারো তাহমিনা হাসলো, আপনার থেকে তো আমি কমপক্ষে পাঁচ বছরের ছোট হবই তাহলে আপনি করে বলেন কেন? তুমি করে বলেন নাহলে কিন্তু ডায়রী দিবোনা। সিয়াম অসহায়। এখন ডায়রীটা উদ্ধার করা হলো মূল কথা তা যেভাবেই হোক। সিয়াম নরম স্বরে বললো, আচ্ছা ঠিকাছে বলা যাবে এখন ডায়রীটা দিন তো। তাহমিনা বললো জ্বী না দিন না বলেন দাও। সিয়াম রেগে বললো, আচ্ছা এটাওটা একটা হলেই হয় দাওতো তাড়াতাড়ি।
..…
তাহমিনা বললো, দেয়া যাবে কিন্তু এখন না আগে তো আপনার হাঁটু-পা ভাঙা গল্প কবিতাগুলো পড়ি? সিয়াম এবার আর রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেনা। তারপর বললো, মা তোমাদের বাসায় কেন পাঠালো আমাকে? বললো কি কাজে। কিন্তু এসে দেখছি অকাজও নেই। আচ্ছা তাহলে যাচ্ছি। তাহমিনা বললো, আরে আরে কোথায় যান? আপনার না অনেক রাগ। চা'টা কমপক্ষে খেয়ে যান। সিয়াম বললো, আপনার চা আপনিই খান। বলে বাসা থেকে বেড়িয়ে এলো। রেগে একাকার। মার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, মা আমার ডায়রীটা ঐ মেয়েটাকে দিলে কেন? আর কোন কাজে আমাকে নিচ তলায় পাঠালে? আমার ডায়রীটা আজকেই চাই আর কিছু জানিনা।
…..
কিছুদিন পরের কথা। অফিসে এমনিতেই কাজের চাপ তার উপর তাহমিনার চাপ। মেয়েটা সিয়ামের সাথে এমন ব্যাবহার করে মনে হয় তাঁর প্রেমিক। সিয়ামেরও খুব একটা খারাপ লাগেনা। এইযে ফোন দিচ্ছে বারবার! সিয়াম রেগে ফোনটা ধরলো। ফোন ধরার সাথে সাথে।
- জানেন আজকে আমি অনেক রান্না করেছি।
- বুঝলাম অনেক কান্না করেছেন তো আমি কি করবো?
- কান্না কখন বললাম? রান্না বলেছি।
- হ্যাঁ বুঝেছি কান্নার কথা বলেছেন। তা কেন কান্না করেছেন?
- আপনি না অনেক মজার হেহে। এমনিই ইচ্ছে হলো তাই কান্না করলাম মানে রান্না করলাম।
- আপনার কি মাথায় কিচ্ছু নেই? অফিস টাইমে ফোন দিয়ে বকবক করা লাগে?
- না নেই মাথায় কিচ্ছু নেই। অহ হ্যাঁ মাথায় হাঁটু-পা ভাঙা কবিতা আছে হেহে ।
- মেজাজ কিন্তু অনেক খারাপ হচ্ছে।
- আমারও খারাপ হচ্ছে। বলেছিলেন না তুমি করে বলবেন? এখন আবার আপনি করে বলছেন! মেজাজ কি শুধু ছেলেদের থাকে মেয়েদের থাকেনা?
- ধুর বাই। ফোন রাখলাম।
- ফোন তো রাখবেনই। আর শুনোন আজকে অফিস থেকে এসে আমাদের বাসায় খাবেন ঠিকাছে? আন্টিকে বলে দিয়েছি আমি।
- কেন আমার বাসা নেই? আমার বাসায় কি খাবারের অভাব পরেছে?
- আজব তো! অভাব পরবে কেন? ধ্যাৎ আর বকবক করতে ইচ্ছে করছেনা। অফিস শেষে ঠিক সময়ে যেন বাসায় আসা হয়। আমিই রাখলাম ফোন।
…..
সিয়ামের সামনে অনেক প্রকারের খাবার তৈরি করা আছে। টেবিল ভরতি খাবার। অফিস থেকে নিজের বাসায় খাবার পেলোনা সিয়াম। তাঁর মা খেতে দিলোনা আরকি! বললো মেয়েটা এত করে বলছে একদিন খেলে কি হয়? যাহোক সে ব্যাপার। এখন যেহেতু সামনে হরেকরকম খাবার আছে এখন খাওয়াটাই শ্রেয়। এদিকে তাহমিনা সামনে দাঁড়িয়ে আছে। খাওয়ার মাঝে মাঝে চোখে ইশারা করছে। কি ইশারা করছে তাহমিনা নিজেই জানে। যাহোক খাওয়া শেষ। সিয়ামের অন্ততপক্ষে একটিবার ধন্যবাদ দেয়ে উচিৎ তাহমিনাকে। ধন্যবাদ দিয়ে বাসা ত্যাগ করলো। তাহমিনার চোখে অন্যরকম তৃপ্তি দেখতে পেলো সিয়াম। কিসের তৃপ্তি তা সিয়াম ভাল করেই বুঝতে পেরেছে।
…..
বাসায় বিয়ের অনুষ্ঠান । না না কারো বিয়ে হচ্ছেনা। সিয়ামের বড় ভাইয়ের আর ভাবীর বিয়ের অনু্ষ্ঠন। ভাই পালিয়ে বিয়ে করেছিলো তো সেজন্য সেসময় আর অনুষ্ঠান করা হয়নি।দুদিন পর তাঁদের বিবাহবার্ষিকী সে উপলক্ষে অনুষ্ঠান। তাই বিয়ের অনুষ্ঠানই বলা যায়। বাসা সাজানো হচ্ছে কয়েকদিনের জন্য অফিস থেকে ছুটি নিয়ে নিয়েছে সিয়াম। বিবাহবার্ষিকী তো আর বছরে কয়েকবার আসেনা। একবারই আসে। যেখানেই থাকে মনে হয় এই বুঝি তাহমিনা এসে কিছু একটা বললো! দূপুর হতে চললো প্রায় এখনো তাহমিনাকে দেখলোনা সিয়াম। অবাক হবে সে খুব স্বাভাবিক। ভাবতে না ভাবতেও সামনে হাজির। শাড়ি চুড়ি পরে যেন বধূ।
- আমাকে কেমন লাগছে?
খলখল হাসি দিয়ে বললো তাহমিনা। অনুষ্ঠান আরো দুদিন পর আর তাহমিনা সাজলো আজ। দেখতে খারাপ লাগছেনা।
- কোন সন্দেহ নেই যে পেত্নীদের মত লাগছে।
- সত্যিই পেত্নীদের মত লাগছে?
- বললাম না কোন সন্দেহ নেই এতে।
- শুধু আপনার কাছেই পেত্নী লাগলো অন্যদের কাছে ঠিকই সুন্দর লাগে।
- হুম। তাঁদের কাছেই গিয়ে জিজ্ঞেস করুন দেখবেন খুব সুন্দর করে মিথ্যা প্রশংসা করবে।
- তার মানে কি? আমি সুন্দর না?
- এক প্রশ্ন বারবার করবেন না তো ভাল লাগেনা।
- পেত্নী বলেন আর যাই বলেন বিয়ে আমাকেই করতে হবে হুম।
- বিয়ে? আর আমি? আবার আপনাকে?
- এত অবাক হওয়ার কিছু নেই সময় হলেই দেখা যাবে।
…..
আজকে রাতে ঘুমাতে পারছেনা সিয়াম। মনে অনেক প্রশ্ন জাগছে তাঁর। তাহমিনা কি তাঁকে সত্যিকার অর্থেই পছন্দ করে? ভালবাসে? না এমনিই মজা করে? এধরনের চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে গেলো। ইদানীং তাহমিনা পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। আগের মত কথা বলেনা মজা করেনা। সারাদিনে দেখাও যায়না। মেয়েদের বুঝা বড় মুশকিল। তাঁরা কি চায় সেটা তাঁরা নিজেই জানেনা। কাছের মানুষ দূরে গেলে তাঁদের মর্ম বুঝা যায়। অনুষ্ঠান হয়ে গেলো তবুও তাহমিনার দেখা পায়না সিয়াম। আস্তে আস্তে বুঝতে পারলো সিয়াম যে তাহমিনাকে তাঁর দরকার। সারাদিন খোঁচানোর জন্য হলেও দরকার। ঝগড়া করার জন্য হলেও দরকার। পরেরদিন সিয়াম থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাহমিনার মায়ের মুখে কথাটা শুনে যে তাহমিনা হোষ্টেলে থেকে লেখাপড়া করবে। তাঁর আজকে আর অফিসে যেতে ইচ্ছে করছেনা। মনে মনে তাহমিনার উপর রাগ অভিমান হচ্ছে। মেয়েরা কি এমনি হয়? পাগল করে দূরে চলে যায়? দূপুরে তাহমিনার সাথে ফোনে কথা হয়েছে সিয়ামের। বিকেলে দেখা করবে দুজন। আজ প্রথম সিয়াম কোন মেয়ের জন্য গোলাপ কিনলো। কিন্তু ভয়ে মাঝপথে ফেলে দিয়েছে। আবার ভাবছে ধুর কেন যে ফেলে দিলাম! ফুলগুলো দিলে অনেক খুশি হতো। নদীর পাড়ে বসে আছে তাহমিনা। মুখে চকলেট। চকলেটের ফ্লেভারে ঠোঁট লাল হয়ে আছে। দেখতে অনেক মিষ্টি লাগছে।
বোকার মত সামনে দাঁড়িয়ে আছে সিয়াম। কি বলে শুরু করবে বুঝতে পারছেনা। তার মাঝেই তাহমিনা বললো।
…..
- তা আমাকে ডাকলেন কেন?
- কিছু কথা ছিলো।
- হুম বলেন।
- আমি আপনাকে তুমি করে বলি?
- আপনার ইচ্ছা।
- বাসা থেকে হঠাৎ হোষ্টেলে এলে কেন?
- আমার ইচ্ছা।
- তুমি কি আমাকে সত্যিই ভালবাস?
- না। আপনাকে ভাল বাসতে যাব কোন দুঃখে?
- তুমি না বলেছিলে আমার তোমাকেই বিয়ে করা লাগবে?
- কবে কি বলেছিলাম সেটা মাথায় নিয়ে আছেন এখনো?
- ঠিক তা না। তোমাকে অনেক মিস করি এখন।
- আর কিছু করেন না?
- হ্যাঁ ভালবেসেও ফেলেছি।
- ফালতু কথা ।
- বিশ্বাস করো সত্যিই।
- কচু।
- আমি এত কিছু জানিনা তুমি আজকেই বাসায় ফিরে যাবে। বাসায় থেকে কি মেয়েরা পড়ছেনা?
- হোষ্টেলে থেকে কি মেয়েরা পড়ছেনা? আর আপনার কথা আমি শুনবো কেন?
- আসলেই তো। আমার কথা তুমি শুনবেই বা কেন? আচ্ছা ধন্যবাদ তোমাকে আমার সাথে দেখা করার জন্য।
- ছেলেরা এত মিথ্যা বলে কেন বলতে পারেন?
- সবাই না।
- তা জানি। এইযে আপনি বললেন আপনি আমাকে ভালবেসে ফেলেছেন মানে ভালবাসেন এটা কি মিথ্যা কথা না?
- আমার কসম সত্যিই ভালবাসি।
- হা হা হা। মানুষ কখনো নিজের কসম দেয়? আচ্ছা তো প্রমাণ করুন।
- কিভাবে?
- আমার খেয়াল রাখতে হবে। আমাকে নিয়ে ঘুরতে হবে। সপ্তাহে একদিন ঘুরাতে নিয়ে গেলেই হবে।
- এটা কোন ব্যাপার।
- বাব্বাহ। তো আপনি পেত্নীকে বিয়ে করবেন?
- একশবার করবো হাজারবার করবো।
- শিউর?
- তোমার কসম শিউর।
- তাহলে এখনো দূরে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? কাছে এসে জোর করে হাতটা ধরতে পারেন না?
সিয়াম কাছে এসে হাতটা ধরলো। তাহমিনা বললো।
- সারাজীবন হাতটা ধরে রাখতে পারবেন তো?
সিয়াম মাথা নাড়িয়ে বললো হুঁম। দুজনে হাত ধরে হাঁটছে গন্তব্য বহুদূর। সিয়াম মাঝপথে বললো।
- জানো তোমার জন্য গোলাপ কিনেছিলাম কিন্তু পথে ফেলে দিয়েছি ভয়ে।
তাহমিনা অবাক হয়ে তাকালো।
- খুব তো সাহস দেখান এমনিতে। একটা মেয়েকে গোলাপ এনে দেবার সাহসটুকু নেই? ভীতু।
- ইয়ে মানে তা আছে কিন্তু তোমার সামনে আসলে আমার বুকটা কেমন জানি করে। হার্টবিট বেড়ে যায়।
- ওমা তাই? কই দেখিতো কান পেতে কেমন করে বুকে।
- কি যে বলো না!
- ওলে বাবালে লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছে দেখছি। আচ্ছা শুনেন এই নিন আপনার হাঁটু-পা ভাঙা কবিতার ডায়রী।
- উহুঁ আমার না। এখন থেকে আমার যা তোমার তা। আমার ডায়রী মানে তোমার ডায়রী। আর তাছাড়া ডায়রীটা তোমাকে গিফট করলাম যাও। গোলাপের বদলে ডায়রী। গোলাপ তো দুদিন পর নেতিয়ে পরে যায় আর ডায়রী সারাজীবন থাকে যত্ন করে রাখলে।
- সত্যিই……………………?
Siam Ahmed Joy
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ